আমার একটাই যে তুই পর্ব ৪২ || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আমার একটাই যে তুই পর্ব ৪২
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠতেই ঘুম ছুটে যায় কুহুর।চোখ পিটপিট করে চারপাশে ভাল করে তাকাতেই নিজেকে আবিষ্কার করলো গাড়ীতে।বাহিরে তখন আলো ফুটেছে।রাস্তার দু ধারের ছোট বড় গাছপালা ফেলে এগিয়ে চলছে তারা। সূর্যের এক ফালি লাল আভা এসে পড়ছে ইউসুফের মুখ খানাতে কি অমায়িক না লাগছে তাকে।পড়নে তার ব্লেক প্যান্ট, হোয়াইট টি শার্ট তার উপর ব্ল্যাক জ্যাকেট যেন এক রাজপুত্র। কুহুর ঘুমের রেশ তখনো কাঁটেনি। সে আনমোনে গাড়ির সিটে হেলে ইউসুফের দিক তাকিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,,

–” আপনি এত সুন্দর কেন? কত হেন্ডস্যাম, কত কিউট!কত হট।খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে একদম।”
কুহুর কথা শেষ হতে না হতেই ব্রেক কসলো ইউসুফ খুব জোড়ে। এবার যেন কুহুর ঘুম পুড়ো পুড়ি ছুটে গেল। ইউসুফ তখন বিস্মিত চোখে তাকিয়ে কুহুর দিক। কুহু তখনের বুলি গুলো মনে পড়তেই জিব কাটলো। লজ্জায় অন্য দিকে তাকলো।নিজের অজান্তে বলা কথা গুলো ভেবেই গাল লাল হয়ে উঠলো তার। ইউসুফ তখন অবাক কন্ঠে বলল,,

–” কি বললি তুই?”
কুহু চুপ রইলো তা দেখে ইউসুফ কুহুর দিক ফিরে কানের কাছে মুখ নিয়ে রসিকতা করে বলল,,
–” আমাকে খাওয়ার কত শখ আহা!”
কুহু চেঁচিয়ে বলল,,
–” আমি তেমনটি বলি না।”
ইউসুফ ভ্রু কুচকে বাঁকা হেসে বলল,,
–“তো কেমনটি বলেছেন ডাঃ সাহেবা? ”
কুহু লজ্জায় ভাল মতো পড়েছে। লোকটি তাকে লজ্জা আরো বেশি ফেলতে চাইছে বুঝতে বাকি নেই তার।তাই কথা পালটালো বলল,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–” এত ভোরে কই যাচ্ছি?”
ইউসুফ বুঝলো কথা এড়িয়ে যেতে চাইছে। তাই মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। বলল,,
–“হাতির মাথা!”
কুহু বলল,,
–” মানে?”
ইউসুফ হেসে ফেললো। বলল,
–” তোমার হাত ধরে স্বর্গের সিঁড়ি যাবো!”
কুহুর দু হাত বেঁধে বলল,,
–” মশকরা করছেন আমার সাথে???”
ইউসুফ আবার হাসলো।রহস্যময় হাসি। বলল,,
–” জানতে পাড়বি।”
কুহু হতাশ হলো। এ লোকটা এমন কেন সব সময় রহস্য আর রহস্য। ধ্যাত!

গাড়ি এসে থামলো খাগড়াছড়িতে। তা দেখে কুহু চেঁচিয়ে উঠলো ,,,
–” আমরা খাগড়াছড়িতে কেন? আবার সাজেক যাবো?”
খুশিতে চকচক করে উঠলো কুহুর চোখ মুখ। তা দেখে হাসলো ইউসুফ। কুহুর মাথা টোকা মেরে বললো,,
–” নাহ্! হাতির মাথা যাবো!”
কুহুর এবার কপট রাগ দেখিয়ে বলল,,
–” ফাজলামো করছেন কেন? বলেন না? কোথা যাবো?”
ইউসুফ কুহুর কান্ডে মাথা চুলকে গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল,,
–” স্বর্গের সিঁড়ি যাব! ”

কুহু এবার রাগে ফেটে পড়লো। লোকটা পেয়েছে কি তাকে কখন থেকে এক হাতি মাথা, ব্যাঙের মাথা এসব নিয়ে। কুহু এবার কিছু কঠিন কথা শুনবে বলে মুখ খুলবেই তখনি ইউসুফ বলল,,
–“গাড়ি থেকে এক পা নামবে না। আমি খাবার নিয়ে আসচ্ছি। খবরদার নামবে না কিন্তু।”
বলে সে একটি সুপার শপে ঢুকে গেল। এ দিকে কুহু গাল ফুলিয়ে বসে পড়লো। এই লোক ভারী সাংঘাতিক। নিজেরটাই বলে অন্যেরটা শুনে এর সাথে কথাই বলবে না। একদম না। হুহ!
ইউসুফ ১০ মিনিটের মাথায় কিছু খাবার আর কয়েকটা পানির বোতল নিয়ে ফিরে আসে। গাড়িতটে বসেই কুহুর হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। কুহু ভ্রু কুচকে চেয়ে থাকে ইউসুফের দিক।ইউসুফ পানি খেতে খেতে বলল,,
–” খাবারটা খেয়ে নেয়ে অনেক দূর যেতে হবে!”
বলে আবার গাড়ি স্টার্ট দেয়।কুহু যে রেগে আছে পাত্তাই দিলো না যেন। কুহুর মন ভাড় হয়ে গেল।

অবশেষে ইউসুফ কুহুকে তার কাঙ্খিত জায়গায় নিয়ে এলো। কুহু হা হয়ে গেলো।কারণ সাইনবোর্ড বড় বড় করে লিখা হাতিমুড়া অর্ধাৎ হাতির মাথা স্বর্গের সিঁড়ি।
এবার তার লজ্জা লাগছে, সাথে খারাপো ও কেন বিশ্বাস করলো না ইউসুফকে? ইউসুফ তো মিথ্যে বলেনি সত্যি বলেছে। সে তার তাকালো না ইউসুফের দিক। ইউসুফ সব বুঝতে পারলো। সে কুহুর কোমর চেপে কাছে টেনে আনলো। এত কুহু কেঁপে উঠলো। কিন্তু তাকালো না ইউসুফের দিক। সে বলল,,
–” চল এবার তোমাকে নিয়ে স্বর্গের সিঁড়ি ভ্রমণ করে আসি!”
বলেই হাটতে লাগলো। কুহু বলল,,
–” আচ্ছা এটাকে হাতি মাথা বা স্বর্গের সিঁড়ি কেন বলে?”

ইউসুফ কুহুর হাত ধরে সেই হীম শীতল খাড়া লোহার সিঁড়ি একটি একটি করে পার করতে করতে বলল,,
–“পাহাড়টা দেখতে অনেকটা হাতির অবয়ব হওয়ায় স্থানীয়রা একে হাতির মুড়া বলেন। চাকমাদের কাছে এটি ‘এদো শিরে মোন’ এবং ত্রিপুরাদের কাছে ‘মাইয়োং কপা’ নামে পরিচিত। তবে দুটোর অর্থই হাতির মাথা পাহাড়। অনেকের কাছে এটি পরিচিত ‘স্বর্গের সিড়ি’ নামে। ওই যে দেখছো দূরের সেই উঁচু জায়গাটা হাতির মাথার মতো দেখাচ্ছে যে!”
কুহু অবাক হলো সত্যিই তো তাহির অবয়বের মতো! ইউসুফ তখন আরো বললো,,

–“এই সিঁড়ি ১৫ টি গ্রামে যাওয়ার যায়!”
কুহু বিস্মিত হলো। বলল,,
–” কি বলছেন? এই খাড়া পাহাড়ের খাড়া সিঁড়ি বেয়ে ১৫ টি গ্রামে যাওয়া যায়! ”
ইউসুফ মাথা নাড়ায়। আবার বলে,,
–” জানো এক সময় এই পাহাড়ে গাছের গুড়ির উপর বাসিন্দারা আসা যাওয়া করত। বিকল্প পথ না থাকায় গাছের গুড়ি বেয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে হত। এভাবে পাহাড় উঠতে গিয়ে কয়েকজন মারাও গেছে। ”
কুহু আফসোসের সুরে বলল,,
–“ইশশ! কতই না কষ্ট ছিল তাদের!”
ইউসুফ কুহুর গাল টেনে বলল,,
–” তাই তো এই সিঁড়ি করা! চলো এবার অনেক উপরে যেতে হবে!”

দুজনে মিলে উপরে চলে এলো। পাহারের চূড়ায় আদিবাসীদের বসবাস। কি সুন্দর পরিবেশ। মুগ্ধা নয়নে দেখছে কুহু। আর কুহুকে দেখছে তার ইউসুফ ভাই। কুহুর চোখ খুশিতে চকচক করছে। যা সে দেখে ছিল সেই সাজেকে। আজ আবার দেখে বুক ভড়ে যাচ্ছে মনে শান্তি লাগছে। সত্যি ভালবাসার মানুষটির মুখে প্রশান্তির হাসি দেখা ভাগ্যের বিষয়। সেখানে আরো কিছুটা সময় পার করে তারা চলে আসে। দুপুরে খেয়ে নেয়। তার একটি কটেজ ভাড়া করে চেঙ্গী নদীর কাছে। রুমে বারান্দা দিয়ে চেঙ্গী নদী দেখা যায়। কুহু মুগ্ধ নয়নে দেখছে। আর ভাবছে,

–” কটা মানুষের ভাগ্যে এমন ভালবাসার মানুষ আছে? যে প্রতিবার প্রতি রূপে তাকে ভালবাসবে?”
ইউসুফ গোসল করে বের হলো। কুহুকে বারান্দা দাঁড়ানো দেখে কাছে গেল সে। কুহু এক ধেয়ানে নদীর দিক চেয়ে। ইউসুফের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো। সে তার ঠান্ডা হাত কুহুর ঘাড়ে স্পর্শ করলো। কুহু হকচকিয়ে তাকালো তার দিক। সাথে কাঁপচ্ছে সে। তা দেখে ইউসুফ হাসলো। কুহুকে টেনে কাছে আনলো। গলার সাইডের চুল সরিয়ে নাক ঘষতে লাগলো ম কুহু চোখ বন্ধ করে আছে। শরীরের কম্পন দ্রুত বেগে বাড়চ্ছে। শরীরে যেন বল হারিয়ে ফেলছে। ইউসুফ কুহুর গলায় গভীর চুমু খেলো। কুহু ইউসুফের হাত খামচে ধরলো। ইউসুফ এবার মুখ তুলে কুহুর দিক তাকলো তার বাবুইপাখি চোখ-মুখে খিঁচে বন্ধ করে ফেলেছে। হাসলো ইউসুফ কুহুকে ছেড়ে দিলো। বলল,,
–“যাও ফ্রেস হয়ে এসো!”

আমার একটাই যে তুই পর্ব ৪১

কুহু অবাক হলো। কিছু বলল না। ফ্রেস হতে চলে গেল। এদিকে ইউসুফ রুমে এসে কফির অর্ডার করে। ১০ মিনিটের মাথায় কফি দিয়ে যায়। ইউসুফ বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফিতে চুমুক দিতেই কুহু বের হয়ে আসে। ইউসুফ বারান্দার রেলিং ঠেসে কুহুর দিক তাকায়। কুহু ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপচ্ছে। পড়নের শাড়িটি ভিজে আছে অনেক জায়গা। টপ টপ করে চুলের পানি কুহুর গলা, ঘাড়, পিঠ বেয়ে পড়চ্ছে।ইউসুফ নেশাকাতর চাহনিতে দেখচ্ছে। সব চেয়ে বেশী কাঁপচ্ছে কুহুর সুন্দর ঠোঁট জোড়া। যা ইউসুফকে মাতাল করে দিছে। মনের মাঝে ইচ্ছে জাগচ্ছে এ ঠোঁট দুটোতে ডুব দিতে।

ইউসুফ এগিয়ে এলো। কুহু বুঝতে পেড়েছে সেই কখনি তার বিলাই চোখে দুটি তা আগেই জানিয়ে দিয়েছে। তারপরও কুহু মনে ভয় কাজ কারছে। সে ইউসুফকে এগিয়ে আসতে দেখে নিজেও পিছিয়ে যেতে লাগলো। কাঁঠের দেয়ালের সাথে লেগে গেল। ইউসুফ কুহুর মুখ মুখি দাঁড়াতেই কুহু চোখ বন্ধ করে নেয়। ইউসুফ কুহু শাড়ির আচঁলের ফাক দিয়ে পেটে স্পর্শ করে তার ঠান্ডা হাতে কুহু এক অসহ্যকর ভাললাগার অনুভূতি হয়। সে নিজের শাড়ি খামচ্ছে ধরে রাখে।কুহুর ঠোঁট জোড়া তখনো কাঁপছে। ইউসুফ তাকিয়ে সেই ঠোঁটে দিক। নিজেকে সামলাতে না পেরে। আঁকড়ে ধরে আবদ্ধ করে নেয় কুহুর ঠোঁট জোড়া। কুহু আবেশ ইইউসুফের মাথার চুল খিচে ধরেম এক পর্যায় নিজেো তাল মিলায়।

ইউসুফ কুহুর ঠোঁট ছেড়ে। কানে চুমু খায় আর ফিসফিস করে বলে উঠে,,
–” বাবুইপাখি! আই নিড ইউ! কেন আই?”
ইউসুফ মাদক কন্ঠে বললোম কুহুর শরীরে আলাদা অনুভূতি খেলা করলো। সে ইউসুফতে জড়িয়ে ধরলো। ইউসুফ বুঝে হেসে ফেললো। কিছুটা ঝুকে কুহুকে কোলে তুলে বেডে নিয়ে এলো। তারপর ডুব দিলো একে ওপরের মাঝে। ভালবাসার যেন নতুন এক পূর্ণতা পেয়ে গেল তারা। দীর্ঘ বছরের অপেক্ষা প্রহর ভেঙ্গে গুড়িয়ে এক হয় গেল তারা।

আমার একটাই যে তুই শেষ পর্ব