অবাধ্য প্রেম পর্ব ৭

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৭
নন্দিনী নীলা

‘শুনলাম তোমার বান্ধবী দীপা নাকি তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে গিয়েছে। এই রাতের বেলা তুমিওকি বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালানোর মতলব করছ নাকি?’

আমি কটমট চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘আমি কার সাথে পালাবো! কোথায় যাবো! কি করবো! সেই সব আমার আপনাকে বলা লাগবে? কি করছো কোথায় যাচ্ছি! না যাচ্ছি! সেসব আমি আপনাকে কেন বলতে যাবো? আর আপনি আমাকে জেরা করছেন কেন? মনে হচ্ছে আপনি পুলিশ আর আমি চোর!’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিবিড় বাঁকা হেসে বলল, ‘তুমি চোর হবে না তুমিতো চুন্নি হবে। আর আমার তোমাকে জেরা করবার বা তুমি কোথায় যাচ্ছ জানার কোনো আগ্রহ নেই। আমি তো আমার কাজ করতে এসেছি।’
আমি অবাক গলায় বললাম, ‘তাই?? আপনি বুঝি কাজ করতে এসেছেন। তাহলে নিচের কাজ না করে আমাকে কেন জ্বালিয়ে মারছেন?’

নিবিড় আমার দিকে শয়তানি চাহনির দিয়ে বলল, ‘তোমাকে জ্বালানোটাই তো আমার একমাত্র কাজ। ‘
আমি বিস্মিত গলায় বললাম, ‘ কিহহ বললেন?’

নিবিড় আমার কথার উত্তর দিল না। আমার দিকে এগোতে লাগল আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেই যাচ্ছি।
‘আমাকে জ্বালানোটা আপনার একমাত্র কাজ? এসবের মানে কি? আপনি ইচ্ছে করে আমাকে ফলো করছেন। আর আমার পেছনে পরেছেন তাইনা। দেখুন সেই একটা ব্যাপারকে ইসু করে বারবার আপনি আমার কে হেনস্তা করতে পারেন না। এবার যদি আপনি বেশি বাড়াবাড়ি করছেন তাহলে কিন্তু আমি মেয়েদের ইভটিজিং করার জন্য থানায় যাব আপনার নামে….

আমার কথা সম্পন্ন হতে দিল না শয়তান নিবিড় আমার কাছে এসে আমার কাঁধে থেকে ব্যাগটা একটান মেরে নিলো। আমি বড় বড় চোখ করে আমার কাঁধে থাকা ব্যাগ টা নিবিড়ের হাতে দেখছি।এক টানের আমার কাঁধে থেকে ব্যাগটা নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে।

‘এটা কেমন ভদ্রতা! আপনি আমার ব্যাগ নিলেন কেন? আমার ব্যাগ দিন বলছি।’
বলতে বলতে আমি নিবিড়ের হাতের দিকে নিজের হাত বাড়ালাম ব্যাগ নেওয়ার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে নিবিড় হাত শূন্যে তুলে নিল।

আমি লাফিয়ে ব্যাগ নেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। পারবো কিভাবে এই নিবিড় এমনিতেই তালগাছের মতো লম্বা তারপর হাত উঁচু করেছে আমি কি তার হাতের নাগাল পাবো নাকি। লাফিয়ে সেটা ধরতে পারলাম না।
তাই ব্যর্থ হয়ে থেমে গিয়ে শান্ত চাহনিতে তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আপনি আমার ব্যাগ নিয়ে এমন করছেন কেন? এই ব্যাগে লক্ষ লক্ষ টাকা নাই। দয়া করে আমার ব্যাগটা ফেরত দিন।’

‘আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু নো হোয়াট ইন দ্যা ব্যাগ। আমার তো এই ব্যাগটাই চাই।’
‘আমার ব্যাগ আমাকে ফেরত দেন ভালোয় ভালোয় বলছি।’
‘দেবো না কি করবে? আচ্ছা নাও তুমি যদি এটা টাচ করতে পারো আমি তোমাকে ফেরত দিয়ে দেবো।’
‘আমার ব্যাগ নিতে আমি আপনার শর্ত মানতে যাব কেন? চুপচাপ আমার ব্যাগ দিন আর চলে যান এখান থেকে।’
‘ওকে চলে যাচ্ছি। একটা চান্স দিয়েছিলাম কিন্তু চান্সটা নিলে না।’

নিবিড় ব্যাগ নাচাতে নাচাতে চলে যেতে নিলো। আমি দৌড়ে গিয়ে নিবিড় এর শার্ট টেনে ধরলাম পেছন থেকে।
‘আরে আরে আমি আপনাকে আমার ব্যাগে রেখে যেতে বলছি। আপনি আমার ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছেন কেন?’
নিবিড় রক্ত চোখে আমার দিকে তাকাতেই আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম। আর সাথে সাথে শার্ট থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলাম।

নিবিড় আমার দিকে ঘুরে আমি যেখানে শার্ট স্পর্শ করেছিলাম সেখানে তাকিয়ে বলল, ‘ ডোন্ট টাচ মাই শার্ট রুডি গার্ল।’
আমি মিনমিন করে বললাম, ‘আমি আপনার শার্ট একটু স্পর্শ করলাম আর আপনার এত গায়ে লাগল। আর আপনি যে আমার ব্যাগটা নিয়ে যাচ্ছেন আমার কেমন লাগছে বলেন তো। ‘

‘তোমার ব্যাগ নিয়ে তোমাকে একটা চরম শাস্তি দেওয়াটা আমার অধিকার কারণ তুমি এর প্রাপ্য।’
‘মানে আমি কি করেছি যা হয়েছে সব ত মিটে গেছিল আবার কেন সেগুলো টেনে আনছেন?’

‘তুমি আফিয়াল সাথে যা করছো। সেটা যদি আমি আফিয়া কে জানিয়ে দিই তাহলে তোমার কি অবস্থা হবে তুমি ভাবতে পারছ না। আমি তোমাকে এক দিক দিয়ে বাঁচিয়ে নিজে তোমাকে একটা শাস্তি দিচ্ছি তাই আমার শাস্তি মাথা পেতে নাও।’
‘ দয়া করে আমার ব্যাগটা দিয়ে দিন আমাকে এখন একটা দরকারি কাজে যেতে হবে আমি যদি যেতে না পারি আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে।’
‘আমি তো এটাই চাই।’

বলে নিবিড় আমার ব্যাগটা নিয়ে ওর মাইক্রো গাড়িতে উঠে বসলো তারপর চলে গেলো আমি সেখানে ধপ করে বসে পড়লাম এখন কি করবো।
.
পরদিন মামী আমার বাসায় এসে হাজির। আমি কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলতেই মামীর হাতে একটা জোরে থাপ্পর খেতে হলো। আমি গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে মামীর দিকে তাকালাম।
‘এত করে ফোন দিয়ে যেতে বললাম তাও গেলি না। তোর মত অকৃতজ্ঞ মেয়ে তো আমি দুটো দেখি নাইরে।’
‘বিশ্বাস করো আমি যেতে চাইছিলাম আমি বের ও হয়েছিলাম কিন্তু…

আমাকে থেমে যেতে হল নিবিড়ের কথা মামি কে কি বা বলব! আর বললেও তো মামি উল্টাপাল্টা কিছু ভেবে বসবে। এটা তো আর মামী কি বলা যাবে না। আমি চুপ করে গেলাম দেখে আমি আর বলার সুযোগ পেয়ে গেল,

‘ আমাকে মিথ্যা বলিস আমার সাথে মিথ্যা কথা? তুই যেতে চাইছিলি বের হয়েছিল তাহলে তুই গেলিনা কেন? তোর জন্য কেন আমাকে এত কথা শুনতে হলো? তোর জন্য সবাই আমাকে যা নয় তাই তাই বলে অপমান করল। এত বড় সর্বনাশ করলি আমার আর শান্তিতে ঘুমাচ্ছিস। বাসায় তাই না তোর শান্তি আমি ছুটাচ্ছি। আজ‌ই তুই আমার সাথে বাড়ি ফিরে যাবি।

‘কী হয়েছে মামী কার কী হয়েছে? আর সবাই তোমাকে কথা শোনাচ্ছে মানে কি?’
‘কত ভালো ছেলে পেয়েছিলাম কত কোটি টাকার মালিক। তোর জন্য সেই বিকেল থেকে বসে ছিল। আমি তোকে এত যেতে বললাম তুই গেলিনা তার আমাকে কতো কথা শুনালো।’

‘তুমি আবার আমার বিয়ে ঠিক করছিল? আর আমাকে মিথ্যা কথা বলে ওই ভাবে নিচ্ছিলে? আমি তোমাকে বলেছি আমি এখন বিয়ে করবো না তাও কেন এসব করো।’
‘বিয়ে তাকে করতেই হবে। আর আমার পছন্দই করতে হবে। আমি এক সপ্তাহের ভেতরে তোকে বিয়ে দিব। তাদের হাতে পায়ে ধরে হলেও তোকে আমি ওই বাড়িতেই বিয়ে দেব চল তুই আমার সাথে।’

‘আমি কোথাও যাবেন‌। আর আমার পরীক্ষা কয়দিন পর। আর আমি তো বিয়ে করার জন্য কখনোই যাবো না। তুমি চলে যাও।’
‘আমার মুখের উপর কথা বলছিস তুই?’

‘হ্যাঁ বলছি তোমাদের কাছ থেকে তো এখন আর আমি টাকা নেয় না। আমি নিজের টাকা নিজেই জোগাড় করি‌। আর নিজে জোগাড় করে নিজের চলছি‌। তাহলে তুমি কেন আমার পেছনে পড়ে আছো। তোমার বাসায় থেকে তো আর তোমার অন্ন ধ্বংস করছি না। তাহলে আমাকে আমার মত থাকতে দাও। আমাকে আর জ্বালিয়ো না। ‘

‘ওই বাড়িতে তোকে বিয়ে দেবোই। তুই আমার সাথে যাবি না হলে তোর মামাকে আমি কিন্তু আর একটা ওষুধ ও খাওয়াবো না ঘরের এক কোনায় পড়ে আছে এভাবে পড়ে থাকবে‌।’
‘সে শুধু আমার মামা না সে কিন্তু তোমার স্বামীর তার উপর তুমি এমন টা করতে পারবেন?’

‘কি করতে পারি আর না পারি অবশ্যই তুই আমার কাছে থেকে জেনেছিস। নাকি সেই সব দিনগুলো ভুলে গেছিস। আমি নিজের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারি। যেখানে নিজের সন্তানকে ছাড় দেয় না।’
‘জীবনে তোমার মতো এতো খারাপ বউ আর মা আমি দেখিনি।’

‘মুখে মুখে তর্ক করা বাদ দিয়ে সবকিছু গুছিয়ে নে তোর লেখাপড়া এখানেই সমাপ্ত যদি শশুর বাড়ি গিয়ে তাদের মানি করতে পারিস তো করিস।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৬

‘ এই পাপের জন্য একদিন তোমাকে পস্তাতেই হবে। আর সেই দিন না আমার পায়ে পড়ে তোমাকে নিজের জান ভিক্ষা চাইতে হয়।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৮