আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৪ || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৪
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

সাথে সাথে হেসে দিল সবাই!!সাথে আমিও।তারপর হাঁটা ধরলাম সবাই চান্দের গাড়ির দিক!তখনি একটি ছেলে এসে বলল…
–“হাই আমি জায়েদ!”
সাথে সাথে আমারা ছেলেটির দিকে তাকালাম। সুন্দর মতো উঁচু লম্বা হালকা লম্বাটে মুখ তার। কাঁধে ব্যাগপ্যাক।ইউসুফ ভাইয়া হালকা হেসে হাত মিলিয়ে বলল,,

–“হেলো! আমি ইউসুফ! আমি তোমাকে আগেই চিন্তে পেরেছি! ডায়মন্ড আমাকে তোমার পিক হোয়াটসঅ্যাপ করেছিল।”
ডায়মন্ড নামটা শুনে আত্মা ছেত করে উঠলো। নিজকে সামলে ছেলেটির দিকে তাকালাম। ইউসুফ ভাই জায়েদকে পরিচয় করিয়ে দিলেন আমাদের সাথে। তিনি খাগড়াছড়িতে থাকেন! যেহেতু আমরা নতুন, তাই গাইড করে নিয়ে যাবেন।পিকের কথায় হয়তো ছেলেটি লজ্জা পেল। মাথা চুলকে বলল,,
–” তো চলুন যাওয়া যাক!”

আমি ছেলেটিকে ভাল করে পর্যবেক্ষণ করছি। তখনি পাশ থেকে তিথি ধাক্কা দিয়ে বলল,,
–” রং নাম্বারে ডায়েল করিস না বনু! হিতে বিপরীত হবে!”
আমি তিথির দিকে রাগে কটমট হয়ে তাকাতেই দাঁত কেলিয়ে বলল,
–” তোর ভালোর জন্য বলছি! বাকিটা তোর মর্জি!”
বলে সুর সুর করে চলে গেল বুশরার পাশে। আজব মাইয়া! তার এহেন কর্মকান্ডে হেসে দিলাম আমি।তখনি পাশ থেকে ইউসুফ ভাই আমাকে বলতে লাগে,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–” লাষ্ট পর্যন্ত হেসেছিস তাহলে! মাশাআল্লাহ! কি সুন্দর হাসি! কেন মুখ এক রাস কালো মেঘ করে বসে থাকিস?হাসবি সব সময় এই হাসিটা তোর মুখে সুট করে খুব।”
আমি কিছু বললাম না চুপ রইলাম। উনি কি বুঝবে আমার সিচুয়েশন! যখন কাউকে ভালবাসার পর সেই মানুষটিকে আঁকড়ে ধরতে না পারার কষ্ট কতটুকু!তবু ও ফিকে হাসলাম।
দেখতে দেখতে চলে এলাম চান্দের গাড়ির কাছে।এক সিরিয়ালে সাড়ি সাড়ি গাড়ি দাড়িয়ে।রাহুল ভাইয়া সবাইকে গাড়িতে উঠার তারা দিচ্ছেন।কারণ জায়েদ বলেছে,,

–“৯ঃ০০ টার মাঝে খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প হয় সাজেক যেতে হলে । পরে পরবে ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ । সেখান থেকে আমাদের সাজেক যাওয়ার অনুমতি নিতে হবে! পরে দেড়ি হলে আবার —৩ঃ০০ পর্যন্ত ওয়েট করতে হবে।সো হারি আপ গাইজ! ”

গাড়িতে উঠে বসলো সবাই। গাড়ি ছুটছে তার গতিবেগে। সকলেই নানা কথা বার্তায় ব্যস্ত। ইউসুফ ভাই আমার সাথে বসে।ঊনার শরীরের ঘ্রাণ নাকে লাগচ্ছে। মাতাল করা ঘ্রাণ। না চাইতেও গাড়ির ঝাঁকুনিতে তার গায়ের ছোয়া লেগে যাচ্ছে। সাথে শরীরে মাঝে কাঁটা দিয়ে উঠছে! উনাকে আমার কাছে ক্যাকটাস গাছের মতো মনে হচ্ছে। ক্যাকটাস গাছের কাঁটা গায়ে বিঁধলে ব্যথা অনুভব হয়। কিন্তু তার স্পর্শ কাঁটা মুক্ত।নরম তুলতুলে তুলোর মতো! এই স্পর্শ ব্যাথার বদলে চোখ মুখে লাজুক আভা ফুঁটে উঠছে আমার।

গাড়িতে আবার ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। এবার পরে যেতে নিলাম আমি! সাথে সাথে ইউসুফ ভাইয়া আমার কোমর চেপে ধরে তার দিক নিয়ে চেপে বসে। আমি শক্ড!হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। আমি তার দিক চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছি! তিনি আমার দিক বাঁকা হেসে চোখ টিপ মারলেন! উনার কাজে লজ্জা পেলাম আমি! তিনি আবার কথা বলতে লাগলেন সবার সাথে! কিন্তু তার হাত এখনো আমার কোমরে চেপে রেখেছেন যেন আমি পড়ে না যাই! মাঝে মাঝে তার কেয়ারিংয়ে খুব অবাক হই আমি!
গাড়িতে নিরবতা চলছে! নিরবতা ভেঙ্গে হাসান ভাই বললো,,

–” তো জায়েদ! নিজের সম্পর্কে কিছু বলো?”
জায়েদ হালকা হেসে বলতে লাগে,,
–” আমি এবার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি। সাথে বাবার ব্যবসা দেখছি!”
তখনি ফুয়াদ ভাই বলল,,
–“তোমার আর ভাই-বোন নেই!”
জায়েদ হেসে মাথা নাড়ায় যে নেই!তখনি পাশ থেকে রাহুল ভাইয়া বলে উঠে,,

–” তো সাজেক সম্পর্কে কিছু ধারণা দেও! আমারা তো নতুন! তুমি কবার এসেছো সাজেক?”
জায়েদ হাসলো কিছুটা। এর হাসি যেন মুখের মাঝে মাকড়সার জালের মতো ঝুলে থাকেই। কিছু বললেই হেসে উত্তর দেয়!এর হাসির নাম হওয়া উচিৎ ঝুলনতো হাসি। এখনো তার বিপরীত হলো না! সে হেসে বলল,,

–” সাজেক আমার কাছে সব থেকে প্রিয় জায়গা! আমি এই পর্যন্ত ১০/১২ বারের উপরে গিয়েছি! কিন্তু বাইকে! সাজেক গেলে কখনো বোরিং ফিল করি নাই! প্রতিবার নতুন রূপ দেখেছি সাজেকের। আর সাজেক হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন । যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল । সাজেকের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিনে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম,পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা। একটা মজা ব্যাপার আছে জানেন! আপনারা চাইলে নৌ পথে সাজেক যেতে পারতেন! কিন্তু ওটা খুব রিস্কি! তাই সবাই এই পথে যাওয়া!”

তখনি পাশ থেকে তিথি জানতে চাইলো,,
–” আপনি নৌ পথে গেছিলেন? ”
তিথির কথায় জায়েদ তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকায়। যাতে লজ্জায় মাথা নত করে ফেলে তিথি সাথে ঠোঁটে লজ্জা রাঙ্গা হাসি। তিথি এমন কাজে সন্দেহ সন্দেহ লাগচ্ছে। তখন জায়েদ ভাইয়া হেসে বলল,,
–“হে বহুত বার।রাঙামাটি থেকে নৌপথে কাপ্তাই হয়ে এসে অনেক পথ হেঁটে সাজেক যেতে হয় । ”
তিথি এখনো লজ্জা পাচ্ছে। মনে হচ্ছ লজ্জায় গাড়ি থেকে লাফ দিবে সে! আমি ভ্রু জোরা কুঁচকে চেয়ে দেখচ্ছি তাকে!আমার দিকে বার কয়েক চোখ চোখি হতেই চোখ ফিড়িয়ে নেয় তিথি। কেমন রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছি!এরি মাঝে হুট করে ইউসুফ ভাইয়া আমাকে চিমটি কাঁটে। আমি “আহ্” করে উঠে ইউসুফ ভাইয়ার দিকে তাকাই সে হাসচ্ছে মিটমিট করে।তার এহেন কাজে অবাক আমি! আর কত রূপ দেখবো এই লোকের আল্লাহ জানেন। তখনি ভাবি জিগ্যেস করে,,

–” কি হয়েছে কুহু!”
আমি ইউসুফ ভাইয়ার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে রইলাম! তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,,
–” মশা কামড় দিয়েছে! ”
তখনি পাশ থেকে রসিকতার সুরে বলল তিথি,,
— হে হে বুঝতে পাড়চ্ছি! অনেক বড় মশা! যার দুটো হাত, দুটো পা, দুটো চোখ,একটি নাক মূলত মানুষ সরূপ দেখতে!নারে বনু??”
তিথি কথায় হো হো করে সবাই হেসে দিল। ইউসুফও হাসচ্ছে! আর আমি লজ্জায় লাল।বেটা খাটাশ কি হাসি তার। মন চাইছে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই!

গাড়ি এসে থামলো আর্মি ক্যাম্প। অনুমতি নিয়ে ফের চলতে লাগলো। আশেপাশে সৌন্দর্য মুগ্ধ নয়নে দেখছি আমি।ছোট বড় পাহারের বুক চিড়ে উড়ে উঠে চলছি আমরা। কিছুক্ষণ আগের বড় বড় বাড়ি ঘর দালানকোঠা সব ছোট ছোট হতে লাগলো। চারিপাশের আকাশের নীল আভায় হালকা তুলোর মতো মেঘ ঘুর ঘুর করে ঘুরে কি সুন্দর করে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ জায়েদের কথায় ধ্যান ভাঙ্গল আমার।

–“এটা হচ্ছে কাসালং ব্রিজ, এখানে ২টি নদী মিলে কাসালং নদী হয়েছে ।এর পরে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার । সেখানে নাস্তা খাওয়ার জন্য থামতে হবে ভাইয়া। এর পর আর কোনো হোটেল বা বাজার নেই! সেখানে থেকে যা কেনা কাটা করা করে নিতে হবে আপনাদের!”
সবাই সম্মতি জানালো!কিছুক্ষণ পর এসে থামলো মাসালং এ। সবাই সেখানে নাস্তা করে নিলাম আমরা। তিথি, নুশরা, বুশরা, ভাবি কেনা কাটা করছে। এখানে পাশেই বাজার সবাই নানান সবজি নিয়ে বসে। সব পাহাড়ি নাম না জানা সবজি, ফলমুল।এদিকে অধিবাসীরা কেনা-কাটা করছে।সব থেকে ইন্টারেস্টিং বিষয় এখানে বিদ্যুৎ নেই সোলারের মাঝে চলছে সব।

আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৩

গাড়ি আবার চলতে শুরু করেছে। বাজার পার হতেই দেখা মিললো সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া যার উচ্চতা ১৮০০ ফুট । এর প্রবীণ জনগোষ্ঠী লুসাই । এছাড়া পাংকুয়া ও ত্রিপুরারাও বাস করে । রুইলুই পাড়া থেকে অল্প সময়ে পৌঁছে যাবো। কাছেই প্রায় জায়েদ বলল আমাদের। আমরা মুগ্ধ নয়নে সব দেখে যাচ্ছি। ধীরে ধীরে গাড়ি উঠে যাচ্ছে সাজেকের দিক!মনে হচ্ছে আকাশের মেঘ ছুঁইব!

ঘন্টা খানিকের মাঝে এসে থামলো সাজেক।গাড়ি থেকে বের হয়েই আমি স্তব্ধ। এত সুন্দর দৃশ্য আমি আমার লাইফে কখনো দেখিনি! এ যে এক অপরূপ লীলাভূমি। আশে পাশে তাকিয়ে নিজের ভাবনায় ডুবে আমি! তখনি কারো চিৎকারে “ইউসুফ” বলে ঝাপটে ধরে। তখনি ভাবনার সুতা ছিড়ে গেল। সাথে সাথে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। মনের মাঝে দুঃখ দুঃখ লাগচ্ছে। চোখের পানি টলমল করছে। এ বুঝি টপ করে পগবে। নিজেকে সামলে সামনে তাকাতেই বিস্মিত হলাম! এতো দেখছি….!

আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৫