আমার আদরিনী পর্ব ১৩+১৪

আমার আদরিনী পর্ব ১৩+১৪
আশুথিনী হাওলাদার

__‘মেঘ ভাইয়া পাপা’
সাদিদের মুখের হাসি থেমে গিয়ে থমথমে ভাব চলে আসে। কিছু না বলে ড্রাইভ করতে থাকে সে। তিয়ানা বাবার থমথমে ভাব দেখে ঘাবড়ে যায়। ভয় হচ্ছে তার কি এরপর কি হবে? চিন্তা হয় তিয়ানার পাপ্পা কে বলে সে ভুল করলো না তো? কিন্তু সে তো সব সিক্রেট সব গুরুত্বপূর্ণ কথা পাপার সাথে শেয়ার করে। তাছাড়া এটা তো তার লাইফের সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিক্রেট। দাত দিয়ে নখ খোটে তিয়ানা এটা তার বদ অভ্যাস বলা চলে।
কোনো বিষয় চিন্তা হলে নখ খাওয়া তার অভ্যাস। এবং এই অভ্যেসের জন্য তাকে তুলিকা ও মেঘালয়ের অনেক মার খেতে হয়েছে ছোটো বেলায়। যেখানে তার ভাইয়া পাপা তাকে কিছু বলত না। সেখানে মেঘালয় সবসময় এক অদৃশ্য অধিকার খাটায় তার উপর। ভয়ে পেটে গুরুমগুরুম করছে তিয়ানার। ভয়ে ভয়ে ডাকলো,,

__‘পাপা’
সাদিদ কোনো উত্তর না দিয়ে ড্রাইভ করতে ব্যাস্ত। নিরাশ হয় তিয়ানা। অসহয় কন্ঠে বলল,,
__‘আই আম সরি পাপা।”
__‘আমি রিয়েলাইজ করছি এটা খুব খারাপ হয়েছে। কিন্তু! কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি কি করে আমার মনে মেঘ ভাইয়াকে নিয়ে এমন ফিলিংস আসছে। আমি তো তাকে এক প্রকার সহ্য করতে পারতাম না পাপা। সেখানে ‘ভালোবেসে’ ফেলেটা আমার কাছে খুব আনস্পেকটেড আর লজ্জাকর ব্যাপার। আমি নিজে খুব হীনমন্যতায় ভুগছি পাপা। এখন যদি তুমিও,,,
থেমে যায় তিয়ানা। গলা আঁটকে আসে তার। কান্নারা গলা ভেদ করে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। কান্না আটকানোর জন্য ঢোক গিলে তিয়ানা। গলা জ্বলে উঠে তার। চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরে নিজেকে অসহয় লাগছে তার। এমন আজব ফিলিংস কেন হলো তার? তাও মেঘলয়ের জন্য। আরও তো কত ছেলে ছিল হ্যান্ডসাম, ব্রিলিয়ান্ট কই? তাদের জন্য তো কোনো ফিলিংস আসেনি তার মনে। মেঘালয়ের বেলা’ই কেন হলো এটা? খুব কি ক্ষতি হতো? যদি এটা না হতো। আজ তার পাপা যখন মেনে নিতে পারেনি। মেঘালয় কখনো জানলেও মেনে নেবে না। উলটো তাকে মেরে দেবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এক সপ্তাহ যাবত পরিবারের কারো সাথে কথা বলা বাদ দিয়েছে তিয়ানা। বিশেষ করে মেঘালয়ের সাথে কথা পর্যন্ত বলে না সে এবং তার মুখোমুখিও হয় না। সেই ঘটনার পর সাদিদ তাকে আর কিছু বলেনি। বরং তার সাথে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে। যা তিয়ানার জন্য খুব দুঃখজনক। পাপা তার বেস্ট ফ্রেন্ড সেখানে যদি পাপাই তার সাথে কথা না বলে। তবে তার বাড়িতে থেকে কি লাভ? তাই বাড়িতেও খুব একটা থাকে না সে। দিনের বেশির ভাগ সময় ভার্সিটিতে কাঁটায় সে। ভার্সিটির পাশের লেকে পা ডুবিয়ে বসে আছে তিয়ানা। আজকাল মন ভালো থাকে না তার। সব ছেড়েছুড়ে অন্য কোথাও একটা চলে যেতে ইচ্ছে করছে। কষ্ট হয় দুঃখ হয় তার। পাপাও বুঝলো না তাকে। তার অনুভূতি কে। সে কখনো মুখ ফুটে মেঘালয়কে তার অনুভূতির কথা জানাতে পারবে না। কারণ, সে জানে মেঘলয় তাকে শুধু এবং শুধু মাত্র বোন ভাবে। বুকের ভিতরে যন্ত্রনা হয় তিয়ানার। মনে হচ্ছে বুক পুড়ে যাচ্ছে একটু পানি দরকার সেখানে। কেঁদে দেয় তিয়ানা হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি পেয়ে তাঁকায়। অবন্তীকে পাশে বসতে দেখে কপাল কুচকায় তিয়ানা। তবে কিছু না বলে লেকের পানি দেখতে থাকে। তিয়ানা রাগ না করায় অবাক হয় অবন্তী। একটু বেশি’ই অবাক হয়। সেই ঘটনার পর তিয়ানা তাকে সহ্য করতে পারতো না। আজ পাশে বসায় তিয়ানা তাকে কিছু বলল না। অবাক করা বিষয়। তিয়ানাকে ভালো করে লক্ষ করে অবন্তী চোখমুখ ফুলে গেছে কেমন। গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অবন্তী। তিয়ানাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

__‘তোর পাশে বসলাম। তার জন্য আমাকে বকবি না?’
__‘না’ ( গম্ভীর স্বরে উত্তর দেয় তিয়ানা)
__‘তোর মন খারাপ? ‘
__‘তেমন কিছু না।’
মৃদু হাসে অবন্তী। হেসে বলল,
__‘আমার কাছ থেকে লুকাচ্ছিস? তোর মুখ দেখেই আমি তোর মনের কথা বুঝতে পারি।’
হালকা হাসে তিয়ানা। অবন্তীর দিকে ফিরে তার চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে,,
__‘একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি?’
__‘কি? বল?’
__‘আমার সাথে ওমনটা করছিলি কেন? আমার সাথে বেইমানি করছিস কেন? তুই তো আমার বন্ধু ছিলি। কী করে পারলি সেটা করতে?
চোখের কোনে জল আসে অবন্তীর। গলা ধরে আসে তার। নিজেকে সামলে বলল,
__‘আমি ভাবতে পারিনি তিনু এমন কিছু হবে। বিশ্বাস কর আমি তোর সাথে বেইমানি করিনি। তুই তো আমার আমার বেস্টফ্রেন্ড। আমার জান! তোর সাথে কি করে আমি বেইমানি করবো। বল? আমি তা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না কখনো।’
তিন বছর পর আজ তিয়ানার খুব ইচ্ছে করলো। অবন্তীর থেকে আসল কারন জানতে। একটা সুযোগ তাকে দিতে।
চোখের কোণের জল মুছে বলল অবন্তী,,

__‘তুই তো জানিস শুভ ভাইয়া আমার মামাতো ভাই। সে যখন বলল, তোকে ভালোবেসে । সেটা তোকে জানাতে চায়। প্রথমে আমি তার কথা গুরুত্ব দেয়নি কিন্তু শুভ ভাইয়া প্রায় আমাদের বাড়িতে আসত। আমাকে অনেক রিকুয়েষ্ট করতো। আমি ভাবতাম ভাইয়া হয়তো ফ্লাটিং করছে কিন্তু ভাইয়া সিরিয়াস ছিল এমন কি তোর জন্য সুইসাইড অব্দি করতে যাচ্ছিল। ছোটো ছিলাম বুঝতে পারিনি সেটা একটা চাল ছিল। ভাইয়ার কথা মেনে নেই। তবে শর্ত ছিল তুই যদি ভাইয়া প্রপোজ এক্সপেট না করিস তাহলে আমার কিছু করার নেই। ভাইয়া একটা হোটেলে রুম বুকিং করে। রুমটাকে সাজিয়ে নাকি কেক কেঁটে তোকে সারপ্রাইজ দেবে। তাই তোকে ওই হোটেল নিয়ে এসেছিলাম। তোকে রুমে দিয়ে আসার পর আমার ফোনে কল আসে আমার ভাইয়া নাকি এক্সিডেন্ট করছে। আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। ভাইয়ার এক্সিডেন্টের কথা শুনে আমি ছুটে হস্পিটালে চলে যাই। আমি কখনো বুঝতে পারিনি শুভ ভাইয়া এতো নিচে নামবে। সেদিন তোর কাছে ফেরার আমার কোনো উপায় ছিল না তিনু। সেদিন হস্পিটালে আমি পৌঁছানোর আগে আমার ভাইয়া মারা গিয়েছিল।”

কথা শেষ করে কাঁদতে থাকে অবন্তী। সব শুনে নির্বাক হয়ে যায় তিয়ানা।
সেদিনের কথা ভাবলে আজও ভয়ে কেঁপে ওঠে তিয়ানা। অবন্তী তাকে রুমে শুভর সাথে একা রেখে যাওয়ার পর আর ফেরেনি। সে যখন শুভর করা প্রপোজ এক্সেপ্ট না করে তাকে ফিরয়ে দেয়। তখন সুযোগ পেয়ে শুভ তাকে মলেস্ট করার চেষ্টা করে। ঠিক সময় তিলাত চলে আসায় সে যাত্রায় তিয়ামা বেঁচে যায়। তিলাতের ফ্রেন্ড নাকি তিয়ানাকে হোটেলে যেতে দেখে তাকে জানিয়েছিল। সেদিন শুভকে মেরে প্রায় আধমরা করে ফেলেছিল তিলাত। সেদিনের পর ভয়ে একটা ট্রমার মধ্যে চলে যায় তিয়ানা। সতেরো বছর বয়সে ওমন একটা বাজে ঘটনা তার কিশোরী মনে খুব বাজে ভাবে দাগ কাটে। তবে সেসময়ে তিলাত তাকে আগলে নেয়। এমনকি আজ অব্দি ওই ঘটনার কথা কেউ জানতে পারেনি। তিলাত কাউকে জানতে দেয়নি আর না তিয়ানাকে জানাতে দিয়েছে।
অবন্তীকে কিছু না বলে উঠে চলে যায় তিয়ানা। তিয়ানার যাওয়ার দিকে ব্যাথিত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ভারি শ্বাস ফেলে অবন্তী।
রাত আটটা প্রায়। সারাদিন বাইরে কাঁটিয়ে বাড়ি ফিরছে তিয়ানা। বাইক পার্ক করে বাড়িতে ঢুকে দেখে বাড়ি বিয়ের বাড়ির মতো সাজানো। বেশ অবাক হয় তিয়ানা। ড্রয়িং রুমে গিয়ে বাড়ির সবাইকে এক জোট হয়ে বসে থাকতে দেখে আরও একবার অবাক হয় তিয়ানা। বিস্মিত কন্ঠে মা’কে প্রশ্ন করলো,,

__‘আজ কি মাম্মাম?’
__‘তোমার বিয়ে’
বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করে তিয়ানা,
__‘আজ কি মাম্মাম?
__‘তোমার বিয়ে।’
__‘হোয়াট?’
বিস্মিত হয় তিয়ানা। তার বিয়ে সে নিজে’ই জানে না। দাতে দাত চেপে রাগ নিয়ে বলল,
__‘এসব মজার কোনো মানে হয় না পাপা। আমি আমার ঘরে যাচ্ছি। মাম্মাম আমাকে কেউ না ডাকবে না। একা থাকতে চাচ্ছি।’
কথা শেষ করে নিজ ঘরে দিকে যায় তিয়ানা। তার যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে তিলাত বলল,,
__‘আজ তোর বিয়ে এটা সত্যি তিনু।’
থেমে যায় তিয়ানা। রাগে শরীর জ্বলে ওঠে তার। রাত বিরাতে এসব কি ধরনের ফাইজলামি হচ্ছে তার সাথে।পাশে থাকা ফুলদানির টপ ফেলে দেয় রাগে। চেঁচিয়ে বলল,,
__‘হচ্ছে কি এসব? আমি এসব নিতে পারছি না ভাইয়া। কীসের বিয়ে? কার সাথে বিয়ে? আমি সবে অনার্স সেকেন্ড ইয়ায়ের স্টুডেন্ট আমার পুরু লাইফ পরে আছে। আমার একটা ক্যারিয়ার আছে।’
গম্ভীর মুখে বলল সাদিদ,
__‘বিয়ের পরও ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা যাবে।’

তিয়ানার মাথায় দ্বিগুণ রাগ উঠে যায়। দরজার অন্য পাশে থাকা ফুলদানি তুলেও ছুড়ে মারে ফ্লোরে। তবে বাসার সবাই তাতে নিশ্চুপ যেন কিছু হয়নি। এমন ভাব বিরাজমান সবার মধ্যে। তাতে দ্বিগুন রাগ বেড়ে যায় তিয়ানার। রেগে বলল,
__‘হচ্ছে কি এসব? মাম্মিম হচ্ছে কি এটা? (মৌমিতাকে উদ্দেশ্য করে)
__‘বাবার কথায় রাজি হয়ে যাও তিয়ানা। তোমার ভালোর জন্য বলছেন তিনি।’
রাগে কাঁন্না চলে আসে তিয়ানার সবাই তাকে একই কথা বলে যাচ্ছে। আসেপাশে তাঁকায় তিয়ানা। না মেঘালয়ের দেখা নেই। এখন কি করবে সে? নিজের পাপার উপর রাগ হয় তিয়ানর। যেখানে সে নিজের মনের কথা পাপা কে জানালো। জেনেও কেন এমনটা করছে পাপা। অসহায় চোখে অভীকের দিকে চেয়ে বলল,
__‘ পাপ্পি সবার মতো তুমিও বলবে মেনে নিতে? মাম্মিমকে যেখানে তার পড়াশুনা শেষের পর বিয়ে করেছো। সেখানে আমার সাথে কেন এসব হচ্ছে?
অভীক শান্ত কন্ঠে উত্তর দেয়,,
__‘যা হচ্ছে মেনে নাও। আমরা তোমার খারাপ চাই না। তুমি খুশি হবে, সুখি হবে।’
অভীকের উত্তরে আশাহত হয় তিয়ানা। তুলিকার দিকে চেয়ে বলল,
__‘আম্মু এখন তুমিও বলবে যা হচ্ছে মেনে নিতে?’
উত্তরের আশা না করে বলল তিয়ানা,,

__‘ওকে ফাইন আমিও বলছি আমি কোনো বিয়ে টিয়ে করবো না। এটা আমার লাইফ। আর আমার লাইফ আমি কীভাবে লিড করবো সম্পুর্ন আমার ব্যাপার। আমি এডাল্ট পারসন। দরকার হলে আমি বাড়ি ছাড়বো। তাই বলছি এই কাজি টাজি বিদায় করো।’
নিজের ঘরে চলে যায় তিয়ানা। সাদিদ তার উদ্দেশ্য করে বলল,
__‘তাহলে আমিও তোমায় ত্যাজ্য সন্তান করবো। আমি তাদের কথা দিয়েছি। সাদিদ রহমান নিজের কথার খেলাপ করে না।’
থমকে যায় তিয়ানা মাথা ঘুরে উঠে তার। সামন্য এক বিয়ের জন্য পাপা তাকে ত্যাজ্য সন্তান করার কথা অব্দি বলল। মুখ ফুটে টু শব্দ বের করে না তিয়ানা। মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। পিছন ফিরেও সাদিদকে দেখে না। সাদিদ ঠান্ডা স্বরে তুলিকা বলল,
__‘তিয়ানা কে রেডি করে নিয়ে এসো।’
‘নিজ ঘরে ফুলে সাজানো বিছানায় বসে আছে তিয়ানা। কিছুক্ষণ আগে তার বিয়ে হয়েছে। কে সে? কী নাম কিচ্ছু জানে না সে। কাজি তখন বললেও কানে নেয়নি সে। তার চোখ শুধু মেঘালয়কে খুজে বেড়িয়েছে। পাশে বসা লোকটাকে দেখার বিন্দু মাত্র আগ্রহ বা ইচ্ছে তার জাগেনি। যেখানে সে নিজের পছন্দে সব কিছু করেছে তার লাইফের। সেখানে নিজের লাইফ পার্টনার সে নিজে বেছে নিতে পারছে না। কারো সাথে এক বিন্দু কথাও সে বলেনি। শুধু একটা শব্দ ‘কবুল’ বলা ছাড়া।
দরজা খোলার শব্দে কেঁপে ওঠে তিয়ানা। তবে নিজের অবস্থান পাল্টায় না। আর না চোখহ তুলে মানুষটিকে দেখে। দেখে কি হবে? যাকে চেনে না জানে না কি করে তাকে মেনে নেবে সে মেঘালয়কে ভুলে। কান্না পায় তিয়ানার।

__‘তোরা বাপ-মেয়ে মিলে আমার বাপকে ফুসলিয়ে আমার বিরুদ্ধে শরজন্তটা করলি কি করে?’
কষ্ট মরে যাই মরে যাই অবস্থা তিয়ানার। এরমধ্যে হঠাৎ মেঘালয়ের কন্ঠস্বর শুনে বেকুব হয়ে যায় তিয়ানা। চোখ তুলে সামনের লোকটিকে দেখে মুখ ‘হা’ হয়ে যায় তিয়ানার। মেঘালয় তার দিকে বাম ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে তাঁকিয়ে। কয়েকবার চোখ পিটপিট করে তাকায় তিয়ানা। মেঘালয়ের বিরহে ভুল দেখছে না তো। ভালো করে চোখ ডলে তাঁকিয়ে দেখে ভুল না সয়ং মেঘালয় তার সম্মুখে বিয়ের শেরওয়ানি পরে মাথা পাগড়ি পরে দাঁড়ানো। বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় তিয়ানা।
মেঘালয় মাথার পাগড়ি খুলে বিছানায় ছুড়ে মেরে বলল,
__‘ট্যাচু হয়ে আছিস কেন? আমায় জীবনে দেখিসনি? নাকি আমার নতুন রুপ বের হইছে?’
থতমত খেয়ে যায় তিয়ানা। আমতা আমতা করে বলল,
__‘তুমি সত্যি মেঘভাইয়া?’
__‘নাহ! তোর বর।’
__‘আমি কি স্বপ্নে দেখছি ভাইয়া?’
মেঘালয় তিয়ানার কপালে টোক্কা দিয়ে বলল,
__‘শুধু স্বপ্ন না দিবা স্বপ্ন দেখছিস।’
হতবিহ্বল হয়ে যায় তিয়ানা। কি হচ্ছে এসব? কথা শেষ করে বিছানায় আরাম করে বসে মেঘালয়। বিছানার উপর পা তুলে পায়ের কেডস খুলতে থাকে সে। ততক্ষনে তিয়ানা বিস্মিত ভাব কাঁটিয়ে হতবম্ব কন্ঠে চেচিয়ে বলল,
__‘ভাইয়া আপনি আমার ঘরে ক্যান? আমার জামাই কই?’
তিয়ানার চিৎকারে বিরক্ত হয় মেঘালয়। বিছানায় সোজা টানটান হয়ে শুয়ে বলল,
__‘তোর সামনে।’
আহমক হয়ে যায় তিয়ানা। বলল,
__‘মানে?’

আমার আদরিনী পর্ব ১১+১২

__‘বলদ! আমায় দেখে বর বর লাগে না? নাকি বরের রোল প্লে করতে হবে? বাসর ঘরে রোম্যান্স করে।’
থতমত খেয়ে যায় তিয়ানা। হতবাক হয়ে বলল,,
__‘ভাইয়া আপনি আমার জামাই?’
ডান হাতের তালু দিয়ে কপাল টাকায় মেঘালয়। বলল,
__‘এই জন্যই তোকে আমি বিয়ে করতে চায়নি। বউ যদি কথায় কথায় ‘ভাইয়া ভাইয়া’ করে তাহলে বউ বউ ফিলিংস না পেয়ে বোন বোন ফিলিংস পেতে হবে। আমার বোন না বউ চাই। আমার বাপ যে ক্যান বুঝলো না।’
মেঘালয়ের বকা আমলে নেয় না তিয়ানা। সে মুখে হাত দিয়ে হতবাক হয়ে মেঘালয়ের দিকে চেয়ে আছে। কি থেকে কি হয়ে গেল মাথায় ঢুকছে না তার। মেঘালয়ের সাথে’ই যখন তার বিয়ে তাকে কেন জানানো হয়নি?
মেঘালয়ে তার দিকে তিয়ানাকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে দেখে তিয়ানার মাথায় থাপ্পড় মেরে বলল,,
__‘এই উজবুক’
রাগ হয় তিয়ানার রেগে বলল,
__‘ভাইয়ায়ায়ায়া’
মেঘালয় আবার মারে তাকে। চোখহ পাঁকিয়ে তাঁকায় তিয়ানা। তাকে পাত্তা না দিয়ে বলল মেঘালয়,,
__‘যতবার ভাইয়া ডাকবি ততোবার মার খাবি। আমি নিজের বউয়ের মুখ থেকে ভাইয়া ডাক শুনতে পারবো না। এতো ভদ্রলোক আমি নই।
মেঘালয়ের মুখ থেকে ‘বউ’ শব্দটা শুনে শিউরে ওঠে তিয়ানা। মেঘালয়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে আশেপাশে তাঁকায় হঠাৎ লজ্জা লাগছে তার। মেঘালয় শোয়া থেকে হালকা উঠে তিয়ানাকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,,

__‘তিনু তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস?’
মেঘালয়ের ঠোঁট কাঁটা প্রশ্নে লজ্জা উড়ে যায় তিয়ানার। মুখ কাচুমাচু করে ফেলে সে। মেঘালয় বলল,
__‘এভাবে বসে না থেকে স্বামী সেবা কর। আমার পা টিপে দে তো।
দুঃখি কন্ঠে বলল মেঘালয়,,
__‘ কোনো দিন তো বোন হিসেবে এক গ্লাস পানি গড়িয়েও দিসনি। এখন কপালে কে আছে কে জানে? এখন তো বোন থেকে সোজা বউতে চলে গেছোস। তোরা বাপ-মেয়ে মিলে আমার বাপ কে নিশ্চয়ই কোনো কালো জাদু করে আমায় ফাসাইছোস।

আমার আদরিনী পর্ব ১৫+১৬