আমার আদরিনী পর্ব ৯+১০

আমার আদরিনী পর্ব ৯+১০
আশুথিনী হাওলাদার

তিয়ানা বাড়িতে একা। বাড়িতে কেউ নেই, তুলিকা নিজের অফিসে সাদিদ, তিলাতও তাই। তিয়ানার ভার্সিটি বন্ধ বাইরেও তেমন কাজ নেই তাই আজকের দিনটা বাড়তে কাটাবে সে। আজকে বাড়িতে শুধু তার একার রাজত্ব । টিভিতে টাইটানিক মুভি চলছে যেটা তার বেশ কয়েক বার দেখা। তবুও টাইটানিকের প্রতি মোহ কাটেনি তার। সোফায় আরাম করে বসে হাতে চিপসের প্যাকেট নিয়ে টিভিতে সম্পুর্ন মনোযোগ তার। কিচ্ছুক্ষন পর’ই রোজ আর জ্যাকের কিসিং সিন টানটান মুহূর্ত। তখন’ই দরজা খোলার শব্দে উঠে দাঁড়ায় তিয়ানা। এমন সময় কে আসলো? ঘুড়ে মেইন ডোরে তাঁকিয়ে আঁতকে উঠে সে। ধপ করে কাউচে বসে পরে।

বাঁকা হাসে মেঘালয়। ব্লেজারে লেগে থাকা ময়লা বা হাত দিয়ে ঝাড়তে ঝাড়তে এটিটিউড নিয়ে কাউচের সামনে তিয়ানার সোজাসুজি এসে দাঁড়ায়। তিয়ানা ভিতু চোখে তাকে দেখছে। কাউচের দু’পাশে হাত রেখে তিয়ানার দিকে কিছুটা ঝুঁকে মেঘালয়। কাটকাট চোখে তার চোখে চোখ রাখে । মেঘালয়ের চোখ দু’টো ভূতের ফিল্মের দেখা দানবের মতো লাল টকটকে হয়ে আছে। সাথে ইয়া লম্বা নাকটা লাল টকটকে হয়ে আছে । নাকের দিকে চোখ পরতেই শুকনো ঢোক গিলে তিয়ানা। মেঘালয়ের নাকের উপর একটা তিল আছে। তিলের কারনে বেশি আকর্ষণীয় লাগছে তাকে। মেঘালয়ের লাল হয়ে যাওয়া নাকের প্রতি ভিশন দূর্বলতা তিয়ানার। ইচ্ছে করে কামড় বসিয়ে দিতে। কখনো সুযোগ আসলে ইচ্ছেটা পূরুন করবে সে শুকনো ঢোক গিলে তিয়ানা। বলল,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

__“মেঘ ভাইয়া আপনি?”
ধপ করে রাগ উঠে যায় মেঘালয়ের। ‘ভাই’? দেখা যাবে এই মেয়ে বিয়ের রাতে বাসর ঘরে উত্তেজিত মুহুর্তেও বলবে, মেঘ ভাইয়া আপনি কি করছেন?
ত্যাড়া ভাবে উত্তর দেয় মেঘালয়,,
__‘কেন? অন্য কাউকে আশা করছিলি। ”
আমতা আমতা করে বলল তিয়ানা,,
__‘আপঅনি ঘরে ঢুকলেন কি করে?
__‘ম্যাজিক”
মেঘালয়ের উত্তর পছন্দ হয় না তিয়ানার। ফোস করে নিশ্বাস ছেড়ে ভয়ে ভয়ে বলে,
__‘ভাইয়া একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ান। এভাবে ঝুঁকেএ
কথা শেষ করতে দেয়না মেঘালয়। আগের থেকেও আরও কিছুটা ঝুঁকে। ঝাঁঝ নিয়ে বলে,
__‘দূরে যাবো না। যদি আমার ইচ্ছে হয়, তো এখন তোর কোলে বসব আমি। ”
মেঘালয়ের কোলে বসার কথা শুনে হাত পা গুটিয়ে নেয় তিয়ানা। উপরে উপরে হাত পা গুটালেও মনে মনে বলল,,
__‘ বসুন না মেঘ ভাইয়া। আপনি আমার কোলেই বসুন। যখন ইচ্ছা বসুন। আমার কোল আপনার জন্য শুধু আপনার জন্য’ই সর্বক্ষণ উন্মুক্ত।’

তবে মুখে এ কথা বলার সাহস নেই তার। অবশ্য সাহস নেই বললে ভুল হবে। সাহস আছে কিন্তু বলে মেঘালয়ের শক্ত হাতের দামাং মার্কা চর খেতে চায় না সে। তাই নিজ ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখে সে। মুখে বলল,,
__‘আপনি কেন এসেছেন ভাইয়া? বাড়িতে কেউ নেই।
__‘তোর বাড়তে কেউ থাকলে আসা যাবে নাহলে আসা যাবে না। সেটা কোন আইনে লেখা আছে? শুনি!
__‘আমি তা বলিনি আপনি তো ভাইয়া বা আব্বু আম্মু বাসায় থাকলে আসেন তাই বলছি। ‘
তিয়ানার থেকে সরে এসে তার পাশে কাউচে বসে মেঘালয়। মেঘালয় বসাতে তিয়ানা তার থেকে কিছুটা সরে বসে। আড়চোখে দেখে বলল,
__‘তুই তো আছিস। অন্যরা না থাকলেও হবে। আমার দরকার তোকে।
কিছুটা অবক হয় তিয়ানা। তার কাছে মেঘ ভাইয়ের কাজ। অবাক করা বিষয় বটে। বলল,
__‘আমার কাছে কাজ। কি কাজ?
আচমকা তিয়ানার হাতের বাহু ধরে তাকে নিজের কিছুটা কাছে টেনে বলল,,
__‘তোর কাছেই তো কাজ। হঠাৎ কোন ভূতে ধরছে তোকে? হু? আমার সম্মুখে আসিস না কেন? তোকে কি আমি খেয়ে ফেলবো?
‘এই ভয়টাই পাচ্ছিলো তিয়ানা। তার সামনে না যাওয়ার কারন জানতে চেপে ধরবে তাকে। আর তাই হলো। এখন কি করবে সে? বলল,,

__আমার ইচ্ছে হইছে তাই আসি না।
তবে মনে মনে বলল,,
__আপনার সম্মুখে আসলে আমার পেট গুরুম গুরুম করে মেঘ ভাইয়া। বুকের ভিতর কেমন ধপাস ধপাস করে। আপনি যদি শুনে ফেলেন। আপনি যদি জেনে যান আমার এই পেট গুরুম গুরুম বুকের ভিতর ধপাস ধপাস শব্দের কারন । তখন কি হবে? সে ভয়েই তো আপনার সম্মুখে যাই না আমি।,
‘তিয়ানার কথা খুব একটা বিশ্বাস হয় না মেঘালয়ের। তুখড় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তিয়ানার মুখের দিকে। তিয়ানার খুব অসস্থি হয় মেঘালয়ের এমন দৃষ্টিতে। লজ্জা লাগে তার।
টাইটানিকে কিসিং সিন চালু হয়। টিভির দিকে তাকাতেই মেঘালয়ের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তিয়ানা ভয়ে লজ্জায় চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে সে। মেঘালয় তিয়ানার হাত থেকে টিভির রিমোট এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়ে টিভি বন্ধ করে। সস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে,,

__‘ছি! তিনু, তুই আজকাল এসব এডাল্ট মুভিও দেখিস।
লজ্জায় কান্না চলে আসে তিয়ানার। এখানে এডাল্টের কি দেখলো মেঘ ভাইয়া। টাইটানিক ফিল্মে একটু আক্টু ওসব ছাড়া আর কি এডাল্ট আছে? এমন ভাবে বলছে যেন সে এ জীবনে টাইটানিক দেখেনি। রাগে কান্না চলে আসে তিয়ানার। এবং সে মেঘলয়ের সামনে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দেয়। তিয়ানার হঠাৎ কান্নায় হতভম্ব হয়ে যায় মেঘালয়। তবে বেশিক্ষন তা আমলে নেয় না। আদরে বাদর হওয়া তিয়ানার কিছুটা অভ্যাস বলা চলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে যখন তখন কান্নায় ভেসে যাওয়া। তাই কিছু হয়নি এমন ভান ধরে কাউচ থেকে উঠে তিয়ানার ঘরে যায় মেঘালয়। এদিকে, তিয়ানা ইতোমধ্যে মনে মনে শ’খানেক গালি দিয়ে ফেলছে মেঘালয় নামক বদটাকে। তার জাত শঅত্রুকে। মাঝে মধ্যে খুব আফসোস হয় তার। এমন একটা জল্লাদের প্রেমে কেন সে পরলো। জল্লাদটা তো কখনো ভুলেও তার ভালবাসা বুঝবে না। তার চেয়ে পাশের বাসার লিটনদার প্রেমে পরতো সে। লিটদার সাথে প্রেম করতো সে, তাও ভালো ছিল। লিটনদা কত কত রোমান্টিক চিঠি লিখে তার জন্য। চিঠি লিখে কখনো নৌকা, কখনো প্লেন বানিয়ে তার বারান্দায় ছুরে মারে। কি রোমান্টিক লিটন দা সাথে হ্যান্ডুও। অবশ্য জল্লাদ মেঘ ভাইয়ার দেখে কম। তাতে কি সুন্দর তো। তবে লিটন দা হিন্দু যদি মুসলিম হতো তাহলে তাকে একটা চান্স দেয়া যেতো। বেচারা এখন তার বিরহে রোমান্টিকতা ছেড়ে বিরহের চিঠি লেখা শুরু করেছে। ভাবে তিয়ানা, এই বদটা তো জীবনে চিঠি কেন? রোমান্টিক কথা বলতে পারবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ তিয়ানার। কিনতু এসব ভেবে কি হবে? মন দিয়ে ফেলেছে শয়তান টাকে। ফোস করে শ্বাস ফেলে তিয়ানা।

টনক নড়ে তিয়ানার। মেঘালয় তার ঘরে গেছে। সর্বনাস! আজ গেল, সব গেল। দৌড়ে নিজের ঘরে যায় তিয়ানা। তবে শেষ রক্ষা হয় না। লিটনদার দেয়া প্লেন চিঠি মেঘালয়ের হাতে বিচরণ করছে এখন। বেশ মনযোগ সহকারে গম্ভীর ভাবে প্লেন টাকে উলটে পালটে দেখছে মেঘালয়। তিয়ানার দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে দাত দিয়ে নখ খুটে যাচ্ছে আর মনে মনে দোয়া করছে যাই হয়ে যাক মেঘ ভাইয়া যেন চিঠিটা না পরে। কিন্তু তার সব দোয়াতে এক বালতি ঠান্ডা কনকনে পানি ঢেলে মেঘালয় খুব যত্ন নিয়ে প্লেনটা খুলে। হালকা শব্দ করে চিঠিটা পড়া শুরু করলো।
‘ও তিনু ও তিনু ‘
‘তুমি কেন বোঝো না ‘
‘তোমার বিরহে মরছি তিনু’
‘তুমি কেন দেখছো না’
‘কেন ভালবাসছো না’
‘ও তিনু রে ও তিনু রে ‘
‘কেন বোঝা না’
‘আমার তিনুরে’
কিছুক্ষন আগে প্রসংশা করা লিটনদা কে খুব বিচ্ছিরি একটা গালি দেয় তিয়ানা। এমন বিচ্ছিরি একটা চিঠি লেখার জন্য। এবং সেটা মেঘালয়ের হাতে’ই পরতে হলো। নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে তার।
চিঠি পড়া শেষে কপাল কুচকে ফেলে মেঘালয়। তিয়ানার দিকে ফিরে গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করল,,

__‘এটা কি? ‘
তিয়ানা ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে চুপসানো মুখে দরজার সাথে লেগে দাঁড়ায়। বাম ভ্রু কুচকে ফেলে মেঘালয়। আগের থেকে কঠর আর গম্ভীর স্বরে ধমকে জিজ্ঞেস করলো ,,
__‘এটা কি? জিজ্ঞেস করছি না? এটা কি?
ভয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে তিয়ানা। কথা বলার চেষ্টা করছে সে কিন্তু স্বর ভেজে আছে ভয়ে বের হচ্ছে না তো। তাতে সে কি করবে? তার কি দোষ? তিয়ানাকে ফুপিয়ে উঠতে দেখে চোখ গরম করে তার দিকে তাঁকায় মেঘালয়। মেঘালয়ের দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে তিয়ানা। কাচুমাচু কন্ঠে বলল,,
__‘লিটন দা!
চোখ মুখ কুচকে ফেলে মেঘালয়। বলল,,
__‘লিটন দা কি?
__‘আমাকে লিটন দা এটা দিয়েছে।’
তিয়ানার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে হাতে থাকা কাগজের কে একবার দেখে আক্রোশ নিয়ে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে কাগজটাকে। অসয় চোখে চেয়ে দেখে তিয়ানা। তার মনে হচ্ছে, মেঘালয়ের কাগজটাকে না লিটনদাকে তার হাতে পিষ্ট করে ফেলছে। দুঃখ হয় তিয়ানার। ভারি দুঃখ হয় লিটনদার জন্য। এত সাধ করে ভালবেসে চিঠি লিখলো তার জন্য। সেই চিঠির অন্তিম যাত্রা দেখে তার দুঃখে কান্না আসছে। তিয়ানাকে এক পলক দেখে পায়ে ধপধপ আওয়াজ ফেলে বেলকনিতে গিয়ে লিটনদার ঘর সোজা ছুড়ে ফেলে তার দিকে অগ্নি দৃষ্টি ফেলে বেরিয়ে চলে যায় মেঘালয়। শুধু তার ঘর না বাড়ি থেকেও।

‘সেদিনের পরের দিন’ই তিয়ানার ঘরে বেলকনিতে ইয়া বড় পর্দা টেনে দেয় মেঘালয়। তিয়ানা দুঃখি মনে মুখ ভার ভার করে সবটা শুধু দেখলো। তার চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া করনীয় কিছু ছিল না। মেঘালয় যা বলবে সেটাই মানা হবে। অন্তত তার ব্যাপারে ‘বড় ভাই বলে কথা মানতে তো হবেই। তার ভালোর জন্যই তো করছে এসব’এটা তিয়ানার কথা নয় তার মায়ের কথা যা তাকে শুনতে হয়েছে। তখন সে মনে মনে বলল,,
__‘বড় ভাই না বলে জামাই বলতে পারো না? ‘জামাই’ বইলা দেখো এক বার, সব মাইনা নেবো। তা তো বলবা না। তোমরা হলে গিয়ে অতিভদ্দর লোক। লোকের মেয়ে বাপের বন্ধুর ছেলেকে ভাইয়ের বন্ধু কে বিয়ে করতে চায়না। তারা জোর করে মাইয়া বিয়া দিতেছে। আর তোমাদের মাইয়া এক পায়ে খাড়াইয়া আছে তা তো তোমরা দেখবা না। তোমরা তো জামাই না বড় ভাই বানাইয়া রাখছো। আমার কি ভাই নাই? ভাইয়ের বন্ধুর কীসের জন্য ভাই হওয়া লাগবো। প্রচলিত প্রথা ভাইয়ের বন্ধু ভাই না জামাই হয় তা কি জানো না?

তবে মনে মনে এসব চিৎকার করে বললেও বাইরে সে টু শব্দটি করতে পারলো না। সে এসব বলল, আর তার মা তাকে ঠাস ঠাস কয়েকটা ঝাঁটার বারি দিলো তখন তার সম্মান শেষ।
এরপর বেশ কিছুদিন মেঘালয়ের সাথে দেখা হয় না তার। মেঘালয়ও খুব একটা আসে না। নতুন হস্পিটালে জয়েন করেছে সারাক্ষন ব্যাস্ত মানুষ । তার খবর রাখার কি দরকার? সে তো বোন হয়। বন্ধুর বোন তো বোন’ই হয়। অন্য সব ভাইয়ের বন্ধুর মতো তো বন্ধুর বোন, বউ হবে না। তার অতি চরিত্রবান ভাইয়ের বন্ধুর তো বোন সে। লহবর নিয়ে কি করবে। পরের দিন গুলো বেশ কষ্টে, দুঃখে কাঁটে তিয়ানার। খুব করে দুঃখ হয় তার। মনে হচ্ছে দিনকে দিন সে ‘মেঘরোগে’ আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে । এবং সে রোগের একমাত্র ওষুধ হচ্ছে মেঘ নিজে।

রাত ন’টা বাজে ওষুধ কেনার জন্য বের হয়েছে অবন্তী । মায়ের ওষুধ শেষ। রাতে খাওয়ার পর’ই খাওয়াতে হবে। একদিনও মিস যাওয়ার মতো না। খুব দরকার বলে এত রাতে বের হতে হচ্ছে তাকে। রাত ন’টা খুব একটা গাড়ো রাত না হলেও তাদের মতো মধ্যবিত্তদের কাছে অনেক রাত। গলির শেষ মাথায় তাদের বাসা। গলির রাস্তার ল্যাম্পপোশটের একটা লাইট ইদানীং জ্বলছে না খুব বাজে একটা অবস্থা। বাজে ছেলেরা ওতপেতে থাকে এ সময়। কিন্তু কিছু করার নেই ওষুধ দরকার। যদি তার ভাইয়া বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো এতো রাতে তাকে একা এভাবে বের হতে হতো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেইন রোডের কাছে একটা ফার্মিসিতে গিয়ে ওষুধ নেয় সে। বাবা , ভাইয়া বেঁচে থাকতে তাদের কোনো অভাব ছিল না। এখনো নেই তবে আগের থেকে আয় রোজগার কম। উচ্চমধ্যবিত্ত বলা চলতো তাদের। একটা পাঁচ তলা বিশিষ্ট বাড়ি আছে। বাবা , ভাই মারা যাওয়ার পর বাড়ি ভাড়া দিয়েই চলছে তাদের মা মেয়ের।
ওষুধ নিয়ে ফেরার পথে দূরে দু’টো মেয়েকে দেখে থমকে দাঁড়ায় অবন্তী । তারা রাস্তায় বসে আইস্কিম খাচ্ছে। একজন আর এক জন কে লাগিয়েও দিচ্ছে। কিচ্ছুক্ষন পরপর খিল খিল করে হাসছে দু’জন। চোখ ভরে ওঠে তুলির। বুক হঠাৎ ভারি হয়ে আসছে। নিজের ভারসাম্য রাখতে না পেরে ফুটপাতে বসে পরে। একপ্রকার হাউমাউ করে কেঁদে দেয় সে। খুব মনে পরছে তিয়ানা আর তার ফেলে আসা সেই সুন্দর দিনগুলোর কথা। কোথায় হারিয়ে গেল সে সব? সবকিছু কেন তাকে’ই হারাতে হয়। তার কি হারানো লগ্নে জন্ম হইছে?

‘‘মেঘালয় তার খোজ না নিক। সে নেবে মেঘালয়ের খোজ সেই ভাবনাতেই আজকের রাত মেঘালয়ের বাড়িতে কাটানোর প্লান করেছে তিয়ানা। সবার খুব আদরের হওয়াতে এ বাড়িতেও তার নিজস্ব ঘর আছে। অবাক করা ব্যাপার হলো তার ঘরের ডেকারেশন আর মেঘালয়ের ঘরের ডেকারেশন এক। রুমের দরজার সামনে মাদুর থেকে শুরু করে আলমারি, খাট, ড্রেসিং টেবিল, দেয়ালের কালার সব এক। দু’জনের ঘরও পাশাপাশি। নিজের ঘরে গিয়ে আলমারি থেকে নাইট ড্রেস বের করে ওয়াশ রুমে যায় তিয়ানা। আলমারিতে তার জামা কাপড়ও রাখা আছে অনেক। নিজের বাড়ির থেকেও বেশি। প্রতিবার এসে কিছুনা কিছু নতুন ড্রেস পাবে’ই সে। হয়তো মাম্মিম বা পাপ্পি কিনে রাখে তার জন্য।
ফ্রেস হয়ে এসে ড্রইং রুমে আয়েশ করে বসে টিভিতে কার্টুন দেখতে বসে তিয়ানা। আজ আর কোনো ফিল্মে দেয়নি। দেখা যাবে আবার সেদিনের মতো লজ্জার কর ঘটনা ঘটে যাবে তাই আর রিক্স নেয়নি সে। বাড়ির প্রত্যেকেই হস্পিটালে। শুধু দু’জন ছাড়া এক সে অন্যজন রুমা। রুমা মেঘালয়ের বাসায় থাকে। মৌমিতার হাতে হাতে ঘরের কাজ করে দেয়। নিজের পড়াশুনাও করে। রুমা এবার এসএসসি দেবে। রুমার সাথে তিয়ানার খুব ভাব। যাকে বলে গলায় গলায় মিল।

আমার আদরিনী পর্ব ৭+৮

‘বেশ রাত করে বাড়ি ফেরে সবাই। ঘরে ঢুকেই কোনোদিকে নজর না দিয়ে ফ্রেস হতে যায় মেঘালয়। শর্টস পরে গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় সে। খাটের কাছে এসেই তিয়ানাকে তার ঘরে ঘুমতে দেখে বিস্মিত মেঘালয়। ঘুমের ঘোরে কি আবল তাবল দেখছে সে। চোখ ডলে আবার তাকায় সে। না, ভ্রম না! তিয়ানা সত্যিওই তার ঘরে এবং তার বিছানায় রাজত্ব করে ঘুমিয়ে আছে। ঢোক গিলে তিয়ানার থেকে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকায় মেঘালয়। তিয়ানার গেঞ্জি সরে গেছে। পেট দৃশ্যমান রাগ হয় মেঘালয়ের। এতো বড় হয়েছে তারপরও ঘুমের ঠিক নেই তিয়ানার। তিয়ানাকে এভাবে দেখে অসস্থি হয় তার। অন্য দিকে ফিরে তিয়ানাকে ডাকে,
__“তিনু, তিনু ওঠ এটা তোর না আমার ঘর।’
রাগে নিজের মাথার চুল খামছে ধরে মেঘালয়। তিয়ানাকে এখন না তুললে খুব বড় ভুল হয়ে যাবে। চোখহ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে ফোস ফোস করে শ্বাস ফেলে তিয়ানার কাছে গিয়ে তাকে টেনে তুলে।
হঠাৎ টানে ভয় পেয়ে যায় তিয়ানা। চোখ বন্ধ করে চিল্লিয়ে বলল,

__ভূত!! ভূত!! আম্মু, ভাইয়া ভূত মেরে ফেলল আমাকে।
মেজাজ খারাপ হয় মেঘালয়ের। ধমকে উঠে বলল,,
__‘বদ মেয়ে চুপ। আর একবার চিল্লালে ভূতদের সাথে বেঁধে রেখে আসবো। আমার ঘুমম হারাম করে ভূত ভুত করছে মহারানী।
ততক্ষননে তিয়ানা চোখ খুলে মুখ ‘হা’ করে মেঘালয়ের খালি শার্টলেস শরীরের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
মেঘালয় তিয়ানাকে ‘হা’ করে তার দিকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। ধুম করে নিজের হাত দু’টো মেয়েদের মতো করে শরীরে জড়িয়ে গা ঢাকার ট্রাই করে। আমতা আমতা করে বলল,,
__‘এএই এই অমন রাক্ষুসিদের মতো তাঁকাইয়া আছোস ক্যান? খাইয়া ফেলবিনি। বড় ভাই হই চোখ সরা। সরা চোখ! তোর দৃষ্টি তো ছেলেদের থেকেও তুখোড়। আমারে তো চোখহ দিয়ে’ই ধর্ষন করে ফেলবি। বদ মেয়ে!

আমার আদরিনী পর্ব ১১+১২