অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৪

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৪
সাবরিন জাহান

ক্যান্টিনে আনমনে বসে আছে সীমা!ক্যান্টিনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ইভা আর আয়ুশী ওকে দেখে ওর কাছে গেলো।পিছন থেকে হুট করে বলে উঠলো , “ভাও।”
সীমা কোনো প্রকার রেসপন্স করলো না। ওরা দুজন অবাক হলো। সীমার পাশে দুজন বসলো।
“কি হয়েছে তোর?”(আয়ুশী)
সীমা আয়ুশীকে ঝাপটে ধরে কেঁদে উঠলো।এতে ইভা আর আয়ুশী বেশ ভরকে গেলো,সেই সাথে অবাক!
“শিম!কি হয়েছে?”(আয়ুশী)

“সিমু,কাঁদছিস কেনো?”(ইভা)
সীমা হেচকি তুলে যাচ্ছে।কথা বলছে না কোনো!ওরা আর কি করবে ভেবে পেলো না।বেশ কিছুক্ষণ ওভাবে থাকার পর সীমা শান্ত হলো।চোখ মুছে হাসি মুখে বললো,”তোর মত আমার লাইফটাও রসাতলে গেলো রে আয়ু!”
আয়ুশীর বুক কেঁপে উঠলো!ওর বাবার কি কিছু হলো নাকি?
“শিম,আঙ্কেলের..”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আর কিছু বলার আগেই সীমা বলে উঠলো,”না,এতটাও রসাতলে যায় নি আবার!”
“তাহলে বলছিস না কেনো?কি হয়েছে?”(ইভা)
ফ্ল্যাশব্যাক…..
“বাবা!”,বলেই বাবার রুমে গেলো সীমা!নিজের রুমে শুয়ে ছিলেন তিনি!বাবার কাছে গিয়ে বসেই বলে উঠলো,”বাবা,কি হয়েছে তোমার?”
“তুই কেনো এলি রে মা!”
“মা বললো,তুমি নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছো!”
“মিথ্যে রে মা!তুই যা এখান থেকে।তোর জীবন বরবাদ করে দিবে ও!যা চলে যা…”
“কিন্তু কেনো?”

তখনই সীমার সৎ মা এলো।কিছু না বলেই সীমাকে টেনে নিয়ে গেল।বাইরে থেকে দরজা তালা মেরে দিলো।ভিতর থেকে সীমার বাবা চিল্লিয়ে বলছে,”এমনটা করো না ওর সাথে… রূপা”
“এসব কি করছেন আপনি?”
রূপা বাঁকা হেসে বললো,”আরে আজ তোর বিয়ে ,রেডি হতে হবে তো?”
“বিয়ে?”

“হুঁ বিয়ে, তোর জন্য ভালো সম্মন্ধো পেয়েছি !”
“তার মানে বাবার কিছু হয় নি?”
“তোর বাবার আবার কি হবে ? চল চল,দেরি হয়ে যাচ্ছে!”
“কিসের বিয়ে?আমি করবো না কোনো বিয়ে!”
“দেখ সীমা ,একদম অবাধ্য হইবি না,এর ফল কিন্তু ভালো হবে না!”
“যা পারো করো,আমি বিয়ে করবো না!”
“বেশ ,এরপর তোর বাবার লগে যা হইবো তার দায় তোর!”
“মানে?”

“রাতুল!”
বলেই নিজের ভাই কে ডাকলো। হাতে মোটা একটা বাঁশ দিলো তার!
“ওরে ধরে রাখ,আমি একটু ওর বাপ রে টাইট করে আসি!”
“মা,এসব কি বলছো?”
“ভালোই ভালোই রাজি হয়ে যা!”
সীমা মলিন গলায় বললো,”তুমি এমন কেন হলে মা?আগে তো এমন ছিলে না!”
“নাটক কম কর,রাজি হয়ে যা!”

“আমি করবো না!”
“তাইলে দেখ তোর বাপের কি করি!”
“মাগো,উনি তো তোমার স্বামী!তুমি উনার গায়ে হাত তুলবে!”
“এহহ,আসছে স্বামী!তুই রাজি হবি নাকি আমি তোর বাপরে কিছু করমু?”
সীমা নুয়ে গেলো।আর কিছু বলল না।রূপা সীমার সম্মতি বুঝতে তার বাকি নেই!লাল বেনারসি পড়ে বসে আছে সীমা!তখন তারেক(রূপার ছেলে)এলো।
“বুবু, তুই পালায় যা”
সীমা নিরুত্তর

“বুবু, আম্মা তোর লেইগা ওই রতন চাচার লগে বিয়া ঠিক করছে।রতন চাচায় আম্মার কাছে অনেক টেকা পাইবো, আম্মায় দিতে পারে নাই, তাই চাচায় তোরে চাইছে। আম্মাও রাজি হয়ে গেছে। তুই পালায় যা। নাইলে রতন চাচা তার প্রথম বউয়ের মতো তোরেও মা’ই’রা লাইবো।”
সীমা নিরবে চোখের পানি ফেললো। তার বলার কিছু নেই। বাবার বিষয়ে ও প্রাণ দিতেও রাজি। ওর জন্যই আজ এই অবস্থা সবার, না ও মায়ের আবদার করতো আর না এসব দেখতে হতো। পান চিবুতে চিবুতে রূপা রুমে আসলো।

“বাহ, মাইয়া ! তোরে তো ভালো লাগতাছে।”(রূপা )
” আম্মা,বুবুরে চাচার লগে বিয়া দিও না।” (তারেক)
“আরে ব’ল’দ ! তোর বুবু রাজরাণী হয়ে থাকবো।”
” আম্মা চাচা তো বুইড়া! আমার বুবুরে মেলা মারবো।”
” এহ ,দরদ! হন তোর বইনের ভাগ্যে এই যে জুটতেছে হেটাই অনেক নাইলে যেই রূপ, কেও নিতো ও না।”
তারেক হাজার বললেও শুনলো না। অবশেষে বিয়ের মুহুর্ত ঘনিয়ে এলো। কিন্তু সেই মুহুর্তে সীমার মামা এলো। সাথে সীমার বাবা হুইলচেয়ারে ।

বাবাকে দেখা মাত্রই দৌড়ে গেলো সীমা। রূপা সীমার আপন মামার থেকে সবটা গোপন রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু এন্ড টাইমে তারেকনঅনেক কষ্টে মামাকে সব জানিয়েছিল। খবর পাওয়া মাত্রই রওনা হলে মাত্র এখানে পৌছালো সে। তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়ার পর্যায় শেষে সীমার মামা সীমা আর ওর বাবাকে নিয়ে গেলেন । রূপা বাঁধা দিতে গিয়েও দিতে পারলো না।
সব শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে রইলো আয়ুশী আর ইভা। সীমা হেসে বললো, “সরি রে… তোর বিপদের সময় ছিলাম না আমি।”
আয়ুশী সীমাকে জড়িয়ে ধরলো। মেয়েটা ভীষণ ভালো।

“হোস্টেল আসবি ?” (ইভা)
“মামার কড়া নির্দেশ, এখন আমার সব দায়িত্ব সে নিবে। আমি যেনো আর পাকনামি না করি। টিউশনিও ছেড়ে দেই।”
” তো রসাতলে কীভাবে গেলি ?”
সীমা মলিন হেসে বললো, ” এখন অন্যের বোঝা হলাম। সেই সাথে যেই মেয়েরএকবার বিয়ে ভাঙে তাকে আর কেও নিতে চায় না। ভালো চোখে দেখে না।তার উপর গায়ের রঙ তো আছেই।”
আয়ুশী ওর হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বললো,”আমরা আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব!রং যেমনই হোক।পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে এমন কেউ আছে যে তোর রূপ নয়,তোকে ভালোবাসবে!আর তুই তো কালো নস!তুই শ্যামবতী!সেই সাথে মায়াবিনী! যার হবি তার মায়াবতী!”

সীমা ভেংচি কেটে বললো,”ভাগ ভাগ,আমি ইমপোর্টেড মানুষ!উফফ বাবা কি গরম! কেউ এসি ছাড়ো তো!”(ঢং করে বললো)
তাই দেখে আয়ুশী আর ইভা হাসলো!সাথে সীমাও।
“হ্যালো, লেডিস।”
বলেই গা এলিয়ে ওদের টেবিলে বসলো ফাহিন… আয়ুশী উত্তেজিত হয়ে বললো, “আরে ডাক্তার?”
“ইয়েস মিস রোগী”
“আপনি এখানে?”

” এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম, ভাবলাম মিস রোগী আর তার বান্ধবীদের দেখে যাই”
“এবার জমিয়ে আড্ডা হয়ে যায় ?” (ইভা)
“তোমাদের ক্লাস নেই?”
“ক্লাস তো আছে,কিন্তু করার মুড নেই!”(সীমা)
“বেশ তাইলে চলো ,এখানে তো আর আড্ডা দেয়া যায় না!”
তিনজন সম্মতি দিয়ে ক্যান্টিন থেকে বের হতেই আয়ানের সামনে পড়লো।এদিকে আয়ান আয়ুশীকে ক্লাসে না দেখে ভাবলো কোথাও মন খারাপ করে বসে আছে।তাই ক্লাস শেষেই খুঁজতে বের হলো। ফাহিনকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,”তুই এখানে?”

“একচুয়ালি! এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম!ভাবলাম দেখা করে যাই!”
“ওহ!তোমরা কোথায় যাচ্ছ?”
“কোথাও না স্যার,ক্লাসে!”(ইভা)
“কিসের ক্লাস!আমরা এখন একটু ঘুরতে যাচ্ছি!”(ফাহিন)
“টিচারের সামনে এসব বলছিস?”(আয়ান)
“আরে ভাই!”,বলেই আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।

কানে কানে বললো,”আঙ্কেল আমাকে আয়ুশীর মাইন্ড রিফ্রেশ করার দায়িত্ব দিয়েছে,আর তুই তো জানিস আমি কতটা দায়িত্ববান!তাই কাজ ফেলে চলে এলাম।এখন আর কিছু বলিস না!ওর এমনিও এখন পড়ায় মন বসবে না!সো প্লিজ!”
আয়ান হাত মুঠি করে দাড়িয়ে রইলো।ওরা যেতে নিলেই আয়ান বলে উঠলো,”আমিও যাবো!”
“তোর ক্লাস নেই আর?”
“করার ইচ্ছে নেই!চল..”

বলেই হাঁটতে লাগলো।ওরাও কিছু না বলে হাঁটতে লাগলো।ভার্সিটির কাছে একটু দূরেই রেস্টুরেন্টে গেলো ওরা!
“তো মিস রোগী ,কি খাবেন?”
আয়ুশী হেসে বললো,”যেইটা ডাক্তার পরামর্শ দিবে!”
“বেশ তাহলে সবজি অর্ডার করি?শশা বা গাজর?”
আয়ুশী ভ্রু কুঁচকে বললো,”রেস্টুরেন্টে কেউ এসব খায়?”
“আমি ডাক্তার মানুষ! হেলথ এর প্রতি খেয়াল রেখেই সব সাজেস্ট করি!”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৩

“আপনাদের ডাক্তার আর রোগীর তর্ক শেষ হলে খাবার অর্ডার করি?আমাদের নার্সদের খুদা লাগছে!”(সীমা)
চারজন হেসে উঠলো ,শুধু আয়ান বাদে!চোখ মুখ খিচে মোবাইল চালাচ্ছে ও।আসলে চালাচ্ছে না,রাগ ঝাড়ছে!মূলত ফাহিনের এত কেয়ার,খুনসুটি তাও আয়ুশীর সাথে ওর পছন্দ হচ্ছে না। ও জানে না ওর সমস্যা কোথায়!জানেনা কেন এখানে এসেছে।শুধু জানে এখন রাগ ঝাড়তে ফোন দেখবে ও!

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৫