ঘরনী পর্ব ৩

ঘরনী পর্ব ৩
মারশিয়া জাহান মেঘ

“তোর বউ মিতাকে বলেছে তোর খাই পড়ে কিন্তু সারাদিন কোনো কাজ করেনা। কেনোরে বাপ? আমার স্বামী কি আমার মেয়ের জন্য কিছু রেখে যায়নি?

” তৃপ্তি কোনো কথা বলছেনা। চুপ করে নিজের মতো করে খেয়ে যাচ্ছে। রন্জয় বিরক্ত নিয়ে বললো,
“তৃপ্তি রোজ রোজ এতো অশান্তি আমার আর ভালো লাগেনা। তোমার কি এমন না করলে চলেনা?
তৃপ্তি অপলক দৃষ্টি নিয়ে রন্জয়ের দিকে তাকায়। তারপর ক্ষীন স্বরে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” বিরক্ত নয়, তোমারতো ভাবা উচিৎ ছিলো যে সবসময় তোমার মা বোনই কেনো এতো নালিশ জমা রাখে। বিয়ে হয়েছে ২ বছর হতে চললো কখনো বলতে পারবে? আমি ওদের নামে কিছু নালিশ করেছি? আসলে দোষটা কার বলোতো? দোষটা তোমার।

তার জন্যইতো বউ, মা কাউকেই নিজের আয়ত্তে রাখতে পারোনা। তোমার মা আমাকে যা নয় তা বলে। ফকিন্নির বাচ্চা থেকে নিয়ে সব। তোমার মা মনে করে তোমাকে আমার মা বাবা লোভে পরে কিছু খাইয়ে তোমার গলায় আমাকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে..আজকে আমার বড় ভাই নেই বলে রিতার মতো ফোন করে ঠাস করে বলতে পারিনা..ভাই আমাকে নিয়ে যা ওরা আমাকে যা তা বলে। তোমরা সুযোগে সদ্ব্যবহার করছো বুজলে?

“কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলেই তৃপ্তি টেবিল থেকে উঠে পড়ে। আর কতো সহ্য করবে সে? আজকে সহ্য না করতে পেরে সব বলে দিয়েছে। সে জানে তার এতো সৌভাগ্যবান কপাল হয়নি যে তার স্বামী এইসব কথা কানে নিবে।

রন্জয় রুমে গিয়ে তৃপ্তির পাশে শুয়ে পড়লো। তারপর বিড়বিড় করে বললো,
“মায়ের সাথে তর্ক করে কি লাভ বলোতো? জানোইতো মা কেমন..। আমি রোজ রোজ অফিস থেকে এসে এইসব শুনি আমারও কি ভালো।লাগে?
” তৃপ্তি শুনতে পেয়েও কিছু বললোনা। কারণ সে ভালো করেই জানে মায়ের সম্পর্কে ওকে কিছু বলা যাবেনা।

তা ভাবী ২ বছর হতে চললো ওদের বিয়ের। বাচ্চা টাচ্চা হচ্ছেনা যে.. বউ কি এইটা বন্ধা নাকি?
“তৃপ্তি রুম থেকে বেরিয়ে ছিলো রান্না করবে বলে তখনি তার শাশুড়ীর পাশে বসে থাকা একজন প্রতিবেশীর কথা শুনে তার পা আটকে যায়। তখনি তৃপ্তি দেখে তার শাশুড়ী সাহেদা বেগম বলছে,

“কি আর বলবো ভাবী দুঃখের কথা। আমার ছেলেটা প্রেম করে বিয়ে করে আনছে তাও আমাদের সাথে কোনো দিক দিয়েই যায়না এমন বাড়ি থেকে। এই সময় নাতি নাতনী নিয়ে সময় কাটানো দরকার কিন্তু কি আর করবো বলুন? আমারতো মনে হচ্ছে এই বউ বন্ধাই। নয়তো এখনো বাচ্চা নিচ্ছেনা কেনো…

” হে ভাবী। ডাক্তার টাক্তার দেখান। আমার ছেলের বউটাতো মাশাল্লাহ। আমার কথায় উঠে আর বসে। আমার অনুমতি ছাড়া ঘরের বাইরে পা রাখেনা..
“তৃপ্তি এইবার নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনি৷ তাই সে প্রথমে ওদের সামনে রান্না ঘরে গেলো। তারপর চা বানিয়ে ওদের হাতে দিতে দিতে বললো,

” বুঝলেন আন্টি? আমি বন্ধা নয়। কারণ সমস্যাটা আমার নয় আমার স্বামীর। ডাক্তারের কাছে অনেক আগে গিয়েছিলাম তাই জানতে পেরেছি। আমার শাশুড়ী মায়েরও আশা করি কথাটা অজানা নয় যে, তার ছেলে কখনো আমাকে সন্তান দিতে পারবেনা। আর কি যে বললেন?

আপনার ছেলের বউ আপনার অনুমতি ছাড়া ঘরের বাইরে পা”ও রাখেনা? ওইতো ওইদিনই আপনার ছেলের বউয়ের সাথে দেখা হলো। সে গিয়েছিলো পার্লারে। তখন বললাম, “ভাবী বাড়ির কাজ কে সামলাচ্ছে? তখন আপনার ছেলোর বউ খুব সুন্দর করে বলেছিলো শাশুড়ী মা। আসলে কি বলুনতো আন্টি আমরা নিজের তুলনায় অন্যের সমালোচনা করি বেশি। অন্যের সংসারে আগুন জ্বালিয়ে আমরা শান্তির ঘুম ঘুমায়।

তৃপ্তি কথাগুলো বলতেই ওই মহিলার মুখ পাংসে হয়ে এলো। তড়িঘড়ি করে সাহেদা বেগমকে বললো,
“ভাবী আমি আসি। বাসায় একটু কাজ আছে…এইটা বলেই তাড়াতাড়ি হেঁটে চলে যান। সাহেদা বেগম মুখ কালো করে বসে আছে।

মা জানো? ওরা আমাকে ঠিক মতো খেতে পর্যন্ত দেয়না। একবারের মাথায় দুবার খাবার খেতে গেলেই বলে, “এতো খেলে শরীর বেড়ে যাবে। আর তাছাড়া যা খাবে একেবারে খেতে পারোনা? আমার ছেলের অন্ন ধ্বংস করতে লেগেপড়ে উঠেছো। জানো মা? সারাদিন আমি একাই সব করতে হয়। আমার ননদ দেবর কেউ চুল পরিমান কাজেও হেল্প করেনা।

” কথাগুলো বলেই রিতা কেঁদে উঠলো। তৃপ্তি এইসব শুনে চুপসে রইলো। সে দেখতে চায় মেয়ের দুঃখে তার শাশুড়ী কতোটা কাতর হয়।
“আমার মেয়ের সাথে এতো অন্যায়? ওদের প্রত্যেককে আমি জেলের ঘানি খাঁটাবো কাঁদিসনা মা কাঁদিসনা।
তৃপ্তি হেসে বলে,

” মা এখন আপনি আমার ননদীনির শুশুর বাড়ির সবাইকে জেল খাঁটাবেন কেনো! তাহলে আপনি কি বলেন? আমার মা বাবাকেও তা বলবো নাকি?
“বউমা….
” মা নিজের জায়গায় থাকলে বুঝা যায় কতো কষ্ট। অন্যকে কষ্ট দেওয়ার ভাবা দরকার যে আপনার মেয়েও আমার মতোই।

তুমি আমাকে থাপ্পড় দিলে কোন সাহসে?
“রন্জয় তেড়ে এসে বললো,
” তোমার কি করে সাহস হয় আমার মাকে জেল খাটানোর কথা বলতে? আমার বোনের সাথে নিজের তুলনা করতে যেওয়া তৃপ্তি.. আমার বোন কখনো নিজের পানিটুকুও নিয়ে খাইনি আর তোমরাতো ছোট বেলা থেকেই নুন পান্তা খেয়ে বড় হয়েছো।

“তৃপ্তি তাচ্ছিল্য হাসি হাসছে প্রাণ খুলে।
” পাগলের মতো হাসছো কেনো?

“আমরা গরীব ছিলাম ঠিকি কিন্তু কার সাথে কেমন ব্যবহার করতে হবে তা আমাদের মা-বাবা আমাদের শিখিয়েছে। আর কি যেনো বললে! তোমার বোন আর আমি এক না। তা রন্জয় তুমি কি আমাকে দেখে আনোনি? আমি কেমন ঘরের মেয়ে। দেখোনি? আমার লেভেল আমার ক্লাস।

রাতে খাবার টেবিলে তৃপ্তি চুপচাপ বসে নিজের মতো খেয়ে উঠে চলে যায়। রিতা ও মিতা নাক বেংচি কেটে বললো,
“নবাব রাণীর ভাব দেখলেনা আর বাঁচিনা। সাহেদা বেগম পাশ থেকে ছেলেকে বললো,
” দেখলিতো বাবা? কেমন নিজে খেয়ে দেয়ে চলে গেলো? আমাদেরকে এখন ভেরে দিবে কে?
“রন্জয় বললো,

” মা আমার আর এইসব ভালো লাগছেনা। এই ঝামালা থেকে মুক্তি পেলে বাঁচি..এইটা বলেই না খেয়ে উঠে পড়ে রন্জয়। রিতা বললো,,
“মা দেখলেতো? আমার শাশুড়ীর সাথে এমন ব্যবহার করলে চুলের মুঠি ধরতো। আবার মিতা বললো,

ঘরনী পর্ব ২

” বুঝিসনা? না পেয়ে পাইছে এমন বাড়ির বউ হয়েছে কিনা? আপা তুই তোর সব কাপড় বের কর। আমার কাপড় তোর কাপড় সব কাপড় ওকে দিয়ে কাঁচাবো।
সাহেদা বেগম মনে মনে বললো,
“এই মেয়ের ডানা ছাঁটাই করতে হবে। বড্ড পাকনা উড়াচ্ছে আজকাল।

ঘরনী পর্ব ৪