আমার একটাই যে তুই পর্ব ৩৫ || সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

আমার একটাই যে তুই পর্ব ৩৫
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

পিট পিট করে চোখ খুললো কুহু। চোখ খুলতেই ভেসে উঠলো মাথার উপর ডিজাইন করা ছাদ। ঠিক মাথার উপর হলুদ জলজলে ঝাড়বাতি। ডানপাশে পিংক আর হোয়াট কালার পাতলা পর্দা বাতাসের সাথে ফরফর করে উড়চ্ছে।সুন্দর কামড়াটি। সে খাটে সটান হয়ে শুয়ে আছে। কুহু ধীরে ধীরে বাম পাশে তাকালো। তিথি বসে তার মাথার কাছে ঝিমুচ্ছে। দূরের সোফায় প্রিজমের কাঁধে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে জয়ীতা।কুহু এবার নড়চড়ে উঠতেই তিথি চোখে খুলে, হাসি রেখা টেনে কুহুর গালে হাত রেখে বলল,,

–” আর ইউ ওকে কুহু? কেমন লাগচ্ছে তোর এখন? আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া তোর জ্ঞান ফিরেছে।”
কুহু তিথির কথা কিছু বুঝলো না। তাকিয়ে রইলো। মাথায় এখন অন্য কথা ঘুরপাক খাচ্ছে! সে কোথায়? ওই তো সেই ব্রাইডালে ছিল! ডায়মন্ড? ও কই? সেই বা এখানে কিভাবে??
–” কুহু তুই ঠিক আছিস মা?”
বড় মামির কন্ঠে ভাবনার ভিতর থেকে বের হয় কুহু। তাঁর মুখ থেকে “মা” ডাক শুনে বিস্মিত হলো সে! বড় মামি তা বুঝতে পেরেই মাথা নত করে নেয়। কুহুর হাতটি তুলে মুখের সামনে তুলে সমানে চুমু খেতে থাকে। বিলাপ করতে করতে অপরাধীর সুরে বলে,,

–” কুহু মারে! আমাকে ক্ষমা করে দিস! আমি খুব বড় ভুল করেছি! খুব বড় ভুল! আমায় মাফ করে দে!”
কুহুর যেন মাথা উপর দিয়ে সব যাচ্ছে। মামির কান্নায় আর বিস্ময় ফেঁটে যাচ্ছে সে। তাও নিজেকে সামলে ধীরে ধীরে উঠে বসে বড় মামির হাত ধরে বলে,,
–“মামি এসব কি বলছো? প্লীজ এসব বলো না। আমি হয়তো তোমার জায়গায় থাকলে তাই করতাম। প্লীজ ক্ষমা চেয়ো না।”
বড় মামি ফুঁপিয়ে উঠলেন। কুহুকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে বললেন,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–” তোর মন খুব বড় মা! আমার মতো না! নির্ঘাত আমার জায়গায় তুই থাকলে, তোর সন্তান কোনটাতে খুশি তা দেখতি! আমি তো নিজের জেতকে প্রাধান্য দিয়ে তোদের খুশির বিসর্জন দিয়েছিরে মা!”
বলেই ডুকরে উঠলেন তিনি! কুহুর ও কান্না চলে এলো। ও তো ছোট থেকেই এমন। কারো চোখের পানি দেখলে নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনা। তখনি পিছন থেকে শুনতে পায় নুশরার কন্ঠ। সে গম্ভীর মুখে বলল,,
–“বড় মা, এখন এসব বলে কি লাভ বলো? তোমার অভিশাপ ঠিকি লেগেছে কুহু আপির।”
নুশরার কথায় চকিতে তাকালো সবাই তার দিক। কুহু নিজেও তাকালো।খাবার প্লেট নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে! বড় মামি তার কথা বুঝতে না পেরে বলল,,

–” কি বলতে চাইছিস?”
নুশরা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,,
–” এত জলদি ভুলে গেল? বড় মা? ভুলে গেল তোমার সেই অভিশাপের কথা?”
বড় মার মনে পড়লো! কুহু যেদিন পালিয়েছিল সেদিন কুহুকে তিনি অনেক কটু কথা বলে ছিলেন। পতিতালয়ের কথা বলে ছিলেন, সাথে এ ও বলে ছিলেন কুহুর যেন নরকেও জায়গা না হয়! এসব মনে পড়তেই তিনি অসহায় ভাবে তাকালেন কুহুর দিক।সত্যি তো মেয়েটা আজ নরকের মাঝেই ছিল। চোখ আবারো টলমল করছে তার। তিনি বললেন,,

–” আমার মতো নিকৃষ্ট মা হয়তো দুনিয়াতে আর একটিও নেই! মারে আমায় ক্ষমা করে দিস? নয়তো মরেও শান্তি পাবো না।”
চোখের জল ছেঁড়ে দিলেন তিনি! কুহুর খারাপ লাগচ্ছে খুব। কুহু বড় মামিকে সামলে বলে উঠে,,
–“বড় মামি! যা হয়েছে সব ভুলে যান। পাষ্টে কি হয়েছে না হয়েছে তা আর ভাববেন না।প্রেজেন্ট আর ফিউচারের কথা ভাবুন। আর সত্যি বলতে এখান থেকে না বের হলে আমি আমার ক্যারিয়ার গড়তে পাড়তাম না। যা হয় ভালোর জন্য হয়! সব ভুলে যান মামি!”
বড় মামি কুহু মাথায় স্নেহের সাথে হাত বুলিয়ে দেন। গর্বের সাথে বলেন,,

–” কুহু তুই প্রকৃত অর্থে খাটি মানুষ। মানুষের হাজার খারাপ গুনের মাঝেও ভাল গুনটি তুলে ধরিস। সত্যি তোর মতো মেয়ে, আর ছেলের বউ পেয়ে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে আমার!”
কুহু বড় মামির কথায় চমকে তাকায় তার দিক। বড় মামি হেসে বলে উঠে,,
–” খেয়ে নে আমি আসচ্ছি!”
মামি চলে গেল। তার যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো কুহু। তা দেখে তিথি বলল,,
–” বড় মা খুব অনুতপ্তরে! তুই যাওয়ার পর থেকে ইউসুফ ভাই তার সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলত। কেমন অদৃশ্য দেয়াল বানিয়ে ফেলেছে তাদের মাঝে!”
কুহু অবাক হয়ে বলল,,

–” কি বলছিস? ”
–” ঠিক বলছি!সে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে সব থেকে! আগের মতো ফুড়ফুড়ে সে নেই! গম্ভীরতা যেন চারদিক দিয়ে ঘিরে তাকে! এই এবার এসেছিস সব ঠিক হয়ে যাবে! নে খা!”
মুখের সামনে খাবারের নলা তুলে দিল।কুহু খাবার না খেয়ে তিথির কথায় অসহায় ভাবে তাকিয়ে থেকে ইতস্ত করে বলল,,
–” তিথি আমার যেতে হবে!”
তিথি অবাক হয়ে বলল,,
–“যেতে হবে মানে?”

তখনি পিছন থেকে জয়ীতা জবাব দিল,
–” তিথি ওর মেডিকেলের কোর্স এখনো কম্পলিট হয়নি! সামনে এক্সাম যেতে হবে!”
তিথি এসব শুনে কিছুটা ভয়ে ভয়ে বলে,,
–” আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না কুহু। যে তোকে এনেছে তাকে গিয়ে বল!”
কুহু ভ্রু কুঁচকে বলে,,
–” কে এনেছে!”
–” ইউসুফ ভাই!”
কুহু শুকনো ঢুক গিলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,
–” ডায়মন্ড? ”
তিথি ছোট নিশ্বাস ফেলে বলল,,
–“লাইফ সাপোর্টে আছে!”
বিস্ফোরিত চোখ তাকিয়ে বলল কুহু,,

–“মানে?”
–” মানে ভাইয়া বেটাকে এমন কেলিয়েছে যে মরার সাথে পাঞ্জা লরছে!যে কোনো মুহূর্তেই উপরে।”
কুহু অবাক হয়ে বলল,,
–” ইউসুফ ভাই জানলো কিভাবে? আমি কই?”
তিথি হেসে বলল,,
–” তুই যেদিন আমার কেবিনে দেখতে গেছিলি সেদিনি তোকে চিনে ফেলেছে তোকে! এবং কি আমাকে অনেক শাসিয়েছে সত্য বলতে। যখন আমি মুখ না খুলি তখনি তোর পিছনে লোক পাঠিয়ে ফোলো করতো। যানিস তো তুই তার বাবুইপাখি! তোর সাথে ভাইয়ার আত্মার সম্পর্ক। সে তোকে অনুভব করে ফেলে তুই তার আশেপাশে থাকলেই!”
কুহুর চোখ ছল ছল করে উঠলো। মানুষটা তাকে কত ভালবাসে কিন্তু এ ভালবাসার কি দাম আছে? সে তো..! কুহু অভিমানী কন্ঠে বলল,,

–” এত ভালবাসা, কেয়ার করে কি লাভ তিথি সে তো আর আমার না!”
–” তোর না মানে? চকিতে ভ্রু কুচকে বলল তিথি!”
কুহু সুপ্ত শ্বাস ছাড়লো। তখনি গুটি গুটি পায়ে ভিতরে প্রবেশ করে অদ্রি! তার দিক তাকিয়ে বলে,,
–” সে তো বিবাহিত! তার লাইফে মুভড ওন করেছে! এখন আমাকে ভেবে কি লাভ?
কুহুর কথায় উপস্থিত সবাই যেন আকাশ থেকে পড়লো। এক সাথেই চেঁচিয়ে বলল,,
–” হোয়াট?”

কুহু ভয় পেয়ে গেল। সবার এভাবে চেঁচিয়ে উঠাতে ছোট অদ্রি ভ্যা করে কেঁদে দিল। নুশরা তাকে কোলে তুলি হাত করতে চাইছে। সবাই অবাকের শেষ চুড়ায়। কুহু তখন ক্ষীন স্বরে অদ্রিকে দেখিয়ে বলে উঠে,,
–” ইউসুফ ভাইয়ার বাবু না! দেখতে তার মতোই হয়েছে! কি সুন্দর। মাশাল্লাহ্।
তিথি বলল,,
–” আর ইউ মেড কুহু? ভাইয়া এখনো বিয়ে করে নি! আর তুই বলছিস বাচ্চা হয়ে গেছে?”
কুহু কাঁদ কাঁদ ফেইসে ঠোঁট উল্টে বলল,,

–” তো এ কে?ওই দিন হাসপাতালে ইউসুফ ভাইয়াকে পাপা বলছিল। আর একদম ইউসুফ ভাইয়ার মতো দেখতে গায়ের রংও সেইম দেখ!”
কুহুর কথায় সবাই খানিক চুপ থেকে হো হো করে হেসে দিল। তখন রুমে ঢুকলো ভাবি ।অদ্রিকে কোলে নিয়ে হাসতে হাসতে বলল,,
–” এটা তোর রাহুল ভাইয়ার মেয়ে ডাফার!”
কুুহু নিজের কাজে আহাম্মক বনে গেল। মুখটি কাচু মাচু করে বলল,,
–” আমি আরো ভেবেছি ইউসুফ ভাই বিয়ে..!”
কথার মাঝে ভাবি থামিয়ে দিয়ে বলল,,

–” যে তার বাবুইপাখি বলতে পাগল। সে কিভাবে অন্য কাওকে বিয়ে করবে! গাধা? এক কাজ তোর নেতা সাহেবের সাথে দেখা করে আয়! বেচারা তোর উপর বহুত নারাজ! যা এবার মনোমালিন্য দূর কর দুজনের!”
ভাবির কথায় খানিকটা লজ্জা পেল কুহু। আমতা আমতা করে বলল,,
–” আমি কিভাবে তার সামনে? তাছাড়া ভ..ভয় করছে!”
নুশরা কৌতুকের সুরে বলল,,
–” বাড়ি ছেড়ে পালাবার সময় এই ভয় কই ছিল আপি! এখন যাও! ”
কুুহু অসহায় মুখ করে তাকিয়ে রইলো। তখন কোনো ভাবে পালিয়েতো ছিল সে! কিন্তু এখন তার সামনে যাওয়া আর মরণকে আমন্ত্রণ দেয়া এক। কুহু ভয়ে পেটে মোচড় দিয়ে উঠছে।

ইউসুফের কামড়ার সামনে দাঁড়িয়ে কুহু। ভয় হাত-পা কাঁপছে। ভাবি, তিথি, নুশরা, জয়ীতা সবাই মিলে ঠেল ঠেলুয়ে পাঠিয়েছে তাকে। এ পর্যন্ত এসে রুমে ঢুকার মতো সাহস সঞ্চয় করতে পাড়চ্ছে না সে!মনে মনে সুরা কেরাত পরে বুকে ফু দিয়ে ডান পাশে তাকালো। তার রুম থেকে উঁকি দিয়ে তিথি আর জয়ীতা ইশরা করছে ভিতরে যাওয়ার জন্য। কুহু অসহায় মুখ করে যায়ে তাদের দিক। ওদিকে তারা ইশরায় শাসিয়ে যাচ্ছে তাকে! তখনি কেথা থেকে ছোট অদ্রি ছুটে এসে কুুহুকে এক ধাক্কা দিল। কুহু বেচারি হুড়ুমুড় করে দরজা ঠেলে ভিতরে পড়তে নিল। সাথে সাথে সামলে নিলো সে। দরজার দিক তাকাতেই ছোট অদ্রি ফিক করে হেসে ছুঁটে পালালো।

কুুহু নিজেকে সামলে ইউসুফের ঘরে উঁকি দিল। অন্ধকার রুম।ঘরের বড় জানালা সটান করে খোলা বাহির থেকে ধমকা হওয়া এসে উড়িয়ে এদিক ও দিক ফেলছে। পাশেই ইউসুফ দাঁড়িয়ে আছে। বাহিরের দিকে মুখ করে পিছনে দু হাত বেঁধে তাকিয়ে আছে শূন্য দৃষ্টি মেলে। বাহিরের মৃদু আলোতে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত ইউসুফকে যেন আরো সুন্দর লাগছে। কুহু ধীরে পায় ইউসুফের পিছনে দাঁড়ালো। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। কি বলবে? কিভাবে শুরু করবে? ডাকবে তাকে? নাকি ছুটে পালিয়ে যাবে? ভেবে কূল পাচ্ছে না সে! যখনি মনে সাহস সঞ্চয় করে ঠোঁট নাড়াবে তখনি ইউসুফ বাহিরের দিক তাকিয়ে বলল,,

–” কি বলতে চাস বলে ফেল! ২ মিনিট সময়! এরপর রুম থেকে বের হো!”
ইউসুফের এ রূপ কঠিন কথায় দমে যায় কুহুু। মনের মাঝে কিছুক্ষণ আগের ডর ভয় গায়েব হয়ে গেছে! এক রাশ কষ্ট বুকের মাঝে জমা হয়ে গেছে। কুহু মন খারাপ করে বলল,,
–” আ..আপনি কি এ..খনো আমার উপর রেগে আছেন?”

কুহুর কথায় ইউসুফ পিছনে মুড়ে। হাত দুটি আড়াআড়ি ভাবে বাজ করে কুহুর দিক তাকায়।ইউসুফের দিক আর চোখে তাকায় কুহু বাহিরের হালকা আলোর ঝলক এসে পড়ে ইউসুপের মুখে। কুহু বুঝতে চেষ্টা করছে ইউসুফের ফেইস রিয়েকশন। কিন্তু কিছু বুঝতেই পারলো না সে। চোখ নামিয়ে নিল। ইউসুফ বলল,,
–” নাহ্ রাগ কেন করবো? বরং খুশি হয়েছি! এত খুশি যে বান্দরের মতো লাফাচ্ছি খুশিতে! ”
কুহু কি বলবে বুঝতে পারলো না। চুপ করে রইলো।ইউসুফ আবার বললো,,
–“আর কিছু? তা না হলে যেত পারো! গো?”

কুহু এবার ছল ছল চোখে চেয়ে রইলো ইউসুফের দিক। ইউসুফ নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে! এদিকে কুহুর বুক চিড়ে যাচ্ছে, যদিও এসবি আশা করেছিল সে।তবু কষ্ট হচ্ছে! কুহু নিজেকে সামলে বললো,,
–” আমাকে ক্ষমা করা যায়..!”
কথা শেষ করার আগেই ইউসুফ ওর দু বাহু ধরে দেয়ালের সাথে চেঁপে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,
–” ক্ষমা চাইতে এসেছিস? ক্ষমা? তা কোন কোন কারণে ক্ষমা চাইবি? মন ভাঙ্গার জন্য?বিশ্বাস ভাঙ্গার জন্য? আমার অনুভূতি গুলো অগ্রাহ্য করার জন্য নাকি আমার ভালবাসাকে অপমান করে লাথি মেরে দূরে ফেলে দেয়ার জন্য? কোনটা? আনস মি? ডেমন ইট? লাষ্ট কথাটা চেঁচিয়ে বলল।”
কুহু ভয়ে কেঁপে উঠলো। কান্না করে দিল ব্যথায়। কুহু কান্না জড়িত ব্যথাতুর কন্ঠে বলল,,

–” লাগচ্ছে আমার!”
ইউসুফ আরো শক্ত করে চেপে ধরে। কুহু “আহ” করে উঠে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ইউসুফ বলল,,
–“পাঁচটা বছর! পাঁচটা বছরে কতটা পুড়েছি হিসেব আছে তোর? নেই! কতটা কষ্টে ছিলাম? আর তুই? তুি স্বার্থপরের মতো আমায় ছেড়ে চলে গেলি! যখন তোকে আমার সব থেকে বেশী দরকার ছিল, সে তুই কি করলি? বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলে গেলি। আবার যখন ফিরে এলি? নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চাইছিল? বাহ্ কি প্লেন? ”
–” ভাইয়া আমার কথাটা শুনুন!

কান্না করতে করতে বললো কুহু। ইউসুফ ছেড়ে দিল।বলল,,
–“বল শুনি কি বলবি!”
কুহু চোখে পানি মুছে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,,
–” আমি বাধ্য হয়ে ছিলাম!”
ইউসুফ হাসতে লাগলো। তাচ্ছিল্যের হাসি। হাসতে হাসতে বেড গিয়ে বসলো। কুহু অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। ইউসুফ বলল,,
–” বাধ্য হয়ে ছিলি? কে করেছে আমার মা! তাই না।”
বলে তাকালো ইউসুফ কুহুর দিক! কুহু চমকে গেল। ইউসুফ এসব কিভাবে জানলো? এসব ভেবেই ঘাবড়ে গেল সে।ইউসুফ সাথে সাথে চোখ মুখ শক্ত করে কুহুর দিক তেরে গিয়ে তিন আঙ্গুল দিয়ে গাল চেঁপে ধরলো। বললো,,

আমার একটাই যে তুই পর্ব ৩৪

–” এসব আজাইরা অজুহাত আমাকে দেখাবি না বুঝলি! ফালতু লিজক নিয়ে আমাকে কিছু বুঝাতে পারবি না তুই। মা বললো, ওমনি সে পালালো? বাহ্?
ছেড়ে দিল ইউসুফ কুহুকে। নিজের চুল দু হাতে পিছনে ঠেলে আবার বলল,,
–“প্রতিটা সময় তোর ডাল ছিলাম। তখন কি আমি মরে গেছিলাম? কেন এমন করলি? তোর জন্য নিজেকে কাপুরুষ মনে হয় এখন! বুঝলি!তোকে আর সহ্য হচ্ছে না যা এখান থেকে।”
কুহু ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। সত্যি মানুষটিকে সে বড় কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। কুহু বলল,,
–” প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দিন! দরকার পড়লে আমাকে মারুন কাঁটুন, পানিশমেন্ট দিন। তাও এভাবে রাগ করে থাকবেন না আমার উপর!”
ইউসুফ তাকালো কুহুর দিক!বাঁকা হেসে বলল,,

–” ঠিক তুই যা করেছিস! তার পানিশমেন্ট তোকে পেতেই হবে! আর (কুহুর কাছে এসে, এক আঙ্গুল দিয়ে কঁপালে চুল গুলো সরাতে সরাতে বলল) তোর শাস্তি হচ্ছে এটাই, না আমি তোকে কখনো আমার কাছ থেকে দূরে যেতে দিব! আর না কখনো কাছে টেনে আপন করে নিবো! কাছে থাকবি আমার না ছুঁতে পারবি না কাছে টানতে পারবি না ভালবাসতে পারবি। সারা জীবন তোর এভাবেই থাকতে হবে! ”

বলে ঘটঘট করে চলে গেল ইউসুফ। এদিকে ইউসুফের কথায় ধ্রাম করে বসে পড়লো কুহু। চোখ থেকে অঝরে জল পড়তে লাগলো তার। কাঁদতে কাঁদতে বলল,,
–” এ কেমন শাস্তি ইউসুফ ভাই! এর থেকে মৃত্যুটাই যে কাম্য!”

আমার একটাই যে তুই পর্ব ৩৬