অবাধ্য প্রেম পর্ব ১০

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১০
নন্দিনী নীলা

এভাবে যদি বিয়ে হয়ে যায় ছোঁয়ার তাহলে আমি আমার প্রতিশোধ কখনোই নিতে পারবো না। ও এভাবে আমার হাতে পার পেয়ে যাবে। এই ব্যাগটা নিয়ে আমি ওকে দিয়ে যা যা করাতে চাইছিলাম তার কিছু ই করানো হলো না। আমি জানতাম ও এই ব্যাগের জন্য হলেও আমার কাছে আসবে।

কারণ ওর এই ওর সব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে এই ব্যাগের জন্য হলেও আমার কাছে আসবে মাথা নিচু করবে। খুব জেদ ওর কখনই আমার সামনে মাথা নিচু করে না। সব সময় আমার চোখে চোখ রেখে চিৎকার করে কথা বলে। ওকে আমি আমার সামনে আকুতি মিনতি করতে দেখতে চেয়েছিলাম।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ও মাথা নিচু করে আমার কথা শুনবে। আমার ইশারায় নাচবে। তাই চেয়েছিলাম কিন্তু এই বিয়েটা এসে সবকিছুতে জল ঢেলে দিল। ধ্যাত। যেভাবেই হোক ওর বাসার ঠিকানাটা যদি আমি জানতে পারতাম তাহলে বিয়েটা আমি কিছুতেই হতে দিতাম না এত সহজে তো ওকে আমি ছেড়ে দেবো না। সারা কলেজের সামনেও আমাকে ইসাইড করেছে আমার কথা শোনেনি। তার মাশুল তো দিতেই হবে।

এদিকে আবার কাকার বিয়ে নিয়ে ঝামেলা করছে। তোর মেয়ে পছন্দ হয়েছে বিয়ে করে নে না। কিন্তু না তার আবার মেয়ের বয়স কম সেটা চোখে পরেছে। আরে ভাই বয়স কম সেটা সেটা নিয়ে তোকে মাথা ঘামাতে হবে কেন ? মেয়ে রাজি হলে বিয়ে করে নে। না সেটা নিয়ে আবার এখন আমাকে মেয়ের সাথে দেখা করতে হবে তার মনের খবর জানতে হবে।

এখন আমাকে হবু চাচির সাথে কথা বলতে হবে আর সে রাজি না হলেও বিয়েতে রাজি করাতে হবে এতদিন পরে আমার একমাত্র দেবদাস কাকা তার জীবনে কাউকে আনতে চাইছে সেখানে তার ভাইপো প্লাস ফ্রেন্ড হয়ে আমার তো একটা কর্তব্য আছে।

কাকার সাথে কথা বলে আসার পরে বাসার সবাই আমাকে ঘিরে ধরেছিল কাকা কি বলেছে? আমি সব বলেছি। আর সবার এখন একটাই কথা মেয়েকে যেহেতু আমাদের রাফসান পছন্দ করেছে ওই মেয়েকে রাজি করাতেই হবে।

সবার কথা ভেবে চিন্তে আর আমার একমাত্র দেবদাস কাকার কথা ভেবে আমিও রাজী হয়ে গেলাম কিন্তু না আমি একা কিছুতেই যাব না যতই হোক চাচী বলে কথা তাকে তো সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে।

সেই মেয়ে ভবিষ্যৎ আমার চাচি হবে তার সাথে যদি বুঝে-শুনেই সুন্দর হবে কথা বলতে না পারি তাই আমি নিজের নার্ভাসনেস কাটাতে,
আমার ছোটভাই আবিরকে সাথে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করলাম। ও থাকলে সুবিধা হবে কারণ ও চাচিকে চেনে আমি যেহেতু চাচিকে চিনি না ওকে নিয়ে যাবো।

এদিকে মামী আমাকে জানালো ছেলে নাকি কালকে আমার সাথে আলাদা দেখা করতে চায়। নিবিড় যে আসবে সেইটা ও বাসায় থেকে মামিকে জানানো হয় নাই কারণ ছেলে না আসলে আবার দেখা করতে দেয় কিনা তার শিওরিটি নাই এজন্য মিথ্যা বলা হয়েছে। মামির এই কথাটা শুনে আমার শয়তানি বুদ্ধি গুলো মাথায় এসে ভিড় করলো আমি খুশি হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি বললা?’

‘কালা নাকি কানে শুনিস না। কাল ছেলে তোর সাথে দেখা করবে। একদম কোন মতলব করার চেষ্টা করবি না। সুন্দর মত সুন্দর করে কথা বলবি। আবার সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসবি। তোর বিয়েতে মত নেই এটা যেন ঘুণাক্ষরেও টের না পায়। আবার আজেবাজে কথা বলে বিয়েটা ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করিস তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। আমাকে চিনিস তো আমি তোর মামী।’

‘আজব কথাবার্তা তোমাকে আমি চিনতে পারব না কেন! তুমি যে আমার শয়তান মামি সেটা সবাই জানে।’
মামি চিৎকার করে বললো কি বললি??
আমি বললাম, ‘ কিছুনা যাও তো।’
আমার মনে তো এখন লাড্ডু ফুটছে কাল দেখা হলো তাহলে তো ভালোই হবে আমি তো খুব করে চাইছিলাম লোকটার সাথে আলাদা করে কথা বলতে।

মামি আমাকে বকাঝকা করে চলে গেল বকবক করতে করতে। আমি কাল কি বলবো লোকটাকে কিভাবে বললে লোকটা বিয়ে ভেঙে দেবে। সেই সব ভাবতে ভাবতে আমার দিনটাই কেটে গেল ।
রাতে রবিনকে অনেক বলে কয়ে ফোনটা এনে আমি লিলি কল করলাম। ওর থেকে জানতে পারলাম ও নিবিড়ের থেকে ব্যাগ নিতে পারে নাই।

প্রচন্ড রাগ হল নিবিড়ের উপর আমি আর কলেজে যাব না আমার বিয়ে হয়ে যাবে এইসব শোনার পর উনি আমার ব্যাগটা কেন রেখে দিয়েছেন। আমার ব্যাগ দিয়ে কি করবে। ওখানে তো আর সোনাদানা টাকাপয়সা রেখে দেই নাই আমার কিছু ইমোশনাল জিনিস আছে সেই সব জিনিস নিজের কাছে রেখে কি করবেন।

বিয়েটা বাই এনি চান্স হয়ে গেলে আমি ওনাকে ধরবো কিভাবে? আল্লাহ বিয়েটা যেন না হয় যেভাবে হোক এই বিয়েটা ভেঙে দাও।
ব্যাগটা তো আমি নেবই তার আগে বিয়েটা কিভাবে ভেস্তে দেওয়া যায় সেসব ভাবতে হবে।
পরদিন চারটায় দেখা করার কথা।

মামি আমার পেছনে শাড়ি নিয়ে ঘুরলো তারপর জোর করে আমাকে শাড়ি পরিয়ে পাঠানো হলো।
যে রেস্টুরেন্টের কথা বলেছে আমি সেই রেস্টুরেন্টের সামনে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। লোকটাকে দেখতে পাচ্ছিনা ভেতরে এজন্য বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। 5 মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে কাকতাড়ুয়া মনে হল।

যারাই রেস্টুরেন্টে ঢুকে সবাই আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে আসলে রেস্টুরেন্টে না ঢুকে এরকম বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। তার উপর আবার শাড়ি পড়ে বউ সেজে আছি। সবাই জোকারের মতো আমাকে দেখছে আর যাচ্ছে আর বের হচ্ছে। আমার খুব অস্বস্তি বোধ হল তাই আমি ভেতরে গিয়ে একটা ফাঁকা কেবিন দেখে বসে রইলাম।

আরো 10 মিনিট চলে গেল কারো আসার নাম গন্ধ নাই রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। এদিকে বারবার অর্ডার চাই অর্ডার চাই বলে ওয়ার্ড বয় জ্বালিয়ে মারছে। আমি দাঁত কেলিয়ে উনাকে বিদায় করছি একটু পর আমার লোক আছে বলে‌। হঠাৎ আমার নজর দরজার দিকে পড়তেই আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল।

যার জন্য বসে ছিলাম তাকে না পেলেও। নিবিড় কে দেখে আমার রাগটা মাথায় চড়ে বসলো‌। চট করেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লাম আচমকা। এমন কাকতালীয়ভাবে নিবিড়ের সাথে আমার এই রেস্টুরেন্টে দেখা হয়ে যাবে আমি স্বপ্নেও ভাবেনি। নিবিড় কে দেখে আমার ব্যাগটা হাতে নেওয়ার কথা আমার মনে পড়ে গেল। আর আমি দুনিয়াদারি ভুলে রাগে গমগম করতে করতে নিবিড়ের দিকে এগোতে লাগলাম।

কথা নাই বার্তা নাই গিয়ে একটা কথাই বললাম, ‘ আপনি লিলিকে আমার ব্যাগটা ফেরত দেন নাই কেন? শুনেছেন আমি আর কলেজে যাব না আমার বিয়ে হয়ে যাবে তাও আপনি আমার ব্যাগটা নিজের কব্জায় রেখে দিয়েছেন। আপনার মতলব কি? আমি কি আমার ব্যাগে কোটি কোটি টাকা রেখে দিয়েছি। যে টাকার জন্য আপনি আমার ব্যাগ নিয়েছেন। শুনেছিলাম আপনি নাকি খুব বড়লোক বাড়ির ছেলে। আর এখন আপনার স্বভাব দেখি আমাদের থেকেও খারাপ…

নিবিড় অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ও আমাকে দেখে যে চরম অবাক হয়েছে তা ওর মুখ দেখে প্রকাশ পাচ্ছে। মুখটা হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি বাঁচালের মতো কথা বলে নিজেই থেমে গেলাম আসলে রেস্টুরেন্টের অনেকেই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

আমি আসলে উত্তেজিত হয়ে উঁচু গলায় কথাগুলো বলছিলাম। এজন্য লজ্জা পেয়ে নিজেই তাড়াতাড়ি কথা অফ করে দিলাম। আর নিচু গলায় নিবিড় কে বললাম, ‘ এদিকে আসুন একটু প্লিজ।’

আমি যে টেবিলটায় বসে ছিলাম সেখানে ওদের নিয়ে আসলাম নিবিড়ের পাশে যে ছেলেটা আছে তাকে আমি ভুল করে লক্ষ করি নাই। তাহলে ওকে আমি চিনতাম কারণ এটাকে আমি কালকে খুব ভাল করে দেখেছি। নিবিড় চেয়ার টেনে বসে আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখল দেখে গালে হাত দিয়ে বলল,, ‘হে তোমার কি বিয়ে হয়ে গেছে? হাসবেন্ড নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছো নাকি?

আমি চকিতে ফিরে বললাম, ‘কি বললেন আপনি?’
‘কেন ভুল কি বললাম শুনলাম তোমার নাকি বিয়ে। আর তোমার সাজ পোশাক দেখে তো মনে হচ্ছে ম্যারিড হয়ে গেছো। আর হাসবেন্ড নিয়ে সেজেগুজে রেস্টুরেন্ট এসেছো। কিন্তু এটা কিন্তু তুমি ঠিক করলে না আমরা তোমার সিনিয়র ভাই তোমার কিন্তু আমাদেরকে বিয়েতে ইনভাইট করা উচিত ছিল। আর কেউ না আসলেও আমি কিন্তু তোমার বিয়েতে অবশ্যই আসতাম এভাবে লুকোচুরি করে বিয়ে করে ফেললে কেনো? ‘

‘একদম ফালতু কথা বলবেন না। আমার বিয়ে হয়নি আর আমি না এসেছি এখানে হাসবেন্ড নিয়ে। তাই আপনার ফালতু কথা বন্ধ করুন দয়া করে। আপনি আমার ব্যাগ কেন দেননি সেটা বলুন। আপনি এখনই আমার ব্যাগ দিবেন আমি কিছু জানিনা।’

‘ আচ্ছা তারমানে এখনো বিয়ে হয়নি তাহলে দাওয়াত টা অবশ্যই পাচ্ছি।’
‘ হয় নি আর হবে ও না।’
‘ মানে?’
‘আপনার এত মানে জানতে হবে না আপনাকে আমি যেটা বলছি সেটা করুন।’

নিবিড় ঠাস করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘সো সরি। তোমার সাথে এখন আমার বসে ঝগড়া বা গল্প করার টাইম নাই‌। আমি এখানে এসেছি একটা ইম্পর্টেন্ট কাজে তাই তুমি এখানে বসে থাকো আমি আমার কাজ করতে যাই বাই।’

বলেই নিবিড় ওর পাশে বসা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ আবির আমাদের হবু চাচির কোথায় দেখতো। এই ঝগড়ুটে মেয়ের সাথে ঝগড়া করে আমি টাইম ওয়েস্ট করতে চাইনা। চল হবু চাচির সাথে আড্ডা দিয়ে আসি।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৯

আমি পাশে বসা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম সাথে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। এটাতো রাফসানের ভাইপো।
এই পোলা নিবিড়ের সাথে কি করছে আর নিবিড়‌ই বা হবু চাচির সাথে দেখা করবে মানে কি এসবের?

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১১