অবাধ্য প্রেম পর্ব ৯

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৯
নন্দিনী নীলা

অবশেষে আমাকে কাকতাড়ুয়া সাজিয়ে তাদের সামনে নিয়ে এলো মামি। আমি মাথা নিচু করে না এসে মাথা উঁচু করে তাদের সামনে ট্রে হাতে চলে এলাম। চাচি কয়েকবার ইশারায় মাথা নিচু করে ভদ্র সেজে আসতে বলেছে আমি ইশারা বুঝি নি এমন ভাব করেছি।

পুরুষ মানুষ তিনজন আর মহিলা আছে দুজন একজন আমার বয়সী ছেলে আছে। আমি সবাইকে দেখছি সালাম দেয় নি। তার জন্য চাচি আমাকে জোরে এক ধাক্কা দিল আমি চমকে উঠে তার দিকে ফিরতেই ইশারা করল সালাম করতে। আমি দাঁড়িয়ে মুখে হাসি এনে সালাম দিলাম।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মামি এবার রাগে আমার পাশে থেকে চলে গেল আমি ছেলে কোনটা বুঝার চেষ্টা করছি এখানে আমার বাবার বয়সী বসে আছে দুজন আর একজন আমার বয়সী। আমি ভাবছি এই আমার বয়সী ছেলেটার সাথে কি আমার বিয়ে ঠিক করতে আসছে নাকি। আমি বিহ্বল চোখে তাকিয়ে ভাবছি। সবাই আমার সালামের উত্তর দিয়ে দিল‌‌।

আমি কি করে বিয়ে ভাঙব ভাবছি। এমন কিছু করতে হবে এরা নিজে থেকে বিয়ে ভেঙে চলে যায়‌ আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে ভাবছি।

তখন আমার বয়সী ছেলেটার ফট করে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল, ‘ হবু চাচি আপনি এখানে বসেন।’
আমি থমকে গেলাম। এই পোলা আমারে চাচি বলছে কেন? আমি বড়বড় চোখ করে তাকালাম। সবার দিকে তাকালাম‌। বসে থাকা এক মহিলা আমাকে তার পাশে বসতে বলল। আমি বিস্মিত মুখেই বসলাম।

তিনি আমাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে লাগল। আমি ছেলে কোনটা ভাবছি এই দুজনের মধ্যে কি নাকি আসেই নি? তখন আমার সব চিন্তা ভাবনার অবসান ঘটিয়ে আমার পাশে বসা মহিলাটা আমার বাবার বয়সী একজন লোক কে দেখিয়ে বলল, এই তোমার হবু বর। আমার মাথা ঘুরে উঠলো।

আমি মামির রুচি দেখে হাত ছড়িয়ে কাঁদতে চাইছি এই বিয়ে আছি জিন্দিগি তবে করব না‌। এই বয়স লোকটাই বা কি মেয়ের বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করতে আসছে ছিহ। আমার চোখে জল চলে এলো আমি মাথা নিচু করে বসে আছি‌। কান্না কান্না মুখে।
আমার পাশে বসা মহিলাটা দুজনের মাঝে এক লোক কে ডেকে বলল,, ‘ রাফসান দেখো তোমার হবু ব‌উকে একবার তো তাকাও।’

আমি তার দৃষ্টি দেখে তাকালাম লোকটা ফোন ঘাটছে চোখ মুখ শক্ত। আমি রাগে দুঃখে চুপ করে আছি। চাচি একটু পর পর এসে কথা বলছে আর আমার দিকে কড়া চাহনি দিচ্ছে আমি যেন আবার গন্ডগোল না করি তাই‌। আমি তো চাইছি একা কথা বলতে তাইলে এই বিয়েটা ভাঙার কিছু করা যাবে।
এখানে আমি কি করব।

মামি সবাইকে তাদের আনা ফল মিষ্টি দিয়েছে একজন ছাড়া কেউ হাত ও দেয়নি। আমার বয়সী ছেলেটার নাম নিশান সেই শুধু খাচ্ছে আর হাসছে।
একটু পর সবাই মিলে ঠিক করল আমাকে আর রাফসান কে আলাদা করে কথা বলতে পাঠাবে। আমি শুনেই তো উঠে খুশি হয়ে ভেতরে চলে গেলাম।

এদিকে রাফসান উঠে ফোন কানে নিয়ে বলল, ‘ আমার একটা জরুরী কাজ পরে গেছে আমি আসছি।’
কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল। আমি অপেক্ষা করছি আসার আসলেই বিয়ে করব না বলে দিব। কিন্তু যার জন্য অপেক্ষা করছি তার খবর নাই রবিনের থেকে জানতে পারলাম লোকটা নাকি চলে গেছে।

তার যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সবাই বিদায় নেয় সবাই চলে যাওয়ার পর মামি মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে বসে আছে। আমি পায়ের উপর পা তুলে আরামশে বসে আছি। কিছুই করা লাগল না তার আগেই সব বন্ধ আহ কি শান্তি। আল্লাহ তুমি এইভাবে আমাকে বাঁচিয়ে দিলে।

মামি মুখটা গোমরা করে বসে র‌ইল বিকেল ভর। আর আমি খুশিতে কাটালাম। কিন্তু আমার সব খুশি কেড়ে নিল রাতের এক কলে। পাত্র পক্ষরা কল করে জানায় তারা নাকি আমাকে পছন্দ করেছেন। আর তারা খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করতে চায়। আমার মাথায় যেন বাজ পরল।

আমার আনন্দিত মনটা নষ্ট হয়ে গেল। এবার আমি মনখারাপ করে বসে আছি আর মামি খুশিতে বাকবাকুম করছে। একটু পর পর এসে বলে, ‘ খুব নাচতে ছিলি না খুশিতে এখন নাচ তোর বিয়ে তো ঠিক করে ফেললাম।’
‘ সরো তো। একদম জ্বালাতে আসবে না।’

এদিকে রাফসানের বাসায় যুদ্ধ চলছে। রাফসান চিৎকার চেঁচামেচি করছে এই বিয়ে কিছুতেই করবে না। ওই টুকু বাচ্চা মেয়েকে ও বিয়ে করবে ইম্পসিবল। কিন্তু ওর কথার গুরুত্ব দিচ্ছে না কেউ। সবাই যেন জোর করেই ওকে বিয়ে দিয়ে ছারবে। সবাই ওর‌ই সামনে ফোন করে পাকাকথা বলল ও রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে গেল।

সবাই মিলে ওকে ওই বাসায় নিয়ে যাওয়ার আগে বলেছিল মেয়ের বয়স ৩০+ হবে কিন্তু গিয়ে দেখতে পেল ২০+ মেয়ের বয়স হবে। যেখানে ওর নিজের বয়স ৪০+ সেখানে ওই হাফ বয়সী মেয়েকে ও বিয়ে করবে অসম্ভব। রাগে দরজা বন্ধ করতে যাবে তখন কেউ একজন দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে আসে‌ তাকে দেখে দরজা থেকে সরে যায় রাফসান।
রাফসানের বড় ভাইয়ের বড় ছেলে নিবিড় এসেছে কাকার কাছে। রাফসান নিবিড় কে খুব ভালোবাসে। আর নিবিড় তার বন্ধুর মতো।

নিবিড় কলেজ থেকে মুড করে বাসায় এসে জানতে পারে সব তারপর সবার আসার অপেক্ষায় ছিল‌।
ঘুমিয়ে ছিল ও চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বেরিয়ে আসে আর কাকাকে রাগ করছ রুমে যেতে দেখে পিছনে আসে।
‘ হোয়াটস হ্যাপেন্ড কাকা। তুমি এতো রেগে আছো কেন? তুমি তো বিয়ে করবে বলে রাজি হয়েছিলে এখন বাধা দিচ্ছ কেন?

রাফসান রাগান্বিত গলায় বলল, ‘ হুম রাজি হয়েছিলাম তাই বলে একটা হাঁটুর বয়সী মেয়েকে বিয়ে করবো। ঠিক সময়ে বিয়ে করলে ওর থেকে বড় আমার একটা মেয়ে থাকতো।’
‘ হোয়াট। মেয়ের বয়স কম এজন্য রাজি হচ্ছো না?’

‘ হুম আর তা ছাড়া ওই মেয়েও রাজি না আমি তার মুখ দেখেই বুজেছি‌। সেখানে সবাই কিনা রাজি হয়ে বসে আছে।’
নিবিড় বলল , ‘ মেয়ের বয়স যাইহোক সেটা বাদ দাও। কাকা মেয়ে স্ব ইচ্ছায় রাজি থাকলে তুমি বিয়েটা করবে তাই তো?’
রাফসান বলল, ‘ হুম।’

‘ আচ্ছা। মেয়েটার সাথে একদিন দেখা করার প্লান করতে হবে। তারপর জানা যাবে তার মনের খবর। ‘
‘ আমি দেখা ফেখা করতে পারব না। তুমি সবাইকে এই বিয়ে নিয়ে এগুতে মানা কর।’
‘ উফফ এতো মাথা গরম করো না তো। এতো দিন পর আমার কাকা বিয়ে করবে তা এতো সহজেই ভাঙা যায় নাকি। ওই মেয়েকে আমি বিয়ের জন্য রাজি করিয়ে আনব‌। তুমি মাথা গরম করো না।’

‘ রাজি করিয়ে আনবি মানে। তোকে আমি রাজি করাতে বলি নাই। জাস্ট ওর মনের খবরটা বলবি।’
‘ তুমি চাইতাছো আমি গিয়ে দেখা করি একা?’
‘ হুম।’
‘ না না না তুমি চলো প্লিজ।’
‘ তাইলে বাদ দে আমি কোথাও যেতে পারব না।’

নিবিড় চলে এলো রুমে থেকে। নিজের রুমে এসে আলমারী খুলে ছোঁয়ার ব্যাগটা বের করে আনলো। ব্যাগের ভেতর কি আছে ও জানে না আনার পর থেকে এইভাবে তুলে রাখছিল। ও ভেবেছিল এই ব্যাগ দেওয়া নিয়ে ছোঁয়াকে কোনটা শর্ত দিবে। কিন্তু লিলির কথা শুনে মনে হচ্ছে না আর ছোঁয়ার দেখা পাব এখন এই ব্যাগ ও করবে কি?

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৮

ব্যাগের ভেতর নাকি ছোয়ার ফোন আছে সেখানে থেকে ওর বাসার কারো নাম্বার নিয়ে কল দেয়।
ফোনের জন্য ব্যাগটা বের করল নিবিড়‌। লিলিকে জিজ্ঞেস করেছিল ওর বাসায় কোথায় লিলি কিছু বলেনি এমনি আর কথাই বলে নি ওর সাথে। নিবিড় ও যায় নি ঠেকা কি এতো?

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১০