আমার একটাই যে তুই শেষ পর্ব  || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আমার একটাই যে তুই শেষ পর্ব 
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

রাত—৩ঃ০০।
বইয়ে ভিতরে মুখ গুজে পড়চ্ছে কুহু। কাল তার লাষ্ট পরীক্ষা। কিন্তু একটি প্রশ্ন কিছুতেই তার মাথায় ঢুকছে না। প্রশ্নটি হচ্ছে,, ব্রাকষ্টোন হাইক পদ্ধতি কি? মানে? পেটের ভেতর শেষ মুহূর্তে বাচ্চা উল্টে দেয়ার একটা প্রাচীন পদ্ধতি। যেখানে প্রথমে বাচ্চার পা খুঁজে বের করতে হবে। তিনটি আঙুলে দুটি পায়ের গোড়ালি ঠেলে ধরতে হবে। তারপর সামান্য উপরের দিকে ঠেলে ধরতে হবে। উপরের দিকে ঠেলার সময়টা সিনক্রোনাইজড হতে হবে জরায়ুর প্লাসমের সাথে, একটা হাত থাকবে বাইরে পেটের উপর–বাচ্চার মাথার কাছাকাছি। বাইপোলার পদ্ধতি–এক হাতে বাচ্চার পা ঠেলে দেয়া, এক হাতে মাখার নিচের দিকে চাপ দেয়া।

এই প্রশ্নের ঊত্তরটাই আয়ত্তে আনতে পাড়ছে না কুহু। বিরক্তি লাগছে তার। ঠাস করে বইটি বন্ধ করে দিলো সে। বিরক্তি নিয়ে বলল,,
–“যে সব পদ্ধতির কোন প্রচলন এখন নেই–আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র প্রাচীন। সব পদ্ধতিকে দূরে ছুঁড়ে ফেলেছে তাহলে এখনো এসব কেন পড়তে হবে? ধ্যাত। ভাললাগে না।
পাশে নযর দিল কুহু তার ফোনটি পড়ে আছে। ফোনটি লক খুলতেই জ্বল জ্বল করে ভেসে উঠলো ইউসুফের ঘুমন্ত মুখখানা। তার বিলাই চোখ ওয়ালা কিউট জামাই।সাথে সাথে মনে পড়ে গেল কুহুর সেই তিন মাস আগের দিনটির কথা। খাগড়াছড়িতে কাঁটানো সেই রাতটি। সেদিন তারা এক হয়ে ছিল। একে অপরকে পরিপূর্ণ ভাবে পেয়েছে। ভাবতেই কুহুর চেহারা লাল রঙ্গা ধরণ করতে লাগলো। ভাবতে লাগলো সেদিনের কথা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সেদিন সকাল পাখির কলরবে কুহুর ঘুম ভাঙ্গে। ইউসুফ তখন কুহুর বুকে মাথা রেখে গভীর ঘুমে আচ্ছান্ন।তার ছোট চুল গুলো পরে আছে কঁপাল জুড়ে।তা ঠিক করে দিলো সে।তারপর ভারবাস মিষ্টি পরশ এঁকে দিলো তার কঁপালে। কুহু রাতের কথা ভেবে লাল-নীল হয়ে গেল। ঘুমন্ত ইউসুফের সামনে আর থাকতে চাইছে না। সে উঠতে নিলো। কিন্তু ব্যর্থ সে। তার নড়াচড়াতে ইউসুফ উঠে গেল। কুহুর দিক পিটপিট করে তাকিয়ে ঘুম জোড়ানো কন্ঠে বলল,,
–“এত নড়চড় করছিস কেন?”
ইউসুফের কন্ঠে তার যেন লজ্জা আরো বেশী লাগচ্ছে সে ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো। ইউসুফ হেসে ফেললো। বলল,,
–” লজ্জা পেতে হবে না। লজ্জার কাজ শেষ।”
কুহুর যেন কান গরম হয়ে গেলো। রেগে বলল,,
–” ছিঃ কি কথার ছিঁড়ি!”

ইউসুফ আবার হাসলো। তার বউটা লজ্জা পাচ্ছে। আরো লজ্জা দিতেই বলল,,
–“ও মা খারাপ কি বললাম? যাই হোক তোকে কিন্তু হট লাগচ্ছে। ”
কুহু কপাট রাগ দেখিয়ে ধাক্কিয়ে ইউসুফকে সরিয়ে উঠে গেল। ইউসুফের কথায় কান গরম হয়ে গেছে তার। ইউসুফ তখন মাথায় হাত দিয়ে এক পাশে শুয়ে মিটমিট করে হাসচ্ছে। কুহু নিজের দিক খেয়াল হতেই সাথে সাথে ব্ল্যাঙ্কেটে ঢুকে অসহায় ভাবব তাকিয়ে রইলো। এদিকে ইউসুফ হেসে কুটকুট। রাগে মনে মনে গালি দিয়ে বলল,,
–” বেশরম! ”
ইউসুফ তার হাসি বহাল রেখে বলল,,
–” বউয়ের সামনে বেশরম হতে সমস্যা নেই!”

কুহু চেয়েই রইলো। এই লোকটা এতো বদজাত কেন? লজ্জা দিয়ে মারবে। কুহুর ভাবার মাঝেই ইউসুফ ঝাপটে ধরে তার উপর শুয়ে পড়লো। কুহু ছুটতে চাইলে ধমকের সুরে বলে উঠে,
–” একদম নড়চড় করবি না! তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”
কুহু অভিমানের সুরে দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বলল,,
–” আপনার থেকে খারাপ আর কেউ হতেও পারে না।”

কুহুর কথায় হেসে ফেললো ইউসুফ। কিছু না বলেই গলায় গভীর চুম্বন করলো। সাথে সাথে কুহু কেঁপে উঠে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। তা দেখে ইউসুফ আবার হেসে ফেললো। তার বাবুইপাখিটা একে বারে লজ্জাবতী। ছুঁতে নিতেই জমে যায়।
সেদিন দুপুরে তারা রওনা দেয়। কুহু গাড়িতে উঠেই ঘুম সারা রাত ঘুমুতে দেয়নি ইউসুফ। তাই এখন ঘুমে ঢুলুঢুলু সে।যখন চোখ খুলে অবাক, বিস্ময় নিয়ে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে ইউসুফের দিক। ইউসুফ তখন নির্বিকার। তা দেখে কুহু ইউসুফকে ঝাপটে ধরে কান্না করে দেয়। বলে,,

–” আমি সত্যি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি এখনে আবার আসবো!”
ইউসুফ পরম স্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠে,,
–” আমি চাই আমার বাবুইপাখির সব স্বপ্ন পূরণ হোক। তুই বড় ডাক্তার হো। লোকে যেন তোর নামে আমাকে চিনে।”
কুহু পুলকিত ইউসুফের কথায়। সাথে ঢেড় অবাক। কত জন আছে এমন স্বামী পায়? কুহু ছলছল চোখে বলল,,
–” আমি অনেক ভাগ্যবতী আপনার মতো স্বামী পেয়েছি।”
ইউসুফ কুহুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,,

–” নাহ্ আমি অনেক ভাগ্যবান যে তুই আমার স্ত্রী। তুই ভাল করে পড়বি।বড় ডাক্তার হবি তোর হাতে কত বেবী হবে। সবাই বলবে ওই দেখ ডাঃ কায়নাতের বর যাচ্ছে। ততখন খুশিতে আমার বুক ভরে যাবে। সবাইকে তখন গর্ব করে বলবো “আমার_একটাই_যে_তুই❤️” যার তুলনা হয় না।”
কুহু দেখছে ইউসুফকে মন ভরে। এ লোকটি থেকে কত বছর দূরে ছিল। এ লোকটি কত ভালবাসে তাকে। আর তাকে ছেড়েই নাকি লাপাতা হয়ে ছিল কুহু। সত্যি কি মানুষটির যোগ্য সে?
ইউসুফ চলে গেল। একটি বার তাকালো না। না ফিরলো। না তাকে বিদায় জানালো! এমন কেন করলো। মনের মাঝে এক রাশ অভিমান জমা হলো কুহুর। সে রুমে চলে এলো।

এদিকে ইউসুফ ড্রাইভিং করছে আরেক হাতে বার বার শার্টের স্লিভে চোখ মুচ্ছে। তার যে খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই তো আর তাকায়নি সে। তাকালে যে তাকে রেখে যেতে পাড়তো না কখনো না।
সেদিনের পর থেকে তাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। ইউসুফ তার কাজে এতটা বিজি হয়ে যায় যে কুহুকে ঠিক সময় দিতে পারে না। কলে বড় জোর ১/২ মিনিট কথা বলে রেখে দেয়। আর কুহু অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর যেন কাঁটতেই চায় না। লাষ্ট তাদের কথা হয়েছিল ৫ দিন আগে। তাও ইউসুফ ফোন দিয়ে ঝেঁড়েছে শুধু কুহুকে। কারণ সে ডাঃ আশিকের বিয়ে এটেন্ড করেছিল সে। তার কিছু ছবি এফবিতে দিতেই রেগে আগুন হয়ে ফোন করে বকতে শুরু করে। সব চুপ করে শুনে তখন কুহু হেসে উঠে। বলে,

–“আর ইউ জেলাস?না?”
কুহুর কথায় ইউসুফ এক ধমক দিয়ে ফোন কেঁটে দেয়।তারপর থেকে আর কলই ধরছে না সে।
ঘড়ির এলার্মের শব্দে কুহুর ধ্যান ভাঙ্গে। ৪ টা বেঁজে গেছে। ভাবতে ভাবতে কখন যে এত সময় চলে গেল বুঝতে পারেনি সে।চোখের মাঝে অাসা অনিচ্ছাকৃত জল টুকু মুছে বিছানায় চলে এসেছে। ফোনটি তুলে কুহু কল দিলো। টুট টুট টুট করে অপর প্রান্তে রিং হচ্ছে। সাথে কুহুর বুকটাও দুরু দুরু করছে। আচ্ছা রাত চার টায় ফোন ধরবে ইউসুফ?

নাহ্ ধরলো না কল কেঁটে গেল। কুহু আবার দিল। রিং হচ্ছে। আবার কেঁটে যেতেই কুহু অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বিড়বিড় করে বলল,,
–” জানেন ইউসুফ প্রতিটি কলে ৬ টি রিং বাজে। প্রতিটি রিংয়ে আমি অপেক্ষা থাকি এই বুঝি ধরবেন। কিন্তু ধরেন না। অপেক্ষার প্রতিটি প্রহর যেন আমাকে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে। এ দূরত্ব যে আর সইবার নয়। ”

পরের দিন পরীক্ষা হল থেকে বের হয়ে কুহু যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। আজ থেকে পরীক্ষা শেষ তার।
ধীরে ধীরে হাটে মেইন গেটের সামনে আসতে পরিচিত মুখ দিয়ে বুকে ধক করে উঠলো।অপেক্ষার প্রহর যেন আজ শেষ হলো। তার হ্যান্ডসাম কিউট বিলাই চোখ ওয়ালা বরটি যে দাঁড়িয়ে। কালো প্যান্ট, সাদা শার্টে যেন এক রাজপুত্র হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে।কিন্তু এ কি হাল তার? কুহু দৌড়ে কাছে গেল ইউসুফের আলতো হাতে কঁপালে সাদা কাপড়ে ব্যান্ডেজ করা জায়গায় আলতো হাত বুলিয়ে ব্যাথাতুর দৃষ্টিতে বলে উঠে,,

–” কি হয়েছে আপনার? ব্যাথা পেলেন কিভাবে? এ জন্যই কথা বলছিলেন আমার সাথে? একটিবার জানালেও না আমাকে? কেন? খুব ব্যাথা করছে তাই না? আপনি খুব খারাপ একটি বার জানাতে পাড়লেন না?”
এক দমে কথা বলে থামলো কুহু। ইউসুফ হেসে ফেললো। বলল,,
–” আমি ঠিক আছি। চিন্তা করিস না। গাড়ি তো উঠ।”
কুহু মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে রইলো। তাদেখেই চট করে কুহুকে কোলে তুলে নিলো। কুহু যেন আকাশ থেকে পড়লো। নিজের অবস্থান বুঝে লজ্জা পেল। ইউসুফ কুহুকে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসে পড়লো। কুহু তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,

–” কই যাচ্ছি?”
–“দ্বিতীয় হানিমুন ” মুচকি হাসলো সে।
কুহু লজ্জায় বাহিরে তাকিয়ে রইলো। অবশেষ গাড়ি এসে থামলো সাজেকের পথে। কুহু খুশিতে বলে উঠলো,,
–” আমরা সাজেক যাচ্ছি?”
–“হে”
ঘন্টা খানেক পর কুহু আর ইউসুফ এসে হাজির হয় সাজেকের সেই বুড়ো -বুড়ির বাড়ি। কুহু অবাক। ইউসুফ হেসে গাড়ি থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হলো। কুহুও গেল তার সাথে। বুড়ো বুড়ি তাদের দেখেই সেই খুশি। খুশিতে আত্মহারা যাকে বলে।
বুড়ি বলল,,

–” আমাগো কথা মনে পড়ে তোমাগো?”
ইউসুফ হেসে বললো,,
–” তাই তো চলে এলাম আপনাদের এইখানে থাকতে! এগুলো রাখেন!”
বুড়ো বলল,,
–” আব্বা এগুলোর দরকার কি ছিল?তোমরা আসছো এতেই আমরা খুশি!”
কুহু বলল,,
–” বুড়ি মা তোমার সাথে কথা আছে চলতো।আসো আসো।”

বলে ভিতরে নিয়ে গেল। ইউসুফ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। তা দেখে বুড়ো হেসে বলল,,
–” আরাত মানুষ এক হইলে খুশুর ফুসুর শুরু চলে বাহিরে যাই আমরা।”
চারিদিকে আজ জোছনার আলো। সেই আলোতে গোসল করছে গাছপালা, দূরের সেই পাহাড়, পাখি, জীব। কি সুন্দর সব। সেই আলোতে ইউসুফও গোসল করছে বলেকনিতে দাঁড়িয়ে। সেই রুমটিতে যেখানে আগের বুড়োবুড়ি তাদের থাকতে দিয়েছিল। তখনি রুমে প্রবেশ করে কুহু। সেদিনের মতোই ব্লাউজ বিহীন এক পেচে শাঁড়ি পড়ে একি সাজর দাঁড়িয়ে আছে। ইউসুফ যেন সম্মোহন হয়ে গেল কুহুকে দেখে। ধীরে পায়ে এগিয়ে কুহুর মুখোমুখি দাঁড়ালো। নেশাতুর কন্ঠে বলল,,

–” মারতে এসেছিস? ”
কুহু হাসলো লাজুক হাসি। বলল,,
–” নাহ্ মরতে এসেছি।”
বলেই ইউসুফের বুকে জড়িয়ে ধরলো। ইউসুফে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। কুহু চুপ করে ইউসুফের হৃদপিন্ডের ডিপ ডিপ আওয়াজ শুনতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর ইউসুফ কুহু থুতনি ধরে মুখ তুলে তাকিয়ে রইলো। তিন মাসের অপেক্ষা আজ অবসান ঘটবে।

সকালে ঘুম ভাঙ্গলো বাহিরের চেঁচামেচিতে। বাহির থেকে ভেসে আসচ্ছে কান্নার শব্দ সাথে মৃদু আর্তনাদ।কুহু সেদিকে যেতেই দেখে বুড়ি কাঁপড়ে মুখ গুজে কাঁদছে। কুহু জিগ্যেস করতেই বুড়ি বলল,,
–” পাশের বাড়ির মাইডা কাতরাইতাছে। বাচ্চা হওয়ার কথা। দাইমা কইলো বাইচ্চা উইলডা গেছে। মাইয়া ডা কেউ নাই সোয়ামী তাহে ঢাহা শহর আইতে মেলা সময়। হাসপাতলে নিউন লাগবো। ”
–” আচ্ছা বুড়ি মা সমস্যা নেই আমি ব্যবস্থা করতেছি। বলে এগিয়ে যেতেই বুড়ি আটকে বলল,,
–” হাসপাতাল মেলা দূর ওর বেশি সময় নাই মা। ”
কুহু অস্থির হয়ে বলল,,

–” এভাবে বসে থাকলে চলবে না বুড়ি মা। মা-বাচ্চা দুজনেই মরে যাবে।”
এসবের মাঝে ইউসুফ এসে দাঁড়ালো। কুহু তাকে বলল,,
–” ইউসুফ আমাদের উনাদের হেল্প করা দরকার। গাড়ি বের করুন!”
তখনি পাশ থেকে দাই মা বললো,,
–“ওরে নড়াচড়া করুন যাবো না।”
কুহু চিন্তায় পরে গেল। তখন ইউসুফ বলল,,
–“তুইতো ডাক্তার তুই কিছু কর কুহু? তুই দেখ?কোনো উপায় আছে নাকি?”
কুহু অবাক হলো। সেতো ভুলেই গেছিলো। কিন্তু সে কি করবে। ছল ছল চোখ বলল,,
–” আমার কিছু মাথায় আসচ্ছে না।”

তখনি আবার শুনা গেলো সেই মেয়েটির চিৎকার। আত্মা কেঁপে উঠলো কুহুর। ইউসুফ কুহুর গালে হাত রেখে বলল,,
–” কুহু চিকিৎসা বিদ্যা এমন অনেক প্রাচীন পদ্ধতি তো আছেই যখন যন্ত্রপাতি ছিল না তখন তারা সেই পদ্ধতি ব্যবহার করতো! এমন কিছু কি নেই?”
কুহু ভাবতে লাগল। গত কাল এমন একটি পদ্ধতি সে পরীক্ষার খাতায় লিখেছে। মনে পড়তে চকিতে বললো,,
–” হে! হে। আছে একটি পদ্ধতি। বাইপোলার পদ্ধতি। ”
–” তাহলে দাঁড়িয়ে কেন তুই কাজে লাগা।”
কুহু এবার কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,,
–” কিভাবে আমি কখনো ব্যবহার করি নি।শুদু বইয়ে পড়েছি। আমি পাড়বো না ভাইয়া।”
ইউসুফ আবার বুঝতে লাগলো,,

আমার একটাই যে তুই পর্ব ৪২

–” পারবি তুই কুহু। আমার ভরসা আছে তোর উপর। একবার এ মেয়েটির কথা বাচ্চার কথা ভাব। সে বাবার কথা ভাব যে ছুটে আসচ্ছে সন্তান আর তার স্ত্রীর জন্য তার জন্য হলেও পাড়তে হবে তোকে। দেখ কুহু এমন শিক্ষার কোনো দাম নেই যে শিখা সময় মতো কাজেই না লাগে পাড়িস?”
কুহু মেয়েটির দিক তাকিয়ে কাঁদতে লাগলো। মনে পড়লো তার মাও তাকে জম্মদিতে গিয়ে মারা গেছিলো। হু হু করে উঠলো কুহুর বুক। সে চোখ মুছে রুমে গেল। সাথে গেল পাড়ার মহিলা কিছু আর বুড়ি। বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলো সবাই। ইউসুফ পায়চারী করছে। আর দোয়া করছে তার বাবুইপাখি যেন সফল হয়।

২ ঘন্টা পড় ভিতরের সব নিরব হয়ে গেল। সবাই এখন রুমটির দিক তাকিয়ে। তখনি কুহু দৌড়ে বাহিরে ঝাঁপটে ধরে ইউসুফে হু হু করে কেঁদে দিল। সবই কুহুর দিক উৎসুক চোখে তাকালো। তখনি বুড়ি বের হলো খুশি মুখে। হাতে তার ফুট ফুটে ছেলে বাচ্চা। বুড়ি খুশি খুশি মুখে বলল,,
–” আমাগো সুমির পোলা হইছে।মা -পোলা দুজনেই ভালা আছে।””
সাথে সাথে যেন খুশির রোল পড়ে গেল। এই গ্রাম সেই গ্রাম সহ পুরো সাজেকে এই খবর ছড়িয়ে পড়লো। সবাই খুশিতে কুহুর জয় জয় হতে লাগলো।

কুহু এখনো ইউসুফের বুকে। ইউসুফ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
–“প্রাউড অফ ইউ বাবুইপাখি। আমি আজ খুব খুশি। আজ থেকে সবাই তোর নামে জানবে আমায়। আমি গর্বিত অনেক অনেক অনেক। আজ তুই হলি প্রকৃত শিক্ষার্থী। তারপর গর্বের সাথে চিলিয়ে বলে উঠলো “আমার একটাই যে তুই❤️”
কুহু এখনো কেঁদেই চলছে। খুশির কান্না। তার চোখ সেই দূর গাছের ডালে পাখির বাসায়। মাত্র দুটি বাচ্চা ফুঁটলো। মা পাখিটা ঘুর ঘুর করছে। কি শান্তি মা পাখিটির চোখে। ঠিক তেমন শান্তি পাচ্ছে তার মনে।

❤️সমাপ্ত❤️

(লেখাঃ সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এবং এই গল্পের সিজন ২ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন

1 COMMENT

  1. Just osm khub khub khub khub khub khub sundor hoeache Khub Khub Khub Khub valo legeche Khub Khub Khub

Comments are closed.