অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪
নন্দিনী নীলা

দুদিন যাবত আফিয়া মেয়েটা কলেজে আসছে না। শায়েস্তা করার মোক্ষম প্লেন সাজিয়ে রেখেছি আমি কিন্তু তাকেই খোঁজে পাচ্ছি না। আজকেও আমি দুতলা থেকে অধীর আগ্রহে গেটের দিকে তাকিয়ে আছি। আজকে যেন শাকচুন্নিটা কলেজে আসে। কলেজ শুরু হতে আরও আধা ঘন্টা ওই মেয়েটাকে শায়েস্তা করার জন্য আমি প্রতিদিন এক ঘণ্টা আগে এসে কলেজে বসে থাকি। অথচ যার জন্য এত কিছু করি সেই আসেনা। আফিয়া না ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলের কাউকে দেখতে পায় না।

হুট করে সবগুলো উধাও হয়ে কোথায় গেছে আল্লাহ জানে। আমাকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে সবগুলো মিসিং। বিরক্ত হয়ে আমি দুতালা থেকে নিচে নেমে এলাম। মাঠ দিয়ে ঘোরাফেরা করছি হঠাৎ দেখতে পেলাম গেট দিয়ে আফিয়া আর ওর একমাত্র বেস্টু কি বলে যেন হাসতে হাসতে কলেজ ঢুকছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে লাফিয়ে উঠলাম। আর সাথে সাথে লুকিয়ে পড়লাম বকুল ফুল গাছের আড়ালে। কলেজে আমাদের ছোট মিনি পুকুর আছে সেখানে ওরা ফ্রেন্ড সাইকেল সবাই বসে আড্ডা দেয়। তো ও আর ওর বান্ধবী সেই দিকেই যাচ্ছে। আমি নক কামড়াচ্ছি। ওর সাথের মেয়েটাকে তাড়াতে পারলে কাজটা অনেক সুবিধার হতো। কি করা যায়?

ভাবনার মাঝে হঠাৎ আফিয়ার পাশের মেয়েটার ফোন বেজে উঠল আর মেয়েটা কি যেন বলে আবার পিছন দিকে আসলো তাকে পেছন দিকে আসতে দেখে আমি তো ভয়ে ছুট্টে অন্যদিকে ঘুরে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম।
উনি হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।

এবার দেখলাম ঐ শাকচুন্নি টা একাই বসে আছে। সকাল সকাল বলে দিকটাই বেশি মানুষ নাই কারণ সব ডিপার্টমেন্টের ক্লাস এক টাইমে না। আজকে আমাদের ডিপার্টমেন্টে ক্লাস 9 টা থেকে আর বাকিদের দশটা এগারোটা। এটাই যেন আমার জন্য সুবর্ণ সুযোগ।

আমি আমার ব্যাগ থেকে তাড়াতাড়ি কালো কুচকুচে রং টা বের করে আনলাম তারপর আমার কাছে পানির বোতল ছিল সেটার ভেতরের রঙ ঢেলে গুলিয়ে নিলাম। পা টিপে টিপে একদম আফিয়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বোতলের সম্পন্ন পানি ওর মাথায় দিয়ে দিলাম। ওর গায়ে ছিল আকাশী রঙের থ্রি পিস। কালো রঙের ওর অবস্থা নাজেহাল আমি আরো কয়টা রঙ বের করে ওর সারা শরীরে ঠেলে দিলাম।

এরকম একটা পরিস্থিতিতে ও চিৎকার চেঁচামেচি ছাড়া আর কি করবে বুঝতে পারছে না। আমি পেছনের দিকে ছুট লাগালাম আর তখনই কারো সাথে একটা ধাক্কা লাগল। তার বাহুতে আমার কপাল লাগে আমি ব্যথা পেয়েছি। মনে হল কোন লোহার সাথে বারি খেয়েছি।

আমি কপাল ঠলতে ঠলতে সামনে তাকিয়ে দেখি নিবিড় বাহু ধরে বিরক্তিকর মুখে আমার দিকে তাকিয়েছে।
আমি তাকাতেই একটা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ‘ ইউ? তোমাকে বলেছিলাম না আমার চোখের সামনে আসবে না নেক্সট টাইম?’

‘ আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নাই। আমি মনে হয় আপনার সামনে আসার জন্য আমি লাফাচ্ছি। আমি কি করে আসি নাই। এক্সিডেন্টলি চলে আসা হয়েছে। এক কলেজেতে পড়ি সামনে আসতেই পারে। সেইটা নিয়ে এত রিয়েক্ট করার কি আছে? এখন একটা লুকোচুরি কাজ করে এসেছি একদম আমাকে এখানে আটকে দিয়ে আমার কাজটা ভেস্তে দেওয়াবেন না।’

নিবিড় অবাক স্বরে বলল, ‘ তুমি আমাকে ধমকাচ্ছ? তোমার সাহস তো কম না! ‘
‘ও ভাই আমি কেন আপনাকে ধমকাতে যাব? আমি জাস্ট আমার সমস্যাটা আপনাকে বললাম। আর আমি আপনার সামনে চলে এসেছি। আচ্ছা আমার ভুল হয়ে গেছে। সরি! মাফ করে দিবেন! এবার আমাকে যেতে দিন ভাই দয়া করে!’
‘তুমি কি লুকোচুরি কাজ করেছো?’ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল নিবিড়।

এবার আমার টনক নড়লো কাকে আমি কি বলে দিলাম? হায় আল্লাহ। ব্লেন্ডার কাজ করে ফেলেছি।
আমি তাড়াতাড়ি মুখে হাত দিয়ে ঢোক গিলে চোখ ছোট ছোট করে অন্য সুরে বললাম, ‘আমি লুকোচুরি সেটা আবার কি? এভাবে আবার কাজ করা যায় না কি? আমি এমন কোনো কাজ করিনি আমি তো কলেজে এসেছি। আমি আসি আমার ক্লাস শুরু হয়ে গেছে 9 টায় থেকে আমার ক্লাস।’

নিবিড় কিছু বলার আগে আমি পাশ কাটিয়ে চলে এলাম। ওখানে আর দুই মিনিট থাকলে আমার পেটের সব কথা বের করে নিতো। তাহলে নেক্সট টাইম নিবিড় কে আমি কিভাবে জব্দ করতাম। আজকের ব্যাপারটা যদি জানাজানি হয়ে যায় তাহলে তো ওরা সতর্ক হয়ে যাবে। আমাকে ওদের সামনে মাথা নিচু করে থাকতে হবে আর খুব ভদ্র ভাবে চলতে হবে। বোঝাতে হবে আমি ওদের ভয় পাইছি। আমি ওদের সাথে টক্কর দেয়ার চেষ্টা করতেই পারি না এতো সাহস আমার নাই। এটা ওদের বোঝাতে হবে।

এদিকে নিবিড় মাথা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি দ্রুত পা চালিয়ে চলে যাচ্ছি। সন্দেহজনক লাগলেও আমাকে আর পিছু ডাকলো না। সামনে এগিয়ে গেল।
তখ‌ন‌ই আফিয়া ছুটে এসে নিবিড়ের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘দেখ কে যেন আমার….

আফিয়া সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে পারল না তার আগেই নিবিড় ওকে ধাক্কা দিয়ে নিজে থেকে সরিয়ে বলল, ‘ও মাই গড তোর এই অবস্থা কেন? তুই দেখতে পাচ্ছিস না আমি সাদা শার্ট পড়েছি। এই অবস্থায় তুই আমাকে আবার ধরেছিস। আমার হাতার কি অবস্থা করলি? এসব কি করে হলো?’

আফিয়া বলল, ‘আমি কিছু জানি না। আমি ওখানে বসে ছিলাম দ্যুতির ফোন আশায়ও ওইদিকে গেছে। ওর বয়ফ্রেন্ড নাকি কলেজের সামনে আসছে তাই দেখা করতে । আমি বসে ছিলাম হঠাৎ কে জানি এসব দিয়ে আমাকে ভূত বানিয়ে চলে গেছে।’

‘হোয়াট? কেউ তোকে ইচ্ছে করে এসব মাখিয়ে দিয়ে চলে যাবে কেন? এসে আবার কারো সাথে ঝগড়া করছিলি নাকি?’
‘তোর কি মনে হয় আমি সবসময় সবার সাথে ঝগরা করি। আজকে আমি কারো সাথে কথা বলিনি। আর আমি ঝগড়া করলেও কখনো কেউ আমার মুখের উপর কথা বলার সাহস পায় না। এতো দুঃসাহস দেখানো সাহস পাবে? এখন আমি কি করব?’

নিবিড় আফিয়াকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে সেকেন্ডে ওর চোখের সামনে একটা মুখ ভেসে উঠলো। সেই মুখটা আর কারো না ছোঁয়ার। ছোঁয়া কে ও ঠিক এভাবেই রঙের কালি দিয়ে ভুত বানিয়ে ছিল। আর সেম কাজ টা আফিয়ার সাথে ও হয়েছে। আর এখন ওই মেয়েটাও এই দিক দিয়ে গেল বলেছিল লুকোচুরি একটা কাজ করেছে। তাহলে কি এটাই সেই কাজ? যা বুঝার বুঝে গেছি নিবিড়।

দ্যুতি আর বাকি সবাই চলে এসেছি আফিয়ার এই অবস্থা দেখে হতভম্ব। রিসা এসে তো আফিয়ার এই অবস্থা দেখেই পেট চেপে হেসে ফেলল সাথে আকাশ ও। বাকিরা মুখ টিপে হাসছে। ওদের হাসতে দেখে আফিয়া রাগ দেখালো ওদের।
আফিয়া নিবিড় এর সামনে এসে বলল, ‘চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমার এই অবস্থা কে করছে তাকে খুঁজে বের করবি না?’

‘তুই এই ভূতের বেসে সাড়া কলেজ ঘুরে তাকে খুজবি?’
‘কেন কি হয়েছে?’
‘ চুপচাপ বাসায় যা। যা করার পরে করব।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৩

‘আমি বাসায় গিয়ে শান্তি পাবো না। তাকে ধরে পচা পানিতে চুবালে আমার শান্তি লাগে।’
‘ কলেজের সবাই তোকে দেখে হাসছে তাড়াতাড়ি বাড়ি যা। এখন সিনক্রিয়েট না করে।’
আফিয়া রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল‌। কলেজের অনেক উঁকি দিয়ে দেখছিল আর হাসছিল ও তো রাগে ক্ষোভে ফুঁসছিল শুধু।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৫