আমার আদরিনী পর্ব ১১+১২

আমার আদরিনী পর্ব ১১+১২
আশুথিনী হাওলাদার

মেঘালয় তিয়ানাকে ‘হা’ করে তার দিকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। ধুম করে নিজের হাত দু’টো মেয়েদের মতো করে শরীরে জড়িয়ে গা ঢাকার ট্রাই করে। আমতা আমতা করে বলল,,
__‘এএই এই অমন রাক্ষুসিদের মতো তাঁকাইয়া আছোস ক্যান? খাইয়া ফেলবিনি। বড় ভাই হই চোখ সরা। সরা চোখ! তোর দৃষ্টি তো ছেলেদের থেকেও তুখোড়। আমারে তো চোখহ দিয়ে’ই ধর্ষন করে ফেলবি। বদ মেয়ে!”
‘মেঘালয়ের এমন আচরনে হতভম্ব হয়ে যায় তিয়ানা। কি হচ্ছে বুঝতে পেরে। বিছানা থেকে তারাতাড়ি করে নেমে যায়। ঘুমের ঘোরে কোন ঘরে ঢুকেছে বুঝতে পারিনি সে। এক পলক মেঘালয়ের দিকে তাকায় তিয়ানা। মেঘালয় তখনও দু’হাত শরীরে জড়িয়ে রেখেছে৷ তিয়ানা বলল,,

__‘তুমি মেয়েদের মতো ওরকম গায়ে হাত পেঁচিয়ে রাখছো কেন? ভাইয়া! আমি মোটেও তোমার দিকে ‘হা’ করে তাঁকিয়ে ছিলাম না। ঘুম থেকে জেগে বুঝতে পারিনি কি হচ্ছে। আর আমি জানি তুমি ‘ভাইয়ায়ায়ায়ায়া’ তাই, নজর দেয়ার প্রশ্ন আসে না। আমার ভাইয়া নয় ‘সাইয়া’ আছে। ‘
‘কথা শেষ এক প্রকার দৌড়ে ঘর থেকে চলে যায় তিয়ানা। মেঘালয় শরীর থেকে হাত সরিয়ে বাম হাত কোমড়ে রেখে তিয়ানার যাওয়ার পথে ভ্রুকুটি করে তাকায়। তিয়ানা কি বলল? ‘সাইয়া’ আছে মানে? এই মেয়েকে তো সে দেখে নেবে।
ঘুমোনোর জন্য বিছানায় শোয় মেঘালয়। হুট করে একটা কথা মনে পরলো তার। তিয়ানা তাকে তুমি করে বলল না। অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি চলে আসে মেঘালয়ের।
‘নিজের ঘরে এসে দরজায় খিল আঁটকে দরজার সাথে লেগে দাঁড়ায় তিয়ানা। বড় বড় শ্বাস নেয় সে। আড় চোখে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বে দেখে সে। ফর্সা গাল দু’টো লজ্জায় লাল আভা ছড়িয়ে গেছে। কান থেকে কেমন গরম বের হচ্ছে। মেঘালয়কে ওভাবে দেখে তার ইচ্ছে করছিল জাপটে ধরে থাকতে। তারপর যা হয় দেখা যেতো। তার ইচ্ছে করছে ছূটে গিয়ে মেঘালয় কে জাপটে ধরে মেঘালয়ের সাথে মিশে যেতে। গলা শুকিয়ে যায় তার। কাঁপাকাঁপা হাতে পানি ঢেলে খায়। বুকের ভিতর ধড়ফড় ধড়ফড় করছে। বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে তিয়ানা। মেঘালয়ের জীম করা শার্টলেস সিক্স প্যাক বডি তার সামনে দৃশ্যমান হয়। লজ্জায় কেঁপে উঠে চাদর খামছে ধরে সে।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অবন্তীকে বাড়ি পৌছে দিয়ে গাড়তে এসে বসে তিলাত। বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় ফুটপাতে বসে একটা মেয়েকে কাঁদতে দেখে অবাক হয় তিলাত। এত রাতে এক মেয়ে এভাবে রাস্তায় বসে কাঁদছে। কৌতুহলে গাড়ি থামিয়ে মেয়েটার কাছে যায় তিলাত। কোনো বিপদের পরলো কিনা। তবে কাছে গিয়ে অবন্তীকে দেখে বেশ বিস্মিত সে। বলল,,
__‘আরে অবন্তী না। তুমি এখানে এভাবে? কাঁদছো কেন?’
হঠাৎ কারো কন্ঠস্বরে শুনে ভয়ে পেয়ে যায় অবন্তী। ভয়ে আঁতকে উঠে পাশে তাঁকায়। তিলাত কে দেখে শান্ত হয় অবন্তী। অবন্তীর ভয়টা বুঝতে পেরে মৃদু হাদে তিলাত। বলল,,
__‘ আমাকে চিনতে পারছো? আমি তিয়ানা ভাই।’
__‘জি ভাইয়া।’ (মৃদু স্বরে উত্তর দেয় অবন্তী)
__‘তুমি এত রাতে এখানে কি করছো?’
__‘মায়ের ওষুধ শেষ হয়ে গেছিলো তাই নিতে আসছি?
দূরত্ব বোজায় রেখে অবন্তীর পাশে ফুটপাতে বসে তিলাত। বলল,
__‘তাই বলে রাত ১২.৩০ ঘর থেকে বের হবে? যদি, কোনো বিপদ হয় তখন?’
‘বিস্মিত হয় অবন্তী । অবাক হয়ে তিলাতের দিকে তাঁকায় সে। এত রাত কখন হলো? ‘
অবন্তীর দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে হালকা হাসে তিলাত। বলল,,
__‘সময় দেখোনি হয়তো। কিমতু এভাবে কাঁদছিলে কেন?’
হাসার চেষ্টা করে অবন্তী বলল,,
__‘তেমন কিছু না ভাইয়া।’

‘অবন্তীর চোখে চোখ মিলায় তিলাত। অবন্তীর চোখের কোনে জল লেগে আছে। কাঁন্নারত মুখে মেকি হাসি। অন্যরকম সুন্দর লাগছে অবন্তীকে। বুকের ভিতর কেমন ধক করে কেঁপে উঠলো তিলাতের। অদ্ভুত অনুভূতিতে ঘিরে ধরে তাকে। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হয় তার। তৎক্ষনাৎ অবন্তীর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আশেপাশে দেখে সে। জ্বীবা ঠোঁট ভিজিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় তিলাত। ভিতরের অনুভূতি ডাবিয়ে রেখে বলল,,
__‘চলো তোমাকে পৌছে দেই। ‘
উঠে দাঁড়ায় অবন্তী হালকা হেসে বলল,
__‘তার দরকার হবে না ভাইয়া। আমি চলে যেতে পারবো। ‘
‘অবন্তীর তাকে ভাইয়া সম্মোধনে হুট করে তার ভিতরটা তেতো হয় যায়। মাথা গরম হয়ে যায়। নিজের এমন মনোভাব নিজেই অবাক হয় তিলাত। নিজের তেতো ভাবটা সরিয়ে বলল,,
__‘তোমাদের বাসা তো গলির অনেক ভিতরে। চলো আমি পৌঁছে দিচ্ছি। ‘

‘অবন্তী কথা বাড়ায় না। মনে মনে তারো বেশ ভয় লাগছিল এতো রাত হয়ে যাওয়ায়। সে ভাবতেও পারিনি এতো রাত হয়ে যাবে।’
‘তুলিকা ঘরে আসতে না দেখে বার বার দরজা কাছে গিয়ে উকি দয়ে দেখছে সাদিদ। তুলিকা এখনো ঘরে আসছে না দেখে রাগ হয় সাদিদের। তুলিকা কি জানে না? সে সাদিদের আশেপাশে থাকলে সাদিদ এর ভালো লাগে। পরক্ষনে ভাবে, সে তো কখনো বলেনি তুলিকাকে। আবার নিজ মনেই বলে,, ‘এখন বলেনি তাতে কি? আগে তো বলেছে। তুলিকার তো জানা যে তার উপস্থিতি সাদিদের ভালো লাগে। ছেলের উপর রাগ হয় সাদিদের। বাপের প্রেমে হিটলার হয়ে ঢুকছে। রাত এক’টা বাযে এখনো বাড়ি ফিরছে না। আর ছেকের চিন্তায় তার বউ তাকে ভুলে গেছে। মুখ ভার করে কতক্ষন কাউচে বসে থাকে সাদিদ। আবার উঠে হাটাহাটি করে বিছানায় বসছে। হাত ঘড়িতে টাইম দেখে বাইরে তাঁকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে, তুলিকা কি করছে? ছেলেমেয়েদের চিন্তায় তার বউ তাকে ভুলে যাচ্ছে। বাহ!
গাড়র হর্ন শব্দে এক প্রকার লাফিয়ে ওঠে সাদিদ। আজ ছেলের একটা হেস্তনেস্ত সে করবে। এমন হিটলার গিরি চলবে না তার বাড়িতে। দ্রুত হেটে বসার ঘরে যায়। তুলিকা দরজা খুলে পাশে দাঁড়ায়। তিলাত ভিতরে ঢুকে বাবার চুপসানো মুখের দিকে তাঁকিয়ে ভ্রুকুটি করে ফেলে। মা’কে ধরে বলল,,

__‘তুমি এখনো জেগে আছো কেন? আম্মু! ঘুমিয়ে যেতে আমার কাছে তো বাসার চাবি ছিল।”
ছেলেকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে যেতে যেতে বলল,,
__‘তোরা বাড়র বাইরে থাকলে আমার চিন্তা হয়। কেন বুজিস না? এতবার করর বলি বেশি রাত করবি না। কিন্তু কে শুনে কার কথা। ফ্রেস হয়ে আয় খাবার দিচ্ছি। ‘
তুলিকার কথায় তাল মিলিয়ে সাদিদ বলল,
__‘হ্যা একদম। আমার বাড়িতে এতো রাত করে ফেরস চলবে না। তাতে চাকরি গোল্লায় যাক। এমন হিটলার গিরি আমার সাথে চলবে না। ‘
তিলাত থতমত খেয়ে যায় আবার কথায়। বলল,,
__‘আমি আবার কি হিটলার গিরি করলাম আব্বু?’
গম্ভীর স্বরে উত্তর দেয় সাদিদ,,
__‘অনেক, যা রুমি বুঝববে না। যাও তারাতাড়ি খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো।’
গম্ভীর ভাবেই কথা শেষ নিজের ঘরে চলে যায় সাদিদ। তিলাত বাবার যাওয়ার পথে হাবলার মতো তাঁকিয়ে থাকে। তুলিকা মৃদু হাসে, সাদিদের কথার মানে সে বেশ বুঝতে পেরেছে। উপরে উপরে দেখাবে তাকে দেখতে পারে না, সহ্য হয় না। আবার উলটো তাকে ছাড়া কিছু বুঝেও না। হাসে তুলিকা প্রশান্তির হাসি।

__‘বিশ বছর পরও তোর এই রাগ এই জেদ মানা যাচ্ছে না সাদিদ। এখন ছেলে মেয়েরা বড় হয়েছে। এবার অন্তত সব ভুলে যা।’
‘ছুটির দিনে দুই পরিবার মিলে গেট টুগেদারের আয়োজন করা হয়েছে সে সুবাদে সবাই ‘চৌধুরী’ (মেঘালয়দের বাড়ি) বাড়িতে এসেছে। খাওয়া দাওয়া শেষে সাদিদ এবং অভীক ছাদে আসে। সাদিদ রাতের আকাশ দেখছিল। এই রাতের আকাশের মতো নিজের জীবনটাও অন্ধকারে ঢাকা তার। অভীককের বলা কথায়, আকাশের দিক থেকে ফিরে অভীকের দিকে তাঁকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে একপ্রকার রাগ নিয়ে বলল সাদিদ ,,,
__‘‘তোর মনে হয় আমি বেশি বেশি করছি? আমার রাগ জেদ কি জায়েজ না? সে কেন ফিরে এসেছে? আমি বলেছি? আমি কি তার হাতে পায়ে ধরেছি?
সাদিদের হঠাৎ রেগে যাওয়ায় হতবাক হয়ে যায় অভীক। ছাদের দরজার কাছে গিয়ে দেখে কেউ আসছে কিনা। দরজা চাপিয়ে সাদিদের কাছে এসে তার কাঁধে হাত দিয়ে বলল,,
__‘আস্তে বল। কেউ শুনে ফেলবে। ছেলে-মেয়েরা বড় হয়েছে ওরা জেনে যাবে।’
__‘জেনে গেলে জেনে যাবে। তিলাত, মেঘালয় তো জানেই বাকি তিয়ানা সেও জানুক। আমিও চাই সে জানুক। এত নাটক আমিও চাচ্ছি না। আমিও চাই এবার তিয়ানা জানুক ‘ও’ যাকে মা বলে জানে সে তার মা নয় মায়ের বোন। যে তার বাবা কে ঠকিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।’
অভীক কঠর কন্ঠে বলল,,

__‘কি বলছিস তুই? মাথা ঠিক আছে তোর? তিনু এটা জানলে, তুলি কতটা কষ্ট পাবে জানিস না? তিলাত তুলির জন্য তুলি নিজে কখনো বাচ্চা নেয়নি।
তাচ্ছিল্য হাসে সাদিদ। বলল,,
__‘তুই তুলির কষ্ট দেখলি। কিন্তু আমি!
থেমে যায় সাদিদ। গলা আতটকে যাচ্ছিল। নিজেকে সামলে বলল,
__ ‘তুলি তো আমার জন্য ফিরে আসেনি। ওর বোনের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে এসেছে। আমার সন্তান বলে তিলাত, তিয়ানাকে নিজের টেনে নেয়নি। বোনের সন্তানদের নিজের কাছে টেনে নিয়েছে। আজ যদি তুলি আমাকে না ঠকাতো তিলাত, তিয়ানা আমার আর তুলির সন্তান হতো। তিয়াসা আর আমার নয়।’
এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে হাপিয়ে যায় সাদিদ। পাশে থাকা বেঞ্চিতে বসে পরে। কষ্ট হয় তার। কিন্তু কাকে বুঝাবে? ভেবেছিল অভীক হয়ত বুঝবে কিন্তু অভিকও তুলির হয়ে কথা বলছে। কেউ এটা বুঝছে না যে তার কতটা কষ্ট হচ্ছে। যখন ভাবে তুলিকে কষ্ট দেবে না। সব ভুলে মেনে নেবে। ঠিক তখন তার মনে পরে, তুলি তার জন্য ফিরে আসেনি তিয়াসাকে দেয়া কথা রাখতে তার কাছে আছে। তার সন্তানদের মা হয়েছে। তিয়াসা যদি কখনো মারা না যেতো। তখন কি তুলি কখনো ফিরে আসতো? আসতো না। যে একবার বিশ্বাস ভাংগে সে বারবার ভাংগে। তাই সে তুলিকাকে বিশ্বাস ভাংগার দ্বিতীয় কোনো সুযোগ দেবে না।
‘সাদিদ শানন্ত তবে কঠোর স্বরে বলল,

_ ‘যার কাছে আমার মূল্য নেই। আমার ভালোবাসার মূল্য নেই তাকে ক্ষমা করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয় অভীক।’
নিজের কথা শেষ করে ছাদের দরজা খুলে ছাদ থেকে চলে যায় সাদিদ। অভীক সাদিদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সাদিদ নিজের দিক থেকে ঠিক। ভুল তো কিছু বলেনি সে। ‘
ড্রইংরুমে বসে সবাই গল্প করছিল। সাদিদ ছাদ থেকে নেমে একনজর সোফায় বসে থাকা তুলিকাকে দেখে তিলাতকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
__‘আমার কাজ পরে গেছে যেতে হবে। তুমি তোমার মা’কে নিয়ে ফিরো। আসছি’
কথা শেষ করে দাঁড়ায় না সাদিদ। তিয়ানা ডাইনিং টেবিলের উপর বসে আপেল খাচ্ছিল৷ সাদিদের হঠাৎ এভাবে যাওয়া দেখে মায়ের দিকে তাকায় সে। তুলিকা মেয়েকে ইশারায় বলল, বাবার পিছু পিছু যেতে। ‘ মায়ের ইশারা বুঝে তিয়ানা মুচকি হেসে চলে যায়।’
মেয়ের যাওয়ার দিকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুলিকা। মৌমিতা তার দিকে সন্দেহ নিয়ে দেখে। তুলিকার হাসার চেষ্টা করে বলল,,
__‘মেঘ কোথায় তাকে দেখছিনা?’
তুলিকা কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছে। আবার হয়ত কিছু একটা ঘটছে। বুঝেও না বোঝার ভান করে মৌমিতা। বুঝেও বা কি করবে? পরিস্থিতি তো চেইঞ্জ হবে নাহ। মৃদু হাসে মৌমিতা বলল,
__‘হস্পিটালে গিয়েছে। কল আসলো ইমারজেন্সি পেসেন্ট এসেছে৷’
তিলাত বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

__‘তোমরা কথা বলো। আমি আংকেলের কাছে যাচ্ছি। আর আম্মু যাওয়ার সময় হলে আমাকে ডাকবে। ‘
উপর নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে শায় দেয় তুলিকা।
সাদিদ ড্রাইভিং সীটে বসে গাড়ি স্টাট দেয়। তিয়ানা এসে ফ্রন্ট সীটে বসে সীট বেল্ট বাধঁতে বাধতে বলল,,
__‘হাই পাপা।’
মেয়েকে দেখে চোখ মুখের কঠোরভাব সরিয়ে নেয় সাদিদ। মুচকি হেসে বলল,,
__‘হ্যালো প্রিন্সেস’
__‘আমরা কই যাচ্ছি পাপা।’
__‘কোথায় যেতে চাচ্ছো?’
দুষ্ট হেসে বলল তিয়ানা,,
__ ‘লং ড্রাইভে গেলে মন্দ হয় না। অনেক দিন যাই না। ‘
সাদিদ ড্রাইভহ করতে করতে বলল,
__‘ওকে! মাই প্রিন্সেস।’
__‘একটা গল্প বলবে পাপা?
হাসে সাদিদ মেয়েকে একবার দেখে প্রফুল্ল হেসে বলল,,
__‘কী গল্প শুনতে চাও প্রিন্সেস?’
__‘তোমার আর মমের লাভস্টোরি,
মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায় সাদিদের। হাসার চেষটা করে বলল,,
__‘আমাদের তো,,
কথা কেরে নিয়ে বলল তিয়ানা,,
__‘আমি জানি তোমাদের রিলেশনশিপ ছিল পাপা’
__‘তুমি কি করে জানলে?
__”তোমাকে একটা সিক্রেট বলব পাপা? মম কে বলবে না।
হাসে সাদিদ। বলল,,

__‘বলব না।
চোখ ছোটো ছোটো করে হাত বাড়িয়ে প্রশ্ন করল তিয়ানা,
__‘পাক্কা’
সাদিদ হেসে মেয়ের হাইফাই করে বলল,,
__‘পাক্কা’
__‘মমের ডায়েরি পরে জেনেছি পাপা।’
__‘মমের ডায়েরি?’
উৎফুল্ল হয়ে বলল তিয়ানা,
__‘ইয়েস। ওখানে তোমার আর মমের ফার্স্ট মিট। ফার্স্ট ডেট সব লেখা আছে। ‘
মৃদু হাসে সাদিদ। তুলিকার ছোটো থেকেই স্বভাব ছিল স্পেশাল মুহূর্ত গুলো ডায়রিতে লিখে রাখার।
সাদিদ গাড়ি থামায়। দু’জনে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে গিয়ে বসে।
মজনু মিয়া তাদের দেখে হাসে পান খাওয়া লাল দাত দৃশ্যমান হয় তার। হেসে বলল,,
__‘স্যার যে অনেক দিন পর আসলেন। বয়েন বয়েন । তিয়ানা আম্মা ভালা আছো? ‘
দোকান লাগাওয়া কাঠের বেঞ্চিতে বসে তারা। তিয়ানা বসে এক গাল হেসে বলল,,
__‘ভালো চাচা আপনি ভালো আছেন?’
__‘ভালা আম্মা। অনেক দিন পর আইলা তোমরা।
সাদিদ বলল,

আমার আদরিনী পর্ব ৯+১০

__‘কাজের চাপ। প্রিন্সেসের পড়া শুনার জন্য আসা হয়নি। অনেক পর লং ড্রাইভে বের হলাম। আমরা বাপ বেটি।
বলে শব্দ করে হাসলো সাদিদ। সাথে যোগ দিলো দোকানদার।
প্রায় রাতেই ভালো না লাগলে সাদিদ তিয়ানাকে নিয়ে লং ড্রাইভে বের এবং তা তাদের দু’জনের সিক্রেট। তাদের দলে এ সময় অন্য কাউকে নেয়া হয়না। শুধু দু’জনে। তিয়ানা এই সময় তার পাপ্পাকে মনের সব কথা বলে।
মজনু মিয়ার সাথে অনেক্ষন গল্প করে তারা। মজনু মিয়া খুব মজার মানুষ তাকে তিয়ানা খুব পছিন্দের। গল্প শেষে চা খেয়ে গাড়িতে যায় তারা। তিয়ানা বলল,
__‘পাপা তোমাকে একটা সিক্রেট বলার ছিল।’
সাদিদ হেসে বলল,,
__‘এখনো বলোনি? নতুন সিক্রেট নাকি?
তিয়ানা মন খারাপ করে বলল,,
__‘হ্যা’
__‘কি?’
__‚পাপ্পা! ‘আই অ্যাম ইন লাভহ’
গাড়ি থামিয়ে ফেলে সাদিদ। হতবাক হয়ে যায় সে। বাবার থমথমে মুখ দেখে ভয় পেয়ে যায় তিয়ানা। শুকনোক ঢোক গিলে সে। সাদিদ মেয়েকে ভয় পেতে দেখে হাসে। হেসে বলল,,
__‘আমাকে কি হিটলার বাবা মনে হয়?’
তিয়ানার কথার মানে বুঝতে পেরে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।
সাদিদ হেসে হেসে বলল,
__‘তাহলে? মুখ কাঁদো কাঁদো বানিয়েছো কেন?
তিয়ানা কিছু বলে বাবার দিকে তাঁকিয়ে থাকে।
সাদিদ বলল,

__‘কার প্রেমে পরেছো?’
গলা শুকিয়ে যায় তিয়ানার এবার কি বলবে? সে মেঘালয় কে ভালোবাসে এটা জানলে পাপ্পা কেমন রিয়াক্ট করবে।
ছোটো ছোটো স্বরে বলল,,
__‘মেঘ ভাইয়া’ পাপা।
সাদিদের মুখের হাসি স্বরে গিয়ে থমথমে ভাব চলে আসে তার।

আমার আদরিনী পর্ব ১৩+১৪