আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৬ || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৬
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

সময়টা সন্ধ্যার পর পর। যাকে বলে কালি অন্ধকার!
ইউসুফ ভাইয়া পা ঝুলিয়ে বসে পড়লেন পাহাড়ের এক কোনে।সাথে আমাকেও বসালেন জোড় করে!আমি তার হাত চেপে তার গা ঘেসে বসে।চোখ দুটো বন্ধ করে আছি। ভয়ে আমার আত্মা যায় যায়। তিনি তখন আমায় নির্ভয় দিয়ে বললেন,,
–” বাবুইপাখি!আমি আছি তোর সাথে ভয় পাচ্ছিস কেন? চোখ খোল দেখ সামনের দৃশ্য গ্যারান্টি দিচ্ছি! ভয়-টয় সব ছু মন্তর হয়ে যাবে । প্লীজ বাবুইপাখি ভয় পেয়ে এই মোমেন্টটা নষ্ট করিস না।।”

আমি ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকাতেই চমকে গেলাম। আমার পায়ের নিচ থেকে শুরু হয়েছে মেঘের ভেলা। রাশি রাশি তুলতুলে হাজারো মেঘ জমা হয়েছে পাহারের আনাচে কানাচে। মনে হচ্ছে মেঘের সমুদ্র।
কালি সন্ধ্যার এ অপার দৃশ্য আমি বিমোহিত। কালোর মাঝে মেঘরাশির শুভ্র রং আলোকিত হয়েছে চারিদিক। মনে হচ্ছি ডুবে যাই এই মেঘমালার ভিড়ে।হারিয়ে যাই অপার সৌন্দর্যের মাঝে।

আমি এসব কিছু এতটাই মুগ্ধ হয়ে দেখছি যে পাশের মানুষটির হাত আরো চেপে ধরে আছি আমি সে দিকে কোনো খেয়াল ছিল না।আর উনি যে আমার দিক তাকিয়ে আমার হাসি উজ্জ্বল মুখটির দিক গোড় লাগা দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে আছেন সেদিকে আমার কোনো খেয়ালি নেই।যখন তার দিক খেয়াল করি! তিনি তাকিয়ে আমার দিক এক দৃষ্টিতে চেয়ে। তার চোখের উপর আমার দৃষ্টিও এটে । কতটা গভীর এই চোখ দুটো। কি আছে তার দৃষ্টিতে যা আজ ধরতে পারচ্ছিনা আমি। কিন্তু কেন?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এভাবে চলতে থাকে কিছুক্ষণ দৃষ্টি বিনিময়। এই দৃষ্টিতে যেন হারিয়ে যাচ্ছি আমি। তখনি উনি আমার খুব কাছে চলে আসেন।এতটা কাছে যে তার নিশ্বাস আছড়ে পড়চ্ছে আমার মুখে।আমার কি হলো আমি জানি না। বুকের মাঝে ধুকপুক ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে আমার।সরে আসবো তার শক্তিটুকু নেই আমার। মনে হচ্ছিল স্ট্যাচু হয়ে গেছি।যখনি নিজেকে সামলে সরে আসতে নেই তখনি ইউসুফ ভাই আমার কোমরে চেপে তার আরো কাছে নিয়ে গেলেন। অন্য হাতে গাল ঘেসে কানের পিছনে নিয়ে গেলেন আর শক্ত করে তার মুখে কাছে নিয়ে আসলেন। আমাদের দু জোড়া ঠোঁট তখন ছুঁই ছুঁই। আমার ঠোঁটের দিক উনার দৃষ্টি। আমি তার দিক চোখ বড় করে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছি তার মতি গতি। যখন বুঝতে পাড়ি সে কি করতে যাচ্ছে! তখন আর বাধা দিতে ইচ্ছে হলো না আমার। আবেশে বন্ধ করে ফেলি আমার নয়ন গুলো। মনে চাইছে ছুঁয়ে দিক তার ঠোঁট আমার ঠোঁট। মিলে যাক তারা। হারিয়ে যাই তার স্পর্শের গভীরতায়। হারিয়ে যেতে চাই তার মাঝে।কিন্তু যখন অপেক্ষার প্রহর কাটচ্ছিল না আর সময় তার গতি ধরে বয়ে চলছিল।তখন বিরক্তি হলাম আমি! তার কিসের এত দেড়ি? কেন করছেন এমন? কেন দিচ্ছে না সাড়া? আমি তো তৈরি তাতে হারাতে! সে বুঝতে ব্যর্থ?

এসব ভাবতে ভাবতেই পিট পিট করে তাকালাম আমি! কিন্তু একি উনি হাসছে! মিট মিট করে হাসচ্ছে? কেন?
তখনি তিনি বলে উঠলেন ভ্রু নাচিয়ে হেসে হেসে,,,
–” বাবুইপাকি কি ভাবচ্ছিলি? কিস করবো তাই না?
বলে হো হো করে হেসে দিলেন তিনি।তার এই হাসিতে পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে আমার?মন যাইচ্ছে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই তাকে।তার সাথে লজ্জা লাগচ্ছে খুব! কি ভাবলেন তিনি এখন আমায়।রাগে, দুঃখে অভিমান জমা হয়ে গেল একারাশ। সেই রাগকেই প্রাধান্য দিয়ে উঠে যেতে নেই আমি! সাথে সাথে হাত চেপে গম্ভীর ভাবে বলে উঠলেন উনি,,
–” আমি এখনো যাওয়া অনুমতি দি নাই সো সিট ডাউন!”
কিন্তু আমিতো আমি এ লোকের সাথে আর না। তাই হাত ছাড়াতে চাইতেই দিলেন ধমক। তার ধমকে পিলে চমকে উঠলো আমার আগত বসত হলই তার সাথে।

হেটে হেটে হোটেলের দিক যাচ্ছি আমরা। ইউসুফ ভাইয়াও পকেটে হাত গুজে আমার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছেন।তার দিক লজ্জায় তাকাতে পাচ্ছি না আমি তাই চোখ বুলাচ্ছি আশেপাশে। রাতের সাজেকে লাল-নীল আলোতে সাজায়িত দোকান পাঠ। রোডের ধারে আছে আদিবাসীদের হাতে তৈরি করা আসবাব পত্র। নানা রকমের খাবারের আইটমে নিয়েও আছে কিছু স্টল। আমার ধেয়ান পুরোপুরি তাদের দিক। জায়েদ ভাইয়া ঠিকি বলেছে সাজেক খুব সুন্দর। দিনে এক, রাতে আরেক এযেন এক সুন্দরের গোলোক ধাঁধা। হাত টান পড়ায় ভাবনা ভাঙ্গে আমার। ইউসুফ ভাইয়া আমাকে টেনে নিয়ে হাটা ধরলেন সামনে। বিজিবি কেম্পের সামনে এসে থেমে গেলেন তিনি। তার দিক জিগাসা দৃস্টিতে তাকাতেই তিনি মিষ্ট করে হাসলেন। আর বললেন,,

–” সামনে দেখ!”
আমিও সামনে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে গেলাম। এত উঁচু থেকে পাহারের নিচের ঘড় বাড়ি আলো দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছিল মরিচ বাতি জালিয়েছে কেউ? এত উপর থেকে এমন একটি দৃশ্য দেখা ভাগ্যের বিষয়।
তখনি ইউসুফ ভাইয়া নিচের দিক তাকিয়ে বললেন,,
–“জানিস কুহু! সাজককে রাঙ্গামাটির ছাদ বলা হয়।”
আমি ভ্রু কুচকে জিগ্যেস করলাম,,
–“কেন?”
–“কারণ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায় সাজেক। তাই সাজেক ভলিকে বলা হয় ‘রাঙ্গামাটির ছাদ’।
–” ওহো! ”

ইউসুফ ভাই আবার হাটা ধরলেন। তার এভাবে বার বার আমাকে টেনে নিয়ে যাওয়াতে এক প্রকার দৌঁড়াতে হচ্ছে। এত লম্বা মানুষের সাথে কি আমি হেটে পাড়বো?? উনিকি বুঝেন না??তাই বললাম,,
–” উফ! একটু অাস্তে হাটেন এভাবে হাটাতে হাফিয়ে উঠচ্ছি আমি।একটু থামেন?”
–“উম হুম কোনো থামা থামি নাই ব্যাম্বু চিকেন খাবো এখন! সো কথা কম হাট তাড়াতাড়ি! ”
আমি রাগে গাল ফুলিয়ে ফেললাম সাথে সাথে। বেটা খবিশ একটা, নির্ঘাত শয়তানের নানা।

আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৫

“ব্যাম্বু চিকেন” ডিস টা সেই ছিল। এটি বাশের মাঝে রান্না হয়। পাহাড়ি এলাকার বন্য মুরগী কেঁটে সব উপকরণ দিয়ে বাশেঁর ভিতর ঢুকিয়ে সেটা ঢেকে দেয়া হয়।তারপর জলন্ত আগুনে বাশ রেখে দেয়। কিছুক্ষণ পর এনে সার্ভ করে রুটি বা ভাতের সাথে।টেষ্ট ১০০ তে ১০০। আমরা সবাই চেটে পুটে খেয়েছি। হাসান ভাই আর ফুয়াদ ভাই খাবার শেষে রীতিমত ঢেকুর তুলেছে। যা দেখে ইউসুফ বলে উঠে,,
–” শালা মান সম্মান আর রাখলি না।”

তার কথায় হাসতে লাগে সবাই।খাবার শেষে হোটেলের পিছনে কেম্প ফায়ারের আয়োজন করা হয়। সেখেনে বসে আড্ডার আসর। চারিদিকে সবাই গোল করে বসে আছে। ইউসুফ ভাইয়া এসে বসতেই তার পাশে এসে হুড়মুড় করে বসে গেল লিয়া। মনটা খারাপ লাগলো আমার। তখনি তিনি লিযাকে দিলেন ধমক। লিয়া তখন কাঁদ কাঁদ মুখে উঠে গেল। লিয়ার এমন মুখ দেখে হেসে উঠলাম আমরা। সে রাগে বিড় বিড় করতে করতে তার রুমে চলে গেল।আমি চোখ বুলালাম সবার দিক তিথি জায়েদ ভাইয়ার সাথে বসে হাসাহাসি করছে কিছু বিষয় নিয়ে।রিয়ার সাথে ফুয়াদ ভাইয়ার ভাল ভাব হয়েছে। হাসান ভাইয়পা গিটারের তার ঠিক করছেন। নুশরা, বুশরা আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে। আমি আড় চোখে তাকালাম ইউসুফ ভাইয়ার দিক। তিনি আমার দিক তাকিয়ে আছেন। তখনি হাসান ভাই বললেন….!

আমার একটাই যে তুই পর্ব ১৭