অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২৭

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২৭
সাবরিন জাহান

“বাট তোমার মনে হয় না,তোমাকে ওর পাশে খুব একটা মানান সই লাগে না?”
কথাটা শুনে মুখের হাসি মিলিয়ে ভ্রু কুঁচকে গেলো আয়ুশীর।
“বলতে কি চান আপনি?”
“আরে আরে,রেগে যাচ্ছো কেনো! আই মিন ও বিদেশে স্টাডি করেছে।বাংলাদেশী মেয়ে কি ওর চলে বলো? ইহরা তো তাও ঠিক ছিল!বাট….”
আয়ুশী বুকে হাত গুজে মুচকি হেসে বলল,”তো ওর কেমন মেয়ে চলবে?”

“ওর জন্য তো বিদেশী মেয়েই পারফেক্ট হবে!সুন্দর হবে, বাংলাও বলতে পারবে!ওর সাথে মানান সই আরকি!”
“একদম আপনার মত তাই না?”
“হ্যাঁ আমার মত হলেও হয়!”
“আরে আপু!আপনার মত হলে হয় বলছেন কেনো?একবারে আপনি ই হয়ে যান না!”
ডেইজি লাজুক হাসলো! তা দেখে আয়ুশীর রাগে ফেটে পড়লো!
“তো এবার বলুন,আপনার মধ্যে কি আছে যা আমার মধ্যে নেই?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমি বিদেশে পড়েছি!”
“তো এতে কি এমন হয়েছে?”
“দেখো হায়ুশী,আমি কিন্তু কথাটা এমনি ই বলেছি!”
“ওয়েট ওয়েট!আয়ুশী.. ইটস আয়ুশী!আর আপনার কি মনে হয় ,আমি একটা মেয়ে হয়ে আপনার হাব ভাব ধরতে পারবো?আপনি হয়তো জানেন না,বাট আমরা বাঙালি মেয়েরা সহজেই এসব ধরতে পারি!এভাবে ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বলে সোজাসুজি বলুন!”

ডেইজি মনে হয় এখন সাহস পেলো!
“ওয়েল!বলেই ফেলি! আয়ানকে আমি ভালোবাসি!তাই বলছি ওর থেকে সরে যাও!”
“আর কিছু?”
“দেখো হায়ুশী! ইহরার জন্য প্রথমবার আমি আয়ানকে ছেড়ে দিয়েছি!কিন্তু ভাগ্য আবার আমাকে আরেকটা সুযোগ দিয়েছে!”
“ওকে আর কিছু?”
“এবার আমি আয়ানকে অত সহজে ছাড়বো না!”
“আর?”

“আর ইউ ক্রে’জি?”
“না না,আমি একদম ঠিক আছি!শুধু আপনার মাথায় যে সমস্যা আছে ওটা ঠিক কত খানি সেটা বুঝার চেষ্টা করছি!”
“হায়ুশি!”
আয়ুশী দুই হাত উপরে তুলে বললো,”হে আল্লাহ!আমার এত সহজ নামকে এই বিদেশিনী টা কি বানাচ্ছে! ডা’ইনি একখান!”
“কি বললে?”
“বললাম ট্রাই ইউর বেস্ট!স্যারকে পটানোর জন্য অগ্রিম শুভেচ্ছা!টাটা!”
বলেই হাঁটা লাগালো,এদিকে ডেইজি ঠিক বুঝছে না পাগল কে! ও নাকি আয়ুশী !

ইহরার পাশে বসে ছিল আয়ুশী।তখনই আয়ান এসে ইহরার অপরপাশে বসলো!
“এই ইহরা,তোমার বোনকে বলো!এই আয়ান মাহতাব কিন্তু এত হ্যাংলা হতে পারবে না!কবে থেকে মানানোর চেষ্টা করছি অথচ মহারানীর কোনো হেল দোল নেই!এমন হলে কিন্তু আমি পুরনো পাত্তা না দেয়া আয়ান হয়ে যাবো বলে দিলাম!”
“আপু!আমি কি একবারও বলেছি আমাকে মানাতে?আমি আর কিছু ভাবি বা ভাববো না!বলে দেও উনাকে!”
“ইহরা,আমি কিন্তু ওর জন্য এখানে আসা সুন্দরী মেয়েদের ইগনোর করছি!”

“আপু,আমি কিন্তু একবারও বলি নি আমার জন্য ডেইজি আপুকে ইগনোর করতে!”
“এই ওয়েট , ইহরা ওকে জিজ্ঞেস করো তো ,ডেইজি কথা থেকে আসলো? ও তো ফাহিনের ওখানে!”
“আপু উনাকে বলে দেও, ফাহিন ভাইয়ার ওখানেই যখন তার মন পড়ে আছে তাহলে এখানে বসে আছে কেনো?”
“আজব আমি এটা কখন বললাম!”
“কোনটা?”
“আমার মন ফাহিনের ওখানে পড়ে আছে ,এইটা!”
“এইযে ,এখন বললেন!”
“ইহরা,তুমি কিছু বলবে না?”

“আপু তুমি কিছু বলবে?”
ইহরা এবার ফুসে উঠে বললো,”মামনি!”
ওর আওয়াজ শুনে নাহার ওর কাছে আসলেন!
“কি হলো?”
“তোমার এই দুই ছেলে মেয়েকে সরাও এখান থেকে!কই আমার গায়ে হলুদ হচ্ছে,ওরা হলুদ ছোঁয়াবে।একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে, তা শুনে আমি লজ্জা পাবো । তা না,এটা রীতিমতো আমার কান ঝালাপালা করে ফেলতেছে!”
আয়ুশী আর আয়ান দুইজনেই চোখ ছোট ছোট করে তাকালো!

“দেখো দেখো কিভাবে দেখছে!”
“আপু…”
“ইহরা!”
নাহার দুইজনে কান টেনে ধরে বললেন,”কেনো আমার মেয়েটাকে জ্বালাচ্ছিস!নাম দুইটা!
“আরে নামছি ছোট আম্মু,ছাড়ো!এখানে কত ছেলেরা আছে!ওদের সামনে আমার ইজ্জতের ফালুদা করো না!”
আয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো,”কি বললে তুমি?”
আয়ুশী মুখ বাকালো! যার মানে,”যা শুনেছেন!”

নাহার দুইজনকে ওখান থেকে সরিয়ে একজায়গায় বসালেন!
“হলুদ শেষ হওয়ার আগে তোমরা ইহরাকে জ্বালাবে না!”
“আমি জ্বালাইনি ছোট আম্মু!উনি এসে শুরু করেছে!”
“ও হ্যালো আমি কি করলাম?”
“আপনি ই তো এসে হাঁসের মত প্যাক প্যাক করছিলেন!”
“আর তুমি চুপ ছিলে?”
নাহার তেঁতে উঠে বললেন,”চুপ!বাচ্চাদের মত করছো কেনো তোমরা?আর আয়ান তুমিও শেষ মেষ বাচ্চাদের মত বিহেভ করছো? বুদ্ধি জ্ঞান লোপ পেয়েছে নাকি?”
দুই জনই চুপ করে গেলো!

“এভাবেই চুপ থাকবে!”
বলেই চলে গেলো নাহার!
“এভাবে মাকে না রাগালেই পারতে!”
“আমি রাগিয়েছি?”
“আচ্ছা বেশ,আমি শুরু করেছি!এবার সরি!”
“হুহ!”
আবারও নাহার এলেন!
“আয়ান, ফাহিনের বাড়িতে সব উপহার গেছে তো!”

“হ্যাঁ মা,ডেইজি কে দিয়ে পাঠিয়েছি!আমিও এখন যাবো!ওদের হলুদ শুরু হয়নি!তুমি যাবে?”
“না না,আমি মেয়ের মা!আমার যাওয়া ঠিক হবে না এখন!তুমি আর আয়ু যাও!”
“আচ্ছা!”
অতঃপর দুইজন গেলো ফাহিনের বাড়ির উদ্দেশ্যে!বেশি দূর না! দশ মিনিটের রাস্তা! ফাহিনদের বাড়ির বাগানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে!
আয়ান আর আয়ুশী ফাহিনকে হলুদ দিলো!অনুষ্ঠান চলছে…আয়ান
কথা বলায় ব্যাস্ত,তখন এক মহিলা আসলো

“তোমার নাম কি মা?”
আয়ুশী হেসে বললো,”আয়ুশী আফরোজ!”
“ওহ,কোন ক্লাসে পড়?”
“জি এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ার!”
“ওহ!”
মহিলাটি তার পাশের মহিলাকে ইশারা করছে কিছু বলতে!আয়ুশীর কেমন অস্বস্থি লাগলো!হয়তো ও বুঝতে পারছে মহিলাগুলোর ইন্টেনশন!প্রায় বিয়ে বাড়িতে এক দল থাকে,যারা হয় নিজের নয় নিজের ছেলে বা মেয়ের বিয়ের জন্য এসে থাকে!এরা তারই মধ্যে একজন!

হুট করেই মহিলাটি বললো,”তোমার বাড়ির কেউ আসেনি?বাবা বা মা!”
আয়ুশীর মনটা বিষিয়ে গেলো।বলতে গেলো নাহারদের সাথে থাকতে থাকতে মা বাবার কোনো অভাব বুঝতে পারেনি ও!কিন্তু এভাবে কেউ জিজ্ঞেস করলে অবশ্যই একটা বাবা মা হারা মেয়ের খারাপ লাগবে!আয়ুশী মলিন হেসে বললো,”আমার বাবা মা নেই!”
“ওহ!তো তুমি বিবাহিত কি?”
আয়ুশী চুপ করে রইলো।মূলত মা বাবার কথা মনে হওয়ায় ওর কান্না পাচ্ছে।তাই কথা বলতে পারছে না!
“বিবাহিত নয়,তবে ওর বিয়ে ঠিক!”

আয়ানের কথায় মহিলাগুলো ওর দিকে তাকালো!আয়ুশী কিছু না বলে ওখান থেকে ফাহিনদের বাড়ির ছাদে চলে গেলো!আগেও অনেকবার এই বাড়িতে এসেছে! ফাহিনের বাবা মাও ভীষন আদর করে ওকে!তাই ওর এত সংকোচ নেই!
“তুমি কে হও ওর?”
আয়ান হেসে বললো,”ওর উড বি!”

মহিলা গুলো মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলেন! আয়ান আয়ুশীকে খুঁজতে ভিতরে গেলো।এতক্ষণ ধরে ওদের কথা শুনছিল ও! ছাদের এক কোণায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আয়ুশী।
আয়ুশীর এটেনসন পেতে আয়ান হালকা কাশলো!কিন্তু আয়ুশীর কোনো হেল দোল দেখতে পেলো না।আবার কাশলো ও!তাও একই অবস্থা!আরেকবার কাশি দিয়েই আয়ুশী বলে উঠলো,”যক্ষ্মা হয়েছে নাকি আপনার?”

“নাতো!”
“তো এমন খ্যাক খ্যাক করছেন কেনো?”
আয়ান ভরকে গেল!
“একটু ঠাণ্ডা লেগেছে,তাই আরকি!”
আয়ুশী কিছু বললো না।
“মন খারাপ কেনো?আঙ্কেল আন্টিকে মিস করছো বুঝি?”
“কিছুটা!”

“আরে রিল্যাক্স!আঙ্কেল আন্টি যদি জানে তার মেয়ের জামাই থাকতেও তার মেয়ে তাদের জন্য মন খারাপ করছে ,আমাকে কিন্তু পানিশমেন্ট দিবে!”
“আজাইরা বকা ছাড়া আপনার কাজ নাই তাই না?”
“আমার এখনের কাজ আমার প্রেয়সীর মন ভালো করা!”
“এইসব উদ্ভট নামে আমাকে ডাকবেন না!খু’ন করে ফেলবো একদম!
“ভালোবেসে তো অর্ধেক খু’ন হয়েই গেছি!এবার বাকিটাও করে ফেলো!”

আয়ুশী আয়ানের দিকে কিছুক্ষন তাকালো!চোখ সরিয়ে চলে যেতে নিবেই তখনই আয়ান হাত ধরে আটকালো!ওকে নিজের সামনে দাড় করালো!
“আমি জানি আমার শুরু থেকে আজ অব্দি,অনেক ব্যাবহারই তোমায় কষ্ট দিয়েছে!এমনকি এও জানি আমার করা সেদিনের কাজগুলো তোমার মনে দাগ কেটেছে!বাট একবার আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখো!যদি তোমার কাছের কেও তোমার সাথে এমন একটা মজা করে তোমার রাগ হবে না? হ্যাঁ,আমি ওভার রিয়েক্ট করে ফেলেছি!আসলে রাগ উঠলে আমি কন্ট্রোল করতে পারিনা!আমি জানি না কেনো,কিন্তু আমি নিজের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি!

আমার শুরু থেকে আজ অব্দি করা তোমার প্রতি কেয়ারিং,তোমাকে আগলিয়ে রাখা কোনো কিছুই দায়িত্ব বা মানবিকতা ছিল না।কিছু একটা তোমার দিকে আমায় শুধু টানতো!যেই অনুভূতি গুলো ইহরার প্রতি আনতে চাইতাম সেই অনুভূতি গুলো মনে অজান্তে তোমার প্রতি এসে পড়েছিল!প্রতি মুহূর্তে বুঝতাম আমি তোমার উপর দূর্বল,কিন্তু তাও পাত্তা দিতাম না!যতই দূরে সরানোর চেষ্টা করতাম ততই কাছে চলে আসতাম!সেদিন টিউশনির পর তুমি বাড়িতে আসোনি শুনে আমার নিজেকে পাগল প্রায় লেগেছিল।

যখন সব জানলাম তখনই মনে হয়েছিলো ওদের কিছু একটা করে ফেলি!কিন্তু তখন গেলে পেতাম না। তাই পরের দিনই গেলাম! তোমার টিউশনি করতে বারণ করলাম ,কারণ চাইনি আবার এমন সিচুয়েশনে না পড়!এটা দায়িত্ব হলেও,ভালোবাসার দায়িত্ব আমার!এনগেজমেন্ট এর আগ মুহূর্ত অব্দি আমি শুধু ভেবেছিলাম কি করবো! ইহরা বা আমি কেউই কিছু করতে পারছিলাম না!একদিকে মা আরেক দিকে ইহরা!মাকে দেয়া কথা আর ইহরাকে এতদিন অপেক্ষা করানো সব ভাবাচ্ছিল আমায়!আমি তখনও জানতাম না ওদের কথা।জানলে হয়তো সেই মুহূর্তেই না করতাম!বাট….”
কিছুক্ষণ থামলো আয়ান!আবার বলতে লাগলো,

“প্রতিটা মুহূর্তে আমি ফিল করেছি যে ,আমি তোমায় ভালোবাসি!কিন্তু এত বাধ্যবাধকতা আমায় ঘিরে রেখেছিল আমি কিছুই বুঝতে পারিনি!কিন্তু তাই বলে আমার ফিলিংস ঠুনকো নয়!প্লিজ একটাবার সব ভুলে নতুন করে সবটা সাজাতে চাই!জাস্ট সুযোগ দেও!প্লিজ…আমি তোমায় ভালোবাসি আয়ুশী!”
আয়ুশী নিরুত্তর! আয়ান মলিন হেসে বললো,”সব বললাম!তাও সব ঠিক করার সুযোগ দিবে না?”
আয়ুশী তাও চুপ!

“বেশ!আমি না হয় পুড়তে থাকি,এই ভালোবাসার দহনে!মিস ঝামেলা!চলো নিচে,বাড়ি ফিরতে হবে!অনেক রাত হয়ে গেছে!”
বলেই নিচে চলে গেলো।আয়ুশী তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো!এখন মনে হচ্ছে ভুল করছে ও,এই মান অভিমান এর খেলা খেলে!আয়ানের মলিন মুখে বলা প্রতিটা কথা ওর কানে বাজছে !কিছু ভাবতে না পেরে নিচে গেলো ও! আয়ান ফাহিনের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো।

রাস্তায় হাঁটছে ওরা দুইজন!হুট করেই আয়ুশী থেমে গেলো! আয়ান ফোনে কথা বলছিল বিধায় খেয়াল করলো না!কিছুক্ষণ বাদেই খেয়াল হতেই পিছে ঘুরে তাকালো ও।আয়ুশীর দিকে তাকিয়ে বললো,”কি হলো?দাড়িয়ে পড়লে কেনো?”
আয়ুশী হাতটাকে মুখের সামনে এনে মাইকের মত বানিয়ে বললো,”মাইক টেস্টিং,মাইক টেস্টিং! হ্যালো হ্যালো!”
“কি করছো আয়ুশী?রাত হয়েছে চলো!”

আয়ুশী ওর কথা না শুনেই বললো,”এইযে মিস্টার খারুশ!ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি!!শুনতে পেয়েছেন ভালোবাসিই! আপনায় আমি ভালোবাসি!”
আয়ান হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।তাই দেখে আয়ুশী সুর টেনে বললো,

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২৬

“ভালোবাসি বলে দাও আমায়?
বলে দেও, হ্যাঁ সব কবুল…
তুমি শুধু আমারই হবে
যদি করো মিষ্টি এ ভুল!”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২৮