তুমিময় আসক্তি গল্পের লিঙ্ক || Writer Mahfuza Akter

তুমিময় আসক্তি পর্ব ১
Writer Mahfuza Akter

শাড়ির কুঁচি গুলো একটানে খুলে ফেলতে যাবো ওমনি আমার বাঁ গালে সপাটে এক চড় বসিয়ে দিলেন নির্জন। আকস্মিক আক্রমণে গালে হাত দিয়ে তার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকালাম। নির্জন রক্তচক্ষু দিয়ে তাঁকিয়ে বললেন,
— আফ্রান জোহায়ের নির্জনকে তুমি এখনি চিনতেই পারোনি, গুঞ্জন। তোমার কি মনে হয় আমি এতোটাই বোকা? যে মেয়ে বোরকা ছাড়া এক পা-ও বাইরে দেয় না, সে আমার সামনে দাঁড়িয়ে এসব নাটক দেখাবে আর আমি বিশ্বাস করে নেব! হাহ! হোয়াট আ ফুলিশ থট!!

আমি হতবাক! বলে কী এই ছেলে?? আমার ব্যাপারে কীভাবে জানলেন? তার মানে উনি আমাকে আগে থেকে চেনে! আর আমি কিনা বোকার মতো নিজেকে খারাপ প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলাম!! তাহলে কি বিয়েটা হয়েই যাবে?
আমার নাম আফরাহ্ সেহরীশ। সবাই গুঞ্জন বলে ডাকে। পড়াশোনার কথা বললে বর্তমানে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট আমি। আর আমার সামনে এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে আছেন ফেমাস পলিটিশিয়ান আফ্রান জোহায়ের নির্জন। আজ তিনি পরিবার নিয়ে আমায় দেখতে এসেছেন আর আমি বিয়েটা ভাঙার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
হাতে হাত কচলে এসব চিন্তা করতে করতে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললাম,

— দে….দেখুন! আমি…..
আমায় থামিয়ে দিয়ে নির্জন কাঠকাঠ গলায় বললেন,
— যদি ভেবে থাকো এসব উদ্ভট ট্রিকস্ কাজে লাগিয়ে বিয়েটা ভেঙে দিবে, তবে তোমার সে গুড়ে বালি! বিয়ে আমি তোমাকেই করছি এন্ড ইট’স মাই চ্যালেঞ্জ টু ইউ!
এমন কথা শুনে নির্জনের দিকে বিস্ময়বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকালাম। লোকটা বলে কী! আমার এতো সাধের প্ল্যানটায় এক বালতি জল ঢেলে দিয়ে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলে যাবে!! আমি সেটা হতেই দেবো না। একটা ঢোক গিলে বললাম,
— আপনি ভুল করছেন। পরে পস্তাতে হবে আপনাকে। আমি একদমই ভালো মেয়ে না। আমার অনেক বয়ফ্রেন্ড আছে। যখন যাকে ভালো লাগে, তার সাথেই রিলেশনে যাই। আমার মতো মেয়েকে বিয়ে করে আপনি কেন নিজের জীবনটাকে বরবাদ করতে চাইছেন?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নির্জন কিছুক্ষণ আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন। বিরক্তি নিয়ে বললেন,
— এতো মিথ্যে এক নাগাড়ে কী করে বলো তুমি, গুঞ্জন? তুমি কি এখনো বুঝতে পারছো না যে, আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই চিনি? মাথাটা একটু কাজে লাগাও। এতো বোকা হলে চলবে কী করে?
বলেই আমার দিকে দুই পা এগিয়ে এসে আমার শাড়ির আঁচল দুই হাতে ধরে কপাল পর্যন্ত টেনে দিলেন নির্জন। আবার একটু পিছিয়ে গিয়ে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে প্রসন্নের হাসি দিয়ে বললেন,
— নাও লুকিং পার্ফেক্ট।

আমি বোকার মতো ওনার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার একটা কথাও উনি বিশ্বাস করলেন না! একটু সন্দেহও নেই তার মনে। তাহলে এতোগুলো মিথ্যে বলে লাভটা কী হলো আমার? আমার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে দিয়ে নির্জন বললেন,
— আমি জানতাম তুমি বিয়েটা ভাঙার জন্য কিছু একটা করবেই। কিন্তু সেটা আমি হতে দেবো না। অনেক কিছুই তোমার অজানা। সবটা তোমায় না জানাতে পারলেও এটুকু জেনে রাখো, শুধুমাত্র তোমার নিজের স্বার্থের জন্য বিয়েটা তোমায় করতে হবে।
অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,

— আমার নিজের জন্য মানে?
— মানেটা জানার সময় এখনো আসেনি, গুঞ্জন। সময় এলে তোমার বাবা-মা ই তোমাকে বলবে। এখন চলো, বসার ঘরে সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
নির্জন দরজার দিকে পা বাড়াতেই আমি পেছন থেকে জিজ্ঞেস করলাম,
— আমাকে আগে থেকে কীভাবে চেনেন?
উনি আমার দিকে তাঁকিয়ে ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে বললেন,
— হোয়াট ইজ লটেড, কান্ট বি ব্লটেড!

আমার প্রশ্নের প্রেক্ষিতে এমন একটা জবাবের মানে খুজে পেলাম না। ভ্রু কুঁচকে তাঁকাতেই নির্জন বললেন,
— তোমাকে কীভাবে চিনি, কবে থেকে চিনি, এসব কোনো ফ্যাক্টর না। তোমায় বিয়ে করছি, এটাই আসল। সবসময় মানুষ যা চায়, তা ঘটে না। অনেক সময় ভাগ্যই পরিস্থিতি তৈরি করে দেয়।

বলেই নির্জন দরজা ঠেলে বেরিয়ে গেলেন আর আমায় ফেলে গেলেন একটা গোলকধাঁধার মধ্যে। কাল বাবাও আমাকে বলেছিলেন, বিয়েটা আমার জন্য অনেক জরুরি। আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাবা এমনটা বলছেন। সব বাবাই মেয়েদের বিয়ে নিয়ে কম-বেশি চিন্তিত থাকে। এসব ভেবে বাবার কথাটাকে তেমন গুরুত্ব দেইনি আমি। উল্টো নিজের পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে বিয়ে ভাঙার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলাম। নিজেকে খারাপ প্রমাণিত করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আজ নির্জনের কথা শুনে মনে হচ্ছে, অনেক বড় কোনো সত্য আছে যেটা বাবা, মা আর নির্জন জানলেও আমি জানি না। কিন্তু সেটা কী?
ভাবনার মাঝেই বাইরে থেকে বাবার গলা শুনতে পেলাম,

— গুঞ্জন, এদিকে আয় মা।
সাথে সাথেই বিরক্তি চারপাশে ঘিরে ধরলো আমাকে। ধুরর! বিয়েটা আর আটকানো যাবে না মনে হচ্ছে। বিড়বিড় করে নির্জনের চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে করতে নিচে গেলাম।
যেটা ভেবেছি, সেটাই হলো। সামনের মাসে আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার এক সপ্তাহ পরেই বিয়ের তারিখ ফিক্সড হলো। নির্জনের মা আমার হাতের আঙুলে আংটি পরিয়ে তারপরেই ক্ষান্ত হলেন। তবে মানতে হবে আংকেল-আন্টি অনেক ভালো, মুহুর্তেই মানুষকে আপন করে নিতে জানে।

সন্ধ্যার পর স্টাডি রুমের দিকে পা বাড়ালাম। উদ্দেশ্য একটাই, বাবার কাছ থেকে আমার অজানা কথাগুলো শোনা।
— বাবা, তুমি কি ব্যস্ত?
বাবা খুব মনযোগ সহকারে একটা ফাইল দেখছিলেন। হয়তো কোনো কেসের ফাইল! আমায় দেখে সেটা টেবিলে রেখে হাসি মুখে বললেন,
— আরে, আমার মামনি যে! যতই ব্যস্ত থাকি না কেন? তোর সাথে কি সেটার তুলনা চলে? আয় ভেতরে এসে বস।
আমি বসতে বসতে বললাম,

— বাবা, আমায় কেন এভাবে বিয়ে দিতে চাইছো? বিয়েটা কেন এতো জরুরি?
আমার আকস্মিক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে বাবার মুখটা কালো হয়ে গেল। হয়তো এমন কথা আশা করেননি। শান্ত গলায় বললেন,
— এই ব্যাপারে তোকে কিছু বলতে চাই না আমি। সব কিছু জানতে হয় না। নিজের সুখের কথা ভেবে কিছু কথা অজানা থাকাই ভালো। এটা মেনে নে।

বাবার কথায় অবাক না হয়ে পারলাম না। মুহূর্তেই চোয়াল ঝুলিয়ে মুখ হা হয়ে গেল আমার। বললাম,
— কিন্তু নির্জনকে তো বলেছো! আমাকে বললে সমস্যা কোথায়?
— আমি নির্জনকে কিছু বলিনি। ও আগে থেকেই সবটা জানে। এজন্যই ওকে তোর জন্য সিলেক্ট করেছি। ও তোর সাথে ছায়া হয়ে থাকবে, দেখিস। আমার ভরসা আছে নির্জনের ওপর।
বাবার দিকে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

— বাই এনি চান্স, তুমি কি আমার কোনো বিপদের আশংকা করছো?
— ধরে নাও তাই! তবে আমার কাছে তোমার বিয়েটা ইম্পর্ট্যান্ট না, বরং নির্জনের সাথে তোমার থাকাটাই ফ্যাক্ট।
বাবার সব কথাই আমার মাথার কয়েক হাতে উপর দিয়ে যাচ্ছে। এতো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলছেন কেন সেটাই বুঝতে পারছি না। আমার ব্যাপারে আমাকেই জানাতে নারাজ সবাই। সবটাই কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে!

★মাঝরাত★
অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে গুঞ্জন। হঠাৎ বারান্দার দরজাটা খট করে খুলে গেল আর ঘরের ভেতর অতি সাবধানে প্রবেশ করলো এক অজ্ঞাত ছায়ামূর্তি। গুঞ্জন গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই। ঘরে সে ব্যতিত যে দ্বিতীয় এক ব্যক্তির আগমন ঘটেছে, সেটা গুঞ্জন টের পেল না। ব্যক্তিটা কালো কোটের ইনসাইড পকেট থেকে এক ঝকঝকে ধারালো ছুরি বের করলো আর ধীরে ধীরে গুঞ্জনের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। এদিকে গুঞ্জন গভীর ঘুমে কাতর!!

তুমিময় আসক্তি পর্ব ২