অবাধ্য প্রেম পর্ব ৫

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৫
নন্দিনী নীলা

দীপাকে কল করলাম। ও আজকে কলেজ আসবে না। ফোনটা তাও ও ধরে নি ধরেছে আন্টি মানে দীপার মা ধরেছে। দীপা ধরলে না হয় একটা ধমক দিতাম কলেজে না আসার জন্য। এত ভাল একটা কাজ করেছি ওকে না জানানো অব্দি আমার পেটের ভাত হজম হচ্ছে না যেন।

লিলি আসল ওকে দেখেই খুশি হয়ে বলতে চাইলাম। তার আগেই ও আমাকে একটা ঝাক্কাস খবর দিল
লিলি বলল, ‘জানিস আজকে দীপা আসবেনা। ওর আজকে…
‘ হ্যাঁ এইমাত্র জানলাম আজকে আসবে নাকি। আমাকে জানায়নি আমি ওকে ফোন দিলাম ও ফোন না ধরে ওর মাকে দিয়ে ধরিয়ে বলল। আজকে আসবে না কি বেয়াদব দেখ।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ওর কাছে ফোন থাকলে তো ও ফোন ধরবে। ওর ফোন তো ওর মা কেড়ে নিয়েছে।’
‘কিহহ এমনটা করেছে কেন আন্টি?’
‘আজকে তো দীপার আশীর্বাদ।’
আমি চোখ বড় বড় করে লিলি দিকে মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছি।

‘দীপার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল আর আমাকে কিছু জানালো না। সবসময় বলে আমি নাকি বেস্ট ফ্রেন্ড এই তার নমুনা।’
‘আরে কথা শেষ করতে দে আগে। ও তোকে জানাবো কি করে ও নিজেই তো কিছু জানতো না ও বিয়েতে রাজি হয়না বিয়ে করতে চায় না বলে ওর মা ভাবে ওর নাকি রিলেশন করে।

সেতো তুই আমি জানি। ওকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করেছে। আর আশীর্বাদ আজকে ও কালকে জানতে পেরেছে। আমি ওকে কল করেছিলাম একটা দরকারে তখন ও আমাকে বলে কান্নাকাটি করছিল। তোকে ফোন করে জানাবে বলল। সকালে আমি কল করেছিলাম তখন ওর ছোট ভাই ধরে বললো ওকে নাকি ঘরে বন্দি করে রেখেছে আর ফোন নাকি ওর মা নিয়ে নিয়েছে। এখন বলতো তোকে কিভাবে জানাবে আমিতো ভাবছি দুইটাই ক্লাস করে তোকে নিয়ে ওদের বাসায় যাব।’

‘আমি আর ক্লাস করব না এখনি চলে যাই। এখন ওর পাশে থাকা আমাদের দরকার তো শ্রাবণকে খুব ভালোবাসে। আরেক জনকেও কিভাবে বিয়ে করবে। আয় শ্রাবণ ভাইকে ফোন দিয়ে সব জানিয়ে দেই। সে তো নিশ্চয়ই দীপার খোঁজ না পেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে গেছে।’
‘ আচ্ছা চল।’

আমি আর লিলি কলেজ থেকে 10 টায় বেরিয়ে এলাম। আসার সময় আমি গেটের বাইরে নিবিড় কে বাইকে বসা দেখতে পায় সে ও হয়ত কলেজ থেকে কোথাও যাচ্ছে। বাইকে স্টার্ট করবে তখন আমাকে দেখে একটা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমি ঢোক গিলে চোখ সরিয়ে ভাবতে থাকি।

এমন রাক্ষসের মত তাকাল কেন আমার শয়তানি কাজটা কি ধরে ফেলল নাকি। আমি অন্য দিকে ঘুরে বুকে ফুঁ দিয়ে মনে মনে বলি ছোয়া ভয় পাস না নিবিড় কিছু ধরতে পারে নাই। হয়তো ওনার মুখটা এমন রাগী। সব সময় উনার মুখটা গম্ভীর থাকে।

আমি আর লিলি দীপাদের বাসার সামনে এসে নামলাম। বাসায় ভালোই মানুষজন মনে হচ্ছে আজকেই বিয়ে দিয়ে দেবে। দীপারা
ভাল উচ্চ বিত্ত ফ্যামিলির। আমি আর লিলি গুটি গুটি পায়ে বাসার ভেতরে গিয়ে ঢুকতেই দীপার মার সাথে দেখা হলো। তিনি আমাদের দেখেই নাক মুখ কুচকালো। বিশেষ করে আমাকে দেখে একটু বেশিই তিনি আমাকে একদমই পছন্দ করে না একেতে মুসলিম তারপর গরিব।

আমাকে আর লিলিকে দেখেই একটু গম্ভীর স্বরে বলল, ‘তোমরা এখানে কি করছো?’
আমি আর লিলি ঢোক গিলে বললাম, ‘দীপা আজকে কলেজে যাইনি তো তাই ওকে দেখতে আসলাম অসুস্থ নাকি। ফোনও ধরলা না।’

দীপার মা বলল, ‘যখন তখন আমাদের বাসায় এসে ঢুকে পড়বে না। তোমরা আর আমরা আলাদা জাত এটা মাথায় রাখবে। ‘
‘আচ্ছা সরি আন্টি। দীপা কি অসুস্থ? আর বাসায় কি কোন অনুষ্ঠান?’ দীপার যে আজকে আশীর্বাদ এইসব আমরা দুজন জানিনা এমন একটা ভাব করে কথাটা বললাম।

‘ হ্যাঁ আজকে তোমাদের বান্ধবীর আশীর্বাদ।’
‘ সত্যি আন্টির দীপার সাথে একটু দেখা করে আসি।’

অনিচ্ছা শর্তেও উনি বললেন, ‘আচ্ছা যাও আর তোমরা আজকে দিনটা থেকে যাও বান্ধবীর আশীর্বাদ বলে কথা।’
আমি আর লিলি দীপা রুমের দিকে চলে গেলাম। বাইরে থেকে তালা দেওয়া। একটু পরে দীপার মা চাবি নিয়ে এসে বলল।
উনি এসে তালা খুলে দিলেন।
‘বান্ধবীকে রেডি করিয়ে ফেলো।’

আমাদের সাথে তিনি ভেতরে ঢুকলেন আমরা ভেতরে এসে তো অবাক এর চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম। দীপা রুমের কোথাও নাই আর দীপা যে বাসা থেকে পালিয়েছে সেটা বলে দিয়েছে দীপার বারান্দায় শাড়ি ঝুলছে। পালিয়েছে দীপা‌। দীপার মা এসব দেখে এক চিৎকার দিলো। আর সঙ্গে সঙ্গে বাসার সবাই সেই রুমে এসে জড়ো হলো। আমি চোখ বড় বড় করে দাঁড়িয়ে আছি। এখান থেকে পালাতে হবে দ্রুত। দীপা তো আমাদের না জানিয়ে পালিয়ে গেছে। এবার না জানি দীপার মা আমাদের দু’জনকেই আসামি করে রেখে দেবে। ভাববে আমরা সাহায্য করেছি।

আমি মুখ নিচু করে লিলির কানে কানে বললাম, ‘চল পালাই। এদের হাত থেকে রক্ষা পেতে চাইলে চল পালাই। শালী দীপার বাচ্চা আমাদের না জানি এত বড় গেম খেলল। আমরা যে সে বিপদে এসে ফাসতেছি। শ্রাবণ ভাইয়ের সাথে পালিয়েছে এজন্যই তো শ্রাবণ ভাইয়ের ফোন অফ।’

আমি আর লিলি সবার চিৎকার চেঁচামেচির মধ্যে লুকিয়ে বাসা থেকে ছুটে পালিয়ে এলাম। দীপার ছোট কাকা দেখি আমাদের দেখে ফেলল সে আমাদের পেছনে দৌড়ে চিৎকার করে বলতেছে।
‘ওইযে দীপার দুই বান্ধবী পালাচ্ছে। ওরা নিশ্চয়ই দীপাকে পালাতে সাহায্য করেছে। ধরো ওদের। ওদের ধরতে পারলেই দীপাকে খুঁজে পাওয়া যাবে।’

আমি আর লিলি গাড়ির জন্য দাঁড়াবো কি। জান বাঁচানোর জন্য ছুটে পালাচ্ছি। লুকাতে হবে আমরা একটা গলির ভেতর দিয়ে ঢুকে লুকিয়ে পড়লাম। যদি আবার চলে আসে সেই গলির ভেতর দিয়ে গিয়ে কোথায় যে দৌড়েছি নিজেরাও জানি না।
দৌড়াতে দৌড়াতে একটা বাইকের সামনে এসে পড়লাম একটুর জন্য বাইক আমাদের দুজনের শরীরে আঘাত করে নি। লোকটা যেখুবভালো ড্রাইভ করে সেটা তার ব্রেক করা দেখেই বোঝা গেছে।

আমি মাথা উঁচু করে বাইট চালককে সরি আর ধন্যবাদ বললাম কারণ দোষটা আমাদের ছিল। লোকটা মাথা থেকে হেলমেট খুলতেই আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। এটাতো নিবিড়। আমি শুকনো ঢোক গিলে ভাবছি এই লোকটা এখানে কোথা থেকে এলো?

নিবিড় ঝড়ের গতিতে গাড়ি থেকে নেমে আমার হাত ধরে রক্ত লাল চোখে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ দৌড়াচ্ছ কেন? আবার কোথায় কি আকাম করে এসেছ?’
আমি তোতলানো গলায় বললাম, ‘ মা- নে? আমি আবার কি আকাম করব? ‘

‘একদম ন্যাকামি করবেনা আমার সাথে। তুমি কোন সাহসে আফিয়ার গায়ে কালি আর রং দিয়েছো?’
নিবিড়ের কথা শুনে আমার চোখ দুটো মনে হয় খুলে পড়ে যাবে। আমার মাথায় যেন বাজ পড়লো। এই চরম সত্য কথাটা নিবিড় জানল কিভাবে?

আমি এখন কি করবো? ধরা পড়ে গেলাম তাও আবার বাঘের কাছে?
‘প্লিজ আমার হাতটা ছাড়োন। এই হাতটা আমার খুব ইম্পর্টেন্ট একটা হাত। ভেঙে গেলে আমি কিন্তু আর রান্না করে খেতে পারব না। তখন কিন্তু আপনাকে আমায় রান্না করে খাওয়াতে হবে।’
‘হোয়াট আর ইউ ম্যাড?’

‘পাগল হতে যাবো কেন শুনুন ডানহাত সবারই খুব ইম্পর্টেন্ট। শুধু ডান হাত না শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সবকিছু ইমপোর্টেন্ট আপনি আমার হাতটা যেভাবে ধরেছেন এখন আমার হাতটা ভেঙে যাবে নিশ্চিত। এটা সুস্থ হলেও যতদিন এটা ভাঙ্গা থাকবে ততদিন আমাকে অনেক কিছু সাফার করতে হবে। এই কয়েকদিন পর আমার এক্সাম তো আজ আমার হাতটা ভেঙে যায় তো আমি জানি পরীক্ষা আগে আমার হাত ঠিক হবে না। তখন আমি পরীক্ষায় কিছুই লিখতে পারবো না। লিখতে না পারলে অবশ্যই আমি ফেল করব। তখন দোষটা কার হবে?

নিবিড় বলল,’ অবশ্যই তোমার?’
আমি বললাম, জি না আপনার। আপনি আমার হাত ভাঙার জন্য দায়ী। তাই ফিল করার জন্যে দায়ী হবেন আপনি। তারপর আমার বাসায় আমি ছাড়া আর কেউ নাই। তো আমাকে বাড়ীতে গিয়ে রান্না করে খেতে হয়। তো হাত ভেঙে গেলে আমি রান্না করতে পারবোনা। তখন আমি খেতে পারব না।

আর খেতে না পারলে অবশ্য আমি না খেয়ে অসুস্থ হয়ে যাবো। আর আমি অসুস্থ হলেও তার জন্য দায়ী হবেন আপনি। হাত ভেঙে গেলে আমার আরো আরো অনেক অসুবিধা হবে আর সেই সব কিছুর জন্য একমাত্র দায়ী হবেন আপনি। এতগুলো অপরাধের অপরাধী হয়ে আপনার তখন অনেক গিলিটি ফিল হবে।

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৪

তখন আপনি ঘুমাতে পারবেন না খেতে পারবেন না। বিনা কারণে একজন মানুষকে এত কষ্ট দেওয়ার জন্য আপনি ডিপ্রেশনে…..
‘স্টপ দেয়ার। চুপ করো প্লিজ তোমার এই বাচাল মার্কা কথা শুনে আমার মাথা ঘুরছে। কেউ এত কথা বলতে পারে।’

অবাধ্য প্রেম পর্ব ৬