আমার একটাই যে তুই পর্ব ২২ || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আমার একটাই যে তুই পর্ব ২২
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আর ঠিক তখনি দরজার সাথে পিঠ ঠেকে গেল আমার! আর ইউসুফ আমার দু পাশে দু হাত দিয়ে আটকে আমায় বন্দি করে নিলেন।পরে আমার দিকে ঝুকে বলল,,
–“তুই না ভয় পাশ না আমাকে! পালাচ্ছিস কেন তাহলে!”
আমি লাজুক হাসে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম,,
–” হুম পাই না তো!”
তিনি আরেকটু ঝুঁকে এসে বললেন,,

–” আচ্ছা! তা নজর এদিক ওদিক করে কেন বলছিস! আমার দিকে তাকিয়ে বল! আমি দেখি তোর সাহসীকতা!”
আমি নিচের ঠোঁট কামড়ে তার দিক তাকালাম। তিনি নিশব্দে হাসচ্ছেন! তার এই হাসিতে আমার ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে! তাও নিজেকে সামলে তার চোখে চোখ রেখে বললাম,,
–” এই যে চোখে চোখ রেখে বললাম! ভয় পাই না আপনাকে!”
ইউসুফ ভাই তার ঠোঁটের হাসি চড়া করে বললেন,,
–“বাহ্ সত্যি তো সাহসী হয়ে গেছিস! এবার তোকে সাহসীকতার পরীক্ষা দিতে হবে!”
বলে আমাকে ছেড়ে চেয়ারে গিয়ে আগের মতো বসে পড়লেন চোখ বুজে!আমি তখন ভ্রু কুচকে বললাম,,

–“কি পরীক্ষা ভাইয়া!”
উনি সাথে সাথে চোখ খুলে এক বাজখাঁই ধমক দিয়ে বললেন,,
–” ভাই ডাকবি না! ভাই ডাকলে আবার সেই জঙ্গলে ফেলে আসবো বেদ্দপ!”
তার এমন বাজখাঁই ধমকে পিলে চমকে গেল আমার। মিনমিন করে বললাম,,
–” তো কি ডাকবো! ভাই কে ভাই না ডেকে!”
ইউসুফ ভাই ভ্রু কুঁচকে বললেন,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–“তাইলে ভাই ডাক! আমার বউ করবো না তোকে!কখনো না। ডাক আর বেশি বেশি,,!”
ইউসুফ ভাইয়ার কথায় চমকালাম আমি! এই লোকটির আজ কি হলো! এ কেমন কথা বার্তা? তাকে ভাই না ডাকলে ডাকবো টা কি আমি!তাই এক ভ্রু উঁচু করে বললাম,,
–” ভাই না ডাকলে কি ডাকবো!”
উনি এবার হাসলেন। লাজ্জুক হাসি! হেসে হেসেই বললেন,,
–“বউ যা বরকে ডাকে! তাই ডাকবি!”
আমি গোল গোল চোখে তাকিয়ে বললাম,,
–“কি ডাকে! বউ তার বরকে!”
ইউসুফ ভাই চোখ মুখে বিরক্তি নিয়ে বললেন,,
–“উফ! এটা জানিস না তুই! হুম!”
আমি মাথা নাড়ালাম।এদিক ওদিক মানে জানি না!
তিনি ছোট শ্বাস ফেলে বললেন,,

–“আমারি শিখাতে হবে! হু! আচ্ছা শোন! তুই আমাকে ডাকবি! ওগো শুনচ্ছো! এদিকে এসো! এভাবে ডাকবি! কি বুঝলি!”
ইউসুফ ভাইয়ার “ওগো শুনচ্ছো” কথাটি শুনে ভিষন রকম হাসি পাচ্ছে! কি সুন্দর অভিনয় করে বলছেন কথা গুলো! হাসি আটকাতে না পেরে হেসে দিলাম আমি!তখন তিনি ধমকে বললেন,,
–” হাসচ্ছিস কেন! হাসার মতো কি বললাম!”
তার ধমকে চুপ আমি! নিজেকে সামলে বললাম,,
–” আচ্ছা ডাকবো!”
ইউসুফ ভাই আবার চোখ বুজে রইলেন! কি করি এখন খুদাও পেয়েছে বড্ড! তাই তাকে তার কথা মতোই ডাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। বললাম,,

–“এই যে শুনচ্ছেন! না না ওগো শুনচ্ছেন! খুদা লাগচ্ছে চলুন না প্লীজ খাবো!”
ইউসুফ ভাইয়া পিটপিট করে তাকিয়ে বললেন,,
–” এটা কেমন ভাবে ডাকলি মনে হচ্ছে তিতা করলা।মধু মিশ্রিত করে ডাক!”
–” শুনুন আমার এসবে অভ্যাস নেই তো! আস্তে আস্তে হবে আরকি! প্লীজ চলুন খাবো!”
ইউসুফ ভাই তখন আরাম করে বসে চোখ বুঝে বললেন,,
–“তা ঠিক আছে! বাট তোর সাহসীকতার পরীক্ষা এখনো বাকি! আগে পরীক্ষা দে পড়ে সব!”
আমি আবাক হয়ে বললাম,,
–” কি পরীক্ষা! ”

তখন তিনি চকি এমন একটি কথা বললেন। যা শুনে হতভম্ব আমি! তিনি বললেন,,
–” কিস মি!”
আমি চমকে বললাম,,
–“কি?”
ইউসুফ ভাই হাত দুটো টান টান করে আড়মোড়া নিতে নিতে বলল,,
–“কিস কর আমাকে!”
তার কথা শুনে ভয়ে মুখ চুপসে গেল আমার। অসহায় ভাবে বললাম,,
–“এসব কি বলছেন! আমি পারবোনা! ”
ইউসুফ ভাই তাচ্ছিল্যের স্বরে বললেন,,

–“এই তোর সাহসীকতা! বলতে না বলতেই ফুস করে চুপসে গেলি! আবার বলে ভয় পায় না!”
ইউসুফ ভাইয়ার তাচ্ছিল্য নিয়ে কথা বলায়। রাগ উঠলো আমার। আমি মোটেও তাকে ভয় পাই না! পাই না, পাই না! ব্যস! সে কি বাঘ নাকি ভাল্লুক! যে ভয় পেতে হবে হুহ! সামন্য একটা কিসিই তো! ভয় পাওয়ার তি আছে! কুহু তুই পাড়বি! সব পাড়িস তুই! গো এহেড! ইউসুফ চোখ বুজে ছিলেন! সেই সুযোগে! হা-ডু-ডু খেলার মতো দৌড়ে টুপ করে গালে চুমু খেয়ে আবার দৌড়ে রুমে চলে আসলাম। এতে ইউসুফ ভাই বিসম খেয়ে বসে আছেন যা জানালা উঁকি দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তার বিস্মিত মুখখানা। এবার বুঝুক আমি সব পাড়ি! হুম!

খাবার খেতে বসেছি! অধিবাসীদের খাবার! বুড়ি আজকে বাঁশ রান্না করেছে কচি বাঁশ। এটা পাহাড়ি এলাকার অধিবাসীদের প্রিয় খাবার বললেও চলে! আমি প্রথমে খাবার দেখে নাক ছিটকালেও। ইউসুফ ভাই খেয়ে যাচ্ছে দিব্বি! আর থেকে থেকে মুখের এমন ভঙ্গিমা করছে যেন এই খাবার থেকে সুস্বাদু খাবার আর একটি নেই দুনিয়াতে! তার খাবারের স্টাইল দেখে আমারো লোভ লাগলো! আমিও মুখে দিলাম। সত্যি মজা! আর মজা করে খেতেও লাগলাম খুব করে!
খাবার শেষে খাটের এক পাশে শুয়ে পড়লাম আমি ইউসুফ ভাই এসে আমার ওপর প্রাণ্তে শুয়ে আমাকে কাছে টেনে নিতে নিতে বললেন,,

–” দূরে কেন তুই! আজ থেকে আমার বুতে থাকবি! ককনো দূরে থাকবি না এক ইঞ্চিও না!”
আমি কি বলবো! বুঝলাম না! আবার সরলাম না তার বুক থেকে চুপটি করে তার বুকের বাম পামের ডিপ ডিপ করে হৃদছন্দ শুনচ্ছিল। আর ইউসুফ ভাই চোখে বুজে মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।আমার এখন লজ্জা ভয় কিছু লাগচ্ছে না। লাগচ্ছে তো এক রাশ ভাললাগা, সুখ।
হারিকেন নিভানো। তাই বাহির থেকে চাঁদের আলো পড়চ্ছে ঘরটিতে। এমন এক পরিবেশে দিজন এতো কাছে ভাবতেই চোখের কোনে জল জমে উঠলো আমার। খুশির জল! আমি মাথা উঁচু করে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললাম,,

–“একটা কথা জিগ্যেস করি!”
তিনি চোখ বুজে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,,
–“হুম!”
–“আপনি আমাকে বাবুইপাখি কেন ডাকেন?”
–“কেন ডাকি! ”
–“তাই তো জানতে চাইছি!”
ইউসুফ ভাই হেসে ফেললেন আর বললেন,,

–“কারণ তুই সবার মনে নিজের জায়গা নিজে তৈরি করে ফেলিস! যেমনটি করে একটি বাবুইপাখি! অন্য সব পাখিদের মতো না সে ভিন্ন সে থাকে নিজের তৈরি করা ঘরে! যার জন্য বিন্দু মাত্র অহংকার নেই তার। ঠিক তেমনি তুই! সবার মনে বাসা করে নিস অল্পতেই!আর তার জন্য কোনো অহংকার নেই তোর মনে! তাই তুই আমার বাবুইপাখি! ”
ইউসুফ ভাইয়ার কথায় ছলছল করে তাকিয়ে আছি তার দিক! তা দেখে তিনি তার বুকে শক্ত করে আকড়ে ধরে বলে উঠে,,
–কাঁদিস না ঘুমো এবার..!”
আমিও চোখের জল মুছে তার বুকের সাথে লেপ্টে ঘুমিয়ে গেলাম।শান্তির ঘুম।

সকাল হতেই খাওয়া-দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে আমরা তৈরি হয়ে নিলাম। বুড়া সি এন জি এনে হাজির। তাদের কাছ থেকে বিদেয় নিয়ে চলে এলাম খাগড়াছড়ি বাস স্ট্যান্ড ঘন্টা খানেকের মাঝে!এর মাঝে ইউসুফ ভাইয়ার সাথে নানান কথা হলো তার মাঝে একটি কথায় লজ্জায় সি এন জি থেকে লাফ দিতে ইচ্ছে করলো আমার। কিন্তু তিনি তখন নির্বিকার ভাবে বলে গেলেন,,
–“বাবুইপাখি! আমরা কিন্তু বিয়ের পর হানিমুন টা এই বুড়ো বুড়ির বাড়িতেই সারবো বুঝলি! এখনে নো কম্প্রোমাইজ। ”
আমি তখন তার কথায় লাল-নীল হতে লাগলাম লজ্জায়। তা খুব বুঝতে পেরে নানা ভাবে টিপুনি কাঁটেই গেলেন আমাকে! তার দুষ্ট-মিষ্টি কথার মাঝে আফসোস করতেও দেখা গেল। তিনি তখন বললেন,,,

আমার একটাই যে তুই পর্ব ২১

–” সাজেক থেকে ফিরে যাচ্ছি আজ! কত কিছু ভেবে ছিলাম আমি! তোর দু হাতে মেঘকে স্পর্শ করাবো! মেঘ তখন লজ্জা পেয়ে তার পানিতে ভিজিয়ে দিবে! আরো কত জায়গা ঘুড়ার ছিল! কিন্তু হলো না। সমস্যা নেই বেঁচে থাকলে আবার আসবো। ইনশাআল্লাহ। ”
আমি শুধু তাহার কথা শুনেই গেছি! বাসস্ট্যান্ডে আসতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো তিথি, নুশরা, বুশরা আমাকে জড়িয়ে ধরে। তাকে সামলে বললাম,,

–” ঠিক আছি আমি কান্না করিস না তোরা।”
তখন পিছন থেকে রিয়া অপরাধীর শুরে বলল,,
–” কুহু! আপুর হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি! সে যা করেছে তা ক্ষমা করার মতো না। আমি সত্যি লজ্জিত।”
আমি রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,
–” তুমি ক্ষমা চাইছো কেন পাগল মেয়ে! আমার কারো উপর কোনো ক্ষোভ নেই!”
রিয়া মিষ্টি হেসে জড়িয়ে ধরে আমাকে বলল,,
–“তুমি সত্যি খুব ভাল! আসি আমি!”

রিয়া বিদেয় নিয়ে চলে গেল! আর এদিকে মেসদাকও বিদেয় নিয়ে চলে গেল। তিথির মুখটা তখন ছোট হয়ে গেল। মেসদাকও মন খারাপ করে চলে গেছে।এরপর আমরাও রওনা দিলাম নিজের গন্তব্য।
ময়মনসিংহে পৌঁছাতে রাত হয়ে যায় আমাদের। বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই! আচমকা আমার কেউ ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল! সামনে তাকিয়ে দেখি…!

আমার একটাই যে তুই পর্ব ২৩