ঘরনী গল্পের লিংক || মারশিয়া জাহান মেঘ

ঘরনী পর্ব ১
মারশিয়া জাহান মেঘ

‘আমি এই বাড়ির বউ কোনো চাকর নয় মা যে..সবসময় আপনি যা বলবেন তা করতে হবে ”
‘তৃপ্তি কথাটা বলে রান্না করতে থাকে। তেলে চপচপে কড়াইয়ে মাত্র পিঁয়াজ ঢেলেছে সে৷ সাহেদা বেগম ফুঁসে উঠে। ছেলেকে হাঁক ছেড়ে ডেকে বললো,

‘ রন্জয়..কোথায় তুই? রন্জয়
“রন্জয় মায়ের তড়িঘড়ি ডাকে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। ঘড়ি পড়তে পড়তে বললো,
” তাড়াতাড়ি বলো মা। অফিস যেতে হবে। তৃপ্তি.. টিফিনবাক্সটা তাড়াতাড়ি রেডি করে দাওতো..
‘সাহেদা বেগম বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘তোর বউয়ের মুখ বেড়ে গেছে। যা নয় তা আমায় বলে।
” তৃপ্তি রান্নাঘর থেকে বেরুতেই কথাটা শুনতে পায়। রন্জয় ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
“মা কি বলছে তৃপ্তি ? শুনো মা হচ্ছে তোমার গুরুজন। মায়ের কথা শুনে চলবে..
” মা আসি…

‘এইটা বলেই বেরিয়ে পড়ে রন্জয়। তৃপ্তি পুনরায় রান্নাঘরে যায়। মা পাগল ছেলের কাছে বিয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে। ফলতো ভোগ করতেই হবে।
২.
মাছের মাথাটা আমি খাই ভাবী সেইটা কি তুমি জানোনা? দাও বলছি..

‘কথাটা বলতেই তৃপ্তির ননদ মিতা তৃপ্তির খাবার থেকে বড় রুই মাছের মাথাটা নিজের প্লেটে নিয়ে নেই। সাহেদা বেগম মাছ খেতে খেতে বললো,
‘জীবনে বাপের বাড়ীতে এইরকম বড় মাছ খেয়ে দেখেনিতো তাই না পেয়ে পাইছে বুঝিসনা?
‘তৃপ্তি এইবার ঠান্ডা মাথায় হেসে বললো,

‘মা আমরা যতোই গরীব হয় আমার বাবা -মা কিন্তু মাছের মাথাটা তার আদরের মেয়েটার জন্যই রাখতেন…
‘এইটা বলেই বাটিতে অবশিষ্ট পড়ে থাকা মাছের পেটির অংশটা প্লেটে নেয় তৃপ্তি। শুকনো মরিচ দিয়ে ভাজা মাছের পেটি মেখে মুখে দেয়। সাহেদা বেগম নাক বেংচি কেটে মেয়েকে বললো,

‘বুঝলি মিতা? ঘরে নাই চাল আর মুখে বড় কথা।
‘তৃপ্তি আর কোনো কথা বলেনি৷ চুপচাপ খেয়ে উঠে পড়ে। সে জানে কথা বললেই কথা বাড়বে।
৩.
থালাবাসন মাজছিলো তৃপ্তি। তখনি ননদ মিতা এসে বললো,

‘ভাবী আমার কাপড়গুলো একটু আয়রন করে রেখেতো.. আমি আজ বিকেলে পার্টিতে যাবো।
“তৃপ্তি থালাবাসন মাঝতে মাঝতেই বললো,
” ঠিক আছে।
‘মিতা যেতেই তৃপ্তি মনে মনে বললো,
‘এমন আয়রন করবো যে আর অর্ডার দেওয়ার জো থাকবেনা।

৪.
বাবা…
“তৃপ্তি বাবা শরীফ মিয়াকে দেখে খুশিতে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে।
” সোফায় বসে আছেন সাহেদা বেগম।
“শরীফ মিয়া তৃপ্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
” বেয়াইন কেমন আছেন?
“সাহেদা বেগম পান চিবুতে চিবুতে বললেন,
” ভালোই আছি। তা হঠাৎ এই বাড়িতে!

“আসলে বেয়াইন গাছে এইবার বেশ আম ধরেছে তাই আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম আর কি…
” সাহেদা বেগম এইবার এসে শরীফ মিয়ার হাতে নজর দিলেন। দেখলেন, “২০/৩০ টা আম। তারপর কপাল কুঁচকে বললেন,

” এ কটা আমতো আমরা সপ্তাহে বাজার থেকে কিনেই আনতে পারি। এই কয়টা আম নিয়ে আবার এ বাড়িতে আসতে গেলেন কেনো? ভালো কিছু দেওয়ারতো মুরদ নেই” এইটা বলেই সাহেদা বেগম রুমে চলে গেলেন।
“তৃপ্তি অশ্রুসিক্ত চাহনি নিয়ে বললো,
” বাবা এইসব বাদ দাও. তুমি বসো।

“শরীফ মিয়া মেয়ের চোখের পানি মুছে আফসোসের সাথে বললেন,
‘তোর জীবনটা আমরা নষ্ট করে ফেলেছিরে মা৷ পারলে আমাদের ক্ষমা করে দিস।
‘না বাবা এমন করে বলোনা…তুমি বসো বাবা..আমি তোমার জন্য খাবার আনছি। যাও মুখ ধুঁয়ে এসো।
৫.

বড় বড় চিংড়ী, এতো ভালো ভালো দামী দামী খাবার জীবনে দেখেনিতো তাই দেখ সব খাবার গিলে গেছে একেবারে”
“সাহেদা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো শরীফ মিয়া চলে গেছে আর তৃপ্তি টেবিল পরিষ্কার করছে। তৃপ্তি শাশুড়ীর এমন কথা শুনে সাহেদা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,

” মা আমার বাবা কোথায় এমন বেশি খেয়েছে? শুধু একটা চিংড়ি নিয়েছে মাত্র। সব কিছুতো জায়গার টা জায়গায়ই আছে..
“চুপ করো..এইসব আমাদের দেখা আছে বুঝলে? ফকিরের বাচ্চা…
” মা….
“চিৎকার করবেনা একদম। তা শুধু খাবারই গিলিয়েছো নাকি টাকা পয়সাও পুটলি করে দিয়েছো হে?
” শাশুড়ী মায়ের এইসব কথা শুনে অশ্রু সিক্ত চাহনি নিয়ে শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে তৃপ্তি বললো,
“মা…

” গলা উঁচু করবেনা বউমা। বলো কতো টাকা গুজে দিয়েছো? নাকি শুধু টাকা না…খাবারও দিয়েছো হে?
“মুখ সামলে কথা বলুন মা..আমরা গরীব হতে পারি চোর নয়।
৬.
” রন্জয় অফিস থেকে আসতেই দেখে তৃপ্তি কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। শার্ট খুলতে খুলতে বললো,
“এ অসময় আবার কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছো যে? শরীর ঠিক আছেতো?
” তৃপ্তি আগের ন্যায়৷ থেকেই বললো,
‘ঠিক আছি।

“রন্জয় তৃপ্তির পাশে গিয়ে বসলো। তারপর কপালে হাত দিয়ে বললো,”
‘তোমারতো অনেক জ্বর। সারাদিন কি করো বলোতো? নিজের যত্নও নিতে পারোনা?
“তৃপ্তি কাঁথা সরিয়ে বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো,

” একবার নিজের মায়ের সামনে কথাটা বলতে পারলে ভেবে নিতাম স্বামীর অটাল যত্ন..মায়ের থেকে লুকিয়ে বউকে কেয়ার করতে কে বলেছে তোমায় রন্জয়?
“রন্জয় তৃপ্তির দুটো হাত ধরে বললো,

‘তুমি রাগ করোনা প্লিজ। তুমিতো জানো? মায়ের মুখে মুখে কথা বলতে পারিনা আমি। আর মা কতদিনই বা বাঁচবে বলো? তাই মাকে মায়ের মতোই থাকতে দাও৷ মা যা বলে৷ তাই শুনিও এছাড়া কি আর করার আছে বলোতো?
” তৃপ্তি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। তখনি রুমে প্রবেশ করে সাহেদা বেগম। কটমট কন্ঠে বললো,
“তা নবাব রাণী এইভাবে বসে থাকলে হবে? মিতার বিকেলের নাস্তা করবে কে? ছেলেটা যে এলো…তাকে খাবার ভেরে দিবে হে হ্যাঁ?

” তৃপ্তি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রন্জয় বললো,
“মা তুমি যাও তৃপ্তি এখনি যাচ্ছে।
” সাহেদা বেগম বিড়বিড় করতে করতে চলে গেলেন। তৃপ্তি তাচ্ছিল্য ভাবে হেসে বলে,
“তাও বলার সাহস হয়নি মাকে যে, আমার বউয়ের শরীর ভালোনা…কাপুরুষ।
৭.
জ্বর নিয়েও সবার জন্য খাবার তৈরী করছে তৃপ্তি। রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে মিতাকে খাবার এগিয়ে দিয়ে বললো,

” এই নাও তোমার স্যান্ডউইচ।
“মা এই নিন আপনার চা…
অসুবিধে ঠেকলো চা দিতে গিয়ে চায়ের কাপটা পড়ে গেলো৷ সাথে পড়ে গেলে তৃপ্তিও। জ্বরে আর পারছিলোনা সে তাই মাথা ঘুরতেই ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো।

সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিলো রন্জয়। সাহেদা বেগমের হাতে একটু চায়ের ছিঁটা পড়তেই “ওমা গো…এই মেয়ে আমাকে পুড়িয়ে মেরে ফেললো গো..বলে কুঁকড়ে উঠলো।
” রন্জয় তাড়াতাড়ি গিয়ে মায়ের হাত ধরে বললো,

“মা কি হয়েছে তোমার? বেশি লেগেছে? একটা কাজও যদি ওকে দিয়ে ঠিকভাবে হয়।
” কিন্তু অন্যদিকে নিজের স্ত্রী যে মাটিতে লুটে পড়ে আছে সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রন্জয়ের। তৃপ্তি কোনো রকম উঠে ধীর পায়ে রুমে যায়। তাচ্ছিল্য স্বরে বললো,
“ভাগ্য করে এমন স্বামী পেয়েছি যার কাছে আমার কোনো মূল্যই নেই…

ঘরনী পর্ব ২