আমার একটাই যে তুই পর্ব ৪০ || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আমার একটাই যে তুই পর্ব ৪০
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

ইউসুফ বলল,,
–“এখন কাঁদচ্ছিস কেন? পরপুরুষদের সাথে রঙ্গো লিলা করার সময় মনে ছিল না?”
কুহু এবার তপ্ত আগুনের মত জ্বলে উঠলো। বলল,,
–” আমি যা ইচ্ছে করবো! তাতে আপনি বলার কে? আর কিসের অধিকার দেখাচ্ছেন এতো? আমি রঙ্গ লিলা করি আর যাই করি! সেটা আমার ব্যাপার আপনি জান আপনার সেই সো কোল্ড রুবাইয়াৎ য়ের কাছে।”

ইউসুফ এবার ঘটনা ধরতে পড়ে হাসলো। কুহুর হাত ধরে ডান্স ফ্লোর থেকে নিয়ে বাগানের দিক চলে এলো।এখনোও খুব সুন্দর লাইটিং করা ফেরি লাইট দিয়ে। কুহু হাত ছাড়াবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। সে রাগে বলতে লাগলো,,
–” ফালতু লোক। দিন দিন ভাষার অবনিত ঘটছে! সে আবার এমপি।নিজে রঙ্গ লিলা করে সেটা কিছু না আমি করলেই দোষ। হুহ। হাত ছাড়ুন! ছাড়ুন বলছি! নয়তো খবর আছে আপনার!”
ইউসুফ বাগানের মাঝবরাবর এসে কুহুকে ছেড়ে দিল। হেসে বলল,,
–” কটার খবর?!”

কুহু বিরক্তি নিয়ে দু হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে রইলো। ইউসুফ কাঁধে আলতো ভাবে হাত রেখে বলল,,
–” রিভেঞ্জ নিছিলে? হুম!”
কুহু কিছু বলল না অন্য দিকে তাকালো! ইউসুফ আবার বলল,,
–“ওদিকে কি? লুক এট মি? আমি এখানে!”
কুহু তবুও তাকালো না। তার মনে এখন একগাদা অভিমান ভরা। এতদিনে একটি কথাও বলে নি আর আজকে ভালবাসা উতলে পড়চ্ছে। বলবে না সে কথা..!
ইউসুফ এবার ধমক দিয়ে বলল,,

–” কি ব্যাপার কিছু বলছিস না কেন?”
কুহুর হেলদুল হলো না। এতো দিনের রাগ অভিমান কান্না হয়ে বয়ে পড়তে চাইছে। সে চোখ মুছলো। ইউসুফ বলল,,
–” আরে পাগলী কাঁদচ্ছিস কেন? ”
অভিমানের সুরে বলল,,
–” তাতে আপনার কি? ”
–” অনেক কিছু! কলিজা পুড়ে আমার! ”
–” মিথ্যা কথা! এমপি সাহেব আপনি মিথ্যা বলা শিখে গেছেন!”
–” কুহু সত্যি বলছি!”
কুহু খেয়াল করলো ইউসুফ একটি বারো বাবুইপাখি বলে সমর্থন করলো না তাকে। এমন কি আসচ্ছে পর থেকেও করে নি। কুহুর মন আরো ভারী হতে লাগলো। বলল,,
–” হে দেখছি কেমন পুরছে মন আপনার।”
ইউসুফ অসহায় কন্ঠে বলল,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–” তুই জানিস কুহু তোকে কতটা মিস করেছি আমি! মরে মরে বেঁচে ছিলাম আমি। কিন্তু তুই? ফেলে চলে গেলি আমায়!”
–” আমি নিজেও সুখে ছিলাম না। আপনাকে ছাড়া। এখানে এসে ভেবেছিলাম সব মান অভিমান, দূরত্ব দূর হবে। কিন্তু আপনি? প্রতিবারের মতো আপনারটা দেখলেন। নিজের সব রাগ আমার উপর ঢাললেন। দূরে ঠেলে দিলেন। আমাদের মাঝে অদৃশ্য দেয়াল বানিয়ে দিলেন।একটি বার ভেবেছিলেন? আমি কেমন ছিলাম? আমার কষ্ট কি হয় নি? কিন্তু না আপনি নিজের টা ধরে বসে। সব সময় নিজের রাগটাকে প্রাধান্য বেশি দেন আপনি। সামনের ব্যক্তিরও কিছু বলা কওয়ার আছে তা তো মানতেই নারায আপনি।তো ঠিক আছে বসে থাকুন আপনি! আমি কাল চলে যাবে! ভাল থাকবেন। আসি!”

বলে কুহু ভিতরে চলে গেল।নিজের সকল রাগ, অভিমান ঢেলে দিলো কুহু আজকে। এদিকে ইউসুফ চুপ করে রইলো। আকাশের দিকে তাকাতেই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো তার। সত্যি তার বাবুইপাখি যে তার মতোই কষ্টে ছিল। সে শুধু তারটাই দেখে গেল। কি করবে এখন ইউসুফ? তার বাবুইপাখির রাগ কিভাবে ভাঙ্গবে সে…!যেভাবেই হোক ভাঙ্গাবে। আর যেতে দিবে না দূরে। দরকার পড়লে বেঁধে রাখবে তাকে। ভেবেই মলিন হাসলো ইউসুফ..!
বিড়বিড় করে বলল,,
–” এবার আমার পাগলামো দেখ বাবুইপাখি! ”

কেক কাটা শেষ হলো। সকলকেই কেক খাওয়ানো হলো। অদ্রি তো সেই খুশি হয়েছিল তার বারবি কেক দেখেই। সে তার বন্ধুদের সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত। ভাবি তার সাথে দাড়িয়ে। তিথি তার বাবু কুহুর কোলে দিয়ে হাত ধুতে গেছে। কুহু কথা বলছে বাবুর সাথে। বাবু রিপিট বু বু করছে। তা দেখে কুহু হাসচ্ছে।তখনি গিটারের টুং টাং শব্দ হতেই সেদিকে তাকালো।ইউসুফ একটি উঁচু চেয়ারে বসে আছে। তার হাত গিটার। কুহু অবাক হয়ে তাকালো ইউসুফের দিক। ইউসুফও তাকিয়ে কুহুর দিক..!গাইতে লাগলো,,

শুধু তোমায় ঘিরে,
শুধু তোমায় ঘিরে,
সিঁদুর রাঙা মেঘ করেছে দূরে
শুধু তোমার ছায়া মেঘের উপর
ঢেউ খেলে রোদ্দুরে।
অভিমানের আড়ি কেটে,
কোথায় তুমি যাচ্ছ হেঁটে
হৃদয়ের চিরকুটে তুমি খুব ডানপিটে।
আমি তোমার মান ভাঙাবো,
ভালোবাসার চোখ রাঙাবো,
মিষ্টি কোনো গান শোনাবো
গলার নরম স্বরে।
শুধু তোমায় ঘিরে,
শুধু তোমায় ঘিরে,
সিঁদুর রাঙা মেঘ করেছে দূরে
শুধু তোমার ছায়া মেঘের উপর
ঢেউ খেলে রোদ্দুরে।
আনমনে আলতো করে
হাত ছোঁয়াবো মুখে,
তোমার চোখে জল গড়াবে
একটুখানি সুখে।
অভিমানের আড়ি কেটে,
কোথায় তুমি যাচ্ছ হেঁটে
হৃদয়ের চিরকুটে তুমি খুব ডানপিটে।
আমি তোমার মান ভাঙাবো,
ভালোবাসার চোখ রাঙাবো,
মিষ্টি কোনো গান শোনাবো
গলার নরম স্বরে।
শুধু তোমায় ঘিরে,
শুধু তোমায় ঘিরে,
সিঁদুর রাঙা মেঘ করেছে দূরে
শুধু তোমার ছায়া মেঘের উপর
ঢেউ খেলে রোদ্দুরে।
আলগোছে আঁকড়ে ধরি
মুখ লুকানো হাসি,
তোমার বুকে আছড়ে পড়ি
আমি অহর্নিশি।
অভিমানের আড়ি কেটে,
কোথায় তুমি যাচ্ছ হেঁটে
হৃদয়ের চিরকুটে তুমি খুব ডানপিটে।
আমি তোমার মান ভাঙ্গাবো,
ভালোবাসার চোখ রাঙ্গাবো,
মিষ্টি কোনো গান শোনাবো
গলার নরম স্বরে।
শুধু তোমায় ঘিরে,
শুধু তোমায় ঘিরে,
সিঁদুর রাঙা মেঘ করেছে দূরে
শুধু তোমার ছায়া মেঘের উপর
ঢেউ খেলে রোদ্দুরে।
কুহু কেঁদে দিলো। এক ছুটে রুমে চলে আসলো। দরজা বন্ধ করে অঝড়ে কেঁদে চলল।

পরের দিনও কুহুর যাওয়া হলো না। যাওয়ার আগেই কি হুলুস্থুল কাণ্ড বাজিয়ে দিয়েছে ইউসুফ। সকলের চোখে ছানাবড়া। ইউসুফ এমন টিনেজারের মতো কাজ করবে কেউ ভাবে নি। সকাল সকাল কবর খানার ইমাম এসে হাজির। সাথে এক কালো কোট পড়া উকিল। এদের দেখেই কুহুু ভয়ে সিটিয়ে গেছে।কি হতে যাচ্ছে বুঝতে পরেই গলা শুকুয়ে কাঠ তার। বাড়ির সবাই তখন অবাক! ইউসুফ কুহুকে টেনে এনে সোফায় বসালো। সাথে ইউসুফ বসে পড়ল গা ঘেষে।থমথমে গলায় বলল,,

–” শুরু করুন!”
কুহু অজানা ভয় পাচ্ছে। হাত পা কাপচ্ছে।ইউসুফ হুট করে এমন কিছু করবে সকলের ধরণার বাহিরে ছিল। তারতো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু সে পাচ্ছে না।কেন পারছে না? কি সমস্যা আমার? কিছুই মাথায় খেলছে না। আমার ভাবনার মাঝেই ইমাম বললেন,,
–” বাবা কবুল বলুন!”
–“কবুল, কবুল, কবুল!”
ইউসুফ নির্বিকার ভাবে গম্ভীর কন্ঠে তিন বার বলে দিলো ইউসুফ। কুহু যেন বিষম খেলো। বাকি সবাই হাসতে লাগলো। রাহুল ভাই বলে উঠলো,,

–” ভাই আস্তে বল! ট্রেন ছুটে যাচ্ছে না তো!”
কিন্তু ইউসুফের মুখে বুলি নেই সে চুপ করে আছে। থমথমে তার মুখ। ইমাম এবার কুহুকে বলল,,
–” মা কবুল বলুন!”
কুহু চুপ। তার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না। সব কথা দলা পাকিয়ে গিট্টু লাগিয়ে বসে আছে কন্ঠোনালীর মাঝবরাবর। আর চোখের পানি যেন ঝড়ণার পানির মতো উপচে পড়চ্ছে। নিজের উপর নিজেরি রাগ চেপে যাচ্ছে। কুহুকে এভাবে বসে কাঁদতে দেখে ইউসুফ দাঁত চেপে বলল,,

আমার একটাই যে তুই পর্ব ৩৯

–” কি হলো? বলছিস না কেন কিছু? তারা এখনে সারা জীবন বসে থাকবে? স্পিক কুইক লি? ”
কুহু তাও কিছু বলতেই পারছে নাম উল্টো ভয় পেয়ে নাজেহাল তার।ইউসুফ আবার ধমকে উঠলো। কুহু থর থর করে কেঁপে উঠলো। তখনি বড় মামি এসে বসলো কুহুর পাশে। কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে আদরের সুরে বলল,,
–” কিরে মা! বল?দেখ তোদের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। ”
কুহু কান্নার জন্য কেঁপে কেঁপে উঠছে। বড় মামির কথায় অসহায় ফেইস করে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,,
–” আ..সঁ..চ্ছে না।”

বলে আবার কান্না করতে লাগলো! ইউসুফের যেন এবার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গেল।রাগ আরো বাড়লো। রাগের ঠেলায় কুহুকে সবার সামনেই ঠাটিয়ে এক চর মারলো। সাথে সাথে কান্না বন্ধ কুহুর। সে চেঁচিয়ে বলল,,
–” কবুল বল!একদম নাটক করবি না এখন! কোনো হিন্দি সিরিয়াল চলছে না এখানে”
কুহু কম্পন জড়িত কন্ঠে বলল,,
–” ক..বু..ল! ”
ইউসুফ কুহুর হাত চেপে ধরে বললো,,
–“আবার বল!”
–“ক..বু…ল!
–” আবার”
–“কবুল”

বলেই বড় মামিকে ধরে হু হু করে কেঁদে দিল। সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ইউসুফের। সে গট গট সাইন করে কুহুর দিক এগিয়ে দিলো। কুহুর তখন বেহাল অবস্থা। তাই কুহুর আঙ্গুল উচিয়ে টিপ সই দিয়ে দিলো।
কুহু আর ইউসুফের বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল। বাসার সবাই কি খুশি। ছোট মামি মিষ্টি নিয়ে হাজির। সকলকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। ইউসুফ কাজি আর উকিলকে বাহির পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেছে। কুহু এখনো ফুপাচ্ছে।কেন ফুপাচ্ছে সে নিজেই জানে না। কেন এমন করলো তাও জানা নেই তার।

আমার একটাই যে তুই পর্ব ৪১