আমার গল্পে তুমি গল্পের লিংক || সুমাইয়া সুলতানা সুমী

আমার গল্পে তুমি পর্ব ১+২+৩
সুমাইয়া সুলতানা সুমী

বান্ধবীর ভাইয়ের বিয়েতে এসে অচেনা একটা ছেলের হাতে দাবাং মার্কা চড় খেয়ে মানসম্মান খোয়াতে হবে ভাবি নি কখনো।চড়টা খেয়ে মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছিলো তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে মাথাটা ধরে দাঁড়ালাম।
হাও ডেয়ার ইউ?? তোমার সাহস কি করে হয় আদ্রান আহমেদ আর্দ্র চৌধুরী কে চড় মারার,, রেগে লাল হয়ে চিৎকার করে বলল ইয়াশ।

আর আমি ভয়ে এককোণে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি,, আসলো ব্যাপার টা হলো আমি ওয়াশরুম থেকে বেরোনোর সময় পিছন থেকে কেউ আমার শাড়ির আঁচল টা টেনে ধরল,, আমি রেগে পিছনে ঘুরেই পিছনে থাকা লোকটাকে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম তারপর অনেক গুলি কথা শুনালাম লোকটা রেগে লাল হয়ে তার দু হাত বুকে গুজে দাঁড়িয়ে আছে,, তখন আমার হুঁশ আসলো আরে ওনার দু-হাত তো বুকে রাখা তাহলে আমার শাড়ির আঁচলটা ধরলো কে? তারপর আঁচলের দিকে তাকিয়ে দেখি ওটা আসলে দরজার সিটকেনির সাথে আটকানো, আমি ভয়ে শুকনো একটা ঢোক গিলে ওনার দিকে তাকাতেই ওনিও আমার নরম গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কি হলো কথা বলছো না কেনো বোবা নাকি তুমি??
আমি নিরবতা ভেঙে বললাম,, আপনি আমায় মারলেন কেনো?? যখন দেখলেন আমি ভুল বসত কাজটা করে ফেলেছি তখন আপনার উচিত ছিলো আমার ভুলটা ভাঙিয়ে দেওয়া কিন্তু আপনি সেটা না করে আমার গায়ে হাত তুললেন কেনো??
একে তো ভুল করেছো তার উপর সরি না বলে মুখের উপর বড় বড় কথা বলছো,, অভদ্র মেয়ে।
এই শুনুন ভুল করলে সরি বলতে হয় সেটা আমি জানি, তবে আপনাকে মোটেও সরি বলবো না কেননা আপনি সরি পাওয়ার যোগ্যই নন,, অভদ্র পুরুষ।

এই তুমি জানো আমি কে?? রেগে বলল আর্দ্র।
আপনি যেই লাট সাহেবই হন না কেনো আমি আপনাকে সরি বলবোনা মানে বলবো না।
হেই লিসেন ভুলটা তুমি করেছো তাই তোমার উচিত নিজ দায়িত্বে ভুলটা শুধরে নেওয়া,, পরবর্তীতে আমার সাথে এ ধরনের ভুল করলে ভুল শুধরানোর সময়টা আর পাবে না,, বুঝেছো?? আশা করি বুঝেছো,, এই বলে আর্দ্র চলে গেলো।
এটা কি ধরনের ছেলে কোনো ভদ্রতা জানে না আহ আমার গালটা,, এতো জোরে কেউ মারে, মনে হয় দাঁতই নরিয়ে দিয়েছে।
এই ইয়ানা এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস চল খেতে হবে না?? আন্টি সেই কখন থেকে তোকে খুঁজছে,,,তারপর রোজা (বান্ধবী) ওর সাথে চলে গেলাম।

,,,,,রাতে,,,
কি হলো মা কি এতো মন দিয়ে ভাবছো?? মায়ের পাশে বসে বললাম।
এভাবে আর কতদিন চলবে ইয়ানা তোর বাবার পেনশনের টাকায় তো সংসার চলছে না,, আবার তোর ভার্সিটি,,, বলছি কি একটা চাকরির খোঁজ করনা তাহলে আমাদের মা মেয়ের ভালোভাবেই চলে যাবে।
কি যে বলো মা চাকরি?? সেটা তো মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একটা সোনার হরিণ যেটা কিনতে টাকা লাগে,, আর যেখানে মানুষ মাস্টার্স কম্পিলিট করে আরো বড় বড় সার্টিফিকেট নিয়ে অফিসে অফিসে ঘুরেও তাদের চাকরি হচ্ছে না , সেখানে তোমার মেয়ে কেবল অর্নাস পড়ছে,, তোমার এই অর্নাস পড়ুয়া মেয়েকে কে চাকরি দিবে?? আচ্ছা আমি দুইটা টিউশনি করছি তো কালকে না হয় আরেকটা খুঁজবো তাহলেই হয়ে যাবে,, এবার চলো তো তোমাকে আর এসব ভাবতে হবে না।

সকালে খেয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলাম সাড়ে আটটায় আবার একটা টিউশন আছে ওখান থেকে একেবারে ভার্টিসিটি যাবো তারপর ভার্সিটি শেষে আরেকটা আছে,,, তার উপর আজকে আবার আরেকটা টিউশনি খুঁজতে হবে,,, কথাগুলি ভাবতে ভাবতে হাঁটতে লাগলাম,, রোজাকে ওর বাসা থেকে নিয়ে সোজা ভার্সিটি চলে গেলাম।
দুপুরের দিকে ভার্সিটি শেষে বেরিয়ে পরলাম মাসুমদের বাসার উদ্দেশ্য,, মাসুম হলো আমার স্টুডেন্ট এবার ক্লাস ফাইভ এ পড়ে,,, মাসুম কে পড়ানো শেষ করে রাস্তায় এসে ফোনটা বার করে দেখলাম প্রায় চারটা বেজে গেছে ভাবছি সাড়ে পাঁচটা অবধি দেখবো তারপর বাড়ি চলে যাবো,, এই বলে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলাম কিছুদূর যাওয়ার পর একটা বড় গাড়ি আমাকে পাচ করে বেরিয়ে গেলো একটুর জন্য আমার গায়ের সাথে লাগেনি।

কত্তবড় অভদ্র গাড়ি আছে বলেই কি এভাবে গায়ের মধ্যে দিয়ে চালাতে হবে নাকি, মনে হচ্ছে ওনার বাপের রাস্তা,, রেগে কথাগুলি বলে সামনে তাকিয়ে দেখি গাড়িটা উঁচু দেওয়াল ঘেরা একটা গেটের ভিতর দিয়ে চলে গেলো আমি সামনে এগিয়ে গেলাম গাড়ির মধ্যে কে আছে সেটা দেখার জন্য,, গাড়ি থেকে একটা ছেলে বার হয়ে সোজা সামনের দিকে চলে গেলো,, উফ ছেলেটার ব্যাগ সাইট দেখেই ক্রাশ নামক বাঁশটা খাইলাম দুঃখের বিষয় মুখটা দেখতে পেলাম না,, কেবলি ভালোমতো ক্রাশটা খাবো তখনি মনে মধ্যে একটা গান বেজে উঠল,

৷৷ বালিকা তোমার প্রেমের পদ্দ দিও না এমন জনকে, যে ফুলে ফুলে উড়ে মধুপান করে অবশেষে ভাঙে মন কে।
না ইয়ানা খবরদার ক্রাশ খাশ না তোর ডিকশিনারির তে প্রেম নামক কোনো শব্দই নাই, তোর জন্য প্রেমে পড়া বারণ,,আমি যখন নিজেকে এসব বলে শান্তনা দিচ্ছিলাম তখনি ওই বড় বাড়ির গেটের ভিতর থেকে একটা বাচ্চা ছেলে ফুরুত করে দৌড়ে বাইরে চলে আসলো আমার সামনে দিয়েই দৌড়ে গেলো মনে হয় রাস্তার উপারে যাবে, তখনি দেখি অপর সাইড থেকে একটা কার আসছে আর পিচ্চি টা রাস্তার মাঝে বসে পড়ে পা থেকে জুতা খুলছে,, আমি চারপাশে দেখে দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে রাস্তার কিনায় আসতে গেলেই হুমরি খেয়ে পড়ে গেলাম বাচ্চাটার কিছু হয়নি কিন্তু আমার হাতে অনেক টা ছড়ে গেছে।

তোমার নাম কি?? আর এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছিলে??
বাচ্চাটা কোনো কথা বললো না, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল।
কি হলো বলো?? তখনি একটা মেয়ে দৌড়ে আমাদের কাছে এসে ছেলেটাকে বকতে লাগল।
পরশ তোমাকে কতবার বলেছি এভাবে রাস্তায় আসবে না যদি করে আমার কথা শোনো,, মেয়েটা বাচ্চাটাকে বকা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,, দেখে তো মনে হচ্ছে তুমি আমার থেকে বয়সে ছোট তাই তুমি করেই বললাম,, তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না তবে আজকে তুমি আমার বড় উপকার করলে,,, একি তোমার হাত তো অনেকটা ছড়ে গেছে আসো আমার সাথে।
না না আমি ঠিক আছি,,

কিচ্ছু ঠিক নেই চলো তো,, তারপর ওনি আমাকে নিয়ে বাড়ির মধ্যে চলে গেলো অনেক বড় বাড়ি,, বাড়ির দুপাশে ফুলের বাগান আর মাঝখান দিয়ে রাস্তা আমি বাড়ি ভিতর গিয়ে দেখি ডয়িং রুমে একজন মহিলা আর দুইজন পুরুষ বসে আছে,, একজন বয়স্ক লোক আর একজন ছেলে টাইপ।
মেয়েটা আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো আর সবকিছু বলল।

তোমার কাছে তো আমরা রিনি হয়ে গেলাম,, তুমি আজকে আমাদের অনেক বড় উপকার করলে,,মহিলাটা বলল।
ওনাদের সাথে অনেক কথায় হলো উনারা অনেক ভালো মানুষ, এক পর্যায়ে কথায় কথায় ওনারা জিগাস করলেন যে আমি এদিকে কোথায় যাচ্ছিলাম তখনি বললাম যে টিউশনি খুঁজছিলাম তারপর ওনারা বললেন যে আমি যেনো ওই পিচ্চি মানে পরশকে পড়ায় আমিও রাজি হয়ে গেলাম এতবড় বাড়ি বেতনও ভালো দিবে, তখনি মহিলাটা বলল।
দাঁড়াও তোমাকে আর একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই, এই বলে ওনি মনা বলে কাউকে ডাকতে লাগলেন, আমি ভাবছি যে ওনার মেয়ে হবে হয়ত, কিন্তু না রুমের ভিতর থেকে একটা ছেলে বেরিয়ে আসলো আর ছেলেটাকে দেখে তো আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।

এই অভদ্র মেয়েটা এখানে কি করছে।
এই আপনি অভদ্র পুরুষ,, আপনি এখানে কি করছেন?? নিশ্চয়ই এখানেও খেতে আসছেন বড়লোক দেখেছেন আর চলে আসলেন??
আরে তুমি কাকে কি বলছো?? আমি ওই মেয়েটাকে কিছু বলতে না দিয়ে বললাম,, দাঁড়ান আপু আমি বুঝেছি এনি নিশ্চয়ই চুরি করতে এখানে এসেছে নয়ত বাড়ির ভিতর ঢুকলো কীভাবে,, আর আন্টি আপনার মেয়ে কই মানে যাকে আপনি ডাকলেন মনা।
আরে মনা আমার মেয়ে হবে কেনো আমিতো মনা বলে আমার ছেলেকে ডাকলাম আর এটাই তো আমার ছেলে।
আন্টির কথা শুনে আমি হা করে সেই রাগি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হু হা করে হেসে দিলাম।

অচেনা অজানা কারোর বাড়িতে এসে এভাবে হাহাহিহি করে হাসা মোটেও ঠিক নয়,, কিন্তু কি করবো জীবনের প্রথম শুনলাম কোনো ছেলের নাম মনা তাই জন্য হাসিটা কন্ট্রোল করতে পারিনি তাই হাসতে হাসতেই বললাম,,, সরি আমি আসলে হাসিটা কন্ট্রোল করতে পারিনি এনার নাম নাকি মনা হিহিহিহি এটা বলে আবার হাসতে লাগলাম।

স্টপ,,রেগে চিৎকার করে বলল আর্দ্র,,মা তোমাকে বলেছি না যে বাইরের মানুষের সামনে আমায় এসব উদ্ভট নামে ডাকবে না।
আশা (আর্দ্রের মা) বলল,,আহ এতো রাগ করছিস কেনো,,আসলে কি বলোতো ইয়ানা,, অনিক মানে আমার বড় ছেলে,, ও হওয়ার পর আমার খুব ইচ্ছে ছিলো আমার যেনো এবার একটা মেয়ে হয়, তো আমি স্নোও করিয়েছিলাম রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বললো যে বেবি উল্টে আছে ভালো বোঝা যাচ্ছে না তবে আশা করি মেয়েই হবে, তাই ডাক্তারের কথা শুনে আর্দ্র হওয়ার আগেই ওর নাম মনা রেখেছিলাম কিন্তু পরে দেখি মেয়ে নয় ছেলে,, তাই মেয়ের সখ পূরণ করতেই আর্দ্রকে মনা বলে ডাকি।
মা একটা বাইরের মানুষ কে তুৃমি এতো কথা কেনো বলছো,আর এই যে অভদ্র মেয়ে গেট আউট।
আমি রেগে কিছু বলবো তার আগেই অনিক ভাইয়া বলল,

আহ আর্দ্র কি হচ্ছে কি ওনি আজ থেকে পরশ কে পরাবেন, মানে পরশের টিউশন টিচার,, অনিক বলল।
না ভাইয়া আমি পরশের জন্য এর থেকেও ভালো টিচার আনবো,,
ভাইয়া আমি বলছি কি ও থাকুক না, আজকে ওর জন্যই পরশ ভালো আছে আল্লাহ ওর উসিলায় পরশকে বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে,,, অন্তরা (অনিকের বউ) বলল।
কিন্তু ভাবি,,
কোনো কিন্তু নয় তোমার নামটা কি যেনো ও হা ইনায়া,, আজ থেকে ওই পরশকে পরাবে,, কবির,(আর্দ্রের বাবা) বলল।
ঠিক আছে তোমাদের যা ইচ্ছে করো,, আর এই যে মিস অভদ্র তোমায় আমি দেখে নেবো।
দেখুননা নিষেধ করছে কে, দরকার হলে চোখে চশমা লাগিয়ে দেখুন।
ইডিয়ট

সেম টু ইউ।
আর্দ্র রেগে উপরে চলে গেলো।
তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো না মা ও এরকমি,, আসলো ছোট ছেলে তো খুব রাগি আর জেদি হয়েছে,, (আশা)
না না আন্টি আমি কিছু মনে করিনি,,, ওসব পাগল ছাগলের কথায় আমি কিছু মনে করি না,, মনে মনে বলল ইয়ানা।
আরে তোমার হাতে তো এখনো কিছু দেওয়াই হলো না এভাবে থাকলে তো ইনফেকশন হয়ে যাবে তুমি আসো আমার সাথে,,, এই বলে অন্তরা ইয়ানা কে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ওর হাত পরিষ্কার করে ওখানে স্যাভলন লাগাতে লাগল।
প্রায় অনেকক্ষণ পর গল্প গুজব করে ছয়টার দিকে ইয়ানা ওবাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল তবে ওর একটা বিষয়ে খুব খটকা লাগছে পরশ মানে যাকে ও পরাবে সেই পিচ্চি টা ওর সাথে একবারো কথা বলল না কেনো,, দেখে মনে হলো বাচ্চাটা খুবি মুডি,, ভাবা যায় এতোটুকু বাচ্চা আবার মুডি ও হয় হমম হতেও পারে বড়লোকদের বেপার সেপার।

,,,পরদিন,,,,
ভার্সিটি শেষ করে মাসুমকে পড়িয়ে বাড়ি চলে গেলাম কেননা পরশকে ছয়টার দিকে পরাতে যেতে হবে তাই ভাবলাম বাড়ি গিয়ে একেবারে ফ্রেশ হয়ে ছোটখাটো একটা ঘুম দিয়েই নাহয় পরশকে পরাতে যাবো,, যেই ভাবা সেই কাজ,,, সাড়ে পাঁচটার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম। পরশদের বাড়ি গিয়ে কলিং বেল চাপতেই আপু মানে অন্তরা দরজা খুলে দিলো।
আরে তুমি চলে এসেছো আসো ভিতরে আসো। আমিও মুচকি হেসে ভিতরে চলে আসলাম ওনি আমায় পরশের রুমটা দেখিয়ে দিলো আমিও সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলাম,, পরশের রুমে ঢুকতেই অবাক হয়ে হা করে পুরো রুমটা দেখতে লাগলাম,,সারা রুমের দেওয়ালে পেইন্টিং করা রুমের একপাশে ছোট্ট একটা দোলনা পুরো রুমে খেলনা দিয়ে ভর্তি আর পরশ পরার টেবিলে বসে আছে,,পরনে একটা থ্রী কোয়ার্টার পার্ন্ট গায়ে লাল একটা টির্শাট আর চোখে চশমা,, আমি গিয়ে ওর পাশের চেয়ারটাই বসে বললাম।
হাই আমি ইয়ানা তুমি??

আমি পরশ চৌধুরী,,, অনেকটা গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
বাবা ছেলেতো দেখি হেব্বি মুডি হুমম,,,আচ্ছা তুমি কালকে আমার সাথে কথা বললে না কেনো??
আমি চাচ্চুকে দেখেছি যে চাচ্চু মেয়েদের থেকে দূরে থাকে আর তুমি তো অনেক কিউট আর সুন্দর তাই তোমার থেকে দূরে ছিলাম যদি তুমি আবার আমায় দেখে আমার প্রেমে পড়ে যাও তাই,, আর আমি আমার ছোট চাচ্চুর মতো হবো তাই জন্যই তো চাচ্চুর মতো সব সময় অ্যাটেটিউড নিয়ে থাকি।

ছেলেটার কথাশুনে আমি তো পুরাই হা এতোটুকু একটা ছেলে কতবড় বড় কথা বলছে,, সবটা ওই খাটাস টার জন্য কি সব ভুলভাল জিনিস শিখিয়ে রেখেছে,, তারপর আমি বললাম,,, আরে তোমার ছোট চাচ্চু ভুল বলেছে আর আমরা তো আজকে থেকে বন্ধু,, কি তুমি আমার বন্ধু হবে না??
পরশ কিছুক্ষণ ভেবে বলল,, আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড, কিন্তু আমি তোমাকে কি বলে ডাকবো,, ওমমম পেয়েছি তোমাকে আমি কিউটিপাই বলে ডাকবো ওকে??

ওকে ঠিক আছে,, এই বলে আমি পরশের গাল টিপে দিলাম,, ও রেগেগিয়ে বলল,,এই চেহারায় হাত দিবে না।
আমি তো পরশের কথা শোনে অবাকের উপর অবাক হচ্ছি এতোটুকু ছেলের কি কথা,, বয়স কতই বা হবে সাত কি আট বছর , নানা ওতো হবে না সাত বছর হবে হয়ত কি জানি,,, এই কথা নিশ্চয়ই ওই খবিশটা শিখিয়েছে,, তারপর পরশের সাথে আরো কিছুক্ষণ গল্প করলাম আজকে ওকে পড়ালাম না ওর সাথে পরিচিত হয়ে নিলাম এখন দেখছি পরশ মোটেও শান্ত নয় একেবারে এক নাম্বারের দুষ্ট । পরশ এর থেকে বিদায় নিয়ে ওর রুম থেকে বেরিয়ে কেবলি সামনে যাবো তখনি কারো সাথে প্রবল বেগে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলাম আর আমার উপর যার সাথে ধাক্কা খেলাম সে পড়ল,, শুধু পড়লেই হতো কিন্তু না তা আর হলো কই না চাইতেও সামনের জনের সাথে আমার অনাকাঙ্ক্ষিত একটা কিসি হয়ে গেলো মানে ওনি আমার উপর পরার সাথে সাথেই আমি মুখটা পাশে সরিয়ে নিলাম আর ওনার ঠোঁট জোড়া এসে ঠেকলো আমার গালে,,মুখটা না সরানে কি যে হতো।

উফফ এই কি করলেন এটা দেখে চলতে পারেন না?? আমি রেগে বললাম।
তুমি?? ইচ্ছা করে এটা করেছো তাই না??,, রেগে বলল আর্দ্র,।
আমরা যেভাবে পড়েছিলাম ওভাবেই দুজন দুজনের সাথেই ঝগড়া করছি,, তখনি পরশ বলল,, একি কিউটিপাই তুমি চাচ্চুর নিচে কি করছো??
পরশের কথায় আমাদের হুশ আসলো আমি ওনাকে ধাক্কা দিয়ে আমার উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করলাম,, ওনিও উঠে দাঁড়ালো,,
চাচ্চু তুমি কিউটিপাইকে হামি দিয়েছো আমি দেখেছি।

পরশের কথায় আমি আর আর্দ্র পরশের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম,, আর্দ্র পরশের সামনে হাঁটু গেরে বসে বলল।কি বলতো চাম্প আমি তো ইচ্ছে করে দেয়নি বলো এটা একটা এক্সিডেন্ট ওকে।
না না আমি দেখেছি দাঁড়াও আমি আব্বু মাম্মাম দাদু আর দীদুন কে বলে দেবো যে তুমি কিউটিপাইকে হামি দিয়েছো।
পরশের কথায় আমার তো চোখবড় হয়ে গেলো আমি কিছু বলতে যাবো তখনি পরশ দৌড়ে নিচে চলে গেলো।
এই সব আপনার জন্য হয়েছে আপনি দেখে হাঁটতে পারেন না,,রেগে বললাম আমি।
তুমি দেখে চলতে পারোনা?? সেই প্রথম থেকে শুধু উল্টা পাল্টা কাজ করছো,, কি জানি চাম্প নিচে সবাইকে কি বলে,, এই বলে আর্দ্র নিচে চলে গেলো আমিও ওনার পিছে পিছে নিচে গেলাম।

কেবলি অনিক আর্দ্র অফিস থেকে বাসায় এসেছে,, অনিক এসে সোফায় বসেছে আর আর্দ্র রুমে যাচ্ছিলো কিন্তু তা হলো কই, ডয়িং রুমে অনিক আর কবির বসে ছিলো অন্তরা আর আশা কিচেন থেকে খাবার এনে ডাইনিং টেবিলে রাখছিলো তখনি পরশ দৌড়ে এসে সবার সামনে বলল।
এই শোনো সবাই আমার কিউটিপাই মানে হলো ওই যে আমাকে যে পড়ায় ওকে আমি আজ থেকে কিউটিপাই বলে ডাকি,,, জানো তো চাচ্চু না কিউটিপাই কে পেগনেন্ট করে দিছে।

পরশের কথায় আমার তো অঙ্গান হওয়ার মতো অবস্থা,, ছেলে দেখলো কি আর বলল কি,,আর সবচেয়ে বড় কথা ও পেগনেন্ট বলল কেনো আর পেগনেন্ট কথাটা শুনলোই বা কোথা থেকে ও তো বলল যে নিচে গিয়ে সবাইকে হামি দেওয়ার কথা বলবে তাহলে এটা বলল কেনো??.
আর বাকি সবার অবস্থা আমার থেকেও খারাপ।

সকলে অবাক চোখে পরশের দিকে তাকিয়ে আছে, অনিক কেবলি গলা থেকে টাইটা খুলছিলো কিন্তু পরশের কথা শুনে টাইয়ে হাত দিয়ে হা করে বসে আছে।
হোয়াট?? ,,, জোরে চেঁচিয়ে বলল আর্দ্র।
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা মাথার মধ্যে সবকিছু কেমন গোল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে,,,, এসব তুমি কি বলছো দাদু ভাই,, আশা বলল।
আমি ঠিকি বলছি দীদুন,, চাচ্চু কিউটিপাই কে পেগনেন্ট করে দিছে আমি দেখেছি।

পরশের কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতাছি না,, তাই কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি তখনি অন্তরা আপু বলল,,, এসব কি বলছো পরশ আর একটা ভুলভাল কথা বললে মেরে সব বাঁদরামো ছুটাই দেবো,,
দাদু দেখো না মাম্মাম শুধু বকা দেয় আমিতো ঠিক কথাই বলেছি,,, পরশ গিয়ে কবির এর কোলে বসে বলল।
আচ্ছা তুমি কি করে জানলে ইনায়া মানে তোমার কিউটিপাই পেগনেন্ট??

কি বলতো দাদু কালকে সকালে আমি টিভিতে কার্টুন দেখছিলাম তারপর কার্টুন দেখতে ভালো লাগছিলো না তাই অন্য জায়গায় দিলাম, তখনি দেখলাম টিভিতে একটা ছোট বাচ্চা তার মায়ের কাছে বলছে যে পেগনেন্ট কীভাবে হয়,(এখানে বলে রাখি, হামি মুভিতে এমন বলে),, তখন ওর মা ওকে বলল যে হামি দিলে নাকি সে পেগনেন্ট হয়ে যায়,, তো এখন উপরে চাচ্চু কিউটিপাই কে হামি দিয়ে পেগনেন্ট বানিয়ে দিছে।

পরশের কথা শুনে যেনো দেহে প্রাণ ফিরে এলো একটা ভুল বুঝাবুঝির থেকে বাঁচলাম,, আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে দেখি ওনি রেগে তাকিয়ে আছে আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম,,, আ,,আমি তাহলে আসি অনেক রাত হয়ে গেছে৷৷ এই বলে কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে আসলাম,,,
উফ বাবা বাঁচলাম, কি বিচ্ছু ছেলে এক মহুর্তেই বিয়ে না করেই আমায় পেগনেন্ট বানিয়ে দিলো,, না বাবা এখন থেকে সাবধানে চলতে হবে। এই বলে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।

আর্দ্র পরশ যা বলছে তাকি সত্যি?? তুমি ইয়ানা কে পেগনেন্ট না মানে হামি দিয়েছো??
অনিক সোফা থেকে উঠে এসে আর্দ্রর গলা জরিয়ে ধরে বলল,,কিরে ভাই শুধু কি হামিই দিয়েছিস নাকি সত্যি সত্যি পেগনেন্ট বানিয়ে দিয়েছিস,, দ্যাখ আমায় বলতে পারিস আমি তোকে সাহায্য করতে পারি।
ভাবি তোমার বরকে সামলাও কিন্তু নইলে কবে আমি ওকে কিছু করে দেবো কেউ ঠিক ও পাবে না,,, আর আমি ওই অভদ্র মেয়েটাকে ওসব হামি টামি কিছুই দেয়নি ওটা যাস্ট একটা এক্সিডেন্ট পরশ ভুল দেখেছে,, এই বলে আর্দ্র চলে গেলো।
বুঝলে অন্তরা এটা একটা এক্সিডেন্ট,,, চোখ মেরে বলল অনিক।

কিরে খেতে বসে একা একা ওমন পাগলের মতো হাসছিস কেনো??
তখন পরশের কথা মনে পড়ে খুব হাসি পাচ্ছিলো বাব্বাহ ওই খাটাসটার চেহারাটা যা হয়েছিলো না একেবারে দেখার মতো এসব ভেবে হাসছিলাম তখনি মা এসে কথাটা বলল,,, নাহ মা কিছু না এমনিতেই।
তা আজকে আসতে এতো দেরি হলো কেনো??
আরে তোমাকে বলেছিলাম না,, যে আমি একটা নতুন টিউশন পাইছি তো ওখান থেকে আসতেই এতো দেরি হয়ে গেলো।
আমার কিন্তু এসব মোটেও ভালো লাগে না এখন সময় ভালো নাকি?? তুই একা একটা মেয়ে এভাবে রাত করে বাড়ি ফিরিস আল্লাহ না করুক, যদি একটা অঘটন ঘটে যাই তখন??

ওহ মা তুমি এতো চিন্তা করো নাতো, আর আমি তো আটটার আগেই আসার চেষ্টা করি, আজকে একটা ঝামেলা হয়েছিলো তাই।
ঝামেলা কিসের ঝামেলা?? মা অস্থির হয়ে বলল।
আরে ও কিছু না তুমি এতো চিন্তা করো না,, শোনো না মা কালকে তো শুক্রবার তুমি রেডি থাকবা বিকেলে তোমাকে নিয়ে চটপটি খেতে যাবো।
না না আমি ওসব খাই না,,
আরে রাখোতো আমি যেতে বলছি যাবা দেখবা ভালো লাগবে,, আমিও সবাইকে দেখিয়ে দেবো আমি মেয়ে হয়েও আমার মাকে সুখে রেখেছি।
পাগলি একটা এবার হা কর আমি তোকে খাইয়ে দিই,,, এরপর মায়ের হাতে খেয়ে সবকিছু গুছিয়ে ঘুমাতে চলে গেলাম।
,,,,সকালে,,,,

যেহেতু আজকে শুক্রবার তাই ভোরে উঠে নামাজটা পড়ে আবার ঘুমাই গেছি,, নয়টার দিকে উঠে ক্লিপ দিয়ে চুলগুলি কোনো রকমে আটকে ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালাম তখনি মা বলল।
এই পাশের দোকান থেকে হলুদ,, ডিম,, আর মরিচের গুঁড়ো আনতো এগুলি সব ফুরাই গেছে,,,
ওকে আনছি,, এই বলে ব্রাশটা মুখের ভিতর পুরে হাঁটতে লাগলাম,, পরনে একটা ঢিলেঢালা প্লাজু আর গায়ে একটা টিশার্ট এটাকে টিশার্ট বললে ভুল হবে টিশার্ট তো ছোট হয় কিন্তু আমার এটা হাঁটুর উপর অবধি পড়ে,, উরনাটা মাথায় দিয়ে ব্রাশ করতে করতে হাঁটছিলাম তখনি দেখি একটা লোক কিছু বাচ্চাদের বলছে,,,,শোনো যেখানে সেখানে থু থু ফেলবে না ওকে আর সব সময় পরিষ্কার পরিছন্ন থাকবে,, লোকটার কথা শুনে আমি কিছু বলতে যাবো কিন্তু গালের মধ্যে থুথুর জন্য বলতে পারলাম না অগত্যা পাশেই থুথু ফেললাম তখনি কেউ বলল।

ছিঃ কি নোংরা এভাবে যেখানে সেখানে কেউ থু থু ফেলে, এই মেয়ে তুমি তো দেখছি কোনো ডিসিপ্লিনই জানো না।
কারো গলার আওয়াজ শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখি সেই লোকটা মানে আর্দ্র,, জগিং সুট পরে দাঁড়িয়ে আছে,, আমাকে দেখে বলল।
তুমি?? অবশ্য তোমার থেকে এসবি আশা করা যায়, কোনো ডিসিপ্লিন নেই নোংরা একটা।
আমি আবারো পাশে থু থু ফেলে বললাম,,, এই আপনার প্রবলেম কি বলুন তো সব সময় আমার সাথে ঝগড়া করার সুযোগ খোঁজেন,, আর আমি জানি যে যেখানে সেখানে থুথু ফেলতে হয় না,, তাই আমি রাস্তার পাশেই ফেলেছি, আর আপনি আমায় ডিসিপ্লিন সেখাচ্ছেন?? নিজে তো বেলা নয়টার সময় জগিং করতে বেরিয়েছেন।

এই শোনো আমি তোমার মতো এতো অলস নয় যে এতো বেলা করে পড়ে পড়ে ঘুমিয়ে এখন উঠে ব্রাশ করবো,, আমি সকালেই জগিং করতে বেরিয়েছিলাম কিন্তু রাস্তায় এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেলো তাই ওর সাথে ওর বাসায় গিয়েছিলাম এই জন্যই দেরি হয়ে গেলো।
হুমম জানি জানি উল্লুক একটা।
এই কি বললে তুমি?? ,,এই আচ্ছা উল্লুক মানে কি??
এ বাবা আপনি এটাও জানেন না?? হাঁদারাম একটা।
স্টপ,, এতো যে ভাব দেখাচ্ছো তুমি বলো উল্লুক মানে কি??

আমিও জানি জানি না,,, দেখি সরুন আমায় দোকানে যেতে হবে যত্তসব,, এই বলে ইয়ানা চলে গেলো।
এ কি মেয়ে ধ্যাত,,, আর্দ্র চলে গেলো,, আর্দ্র বাড়িতে ঢুকলেই পরশ দৌড়ে এসে ওর কোলে উঠে গলা জরিয়ে ধরে বলল,, চাচ্চু তোমাকে একটা প্রশ্ন করি??
হুম করো।
আচ্ছা বলতো,, একটা গাছে তিনটা পাখি বসে আছে ওখান থেকে যদি দুইটা পাখিকে গুলি করে মেরে ফেলা যায় তাহলে আর ওই গাছে কয়টা পাখি থাকবে??
এটা তো খুবি সিম্পল,, ওখানে আর একটা পাখি থাকবে।
নো নো হয়নি ওখানে আর একটাও পাখি থাকবে না কেননা গুলির শব্দে সব পাখি উড়ে যাবে,,,কি মজা কি মজা চাচ্চু পারে না,, আচ্ছা বলতো হাঁদা।
হাঁদা,,ভ্রু কুঁচকে বলল আর্দ্র।

তুমি একটা গাধা,, হিহিহি চাচ্চু গাধা। হাতে তালি দিয়ে বলল পরশ।
এসব তোমাকে কে শিখিয়েছে পরশ,,,রেগে বলল আর্দ্র।
কেনো কিউটিপাই,, এখন ছাড়ো আমায় তুমি একটা গাধা,, এই বলে পরশ আর্দ্রর কোল থেকে নেমে চলে গেলো।
এই মেয়েটাও না, কি সব ভুলভুল জিনিস শিখাচ্ছে কালকে আসুক তারপর বোঝাবো,, একটা ছোট বাচ্চাকে এসব শিখানোর জন্য ওনাকে তো শাস্তি পেতেই হবে।,, এই বলে আর্দ্র গটগট করে রুমে চলে গেলো।

আমার গল্পে তুমি পর্ব ৩+৪+৫