অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৫

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৫
সাবরিন জাহান

“আমাদের এবার যাওয়া উচিত!”, আয়ুশীকে উদ্দেশ্য করে বলল আয়ান!
“কিন্তু আমরা তো কেবল এখানে আসলাম!”(ফাহিন)
“আমার ভালো লাগছে না!তাই চলে যাবো!”
“তো যা,আয়ুশীকে আমি পৌঁছে দিবো!”
“লাগবে না,আমরা তো একই বাড়িতে যাবো!তো যাওয়া যাক আয়ুশী?”

“আপনারা গেলে আমরা আর থেকে কি করবো?”(ইভা)
“চলো যাওয়া যাক!”
সবাই বেরিয়ে এলো।সীমা আর ইভা রিকশায় উঠে গেলো!
“চল!”
আয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো,”তুই কই যাস?”
“কেন বাড়িতে!”
“তোর কাজ নাই?”
“না আজ ছুটি!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কিসের ছুটি?”
“আরে তুই বুঝবি না চল!”
“আমাদের সাথে কই যাস?”
“আরে ভাই,আমার বাড়ি তো তোর কয়েক বাড়ির আগেই!”
আয়ান ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো।
“আচ্ছা মিস রোগী!তোমার শখ কি?”
“আলাদা করে কোনো শখের প্রয়োজন আমার হয় না,আমার যখন যেটা করতে ভালো লাগে সেটাই আমার শখ হয়ে যায়!”
“ওহো,তো মিস রোগী!আচ্ছা,এবার বলো বিয়ে কবে করবে?”
আয়ুশী মলিন হেসে বললো,”এই অনাথ মেয়েকে কেউ সঙ্গী করবে?”

“এভাবে বলছো কেনো?”
“যা সত্য!”
“আরে,এসব ভাবতে নাই!আর কেউ না করলেও আমি আছি তো!”
“কিসের জন্য?”
“তোমাকে বিয়ে করার জন্য!”
“ফাহিন ভাইয়া!”
ফাহিন বুঝলো আয়ুশী রেগে গেছে।
“তোমার জন্য একটা গান বানিয়েছি!শুনবে?”
আয়ুশী ভ্রু কুঁচকে তাকালো!

“আয়ুশী চলেছে একা পথে,সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে?হার মেনেছে দিনের আলো!রাগলে তোমায় লাগে আরও ভালো!”
আয়ুশী হেসে দিলো। ফাহিনও ওর হাসি দেখে হাসলো।মেয়েটাকে হাসলে ভীষণ সুন্দর লাগে।মন ম’রা একদম ভালো লাগে না ওকে!ওদিকে আয়ান রাগের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে।
“নেও আমার বাড়ি এসে গেছে!সাবধানে যাইস তোরা!”
“তুই না বললেও যাবো!”(আয়ান)
বলেই হাঁটতে লাগলো।আয়ুশী ফাহিনকে টাটা দিয়ে আয়ানের পিছু ছুটলো। আয়ান হাঁটছে নাকি দৌড়াচ্ছে ঠিক উপলব্ধি করতে পারছে না আয়ুশী।

“স্যার দাড়ান!”
আয়ান দাড়ালো না ,বরং হাঁটার গতি বাড়ালো!
“ও স্যার!”
আয়ান দাড়ালো।
“কি হয়েছে?”
“আপনি এমন দৌড়াচ্ছেন কেনো?”
আয়ান বুকে হাত গুঁজে বললো,”আমি কখন দৌড়ালাম?”
“যেভাবে হাঁটছেন,তাতে তো তাই মনে হচ্ছে!”
“কেনো এতক্ষণ যে ফাহিনের সাথে দৌড়ে দৌড়ে হাঁটছিলে!তখন?”
আয়ুশী ভ্রু কুঁচকে বললো,”দৌড়ালাম কখন?”

“আমি দৌড়ালাম কখন?”
আয়ুশী অবুঝের মতো দাড়িয়ে রইলো। আয়ান হেঁটে চলে গেলো। আয়ান যাচ্ছে বুঝতে পেরে ছুটলো ও।
“আরে ও স্যার!”
হুট করেই ইটে পা বেঁজে পড়ে গেলো ও।মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো।আয়ান পিছে ফিরতেই দেখলো আয়ুশী রাস্তায় পড়ে আছে।
আয়ান ওর কাছে গেলো।কোমরে হাত রেখে বলল,”আমায় একটা কথা বলবে?”
“কি কথা?”

“সারাদিন উ’ষ্টা খাওয়া ছাড়া তোমার কোনো কাজ নেই?”
“আমি কি ইচ্ছে করে খাই নাকি?”
“অবশ্যই!কখনো কলার ছিলকায়, তো কখনো পাথরে!”
আয়ুশী ভেংচি কাটলো!উঠার চেষ্টা করলেও উঠতে পারলো না। আয়ান হাত বাড়িয়ে দিল।আয়ুশী হাত ধরে উঠে দাড়ালো।পা একটু ছিলে গেছে!
“যেতে পারবে?”
“পারবো!”

বলেই হাঁটতে লাগলো,একটু অসুবিধা হলেও কিছু বললো না! আয়ান বুঝতে পেরে ওর হাত নিয়ে নিজের বাহুতে পেঁচিয়ে ধরলো।
“ভর দিয়ে হাঁটো!”
আয়ুশী এক পলক তাকালো ওর দিকে। পর পরই চোখ ফিরিয়ে নিলো।মায়ায় ডুবলে চলবে না!এসব দায়িত্ব।অনাথ মেয়ের প্রতি দায়িত্ব,মানবিকতা!ভাবতেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিল ও।আয়ানের নজর তা এড়ালো না।।

বারান্দায় রেলং ঘেঁষে বসে আছে ইহরা!ফোন স্ক্রলিং করছে ও।তখনই আয়ান আয়ুশীকে নিয়ে আসলো!
“ইহরা!”
ডাক শুনে ইহরা রুমে আসলো।
“ওকে এভাবে ধরে আনছো কেন আয়ান?”
“পায়ে চোট পেয়েছে!একটু মেডিসিন লাগিয়ে দিও!”
বলেই বেরিয়ে গেলো আয়ান!আয়ুশী যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। ইহরা ওর সামনে চুটকি বাজিয়ে বললো,”আমার হবু বরের দিকে নজর দেয়া কিন্তু আমি মোটেই সহ্য করবো না!”
কথাটা মজার ছলে বললেও আয়ুশীর মনে ভীষণ দাগ কাটলো।আসলেই তো,ওর হবু বর ও কেনো নজর দিচ্ছে?

“হ্যালো বাবা!”
“হুমম বল !”
“ওর কি খবর?”
“এখনও ঠিকঠাক,তোর কথা মতোই সবটা করেছি!”
“বেশ,আর কয়েকদিন!আমি আসছি..”
“জলদি আয়!”
বলেই কথোপকথন শেষ হলো বাবা ছেলের।ছেলেটি কল কেঁটে নিজেকে নিজেই বললো,”আর কয়েকদিন ,আমি আসছি!একদম কষ্ট পেতে দিবো না তোমায় ,একটুও না!”

“এসব কি জুনাইদ?”
“কোন সব?”
“ফোন দিলে ফোন তুলছো না,ইভেন কাজ থেকে আসার পর সময় ও দিচ্ছো না!”
“আমি বিজি ইভা!”
তখনই জুনাইদ এর ফোনের স্ক্রিনে লাভলী নামটা জ্বল জ্বল করে উঠলো! যা ইভার চোখ এড়ালো না!টেবিলের উপর থেকে নিজেই ওর ফোন রিসিভ করলো। জুনাইদ বাধা দেয়ার আগেই ওপাশ থেকে মেয়েটি বলে উঠলো ,”জুনু বেবি,কোথায় তুমি?”

চোখ পানিতে ভরে এলো।
“ইভা,লেট মি এক্সপ্লেইন ইউ!”
হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিল ইভা!
“আমাকে আগে বললেই পারতেন!আমি এতটাও স্বার্থপর নই যে সব জানলে আপনাকে জোর করে রাখবো!”
বলেই ফোন রেখে চলে এলো।জুনাইদ অনেকবার ডাকলেও শুনেনি ও।শহরে আসার পর থেকেই জুনাইদ ওকে সময় দেয় নি।আজ সময় নিয়ে দেখা করলো,আর সব সত্য উৎঘটন হলো।চোখের পানি মুছে নিলো ও।এই কয়দিনে মানুষটাকে যথেষ্ট ভালোবেসেছিলো ও।কিন্তু ভাগ্যে না থাকলে আর কি করার!রিকশায় উঠে চলে গেলো।জুনাইদ আসতে আসতে রিকশা ওর নাগালের বাইরে চলে গেলো।রাগে দুঃখে নিজে ফোনটাকে ওখানেই আছার মা’র’লো ও!

“সীমা !”
“জি মামা?”
“পড়ছো তুমি?”
“জি,কিছু বলবে?”
“শুক্রবারে তুমি ফ্রী আছো?”
“জি হ্যাঁ!”
“ওই আসলে নাহিম আসবে!ওকে আনতে এয়ারপোর্ট যেতাম আরকি!আসলে একা একা গিয়ে কি করবো!”
“আচ্ছা যাবো!”
মাতব্বর উরফে সীমার মামা যেতে নিলেই সীমা বলে উঠে,”মামা!”
“বল মা!”
“আমার খরচ টা আমি বহন করি?”

মাতব্বর সীমার মাথায় হাত রেখে বলল,”তুই আমার বোনের রেখে যাওয়া আমানত!তোর খরচ তেমন কিছুই না!মামার ভালোবাসাকে কোনো দায়িত্বের চোখে দেখিস না!”
সীমা হাসলো!আর কিছু বলল না।মামা চলে গেলো।সীমা আয়ুশীকে ফোন দিলো।আয়ুশী তখন আনমনে চাঁদ দেখছিল!
“আয়ু!”
“হুঁ,বল!”
“তুই বলেছিলি তোর টিউশনি লাগবে!”
“হুঁ!”

“আমার টিউশনি গুলো করবি?”
“তাহলে তুই কি করবি?”
“মামা টিউশনি করতেও দিবে না!তাই আরকি!”
“আচ্ছা,অ্যাড্রেস আর নাম্বার দিস!”
“ওকে!”

ফোন রেখে চোখ বুঁজে রইলো। এ বাড়িতে থাকলেও ও এত দায়হীন চলতে পারে না।নিজের খরচ কিছুটা হলেও ম্যানেজ করা দরকার!যদিও এখনও নাহার আর বেলালকে ম্যানেজ করেনি!তাও বুঝাতে হবে।ওরা দয়া ভেবে না দিলেও নিজের আত্মসম্মান বলতে তো কিছু আছে।জানেনা আগামীতে কি হবে!ভালো লাগছে না বিধায় ইহরার রুমে গেলো। ইহরাকে রুমে না পেয়ে বারান্দায় গেলো।
“ইহরাপু?”

আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে ও।আয়ুশী গিয়ে পাশে দাড়ালো!
“আপু?”
“জানো আয়ুশী?যাদের কেউ নেই ,তাদের থেকে অসহায় আর কেউ হয় না!হাজার হাজার মানুষ ভালোবাসলেও পৃথিবীতে বাবা মায়ের অভাব কখনোই পূরণ হয় না!”
আয়ুশী হাসলো।আসলেও চিরন্তন সত্য।
“হটাৎ এসব বলছো যে?”

“কয়েকদিন পর আয়ানের সাথে আমার এনগেজমেন্ট।মামনি বাবাই এর ম্যারেজ সিরিমনি!ওই দিনই পাবলিকাল্লি এনাউন্স হবে আমার আর আয়ানের বিয়ে!”
আয়ুশী বুক মোচড় দিয়ে উঠলো।কি বলবে ভেবে পেলো না।তাও নিজেকে সামলে বললো,”বাহ ভালো খবর তো!”
“উহু!”
“তুমি খুশি না আপু?”
এতক্ষণে ইহরার হুশ এলো!

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৪

“আরে না,খুশি হব না কেনো?আসলে আব্বু আম্মু কে মিস করছিলাম আরকি!”,বলেই রুমে গেলো!
আয়ুশী আর ঘাটলো না।আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,”তুই ও আমার মত একা তাই না রে চাঁদ?”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৬