অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৮

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৮
সাবরিন জাহান

নিজের সিটে বসতেই আয়ুশী দেখলো সীমা একধ্যানে ইভার দিকে তাকিয়ে আছে।আর ইভা আনমনে বইয়ে তাকিয়ে আছে। আয়ুশী সীমার কানে ফিস ফিস করে বললো, “এভাবে কি দেখছিস?”
“বুঝার চেষ্টা করছি।”
“কি?”
“ইভা ছ্যাকা ট্যাকা খেলো নাকি?”
“মানে?”
“না মানে আসার পর থেকে দেখছি বই উল্টো করে কি যেনো দেখেই যাচ্ছে। কিন্তু সেটাও সূচীপত্রের পেজ। আমি যে তাকিয়ে আছি সেটাও ওর খেয়ালে নেই। কিছুই বুঝলাম না !”

“ব্রেকআপ হয়েছে। ”
সীমা চমকে গিয়ে বললো, ” ইভার রিলেশন ছিলো?”
“আরে রিলেশন কেন থাকবে?”
“তাহলে ব্রেক আপ কিসের ?”
“রিলেশন ছাড়া ওর কি আছে ?”
“কি?”
“উফফ!বিয়ে…”
“ওর বিয়ে ভেঙে গেছে ?” ,মৃদু চিৎকার করে বললো সীমা। ইভার কানে আওয়াজ গেলেও ওর কানে কথার বুলি যাচ্ছে না।
“আরে কচু, না! একটু আগে জুনাইদ ভাইয়া এসেছিল!”
সীমা লাফিয়ে বলে উঠলো, “ইভার ফিয়ন্সে? ”
“হুমম!”
“কেনো?”
“শুন তাহলে!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমি জুনাইদ নীরব?”
“তো আমি কি করবো?”
জুনাইদ অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।ওর আগেই বোঝা উচিত ছিল ইভার বান্ধবী ইভার মতোই হবে!
“ইভার ফিয়ন্সে!”
চোখ বড় বড় করে তাকালো আয়ুশী ।
“সিরিয়াসলি?”

“জি!”
“ওহ…আপনি নিশ্চয়ই ইভাকে খুঁজছেন?দাড়ান,আমি ওকে ডেকে আনি!”
“আরে না না,দাড়ান প্লিজ!”
“কি হলো?”
“আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে আমাদের মাঝে একটু ঝামেলা হয়েছে!”
জুনাইদ আয়ুশীকে সব খুলে বললো।
“এখন আপনারর একটু হেল্প লাগবে!কোনো ভাবে ওকে একবার কথা বলতে ম্যানেজ করে দিবেন প্লিজ?”
“বেশ,চিন্তা করবেন না!আমি সবসময় পাশে আছি আপনার!”

“ওহো,তাহলে এই ব্যাপার!”
তখনই কিছু মেয়ে এলো।এদের সীমা সহ্য করতে পারেনা।কয়েকদিন ক্লাস মিস যাওয়ায় ওদের কাছে নোট চেয়েছিল!কিন্তু না দিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলে অপমান করেছিল!সেই থেকে দুই চক্ষে সহ্য হয় না ওদের!
“হাই সীমা!”
সীমা ভ্রু কুঁচকে তাকালো!আজকে এত ভালো ব্যাবহার!
“বাবা,সূর্য কোন দিকে উঠেছে রে আয়ু?”
আয়ুশী ফিক করে হেসে দিল।ইভা এবার ওদের দিকে তাকালো।

“বারে,এভাবে বলছো কেনো?”(প্রথম মেয়ে)
“না না,বলো বলো! তো হটাৎ আমাদের কাছে কেনো?”
মেয়েগুলো যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেলো।ঝটপট ওদের সামনের সিটে বসে গেলো!
“তোমার সাথে ওই হ্যান্ডসাম ছেলেটা কে ছিল?”
সীমা এতক্ষণে বুঝতে পারলো।আজ নাহিমের সাথে এসেছে ও।

“কেনো?”
“না মানে এমনি!বলো না!”
“কাজিন!”
“ওহ,কি করে?”
সীমা চওড়া হেসে বললো,”বউ বাচ্চা সামলায়!”
ইভা চোখ বড় বড় করে ফেললো।ওর জানামতে নাহিম এখনও অবিবাহিত!
“কি বলছো কি?বিবাহিত?”
“হ্যাঁ,দুইবছর হলো বিয়ে হয়েছে!দুইটা বাচ্চাও আছে!”

আয়ুশী ঠোঁট চেপে হাসলো মেয়েদের অবস্থা দেখে!বোঝাই যাচ্ছে অনেক বড় ঝটকা লেগেছে!ব্যাগ থেকে পানি বের করে মুখে নিলো ও।তখনই মেয়েটি ওকে বলে উঠলো,”আয়ুশী,তুমি আর আয়ান স্যার কি ভাই বোন?”
ফুস করে মুখের সব পানি সামনের মেয়েটির গায়ে ফেলে দিল।মেয়েটি নাক ছিটকে উঠে দাড়ালো।আয়ুশীর নাকে মুখে পানি উঠে গেছে! কাশতে লাগলো ও!

“ইয়াক!এটা কি করলে?”
আয়ুশী কাশতে ব্যাস্ত!
“তুমি এটা কি প্রশ্ন করলে?”(সীমা)
“ওকে দেখলাম স্যারের সাথে আসতে,আবার নামেও দেখলাম মিল!ভাবলাম ভাই বোন হবে!”
“ভাবনা গুলো তে একটু তালা মেরো বোন!স্যার হয়…তোমাদের ভাই হলেও ওর ভাই না!”

আয়ুশী সীমার পেটে কুনুই দিয়ে খোঁচা দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।মেয়েটি না বুঝে বললো,”মানে?”
ইভা সামাল দিতে বললো,”আসলে স্যারের বাবা আর আয়ুশীর বাবা একে অপরের বন্ধু!সেই সূত্রেই ওরা চিনা পরিচিত!আর আসা যাওয়া!”
“ওহ!”
মেয়েটি আরো কিছু বলতে নিলেও ক্লাস শুরু হওয়ায় চলে গেলো!

রাস্তার এক পাশে স্কুটি নিয়ে বসে আছে ইহরা।টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে!এখন এতটা পথ ও কিভাবে যাবে?আর মেকানিক এর দোকান কোথায়..কোন দিকে ঐটাও জানে না!বান্ধবীর সাথে ঘুরতে বের হয়েছিল!ওকে বাসায় দিয়ে নিজের বাসার দিকে যাচ্ছিল ও!বান্ধবীর বাসা ওর বাসা থেকে অনেক দূর!কি করবে ভেবে না পেয়ে স্কুটির পাশেই ঠোঁট উল্টে বসে রইলো।

“ফকিরের মত রাস্তায় বসে আছো কেনো?”
কারো কর্কশ কন্ঠে মাথা তুলে তাকালো ইহরা! ফাহিনকে দেখে চমকালো!
“আপনি?”
“ছি ছি,তোমার ভিক্ষা করার এত শখ?”
ভরকে গেলো ও!
“আরে কি বলছেন?”
“রাস্তার মাঝে বসে বলছো কি বলছি?”
ইহরা উঠে দাড়ালো!
“রাস্তার মাঝে না,এক সাইডে!কি করবো আমি? স্কুটির টায়ারের হাওয়া ফুস!এখন মেকানিক কই পাবো?আর এত দূর কি স্কুটি ঠেলে নিয়ে যাবো?”

“রিকশা নিয়ে নিতে!”
ইহরা বুকে হাত গুজে বললো,”আর স্কুটিটা তো উড়ে উড়ে বাড়ি চলে যেতো রাইট?”
“মাথায় ঘিলু থাকলে এখানে থাকতে না!”
“কি বললেন?”
“সামনেই মেকানিকের দোকান!একটু হাঁটলেই হতো!”
“আমি কি জানি নাকি?না থাকলে কি হতো?”
“না থাকলে যতদূর হাঁটতে পারতে হাঁটতে,তারপর পা ব্যাথা হয়ে গেলে ওখানে বসতে!রেস্ট নেয়া শেষ হলে আবার হাঁটতে!”

“ধুর,আপনার সাথে কথা বলাই বেকার!বাই দা ওয়ে,আপনি এখানে কেনো?”
“তোমাকে ফকির ভেবে সাহায্য করতে আসলাম!”
“আজব!”
“ডাক্তার আমি!কোনো বেকার না!কাজে আসতেই পারি!”
বলে স্কুটি ঠেলে সামনে নিতে লাগলো।
“স্কুটি নিয়ে কই যান!”
“বিক্রি করতে!”
ইহরা বিড়বিড় করে বললো,”অসহ্য!”
মেকানিকের দোকানে স্কুটির টায়ার বদলে বেরিয়ে এলো ওরা! ফাহিন যেতে নিলেই ইহরা বলে উঠে,”আপনি কোথায় যান!”

“বাসায়!”
“গাড়ি এনেছেন?”
“না!রিকশা নিয়ে নিবো!”
“আব….আমার সাথে যেতে পারেন!”
“লাগবে না!”
বলেই বেরিয়ে গেলো দোকান থেকে।ইহরাও পিছু পিছু বের হলো।
“এই ভর দুপুরে রিকশা এখানে আসবে না!”
“কে বলেছে তোমায়?”
“গত ত্রিশ মিনিট এখানে বসে ছিলাম!একটা রিকশাও আসেনি!”
ফাহিন চিন্তিত হলো।

“স্কুটি বেটার অপশন!”
“ড্রাইভ আমি করবো!”
“ওকে!”
মনে মনে খুশি হলো ইহরা!কিছুক্ষণের জন্য না হয় একসাথে থাকলো!
“এখানে কি কাজে এসেছিলে?”
স্কুটি চালাতে চালাতে বললো ফাহিন!
“বান্ধবীর সাথে দেখা করতে!দেশে আসার পর দেখা হয়নি!তাই…সাথে একটু ঘুরলাম!”
“আমি না থাকলে তো ওই মাঝ রাস্তাতেই বসে থাকতে!”

“ছিলেন তো!”
“সারাজীবন তো আর থাকবো না!”
মুখ চুপসে গেলো ইহরার! ফাহিন ব্যাক মিরোরে তা দেখলো!
“তুমি চাইলেই সারাজীবন থাকা সম্ভব ছিল!”
মুখ ঘুরিয়ে নিলো ইহরা!চোখের কোণে পানি আসতেই মুছে নিলো! ও নিরুপায়! ফাহিন আর কিছুই বললো না!

কেঁটে গেলো বেশ কিছুদিন!নিজের ব্যাবসার কাজ শুরুর জন্য কিছুটা ব্যাস্ত সময় কাটছে আয়ানের!ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়িতে আসতেই নিজের মাকে বিচলিত অবস্থায় ইহরার কাঁধে মাথা রাখতে দেখে বুকটা কেঁপে উঠলো ওর।দৌড়ে মায়ের কাছে গেলো।
“মা কি হয়েছে তোমার?”
নাহার কথা বলতে পারছেন না।
“আয়ান ,আয়ুশী এখনও ফিরেনি!”(ইহরা)
“ফিরেনি মানে?”

“ও টিউশনি করে,একই বাসার দুই স্টুডেন্ট!সামনে ওদের পরীক্ষা।তাই বলেছে আজ সাড়ে ছয়টা বাজবে আসতে আসতে! সাড়ে ছয়টা বাজলেও আয়ুশীর আসার কোনো খবর নেই! সাতটা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম!তাও আসেনি…ফোন দিতেই দেখি সুইচড অফ! ফাহিন ভাইয়াকে ওই বাসার অ্যাড্রেস দিলাম!কিন্তু ওখানে গিয়ে উনি শুনলেন আয়ুশী ছয়টায় বেরিয়ে গেছিলো! ফাহিন ভাইয়া অনেক জায়গায় খুঁজেছে!এখনও খুঁজছে…কিন্তু পেলো না!”
আয়ান ঘড়িতে সময় দেখলো।রাত সাড়ে নয়টা!মানে সাড়ে তিন ঘণ্টা যাবৎ আয়ুশী মিসিং!

“আমাকে ফোন করলে না কেনো?”
“তোমার ফোন আনরিচেবল ছিল!”
“মা ,তুমি চিন্তা করো না ! ও ঠিক এসে যাবে…”
বলেই বেরিয়ে গেলো। ফাহিনকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কোথায় কোথায় খুঁজেছে!আয়ুশীর সকল পরিচিত জায়গায় গিয়েছে ও!কিন্তু পায়নি ওকে! আয়ান ওই বাড়ির দিকে গেলো। ওখান থেকে শুরু করে ওর বাড়িতে আসার সকল রাস্তায় ঘুরলো!আয়ুশীর কোনো চিহ্ন পেলো না।আয়ুশী যেতে পারে সব জায়গায় খোঁজা শেষ!আর কি করবে ভেবে না পেয়ে বাইকে হেলান দিয়ে বসে চুল খামচে ধরলো!আয়ুশীর লাস্ট লোকেশন স্টুডেন্ট এর বাড়ি থেকে একটু দূরে ছিল।এরপর ফোন অফ!

“কোথায় তুমি আয়ুশী?কেনো বারবার এমনটা করো! আই সোয়ার,একবার পেলে তোমায় আস্ত রাখবো না!বার বার কেনো চিন্তায় ফেলো আমাদের!কেনো…..”
বিচলিত হয়ে ওখানেই বসে রইলো ও!পুলিশ কেস করবে ভেবে ফাহিনকে কল দিল!
“থানায় ডাইরি কর!আমার মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হয়েছে?”
“ওকে!”

বলেই রেখে দিল!চোখ বন্ধ করে বসে আছে ও!মুহূর্তেই ভেসে উঠলো ওর আর আয়ুশীর প্রথম দেখার স্মৃতি!ওর হাসি!হসপিটালে পড়ে যাওয়া!ভার্সিটিতে ওকে দেখে চমকানো!বার বার হোচট খাওয়া!নিজের ঘরে ওকে টাওয়াল পরে বের হতে দেখে ঘাবড়ে যাওয়া!সব শেষে কাঠগোলাপ কানে গুঁজে লজ্জা মাখা হাসির অধিকারিণী!না,চোখ খুললো না ও!ভাবতে ভালো লাগছে ওর….
“আই লাভ ইউ আয়ুশী!”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৭

হেরে গেলো ওর সকল মিথ্যে অনুভূতি!পারলো না আর ইহরার জন্য মিথ্যে অনুভূতিকে সত্য করতে।কিন্তু মনের অজান্তেই সব অনুভূতি আয়ুশীর মাঝে সীমাবদ্ধ করে দিলো ও!জানে এ চরম অন্যায়!কিন্তু কি করবে ও?মন মস্তিষ্কের লড়াইয়ে মন যে জিতেও হেরে গেছে!
“কোথায় তুমি আয়ুশী?কোথায় খুজবো আমি আর?কোথায়?”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ১৯