আধার রাতের আলো পর্ব ১১

আধার রাতের আলো পর্ব ১১
নুসাইবা ইভানা

অপারেশন থিয়েটার থেকে বেড় হয়ে, নিজের কেবিনে বসে নি/কো/ টি/ নের ধোঁয়া ছেড়ে যাচ্ছে ফুয়াদ। বাড়ি ফেরার কোন তাড়া নেই। আগে একটা সময় ছিলো দশটার পর বাড়ির বাহিরে থাকতে পারতো না। এখন কত রাত বাহিরে পার করে দেয়। না তার মায়ের শাসন মানে আর না কোন পিছুটান আছে। এভাবেই দিন পার করছে। মোবাইলের স্কিনে তাকিয়ে দেখে একটা ছাড়িয়েছে। হাতে থাকা সি/গা/রে/টে শেষ টান দিয়ে বেড়িয়ে পরলো।

তুমি কি বলবে, নাকি আমার চেহারা দেখবে।
আদিয়ার কথা শুনে হুর বলে,তুমি সব সময় এমন তেতো কথা কেন বলো?
– তোমার বাজে কথা শোনার মত টাইম নেই আমার। সরো সামনে থেকে।
– তুমি একা একা খাবে! আমাকেও একটু দিতে পারতে। যদি তোমার পেট খারাপ হয় তো?
– তোমার সমস্যা কি! আমাকে বিরক্ত কেন করছো?
– জানো মানুষের ব্যবহার হলো তার ব্যাক্তিত্বের পরিচয়।
– তোমার থেকে আমাকে ব্যবহার শিখতে হবে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

– আচ্ছা আমি তোমাকে একটা কথা বলি শোন। তুমি কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো?জানি পড়ো না।জানো নামাজ কি? নামাজ হলো আমাদের সমস্ত খারাপ কাজ থেকে রক্ষা করাী। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন.. ؕ
اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَالۡمُنۡکَرِ ؕ
অর্থঃ-নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।
একদম ফটর ফটর করবে না।আমি কি করবো না করবো আমি বুঝে নেবো। বলেই চলে গেলো।

আদিয়া চলে যেতেই হুর ভাবতে লাগলো, মেয়েটা রাগী, তবে রাগী মানুষের মন নরম থাকে। কিন্তু সেটা নারিকেলের মত। বাহিরে শক্ত ভেতরে নরম। সেই পর্যন্ত যেতে হবে।
দূর ভাল্লাগে না। এই রাগী ডাক্টার এখনো আসছে না কেন? আবার কোন বাজে অভ্যাস নেই তো!ছিহহহ আল্লাহ মাফ করুন। এসব কি ভাবছি। কারো ব্যাপারে ধারণা করা তো কবিরা গুনাহ। সোফায় পা গুটিয়ে বসে আছে। বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পরছে সে খেয়াল নেই।

ফুয়াদের কাছে সব সময় বাসার চাবি থাকে। ফুয়াদ বাসায় ঠুকে দেখে লাইট অন করা। সোফায় তাকিয়ে দেখে হুর শুয়ে আছে। একপা সোফায় আর এক পা নিচে।

ফুয়াদ হুরের সামনে দাঁড়ালো। আস্তে করে হুরের পা তুলে দিলো। হুরের দিকে তাকিয়ে বলে,তোমার আমাকে সামলানোর মত বয়স হয়নি। আর সবচয়ে বড় কথা হলে। আমি আমার লাইফে দ্বিতীয় বার কাউকে সুযোগ দেবো না। বলে, উঠে যেতে নিলে হুর ফুয়াদেে হাত ধরে বলে,আপনি বললেই হলো সুযোগ দেবেন না। সুযোগ ছাড়াই কি করে আপনার লাইফে জড়িয়ে গেছি দেখেন।আর ভালো তো আপিন একদিন আমাকে বাসবেনই। বলেই আমার জড়িয়ে ধরে, মু’য়ানাকার দোয়া পরলো।
ফুয়াদ হুরকে ছাড়িয়ে বলে,তুমি বড্ড গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়ে। একদম আমার থেকে দূরে থাকো।

– তো আমি আপনার গায়ে পড়বো না তো কার গায়ে পড়বো!দেখনু একবার ওই দোয়া পরে তো কাজ হবে না বারবার আপনাকে জড়িয়ে ধরবো আর দোয়া পড়বো।তাহলে ভালোবাসা তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে।
-দেখো মেয়,তুমি আমার জীবনে প্রথম নারী নও। আমার জীবনে তোমার আগেও কেউ ছিলো।আর আমার ওই বয়সও নেই যে তোমার এসব বাচ্চামো দেখে তোমার প্রেমে পড়ে যাবো।

সে এসেছিল আবার আমাকে একা করে চলেও গেছে। সে চলে যাওয়ার পর নতুন করে আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনি। সে বলে ছিলো ভালো থাকতে আমি ভালো থাকাও শিখতে পারিনি। এই সে,,,, যে বলেছিলো তোমাকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনা করতে পারিনা।আজ সে আমাকে ছাড়া বাস্তবে বিরাজ করছে।সময় কত দ্রুত বদলে যায়! শুধু সময়ের ক্ষতগুলো রয়ে যায়। আমি দ্বিতীয় বার আর কাউকে এই সে হওয়ার সুযোগ দেবো না।

– বলেই হলো দেবো না। আমি আপনার সেই সে হতে চাইনা। আমি আপনার আধার_ রাতের_ আলো হতে চাই। আপনার সাথে শুধু দুনিয়াতে নয়, মৃত্যুর পরেও আপনার সাথে থাকতে চাই।
ফুয়াদ হুরের কথার উত্তর না দিয়ে সামনে অগ্রসর হতেই, হুর বললো,আমি কিন্তু না খেয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। আপনি কি আমাকে না খাইয়ে রাখবেন!

ফুয়াদ সামনে এসে হুরের মুখোমুখি দাঁড়ালো হুরে বাহুতে হাত রেখে বলে,কেন করছো এসব! এসব করে কোন লাভ হবে না। তুমি খেলে খাও না খেলে না খেয়ে থাকো তাতে আমার কি।বলেই হুরের বাহু ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে।
হুর ডেকে বলে, আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার বেড়ে রাখছি। আমি কিন্তু রাতে না খেয়ে থাকতে পারিনা।
ফুয়াদ রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে পায়চারি করছে, মেয়েটা নাছোরবান্দা। কি করা যায়! সাত, পাঁচ ভাবতে ভাবতে নিজে এসে দেখে হুর টেবিলের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে।ফুয়াদ হুরকে উদ্দেশ্য করে বলে,এই যে মিস তিন ফুট।

– হুর চোখ বন্ধ রেখেই বলে মোটেই আমি তিন ফুট নই। আমব পাঁচ ফিট দুই ইঞ্চি।
– এবার ভাষণ বন্ধ করে খাবার বেড়ে দিন।
ফুয়াদ আর হুর,, খেতে বসলো ফুয়াদ খাবার মুখে দেবে এমন সময় হুর বলে,এই দাঁড়ান খাবার খাওয়ার দোয়া পড়ে নিন।
ফুয়াদ হুরের দিকে তাকালো, হুর বললো,পাড়েন না তাইতো ঠিক আছে আমার সাথে সাথে পড়ুন…
بسم الله وعلى بركة الله
(বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ)

এবার ডান দিক থেকে খাওয়া শুরু করুন।
ফুয়াদ খাচ্ছে আর আড় চোখে হুরের দিকে তাকাচ্ছে।
হুর বললো,আপনি চাইলে সরাসরি তাকাতে পারেন আমি কিছু মনে করবো না। বরং খুশি হবো। কারন ভালোবাসা তো আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে। পবিত্র ভালোবাসা।

খাবার শেষ করে, ফুয়াদ উঠে যাবে,তখন হুর বলে,খাবারের পরে শাহাদাত আঙুল দিয়ে প্লেট চেটে খাওয়া সুন্নত। তিরমিজি শরিফ বর্ণিত আছে। এর ধারা ফেরেশতা দোয়া করতে থাকে। আর আঙ্গুল ও চেটে খাবেন। এই যে ঠিক এভাবে।
ফুয়াদ বললো,অনেক হয়েছে আর না। আরেহহহ কিছুি হয়নি। এই ছোট একটু সুন্নত পালন করে কি হবে।প্লিজ করুন প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
অবশেষে ফুয়াদ মানতে বাধ্য হলো।
হুর খুশি হয়ে বলে, আর একটা কাজ করতে হবে,আমার সাথে সাথে এই খাবার শেষের দোয়াটাও পড়েনিন,

الحمد لله الذي اطعمنا وسقانا وجعلنا مسلمين
হুর ফুয়াদ কে বলল,শুনুন দোয়া গুলো মুখস্থ করে নিয়েন ইউটিউব দেখে। নয়তো সবার সামনে আমার মুখে মুখে পড়তে কেমন লাগবে বলুন।
ফুয়াদ চলে গেলো,পেছন পেছন হুরও আসলো।
– তুমি আমার রুমে কেনো?
– ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখুন।
– তিনটে সাত বাজে। এখন নুর আর আন্টি ঘুমোচ্ছে তাদের ডিস্টার্ব করবো!,তারচেয়ে আপনার রুমেই ঘুমাই। আপনার বেড তো ইয়াহহহ বড় আর আমার এইটুকো জায়গা লাগবে ঘুমোতে।

– তুমি গেস্ট রুমে চলে যাও।
– আপনার মনে কি একটুও দয়া মায়া নেই নাকি!এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়েকে একা ঘুমোতে বলেন!যদি আমাকে জ্বী/নে ধরে তো!

– ফুয়াদ বেডে শুয়ে লাইট অফ করে দিলো। হুর দাঁড়িয়ে ছিলো। লাইট অফ হতেই বলে যাহহহ কারেন্ট চলে গেলো। এই আপনি কোথায়? বলছে আর হাত দিয়ে খুঁজতে লাগলো। বেডে হাত দিয়ে দেখে সামনের সাইডে কেউ নেই। হুর ভীত কন্ঠে বললো,কথা বলেন কোথায় আপনি? আমার কিন্তু একটু একটু ভয় হচ্ছে। শুনছেন।

ফুয়াত চুপচাপ শুয়ে আছে। বিছানায় আর এক পাশে হাত দিতেই হাত যেয়ে পরলো ফুয়াদের বক্ষে।হুর বুঝতে পেরেও বলে,এটা কি এতো শক্ত কেন? বলে হাত একটু নাড়াচাড়া করতে লাগলো।
ফুয়াদ হুরের হাত ধরেতেই হুর হুমড়ি খেয়ে ফুয়াদের বুকের উপর পড়লো।হুরের নিশ্বাস আর ফুয়াদের নিশ্বাস মিলেমিশে একাকার।বদ্ধ রুমে শুধু একে অপরের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে।

আধার রাতের আলো পর্ব ১০

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছো সবাই? আজকে অবশ্যই সবাই আমাকে দোয়ায় রাখবে।আর আমিও তোমাদের জন্য দোয়া করবো। ইনশাআল্লাহ।

আধার রাতের আলো পর্ব ১২