অবাধ্য প্রেম পর্ব ৮

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৮
নন্দিনী নীলা

‘ হ্যালো, ক‌ই তুই?’
‘ আমি মামীদের বাসায়।’
লিলি বলল, ‘ সেখানে কি করিস কলেজ আসবি না। আর পরিক্ষা দুইদিন পর তুই সেখানে গিয়েছিস কেন?
‘ আমি আসি নি আমাকে মামী জোর করে নিয়ে এসেছে!’

লিলি অবাক গলায় জিজ্ঞেস করল, ‘ মানে কি?’
আমি বললাম, ‘ মামী আমার বিয়ে ঠিক করেছে। তিনি আর আমাকে পরাতে চায় না।’
‘ তুই তো নিজের খরচ নিজে চালাস তাহলে তার না পরানোতে আসে যায় কি?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ কোন ভাবেই আমাকে পরতে দেবে না। আমি অনেক বলেছি শুনে নাই‌। তিনি আমায় বিয়ে দিয়েই ছাড়বে। আমি পালাতেও পারব না। সব পথ বন্ধ করে দিছে তুই দীপার সাথে কন্টাক্ট রাখিস।’
‘ আচ্ছা। কিন্তু আমি এটা মানতে পারছি না। এইভাবে তুই আলাদা হয়ে গেলি আমি এখন একা কলেজে কি করে থাকব।’
‘ একটা দোয়া কর যেন পাত্র পক্ষের আমাকে পছন্দ না হয়।’
‘ শোন…

আমি আর লিলি কথা শুনতে পারলাম না। মামি দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। আর বলছে, ‘ আর কতো কাল দরজা বন্ধ করে থাকবি? নাকি পালানোর মতলব করছিস। তারাতাড়ি দরজা খোল ছোঁয়া আমার সাথে চালাকি করলে এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।’
আমি তাড়াতাড়ি কল কেটে দরজা খুললাম। আর বললাম, ‘ আমি ঘুমাচ্ছিলাম। এখন কি একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারব না তোমার জ্বালায়।’

‘ পারবি না কেন? ভালো করে ঘুম পার তাইলে না সুন্দর লাগবে দেখতে। কিন্তু দরজা লক করতে পারবি না। তোকে আমি এক বিন্দু বিশ্বাস করি না।’
‘ এতো অবিশ্বাস তাইলে আসো আমার সাথে ঘুমাও যত্তসব।’

সত্যি সত্যি মামি বালিশ নিয়ে আমার কাছে চলে এসেছে এটা দেখে নিজের কপালে বাড়ি মেরে মেরে যেতে ইচ্ছে করছে। এখন রবিনের ফোনটা ওকে কি ভাবে দেব? রবিন আমার মামাতো ভাই। ক্লাস নাইনে পরে। ওর থেকে ফোনটা নিয়ে আমি লিলিকে কল দিয়েছিলাম। মামি যদি জানতে পারে আমি ফোন নিয়ে কাউকে কল দিয়েছি আমার খবর আছে।
আমি জরোসরো হয়ে শুয়ে আছি মামি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ তোর ফোন ক‌ই?’

আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম কি বলব এখন! ফোনটা তো নিবিড় এর কাছে। আমার ফোন ব্যাগ নিবিড় এর কাছে এসব লিলিকে জানিয়ে দিয়েছি ওর যেন সব নিয়ে নেয়। মামি আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আমি ঢোক গিলে বললাম, ‘ কেন আমার ফোন দিয়ে কি করবা?’
‘ নিজের ফোন থাকতে রবিনের ফোন আনছিস কেন?’

আমি থপ করে উঠে পরলাম, ‘ মানে !’
মামি আমার বালিশের নিচে থেকে ফোন বের করে আমার সামনে ধরল, আমি বললাম,’ আমার ফোনে টাকা নাই তাই আনছিলাম।’
‘ তোর নাগররে কল দিচ্ছিলি তাই না?’

আমি নাক ছিটকে বললাম, ‘ ছিহ মুখের কি ভাষা। একদম বাজে কথা বলবে না।’
‘ একা একা শহরে থাকিস। আবার নিজের টাকা নিজেই ইনকাম করিস কিভাবে হ্যাঁ? এতোই সোজা টাকা কামানো। কতো গুলো ছেলে জুটাইছিস তাই ক

‘ দয়া করে মামি চুপ করো। তোমার মতো নোংরা মস্তিষ্কের মানুষ এসব‌ ছাড়া আর কি ভাবতে পারে।’
‘ সত্যি বললেই গায়ে ফোসকা পরে তাই না‌। কাল পাত্র পক্ষ আসবে কোন রকম ঝামেলা করবি না সুন্দর করে কথা বলবি। তাদের যেন তোকে পছন্দ হয় না হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।’
‘ আমার মতো কালো মেয়েকে তাদের পছন্দ হবে না তাই আগে বলছি এসব করা বন্ধ করো এখনো সময় আছে। আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।’

‘ ঘুমা তো। রাত জাগলে চোখের নিচে কালো দেখা যাবে আয় মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।’
আমি দাঁত কিড়মিড় করে শুয়ে পরলাম।

পরদিন লিলি মন খারাপ করে ভার্সিটিতে আসতেই ওর দেখা হয় নিবিড় দের সাথে। লিলি ছোঁয়ার ব্যাগ নেওয়ার জন্য ওদের দিকে গিয়ে যায়। নিবিড় আর সবাই ফোনে কি যেন খেলছে আর চিৎকার করছে। লিলি ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি বলে ডাকবে বুঝতে পারছে না।

অবশেষে নিবিড় ভাইয়া বলে ডাকল কিন্তু ওর কথা কারো কান অব্দি পৌঁছালো না। ও খুব জোরে ডাকে নি। আস্তে করেই ডেকেছে আর সবাই কথা বলছে হাসছে তাই ওর কথা কাছে যায়নি। হঠাৎ নিবিড়ের নজর পরে ওর দিকে আর ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? সবাই তখন লিলির দিকে নজর দেয়।
লিলি থতমত খেয়ে যায়। আর তোতলাতে তোতলাতে বলে, ‘ ভাইয়া ছোঁয়ার ব্যাগটা দিন প্লিজ। ওর আমাকে আপনার থেকে ব্যাগ নিতে বলেছে।’

নিবিড় নির্লিপ্ত গলায় বলে, ‘ যার ব্যাগ তাকে এসে নিতে বলো।’
লিলি ঢোক গিলে বলে, ‘ ও আসতে পারবে না। আমার কাছে দিন প্লিজ।’

নিবিড় রাষান্বিত গলায় বলে,’ সো সরি। তোমার বান্ধবী কে আসতে বলে। নাহলে ব্যাগের আসা ছেড়ে দিতে বলো। ‘
‘ আপনি বুঝার চেষ্টা করুন ও আসতে পারবে না। আসতে পারলে কি আসতো না। ও আর কোনদিন এই কলেজে আসবে না সেই পথ বন্ধ হয়ে গেছে দয়া করে ব্যাগটা দিন আমি ওর কাছে পৌঁছে দিব। ‘

নিবিড় অবাক স্বরে বলল, ‘ আর আসবে না মানে? আমার ভয়ে কলেজ ছেড়ে দিল নাকি। তোমার বান্ধবী কে তো আমি সাহসী ভাবছিলাম এখন তো দেখছি ভীতুর ডিম। ভয়ে একদম লেখাপড়াই বাদ দিয়ে দিছে।’
‘ দেখুন ভাইয়া ছোঁয়া কে নিয়ে বাজে কথা বলবেন না। ও মুটেও ভীতু না ও যথেষ্ট সাহসী। ও আপনার ভয়ে কলেজ ছাড়ে নি। ও কলেজ ছেড়েছে অন্য কারণে।’

‘ আমি জানি এসব মিথ্যা গল্প বলছো । ভয়ে আমার সামনে আসবে না তাই ব্যাগ তোমাকে দিয়ে নেওয়াতে চাইছে। দুইদিন পর‌ই দেখব কলেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
লিলি এবার কপাট রাগী গলায় বলল, ‘ আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নাই মিথ্যা গল্প বলতে আসবো। আর ছোঁয়া চাইলেও আসতে পারবে না কারণ ওর বিয়ে।’

নিবিড় চমকে উঠল বিয়ের কথা শুনে অস্পষ্ট স্বরে বলল, ‘ হোয়াট? রিয়েলি!’
‘ থাক দিতে হবে না। ওই ব্যাগ আপনি নিজের কাছেই রাখেন গা। আমি তো আমার কাজ করেছি চাইছি আর ছোঁয়ার সাথে আমার ও দেখা হবে না তাই আমিও ওকে দিতে পারব না। তার থেকে আপনার কাছেই থাক।’

বলেই লিলি চলে গেল। আর পেছনে রেখে গেল নিবিড় এর বিস্ময়কর চাহনি। নিবিড় ফট করেই বসা থেকে উঠে চলে গেল। নিবিড়ের ফ্রেন্ডরা ওকে ডাকতে লাগল আর কি হয়েছে জিজ্ঞেস করল নিবিড় উওর দিল না।

মামি আমাকে গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে‌‌। এটা মামির ফেবারিট শাড়ি‌। একদিন আমি এই শাড়িটা ধরেছিলাম বলে মামি আমাকে ঠাস করে থাপ্পড় মেরেছিল। আর আজ সেই শাড়িটাই মামি স্ব‌ইচ্ছায় আমাকে পরিয়ে সাজিয়ে দিচ্ছে ভাবা যায়‌।

আমি নিজ ইচ্ছায় সাজাচ্ছে পাত্র পক্ষকে জোর করেই মনে হয় পছন্দ করাবে। মুখ দিয়ে না বের হতেই দিবে না। আমি দাঁত চেপে সহ্য করছি এই ন্যাকামি।
‘ কোন গন্ডগোল করবি না বলছি।’
‘ আচ্ছা।’

মামি খুশি হয়ে চলে গেল। একটু পর শুনলাম সবাই চলে এসেছে আমি জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম বড় বড় কয়টা গাড়ি এসেছে। লোকরা যে বিরাট ধনী তাদের গাড়ি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৭

গাড়ি থেকে এতো এতো ফল মিষ্টি নামাচ্ছে তা দেখে আমার মাথাই ঘুরে উঠলো। আমি হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছি। সাথে অবাক হলাম পুলিশ দেখে। কোন পুলিশ অফিসারের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে নাকি মামি?
এতো লোক এলো আমি ভাবছি এই ছোট ঘরে এই এতো মানুষের জায়গা হবে কীভাবে।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৯