আমার আদরিনী পর্ব ৭+৮

আমার আদরিনী পর্ব ৭+৮
আশুথিনী হাওলাদার

প্রায় বায়ান্ন বছর আগে কাহিনীর শুরু। তুলিকা-তিয়াসা জমজ দু’বোন। তাদের যে রাতে জন্ম হয় সে রাতে তাদের বাবা আজমল মিয়া দীর্ঘদিনের পরকীয়া সঙ্গি নিজের আপন চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করে ঘরে তুলেন । তুলিকা-তিয়াসার মা মিসেস তাকলিমা বেগম সেদিন টা টু কোনো শব্দ না করে নিজের ঘর ছেড়ে দেন নতুন দম্পতি কে। এ ঘটনা জানাজানি হলে গ্রামের সবাই আজমল মিয়াকে এক ঘরে করে দেয়া হয়। তাকলিমা বেগমের বাবা তখন জীবিত থাকায় নিজের মেয়েকে সেখানে এক মুহূর্তও না রেখে জমজ দুই নাতনি সহ শহরে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। তাকলিমা বেগমও বাবার ইচ্ছে কে মান্য করে বাবার সাথে নিজ গৃহে চলে যান, প্রায় পাঁচ বছরের সংসার জীবনের মায়া কাঁটিয়ে। আজমল মিয়া কে ভালোবেসে বিয়ে করেন তিনি। তাই শহুরে বড় লোক বাবার একমাত্র মেয়ে হয়েও গরিব আজমল মিয়াকে ভালবেসে নিজের রাজকীয় জীবন ছেড়ে তার কুঠিরে এসে ওঠেন। মিসেসতাকলিমা বেগমের বাবা মি.তৌকির আহমেদ নিজের মেয়ের ভালবাসা কে সম্মান করে তাকে আজমল মিয়ার সাথে বিবাহ দেন।

তবে তার এখন বেশ আফসোস হয় সেই সিদ্ধান্তে। বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান হওয়ায় বাবার সব সম্পত্তির মালিক মিসেস তাকলিমা বেগম হন। জমজ দুই মেয়ে, বাবা, মা কে নিয়ে কাটিয়ে দেন নিজের বাকি জীবন। তুলিকা-তিয়াসা বড় হয়। তিয়াসা, তুলিকা মৌমিতা তিনজন ছিল এক আত্মা এক প্রান শুধু আলাদা তিন শরীর। যাকে বলে জানে জিগার দোস্ত। যখন তারা ইন্টার প্রথম বর্ষে স্টুডেন্ট তখন তাদের পরিচয় হয় সাদিদের সাথে। মৌমিতার টিউটর ছিল অভীক আর অভীকের বন্ধু ছিল সাদিদ। উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পার করে অভীক এডমিশন নেয় মেডিকেলে আর সাদিদ ঢাবিতে সিএসসি নিয়ে পড়ে। অভীক আর মৌমিতার প্রেমের সূত্র ধরে তাদের প্রায়’ই দেখা হতো। সেখান থেকেই নতুন করে প্রনয় হয় তুলিকা সাদিদের। উচ্চমাধ্যমিক শেষে মৌমিতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে অভীক কানাডা চলে যায়। তবে তাদের সব ঠিক ছিল। পরিবার কে জানিয়ে তাদের বিয়েও ঠিক হয়। কিন্তু বাঁধ সাধে তিয়াসা সে সাদিদকে মাঝখান থেকে ভালবেসে ফেলে। তুলিকা সাদিদের বিয়ের দিন সে সুইসাইড করতে যায়। তুলিকা জানতে পেরে বোনকে বাঁধা দেয়। বোনের জীবন রক্ষার্থে নিজ ভালবাসা, নিজ সুখ ত্যাগ করে তার স্থানে তিয়াসা কে বিয়ের পীড়িতে বসায় সে। দু’জন এক রকম দেখতে হওয়ায় সমস্যা হয় না। তারা দু’জন ছাড়াও তাদের নানা মি.তৌকির আহমেদ সবটা জানতেন। রাজি হন না তিনি। তুলিকা নানা কে দিব্যি দিয়ে রাজি করায়। সে রাতে নিজেও ফ্লাইট ধরে আমেরিকা চলে যায় তুলিকা। নিজের ভালোবাসাকে বোনের সাথে দেখতে পারতো না সে। না সাদিদের চোখে তার জন্য ঘৃনা দেখতে পারতো। তারপর কেটে যায় বারো বছর।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“__আম্মু
তিলাতের ডাকে ভাবনা থেকে বের হয় তুলিকা। চোখের কোনের জল মুছে বেলকনি থেকে বের হয়ে ঘরে যায়। দরজার সামনে ছেলেকে দাঁড়ানো দেখে মৃদু হেসে বলে,,
__কিছু বলবে?
তুলিকার মন খারাপ থাকলে বা তাদের উপর রেগে থাকলে তুমি করে সম্মোধন করে তাদের। দীর্ঘশ্বাস ফেকে তিলাত। আম্মুর চোখের দিকে তাকাতে পারেনা তিলাত। আহত সে, কষ্ট হয় তার মায়ের চোখের কোনে চিক চিক করা জল টুকু দেখে। ইচ্ছে করছে আম্মু’কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে। কিন্তু ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই তাই সে কাঁদতে পারছে না। ভিতরে কান্নাটাকে গিলে বলে,,
__বসার ঘরে অভীক আংকেল এসেছে।
__তুমি যাও আমি আসছি

মাথা নাড়িয়ে নিজ ঘরে গিয়ে খিল আঁটকে দেয় তিলাত। মাথা জিমজিম করছে একটু ঘুমাতে পারলে ভাল হবে। কিন্তু তা সম্ভব না খানিক বাদে মেঘালয় আসবে। তারপর মৌমিতা। প্রতিবছর এই দিনটা এই নিয়ম ধরে’ই চলে আসছে৷ ছোটোবেলা থেকে দেখে আসছে সে। আজকের দিনে প্রথমে অভীক আংকেল তাদের বাড়িতে চলে আসে। তার পিছু ধরে মেঘালয় , সবশেষে মৌমিতা আন্টি গম্ভীর মুখে এসে হাজির হবেন। হাসে তিলাত, হাসি থামিয়ে নিজের হাত কামড়ে ধরে ফুপিয়ে ওঠে। তাদের পরিবারটাও তো একটা সত্যি কারের সুখি পরিবার হতে পারতো। সব দোষ তার গর্ভধারিনীর। যদি তিনি আজ বেঁচেও থাকতেন তাহলেও কখনো এ পরিবারে সুখ থাকতো না। আর না এখন আছে। সব দোষ এই একজনের। দু’টো মানুষ বেঁচে থেকেও মৃত্যু তার জন্য। দু’জন দু’জনকে পাগলের মতো ভালবেসেও আলাদা। এক সাথে থেকেও মনের দুরত্ব হাজার হাজার মআইল।

“‘বাইকের পিছনের অংশ ধরে বসে আছে তিয়ানা। ভুলেও মেঘালয়কে টাচ করে না। টাচ করলেই দেখা যাবে জ্বলে উঠবে। তাকে কাছে ঘেষতেও না করবে আবার তাকে বাইকে করে নিয়েও যাবে। মুখ ভেংচে দেয় তিয়ানা। যেতে চায় কে তার বাইকে। আজব লোক সারাক্ষন হামকি ধমকি দেয় আমার কাছ ঘেষবিন না। তারপর নিজেই আসে যতসব। লুকিং গ্লাসে তিয়ানাকে দেখে মুচকি হাসে মেঘালয়। বাড়ি সামনে বাইক থামানোর পর নিজ ঘরে যায় তিয়ানা। এক নজর তিয়ানার যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে গ্যারেজের ভিতরে বাইক পার্ক করে তিয়ানার ঘরে উঁকি দিয়ে তাকে দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে তিলাতের ঘরে চলে যায় মেঘালয়।
ঘরে গিয়ে দরজা আঁটকে শুয়ে পরে তিয়ানা। বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে। এতক্ষন সে মেঘালয়ের সাথে এক বাইকে এক সাথে ছিল। ভাবতেই শিউরে উঠে তিয়ানা। লজ্জা মিশ্রিত হাসি হেসে বালিসে মুখ লুকায়। ইদানীং মেঘালয়ের সাথে কথা বলতে তার দিকে তাকাতে লজ্জা লাগে তিয়ানার। অদ্ভুত অনুভূতি হয় তার। এ অনুভূতির ভবিষ্যৎ কি জানে না সে। সামনে কি হবে সেটারও ধারনা নেই তার। মেঘালয় কে কখনো জানাতে পারবে কিনা সেটাও জানে না সে। মেঘালয়ের রিয়াকশন কি হবে সেটাও জানে না সে। শুধু জানে সে ভালবেসে ফেলছে মেঘালয় কে। তার জাত শত্রুকে।

__এভাবে আর কত দিন যাবে?
খাবার রেডি করছিল তুলিকা। মৌমিতার প্রশ্নে অবাক হয় তুলিকা। বিস্মিত কন্ঠে বলে,,
__কী যাবে? কিসের কথার বলছিস?
হাসে মৌমিতা হেসে বলে,,
__আমার থেকে লুকাচ্ছিস? বুঝতে পারছিস না কি জিজ্ঞেস করছি? নাকি, না বোঝার ভান ধরছিস?
চোখ নামিয়ে নেয় তুলিকা। মৃদু হেসে বলে,
__যেভাবে গত বিশ বছর গেছে।
__কেন মেনে নিচ্ছিস?
__আমি আমার শাস্তি পাচ্ছি।
__আর কত?
__যত দিন সাদিদ চাইবে ( তুলিকার উত্তর)

পলকহীন ভাবে তুলিকাকে দেখে মৌমিতা। রাগ হয় তার। সাদিদের উপর না তুলিকার উপর সারাজীবন অন্যের জন্যই ভেবে গেল মেয়েটা। কি দরকার ছিল সেদিন এভাবে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাওয়ার। কি দরকারছিল তিয়াসাকে নিজের জায়গাটা ছেড়ে দেয়ার। আবার কি দরকার ছিল বারো বছর পর ফিরে আসার। নিজের প্রান প্রিয় বান্ধুবিদের এই পরিনতি মেনে নিতে পারেনা মৌমিতা। কি দরকার ছিল তিয়াসার বোনের ভালোবাসা জেনেও সাদিদের দিকে হাত বাড়ানোর। সেই তো যার সংসার যার ভালোবাসা শেষ সব তার’ই হলো। সেখানে তোর কোনো অস্তিত্ব নেই তিয়াসা। কি দরকার ছিল এটা করার।

বেশ কয়েক দিন হলো তিয়ানা মেঘালয়ের সামনে যায় না। তাদের বাড়িতেও যায় না, মেঘালয় আসলেও নিজের ঘর থেকে বের হয় না। ঘরে খিল দিয়ে থাকে। শত ডাকাডাকি করলেও বের হয় না। ঘরে মটকা মেরে পরে থাকে। মোট কথা সে অনাশন করছে মেঘালয়ের সম্মুখে না পরার। তিয়ানার হঠাৎ বদলের বিষয়টা ভাবাচ্ছে মেঘালয়কে। তবে উত্তর মেলেনি, মেলার কথাও নয়। তার সম্মুখে আসেনি তিয়ানা। আসলে হয়তো, গতিবিধি বোঝা যেতো। শুধু মেঘালয় নয় বাড়ির প্রত্যেক মানুষকে ভাবায়। তবে তারা মেঘালয়ের প্রতি রাগ ভেবে আমোলে নেয় না। এ নিয়ে অবশ্য মায়ের অনেক ঝাঁড়ি খেয়েছে মেঘালয়। সে কি এমন করছে তিয়ানার সাথে? যে, তিয়ানা বাড়ি আসে না তার সম্মুখে আসে না। মৌমিতার ধারনা অবশ্যই কিছু একটা করেছে মেঘালয়। ভেবে পায় না মেঘালয় সে কখন কি করলো? শাস্তি সরুফ মায়ের ফ্রি বকুইনি খেলো। এটা সিউর সে, তিয়ানা কে সামনে পেলে কাঁচা চিবিয়ে খাবে। প্রতিদিন একবার হলেও তিয়ানাকে দেখাটা তার কাছে নেশার মতো। সেখানে এতদিন হয়ে গেল সে তিয়ানা কে দেখছে না। চরম আঁকারে রাগ হয় মেঘালয়ের। এবং সে সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে তার দ্বারা আর অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। এরপর যা হবে তার ইচ্ছেতে হবে। এবং তা সবাইকে মানতে হবে।

“নিজের অদ্ভুত ব্যাবহারে নিজের উপর বিরক্ত তিয়ানা। কিন্তু সেও বা কি করবে? মেঘালয়ের সামনে গেলে ভয় হয় তার। এই বুঝি মেঘালয় সব বুঝে গেলো। মেঘালয় তার চোখের দিকে তাকালে মনে হয়, এই বুঝি তার চোখ পড়ে মেঘালয় সব জেনে গেলো। আর জেনে গিয়ে সবার সম্মুখে তার তুলতুলে নরম গালে ঠাঁডিয়ে চর লাগিয়ে দিলো। তখন তার সকল মানসম্মান সকলের সামনে পাঞ্চার হহয়ে যাবে। খুব লজ্জা হয় তিয়ানার, এটা ভেবে যে, মেঘালয় তাকে বোন মানে বোন ভাবে। বাড়ির প্রতিটা লোক তাদের ভাই-বোন’ই মনে করে। সাথে পাড়ার সবাইও তাই মনে করে। সেখানে সে কি না! এত বড় একটা কাজ করে ফেলল। যা তার একদম’ই উচিত নয়। যাকে বড় ভাইয়ের চোখে দেখা উচিত। যে, ছোটো থেকে বোনের মতো আগলে বড় করেছে। এমন কি তাকে ওয়ার্নও করতো তার কাছ না ঘেষার। তাকে ভালবেসে ফেলার মতো লজ্জাকর ব্যাপার হয়তো দ্বিতীয়টি আর নেই। বাড়ির সবাই জানতে পারলে তাকে খুব বাজে, নির্লজ্জ মেয়ে ভাববে। কাঁন্না পায় তিয়ানার এবং সে কাঁদে। ফ্যাসফ্যাস করে অনেকক্ষণ কাঁদে তবে তার মন ভরে না তাতে। কি করবে ভেবেও পাচ্ছে না সে। কাকে বলবে, কি করবে? কিছুই বুঝতে পারছে না। তার জীবনে মনের কথা সেয়ার করার মতো তেমন কেউ নেই তার ডায়েরিটা ছাড়া। আজ খুব আফসোস হয় তার একজন বন্ধুর আফসোস হয়। সারাজীবন একজনের বন্ধু হয়ে কাঁটিয়ে দেয়ার উপরও রাগ হয় তার। আরও বন্ধু থাকলে ক্ষতি কি এমন হতো? কষ্ট কমাতে বেঞ্চ খামছে ধরে তিয়ানা৷ বড় বড় নখ গুলোর সাথে কাঁচা নখ গুলোও ভেংগে গিয়ে রক্ত বের হয়। ব্যাথায় কষ্টে মানসিক যন্ত্রণায় ফুপিয়ে কেঁদে দেয় তিয়ানা।

‘পাশের খালি ক্লাস রুম থেকে কারো কান্নার শব্দে রুমের ভিতরে যায় অবন্তি। তিয়ানাকে অভাবে কাঁদতে দেখে বুকে ভিতর ধক করে উঠে তার। প্রিয় বান্ধুবিকে এভাবে কাঁদতে দেখে সে তরিঘরি করে তার কাছে ছুটে যায়। অবন্তী কে দেখে সব ভুলে তাকে জড়িয়ে ধরে কা্ঁদতে থাকে তিয়ানা। বেশ কিচ্ছুক্ষন পর বুঝতে পারে তিয়ানা অপাত্রে নিজের দুঃখ দান করছে সে। অবন্তি কে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে যায় সে। অবন্তী এক হাতে বেঞ্চ খামচে ধরে অসহায় চোখে চেয়ে থাকে তিয়ানার যাওয়ার পথে।
“ঠোঁটের কোনে মেকি হাসি ঝুলিয়ে রিনির সামনে বসে আছে তিলাত। পাশে অবশ্য ভরসার হাত মেঘালয় আছে। সময় করে রেস্টুরেন্টে রিনির সাথে দেখাহা করতে আসছে দু’জনে। মেঘালয় কে দেখে ভয় পায় রিনি। তবে নিজেকে বেশ সাহসি দেখানোর চেষ্টা করছে। কিন্ত মেঘালয়ের হাতের শক্ত থাপ্পড়ের কথা সে এ জীবনে ভুলবে না। শুধু প্রপোজ করে অনুমতি না নিয়ে জড়িয়ে ধরায় মেঘালয়ের হাতের রাম থাপ্পড় খেয়ে চার দিন তার ঘাড় বেঁকা হয়ে ছিল। চাইলেও ভোলা সম্ভব নয় সে থাপ্পড় কে। আড়চোখে বেশ কয়েকবার মেঘালয়ের হাতে দিকেও তাকায় রিনি। মোবাইলে দিকে তাকিয়ে থাকলেও আড়চোখে রিনিকে দেখে মেঘালয়৷ রিনির গতিবিধি দেখে বাঁকা হাসে সে। মেঘালয়ের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গেলে রিনি। পানির গ্লাস তুলে এক ঢোক খায়। হাত কাঁপছে! তার কপালে শনি আছে আজ।

‘তিলাত নিশ্চিন্ত মনে খাবার খেয়ে যাচ্ছে। সাথে মিটমিটে হাসছে। আজ রিনির কপালে শুধু শনি না রবি সোম বুধ শুক্র সব আছে তবে মঙ্গল যে নেই তা তিলাত বেশ ভালোমতো জানে। শাকচুন্নি, শ্যাওড়া গাছের পেত্নি এবার বুঝবে ঠ্যালা।
“গলা খাকাড়ি দেয় মেঘালয়। ফোন প্যান্টের পকেটে রেখে আলসে দিয়ে ঠিক হয়ে বসে রিনির দিকে পুর্ন দৃষ্টিতে তাকিয়য়ে বলে মেঘালয়,,
__শুনলাম তোমার নাকি ভিডিও ভাইরাল হইছে রিনি?
পানি খাচ্ছিল রিনি। মেঘালয়ের কথায় বিষম খায় সে। মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে তিলাত কে একবার দেখে সে। তিলাত নিজ মনে খাবারের দিকে তাকিয়ে খাবার গিলে যাচ্ছে। মনে মনে তিলাতকে বিচ্ছিরি গালি দেয় রিনি। আমতা আমতা করে মেঘালয়ে কে বলে সে,,
__মানে?
হাসে মেঘালয়। হেসে বলল,
__বহুত হট আছো কিন্তু। পুরু শরীররে জিলিক মারার মতো রুপ তোমার। তা এ নিয়ে ক’জনে সাথে শুলে?
অপমানে গলা ধরে আসে রিনির। রাগান্বিত চোখ নিয়ে কিছু বলতে যায়। তবে মেঘালয় তাকে বলার সুযোগ না দিয়ে তার সামনে ভিডিও ক্লিপ রাখে। বলল,

__চিনতে পারছো? তুমি ই তো! এখানে মোট সাত টা ভিডিও আছে তোমার তার মধ্যে আখিলের সাথেই দু’টো বাঁকি পাঁচ টা ভিন্ন ছেলেদের সাথে।
ভিডিও গুলো দেখে জমে যায় রিনি। এ গুলো মেঘালয়ের কাছে কি করে? ভয়ে ভয়ে মেঘালয়ের দিকে তাকায় সে। মেঘালয় ক্রুর হেসে তাকিয়ে তার দিকে। আমতা আমতা করে বলল রিনি,
__এগুলো! এগুলো তোমার কাছে কি করে?
__সেটা জেনে তোমার কাজ নেই। কাজের কথা আসছি। আমাদের পিছু ছাড়ো বিশেষ করে তিলাতের। না হলে! এই যে, তোমার নগ্ন, সেক্সি ভিডিও গুলো দেখছো সব গুলো সোসাল মিডিয়ায় হট ভিডিও হবে সামনের দশ মিনিটের মধ্যে।

আমার আদরিনী পর্ব ৫+৬

রিনি ভয়ে কাঁপতে থাকে। ভিডিও ভাইরাল হলে তার ইমেইজ শেষ। বাড়িতে জানাজানি হলে বাবা বের করে দেবে ঘর থেকে। কিন্তু তিলাত কে ছেড়ে দিলে কি করে হবে। এত এত ছেলের সাথে তার রিলিশন ছিল। সবাই শুধু তার সাথে ফিজিক্যালি ইনভলভ হতে চেয়েছে। এত দিনের রিল্লিশনে যা তিলাত চায়নি। তিলাত তার হাত অব্দি ধরেনি কখনো সে যতই অন্য ছেলের সাথে শারীরিক ভাবে মিলিত হোক তারও এক্সপেকটেশন ছিল একটা ভালো ছেলের যা তিলাত। এত দিন যত ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল সবাই প্লে বয় যা তিলাত না। তাছাড়া তিলাত সোনার ডিম পারা হাস। ওর বাবার অনেক টাকা। ওকে কি করে ছাড়বে। কিন্তু উপায় নেই। সে যদি না মানে তার মানসম্মান সব শেষ। অনেক ভেবে হার মেনে নেয় রিনি। এমন টাকা ওয়ালা মুরগি অনেক পাবে সে কিন্তু নিজের ইমেইজ নষ্ট করা যাবে না। এই ভিডিও ভাইরাল হলে তাকে মানুষ বাজে মেয়ে ভাব্বে । মনে মনে গালি দেয় যারা এই ভিডিও গুলো করছে তাদের। এমন কি তাদের দেখেও নেবে সে শপথও করে সে। বিশেষ করে আখিলকে। রিনি বলল,,

__ওকে, আমি মেনে নিলাম তিলাত কে আর জ্বালাবো না কলও করবো না।
ততক্ষনে তিলাত খাওয়া শেষ করে পানি খেয়ে বড় ঢেউক তুলে চেয়ারে গা এলিয়ে বসে ছিল। আজ বেশি খাওয়া হয়ে গেছে খুশি তে। রিনির কথায় সে ফোড়ন কেঁটে বলে,,
__জ্বালাতে দিলে তো। মেঘের জন্য এখনো এই ভিডিও ভাইরাল হয়নি। নাহলে, তোর বাড়ি গিয়ে তোর বাপ কে লাইভ ভিডিও দেখিয়ে আসতাম শাকচুন্নি।
ফুসে ওঠে রিনি। হেসে বলে তিলাত ,,
__ফোস ফোস করবি তো এই ভিডিও ভাইরাল। অনেক জ্বালাইছোস এখন বইলা মনের জ্বালা মিটাইয়া নেই। শাকচুন্নি, ইবলিশের খালাতো বইন, শ্যাওড়া গাছের পেত্নি মাত্র পাঁচ মাসে আমারে আধ মরা করছোস। তোর কপালে যেনো তোর মতোই একটা প্লে বয় জোটে শয়তান ছেমরি।

রিনির মুখ “হা’ হয়ে যায় তিলাতের গালি শুনে। জোড়ে হেসে দেয় মেঘালয়।
সবশেষ আরও একটা কাজ করে তিলাত। রেস্টুরেন্টের সবার সামনে রিনির মুখে এক দলা ‘থুতু’ ছিটিয়ে। তাকে প্রস্টিটিউট উপাদি দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যায়। রেস্টুরেন্টের খাবার বিল আসে ছয় হাজার টাকা৷ সেটাও রিনির ঘাড়ে দিয়ে চলে যায় দু’জনে।

আমার আদরিনী পর্ব ৯+১০