আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ২৭ || Maishara Jahan

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ২৭
Maishara Jahan

কিছু ক্ষন পরে প্রহরের দরহা কে বার বার ধাক্কাচ্ছে। প্রহর দরজা খুলতেই রিয়ান তাড়াতাড়ি তার রুমে ডুকে গিয়ে সোজা তার বিছানায় শুয়ে পড়ে। প্রহর কিছু বুঝে উঠার আগেই রিয়ান এসে শুয়ে পড়ে। প্রহর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
প্রহর বিছানার সামনে এসে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,, এই তুমি এখানে কেনো আর এসে সোজা আমার বেডে শুয়ে পড়েছো কেনো। তোমার রুমে কি হয়েছে।
রিয়ান উঠে চাদর প্যাঁচিয়ে গুটিশুটি হয়ে বসে শুধু মুখটা বের করে কাপাঁ কাপাঁ কন্ঠে বলে,,,, ঐ ঐ রু রুমে কেও আছে। ভয়ানক হাসির আওয়াজ আসছে।

প্রহর,,, আরে দূরর এসব কিছু হয় না, যাও তোমার রুমে যাও। আর আমাকে ঘুমাতে দাও।
সায়ন,,,,, আরে না সত্যি আছে, আমি নিজের কানে শুনেছি। আমি তো আজকে এখানেই ঘুমাবো, হাজার চেষ্টা করেও আমাকে এখান থেকে নড়াতে পারবে না।
প্রহর,,,অফফ আচ্ছা শুনো, ভুতের হাসি টাসি কিছু ছিলো না, আমি তোমার দরজার সামনে মিনি বক্স রেখে আসছি, আর এই দেখো তার রিমোট। এখন আমি বন্ধ করে দিচ্ছি, যাও এবার কোনো আওয়াজ আসবে না।
রিয়ান মুখটা মলিন করে দুঃখের ভাব নিয়ে বলে,,,, আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এটা করার কি দরকার ছিলো। যদি আমি ভয়ে হার্ট অ্যাটাক করতাম তখন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

প্রহর,,,,, আরে জাস্ট মজা করার জন্য করেছি, আর কিছু না। এখন পিল্জ গিয়ে শুয়ে পড়ো, আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে।
রিয়ান,,,,, না আমি কোথাও যাবো না, আমি এখানেই থাকবো, আমার ভয় করছে।
প্রহর একটু জোরে বলে,,আরে আমি বলেই তো দিলাম, ঐ হাসিটা মিনি বক্সের ছিলো।
,,,,, না তাও আমার এখন ভয় করছে, আমি তোমার সাথে এখানেই ঘুমাবো।
,,,,, রিয়ান নিজের রুমে যাও, আমি নিজের বেড কারো সাথে সিয়ার করতে পারিনা।
,,,, তোহ বিয়ে করে কি বউকে আলাদা বেডে রাখবে, এখন থেকে অভ্যাস করে নাও।
,,,,লাগবে না আমার অভ্যাস করা, উঠো
বলে প্রহর রিয়ানের চাদর ধরে টানতে থাকে, রিয়ান চাদর শক্ত করে ধরে বিছানার সাথে লেগে আছে। প্রহর কিছু ক্ষন টানা টানি করে হয়রান হয়ে বলে,,,,,ঠিক আছে থাকো আজকের জন্য এখানে, বাট আমার গায়ের সাথে মিশবে না।
রিয়ান চাদর থেকে একটু মুখ বের করে বলে,,,, আমার ছেলেদের সাথে মিশে ঘুমানোর কোনো ইচ্ছে ও নেয়।
বলে গুটিশুটি মেরে বিছানার এক কোনায় শুয়ে পড়ে, প্রহর ও বিরক্তিকর একটা নিঃস্বাস ফেলে এক সাইডে শুয়ে পড়ে।

সকালে সায়ন ঘুম থেকে উঠে আলোর যে রুমে আছে তার দরজায় নক করে। দুবার নক করে দাঁড়িয়ে থাকে। ভাবছে আরেক বার নক করবে কি না। ভাবতে ভাবতে যেতে নেয়। তখনি আলো দরজা খুলে, দরজা খুলার আওয়াজ পেয়ে সায়ন পিছনে আবার মুরে তাকায়।
দেখে আলো এখনো হালকা ঘুমে আছে, চুল গুলো এলোমেলো, চোখ বন্ধ করে আছে নাকি খুলে আছে বুঝা যাচ্ছে না। আলো ঘুম ঘুম চোখে বলে,,,,, মা আরেকটু ঘুমায়,, না,, আগে বলো কয়টা বাঝে, হসপিটালে সঠিক সময়ে যেতে হবে তোহ।

সায়ন মুচকি হেঁসে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে,কিছু বলছে না। আলো এবার একটু চোখ খুলে তাকিয়ে সায়নকে দেখে ঘুম ঘুম চোখে বলে,,,, সায়ন তুমি এতো সকালে আমার বাসায়,,সব ঠিক আছে তো, তোমার কোনো সমস্যা হয়নি তোহ।
সায়ন এবার শব্দ করে হেঁসে দিয়ে বলে,,, না আমার কিছু হয়নি,, তুমি এক কাজ করো আরেকটু ঘুমিয়ে তারপরে উঠো। রাতে ঘুমাতে লেইট হয়েছে তো তাই ঘুমে ছাড়ছে না মনে হয় তাই না।
আলো এবার ভালো করে তাকিয়ে বলে,,, আমার সব মনে পড়েছে, সরি সকালে উঠলে একটু এমন হয়। আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসছি।
,,,তুমি আরেকটু ঘুমিয়ে নাও।
,,,,, না আমার ঘুম ভেঙে গেছে, আপনি নিচে যান আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
,,,,হুমম ওকে।

কিছু ক্ষন পরে আলো ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়, গিয়ে দেখে সবাই বসে আছে, বসে বসে এমনি কথা বলছে। আলো গিয়ে সবাইকে গুড মর্নিং বলে। সায়ন ইশারা দিয়ে আলোকে তার পাশে বসতে বলে। আলো গিয়ে সেখানে বসে।
রিয়ান কফি খেতে খেতে বলে,,,,, এটা তোমরা আমার সাথে ঠিক করো নাই, কেও কাওকে এমন ভাবে ভয় দেখায়৷
আমি এসে বলি,,,কি করেছে।
রিয়ান,,,,আরে যানস না, আমার দরজার সামনে মিনি বক্সে ভয়ানক সব আওয়াজ বের করছিলো।
সায়ন,,,,, শুকর করো আমি অসুস্থ তাই, আমি সুস্থ থাকলে তো ভুতের মতো ড্রেস পড়ে ভয় দেখাতাম।
অয়ন,,, আমিও তাই ভেবেছিলাম, কিন্তু কাল আমার মুডটা একটু অন্য রকম ছিলো তাই ছেড়ে দিলাম।
প্রহর,,,, অন্য রকম বলতে।
অয়ন,,,,, আরে মানে অনেক ঘুম পাচ্ছিলো তাই।

রিয়ান,,,,, বাহহ সবাই এখন বসে চিন্তা করছে কিভাবে আমাকে ভয় দেখালে ভালো হতো, তাই না।
মারু,,,সবাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের পিছনে কেনো পড়ে আছো। আচ্ছা রিয়ান তুই ভয় পেয়েছিলি কেমন হুম।
রিয়ান একটু ভাব নিয়ে বলে,,,,আরে দূররর ভয় কেন পামু, বেশি ভয় পাইনি।
প্রহর,,,, হুমম শুধু ভয়ে আমার রুমে এসে শুয়ে পড়ে ছিলে, যাওয়ার নামি নেয়নি।
সবাই হেঁসে দেয়। আমি সবাইকে নাস্তা করার জন্য ডাকলাম। সবাই টেবিলে বসে, নাস্তা করতে থাকে।
সবাই নাস্তা করে যার যার কাজে চলে যায়। আলোও সায়নকে মেডিসিন দিয়ে নিজের কাছে চলে যায়, আলো অয়নের সাথেই যায়।
প্রহর স্নেহার বাসায় যায়, গিয়ে স্নেহার রুমে দরজায় নক করে, স্নেহা আসতে বলে। এসে দেখে ঔষধ খাচ্ছে। প্রহর বসে বলে,,,,, তোমার জ্বর ভালো হয়নি।

,,,হুমম হয়েছে কিন্তু শরীরটা একটু দুর্বল আরকি।
,,,,, হুমম তাহলে এতো তাড়াতাড়ি কেনো উঠলে, আজ রেস্ট করলেই পারো।
,,,,,কিভাবে করবো, আজ আমার আর্ট এক্সাম। ফেল করলে এক বছর নিচে নামিয়ে দিবে। আর আমার তেমন কোনো প্রস্তুতি নেয়।
,,,,আরে চিন্তা করো না, তুমি খুব ভালো চিত্র আঁকো। তুমি ঠিক পাশ করে যাবে।
,,,আমার পাশ লাগবে না, আমার ভালো একটা নাম্বার লাগবে।
,,,,, এটা তোহ আর ফাইনাল এক্সাম না।
,,,,তাও আমার একটা ভালো নাম্বার লাগবে, তোমাকে ডেকেছি একটু আমার সাথে থাকতে, না হলে আমাকে
যেতে দিবে না বাবা।
,,,,হুমম,, তোহ আপনি রেডি।
,, হুমম রেডি চলো।

প্রহর স্নেহাকে এক্সাম হলে নিয়ে যায়। এক্সাম শুরু হতে এখনো সময় আছে। তাই প্রহর একটু স্নেহার সাথে বসে। স্নেহা প্রহরের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রাখে। প্রহর কিছু বলে না।
একটু পরেই এক্সাম শুরু হয়ে যায়। প্রহর একটু দূরে থেকে স্নেহার আকা দেখছে। সামনে মডেল রাখা হয়, তাকে দেখে সবাই আঁকছে। স্নেহা খুব সুন্দর ভাবে ছবি আঁকছে। এক্সাম শেষ হয়। স্নেহা বাহিরে আসতেই প্রহর গিয়ে বলে,,, অনেক ভালো একেছো।
স্নেহা নিজের শরীরের ভার প্রহরের বুকে ছেড়ে দিয়ে বলে,,,,,, প্রহর আমার প্রচুর খারাপ লাগছে, মনে হচ্ছে এখনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবো।
প্রহর স্নেহাকে ধরে বলে,,, চলো সাইডে বসবে।
প্রহর স্নেহাকে নিয়ে সাইডে একটা বেঞ্চে বসায়, প্রহর স্নেহাকে বসিয়ে দিয়ে পানি এনে দেয়। স্নেহা পানি খেয়ে একটু প্রহরের কাঁধে মাথা রেখে বলে,,,,হুমম চলো এখন ঠিক আছি।

,,,হুমম।
প্রহর স্নেহাকে সোজা হসপিটালে অয়নের কাছে নিয়ে যেতে চাই। হসপিটালের বাহিরে এসে স্নেহা দাঁড়িয়ে বলে,,,এখানে কেনো এসেছো।
,,,, তোমাকে আগে ডক্টর দেখাতে হবে, পরে বাসায় দিয়ে আসবো।
,,,, আরে আমি ঠিক আছি।
,,,, হুমম দেখায় যাচ্ছে আপনি কতো ঠিক আছেন।
বলে স্নেহাকে অয়নের কাছে নিয়ে যায়। স্নেহা আর প্রহরকে দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে বলে,,,, প্রহর তুই আর স্নেহা তুমি কেমন আছো৷
,,, হুমম ভালো আছি।
প্রহর,,,,, কোথায় ভালো আছো, অয়ন দেখ তো স্নেহার জ্বর আর শরীর ও দুর্বল লাগছে।
অয়ন,,,,,, আরে আগে বলবি না,, বসো স্নেহা,আমি তোমাকে চেকাপ করছি।
অয়ন স্নেহাকে চেকাপ করে বলে,,,, বর্তমানে তোমার জ্বর ১০১ ডিগ্রিতে আছে। তার মানে পরে আরো বেশি জ্বর উঠে তাই তো। আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি খেয়ে নিবে। আর দুটো মেডিসিন এখানেই খেয়ে ফেলো।
,,,হুমম।

প্রহর পরে স্নেহাকে বাসায় পৌঁছে দেয়। স্নেহাকে ধরে ধরে তার রুম পর্যন্ত নিয়ে যায়, পরে ওকে বিছানায় বসিয়ে বলে,,, নিজের খেয়াল রাখবে। মেডিসিন খাবে।আর এখন চুপচাপ শুয়ে থাকবে।
স্নেহা মুচকি হেঁসে বলে,,, বাহহ আমার জন্য এতো চিন্তা, ভালো খুব ভালো৷ তা প্রেমে পড়ে গেলে নাকি আমার।
,,,,, না, একটা ফ্রেন্ড হিসাবে যা করা উচিত আমি তাই করছি। এর থেকে বেশি কিছু আশা করো না।
,,,, আমি এর থেকে বেশি কিছু না অনেক কিছু আশা করি। আর আমি জানি আল্লাহ অবশ্যই পূরণ করবে। বিশ্বাস এটা আমার আজ পর্যন্ত আমরা যা আল্লাহর কাছে মন থেকে চেয়েছি তাই পেয়েছি আর এটাও নিশ্চয়ই পাবো।
,,,,, শুধু শুধু আশা করে পরে কষ্ট পেয়ো না। আমি এখন চলি।

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ২৬

বলে প্রহর চলে যায়৷ স্নেহা হালকা হেঁসে বিছানায় শুয়ে পড়ে৷ এভাবেই দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে যায়। আলো সায়নের রুমে যায়, গিয়ে দেখে সায়ন বুকের উপর বই নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আমি বইটা সরিয়ে নিয়। সায়ন ঘুমের মধ্যে কিছু একটা বলছে। আমি শুনার জন্য নিজের চেহেরাটা সায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সায়ন বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছে।
হঠাৎ করে আমার নিশ্বাস সায়নের মুখে পড়ায়, সে হালকা একটু চোখ খুলে, আমাকে দেখে মুচকি হেঁসে,নিজের মুখটা একটু আমার দিকে উঠিয়ে আমার ঠোঁটের একটু পাশে একটা কিস করে আবার চোখ বন্ধ করে দেয়।
আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেছি, মনে আমার আনন্দের বন্যা বয়ছে। সায়ম হয়তো আমাকে ভালোবাসে এটা ভেবে। কিন্তু সায়ন চোখ বন্ধ করে বলে,,, আই লাভ ইউ দিয়া। ভালোবাসি দিয়া তোমাকে৷

কথাটা আমার বুকে ছুরির মতো গিয়ে বিধলো গিয়ে। আমি জালানার পাশে দাঁড়িয়ে পাশে রাখা দিয়ার ছবিটা নিয়ে, তার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,,, জীবনের প্রথম কোনো মেয়েকে দেখে আমার প্রচুর হিংসা হয়৷ তুমি মরে গিয়েও সায়নের মন থেকে যেতে পারোনি, আজো তোমাকে সে ভালোবাসে। আর আমি সায়নের জীবনে বন্ধু হয়ে থেকে যাবো। সে আমাকে আর ভালোবাসবে না। তার মনে আমি জায়গা করতে পারবো না, কারন পুরো জায়গা জুড়েই তুমি আছো।

আগুনের তৃষ্ণা পর্ব ২৮