ঘরনী পর্ব ৪

ঘরনী পর্ব ৪
মারশিয়া জাহান মেঘ

বউমা ইলিশ মাছের মাথাটা নিওনা। আমার রিতা ইলিশ মাছের মাথা খাবে।
“তৃপ্তি ইলিশ মাছের মাথাটা আলাদা নিতে যাবে তখনি কথাটা সাহেদা বেগম বললেন।
তৃপ্তি বাটিতে বাড়িয়ে নেওয়া হাতটা গুটিয়ে নিয়ে বললো,

“মা মাছের মাথাটা আমার জন্য নয় আপনার ছেলের জন্য তুলে রাখছিলাম।
” রিতা মুখ বেংচি কেটে বললো,
“ভাই যদি জানে যে মাছের মাথাটা আমি খেয়েছি তবে কিছুই বলবেনা। তাই মাছের মাথাটা আমিই খাবো।
” মিতাও তালে তাল মিলিয়ে বললো, ‘হ্যাঁরে আপা। ভাইয়া আমাদের দু বোনকে কিছু বলেনা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তৃপ্তি তখন..মাছের মাথাটা আর না নিয়ে বললো, ‘তোমার ভাই এসে বলবে,
” ইলিশ এনেছিনা? ইলিশ মাছের মাথাটা নিজে খেয়ে ফেলেছো নাকি আমার জন্য আছে?

“তখন আমি কি বলবো? তোমাদের ভাই সব দোষ আমাকে দিয়েইতো গড়ে। তখন কি আর বলবে? আমার বোন গুলো খেয়েছে বুঝি? ইলিশ মাছ টা আনার সাথে সাথে দু বোন বললেনা কেনো যে তোমরা খাবে..অতএব.. আমি অতি দুঃখীত যে, তোমাদের জন্য মাছের মাথাটা রাখতে পারলাম না। কেনোনা, নিজে খেয়ে ফেলেছি এমন কথা আমি আর শুনতে চাইনা।

“এইটা বলেই তৃপ্তি আলাদা বাটিতে করে মাছের মাথাটা তুলে রাখে।
রিতা তখন মুখ কালো করে বললো,
“দেখলে মা? বিয়ে হতে না হতেই তোমার ছেলে বোনদেরকে পর করে দিলো।
তৃপ্তি ঠান্ডা স্বরে হেসে বললো,

” ওমা ননদীনি পর করলো কই? পর করলে কি আর মিতা এখনো ভাইয়ের উপর আয়েশ করে খায়? আমার শুশুর বাবাওতো নেই। তো আশা করি বুঝতেই পারছো মা আর মিতার সম্পূর্ণ ভরনপোষণ রন্জয়কেই বয়তে হয়।
“কি এতো বড় কথা! মা তোমরা ভাইকে এইসব বলোনা?
” তৃপ্তি আবার বললো,

“বলবে না আবার? একটু পর তোমার ভাই আসলেই শুনতে পাবে। আর তোমাকে আদর আপ্যায়ন তখনি করতে ভালো লাগতো যদি স্বামী নিয়ে এসে কয়েকদিন থেকে যেতে। এসেছোতো একা। কখন শুশুরবাড়ী যাবে কে জানে। তোমার সাথে তোমার শুশুরবাড়ীতে যা হচ্ছে আমার সাথে তোমার মা বোন এর দ্বিগুণ করছে।

তুমি এরপরেও এইখানে এসে এমন করবে সেইটা আমার অজানা ছিলো। কিছুটাতো শুধরাও নিজেকে। তুমি এইখানে এসেছো শুশুর শাশুড়ী সারাদিন খাটায় বলে। আর এইখানে! এইখানেতো তোমার মতোই একটা মেয়েকে মানসিকভাবে অত্যাচার করছে তাও তোমারই মা বোন।

হঠাৎ তৃপ্তির বাবা শরীফ মিয়া এ বাড়িতে আসেন। সাহেদা বেগম দেখেই বললেন,
“আরে বেয়াই সাহেব যে কেমন আছেন?
” শরীফ মিয়া ভীত হয়েছিলো..না জানি সাহেদা বেগম তাকে আর কোন অপমান করে কিন্তু সাহেদা বেগমের এমন আচরনে তিনি অবাক হয়।

“বেয়াই…
” জ্বি বেয়াইন আল্লাহ ভালো রাখছে। আপনি কেমন আছেন?
“আলহামদুলিল্লাহ। আসুন আসুন বসুন সোফায়। বউমা…বউমা…দেখো কে এসেছে।
” আরে বাবা তুমি?

“মা কেমন আছিস?
” ভালো আছি বাবা। হঠাৎ এলে যে? বাড়ীতে সব ঠিক আছেতো
“হেরে মা ঠিক আছে।
” বেয়াইন..
“জ্বি বলুন বেয়াই।

” তৃপ্তি তো অনেকদিন যাবৎ বাড়ীতে যায়না তাই ওর মা বলেছে…
“সাহেদা বেগম তৃপ্তির দিকে তাকালেন। তৃপ্তি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। শরীফ মিয়া দু’জনের দিকে তাকিয়ে বললে,
” না না আপনার যদি আপত্তি থাকে তবে দরকার নেই..
“সাহেদা বেগম হেসে বললেন,

” আরে কি যে বলেন বেয়াই। মেয়েতো আপনারই।
“যাও বউমা কটাদিন থেকে এসো। রন্জয় আসলে আমি বলে দিবো ক্ষন।
” মা ওহ যদি রাগ করে..

“আরে না আমি বলবো এসেই যেনো তোমায় কল দেয়।
” তৃপ্তি হাসিমুখে রুমে যায়। ব্যগপত্র গুছিয়ে আয়নার সামনে যায়। গিয়ে নিজেকে এক পলক দেখে বিড়বিড় করে বললো,
“যাক অবশেষে মা আমাকে মেনে নিলেন।

তৃপ্তি বাড়ীতে যেতেই রাহেলা বানু মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বললেন,
“কেমন আছিসরে মা?
‘মা তুমি কাঁদলে কি আমি ভালো থাকবো বলো? কেঁদোনা।
দীপ্তি এসে জড়িয়ে ধরে বোনকে। বলে,

” আপা তুমি আইছো? অনেকদিন পর আবার আমরা সবাই একসাথে মাংস দিয়ে ভাত খামু। তোমারে বাবা এক টুকরো মাংস বেশি দিবে আর আমি মুখ গুমড়ো করে বলবো,
“আপা একাই বুঝি বাবার মেয়ে আমি বুঝি কেউনা..
” দীপ্তির কথা শুনে সবাই ফিক করে হেসে ফেলে।

তৃপ্তির মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে। রন্জয় আসার পর তাকে একটাবারও কল দিলোনা! হয়তো কাজে ব্যস্ত। আজ ৩ দিন হয়ে গেছে এইখানে সে এসেছে রন্জয়কে নিজে কল দিলে কল ধরে নয়তো সে নিজ থেকে একটা কলও দেয়না। তৃপ্তি ব্যগ গুচাচ্ছে..
“আপা জিনিসপত্র নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?
” শুশুরবাড়ী।

বাড়ীতে ঢুকতেই তৃপ্তির শাশুড়ী তৃপ্তিকে দেখেও না দেখার মতো মিতাকে বললো,
“মিতা ওদেরকে ডাক দে ঘুম হয়নি এখনো?
” তৃপ্তি বললো, “ওদের মানে কারা মা? বাড়ীতে কেউ এসেছে?

” সাহেদা বেগম কোনো উত্তর দেয়নি। চুপ হয়ে আছেন তিনি। তৃপ্তির বুক ধুকঁ করে উঠলো। তাড়াতাড়ি নিজের রুমে গেলো রন্জয়ের কাছে। রুমে প্রবেশ করতেই চমকে যায় তৃপ্তি। অবিশ্বাস্য চোখে চিৎকার করে ডাকলো..রন্জয়য়য়…
“রন্জয় ঘুমিয়ে ছিলো নিজের বুঁকে কাউকে জড়িয়ে ধরে। তৃপ্তিকে এতো সকাল সকাল এই বাড়ীতে দেখে লাফিয়ে উঠে। আমতা আমতা করে বললো,

ঘরনী পর্ব ৩

” ত্ তু্ তুমি!
“তৃপ্তি অশ্রুসিক্ত চাহনি নিয়ে কাঁপা স্বরে বললো, ” মেয়েটি কে?
” আমার বউ”

ঘরনী পর্ব ৫