অবাধ্য প্রেম পর্ব ২

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২
নন্দিনী নীলা

নিবিড় আমার দিকে দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এখন এগজ্যাক্টলি আমার কী রিঅ্যাকশন দেয়া উচিত আমি বুঝতে পারছি না। এতটাই রাগ হচ্ছে এই ভেজা শরীর মনে হয় আমার শরীর গরম হয়ে আসছে। কিন্তু আমি রাগটা প্রকাশ করতে পারছি না।

মন চাচ্ছে নিবিড় কে ধরে ইচ্ছামত আছড়ে দিতে। কিন্তু আদৌ কি সেটা আমার কি এই এই দানব টাকে আছড়ানো সম্ভব? নিবিড় দাঁত কেলিয়ে আমাকে চোখ মেরে চলে গেল শো করে। আমি ওইখানে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। দীপা অটোওয়ালা বিশ্মিত নজর দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছে, ‘ ভাই দয়া করে আপনি এখান থেকে যান। ‘

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

উনিও বিস্ময়ভরা চোখে আর একবার আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেল। দীপা আমার হাত ধরে বলল,’ তুই ঠিক আছিস ছোঁয়া?’
আমি রাগে ফুঁসছি। গরম চোখে ওর দিকে তাকাতেই ও বললো, ‘ দেখলি তো কি হলো? আজ তোর সাথে আমার আশাটা ভালোই হয়েছে। তাড়াতাড়ি উপরে চল। ওই দেখ রাস্তার লোকজন আমাদের দিকে কীভাবে তাকিয়ে আছে।’

রাগে আমার চোখ দিয়ে জল চলে এসেছে। দীপা আমার চোখে পানি দেখে হাত ধরে টেনে ভেতরে নিতে নিতে বলল, ‘আরে ইয়ার কাঁদছিস কেন? এতো সহজে তো তুই কেঁদে দেওয়ার মেয়ে না। এই কাজটা একদম ঠিক করেনি নিবিড় ভাইয়া। শুধু রঙ মাখানো পানি দিয়েই নয় একদম তোর মুখটা কালো করে দিয়ে গেল। উনি আসলেই খুব বেয়াদব।’

আমি বললাম, ‘ কেন তোর কে আগে ওনাকে খুব ভদ্র মনে হতো? ‘
‘না মানে..
‘দীপা তুই চলে যা বাসায় আজকে আমার মন মেজাজ খারাপ আছে। তোকে যে কারণে বাসায় নিয়ে এসেছিলাম তার কিছু আমি করতে পারবোনা।’

‘আচ্ছা আজকে থাক তাও আমি এখন যাব না। তোর মাথা গরম আছে আমি তোর মাথাটা ঠান্ডা করে যাব।’
‘শোন আমি নিজের মাথা নিজে ঠান্ডা করতে পারি। আমার কাউকে দরকার নাই। তুই থাকলে আমার মাথা গরম হবে তা থেকে। আমাকে একা থাকতে দে। তুই বাসায় চলে যা আমি তোকে ফোন দিবনি।’

এক প্রকার জোর করে দীপাকে পাঠিয়ে দিলাম। সিঁড়ি দিয়ে উঠতেছি তখন আমার পাশের ফ্লাইটের লাভলি আন্টির একমাত্র স্টাইলিশ মেয়ে প্রিয়া আমাকে এমন ভুতের বেশে দেখে ওতো এক চিৎকার দিয়েছে। ওর চিৎকার শুনে মনে হয় আমার কানে তালা ফেটে গেছে। আমি সিঁড়িতে পিছলে পড়তে পড়তে বেঁচেছি।
সিড়ির হাতল ধরে আমি ওর দিকে চেয়ে বললাম,, ‘আরেকবার চিৎকার মারলে কিন্তু একদম জড়িয়ে ধরবে। তখন আমার মতন তোকে ও ভূত দেখা যাবে।’

প্রিয়া ভয় আড়ষ্ট হয়ে গেছিল। কন্ঠটা পরিচিত পেয়ে প্রিয়া ভ্রু কে বলল, ‘এই তুই ছোঁয়া না।’
আমি উত্তর দিলাম না। প্রিয়া এবার রাগী কন্ঠে নাকে ছিটকে বলল, ‘ছিহ কি অবস্থা মুখে কালি দিয়ে। সারা শরীর ভেজা রঙ দিয়ে কেমন দেখাচ্ছে। তোকে দেখে তোমার ঘেন্না পাচ্ছে রে ছোঁয়া। তুই তো এমনি কালো। তারপর এমন কালি মাখিয়েছিস তোকে তো একদম পেতনির মত লাগছে।’

‘ কি বললি আমাকে পেতনির মত লাগছে আয় তোকেও পেত্নী বানিয়ে দেয়।’
বলে আমি ওর দিকে এগুতে লাগলাম। প্রিয়া পেছনে ঘোরে এক দৌড়ে উপরে চলে গেল। আর চেচাতে চেচাতে বলল, ‘কালি বা*চ্চা কালি, রাক্ষসী আমাকে নোংরা করতে আসছিস। মায়ের কাছে এখনই বিচার দেব‌ দাঁড়া। ‘

প্রিয়া চলে গেল। আমি নিজের রুমে এসে তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে মুখে দিকে তাকালাম। সাথে সাথে নিবিড় এর হাত আমার মুখে ঘষে দেওয়ার কথা মনে পরলো। রাগে আমার গা পিত্তি জ্বলে উঠলো। আমি তখন নিবিড় এর হাতটাও টেনে ধরতে পারিনি। এতটাই স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম যে আমার মাথায় কাজ করছিল না। পোশাকটার দিকে তাকিয়ে মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। পোশাকটা মা নিজে পছন্দ করে আমাকে দিয়েছিল নষ্ট হয়ে গেল। সাদা জামার এই রঙ তো কোনদিন উঠানো যাবে না।

জামাটার জন্য অজান্তেই আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো। সাথে ওই নিবিড় এর উপর প্রচন্ড রাগ হলো। একবার সুযোগ পেয়ে নেয়।

পরদিন ভার্সিটিতে আসতেই দেখা হলো নিবিড় এর গ্যাঙ দের সাথে। সবাই জরো হয়ে বসে আছে‌। আমি মাথা উঁচু করে দেখলাম ওরা সবাই আমার ডিপার্টমেন্টের সামনে বসে আছে। ডিপারমেন্ট ঢুকতে গেলে ওদের কাছ দিয়ে আমাকে ক্রস করতে হবে। আমি কটমট চোখে সবার মাঝখানে বসে থাকা অসভ্য নিবিড় এর দিকে তাকালাম। নিবিড় ও সাথে সাথে আমার দিকে তাকালো। আর সাথে সাথে চোখ থেকে কালো সানগ্লাসটা খুলে আমার দিকে দুষ্টু চোখে তাকালো। আমি জ্বলন্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই চোখ মারল।

আমি তেরে যেতে লাগলাম নিবিড় দের কাছে। আর তখন‌ই কে জানি ইচ্ছে করে আমাকে ল্যাং মারে আর আমি মুখ থুবরে পড়ে যায়। শুধু পড়ি নি একদম নিবিড় এর উপরে গিয়ে পরেছি। ভরা মাঠে দুজনের‌ই এক বিচ্ছিরি লজ্জাকর অবস্থা তৈরি হলো। আমার মুখ গিয়ে ঠেকেছে নিবিড় এর গলায়। আমি একদম নিবিড় এর কাঁধ ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরেছি ভয় পেয়ে‌। নিবিড় সাথে সাথে আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে চিৎকার করে উঠে দাড়ায়।

‘ হাউ ডেয়ার ইউ। ওয়ারিং অন মাই বডি।’
এতো গুলো মানুষের সামনে একটা ছেলের গায়ের উপর পরে আমার অবস্থা খুব খারাপ। আমি লজ্জায় চুপ করে জামা কাপড় ঠিক করে উঠে দাঁড়ালাম। এই কাজটা কে করল? কে আমাকে এই হনুটার উপর ফালালো।
আমি এখানে বসে থাকা আর দশজনের দিকে তাকালাম আর সাথে সাথে ধরে ফেললাম এই কাজটা কে করেছে। ওই আফিয়াই এ কাজ করেছে। কেমন শয়তানি চাহনী দিয়ে আছে।

দীপা এসেই আমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম, ‘ দীপু ওই আফিয়া আপু আমাকে ইচ্ছে করে ল্যাং মেরে নিবিড় এর উপর ফেলেছে। এখন এই আফিয়া কি করতে মন চায় বল তো‌।’
দীপা বলল, ‘চল এখান থেকে। কাউকে কিছু বলার দরকার নাই। আর বললেও তুই এতো জনের সাথে পারবি না।’
‘ কালকে থেকে অনেক সহ্য করেছি আর না। আমি তো বল‌ব‌ই।’

বলেই দীপার হাত জোর করে ছাড়িয়ে আমি আফিয়া মেয়েটার সামনে যাচ্ছিলাম। তখন নিবিড় আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বলে, ‘ সুন্দর, হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই গায়ে পড়তে মন চায় তাই না? নিশ্চয়ই জেনে গেছে আমার ক্ষমতার কথা। এজন আজকে আমার গায়ের উপর পরে পরলে তাইনা নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে। কালকে আমার দের লাখ টাকার ফোন ভেঙেছো। এখন সেই টাকা ফেরত দাও। না হলে আমি কিন্তু তোমাকে এই কলেজ থেকে বের করে দেবো। মাইন্ড ইট।’আঙ্গুল উঠিয়ে শাসিয়ে বললো কথাটা নিবিড়।

আমি বললাম, ‘নিজেকে আপনি খুব সুন্দর হ্যান্ডসাম ভাবেন তাই না। কিন্তু আপনি কিন্তু মোটেও সুন্দর না। ফার্মের মোরগের মত শুধু ধলা।’
‘ইউ তুমি আমাকে ফার্মের মোরগ বললা? ইউ হ্যাভ সার্চ এ বিগ চ্যালেঞ্জ!’ রাগান্বিত স্বরে বলল।

আমি বললাম, ‘ যেটা সত্যি আমি সেটাই বললাম। আর শুনেন আমার আপনার গায়ে পড়ার এত সব জায়গা নাই। আমি এবার ও ইচ্ছে করে আপনার গায়ের উপর পরি নাই। এইটা আপনার ফ্রেন্ড সার্কেলের লোক করেছে। তারা আমাকে ইচ্ছে করে ল্যাং মেরেছে আর আমি তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেছি।’

নিবিড় আমার কথা শুনে হাহাহা করে হেসে উঠলো। আর বলল, ‘তুমি আমাকে মিথ্যা একটা এক্সকিউজ দেবে আর আমি বিলিভ করি নেব? ওরা কেউ এমন করবে না। তুমি ইচ্ছে করে পরে। এখন ওদের ফাঁসানোর ট্রাই করছ। আর ওরা এমন কিছু করার কথা ভাবলে আমাকে অবশ্যই জানিয়ে নিতো। আমাকে না জানি ওরা কিছুই করেনা।’

‘ও আচ্ছা তারমানে এই ফালানোর বুদ্ধিটা আপনারই ছিল। বন্ধুদের সাথে এই প্ল্যান করে এখন আমাকে বলছেন আমি নির্লজ্জ মেয়ে সুন্দর ছেলেদের গায়ে পড়ার জন্য সব করছি তাই না। আপনি তো আমার ভাবনা থেকেও খারাপ দেখছি। নিজে প্লান করে এসব করে এখন আমাকে নির্লজ্জ বেহায়া বলছেন। আসলে লুচু মার্কা ছেলে আপনি। আপনার তো চরিত্রে দোষ আছে বড়লোক বাবার বখাটে ছেলে যাকে বলে। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আপনি ভার্সিটি সবাইকে নিজের হাতের মুঠোয় করে রেখেছেন আবার বড় বড় কথা বলতে আসেন। আপ….

আমি কথা শেষ করতে পারলাম না। নিবিড় আমার দিকে রক্ত চোখে তাকিয়ে আছে। নিবিড় আমার এক হাত খামচে ধরল। এমন ভাবে ধরেছে মনে হলো লোকটার হাতে ছিল বড় বড় নখ আর সবগুলো নখ আমার হাতে বিঁধে গেছে।

আমি রেগে চিৎকার করে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। হাত তো ছাড়লোই না উল্টা নিবিড় আমার হাত আরো শক্ত করে ধরে আমাকে টেনে হেঁচড়ে কোথায় যেন নিয়ে যেতে লাগল। পেছন থেকে ওর বন্ধুরা জিজ্ঞেস করছিল কোথায় যাচ্ছে ও সবাইকে শুধু বলেছে কেউ যেন আমাদের পেছনে না আসে। আমি আরেক হাত দিয়ে নিবিড়ের হাত চিমটি মেরে বলছি, ‘ আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ছাড়ুন আমাকে। আপনি আসলেই একটা অসভ্য, ও লুচু মার্কা ছেলে। মেয়েদের সাথে কেমন বিহেভ করতে হয় জানেন না।’

নিবিড় আমাকে বাংলা বিভাগের পুরাতন বিল্ডিং এর যে রুমটা ছিল আগে। এখন এই রুমটায় ক্লাস করানো হয় না। নতুন বিল্ডিং এর ক্লাস করানো হয়। সেই নোংরা রুমে নিয়ে এসে আমাকে ভেতরে ছুড়ে মারল।

আর নিজে দরজা আটকে দিয়ে বলল, ‘কি বলছিলে আমার চরিত্রের দোষ আছে? আমি লুচু মার্কা ছেলে? আমি অসভ্য? ওকে এত কিছু যেহেতু নামের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে কিছু না করেই। তাহলে সবকিছু নিজের নামের সাথে চালানোর জন্য আমাকে কিছু করতে হবে। কিছু করেই না হয় এসব উপাধি নেব।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ১

ভয়ে আমি আঁটসাঁট হয়ে যাচ্ছি। সারা শরীর আমারে ঘেমে একাকার অবস্থা। আমার হাঁটু থরথরিয়ে কাঁপছে আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। এই মুহূর্তে আমার সমস্ত সাহস শক্তি কোথায় হাওয়া হয়ে একদম ভীত হয়ে গেছি নিজেও বুঝতে পারছি না। আমি নিজের কাঁপা হাত উঠিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিলাম। তারপর ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম, ‘ আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন? আপনি কি করতে চাইছেন?’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩