অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৩

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৩
সাবরিন জাহান

নিজের রুম ঘুরে ঘুরে দেখছে আয়ুশী,কালকে গেস্ট রুমে ছিল।আজ সকালেই এখানে শিফট হয়েছে। আয়ানের বাম পাশের রুম ওর!আর ডান পাশেরটা ইহরার!রুমটাতে বেশিরভাগ জিনিস ওর বাবা মায়ের!আর কিছুটা ওর।বেলাল সাহেব ওদের জিনিস গুলো দিয়েই ওর রুম সাজিয়েছেন!এতে ও ভীষণ খুশি!তখনই ইহরা রুমে এলো ।

“রুম সাজানো কেমন হয়েছে?”
“দারুন!”
“আমি তো বলেছিলাম নতুন ফার্নিচার আনতে,কিন্তু আয়ানের কড়া নির্দেশ তোমার রুম ও ই সাজাবে!”
“স্যার?”
“হুমম,তোমার স্যার!বাবা রে! সক্কাল সক্কাল সব গুছিয়েছে ও!”
আয়ুশী নিশ্চুপ!
“যাই হোক,তোমার আর আমার কি মিল দেখো?তোমারও মা বাবা নেই,আমারও নেই!এক অর্থে দুইজনই এই বাড়ির আশ্রিতা!”
আয়ুশী মাথা নিচু করে নিলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আরে আরে,আমি তোমাকে ছোট করে বলিনি!তুমি তো আমার বোনের মতো!তাই শেয়ার করছি…কাউকে বলো না কিন্তু!”
আয়ুশী হাসলো।মেয়েটা বড্ড মিশুক! ইহরা আবার বলতে শুরু করলো,”জানো ছোট থেকে ইচ্ছে ছিল,একটা বোন হবে! যাকে নিজের সব কথা বলবো…কিন্তু ভাগ্য!তার আগেই বাবা মা ফুস।আর এখন তোমায় পেলাম!তাই তোমাকে সব বলবো!তুমিও বলবে কিন্তু…!”
আয়ুশী মাথা নাড়লো..
“তুমি কি টেম্পোরারি ডাম্ব?”
“এহহ?”
“মানে তুমি কি সাময়িক বো’বা?”

আয়ুশী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।এমন না ও বুঝে নি!কিন্তু হঠাৎ এমন প্রশ্নের মানে খুঁজে পেলো না!
“কি হলো বলো?”
“আমি কেনো বো’বা হতে যাবো?”
“তাহলে এত চুপচাপ কেনো?আমি এতক্ষন ধরে বক বক করছি।তুমি নিরীহ বিল্লির মত ঘাপটি মে’রে বসে আছো!”
“না না ,তেমন কিছু না!”
“বুঝি বুঝি,খাই না তো সুজি!একটু হলেও বুঝি!আচ্ছা ঘুরতে যাবে?”
“এই সকালে?”
“সকাল বলছো কেনো? সাড়ে এগারোটা বাজে!আর এখন যাবো না!বিকেলে।”
“আচ্ছা!”

“আচ্ছা তুমি আমার হাতের স্পেশাল কফি ট্রাই করবে?দারুন টেস্ট! ওয়েট এখনই আনছি!”
বলেই দৌড়!আয়ুশী হাসলো…প্রথমে ভালো না লাগলেও এখন ভীষণ ভালো লাগছে ওর ইহরাকে।মানতে বাধ্য,এরকম মেয়ে রেখে আয়ান তাকে কেনো পছন্দ করবে?দীর্ঘশ্বাস নিলো।বেশ কিছুক্ষণ বসে থেকে ভাবলো নিচে গিয়ে দেখা যাক ইহরা কি করছে দেখতে যাওয়া যাক!
ওদিকে ইহরা কফি বানাচ্ছে।কফি মগ নিয়ে আসতে যাবে তখনই কেও মগটা নিয়ে গেলো।

“আরে…”
“থ্যাংকস ফর দি কফি!”,মুচকি হেসে বলল ফাহিন।
কফি নিয়ে সোফায় বসে গেলো ও।এদিকে ইহরা তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তখনই নিচে নেমে এলো আয়ুশী।
“আরে ডাক্তার আপনি!”
“কেমন আছো মিস রোগী!”
আয়ুশী হাসলো! ফাহিনের পাশের সোফায় বসলো।
“এইতো আপনি!”
“তোমার চেক অ্যাপ করতে এলাম!বেলাল আঙ্কেলের কড়া নির্দেশ!ঠিক মত সুস্থ না হওয়া অব্দি প্রতিদিন যেনো চেকাপ করি!”

“আমি এখন একদম সুস্থ!আব… ইহরা আপু?তুমি এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো?”
ফাহিন মজার ছলে বললো,”আয়ানের চিন্তায় বিভোর হয়তো!”
বলেই কফিতে চুমুক দিলো!আয়ুশী মেকি হাসলো। ইহরার এতক্ষণে হুশ এলো।
“এই এই আপনি আমার কফি নিলেন কেনো?”
“তুমি তো আমার জন্য বানালে!”

“আমি কই আপনার জন্য বানাইলাম?আমি তো আয়ুশীর জন্য বানালাম!আপনি খেলেন কেনো?”
ফাহিন মুচকি হেসে বলল,”যা আয়ুশীর তাই আমার!তাই না আয়ু?”
আয়ুশী হালকা হাসলো!কিন্তু আয়ানের এটা মোটেও ভাল্লাগলো না।ভার্সিটি থেকে ফিরলো মাত্র।আজ আর ক্লাস করাতে মন চাচ্ছিলো না ওর।তাই চলে আসলো।কিন্তু বাড়িতে ঢোকা মাত্রই ফাহিনের এমন কথা ওর মোটেও পছন্দ হলো না।
“যার জিনিস সেটা একমাত্র তারই থাকে!”(আয়ান)
“কিরে তুই কখন এলি?”
“মাত্র!”
“আয় বস!”

আয়ান ফাহিনের সাথে বসলো।আয়ুশী চেয়েও উঠতে পারছে না! ও চায় না আয়ান ভাবুক ওকে এড়িয়ে চলছে ও। ইহরা আয়ুশীর সাথে বসলো।
“তো শুনো এবার আমার প্ল্যান!”(ইহরা)
তিনজন ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
“এভাবে তাকানোর কিছু হয় নি!আমার প্ল্যান শুনো!আজকে আমরা বিকেলে ঘুরতে যাব ।সো রেডি থেকো!আয়ু,উপরে চলো!গল্প করবো!”

বলে আয়ুশীকে টেনে নিয়ে গেল।ওদের যাওয়ার পানে ফাহিন মুচকি হাসলো! আয়ান তা দেখে বললো,”তোর মনে হচ্ছে না বিকেলে তোর কাজ আছে?”
“না তো! যাই হোক তোরা রেডি থাকিস!আমি এসে পিক করবো..!”
বলেই চলে গেলো।
রাজ্যের গল্প নিয়ে বসেছে আয়ুশী আর ইহরা!তখনই আয়ুশীর ফোনে কল এলো।সীমা ফোন করেছে।হুট করেই মন হলো এতদিন সীমা খোজ নেয় নি! ও তো এমন না! ঝট পট ফোন রিসিভ করলো।

“হ্যালো! শিম..কেমন আছিস?”
“আলহামদুলিল্লাহ,তুই?”
“ভালো!কি হয়েছে তোর?গলাটা এমন কেনো?”
ওপাশে নিরবতা!
“শিম!”
“ভার্সিটি আসবি কবে থেকে?”
“কাল!”
“বেশ , দেখা হবে…আমিও কাল আসছি!”
বলেই রেখে দিল!
“আয়ু?এনি সমস্যা?”

“না আসলে আমার বান্ধবী সীমা! ও ফোন দিয়েছে!”
“তো এত চিন্তিত কেনো?”
“ওর কিছু হয়েছে হয়তো!এরকম চুপচাপ শান্ত ও না!আর যেখানে আমার এই পরিস্থিতি, সেখানে ও কোনোদিন এভাবে খোজ না নিয়ে থাকে না!আর এরকম ভাবে কথা তো বলে না!”
“কি বললো ও?”
“কাল দেখা করবে,ভার্সিটি যেতে!”
“বেশ কালকে জিজ্ঞেস করে নিও!”
“হুমম!”
বিকেলে…

হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি থেকে বেশ দুর এসে পড়েছে ওরা।
“ইহরাপু?”
“হুমম?”
“কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“কে জানে?”
আয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো,”ঘুরতে যেতে চাও,অথচ কই যাবে জানো না?”
ইহরা কোমরে হাত রেখে বলল,”তোমাদের মত সিনিয়র মানুষকে এনেছি কি আমাদের জিজ্ঞেস করে ঘুরানোর জন্য?”
“আইডিয়া কার ছিল?”

আয়ুশী বলে উঠলো,”প্রত্যেক বিল্ডিং তৈরিতে আইডিয়া মেইন একজনের থাকে,তাই বলে কি কাজ সে করে ?”
ফাহিন অসহায় হয়ে বললো,”ভাই যতই কর,মেয়েদের সাথে কথায় জিততে পারবি না!বাদ দে…আজকে আপাতত আরেকটু সামনে যাই.. পরে কোনো এক সময় দূরে যাওয়া হবে!”
সেদিনের মত ফিরে এলো ওরা!
রাতে ইহরা আয়ুশীর সাথে ঘুমাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।
“কখনও কাউকে ভালোবেসেছো আয়ু?”(ইহরা)
আয়ুশী ঘুরে তাকালো!

“হ্যাঁ,এখনও বাসি তো!মা বাবা সবাইকে!”
“উফফ,আয়ু!এই ভালোবাসা সেই বাসা না!”
“ওহ যেই বাসায় ভালো সুযোগ সুবিধা থাকে তাকে বলে তো?”
“ধুর,ঘুমাও তুমি!”
বলেই উল্টো হয়ে শুয়ে পড়লো।আয়ুশী হাসলো! ও বুঝেছে ঠিকই,কিন্তু এই মেয়েটার সাথে এখন এতটাই জড়িয়ে গেছে এখন না পারবে মিথ্যে বলতে আর না পারবে সবটা বলতে! ও জানে যদি বলে বাসে,তাহলে কে সে জানতে চাইবে ! যা ও কখনোই বলতে পারবে না…

নিজের রুমে বিছানায় শুয়ে ইহরার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে আয়ান।কিন্তু মন ওর সেই ছবিতে নেই! নাহ,চেয়েও পারছে না মুগ্ধ হয়ে সেই ছবিতে তাকিয়ে থাকতে!চেয়েও পারছে না ভালোবেসে সেই ছবিটাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে।হুট করেই মোবাইলটা ওর মুখে পড়লো।বিরক্তিতে উফফ করে উঠলো ওর।মুখ থেকে ফোন তুলতেই আয়ুশীর সেদিনের ছবি ভেসে উঠলো!কালো রঙের জমা,কানে সাদা কাঠগোলাপ গুঁজে রেখে লজ্জা মাখা হাসিতে আরেকবার হারিয়ে গেলো ও।বুকের উপর ফোনটা রেখে চোখ বুজে রইলো ও।

“আমি জানি না আমার কি হচ্ছে!আমি জানি না আমি কি চাই!জানি না আমি,কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক!জানি না আমি ,কিছু জানি!শুধু জানি তোমার মাঝেই হারিয়ে যাচ্ছি আমি!কিন্তু এটা যে অন্যায়!কেনো অনুভূতি গুলো নিজ থেকে তোমার প্রতি নিজের মনের উথাল পাতাল ঝড় তুলছে।কেনো আয়ুশী?নিজেকে এতটা অসহায় তো আগে লাগে নি!আমি ঠিক কি করবো?

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১২

যার প্রতি অনুভূতি আনতে চাইছি, জোড় করে এক চিলতি পরিমাণও অন্য অনুভূতি জন্মালো না তার প্রতি!আর তোমার থেকে নিজের অনুভূতি যতই ঠেলে দিচ্ছি,মনে হচ্ছে সব ঝেকে বসছে!আমি কি করবো?কে আমায় বলবে?কে বলবে কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক?জাস্ট বিরক্ত আমি!নিজের উপর!নিজের ফিলিংস এর উপর! কার কাছে বলবো আমি?কাকে বলবো আমি অসহায়!ভীষণ অসহায়!অসম্ভব রকমের !”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৪