অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩০

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩০
সাবরিন জাহান

“এইযে ডা’ইনি আপু,শুনছেন?”
“এই তুমি কি বললে আমায়?”
“কই কি বললাম?”
“আমার নাম কি বললে?”
“ডা’ইনি!”
“ডা’ইনি আবার কি?”
“ওমা আপনি জানেন না?”
“না!”

“ইসস,ইউটিউবে সার্চ দিয়েন!রূপকথার ডা’ইনি!তাহলে পেয়ে যাবেন..তার আগে আমাকে একটু পানি দিন তো!পায়ের ব্যাথায় উঠা দায়!”
ডেইজি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে পানি দিলো!বাড়িতে আসার পর সবাইকে ইমপ্রেস করার জন্য সে আয়ুশীর কেয়ার নিবে বলেছিল!শুরুতে আয়ুশী চটে গেলো,কারণ ও জানে ডেইজি আয়ানকে ওর কাছে আসতে দিবে না বলেই এমন করেছে!কিন্তু পরক্ষনেই মুখে হাসি ফুটলো!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

যাক,এই বাহানায় একটু মজা নেয়া যাবে ভেবে!এখন অব্দি ডেইজিকে কিছুক্ষণ পর পর খাটিয়েই যাচ্ছে!রাতে খেয়ে দেয়ে ডেইজি আয়ুশীর কাছেই শুয়েছিল!গেস্ট রুমে সীমা আর ইভা!নাহার ওদের আজকে এখানেই থাকতে বলেছেন! শুয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পড়েই আয়ুশী ডাক দিল!কিন্তু ডেইজি না শোনার ভান করে ওভাবেই রইলো!আয়ুশীও কম না!এতদিন মনে মনে দেয়া নামটা সরাসরি ই বলে দিলো!নিজের এমন উদ্ভট নাম শুনে না উঠে পারলো না।

“শুনো,আমার নাম ডেইজি!ওই নামেই ডাকবে..”
“আমার নাম আয়ুশী,কিন্তু আপনি তো হাতুশী ডাকেন!”
“আমি হায়ুশীই ডাকি!”
“উফফ!”
বির বির করে একপাশ হয়ে শুয়ে পড়লো! ডেইজিও ভেং’চি কেঁ’টে শুয়ে পড়লো!

সকাল থেকে বিকাল অব্দি আয়ুশী নিজের সব কাজ ডেইজি কে দিয়ে করিয়েছে!যদিও ওর পায়ের ব্যাথা আগের মত বেশি নেই! হাঁটতে পারে,কিন্তু আপাতত ডেইজির করুন অবস্থা ইনজয় করছে ও!
“আয়ু,আমরা চলে যাচ্ছি!”(ইহরা)
“সেকি আপু,এত জলদি কেনো?”
“নতুন বিয়ে হয়েছে,এখনই বেড়ালে লোকে কি বলবে?”
“আচ্ছা চলো এগিয়ে দিয়ে আসি!”

বলেই বিছানা থেকে নেমে ইহরার কাছে এলো। তাই দেখে ডেইজি চোখ বড় বড় করে বলল,”তোমার না পায়ে ব্যাথা?”
আয়ুশী জিভ কাটলো!ভুলেই গিয়েছিল ডেইজি আছে এখানে!একটু আগেই ডেইজিকে দিয়ে নিজের জন্য নাস্তা আনালো পায়ে ব্যাথার অজুহাতে!
“হে হে!কমে গেছে…ছোট আম্মু ডাকে!টাটা..”

বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। ইহরা হেসে বললো,”আপু কিছু মনে করো না! ও একটু দুষ্টু!”
ডেইজি হাসলেও ভিতরে রাগে জ্বলছে!
ইহরাদের সাথে ইভারাও চলে গেলো!ডেইজি এখানে কয়দিন থাকবে বলে ওদের সাথে গেলো!তাতেই আয়ুশীর রাগের শেষ নেই!

সন্ধ্যায় বসে বসে টিভি দেখছে আয়ুশী আর নাহার।তখনই ডেইজি নিচে নেমে এলো।নাহারের পাশে বসে বললো,”আন্টি রাতে তো রুটি বানাবে তাই না?”
“হুমম!কেনো তুমি অন্য কিছু খাবে নাকি?”
“না,না!বলছিলাম কি..আমি রুটি বানাই?”
নাহার অবাক হয়ে বললো,”তুমি রুটিও বানাতে পারো?”
ডেইজি একটু হেসে বললো,”আমি প্রায় সবই পারি!”
“তা ঠিক আছে,কিন্তু তুমি অতিথি মানুষ!তোমাকে কিভাবে..”
“ধুর,আমি তো তোমার মেয়ের মত!আমি বানাবো…তোমরা শুধু দেখো!”

বলেই রান্না ঘরে গেলো!আয়ুশী ওড়নার আঁচল হাতের মুঠোয় নিয়ে বসে ছিলো!বেশ বুঝতে পারছে নাহারকে ইমপ্রেস করতে এমন করছে!কিন্তু তা তো হচ্ছে না!
ডেইজি রুটির জন্য একটা কড়াইয়ে পানি বসালো, পরিমাপ মত লবণ দিয়ে আটা খুঁজতে লাগলো!কিন্তু পেলো না…তাই নাহারকে জিজ্ঞেস করতে বেরিয়ে এলো!এই ফাঁকে আয়ুশী রান্নাঘরে এলো!কড়াইয়ে রাখা পানি আরো বেশি করে লবণ দিয়ে দিলো!

“খুব ইমপ্রেস করার শখ না?এবার দেখি…কি করেন ডা’ইনি ম্যাম!”
ডেইজি আসছে দেখে বেরিয়ে গেলো ও!ডেইজি এসে সব তৈরি করতে লাগলো!সব বানানো শেষ…দুপুরের যা রান্না হয়েছে সেগুলো দিয়েই হয়ে যাবে রাতের খাবার!খাওয়ার সময় সব পরিবেশন করলো ডেইজি!আয়ুশীর মুখ থেকে যেনো হাসিই সরছে না! আয়ান সবে মাত্র ফ্রেশ হয়ে আসলো!একটু আগেই অফিস থেকে ফিরেছে!ডেইজি নতুন বউ এর মত সবাইকে পরিবেশন করছে সেটা আয়ুশীর মোটেও ভালো লাগছে না!কিন্তু ও কিছু বলতেও পারবে না!সেই সাথে এসব কাজের অভ্যাস ওর নেই!এখন মনে হচ্ছে মা যখন শিখতে বলেছিল,তখন শিখে নিলে ভালো হতো!সব ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে আয়ান আর বেলাল সাহেব মুখে রুটি নিলেন সাথে সাথেই মুখ থেকে ফেলে দিলেন!

বেলাল সাহেব অবাক হয়ে বললেন,”নাহার,এসব কি?এত লবণ কেনো?”
“মা,আজকে লবণ এত বেশি দিয়েছো কেনো?মুখেই নেয়া যাচ্ছে না!”
নাহার আমতা আমতা করে বলল,”আজকে তো আমি কিছুই করিনি,ডেইজি বানিয়েছে সব!”
ডেইজি ভীত চোখে তাকিয়ে আছে!আয়ানের মেজাজ বিগড়ে গেছে!এমনেই আজকে সারাদিন কাজ করলো,তার উপর খেতে বসে এমন হলে ভালো লাগে?

“তোকে এত পাকনামি করতে কে বলেছে?এখন সবাই খাবে কি?”
“আহ, আয়ান!ভুল তো হতেই পারে!”
“মা..ভুল হতেই পারে,কিন্তু এখন তোমরা খাবে কি? বানাতেও তো সময় লাগবে!উফফ,জাস্ট অসহ্য!”
বলেই টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ল।বেলাল সাহেব হেসে বললেন,”মা কিছু মনে করো না!কাজ করে এসেছে তো!তাই মেজাজ বিগড়ে আছে!”
“দাড়াও আমি বানিয়ে আনি আবার!”(নাহার)
“থাক, এত কষ্ট করতে হবে না!আজকের দিনটা ম্যানেজ কর!চলো ঘরে!আয়ু আর ডেইজি মা,তোমরা ঘরে বিস্কিট খেয়ে শুয়ে পড় আজ!আমরাও এই দিয়ে কাজ চালিয়ে দেই! বুঝোই তো তোমাদের আন্টির বয়স হয়েছে!এখন খাটাখাটি না করাই ভালো!”

“আরে এখন সব না খেয়ে থাকবে নাকি!”(নাহার)
“দেখো নাহার,আজ এমনেই ভালো লাগছে না!আর তোমারও শরীর চলে না!প্লিজ চলো!”
বলেই নাহারকে নিয়ে চলে গেলেন!ডেইজির চোখ পানিতে ভরে গেলো!ওর কারণে সব না খেয়ে চলে গেলো!ভেবেই আয়ুশীর রুমে চলে গেলো।এদিকে শুধু আয়ুশী টেবিলে বসে আছে মাথা নিচু করে,ডেইজিকে জব্দ করতে গিয়ে এত গুলো মানুষের খাওয়া নষ্ট করলো ও।

মোটেই ভালো লাগছে না ওর!এখন বুঝতে পারছে এমনটা করা মোটেই ঠিক হয়নি!কিন্তু বুঝে লাভ কি? যা হওয়ার তো হয়েই গেছে!হুট করেই রান্নাঘরের দিকে গেলো ও!আড়াল থেকে ডেইজিকে লক্ষ্য করেছিল ও!সে হিসেবেই রুটির ডো করলো!এখন এই রুটি বেলতে,ভাজতে আরও সময় লাগবে!উপায় না পেয়ে ডেইজির কাছে গেলো।বিছানার উপর মন খারাপ করে বসে আছে ডেইজি! হ্যাঁ হয়তো আয়ানের জন্য একটু স্বার্থপর হয়েছে ও।কিন্তু এমন কিছু কখনও চায়নি!

আয়ুশী গলা ঝেড়ে বললো,”আপু?”
ডেইজি এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো!ভাবছে আয়ুশী হয়তো অপমান করতে এসেছে!
“একটু হেল্প করবে?”
“কি হেল্প?”
“রুটি বানাতে!”
ডেইজি অবাক হয়ে তাকালো!

“আসলে সবাই এভাবে না খেয়ে থাকবে,তাই ভাবলাম এবার বানাই!সব রেডি,শুধু তুমি একটু ভেজে দিবে?”
ডেইজি কিছু না বলে উঠে দাড়ালো! আয়ুশীও সম্মতির লক্ষণ পেয়ে নিচে গেলো!দুইজন মিলে কম সময়ে রুটি বানিয়ে ফেললো!আয়ুশী প্লেটে খাবার নিয়ে ডেইজিকে বললো দিয়ে আসতে।কিন্তু ডেইজি গেলো না।আয়ুশী বুঝতে পারলো কেনো যেতে চাইছে না!নিজেই নিয়ে গেলো ছোট আম্মু – আব্বুর কাছে।তারা একটু বকাবকি করলো,এখন এসব করার জন্য।কিন্তু পাত্তা দিল না।এরপর গেলো আয়ানের কাছে।দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই দেখলো আয়ান নেই!বেলকনিতে উকি মারতেই দেখলো ফোনে কথা বলছে কাজ নিয়ে।নিজের উপস্থিতি বুঝাতে একটু কেশে নিলো!

“তুমি এখানে?”
“খাবার!”
“এই খাবার খাওয়া যায়?”
“আহহহ!আমি আর ডেইজি আপু মিলে আবার বানিয়েছি!”
“বাহ,তাই নাকি!”
“হুমম!”
“তাহলে খাইয়ে দেও!”
আয়ুশী ইতস্তত করলো!
“না খাইয়ে দিলে নিয়ে যাও!”
“এত জেদী কেনো আপনি?”
“জেদী না হলে তোমায় পেতাম নাকি?”

আয়ুশী হাসলো! আয়ান ফোন কাজ করতে করতেই খেলো!দুইজনে নিজেদের মুহূর্তে এতটাই বিভোর যে, পাশের বারান্দায় থাকা ডেইজিকে খেয়ালে নিলো না।ডেইজি অপলক ওদের দিকে তাকিয়ে আছে!কয়েক ফোঁটা জল চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তেই তা মুছে ভিতরে চলে গেলো! আয়ানকে খাইয়ে নিচে এসে পড়লো ও। ব্যাস্ত থাকায় আয়ান ওকে নিজেই খেয়ে নিতে বললো।আয়ুশী আরেক প্লেটে নিজের জন্য খাবার নিলো।কিছু একটা ভেবে ডেইজির জন্যেও নিয়ে গেলো!
ডেইজি মাথায় হাত রেখে বিছানায় শুয়ে ছিলো!

“আপু!”
“আবার কি?”
“খাবে না?”
“না!”
“উঠো!”
ডেইজি নিরুত্তর।
“আপু!”
ডেইজি তাও সাড়া দিলো না।আয়ুশী বুঝলো এভাবে হবে না।রুটি একটু ছিঁড়ে তরকারি নিলো!তারপর বললো
“এই ডা’ইনি আপু!”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২৯

এবারে কাজ হলো।ঝড়ের বেগে উঠে ডেইজি সবে চিল্লাতে যাবে তখনই আয়ুশী ওর মুখে রুটি পুড়ে দিলো।
মুচকি হেসে বলল,”না খেয়ে থাকলে,আমার সাথে ঝগড়া করার শক্তি কই পাবে শুনি?”
ডেইজি ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকালো!আয়ুশী মনে মনে বললো,”আই এম সরি!আমি এত কিছু হোক চাইনি!”

অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ৩১