আমার আদরিনী পর্ব ১৫+১৬

আমার আদরিনী পর্ব ১৫+১৬
আশুথিনী হাওলাদার

_‘তিনু তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস?’
মেঘালয়ের ঠোঁট কাঁটা প্রশ্নে লজ্জা উড়ে যায় তিয়ানার। মুখ কাচুমাচু করে ফেলে সে। মেঘালয় বলল,
__‘এভাবে বসে না থেকে স্বামী সেবা কর। আমার পা টিপে দে তো।
দুঃখি কন্ঠে বলল মেঘালয়,,
__‘ কোনো দিন তো বোন হিসেবে এক গ্লাস পানি গড়িয়েও দিসনি। এখন কপালে কে আছে কে জানে? এখন তো বোন থেকে সোজা বউতে চলে গেছোস। তোরা বাপ-মেয়ে মিলে আমার বাপ কে নিশ্চয়ই কোনো কালো জাদু করে আমায় ফাসাইছোস।’
তিয়ানা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে মেঘালয়ের দিকে। সে কখন ফাসালো?
মেঘালয় তিয়ানার তাঁকানো দেখে নিজের দিকে চেয়ে পাঞ্জাবি টেনেটুনে শোয়া থেকে উঠে আসন পেতে বসে সন্দেহ নিয়ে বলল,,

__‘তোর চোখ দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে তিনু। তোর দৃষ্টি আমার ঠিক ভালো ঠেকছে না। জানিস তো! এমন করে কারা চায়? যারা লচু মেয়ে। নিরহ ছেলেদের দিকে তাঁকিয়ে থেকে তাদের চোখ দিয়ে ধর্ষন করে। তোর দৃষ্টিও আমার তেমন লাগছে।’
থতমত খেয়ে যায় তিয়ানা। মেঘালয়ের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় সে। পরক্ষনে কিছু একটা ভেবে তার দিকে ফিরে ক্রুর হেসে বলল,,
__‘আপনি তো আমার জামাই হন। মাত্র বিয়ে হয়েছে আমাদের । তো আমি আমার জামাইর দিকে নির্লজ্জের মতো চেয়ে থাকতে’ই পারি। তাতে আপনার কি?
বলে ভ্রু নাঁচায় তিয়ানা। তিয়ানার বলা ‘জামাই’ সম্মন্ধে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে মেঘালয়ের। ডান হাত দিয়ে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বাঁকা হাসে মেঘালয়। বলল,
__‘রাইট! ভেরি রাইট কথা। তিনুরানী অবশ্যই তার জামাইকে দেখবে। তাতে আমার কি? তাহলে, মেঘালয়ও তো তার বউ কে নির্লজের মতো দেখতে পারে।”
তিয়ানার দিকে ঝুঁকে তার দুই সাইটে হাত রেখে বলল মেঘালয়। হতবম্ব হয়ে যায় তিয়ানা ভয়ে ভয়ে মেঘালয়কে দেখে সে। মেঘালয় ক্রুর হেসে বাম ভ্রু’কুটি করে তার দিকে চেয়ে আছে। ভয়ে পিছিয়ে খাটের সাথে লেগে বসে তিয়ানা। তিয়ানাকে ভয় পেতে দেখে দুষ্ট হাসে মেঘালয়। বলল,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

__‘তাই না? আজ মেঘালয়ের নতুন বউকে লাল শাড়িতে বউ সেজে বেশ আবেদনময়ী লাগছে।’
মেঘালয়ের এহনো কথায় কেঁপে ওঠে তিয়ানা। লজ্জায় কান থেকে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে যেন। হাত দিয়ে বিছানার চাঁদর খামছে ধরে পা গুটিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে তিয়ানা। হাসে মেঘালয়! হাসি থামিয়ে তিয়ানার ভিতু মুখের দিকে তাঁকিয়ে শব্দ করে হেসে দেয় সে। বদ্ধ রুমে মেঘালয়ের হাসির ঝংকারে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হয় তিয়ানার। বুক কেঁপে ওঠে তার। উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে তিয়ানা। মেঘালয় অপলক চোখে দেখে তার সদ্য বিয়ে করা নববধূকে। এগিয়ে যায় তিয়ানার দিকে তার ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে শ্বাস টেনে স্মল নেয়। মেঘালয় এত কাছে আসাতে শ্বাস আঁটকে যায় তিয়ানার। মুঠোয় থাকা বিছানার চাদর খামছে ধরে সে। এ কেমন অনুভুতি তার? যে অনুভূতির তাড়নায় সে শ্বাস নিতে অব্দি পারছে না। তিয়ানার থেকে সরে আসে মেঘালয়। হাত বাড়িয়ে তিয়ানার খোপা করে থাকা কোমড় অব্দি লম্বা চুল গুলো খুলে দেয় সে। লাল জর্জেট শাড়ি গায়ে জড়ানো সাথে খোলা চুলে অন্যরকম সুন্দর লাগছে তিয়ানাকে। তিয়ানার এমন রুপ দেখে বুকে তোলপাড় শুরু হয় তার। তবে চোখ সরায় না সে। বহু প্রতিক্ষার পর তার সামনে বধূবেসে বেশে বসে থাকা মেয়েটাকে নিজের নববধূ রুপে পেয়েছে সে। মেঘালয়ের সারা শব্দ না পেয়ে চোখ খোলে তিয়ানা। তার দিকে’ই অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেঘালয়। দু’জনের চোখ চোখ মিলে যায়। মেঘালয়ের তুক্ষর, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে বুক কেঁপে ওঠে তিয়ানার। আজ বড্ড অচেনা মেঘালয় কে দেখছে সে। এতদিনের চেনা মেঘায়ের সাথে আজকের মেঘালয়ের বড্ড অমীল খুজে পাচ্ছে তিয়ানা।
__‘আমার বউকে আমি একবার ছুয়ে দিতে পারি?’

ভাবনায় ব্যাস্ত তিয়ানার কানে শব্দগুলো পৌঁছানো মাত্র চমকে ওঠে মেঘালয় কে দেখে সে। তিয়ানকে ভিতূ চোখে তাঁকাতে দেখে সস্মিত ফিরে পায় মেঘালয়। কি হচ্ছে বুঝতে পেরে চোখ সরিয়ে নেয় তিয়ানার থেকে। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার। তিয়ানাকে একান্ত্র নিজের করে পেতে ইচ্ছে করছে তার। কই? আগে তো কখনো এমন অনুভব হয়নি তার। তাহলে আজ কেন? সম্পর্কটা পবিত্র বলে কী? হবে হয়তো! তিয়ানাকে লুকিয়ে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঘালয়। তিয়ানার থেকে সরে গিয়ে ধম করে বিছানায় শুরে পরে। মেঘালয় সরে যাওয়া তে আঁটকে থাকা শ্বাসটা ফেলে তিয়ানা। এতক্ষন শ্বাস আঁটকে থম মেরে বসে ছিল সে। মেঘালয় তার কাছে আসাতে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার তবে খারাপ না। ভালো লাগার! মিষ্ট অনুভূতি! মেঘালয়ের সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। কেন এমন অনুভব হচ্ছে? মেঘালয় আজ তার স্বামী বলে কি? স্বামী! মেঘালয় তার স্বামী! তার বর ভাবতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে তিয়ানার। বুকের ভিতর খুব খুব খুশি খুশি অনুভুত হয় তার। হঠাৎ ধমকে বলল মেঘালয়,,

__‘থম মেরে বসে না থেকে পা টিপে দে আহমক।’
মেঘালয়ের ধমকে লাড্ডু ফুটে ওঠা মন চুপশে যায় তিয়ানার। এতক্ষন যে খুশি অনুভব হচ্ছিল তা এখন তেঁতো লাগছে তিয়ানার। খারুচটা নিজের রুপে ফিরে আসছে। চোখ পাকিয়ে তাঁকায় তিয়ানা। তা দেখে ‘হাই’ তুলে বলল মেঘালয়,,
__‘চোখ তাঁকাবি তো স্বামী নির্যাতনের আমলা ঠুকে দেব তোর বিরুদ্ধে। বউ হইছিস আর জামাই সেবা করবি না। তা হওয়ার নয়।’
মুখ বাঁকিয়ে বলে তিয়ানা,,
__‘আপনার বউ হতে আমার বয়ে’ই গেছে। নেহাত পাপা আমায় জোড় করে বিয়ে দিয়েছে নয়তো আপনার মতো খারুচকে না তিয়ানা রহমান বিয়ে করতো না ‘
কপাল কুচকে তাঁকায় মেঘলয়। ব্যাঙ্গ করে বলল,,
__‘ওরে আমার মহারানী ক্লিওপেট্রা আপনাকে বিয়ে করার জন্য হেদিয়ে মরেছি যেন। তোরা বাপ-মেয়ে কালো জাদু করেছিস আমার উপর। সাথে যোগ দিয়েছে আমার বাপ আর বন্ধু নামক শালাটা।’
ফুসে ওঠে তিয়ানা। আঙ্গুল নাচিয়ে বলল,
__‘আমার পাপ্পি আর পাপা কিছু বললে তো খবর আছে। আমার তো সন্দেহ হচ্ছে আপনি আর আমার ভাইয়া নামক শত্রুটা মিলে আমায় এই চিপায় ফেলাইছেন।’
মুখে তা বললেও তিয়ানা খুব ভালো করে জানে। এটা তার পাপ্পা আর পাপ্পির কাজ। কিন্তু নিজের ইমেজ তো এই খারুচটার সামনে নষ্ট করা যাবে না।

__‘ওরে আমার সুন্দরী রানী ক্লিওপেট্রা আসছে যে তাকে ফাসাতে হবে আমায়। শোন তোর মতো হাজারটার মেয়ে আমার পিছনে ঘোরে। নেহাত তোর বাপ আমার পাপ আমাকে এতো করে রিকুয়েষ্ট করে বলল,
__‘আমাদের মেয়ে দেখতে মাশাল্লাহ পেত্নী। বাইরে তো আর দেয়া যাবে না দেখা যাবে তোর এই পেত্নী মার্কা চেহারা দেখে বাসর রাতে’ই তোর বর হার্টফেল করে মরবে। কিন্তু আমি বিয়ে করলে সেটা হবে না কারন তোর এই পেত্নী চেহারাটা আমি তোর জন্ম থেকে দেখে আসছি। তাই আমি’ই করলাম ঘরের মেয়ে তো ফালাইয়া দেয়া যায় না। কি আর করার আমার গলাতেই ঝুঁলাই।
ফোস করে ওঠে তিয়ানা। রেগে দাতেদাত চেপে বলল,,
__‘আমি পেত্নী? আমায় দেখলে আমার বর হার্টফেল করবে? শুনন আমি যদি একবার হ্যা বলি না আমার পিছনে ছেলেদের লাইন পরে যাবে।’
মেঘালয় হেসে ব্যাঙ্গ করে বলল,,
__‘হ্যা তা তো প্রমান দেখতে’ই পাআচ্ছি ‘লিইইটনদায়ায়া’ কি যেন কবিতা লিখছিল? ইহা মনে পরেছে।
‘ও তিনু ও তিনু ‘
‘তুমি কেন বোঝো না ‘
‘তোমার বিরহে মরছি তিনু’
‘তুমি কেন দেখছো না’
‘কেন ভালবাসছো না’
‘ও তিনু রে ও তিনু রে ‘
‘কেন বোঝা না’
‘আমার তিনুরে’
ফোস করে ওঠে তিয়ানা। রেগে দাতে দাত চেপে বলল,,

__‘আমি পেত্নী? আমায় দেখলে আমার বর হার্টফেল করবে? শুনেন! আমি যদি একবার ‘হ্যা’ বলি না, আমার পিছনে ছেলেদের লাইন পরে যাবে।’
মেঘালয় হেসে ব্যাঙ্গ কন্ঠে বলল,,
__‘হ্যা তা তো প্রমান দেখতে’ই পাচ্ছি ‘লিইইটনদায়ায়া’ কি যেন কবিতা লিখছিল? ইহা মনে পরেছে।’
‘ও তিনু ও তিনু ‘
‘তুমি কেন বোঝো না ‘
‘তোমার বিরহে মরছি তিনু’
‘তুমি কেন দেখছো না’
‘কেন ভালবাসছো না’
‘ও তিনু রে ও তিনু রে ‘
‘কেন বোঝা না’
‘আমার তিনুরে’
রেগে মেঘালয়ের গলা চেপে ধরে তিয়ানা। ‘হো হো’ করে হেসে ওঠে মেঘালয়। তিয়ানার হাত ধরে গলা ছাড়িয়ে তিয়ানাকে পিছনে মুড়িয়ে তার হাত মুচড়ে ধরে মেঘালয়। তিয়ানার পিঠ মেঘালয়ের বুকে গিয়ে লাগে। ফোস ফোস করে ওঠে তিয়ানা। নিজের সমস্ত শক্তি ব্যায় করে হাত ছাড়াতে ব্যার্থ হয়ে চুপ মেরে শান্ত হয়ে যায় সে। শব্দ করে হাসে মেঘালয়। পিছন থেকে ঝুঁকে তিয়ানার দিকে তাঁকিয়ে হেসে বলল,,

__‘কি? তিনুরানী! অপস সরি! সুন্দরী ম৯হারানী ক্লিওপেট্রা এনার্জি শেষ?’
দুঃখি দুঃখি চোখে মেঘালয়কে দেখে তিয়ানা। ফুঁপাতে থাকে সে তবে কাঁন্না আসছে না। বাম ভ্রু’কুটি করে মেঘালয় বাঁকা হেসে তিয়ানার কানের কাছে মুখ নিয়ে দুষ্ট কন্ঠে ফিসফিস করে বলল,,
__‘তিনু বুঝতে পারছিস? তোর আর আমার আজ বিয়ে হয়েছে। তুই আমার বউ! আজ আমাদের বাসর রাত। বিছানা দেখ ফুল দিয়ে সাজানো। আমার না কেমন ‘বাসর বাসর’ ফিলিংস হচ্ছে।’
মেঘালয়ের বলা শব্দগুচ্ছ গুলো তিয়ানার কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্র তিয়ানার ‘হেচকি’ উঠে যায়। হেসে দেয় মেঘালয়, হাসতে হাসতে তিয়ানাকে ছেড়ে বিছানায় শুয়ে পরে সে। তিয়ানা ফ্যালফ্যাল করে মেঘালয়ের হাসি মুখের দিকে চেয়ে থাকে। মেঘালয়ের হাসি দেখে তিয়ানার ‘হেচকি’ থেমে যায়। হঠাৎ মনে হলো তিয়ানার। বেশ কয়েকবছর পর আজ প্রথম মেঘালয় তার সাথে এত স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে। তিয়ানা তার কিশোরী বয়স থেকে দেখে আসছে মেঘালয় তার সাথে ধমক ছাড়া কথা বলত না। কেমন একটা দূরত্ব রেখে চলতো এমন যে সে কোনো ছোঁয়াছে রুগি। তার ছোঁয়া লাগলে ক্ষতি হয়ে যাবে খারুচটার।
তিয়ানাকে ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে থাকতে দেখে দুষ্ট হাসে মেঘালয়। তিয়ানার হাত টান দিয়ে তার পাশে শুয়ে দেয়। মেঘালয় শোয়া থেকে উঠে হালকা তিয়ানার দিকে ঝুঁকে বাঁকা হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,,

__‘শুরু করি বাসর?’
মেঘালয়ের কথায় পেঁটে মোচড় দিয়ে ওঠে তিয়ানার। আমতা আমতা করে তোতলে বলল,
__‘ম্মমমআনে?’
তিয়ানার ঘাড়ের কাছে মুখ নেয় মেঘালয়। ঠোটের কোণে দুষ্টু হাসি বিদ্দমান মান। বলল,,
__‘বিয়ে করলাম আর বাসর করবো না? তো হয় না!’
তিয়ানা কাঁদো কাঁদো মুখ করে মেঘালয়কে ঠেলে শোয়া থেকে উঠে বসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। মেঘালয় এর গরম নিশ্বাস তার ঘাড়ে এসে লাগছিল। নাম না জানা অনুভূতিতে শ্বাস আটকে যায় তার। পেথম কোনো পুরুষ তার এত কাছে। যে কিনা তার ‘স্বামী’। মেঘালয় কে আড়চোখে দেখে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,,
__‘আপনি এত স্বাভাবিক ক্যামনে ভাইয়া? এ জীবনে আমি আপনারে এমন ভালো মিষ্টি মিষ্টি কথা আমার সাথে অন্তত বলতে দেখিনি। আপনার মুখের কথা গুলো হঠাৎ তেঁতো থেকে মধুতে ক্যামনে পরিনত হলো? নিশ্চয়’ই কোনো মতলব আটছেন আপনাকে বিয়ে করছি বলে। কিন্তু! বিশ্বাস করেন ভাইয়া, আমি কিচ্ছু জানিনা। আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছে আমি এটাও জানতাম না বর আপনি।”
মেঘালয় চোখ কুচকে তাঁকিয়ে থাকে তিয়ানার দিকে। তিয়ানা খানিক্ষন ভেবে কনফিউজড হয়ে বলল,,
—_‘ভাইয়া! আমাকে না হয় সবাই জোড় করেছে আপনি রাজি হইছেন কেন?”
থতমত খেয়ে যায় মেঘালয় তিয়ানার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অন্য পাশে ফিরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরে সে। তিয়ানা হতভম্ব হয়ে মেঘালয়ের দিকে চেয়ে থাকে। মেঘালয় তিয়ানার দিকে ফিরে ‘হাই’ দিয়ে বলল,,

__‘ঘুমিয়ে পর তিনু আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।’
তিয়ানা সন্দেহ নিয়ে বলল,,
__‘কিন্তু! আমার উত্তর টা?’
কথার উত্তর দেয় না মেঘালয়। ঘুমের ভান ধরে মটকা মেরে শুয়ে থাকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিয়ানা। পলকহীন ভাবে তার পাশে ঘুমিয়ে থাকা মেঘালয়কে দেখছে সে। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে সে যা একটু পর ভেংগে যাবে। বিশ্বাস করতে পারছে না তিয়ানা। মেঘালয় তার পাশে তার বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। দু’জন এক ঘরে একসাথে বৈধ্য ভাবে রাত কাটাচ্ছে। অবিশ্বাস্য ঘটনা! তিয়ানা কখনো কল্পনাও করেনি যে, এই দিনটি সত্যি সত্যি তার জীবনে আসবে। মেঘালয় তার ‘স্বামী”। বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হয় তিয়ানার। অন্য এক অনুভুতি যার সাথে সে পরিচিত না। একটু সংকোচ একটু ভালোলাগা আরও, আরও অনেক অনেক অনুভূতি সে বুঝতে পারছে না। বুকে যন্ত্রণা হছে তার কেমন যেন জ্বলছে। শ্বাস আটকে যাচ্ছে অতি উত্তেজনায়, খুশিতে। বিরবির করে বলল তিয়ানা,,
__‘আপনি সত্যি এখন আমার ‘স্বামী?’ শুধু আমার! বিশ্বাস হচ্ছে না। আমার পেটের ভিতর কেমন গুড়ুমগুড়ুম করছে। দেখুন আমি শ্বাস নিতে পারছি না। এমন কেন এই অনুভূতি? আচ্ছা আপনারও কি এমন হচ্ছে? শুনুন আমি না সত্যি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। কি করি বলুন তো? আপনার সাথে এক বিছানায় একসাথে শুতে আমার লজ্জা লাগছে। কই? আপনার তো তেমন হচ্ছে না! পুরু নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন আর এখানে আমি দমবন্ধকর অনুভূতিতে পিষ্ট হচ্ছি’
“__থ্যাংকস আমার মেয়ের অনুভূতিটা বোঝার জন্য।’
সিগারেটে শেষ টান দিয়ে অবশিষ্ট অংশটুকু বেলকনি থেকে বাইরে ফেলে দেয় সাদিদ। তুলিকার কথার উত্তরে তাচ্ছিল্য হাসে সে। তুলিকার দিকে ফিরে তার চোখে চোখহ রেখে বলল,,
__‘তিয়ানা আমার আর তিয়াসার মেয়ে তোমার নয়। তাছাড়া আমি তুমি নই। যে, কারো অনুভূতি বুঝবো না তার অনুভূতির মূল্যায়ন করবো না। নিজে যা ঠিক মনে করবো তাই’ই করবো। ওপাশের মানুষটা কি করে বাঁঁচবে সেদিকে লক্ষ্য রাখবো না। তোমার মতো স্বার্থপর নই আমি।’

আমার আদরিনী পর্ব ১৩+১৪

সাদিদের প্রথম বলা বাক্য শোনা মাত্র বুকের ভিতর ‘খা’‘খা’ করে ওঠে তুলিকার। তবে পরে বলা বাক্য শুনে হাসে সে। হেসে বলল,,
__‘এমন তো না! তুমি অসুখি ছিলে। ভালো’ই তো ছিলে আমার বোনকে নিয়ে। তাহলে, বাঁচবে না কেন? দু’টো সন্তানও জন্ম দিয়েছো। তারা তো আর আকাশ থেকে পরেনি। নাকি! তুমি চিনতে’ই পারোনি তুলিকা নয় তিয়াসার সাথে ঘর করছো। এই তোমার ভালোবাসা? ‘
তুলিকার এহনো কোথায় রাগ ওঠে সাদিদের। তুলিকার দুই কাঁধ শক্ত করে চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে হিসহিসিয়ে বলল,,
__‘আমার ভালোবাসা নিয়ে অন্তত তোমার মুখ থেকে কোনো ব্যাখা শুনতে চাই না। তুমি এবং তোমার বোন দু’জনেই বেইমান, সুবিধাবাদী, স্বার্থপর যারা শুধু আমাকে ব্যাবহার করে গিয়েছো। আই হেইট বোথ অফ ইউ।’
শান্ত কঠোর কন্ঠে উত্তর দেয় তুলিকা,,
__‘যার সাথে এক যুগ (১২ বছর) ঘর করেছো, সংসার করেছো যে তোমার সন্তানদের মা তার ব্যাপারে এসব বলতে বাঁধছে না।’
চেঁচিয়ে ওঠে সাদিদ। বলল,,

__‘না বাঁধছে না। তুমি ঠকিয়েছো আমাকে তোমার বোনও ঠকিয়েছে এবং তা খুব বাজে ভাবে। ও আমার ড্রাংক অবস্থায় সুযোগ নিয়েছে সেটাও ঠকানো।”
তুলিকাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দেয় সাদিদ। ক্রুর হেসে বলল সে,,
__‘অবশ্য! ঠকানো তো তোমাদের রক্তে আছে। বাবা যেমন সন্তান তো তেমন’ই হবে ‘
কথা শেষে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় সাদিদ। তবে বেলকনিতে মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তুলিকা। সাদিদের শেষের বলা বাক্য গুলো তার কানে বারবার প্রতিধ্বনি হচ্ছে।’
‘‘মেঘালয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে তিয়ানা। মানুষটাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে সে। আলতো করে মেঘালয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে। ঘুমন্ত মেঘালয়কে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। তিয়ানার ইচ্ছে করছে মেঘালয়ের লাল টকটকে নাকটা কামড়ে দিতে। এখনোও লাল হয়ে আছে। মেঘালয়ের লুচু নাকটাও হয়তো এতো দিনে জেনে গেছে তিয়ানার তার উপর বড়’ই দূর্বলতা।”

আমার আদরিনী পর্ব ১৭+১৮