ঘরনী পর্ব ২

ঘরনী পর্ব ২
মারশিয়া জাহান মেঘ

তৃপ্তি শুয়ে ছিলো রুমে। শরীরটা প্রচন্ড খারাপ লাগছে তার। মিতা তৃপ্তির রুমে উঁকি দিয়ে মাকে গিয়ে বললো,
“মা..ও মা..
” আহা..কি হয়েছে এমনভাবে ডাকছিস কেনো?
“মা ভাবী শুয়ে আছে৷ আমি একটু পর পার্টিতে যাবো কিন্তু আমার কাপড় চোপড় কিছুই আয়রন করেনি।
” কিই বললি? চলতো আমার সাথে…

হারামজাদি.. শুয়ে শুয়ে চর্বি জমানো হচ্ছে তাইনা? বাপের বাড়িতেতো সারাদিন কাজ করে এক মুঠো পান্তা ভাত খেতি আর এইখানে নবাব রাণী সাজছিস হ্যাঁ?
“মা ছাড়ুন বলছি…ছাড়ুন আমাকে…

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” হাত ঝাপটা দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে তৃপ্তি চোখ রাঙিয়ে বললো,
“এমন কোনো আইন পৃথিবীতে আছে মা? যে শাশুড়ী ছেলের বউয়ের গায়ে হাত তুলে? আপনি আমাকে এইভাবে বিছানা থেকে টেনে উঠালেন কেনো?
‘কথাটা বলতোই তৃপ্তির দৃষ্টি যায় মিতার উপর। তৃপ্তি করুণ কন্ঠে বললো,

” তা মা..আপনার মেয়ের জামা কাপড় আয়রন করাই বুঝি এতো সব কিছুর প্রধান কারণ? আমি তেল থেকে তিল করলেইতো বলেন আমার মা বাবা আমাকে কিছু শিখায়নি। তা মা, আপনার মেয়েকে বুঝি মাথায় করে রাখবে? তাও কিনা সে তিল তো পারেইনা তেল করবে কিভাবে?

“মিতা ফুঁসে উঠে বললো,
” মা…দেখলেতো? তোমার সামনে আমাকে কতো কথা বললো।
“সাহেদা বেগম এইবার রেগে গিয়ে বললেন,

” তুই হচ্ছিস ফকিন্নির বাচ্চা আর আমার মেয়ে মহারাণী তাই ওকে বিয়ে কোনো রাজপুত্রই করবে। তোর মা বাবাতো লোভী নাহলে তোর মতো একটা ফকিন্নিকে আমার ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দেয়? কি জানি, আমার ছেলেটাকে কি খাইয়ে জাদু করেছে। নয়তো তোকে কি আর বিয়ে করে?!

রাতের খাবার তৈরি করছে তৃপ্তি। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছুই করার নেই৷ কিছু বলতে গেলে আবার হয়তো তার দারিদ্রতা নিয়ে কথা বলবে…”এইসব ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস নেয় তৃপ্তি।
“বউমা..আমার পা টা একটু তেল দিয়ে মালিশ করে দাওতো..বড্ড ধরেছে।
” তৃপ্তি আলু কুটছিলো। আলু গুলো রেখে বললো,
“চলুন মা।

” তৃপ্তি তার শাশুড়ীর পায়ে মালিশ করতে করতে হঠাৎ দেখলো রন্জয় বাসায় ঢুকেছে। রন্জয় তৃপ্তির দিকে না তাকিয়েই বললো,
“খাবার দাও।
” তৃপ্তি মালিশ করতে করতে বললো,
“রান্না হয়নি এখনো।
” কিই! আমি কি এখন না খেয়ে থাকবো?

“তা তোমার মাকে জিগ্যেস করলেইতো হয় রন্জয়। তোমার মা যদি আমাকে না বলে মিতাকে বলতো পা টা মালিশ করে দিতে তাহলে কি আর আমাকে তরকারি কাটা রেখে ১ ঘন্টা ধরে ওনার পা মালিশ করতে হতো.?.
” কথাগুলো বলেই রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায় তৃপ্তি। তার ভীষণ রাগ উঠছে রন্জয়ের উপর। বিড়বিড় করে বললো,
“আমি অসুস্থ তা জেনেও আমাকে যা নয় তাই বলে সে।ভেবেছে কি? আমাকে যা ইচ্ছে তা বলবে? বউ হয় আমি ঘরের চাকর নয়।

শরীফ মিয়া মাটির ঘরের বারান্দাতে বসে আছে। মাদুর বিছিয়ে পাশেই বসে আছে তৃপ্তির মা রাহেলা বেগম আর তৃপ্তির বোন দিপ্তি।
রাহেলা বেগম লেবুর বর্তা করছে শুকনো মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে। নিরবতা ভেঙে বললো,

“আমার তৃপ্তিটা লেবুর বর্তা খুব পছন্দ করতো। মেয়েটা এখন ও বাড়িতে কি করছে কে জানে?
” আহা রাহেলা তোমার কান্না থামাওতো। মাইয়া ওই বাড়িতে ভালোই আছে৷
“ও কেমন ভালো সে আমি খুব ভালো করেই জানি। হেগো..রন্জয়ইতো আমার মেয়েটাকে নিজে পছন্দ করে আমাদের কাছে চাইতে এসেছে..তাহলে কেনো বেয়াইন এমন করছে বলোতো?

সবি টাকা রাহেলা সবিই টাকা। নিজেদের অজান্তেই আমরা আমাদের মেয়েকে নদীতে ভাসিয়ে দিলাম ‘এইটা বলেউ হুঁ হুঁ করে কেঁদে দেন শরীফ মিয়া।

রন্জয় রুমে আসতেই তৃপ্তির কাছে গেলো। তৃপ্তি কোনো কথা বলছেনা৷ কাঁথা ভাজ করছে সে।
“তোমার শরীর অসুস্থ শুয়ে পড়ো।
” সারাদিন যেহেতু চোখে লাগেনি ঘুমানোর ঠিক আগ মুহুর্তে চোখে লাগাটা নিতান্তই লোক দেখানো।
“তৃপ্তি.. তুমি এমন বলছো কেনো বলোতো? জানোতো মাকে কিছু বললেই কেঁদে ফেলে।

” ওহ তা রন্জয় তোমার চোখ কি শুধু মাকেই বুঝি দেখে? সারাদিন জ্বর নিয়ে কাজ করি যখন তখন চোখ কোথায় থাকে? মাটিতে যখন লুটিয়ে পড়ি তখন চোখ কোথায় থাকে? দিনশেষে বিছানায় পুরুষত্বের ফল খাটালেই স্বামী হওয়া যায়না..
“তৃপ্তি.. ” কথাটা বলেই তৃপ্তিকে থাপ্পড় মারে রন্জয়। তৃপ্তি চোখে পানি নিয়ে হেসে বলে,

“এ নাহলে স্বামীর অধিকার! আমাকে এই বাড়িতে বউ করে আনার আগে বললেনা কেনো? বউ নয় মায়ের দাসী নিয়ে যাচ্ছো? তাহলে হয়তো আজ এই বাড়িতে আমি নয়..কোনো দাসী থাকতো।
” মুখে লাগাম দাও বলছি নয়তো..
“তৃপ্তি শীতল চাহনি নিয়ে বললো,

” নয়তো কি? আবার মারবে? অতো সোজা? দেশে আইনের অভাব আছে বুঝি? মায়ের চামচাগিরি করবেই যদি, তাহলে বিয়ে করলে কেনো?

ঘুম থেকে সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে যায় তৃপ্তি। একটু পরই রন্জয় তাড়া দিবে টিফিনের জন্য। বেলুন বেলছে তৃপ্তি। তখনি শুনতে পায় শাশুড়ী ফোনে রিতা..মানে তার বড় ননদকে ফোনে বলছে,
“চলে আয় তারপর ওরা বুঝবে কতোধানে কতো চাল। কতো সাহস আমার মেয়েকে দিয়ে কাজ করাই। আমার মেয়ে কি চাকরানী নাকি? এইখানে চলে আয় তুই তারপর দেখে নেবো ওদের..

” তৃপ্তি আর কিছু শুনতে চাইলোনা। মনে মনে বললো, “কি আজব দুনিয়া নিজের মেয়ে কাজ করে বলে রাজরানি থেকে চাকরানী হয়ে যাচ্ছে . আর আমি কাজ করলেও শুনতে হয় কতো কটুকথা।

আমার বার্গার কোথায় ভাবী?
“তৃপ্তি বললো, ” বার্গার বানায়নি।
“সাহেদা বেগম রেগে বললো,
” বানাওনি মানে? তুমি জানোনা? মিতা সকালে রুটি খায়না।

“তা মা মিতা তো কম বড়ো হয়নি। এখনো ভাইয়ের টাকাই পড়ছে, খাচ্ছে.. আবার ভাবীর সেবাও পাচ্ছে..অন্তত মাঝে মাঝে তো কিছু করতে পারে নাকি? কতো আর আয়েশিভাবে অন্যের উপর নির্ভর করে থাকবে?
” কিই! এতো বড় কথা! মা শুনলে তুমি? ভাবী কি বললো?
“আজ আসুক আমার ছেলে..তারপর তোর কি হাল করি তা শুধু দেখিস।

” তা আর নতুন কি মা? আপনাদেরতো কাজই আমার নামে আপনার ছেলের মাথায় বিষ ঢালা।
“শুনো বউমা মুখে লাগাম দাও তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার শাশুড়ী হয়।

” আপনিও ভুলে যাচ্ছেন মা আমি আপনার ছেলের বউ হয়। সেইটা আপনি না মানলেও। শুনুন মা, “আগে নিজে একজন আদর্শ মা হোন তারপর আমাকে শিখাতে আসবেন আমি কেমন।

ঘরনী পর্ব ১

কারণ আমার মা -বাবা গরীব হতে পারে কিন্তু আজ অব্দি কখনো আপনার সাথে উঁচু গলায় কথা বলেনি শুধু আমার মুখের দিকে চেয়ে। কিন্তু আপনি ওদেরকে প্রত্যেকবার অপমান করেছেন। ব্যবহার নিজে শিখে অন্যকে শিখাতে হয় মা।

ঘরনী পর্ব ৩