অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২১

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২১
Mousumi Akter

পূর্ণতার রাগ প্রভাত-কে আনন্দিত করল।সে যেন একটু একটু করে সুখের আভাস পাচ্ছে৷ অন্য নারী সংস্পর্শে আসাতে পূর্ণতার রাগ-ই প্রভাতের আনন্দের কারণ।প্রেমিকার রাগে প্রেমিক হৃদয় দুলিয়ে উঠল অন্যরকম ভাললাগায়।প্রভার পূর্ণতার রাগ আরোও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিতেই খাটে গিয়ে বসল পূর্ণতার পাশে।পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে অজান্তার ফোন রিসিভ করে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

” হ্যাঁ, অজান্তা বল।”
অজান্তা কাদছে।অঝরে চোখের পানি ফেলছে।তার প্রিয় মানুষটা চিরজীবনের জন্য তার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে।কেন যেন অজান্তা সেটা মেনে নিতে পারছে না।ঘটমান সব ঘটনা যেন দুঃস্বপ্ন হয়। নিজের কল্পনায় অসংখ্যবার প্রভাত আর পূর্ণতার বিয়ে স্বপ্ন বলে ভেবেছে।বারবার মনে হচ্ছে কোনো এক যাদুকরী শক্তি এসে প্রভাতের জীবন থেকে পূর্ণতাকে কেড়ে নিয়ে যাক।আর তাকে প্রভাতের জীবনসঙ্গী করে দিক।প্রভাতের কন্ঠস্বর কানে ভেষে আসতেই অজান্তার কাঁন্নাার মাত্রা যেন বহুগুন বেড়ে গেল। অজান্তা চোখের পানি মুছল।একটা ভারী নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” চলে এলাম একবার ও তো ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলি না, কখন পৌছালাম।নাকি বিয়ে করেছিস বলে বেষ্ট ফ্রেন্ড’কে ভুলে গেলি।”
প্রভাতের গভীর মনোযোগ পূর্ণতার দিকে।তাই অজান্তার কাঁন্নাভারী কন্ঠ বুঝতে পারল না।পূর্ণতাকে আরো বেশীই জেলাস ফিল করোনো তার উদ্দেশ্য। প্রভাত পূর্ণতার দিকে তাকিয়েচোখ বুলালো।আরো খানিকটা সরে পূর্ণতার কানের কাছাকাছি সরে বসে বলল,

” হ্যাঁ, ঝামেলার জন্য জিজ্ঞেস করতে পারিনি এটা ঠিক।তাই বলে বউ এর জন্য কেন তোকে ভুলে যাবো।আমার বউ অমন মেয়েনা।ওর আমাকে নিয়ে অত জেলাসি -টেলাসি কিচ্ছু নেই।ও অত ট্যিপিক্যাল মাইন্ড এর মেয়েই না।”
পূর্ণতার চোখ বন্ধ কিন্তু কান খাড়া করে প্রভাত আর অজান্তার কথা শুনছে।রাগে তার সমস্ত শরীর পু’ ড়ে ছাঁই হয়ে যাচ্ছে।ইচ্ছা করছে প্রভাত-কে ধা* ক্কা মে*রে খাট থেকে ফেলে দিতে।রাগে এক পায়ের আঙুল দিয়ে আরেক পায়ের তালু কচলাচ্ছে আর মনে মনে বলছে,

” আমি টিপিক্যাল না তাই বলে অত সাধু মেয়ে-ও না যে আমার বরের সাথে আরেকজন রং ঢং করবে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখব।বর আমার না হলে অন্য কারোর ও হতে দিবো না আমি।”
ফোনের ওপাশ থেকে অজান্তা কাঁন্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,
” একবার আসবি প্রভাত?”
প্রভাত এবারের উত্তরটাও পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে দিল,

“কেন?”
“মনে হচ্ছে আমি বেশীক্ষণ বাঁচব না।নিঃশ্বাস আটকে আসছে আমার, দম বন্ধ হয়ে আসছে।এত কষ্ট আমার জীবনে হয়নি। প্লিজ একবার আয়।”
“তোর বাবাকে বল, দ্রুত ডাক্তারের কাছে যা।”
“বাবা আর মা আজ সকালেই দুবাই গিয়েছে। বাড়িতে কেউ নেই।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, প্লিজ একবার আয়!”
“এখন তো ঘরে বউ আছে, গেলে গ*র্দা,ন নেবে। সকালে আসব।আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। ”

পূর্ণতা মনে মনে বলল, “তার মানে সকালে যাবে। তবুও যেতে ই হবে। কি দরদ, এখন আবার গাড়ি পাঠানো হচ্ছে।দুনিয়ায় তো মানুষের আর বেষ্ট ফ্রেন্ড নেই। কি বেষ্ট ফ্রেন্ড আমি আর কিছু জানিনা তাইনা?”
পূর্ণতার রাগ আরো ধারালো হল।রাগের কন্ট্রোল হারিয়ে

সে সোয়া থেকে উঠে বসল।সোয়া থেকে উঠতেই প্রভাত ফোন মিউট করে ফেলল।বিস্ময় বদনে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে ভ্রুঁ কুচকালো।পূর্ণতা যে এখনি গর্জে উঠে পা’ গ’ লি’ র মত বুলি আওড়াবে সে বিষয়ে নিশ্চিত প্রভাত।শুধু অপেক্ষা করছে পূর্ণতার ঠোঁট নড়ার।প্রভাত এর ভাবনায় সত্য হল। পূর্ণতা অগ্নিচোখে তাকিয়ে বলল,
” আমার ঘুমের ডিস্টার্ব না করে পিরিতের আলাপ বাইরে গিয়ে করুন।”

প্রভাতের চোখ কপালে উঠল।এ কোন পূর্ণতা? প্রভাত দুই ভ্রুু সুঁচালো করল।গভীর বিস্ময় তার চোখে-মুখে।বিস্মিত চোখে-মুখে প্রশ্ন করল,
“এ কোন ধরনের ভাষা।”
“বাংলা ভাষা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে।ভাষা আরো খারাপ করতে পারি আমি।আপনার ই তো কাজিন। আপনার থেকেই তো এসব ভাষা আমার শেখা।আরো খারাপ ভাষা দেওয়ার আগে। ”
প্রভাত ডান ভ্রু উঁচিয়ে আবার প্রশ্ন ছুঁড়ল,

“এভাবে রেগে আছো কেন? এনি প্রব্লেম।”
“রাত বাজে কয়টা। এখন রাত এগারোটা বাজে।আর আপনি কীনা আপনার সো কলড বান্ধবীর সাথে এত রাতে পিরিতের আলাপ করছেন।এই দুনিয়াতে কি আর মানুষের বান্ধবী নেই।কার বান্ধবী বন্ধু বিয়ে করেছে জেনেও মাঝ রাতে কল দিয়ে যেতে বলে।বলুন কার বান্ধবী বলে।আপনার এসবের চক্করে ঘুমের ডিস্টার্ব হচ্ছে আমার।”

” অসুস্থ মেয়েটা, তাই ফোন দিয়েছে।”
” তা আপনি কি এম বি বি এস ডাক্তার। ফোন করে অসুস্থতার কথা জানাচ্ছে।আর আমার ঘুমের বারোটা বাজাচ্ছে।”
প্রভাত মৃদু হেসে বলল,
” তুমি কি সত্যি ঘুমের জন্য ডিস্টার্ব ফিল করছো পূর্ণ?”
“তো কীসের জন্য, ঘুম ছাড়া কীসের জন্য ডিস্টার্ব ফিল করব আমি।”

“আমি তো অন্য কিছু দেখছি।”
“কি দেখছেন?”
“জেলাসি।”
“কীসের জেলাসি, কীসের জেলাসি দেখছেন আপনি।”
“এইযে অজান্তা আমাকে ফোন দিছে।এটা নিয়ে রেগে আগুন গরম হয়ে আছো তুমি।”
“আপনাকে কে ফোন দিল আর না দিল আই ডোন্ট কেয়ার।আমি কোনদিন এসব নিয়ে জেলাস ফিল করতে যাবোনা।শুধু আমার ঘুমের ডিস্টার্ব করবেন না।”

প্রভাত পূর্ণতার আগুন গরম চেহারার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার আ’গু’নে আমি পু’ ড়ে ধ্বংস হয়ে যেতে চাই, ধ্বংস করে দাও আমাকে।”
প্রভাতের নেশাক্ত কথার টানে পূর্ণতা এলোমেলো হয়ে এল ভেতর থেকে।এমন সময় প্রভাতের ফোন আবার বেজে উঠল।ফোনের স্ক্রিনে ভাসছে রাজনের নাম্বার।এতরাতে রাজনের নাম্বার দেখে প্রভাত চটজলদী ফোন রিসিভ করে বলল,

” কোনো ইনফরমেশন পাওয়া গেল?”
“আমি রাস্তায় আছি আপনার বাড়ির সামনে। ইনফরমেশন কিছু পাওয়া গিয়েছে।”
” রাস্তায় কেন? ভেতরে আসুন।”
রাজন মনে মনে এটাই চাচ্ছিলো। প্রভাত তাকে ভেতরে ডাকুক।পুষ্পের সাথে দেখা করার লাইসেন্স টা পেয়ে যাক।
রাজন গলা খ্যাঁক করে বলল,

“ওকে আসছি।সাথে বাড়ির মেয়েদের থেকে কিছু পারসোনাল ইনফরমেশন নেওয়ার ছিল।”
” ওকে আসুন।”
ফোন কেটে প্রভাত পূর্ণতাকে বলল, পুষ্পকে ডেকে নিচে এসো তো। রাজন কিছু ইনফরমেশন নিবে।
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,

” আমাদের থেকে কি জিজ্ঞেস করবে? আমরা কি করেছি।”
” ওদের কেসের জন্য সবাইকে জিজ্ঞাসা করতে পারে।”
প্রভাত নিচে গেল।রাজন আর কৃষ্ণ দু’জন দাঁড়িয়ে আছে।ওদের নিয়ে ডায়নিং এ বসল।প্রভাত বলল,
” এনি ইনফরমেশন?”
রাজন এবার নড়ে -চড়ে বসে বলল,

” আমি বিগত ৫-৭ বছরের ফাইল পত্র ঘেটে -ঘুটে দেখেছি। কেউ একটা জিনিস খেয়াল করেনি যা আমার চোখে পড়ল।”
প্রভাত খুব আগ্রহ সহকারে জিজ্ঞেস করল,
” কি?”

“আপনাদের এলাকা বা আশে পাশের এলাকা থেকে প্রতি মাসে ২-৪ জন গা’য়ে’ ব হয়।থানায় নিঁখোজ ডায়ারি অনেক।এখানে নির্দিষ্ট কোনো এজের মানুষ নেই।নির্দিষ্ট কোনো লিঙ্গ ও নেই।ছেলে-মেয়ে উভয় ই নিঁখোজ।যে একবার গায়েব হয়েছে সে আর কোনোদিন ফিরে আসেনি।প্রতিটা পরিবারে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি।নিঁখোজ কেউ আর ফিরে আসেনি।খুব অদ্ভুত আর আশ্চর্যজনক লাগল আমার কাছে।এর কাহিনী কি হতে পারে প্রভাত ভাই?”
প্রভাত থুতনিতে হাত রেখে গভীর চিন্তায় মগ্ন।অন্য মনস্কভাবে উত্তর দিল,

” হ্যাঁ, এমন দুই একজনের কথা শুনেছি নিঁখোজ হয়েছে।”
” আবার আপনাদের জেলে পাড়ায়র গহীন বাগানে একটি মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছে।”
” কোনো পুরণো কবর ও হতে পারে।”
” আরেকটু ইনভেস্টিগেজন করলেই জানা যাবে।”
এমন সময় পূর্ণতা আর পুষ্প এসে হাজির হল।ওদের দেখেই প্রভাত বলল,

” ভাই, ওরা এসছে। কি তথ্য নেওয়ার নিন।”
পূর্ণতা প্রভাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ব্যক্তিগত ইনফরমেশন কি আপনার সামনে নিবে? পুলিশের কাজে ডিস্টার্ব না করে বের হন এখান থেকে।”
প্রভাত উঠে দাঁড়াল।ঠোঁটে মৃদু হাসি। রাজন কে বলল,
” ভাই, আমার বউ কে দেখেন। আপনাকে সাহায্য করার জন্য আমাকে ধমকাচ্ছে। নিন তথ্য নিন।আমি বাইরে গিয়ে সিগারেট খেয়ে আসি।” বলেই প্রভাত হাঁটা দিল।

পুষ্প রুম থেকে বলে এসছে রাজন এত রাতে তার জন্য রিস্ক নিয়ে এসছে।পূর্ণতা যেন যেকোনো ভাবে ওদের কথা বলার সুযোগ করে দেয়।পূর্ণতার রাজনকে ভাল লাগে। পুষ্পের সাথে রাজনের বিয়ে হলে পূর্ণতার চেয়েও বেশী খুশি আর কেউ হবেনা।প্রভাত যেতেই রাজন পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল, “ধন্যবাদ ভাবি।”
পূর্ণতা চোখ পাকিয়ে বলল, “ভাবি? কোনো ভাবি টাবি নাহ।সরাসরি শালিকা ডাকবেন।”
“প্রভাত ভাই-এর সম্পর্কে ভাবি ডাকতে পারি। কিন্তু শালি ডাকব কোন সম্পর্কে।যাকে ভাল লাগে সে কি আর আমার মত কালো মানিক কে পছন্দ করবে।”

পূর্ণতা হেসে বলল, “কালো মানুষ টা একটা সময় কারো চোখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর মানুষে পরিণত হয়।”
পুষ্প বলল, “আমাকে কি অপমান করছেন অফিসার?’
রাজন আরেকবার স্মিথ হেসে বলল, ” সে সাহস কার আছে ম্যাডাম।”
ওদের সুযোগ করে দিয়ে পূর্ণতা বেরিয়ে গেল।প্রভাত কে পাহারা দিতে।
রাজনের থেকে খানিকটা দূরে বসল পুষ্প।লজ্জামিশ্রিত চোখে রাজনের দিকে তাকিয়ে বলল,

“সত্যিই এলেন? সাহস আছে আপনার।”
রাজন ও লাজুক হেসে বলল,
“যে চাকরি করি এতে সাহস কম থাকলে চাকরি করা পসিবল নয়।”
“আসলেই সাহসী আপনি।”
“যাক একটা কিছুর প্রশংসা তো পেলাম।দেখি পায়ের ব্যাথার কি অবস্থা। ”
পুষ্প আবার হাসল।হেসে বলল,

“সামান্য পায়ের গু’তা লেগেছিলো তা কি এখনো আছে।সেই সকালেই ঠিক হয়ে গিয়েছে।”
“না, ভাবলাম কমেনি হয়ত।”
“আচ্ছা আপনার ইনফরমেশন লাগবে নাকি।তা নিন।”
রাজন জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
“আপনার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?”

“নাহ।”
“প্রেম করার ইচ্ছা আছে।”
“কেউ মনে প্রেম জাগ্রত করতে পারলে অবশ্যই প্রেম করব।”
“কালো ছেলে পছন্দ হয়?”
“গায়ের রং নয় মন দেখব সবার আগে।সুন্দর মনের অধিকারী মানুষকেই বিয়ে করব।”
“কিচেন থেকে বটি এনে আমার হৃদয়ে চিরে একটু পরখ করে নিনতো আমার হৃদয় সুন্দর নাকি কালো।”
পুষ্প জোরে হেসে দিল।হেসে বলল,

“এভাবেও বুঝি পরখ করা যায়।”
রাজন মাথার পেছনে হাত চালাতে চালাতে বলল,
“হাসবেন না, হাসবেন না, ওভাবে হাসলে হার্ট এট্যাক হবে আমার।”
“এই ছিল আমার তথ্য পথ্য নেওয়া।”

“হ্যাঁ, আপনার হৃদয়ের কাছে আমার হৃদয়ের দরখাস্ত করে গেলাম।বেশীদিন ঝুলিয়ে রেখে কষ্ট দিবেন না।”
“বলে দিব ভাইয়াকে, কীসের ইনফরমেশন নিচ্ছেন?”
“দিন, দিয়ে কি শান্তি পাবেন।”
“কেন পাবোনা?”
“পাবেন না?”
“কারণ। ”

“আপনার মনকে প্রশ্ন করুন।”
” আজে বাজে কথা।”
রাজন উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“বাড়ির গেটের পাশের দোলনায় ফুল রাখা আছে।নিয়ে নিবেন।”
পুষ্প লাজুক হেসে বলল,
“ভিতু।”

“ভিতু হলে এত রাতে আসতে পারতাম।”
“ফুল তো আড়ালে রেখে এসেছেন।”
“এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে ফুল দেওয়ার ও একটা মজা আছে।”
প্রভাত বাড়ির ভেতরের রাস্তা দিতে পায়চারী করছে।
তখন ই পূর্ণতা পিছ পিছ গেল।পূর্ণতাকে দেখেই প্রভাত বেশ অবাক হল।কৃত্তিম লাইটের আলোয় পূর্ণতার মুখ যেন আরোও চকচক করছে। প্রভাত মনে মনে বলল,

‘ এই সুন্দরী মেয়েটা কি জানেনা তাকে যতবার দেখি ততবার ই হৃদয়ের ভেতর একটা ঝ-ড় ওঠে। সেই ঝ-ড় থামাতে এই মেয়েটা কাছে টেনে নিতে হয়।’
প্রভাতের হাতে সিগারেট আর লাইটার।কেবল ই ধরাত।তখন ই পূর্ণতার আগমন।পূর্ণতা এসেই কেমন সব এলোমেলো করে দিল।প্রভাত সিগারেট খাওয়ার কথা ভুলে গেল।সিগারেট এর নেশাকে ভুলিয়ে দিল ভালবাসার নেশা।পূর্ণতা গুটি গুটি পায়ে হেঁটে এসে একদম -ই প্রভাতের কাছাকাছি চলে এল।প্রভাতের ধ্যান ভাঙল।সে পূর্ণতাকে বলল,

” এ’কি তুমি? ”
” হ্যাঁ, আমি।পুলিশ চলে গিয়েছে।তাই আপনাকে ডাকতে এসেছি।”
প্রভাত পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবল।ভেবে আবার হাঁটা দিল।পূর্ণতা বলল,
” কি হল, যাচ্ছেন কোথায়?”
” সিগারেট খেতে।”
” আপনি সিগারেট খেতে পারবেন না।সিগারেট খেলে রুমে ঢুকতে দিবনা।”
প্রভাত দাঁড়াল।পূর্ণতাও দাঁড়াল।
প্রভাত পূর্ণতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

” আমার এখন নেশা চেপেছে, তুমি বললেও আমি শুনব না।”
” আপনাকে শুনতেই হবে আমার কথা।”
” শুনতে পারি এক শর্তে।”
” কি শর্ত?”
প্রভাত পূর্ণতার কানের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে বলল,
” আমাকে কিস করতে হবে পারবে?”

চারদিকে কেমন ঠান্ডা শীতল বাতাস বইছে। লেবু ফুলের ঘ্রাণ ভেষে আসছে। কৃত্তিম আলো চারদিকে। সে আলোয় পূর্ণতার চোখে -মুখে লাজুকতা ধরা দিল।প্রভাতের কথা কেন যেন আজ তাকে লজ্জা দিচ্ছে? এমন তো আগে হয়নি।পূর্ণতা কোনো উত্তর দিল না।একদম চুপ রইলো।প্রভাত আবার বলল,
” কি হল পারবে?”
পূর্ণতা অন্যদিকে ঘুরে বলল, ” না পারব না।”

কথাটা বলতেই প্রভাত হাতের সিগারেট দুই ঠোঁটের মাঝ বরাবর চেপে ধরল।লাইটার জ্বালাতেই পূর্ণতা প্রভাতের ঠোঁট থেকে সিগারেট টান দিয়ে হাতের মধ্য নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ফেলল।প্রভাতের ঠোঁটের কোনে দুষ্টুমি।সে লাইটার অফ করল।পূর্ণতার কোমরে হাত দিয়ে তার দিকে টান দিল।পূর্ণতা প্রভাতের বুকের সাথে মিশে গেল।

রাতের নিরবতা, চারদিকে জোনাক পোকা উড়ছে, ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডেকে বেড়াচ্ছে।এর মাঝে দুজন মানব -মানবী অনুভব করছে তাদের উষ্ণ নিঃশ্বাস।প্রভাত যেন নিজের ভেতরে নেই। সে নেশালো গলায় পূর্ণতার ঠোঁটে আঙুল চেপে বলল,
” সিগারেট তো কেড়ে নিলে, ক্ষুদার্ত ওষ্টে কিছু তো খেতে দাও।” বলেই প্রভাত প্রভাত পূর্ণতার ওষ্টে ওষ্ট ডুবিয়ে দিল।গভীর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে পূর্ণতার রাগ, জিদের সুঁতো কেটে গেল।সেও ডুবে গেল প্রভাতের ভালবাসায়।

মেরি গিয়েছে শায়লার সাথে তার বাড়িতে।একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শায়লা খুব ভেঙে পড়েছে।এদিকে
জাহানের আজও তীব্র জ্বর। ইদানিং জ্বরটা যেন ঘন ঘন আসছে।জ্বরে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। এই জ্বর অবস্থায় ওয়াজেদের পা টিপে দিচ্ছে জাহান।
জাহানের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। কাঁপতে কাঁপতে বলল,

“আমি আর পারছি না, মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা।”
ওয়াজেদ সিগারেট টানতে টানতে বলল,
“আমি কিছু করতে বললেই তোর শুরু হয়ে যায়। তুই এখন মরে গেলেও তোর লাশ আমার পা টিপে দিবে বান্দির বাচ্চা।”

“আপনি দেখুন আমার কপালে হাত দিয়ে কত জ্বর।”
“তোর তো বারো মাস ই জ্বর।দেখাদেখির কি আছে। আমার অর্থ সব শেষ হয়ে গেল তোর জ্বরের চক্করে।”
“আমি মরে গেলে তো আর লাগবে না এত ডাক্তার দেখানো।”
“কবে ম’র’বি আজরাইল কি তোরে চোখে দেখে না।”
“আমি মরে গেলে কি আপনি খুশি হন।”
“বেঁচে যায়।অন্তত একটা কচি মেয়ে দেখে বিয়ে তো করতে পারব।”
“আমার মেয়ের কি হবে আমি মরে গেলে।”

“মেয়ে সাথে নিয়ে ম’র।”
“ছিঃ কেমন বাবা আপনি।”
“তোরে বলছিলাম কন্যা সন্তান দিতে হারামজাদি।তোর মেয়ের জন্য অত ভাল বাবা হওয়ার ইচ্ছা আমার নেই।”
” প্রভাত যদি শোনে আপনি পূর্ণতার ম’ রে যাওয়ার কথা বলেছেন, দেখবেন কি আ-গু-ন লাগিয়ে দেয়।আমি বলে দিবো প্রভাত কে।”

ওয়াজেদ উঠে বসে বলল,
” কি বললি প্রভাত কে বলবি।”
বলেই ওয়াজেদ আলনা থেকে প্যান্টের বেল্ট এনে জ্বরে কাতর জাহান কে গরুর মত পে’ টা’ চ্ছে।যন্ত্রণায় জাহান ছটফট করছে।সমস্ত পিঠ র*ক্তা*ক্ত হয়ে গেল। তবুও ছাড়ছে না।জাহান মাগো মা বলে ওয়াজেদ এর পা জড়িয়ে ধরে বলল,

” দোহাই লাগে আমাকে ছেড়ে দেন আর মা’র’বে’ না। আমি ম’ রে যাবো।আপনার পায়ে ধরি।”
ওয়াজেদ কোনো কথা না শুনে পে’টা’ তে থাকত। এত বেশী মা’র মা’র’ ল জাহান ফ্লোরে গড়াগড়ি করছে আর ছটফট করছে। ওয়াজেদের মারের হাত থেকে রক্ষা পেতে খাটের নিচে গিয়ে লুকালো।সমস্ত ফ্লোরে র*ক্তে*র দাগ। ওয়াজেদ খাটের নিচ থেকে জাহানের চুল ধরে টেনে এনে ওয়ালের সাথে খুব জোরে ধাক্কা মারল। জাহান অজ্ঞান হয়ে ওয়াজেদের পায়ের উপর পড়ে গেল।ওয়াজেদ পা সরিয়ে নিয়ে বাইরে চলে গেল। এত বড় ঘটনা ঘটে গিয়েছে কেউ জানেনা।

সকাল আটটা বেজে গিয়েছে।পূর্ণতা আর পুষ্পের ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস নেই।জমেলা প্রভাতের ঘরের দরজায় এসে টোকা দিয়ে চিৎকার দিয়ে বলল,
“পূর্ণতা লজ্জা শরমের কি মাথা খেয়েছিস।বাড়িতে বাপ আর চাচা থাকতে বর নিয়ে এত বেলা করে ঘুমাস কি করে।”
জমেলার ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙল ওদের।প্রভাত আগে উঠে এল।দরজা খুলে জমেলা কে বলল,
“বাপ আর চাচার ও তো বউ আছে।তারা বোঝে না ছেলে নতুন বিয়ে করলে কয়টা পর্যন্ত ঘুমায়।
আর দাদা কয়টা পর্যন্ত ঘুমাতো।”

“আমাদের আমলে ওসব ছিলনা।”
“ওসব ছিলনা তা ছেলে -মেয়ে জন্ম দিলে কীভাবে? মেশিনের সাহায্য।”
“বেসরম হয়ে যাচ্ছো তুমি দাদুভাই।”
“ওকে ডাকছো কেন?..”
“ও এখন এ বাড়ির বউ। রান্না বান্না করতে হবে।আজ থেকে বড় সব রান্না পূর্ণতা করবে।”
“খেয়ে কাজ নেই আমার বউ রান্না করবে।আমার সুন্দর বউ কালো হয়ে যাবেনা।”
“বউ কি সোকেচ এ তুলে রাখার জিনিস।”

“না হৃদয়ে বন্দি করে রাখার জিনিস।”
“এসবে কি পেট ভরবে।পেটে খাবার যেতে হবে।”
“আমার বউ আমাকে রাতে অনেক চুমু দিয়েছে,আমার পেট ভরা। তোমাদের ব্যবস্থা তোমরা করো।”
পূর্ণতা উঠে এসে প্রভাতের দিকে তাকিয়ে রাগি কন্ঠে বলল,
“অসভ্য।”

“রেগে যাচ্ছো কেন?”
পূর্ণতা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
“এসব ই তো চেয়েছিলেন আপনি।আমাকে বিয়ে করে বন্দি করে রেখে এ বাড়িতে অত্যাচার করা।উদ্দেশ্য সাকসেস খুশি।আমি যাচ্ছি রান্না করতে।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২০

“তোমাকে অত্যাচার নয়, তোমার অর্ধাঙ্গ হয়েই থাকব।চলো আমিও যাবো রান্নাঘরে।”
জমেলা বলল,
“এ বাড়ির ছেলে রান্না ঘরে গেলে মান সম্মান আর কিচ্ছু থাকবে না।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here