অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩
নন্দিনী নীলা

ক্লাসের একদম লাস্ট বেঞ্চে আমি চুপ করে পাথরের মত বসে আছি। আমার দুইপাশে আমার দুই বেস্টি বসে আছে। ওরা দুই পাশ থেকে আমাকে নানান প্রশ্ন করে যাচ্ছে। নিবিড় আমাকে তখন ওই ভাবে রুমে নিয়ে দরজা আটকে কি করেছে? আর আমি আসার পর থেকেই এমন পাথরের মূর্তির মতো বসে আছে কেন?

ওরা খুব দুশ্চিন্তা মুখে আমাকে জিজ্ঞেস করছে। কিছু বলছি না বলে ওরা ভাবছে না জানি কি হয়েছে।এ জন্য সান্তনা দিচ্ছে। আর আমি নিবিড় এর বলা শেষ কথাটা শুধু ভাবছি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বন্ধ রুমে একটা ছেলের সাথে থাকা কতটা অস্বস্তিকর আর ভয়ে সেটা শুধু একটা মেয়ে জানে। ভয়ে আমার শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছিল। আমি কি রেখে কি করব বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু নিজেকে যেভাবে হোক রক্ষা করবআমি ভেবেছিলাম। আর একবার এখান থেকে বের হয়ে আমি স্যারের কাছে কমপ্লেন করব। যত‌ই ক্ষমতার দাপট থাকুক না কেন আমাদের এইভাবে হেরাজ করতে পারেন না।

নিবিড় অন্ধকারে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আমি চিৎকার দিতে থাকি। উনি আমার মুখে এক হাতে চেপে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

‘ এখন ভয় পাচ্ছ কেন? তুমি না খুব সাহসী। কাউকে ভয় পাও না যা খুশি তাই বলে দাও। এখন ভয় কেন পাচ্ছ?’
আমি কথা বলতে পারছি না। উম উম করছি শুধু। নিবিড় আবার বলল, ‘ কি বলছিলে আমার চরিত্রের দোষ আছে? আমি অসভ্য তো এখন অসভ্যতামি করি! এখন তোমার সাথে আমি কিছু করলে আমার এতে কিছু আসে যাবে না। কিন্তু তোমার সারাটা জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। মেয়ে হয়েও এত ওভার সাহস দেখানো তোমার কি ঠিক হয়েছে? এবার তুমি কিভাবে আমার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবে?’

একেতে নিবিড়ের এইসব কথা শুনে আমার ভয়ে আত্মা শুকিয়ে আসছে। তারপর নিবিড় আমার সাথে একদম ঘেঁষে আছে। একটা ছেলে এত কাছাকাছি থাকায় আমার অবস্থা আরো খারাপ। তার উপর আমি কথা বলতে চাইছি কিন্তু আমাকে বলতে দেওয়া হচ্ছে না। উপায় না পেয়ে আমি নিবিড় এর হাত কামড়ে দিলাম। আমার দাঁতের আঘাত পেয়ে আমার মুখ থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিবিড় হাত ঝাকাতে লাগল।

আমি যেন দম ফিরে পেলাম জোরে একটা শ্বাস নিয়ে আমি চিৎকার করে বললাম, ‘ আপনার মত নোংরা চরিত্রের মানুষ আমি দুটো দেখি নাই। মেয়েদের কিভাবে সম্মান করতে হয় সেটা তো জানেন না। আপনি কোন সাহসে আমাকে এই রুমে এনে বন্দি করলেন।

আপনি যদি এখন আমার সাথে কিছু করেন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন তো? ওরা আপনার ফ্রেন্ড যাদের আপনি অনেকদিন ধরেই চিনেন। যাদের প্রতি আপনার বিশ্বাস আছে। কিন্তু আপনি আমাকে চেনেন না এজন্য আমার প্রতি আপনার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নাই ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে আপনি কি তাই বলে এভাবে একটা হেনস্থা করতে পারেন?’
‘তোমার মতো থার্ডক্লাস মেয়ের থেকে আমি অবশ্যই জ্ঞান নিতে চাই না।’

‘আমিতো থার্ডক্লাস মেয়ে কিন্তু আপনার চরিত্র থার্ড ক্লাস মানুষদের থেকেও খারাপ। না হলে আপনি আমাকে এখানে এনে নিজের জোর দেখাতেন না। আমরা থার্ডক্লাস ফ্যামিলির হলেও আপনাদের থেকে সভ্য ভদ্র আর মানুষের সম্মান করতে পারি।’

নিবিড় আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো?
‘হ্যাঁ জানি। আপনাদের সামনে একটা কথা বললেও তো বেশি কথা বলা হয়ে যায়। তো এখন কি করবেন করবেন? আপনি যদি আমার সম্মান কেড়ে নিয়ে খুশি থাকেন হ্যাপি থাকেন তো থাকেন। এখন আপনি কিছু না করলেও এই রুম থেকে বের হলে আমাকে হাজারটা প্রশ্ন সম্মুখীন হতে হবে।

আপনি ছেলে বলে আপনাকে কেউ কিছু না বলতে পারে। আপনার ক্ষমতা আছে বলে আপনার দিকে প্রশ্ন ছুরতে পারবে না। কিন্তু এরজন্য আমাকে পদে পদে সবার কাছে ইনসার্ট হতে হবে। গরিব বলে আমাদের তো কোথাও মাথা উঁচু হয়ে চলার অধিকার নাই। আপনাদের জন্য সব জায়গায় আমাদের মাথা নত হয়ে অসম্মানিত হয়ে চলাচল করতে হবে। তার থেকে বড় আজকের পর না হয় আমি নিজের জীবনটা শেষ করে দেবো। তখন না হয় আপনি আপনারা সবাই সুখে থাকবেন।’

নিবিড় আমার ঘাড় শক্ত করে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে একদম মুখের কাছে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘আমি খারাপ হলেও এতটা খারাপ না যে তোমার সাথে এখানে কিছু করার জন্য তোমাকে এখানে ধরে আনবো। এমন হাজার মেয়ে আছে যারা নিজের ইচ্ছে তে আমার সাথে সময় কাটানোর জন্য বসে আছি।

কিন্তু আমি তাদের দিকে চেয়েও দেখি না। খারাপ হলেও এতটা খারাপ না ওকে। আর তোমাকে এখানে শুধু এই কারনে এনেছিলাম যে তুমি আমাকে বারবার চরিত্রের দোষ দিচ্ছিলে আর আমাকে বাজে কথা বলছিলে যা আমি সহ্য করতে পারিনি। এজন্য আমি তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য এখানে নিয়ে এসেছি।

ভয় দেখানো ছাড়া তোমার সাথে আমি কিছুই করতাম না। হাজারো সুন্দরী মেয়েকে আমি ইগনোর করেছি। আর আমি কিনা তোমার মত একটা মেয়েকে টাচ করব। তুমি ভাবলে কি করে এটা? বের হয়ে যাও এই রুমে থেকে তোমার মুখ যেন আর আমি কোনদিন না দেখি। আর কোনোদিন তুমি আমার সামনে আসবে না।

দুটো দিন তোমার সাথে আমার সবচেয়ে খারাপ কেটেছে। তোমার মুখ দেখার পর থেকে আমার মাথাটা আগুন ধরে আছে। তোমার মত একটা মেয়ের সাথে দেখা করে আমি আমার মুডটা নষ্ট করতে চাই না। আজকের পর তুমি আমার ত্রিসীমানায় আসবেনা।

আর একটা কথা মনে রাখবে তুমি একজন মেয়ে তাই এতো বাড়াবাড়ি না থাকাটা তোমার নিজের জন্য‌ই ভালো। আমি না হয় তোমাকে ছেড়ে দিলাম কিন্তু এমন চলতে থাকলে যেকোন সময় যে কেউ তোমার দিকে খারাপ নজর দিতে পারে।’

আমি দরজা খুলে বেরিয়ে আসি। সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকি। দীপা আমাকে টেনে ক্লাসে নিয়ে আসে। তারপর থেকেই ওরা জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে আর আমি চুপ করে বসে আছি।
দীপা আমাকে বলল, ‘ কিছু বলবি না আমাদের? আচ্ছা চল আমাদের সাথে স্যার কাকে বিচার দেব নিবিড় শয়তানের নামে। এতো বড় স্পর্ধা ওর ও তোকে নিয়ে দরজা বন্ধ করল।’

আমি ঘাড় বাঁকিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলি, ‘ ও আমাকে টাচ করেনি। শুধু ভয় দেখিয়েছে।’
‘ সত্যি?’
‘ কেন আমার কথা বিলিভ হচ্ছে না তোদের? যদি বিশ্বাস না হয় জিজ্ঞেস করছিস কেন?’

‘ উফ রাগ করিস কেন? আমরা দুজনে খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। তোর জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিল। আর নিবিড় ভাইয়া তো খুব রাগী ভালো তোকে নিয়ে গেছিল তাই ভাবছি যদি কিছু… থাক যা হয়েছে এবার স্যারদের কাছে যেতেই হবে।’
আমি বললাম, ‘ আমি তো যেতেই চেয়েছিলাম তোরাই তো আটকে দিয়েছিস!’

‘ হ্যা কারণ বিচার দিলেও তোর উপর সমস্ত দোষ চাপিয়ে দেওয়া হবে তাই। কিন্তু আজ যা করেছে এটা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি কাজ। সবার সামনে তোর সাথে এমন করা উচিত হয়নি। এই দোষটা নিবিড় ভাই এরিয়ে যেতে পারবে না।’
‘ আমি স্যারদের কাছে বিচার নিয়ে যাব না।’

লিলি অবাক গলায় বলল, ‘ কেন? আজকে নিবিড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাক্ষী আছে সবাই তোর হয়েই কথা বলবে আমাদের ক্লাসের তুই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছিস কেন?’
‘ কারো স্বাক্ষীর দরকার নাই আমার‌। যখন আমাকে

টেনে রুমে নিয়ে গেল কেউ কি এসেছিল আমাকে বাঁচাতে? অঘটন ঘটে গেলে এখন আর বিচার দিয়ে কি লাভ হতো? এখন আমার কারো স্বাক্ষীর দরকার নাই।’
‘ তুই আমাদের ভুল ভাবছিস!
‘আমার ভালো লাগছে না। চুপ থাক দয়া করে।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ২

‘ কিন্তু…
‘ আমি নিবিড় এর নামে কোন অভিযোগ করব না। যা করার আমি নিজেই করব। ওই আফিয়ার জন্য এইসব হয়েছে ওকে আমি দেখে নিব‌’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪