আত্যাচারী বউ শেষ পর্ব 

আত্যাচারী বউ শেষ পর্ব 
লেখকঃখান বাহাদুর

তারপর তারা তাদের রুমে চলে গেল। এদিকে আমি খবর নিয়ে জানতে পারলাম যে 7 টার দিকে আয়েশার ফ্লাইট। এখন 6:50 তার মানে আমার হাতে আর দশ মিনিট সময় আছে। আমি একটি গাড়ি নিয়ে সোজা এয়ারপোর্টে পৌছালাম। সেখানে গিয়ে কিছু লোক থেকে খবর নিলাম যে প্লেন বাংলাদেশ টু অস্ট্রেলিয়া যাওয়া প্লেন ছেড়ে দিয়েছে নাকি।
আমি এক লোককে উদ্দেশ্য করে,

আমিঃ ভাইজান বাংলাদেশ ট্য অস্ট্রেলিয়া বিমান কি ছেড়ে দিয়েছে?
লোকটিঃ হ্যাঁ ভাই!
আমিঃ কিহ!!!!!
আমিঃ (মনে মনে) তার মানে কি আমার আয়েসা কি আমার থেকে দূরে চলে গেল। আয়েশা আপনি আমাকে একটিবার সুযোগ দিলেন না কেন। একটিবার সুযোগ দিতেন আমি বলতাম আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি। তখন একটু রেগে গেলাম তাই বলে কি আপনি আমাকে এত বড় শাস্তি দিবেন। সত্যি আমি আপনাকে বড্ড ভালোবাসি।
এসব কথা চিন্তা করছি আর কান্না করছি। এখন হয়তো আমার কাছে আর কিছু করার নেই।
আনমনে বসে ছিলাম হঠাত দেখলাম আয়েশার কল। আমি খুব খুশি হয়ে গেলাম এবং সাথে সাথে কলটি রিসিভ করলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমিঃ হ্যালো আয়েশা, আপনি কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। আপনি আমাকে একটিবার বলার সুযোগ দিতেন আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি।
অপরিচিতঃ লোক আসলে এখানে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে আর আমি সেখানেই মোবাইলটি কুরিয়ে পেলাম। আর দেখলাম ডায়াল কলে সবার আগে নাম্বার আপনার নাম্বার। আপনাকে কল দিলাম।
আমিঃ মানে আপনি এগুলো কি বলছেন?

অপরিচিত লোকঃ আমি বলছি যে এখানে একটি অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। আর আমি সেখানেই এই মোবাইলটি কুড়িয়ে পেলাম। আপনি যার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে তার কে হন?
আমিঃ আসলে আমি তার হাসবেন্ড। (কথাটি বলার সাথে সাথে আমি কান্না করে দিলাম)
অপরিচিত লোকঃ তাহলে আপনি তাড়াতাড়ি সদর হাসপাতাল আসুন।
আমি তাড়াতাড়ি করে একটি গাড়ি নিয়ে সদর হাসপাতালের দিকে রওনা দিলাম। সদর হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারলাম অ্যাক্সিডেন্ট কেসের রোগীটি মারা গেছে এবং সে বর্তমানে মর্গে আছে।

আমার হাত পা কাপছে, আমি যতই মর্গে কাছাকাছি যাচ্ছি ততই। মর্গের ঠিক একটু আগে একটি বেডে একটি লাশ শায়িত অবস্থায় আছে। আমি যখনই লাশের গায়ে হাত দেবো ঠিক তখনই কেউ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। আমি পিছনে ফিরে দেখলাম আয়েশা।
আমিঃ আয়েশা আপনি এখানে?
আয়েশাঃ হুম আমি দেখতে চাইছিলাম আপনি আমাকে কত ভালোবাসেন/ তাই এই পরীক্ষাটি করলাম।
আমিঃ আয়েশা ফাইজলামির একটা লিমিট থাকে আর আপনি লিমিটের বাইরে ফাইজলামি করেন।
আয়েশাঃ আমি কোথায় ফাইজলামি করলাম। এখন যদি আপনি আমাকে বকা দেন আমি কিন্তু সত্যি সত্যি অস্ট্রেলিয়া চলে যাব।

আমিঃ না না যেতে হবে না। আমি সত্যি এরকম করবো না। কানে ধরে সরি বললাম। কিন্তু (মনে মনে) কি অত্যাচারী বউ রে বাবা নিজের মৃত্যু সংবাদ নিজেই বানিয়ে ফেলল!!!
তারপর আমি আয়েশা কে তার পছন্দের আইসক্রিম টা কিনে দিলাম।
আমিঃ আচ্ছা আপনার কি আমার জন্য একটু চিন্তা হয়নি? আপনি যখনই মৃত্যুর সংবাদটি বানিয়ে ছিলে?
আয়েশাঃ চিন্তা হয়েছে অনেক চিন্তা হয়েছে তাই তো আপনার পিছনে পিছনে দেখছিলাম আপনি আমার জন্য কত পাগল।
আমিঃ থাক আর বলতে হবে না বুঝতে পারলাম আপনার কথা। আপনার কত চিন্তা আমার জন্য।
তারপর আমি আয়েশা আইসক্রিম খেয়ে সেখান থেকে রওনা দিলাম। আমি আর আয়েশা যখন বাড়িতে গেলাম দেখলাম সবাই সেখানে উপস্থিত এবং সবাই আমাদের দুজনকে দেখে অনেক খুশি।

খুব দুষ্টুমির মধ্যে আমাদের সংসার চলছিল।
কিন্তু হঠাৎ একদিন রাতে আয়েশা যা বলল তা শুনে আমি অবাক হলাম। নিশ্চয়ই অবাক হওয়ারই কথা।
আয়েশাঃ আসলে আমার না একটা বাচ্চা লাগবে?
আমিঃ জি আপনি এগুলো কি বলছেন?
আয়েশাঃ আমাদের একটা বেবি হলে আমি কত খুশি হব।
আমিঃ বেবি হলে তো আমি অনেক খুশি হব।। কিন্তু বেবি হওয়ার জন্য তো অনেক কিছুই করতে হবে তা যদি না করি তাহলে কিভাবে বেবি হবে।

আয়েশাঃ আপনার এই দুষ্টুমি স্বাভাব টা চেঞ্জ করুন।
আমিঃ আমি যদি দুষ্টু না হয় তাহলে বেবি কিভাবে দুষ্ট হবে। একটু দুষ্টামি করতে হবে। না হলে বেবি তো আর হবে না।
আমিঃ আচ্ছা আয়েশা আপনার ঠোট গুলো এত লাল কেন?
আয়েশাঃ এই খবরদার আমার সামনে আসবেন না, এই দূরে থাকো, দূরে থাকো, আমার সামনে আসবেন না।
কে শুনে কার কথা। আমি তাড়াতাড়ি তার ঠোটের সাথে আমার ঠোট লাগিয়ে দিলাম। একটু পরে আমরা দুজন পাড়ি দিলাম ভালোবাসার অথল সাগরে।

খুনসুটি ভালোবাসা আর অনেক আদরে মতে আমাদের সংসার চলছিল। এরই মধ্যে আমি বাবা হওয়ার সুসংবাদটি ও পেলাম। যতই দিন যাচ্ছে আমার ভয় বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু আমার অত্যাচারি বউয়ের কোন ভয় নেই।
সে বলল তার নাকি একটি মেয়ে চায় আমিও তার সাথে সম্মতি জানালাম। কিন্তু আমার মধ্যে যে কত ভয় কাজ করছে তা আমি ছাড়া আর কেউ জানে না।
ডাক্তার ডেলিভারি ডেট দিল 17 তারিখ। কিন্তু 14 তারিখ আয়েশার পেইন ওঠলো। তাই আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। হাসপাতালে নিয়ে জানতে পারলাম এটা বাচ্চা হওয়ার পেইন।
প্রায় দেড় ঘন্টা পরে ডাক্তার বের হলো।

আমিঃ ডাক্তার আমার বউয আর বাচ্চা ঠিক আছে তো?
ডাক্তারঃ (হাসিমুখে) জী দুজন একদম ঠিক আছে।
আমি তাও ভয় আয়েশা কেবিনে যাচ্ছিলাম না। একটু পরে অনেক সাহস করে রুমে ঢুকলাম দেখলাম।
আয়েশা আমাকে দেখে মিট মিট করে হাসছে।
আমিঃ এই যে আপনি হাসছেন কেন?
আ়য়েশাঃ তো হাসবো না।
আমিঃ মাথা কি নষ্ট হয়ে গেল?

আয়েশাঃ আমার মাথা নষ্ট হয়নি আমার মাথা পুরোপুরি ঠিক আছে। আমাদের মেয়ে হয়েছে কিন্তু।
আমিঃ হ্যাঁ হয়েছে, আপনি যে চেয়ে ছিলেন না মেয়ে তাই হল।
আয়েশাঃ একটি দুষ্টু হাসি দিয়ে (হুম)
আমিঃ এই দুষ্টু হাসিটা রহস্য কি?
আয়েশাঃ আগে তো শুধু আমি আপনাকে অত্যাচার করতাম এখন আমার মেয়েও আপনাকে অত্যাচার করবে। মা আর মেয়ে দুজনে মিলে আপনাকে অত্যাচার করব।

আত্যাচারী বউ  পর্ব ৪

আমিঃ বলে কি!! আগে একজন অত্যাচার করত আর এখন দুজনেই অত্যাচার করবে। তাহলে কি আমি বাঁচবো না মরে যাব।
আয়েশা আমার কথা শুনে হাসছে। আমিও হাসছি আজ আমাদের দুজনের অনেক সুখের দিন।
আমি বিবাহিত কাপলদের জন্য কিছু বলতে চাই। আপনারা ঝগড়া করবেন রাগ অভিমান সব করবেন। কিন্তু কখনো কাউকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করবেন না। কারন বিয়ের বন্ধন টা এমন একটা বন্ধন যে বন্ধন আমরা চিরদিনের জন্য জন্য করি। তাই আমাদের সবার উচিত আমাদের বিয়ের বন্ধন টিকে খুবই পবিত্র ভাবে এবং খুবই সুন্দর ভাবে আগলিয়ে রাখার। যাতে এই বন্ধন টি কখনো ছিড়ে না যায়!!!!
ধন্যবাদ!!!