আমার আদরিনী পর্ব ১৭+১৮

আমার আদরিনী পর্ব ১৭+১৮
আশুথিনী হাওলাদার

সকালের সূর্যের আলোতে ঘুম ভেংগে যায় মেঘালয়ের। চোখ খুলে দেখে তিয়ানা তার সাথে লেগে গুটিসুটি মেরে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। মৃদু হাসে মেঘালয়! কত-কাল ধরে সে এই দিনটির অপেক্ষায় ছিল। আজ বহুবছর পর তার অপেক্ষার অবসান ঘটলো। আজ তিয়ানা তার কাছে, তার সাথে আছে এবং ঘুম ভেংগে সে তিয়ানার মুখটি প্রথমে দেখতে পেলো। তিয়ানাকে এক পলক দেখে ফ্রেস হতে যায় মেঘালয়। ফ্রেস হয়ে এসে ট্রাউজার আর টি শার্ট পরে আয়নায় নিজেকে দেখে কিছু একটা ভেবে পাঞ্জাবি বের করে পরে নেয়। কয়েক ঘন্টা আগেও, সে এই বাড়ির অন্য সদস্যদের মতো থাকলেও আজ সে নতুন জামাই। তাই! নতুন জামাই ভাবটা ধরে রাখার জন্য’ই পাঞ্জাবি পরে সে। আয়নায় নিজেকে দেখে হেসে ওঠে মেঘালয়। গতকালও সে তিলাতের মতো এ বাড়ির ছেলে ছিল কিন্তু আজ সম্পর্ক ঘুরে জামাইতে পরিনত হলো। আয়নায় নিজেকে দেখে খাটে শোয়া তিয়ানার দিকে তাকায় মেঘালয়। ততক্ষনে তিয়ানা ঘুম থেকে উঠে মেঘালয়ে কে দেখে ‘হা’ করে চেয়ে ছিল। তিয়ানার এমন দৃষ্টিতে ‘ভ্রুকুটি’ করে মেঘালয়। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি টেনে বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে তিয়ানার দিকে ঝুঁকে তার চোখে চোখ রাখে। সদ্য গোসল করে আসা মেঘলয়কে স্নিগ্ধ লাগছে। সাথে মাতাল করা মেঘালয়ের শরীরের নিজস্ব স্মল। মেঘালয়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ভরকে যায় তিয়ানা। মেঘালয় হাত বাড়িয়ে তিয়ানার থুতুনিতে টোকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়। থতমত খায় তিয়ানা। দুষ্ট হাসে মেঘালয়, বলল,,

__‘আমি জানি আমি দেখতে সুন্দর, হ্যান্ডসাম। ‘হা’ করে চেয়ে থাকতে হবে না আমার ‘আদরিনী’ আছে। আমার দিকে ‘হা’ করে তাঁকিয়ে থাকার। তোর জন্য সীট খালি নেই। ‘
কপাল কুচকে ফেলে তিয়ানা। ‘ আদরিনী মানে?’ তিয়ানাকে কনফিউজড করে এটিটিউড নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুলে চিরুনি করে মেঘালয়। তিয়ানা শাড়ি ঠিক করে তড়িঘড়ি খেয়ে খাট থেকে নেমে মেঘালয়ের সামনে গিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ায়। তিয়ানাকে এভাবে দাঁড়াতে ভ্রু কুচকে ফেলে মেঘালয়। বিরক্তি নিয়ে বলল,,
__‘হোয়াট?’
__‘হোয়াট মানে? আপনি তখন কি বললেন?’
ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল মেঘালয়,,
__‘কি বললাম?’
রাগ নিয়ে বলল তিয়ানা,,
__‘আদরিনী মানে? কে সে?’
হাত ঘড়ি পরতে পরতে উত্তর দেয় মেঘালয়,
__‘আমার গার্লফ্রেন্ডের কথা বলছি।’
থমকে যায় তিয়ানা। সিরিয়াস কন্ঠে বলল,
__‘মানে?’
মেঘালয় বিরক্তি নিয়ে বলল,,
__‘মানে সিম্পল! আমার গার্লফ্রেন্ড যাকে বাংলায় বলে প্রেমিকা। বুঝছিস?’
মেঘালয়ের বলা কথায় গলা শুকিয়ে যায় তিয়ানার। হাত-পা কেমন শীতল হয়ে আসে তার জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,,
__‘সত্যি বলছেন?’
__‘হুম’
থমকানো কন্ঠে ধীরে প্রশ্ন করে তিয়ানা,
__‘তাহলে কাল আমায় বিয়ে করলেন কেন?’
বাঁকা হাসে মেঘালয়। পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিয়ে টান টান দাঁড়িয়ে ত্যাড়া কন্ঠে বলল,,
__‘তোর বাপ আর আমার বাপ জোর করেছে আমাকে। ‘
গলা ধরে আসে তিয়ানার। নিজেকে শান্ত রেখে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

__‘জোর করলো আর মেনে নিলেন? আপনি কি ছোটো বাঁচ্চা যে করলো আর মেনে নিতে হবে।,
কিছু বলেনা মেঘালয় ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি রেখে চেয়ে থাকলো তিয়ানার ফ্যাঁকাসে হয়ে যাওয়া মুখপানে।
নিজ মনে বলে তিয়ানা,
__‘এখন কি হবে?’
__‘কি হবে? ঘরে তুই থাকবি বাইরে আমার গার্লফ্রেন্ড।’
রেগে যায় তিয়ানা। চেঁচিয়ে বলল,
__‘কি বলছেন কি আপনি?’
শান্ত কন্ঠে বলল মেঘালয়,,
__‘যা বলছি ঠিক বলছি। তুই তো বললি তোকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে এন্ড যার সাথে বিয়ে তাকেও জানতি না। আমাকেও জোর করা হয়েছে সো তোর যদি ইচ্ছে হয় তুই আমার সাথে থাকবি। না হলে না।’
থমকে যায় তিয়ানা। মেঘালয় এক পলক তিয়ানাকে দেখে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। যাওয়ার আগে একবার পিছু ফিরে বলল,,
__‘ওও হ্যা’ আমি কিন্তু আমার গার্ল্ফ্রেন্ডকে বিয়ে অবশ্য’ই করবো।’
‘অভীককে সমানে গুতিয়ে যাচ্ছে মৌমিতা ঘুম থেকে তোলার জন্য। তবে তার সেদিকে মন নেই সে চোখহ খেঁচে বন্ধ করে আছে। আজ যাই হয়ে যাক ঘুমবে’ই সে। বিরক্ত হয় মৌমিতা। বলল,,
__‘তুমি উঠবে নাকি? ঘরে আজ খাওয়া বন্ধ হবে তোমার?’
মৌমিতার কথা শেষ করতে দেরী অভীকের ঘুম থেকে উঠে বসতে নয়। সেটা দেখে কুটিল হাসে মৌমিতা। আলমারি থেকে জুয়েলারি বক্স বের করে। অভীকের সামনে এনে রেখে বলল,,

__‘দেখোতো এই হারটা তিনুর জন্য কিনেছি মানাবে না?’
অভীক বিরক্ত হয়ে বলল,
__‘তুমি এটা দেখাতে আমার সাঁধের ঘুম ভাংগালে’
খুশি গদোগদো হয়ে বলল মৌমিতা,,
__‘হ্যা! আর দেখো এই শাড়িটা অনেক সুন্দর না? আমাদের তিনুকে ভালো লাগবে না?
মৌমিতার কান্ডে হতাস অভীক। কিছুক্ষন আহমকের মতো নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর দিকে চেয়ে থেকে। শাড়ি দেখায় মন দিলো। শাড়ি নেড়েচেরে বলল,,
__‘হ্যা সুন্দর!
কিন্তু এসব কিনলে কখন?’
__‘কাল হস্পিটাল থেকে ফেরার পথে।’
অবাক হয় অভীক। বলল,
__‘আগে তো অনেক কিছু কিনেছো।
হেসে বলল মৌমিতা,
__‘তাতে কি! তিনু আমার একটা মাত্র ছেলে একটা মাত্র বউ। ওর জন্য কিনবো না তো কার জন্য কিনবো? তিনু তো শুধু আমার মেঘের বউ না। বউ হওয়ার আগে আমার মেয়ে।

মৃদু হাসি অভীক। মৌমিতার মেয়ের খুব সখহ ছিল। মেঘালয় হওয়ার পর। যখন, তিয়ানা দ্বিতীয় বার কনসিভ করে বেবিটা পেটে’ই মারা যায়। ডাক্তার বলে দেয় দ্বিতীয় বার আর সিজার করা যাবে না তাই বেবি না নেয়াই ভালো। নিলে যেকোনো একজনকে বাঁচানো যাবে। তারপর আর অভীক সাহস করেনি তবে মৌমিতা বেশ পিড়াপিড়ি করতো কিন্তু অভীককে টলাতে পারিনি। তারপর যখন তিয়ানা হলো। সেই থেকে তিয়ানা তাদের চোখের মনি।
মুচকি হেসে পিছন থেকে মৌমিতার কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে ধরে তার ঘাড়ে ঠোঁট ছোয়ায় অভীক। কেঁপে ওঠে মৌমিতা। মেকী রাগ নিয়ে বলল,,
__‘করছো কি তুমি? দরজা খোলা আছে। বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে তোমার।’
শব্দ করে হেসে ওঠে অভীক বলল,
__‘দরজা খোলা তাতে কি? বাসায় তো কেউ নেই ছেলে তো তার শশুড় বাড়ি।’
অভীকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় মৌমিতা। জুয়েলারি বক্স হাতে নিয়ে বলল,
__‘ছেলে নেই বাড়িতে কিন্তু রুমাতো আছে। রুমা যদি এসে পরে? আমি নিচে যাচ্ছি ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে আসো। আর হ্যা! রুমার আজ স্কুল আছে। হস্পিটালে যাওয়ার সময় ওকে ছেড়ে যাবে।’
মৌমিতার যাওয়ার দিকে অসহায় চোখেহে তাঁকিয়ে থাকে অভীক। বউটা তাকে পাত্তা’ই দিচ্ছে না। বিয়ে করে বাঘ থেকে বিড়াল হয়ে গেল সে।

বিছানায় হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে তিয়ানা। ফ্রেস হয়নি এখন অব্দি। হাত-পা কেমন অসার হয়ে গেছে তার। গত রাতে সে খুশি ছিল। তার বিয়ে মেঘালয়ের সাথে হওয়ায়। আজ ভাবছে কেন হলো বিয়েটা? এখন কি করবে সে? মেঘালয় কে সে রগেরগে চিনে। মেঘালয় যখন একবার বলছে সে তার প্রেমিকাকে বিয়ে করবে তো করবে। তিয়ানা চাইলেও আঁটকাতে পারবে না। বুকের ভিতর তোলপাড় হচ্ছে তিয়ানার। মাথা খালি খালি লাগছে। কি করবে বুঝতে পারছে না সে। কি করা উচিত তার? নিজের জায়গা ছেড়ে দেবে? তাছাড়া উপায় নেই। মেঘালয় কে সে অন্য কারো সাথে মেনে নিতে পারলেও ভাগ করতে পারবে না। সে তো ভেবে’ই নিয়েছিল মেঘালয় তার হবে না। সেটা সম্ভব না। আর আজ যখন বিয়ে হলো তখন জানলো মেঘালয় অন্য কাউকে ভালোবাসে। বিয়ের আগে জানলে কি এমন ক্ষতি হতো? জানলেও বা কি করতো সে? তিয়ানা তো জানতো’ই না তার বিয়ে মেঘালয়ের সাথে হচ্ছে। কোনো মেয়ে স্বামীকে ভাগ করতে পারেনা। আর না সতীন নিয়ে সংসার করতে চায়। তাহলে কি করবে সে? মেঘালয়কে ডিভোর্স দেবে?

সাদিদ কিচেনের সামনে এসে ঘুরঘুর করছে। তবে তুলিকার সেদিকে মন নেই। নিজের মনে কাজ করছে সে। কাল রাত থেকে তুলিকা সাদিদের সাথে কোনো কথা বলেনি। তার বলতে ইচ্ছে হয়নি। সে যে ভুল করেছে তার শাস্তি সে গত ৩২ বছর ধরে পেয়ে এসেছে। তিন যুগের কাছাকাছি সময় ধরে। তারপরও তার শাস্তি শেষ হয়নি। ইদানিং হাপিয়ে উঠেছে তুলিকা। গত ৩২ বছরে সুখ ঠিক কি জিনিস সে বুঝতে পারেনি। জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় অবহেলা পেয়ে পেয়ে কাঁটিয়ে দিয়েছে সে। সেদিন কি করতো তুলিকা? নিজের বোনকে মরতে দিতো? বোনের লাশ ঢেংগিয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে ড্যাং ড্যাং করতে করতে শশুর বাড়ি যেত সে। তিয়াসা নিজের বোনের সুখ দেখতে পারিনি তাই বলে সেও নিজের বোনকে মরতে দিয়ে চলে আসতো? মায়ের পেঁটে একসাথে ভাগাভাগি করে বড় হয়েছে দু’জন। যার সাথে তার জন্মের আগে থেকে সম্পর্ক যে বোন তার অস্তিত্ব থেকে তার সঙ্গি ছিল সেই বোনকে সে মরতে দিতো? অতীত ভাবতে গিয়ে চোখ ঝাঁপসা হয়ে আসে তুলিকার। মাতৃহৃদয় কেঁপে ওটঠে তার। নিজ সন্তানকে অব্দি নিজের সন্তান বলে কখনো বলতে পারিনি সে। একবারও কি সাদিদ তাকে বোঝার চেষ্টা করেছে। সে কতটা কষ্ট পেয়েছে, তার কেমন লেগেছে নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যের হাতে তুলে দিতে বা নিজের বোনের স্বার্থপরতায়। একবারও কি জানার চেষ্টা করে লোকটা। আজ সব দোষ তার। তাচ্ছিল্য হাসে তুলিকা।

__‘আন্টি মা’
মেঘালয়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পায় তুলিকা। মুচকি হেসে মেঘালয়কে দেখে বলল,
__‘উঠে গেছিস? ডাইনিং বস, আমি খাবার দিচ্ছি।
মৃদু হেসে বলল মেঘালয়,,
__‘আমি এখন খাবো না হস্পিটাল থেকে ইমার্জেন্সি কল এসেছে যেতে হবে।’
তুলিকা আঁতকে উঠে বলল,,
__‘সেকি! না খেয়ে যাবি মানে? হস্পিটাললে গিয়ে কখন না কখন খাস ঠিক নেই। তাছাড়া, নতুন জামাই প্রথম দিন শশুড়বাড়িতে না খেয়ে যাবি? লোকে কি বলবে?’
মেঘালয় তুলিকার কথা শুনে আহমক হয়ে কিছুক্ষন চেয়ে থাকে। পরে হেসে বলে উঠলো,,
__‘বিয়ে হয়েছে এককদিনও হয়নি এর মধ্যেই পর করে দিয়েছো? বাড়ির ছেলে থেকে সোঁজা নতুন জামাইতে চলে গেলাম।’
মেঘালয়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাসে তুলিকা। কিচেন থেকে খাবার নিয়ে বের হয়ে মেঘালয়ের গালে হাত রেখে বলল,,
__‘তা কেন হবে? আমারতো দু’টো ছেলে। কিন্তু তুই আমার একমাত্র মেয়ের জামাইও তো বল! একটা মাত্র মেয়ে আমার। মেয়ের জামাই নিয়ে সব শাশুড়ীদের অনেক সখ আহ্লাদ থাকে আমারও আছে আর সেসব তোকে সহ্য করতে হবে। এখন আয়! খেতে বস বেশিক্ষন সময় লাগবে না।”
তুলিকার চোখের দিকে তাঁকায় মেঘালয়। তার চোখ ছলছল করে ওঠে। মৃদু হেসে বলল,,
__‘বসছি।’
এই মানুষটিকে নিজের মায়ের থেকে কোনো অংশে কম দেখে না মেঘালয়। তুলিকা তার আর একটা মা। তুলিকার মতো মানুষ নিজের ২৮ বছরের জীবনেও দ্বিতীয়টি দেখিনি সে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে অব্দি সেক্রিফাইস করেছে। নিজের সন্তানকে অব্দি ত্যাগ করে অন্যের শূন্য কোলে পূর্নতা দিয়েছে। কিন্তু এতো ভালো হয়েও নিজে অসুখি।
তিয়ানা এক ভাবে’ই হাত- পা গুটিয়ে বসে আছে। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। দম আঁটকে যাওয়ার মতো কাঁন্না আসছে তার।
খাওয়া শেষে ঘরে আসে মেঘালয়। তিয়ানাকে থম মেরে বসে থাকতে দেখে। ভ্রু কুচকে প্রশ্ম করলো,,
__‘কি ব্যাপার? ফ্রেস না হয়ে কীসের ধ্যান করছিস?’

মেঘালয়ের প্রশ্নের উত্তর দেয়না তিয়ানা। দিতে ইচ্ছে করছে না তার। তিয়ানাকে চুপ হয়ে থাকতে দেখে মেঘালয় তিয়ানার পাশে গা ঘেঁষে বসে। হালকা কেঁপে ওঠে তিয়ানা তবে নিজের স্থান পরিবর্তন করে না। আর না নিজের ভাবভঙ্গি। মেঘালয়ের শরীর থেকে মিষ্টি একটা স্মল আসছে যা তিয়ানার খুব পছন্দের। অবশ্য সেটা পারফিউমের ঘ্রান তবুও এই ঘ্রান তার মনকে তোলপাড় করে দেয়। ইচ্ছে করে মেঘালয়কে ঝাঁপটে জড়িয়ে ধরতে। তবে আগে সাহস হয়নি। মেঘালয়ের থাপ্পড়ের ভয়ে আর আজ অধিকার থাকা সত্যেও পারছে না কারন মানুষটি তার না। কোনো মেয়ে কি সহ্য করতে পারে নিজের স্বামীর মুখ থেকে অন্য কাউকে ভালোবাসে কথাটি শুনতে। সে যদি! আবার নিজের ভালোবাসার মানুষ হয়।
মেঘালয় উঁকিঝুঁকি মেরে ভাবগতি বোঝার চেষ্টা করে তিয়ানার। কিন্তু না! মহারানী খুব’ই মনোক্ষুণ্ণ হয়ে ধ্যাঁন করছেন। আলতো হাসে মেঘালয়। পিছন থেকে হাত বাড়িয়ে শাড়ির উপর দিয়ে তিয়ানার পেঁটে হাত রেখে তার দিকে টেঁনে আনে। মেঘালয়ের ঠান্ডা হাত পাতলা শাড়ি ভেদ করে তার শরীরে লাগে। হঠাৎ মেঘালয়ের এহনো কান্ডে শিউড়ে ওঠে তিয়ানা। তিয়ানাকে নিজের কাছে ঘনিষ্ঠ ভাবে টেনে তার কাঁধে থুতুনি রাখে মেঘালয়। মেঘালয়ের নিশ্বাস তিয়ানার শরীর আছড়ে পরে। নিশ্বাসের গত অস্বাভাবিক বেড়ে যায় তিয়ানার। মেঘালয় তিয়ানার কাঁধে থুতুনি রেখের ট্যারা চোখে তিয়ানার মুখের দিকে তাঁকিয়ে শান্ত কন্ঠে তবে ভালোবেসে বলে উঠলো,,

আমার আদরিনী পর্ব ১৫+১৬

__‘ও আমার ভাবনা কুমারী কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি।’
মেঘালয়ের এমন কন্ঠস্বর শুনে কেঁপে উঠে তিয়ানা।নিজেকে সামলে, নিজের অনুভূতিকে দমিয়ে প্রশ্ন করলো তিয়ানা,
__‘আপনার কি! সত্যি সত্যি প্রমিকা আছে?’
তিয়ানার প্রশ্ন হেসে দেয় মেঘালয়। তিয়ানার ঘাড়ে নাক ডুবায় সে। কেঁপে ওঠে তিয়ানা শাড়ি খামছে ধরে সে। বুকের ভিতর কেমন ধুকপুক করে ওঠে তার। শুকনো ঢোক গিলে তোতলে বলল,,
__‘ক্কী ক্কক্রছেন?
__‘আমার বউয়ের সাথে রোম্যান্স।’
‘বউ’ শব্দটি কানে যাওয়া মাত্র বুকে ধক করে ওঠে তিয়ানার। মেঘালয় ছোটো করে ঠোঁট ছোয়ায় তিয়ানার ঘাঁড়ে। শিউড়ে ওঠে তিয়ানা। চোখহ বন্ধ করে নেয় সে। মেঘালয়ে নাক টেনে শ্বাস নিয়ে বলল,,
__‘তিনু তোর শরীর থেকে এতো সুন্দর স্মল আসছে কেন বলতো? তোকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার। খাবো?’
আর নিতে পারছে না তিয়ানা। এবার মনে হচ্ছে অনুভুতিতে সে মরে যাবে। মেঘালয়ের থেকে দূরে সরে যেতে চায় সে। তবে পারে না মেঘলয় তাকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। বিপাকে পরে তিয়ানা! কাঁপা স্বরে বলল,,
__‘ছাড়ুন আমাকে।”
__‘কেন? ছাড়বো কেন? আমার বউ কে আমি ধরেছি তোর কি? তুই চুপ থাক!
আহমক হয়ে যায় তিয়ানা। কি বলছে আধপাগলটা বউটা কে? সে তো! দাতে দাত চেঁপে কিড়মিড় করে বলে উঠলো তিয়ানা,,
__‘বউটা আমি! তাই আমার’ই সব।’
ভাবসালিন ভাবে উত্তর দেয় মেঘালয়,
__‘ওহ আচ্ছা! হ্যা বউ তো তুই। তো! আমি কি করবো? এখন তুই আমার বউ বলে কি আমি আমার বউ কে আদর করবো না? বউয়ের সাথে রোম্যান্স করবো না?
এবার লজ্জা লাগে তিয়ানার ঠোঁট কাটা লোকটার কথা শুনে। রেগে বলল তিয়ানা,,
__‘কীসব বলছেন! লজ্জা করছে না আপনার?
মেঘালয় অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল,,

__‘নিজের বউয়ের কাছে আবার লজ্জা কীসের? এতো লজ্জা নিয়ে থাকলে কোনো দিন ‘আব্বু’ ডাক শোনা হবে না আমার। ‘
থতমত খেয়ে যায় তিয়ানার। মেঘালয়ের এমন পাগলামি কথার উত্তর কি হতে পারে জানা নেই তার।
গত এক সপ্তাহ ধরে তিলাত নিজের অনুভূতিকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে কিন্তু সে ব্যার্থ। ভেবেছিল অন্য সব ভালোলাগার মতো’ই অবন্তীও তার ভালোলাগা কিন্তু না সে অবন্তীর জন্য জেনুইন কিছু ফিল করে যা ভালোবাসা। জীবনে আজ অব্দি অনেক প্রেম করেছে সে কিন্তু এমন দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি কারো প্রতি অনুভব হয়নি তার। নিজেকে আঁটকানো সম্ভব হচ্ছে না তিলাতের। তার অবন্তীকে চাই। বোনের বিয়ে যখন মিটে গেছে তখন মা’কে বলে অবন্তীর বাড়িতে বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিলাত। এবার আর প্রেম নয় সোজা বিয়ে পিড়িতে। বউ করে ঘরে তুলবে অবন্তীকে। তার পর না হয় বিয়ের পর চুটিয়ে প্রেম করবে দু’জন।

আমার আদরিনী পর্ব ১৯+২০