আমার গল্পে তুমি পর্ব ৪+৫+৬

আমার গল্পে তুমি পর্ব ৪+৫+৬
সুমাইয়া সুলতানা সুমী

আকাশে অর্ধগোলাকার চাঁদ উঠেছে বাইরে ঠান্ডা ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে যেনো একটা রোমাঞ্চকর মুহুর্ত তখনি অন্ধকার থেকে কেউ আমার দিকে তার দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,,ওগো মোর প্রিয়া তুমি কি জানো, তোমার ওই মাতাল দুচোখের চাহনিতে আমি বার বার ঘায়েল হই,, আর কত জ্বালাবে আমায় এই অধম কে এতো জ্বালাতে তোমার ভালো লাগে?? একটু আসো না আমার বুকে,,

এবুকে মাথা রাখলে তুমি শুনতে পাবে হাজারও না বলা কথা,, শুনতে পাবে তুমি এক তৃষ্ণার্থ প্রেমিকের আর্তনাত যার জীবনের প্রতিটি পাতায় পাতায় শুধুই তুমি আছো,, প্রতিটি ধাপে ধাপে তুমি আছো,, আমার প্রতিটি গল্পে শুধুই তুমি আছো আর কারোর সেখানে বসবাস নেই,, আমার গল্পে শুধুই তুমি। এই বলে যুবকটি চলে গেলো আবার অন্ধকারের গহীনে।। তখনি ধপ করে ঘুম থেকে উঠে বসে বলল ইয়ানা,,, সত্যি কি আমার জীবনেও এমন কেউ আসবে?? যে শুধুই আমার হবে আর এভাবে আমাকে নিয়ে বলবে?? প্রায় দিনিই এই একি স্বপ্ন দেখি কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারেও ছেলেটির মুখটা দেখতে পেলাম না,, কবে তুমি আমায় দেখা দেবে ওগো মোর স্বপ্ন পুরুষ,, এই বলে ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো আটটার বেশি বাজে,,, এই দেখে তড়িঘড়ি করে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কিরে আজকে উঠতে এতো দেরি করলি কেনো?? আমি কেবলি তোকে ডাকতে যাচ্ছিলাম ।
কি জানি আজকে দেরি হয়ে গেলো,, শোনো না মা রাতে চাকরির কিছু বিঙ্গাপন দেখলাম অনেকগুলি কম্পানিতে চাকরির বিঙ্গাপন দিয়েছে তার মধ্যে কালকে একটার ইন্টারভিউ আছে,, যদিও আমি এখনো অর্নাস কম্পিলিট করিনি তাই ইন্টার পাশ এর সার্টিফিকেট দিয়েই চেষ্টা করবো, জানি হবে না তবুও চেষ্টা করতে দোষ কোথায়?? ,, খেতে খেতে বলল ইয়ানা।
হুম দেখ কিছু হয় কিনা,,
আচ্ছা আম্মু তুমিও খেয়ে নাও আমি গেলাম হ্যাঁ সাবধানে থেকো,, এই বলে ইয়ানা চলে গেলো।
মেয়েটা বড় হয়েছে এভাবে আর কতদিন এবার তো ওকে বিয়ে দিতে হবে,,, হুমম দেখতে হবে কোথায় ভালো ছেলে পাওয়া যায় কি।

ভার্সিটি শেষ করে ক্লান্ত শরীল নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো ইয়ানা এখন মোটেও পড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে না, মন চাইছে বাড়ি গিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিই,,, তবে আল্লাহ আল্লাহ করে যদি কালকে চাকরিটা হয় তবে এই টিউশনিটা বাদ দিয়ে দেবো,,, কোনোমতে ছোটখাটো একটা চাকরি হলেই হলো,,, তারপর ইয়ানা মাসুমকে পড়িয়ে বাড়ি চলে গেলো, একেবারে গোসল করে ছোটখাটো একটা ঘুম দিয়ে তারপর পরশকে পড়াতে যাবে,।
আর্দ্র আমাকে একটা কাজে কালকে চিটাগাং যেতে হবে তাতো তুই জানিস,, তাই কালকের ইন্টারভিউ টা তোকেই নিতে হবে,, কি বলিস।

হুম আচ্ছা ঠিক আছে,, কাজ করতে করতে বলল আর্দ্র।
আচ্ছা তাহলে এখন তো আর কোনো কাাজ নেই আমি তাহলে বাড়ি গেলাম সবকিছু প্যাকিং করতে হবে, আর অন্তরা কেউ বলা হয়নি,, তুই বরং পাঁচটার দিকে চলে আসিস ওকে।
আচ্ছা ঠিক আছে তুই যা,আমি সব ম্যানেজ করে নেবো, আর আমি জানি তো কেনো এতো তাড়াতারি
তুই যেতে চাইছিস আগামী দুইদিন তো ভাবিকে ছেড়ে থাকতে হবে আর কালকে ভোরে তোকে বেরিয়ে যেতে হবে তাই এখন গিয়ে নিশ্চয়ই ভাবির সাথে রোমাঞ্চ করবি,,, অনিকের দিকে তাকিয়ে বলল আর্দ্র।

সে কপাল কি আমার আছে,, একটা ছেলে আছে না,, আমার রোমাঞ্চ এর বারোটা বাজিয়ে দেবে,, ছেলে আমার কিন্তু পেয়েছে তোর স্বভাব,, অন্তরাকে ছুঁলেই বলে,, আব্বু তুমি জানো না চাচ্চু বলেছে মেয়েদের থেকে দূরে থাকতে আর তুমি আমার মাম্মাম এর কাছে কি করছো যাও সরো। এগুলা কি সয্য করা যায় বল,,, আর্দ্রর চেয়ারের হাতার উপর বসে বলল অনিক।
সর তো আমার চাম্প ঠিকি বলেছে,, আচ্ছা ঠিক আছে আমি গিয়ে পরশকে নিজের কাছে রাখবো,,, আর এমনিতেও আজকে আমার তারাতারি যেতে হবে ওই অভদ্র মেয়ে টাকে বোঝাতে হবে তো,, মনে মনে বলল আর্দ্র।

,,,,এই ঘুমটাও না ঠিক সময় ভাঙ্গতেই চাই না সময় ছাড়া অসময় ভাঙ্গে, কত দেরি হয়ে গেলো আজকে,, ওবাড়ির সবাই কি বলবে যে দুদিন নাই পড়াতেই এমন,, ম্যামের যদি সময় জ্ঞান না থাকে তাহলে ছাএের কি হবে,,,এসব ভাবতে ভাতবেই পরশদের বাসার সামনে চলে আসলো ইয়ানা,, রিকশা ভাড়া দিয়ে সোজা গেট দিয়ে ভিতরে গিয়ে কলিং বেল চাপল কিছুক্ষণ পর আর্দ্র এসে দরজাটা খুলে দিলো।

এই খাটাশটা এই সময় বাড়িতে কি করছে,, মনে মনে বিরবির করে বলল ইয়ানা।
কি হলো ওমন করে দাঁড়িয়ে না থেকে ভিতরে আসুন নয়তো দরজার বন্ধ করে দেবো।
ইয়ানা কথা না বলে সোজা দরজা দিয়ে ভিতরে চলে গেলো,, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে পরশের রুমে যাওয়ার সময় আশেপাশে তাকিয়ে অন্তরাকে খুঁজতে লাগল কিন্তু ওকে পেলো না,, পরশের রুমের একপাশে আর্দ্রের রুম আর অপর পাশে অনিকের রুম তাই ইয়ানা ভাবলো পরশের রুমে যেতে গিয়ে হয়ত অন্তরার সাথে দেখা হবে৷ আপুটা খুব ভালো,, এই ভেবে ইয়ানা উপরে উঠে অন্তরার রুমের সামনে গিয়ে দেখলো দরজা ভিতর থেকে আটকানো।
ওরুমে ভাইয়া আর ভাবি আছে পরশের রুম পাশেরটা,,, উপরে উঠতে ইয়ানাকে অনিকের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল আর্দ্র।

ইয়ানা লজ্জা পেয়ে,, আর্দ্রের দিকে না তাকিয়ে পরশের রুমে চলে গেলো,,, গিয়ে দেখলো পরশ বিছানায় বসে গেম খেলছে, ইয়ানা ওকে পড়ার টেবিলে বসিয়ে নিজেও বসলো,, তখনি আর্দ্র ল্যাপটপ নিয়ে পরশের রুমে এসে বিছানায় বসে বলল।
আমি এখানে কাজ করবো আমার সামনে পড়াও ওকে, এই বলে ল্যাপটপে কাজ শুরু করল।
এনি আমাকে কী ভাবেন মনে হয় আমি পড়াতে পারি না,, দেখতে এসেছে কেমন পড়ায় হুমম?? মনে মনে বলে পরশকে পড়াতে লাগল,, প্রায় বিশ মিনিট পর পরশ বলল,,,,ওফ্ফ আমার ভীষণ জোরে হিসি পেয়েছে আমি হিসি করে আসছি,, এই বলে রুম থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।

আরে এই রুমেই তো বাথরুম আছে তাহলে বাইরে যাওয়ার দরকার কি,, এটা বলে আর্দ্র দাঁড়িয়ে আবার বসে পড়ল, কেননা নিচে মা আছে,, মায়ের কাছে গেলে মা ওকে হিসি করিয়ে দিবে,,, আর্দ্রের কিছু একটা মনে পড়ায় ও ল্যাপটপটা রেখে দাঁড়িয়ে ইয়ানা কে বলল।
এই শোনো এদিকে আসো।,, দুহাত পকেটে রেখে বলল আর্দ্র
ইয়ানা ভ্রু কুঁচকে চেয়ার থেকে উঠে আর্দ্রের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,, বলুন।
তুমি পরশকে ওসব কি শিখিয়েছো?? ভুলভাল।

কি আবার শেখাবো?? তারপর একটু ভেবে বলল,, ও আচ্ছা আপনি ওসব এর কথা বলছেন?? আরে পরশ তো ছোট আর আমাকে চেনেও না তাই আমি যদি প্রথমেই ওকে এসে পড়ানো শুরু করতাম আর কর্কশ গলায় কথা বলতাম তাহলে তো ও ভয় পেয়ে যেতো,, তাই জন্য ওর সাথে বন্ধত্ব করার জন্যই মজা করে ওসব বলেছি।
এখন থেকে আর ওসব ওকে শিখাবে না,, সাহস কতবড় ও তোমার জন্য আমাকে বলে আমি নাকি হাঁদা??
আর্দ্রের কথা শুনে ইয়ানা হাসা শুরু করলো,, ইয়ানার হাসা দেখে আর্দ্র রেগে ইয়ানার দু বাহু চেপে ধরে দেওয়াল এর সাথে লাগিয়ে বলল,,একদম হাসবে না আমি মোটেও কোনো হাসির কথা বলিনি ওকে।
আর্দ্র যে এভাবে এতো কাছে চলে আসবে ইয়ানা বুঝতে পারিনি, তাই চোখ বন্ধ করে রেখেছে তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,,, ছ,,ছাড়ুন আমায়।

কেনো ছাড়বো কেনো, আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও, বড্ড বেশি সাহস হয়ে গেছে তেমার,, একবার যদি হাতে পাই তাহলে দেখাতাম এই আর্দ্র কি।
ইয়ানা আগে কখনো কোনো ছেলের এতো কাছে আসিনি তাই শরীলের মধ্যে কেমন যেনো একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে,,, আর্দ্র এতোক্ষণ রেগে কথাগুলি বললেও এবার ভালো করে ইয়ানার মুখের দিকে তাকাতেই দেখলো,, ইয়ানার চোখ বন্ধ আর ঠোঁট গুলি কেমন কাঁপছে এক গুছা চুল এসে ঠোঁটের উপর পড়েছে।
আচ্ছা এই ঠোঁট গুলি কি নরম?? নাকি শক্ত একবার ছুঁয়ে দেখবো?? এই ভেবে আর্দ্র ধীরে ধীরে ওর হাত ইয়ানার ঠোঁটের দিকে এগোতে লাগলেই তখনি পরশ বলল।

চাচ্চু তুমি কিউটিপাইকে ওভাবে ধরে রেখেছো কেনো?? কিউটিপাই কি করেছে??
পরশের কথায় দুজনের হুশ ফিরে,, দুজন দুদিকে ছিটকে সরে যায়।
ছিঃ ওনি আমার এতো কাছে ছিলো, ইয়ানা তোর বুদ্ধি সুদ্ধি কি সব লোপ পেয়েছে?? লোকটা এখন আমায় কী ভাববে, আর পরশই বা কি মনে করবে ধ্যাত,, মনে মনে কথাগুলি বলে নিজের মাথায় নিজেই একটা চাটি মারলো ইয়ানা।
সিট আমি এসব কি করছিলাম ওই মেয়েটার এতোটা কাছে কি করে যেতে পারলাম,, নো নো আর্দ্র নিজেকে সামলা এসব ঠিক নয়,,, মনে মনে এসব বলে নিজের মনকে সান্ত্বনা দিতে লাগল আর্দ্র।

কি হলো তোমরা কথা বলছো না কেনো,,, কি করছিলে ওখানে?? আচ্ছা ঠিক আছে আমি তাহলে আব্বুর থেকে জিগাস করে আসি,, এই বলে পরশ দরজার দিকে যেতে গেলেই আর্দ্র বলল।
এই সেরেছে রে,,, আরে আমার ছোট্ট চাম্প আসোলে কি বলোতো তোমার কিউটিপাই না ভীষণ ভিতু ভয় পেয়ে গেছিলো তাই আমি ওনাকে ধরে রেখেছিলাম।

আর্দ্রের কথা শুনে ইয়ানা ভ্রু কুঁচকে কিছু বলতে যাবে তখনি ভাবলো না থাক এই পিচ্চি টা যা বিচ্ছু না জানি আবার সবাই কে কীসব বলে তার বদলে আর্দ্র যা ভুলভাল বুঝাচ্ছে বোঝাক , ,,, আচ্ছা আমি নিচে থেকে একটু পানি খেয়ে আসছি৷ এই বলে ইয়ানা দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে সামনে তাকাতেই ওর চোখ কপালে উঠে গেছে,,,কেননা সামনে অনিক অন্তরা কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সম্ভবত অন্তরাকে মানানোর চেষ্টা করছে,,, এভাবে অপত্যাশিত ভাবে ইয়ানা কে দেখে অনিক অন্তরা কে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়ালো।
আ,,আরে ত,,তুমি কখন এলে,, এসো ভিতরে এসে,, নিজেকে ঠিক করে বলল অন্তরা।

আব ইয়ে ম,,মানে আমি কিছু দেখেনি,, এই বলে ইয়ানা চোখে হাত দিয়ে আবার রুমে ঢুকতে গেলে আর্দ্রের সাথে ধাক্কা লাগল।
পরশকে ভুলভাল বুঝিয়ে কেবলি আর্দ্র নিচে যাচ্ছিলো তখনি ইয়ানার সাথে ধাক্কা খেলো,,, এই তুমি সব সময় এমন ছোটাছুটি করো কেনো?? একটু ধীরে সুস্থে চলতে পারো না??
আব,, আপনি, এসব কি যে ইচ্ছে,,, এই আপনি দেখে চলতে পারেন না চোখ থাকতে অন্ধ,, এই বলে কপাল ডলতে ডলতে পরশের কাছে চলে গেলো,, এটা বুক নাকি লোহা,, ভাগ্যিস ওনার বুকের সাথে ধাক্কাটা লাগলো নয়তো মাথার সাথে লাগলে আমার মাথাটাই ফেটে যেতো উফফ ঝামেলা। মনে মনে কথাগুলি বলে পরশকে পড়ানো শুরু করলো তারপর পড়ানো শেষে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো।

রাতে,,,,,,
শোনোনা আম্মু কাল সকাল সকাল আমায় ডেকে দেবে তো একটা ইন্টারভিউ আছে,, খেতে খেতে বলল ইয়ানা।
তুই যে বললি ইন্টার পাশ এর সার্টিফিকেট দিয়ে এই চাকরি হবে না তাহলে।
আরে আম্মু চেষ্টা করতে অসুবিধা কোথায় দেখি কি হয় ।
আচ্ছা তুই যা ভালো বুঝিস কর, তবে সাবধানে।
তুমি এতো চিন্তা করো নাতো, তাহলে আবার তোমার শরীল খারাপ করবে,, আর তোমার দোয়া আছে তো ইনশাআল্লাহ আমার কিছু হবে না।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে মায়ের হাতে হাতে সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম,,, আজকে যদি আবারও ওই স্বপ্ন টা দেখি তাহলে এবার ওই অন্ধকারে থাকা লোকটার হাত ধরে টেনে আলোয় নিয়ে এসে ওনার মুখ দেখবো হুম,,তবে স্বপ্নে কি হাত ধরে টানা যায়?? তাতে কি আমার স্বপ্ন আমি যেভাবে সাজাবো সেভাবেই হবে হুমম,, এই বলে ইয়না ঘুমিয়ে পরলো।
,,,,,সকলে,,,,

দূর ঘোড়ার ডিমের মাথা আজকেও ওই লোকটার মুখ দেখতে পারলাম না,, দেখেই নিতাম কিন্তু মাঝে মায়ের ডাকে ঘুমটাই ভেঙ্গে গেলো,,, সাড়ে দশটাই ইন্টারভিউ তাই আজকে আর ভার্সিটি যাবো না,, সকালের যে টিউশনি টা আছে ওটাও আজকে ছুটি দিয়েছি একদম ফ্রেশ মুডে ইন্টারভিউ দিতে যাবো।
তারপর সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে ফাইলের ভিতর সব কাগজ পএ নিয়ে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম,,,।

ঠিকানায় তো এটাই,, বাপরে কত্তবড় অফিস, রিকশা ভাড়া দিয়ে,, কাঁচের দরজা ঠেলে ভিতরে গিয়ে সোজা রিসিপশনের মেয়েটির কাছে জিগাস করলাম ইন্টারভিউ কোথায় নেওয়া হচ্ছে,, ওনি বলল সেকেন্ড ফ্লোরে,, আমি মেয়েটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলাম, গিয়ে দেখি ওখানে ওয়েটিং রুমে অনেকেই বসে আছে আর কেউ কেউ পায়চারি করছে,, সবাই আমার থেকে বড় এখানে মনে হয় আমিই সবার ছোট,, এতোজন অভিজ্ঞ মানুষের মধ্যে আমার চাকরি হওয়া অসম্ভব,, তবুও আল্লাহ আল্লাহ করে দাঁড়িয়ে আছি,,

প্রায় অনেক সময় পর আমার ডাক পড়ল আমি মনে মনে আল্লাহ নাম নিয়ে দরজার কাছে গিয়ে বললাম,,
মে আই কামিং স্যার।
ভিতর থেকে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,, ইয়েস কাম।
আমি ভয়ে ভয়ে ভিতরে গিয়ে দাঁড়াতেই সামনে থেকে একজন বলল বসুন,, আমি মাথা উঁচু করে সামনের মানুষ টাকে দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললাম,, এটা তো আর্দ্র ,, এখন আমি কি করবো এখান থেকে ছুট্টে পালিয়ে যাবো?? না না তাহলে এটা অভদ্রতা দেখায়,,, তাহলে কি করবো,, আমার ভাবনার মাঝেই একজন লোক বলল।
কি হলো বসুন??

জ,,,জি,, এই বলে আমি চেয়ারে বসে পড়লাম।
ম্যানেজার সাহেব আপনি একটু বাইরে যান আমার এনার সাথে একটু কথা আছে,, আর্দ্র।
কি হলো ওনি ম্যানেজার কে বাইরে যেতে বলল কেনো,, কি করতে চাইছেন কি ওনি,, আল্লাহ বাঁচাও, মনে মনে বলল ইয়ানা।
জি স্যার,, এই বলে ম্যানেজার বাইরে চলে গেলো,, আর্দ্র চেয়ারে নড়েচড়ে বসে বলল,,,তা মিস ইয়ানা আপনি এখানে তাও আবার আমার অফিসে?? কি চাই চাকরি??

দ,,দেখুন আপনার সাথে আমার যায় হয়েছে সেটা বাইরে,,আর এটা অফিস সো আমি আশা করবো আপনি আগের করা কাজের সাথে অফিস এর কাজ মিশিয়ে ফেলবেন না,,।
ওহ শিওর,, তা আপনার কাজগ পএ দেখি।
আমি ভয়ে ভয়ে আমার হাতে থাকা ফাইলটা ওনার দিকে বারিয়ে দিলাম,, ওনি কাগজ গুলো নেড়েচেড়ে দেখে একটা হাসি দিয়ে বলল,,আপনার তো দেখি মাথায় সেই বুদ্ধি এতো বড় একটা কোম্পানি তে আপনি এইচএসসি পাশের সার্টিফিকেট দিয়ে কাজ করতে চাইছেন?? বাহ,, যেখানে মানুষ এর থেকেও আরো বড় বড় ডিগ্রী নিয়েও কাজ করতে পারেন না,, বাইরে যায়া অপেক্ষা করছে তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা আছে??

আমি প্রথমে ওনাকে এখানে দেখেই বুঝে গেছি যে ওনি আমায় চাকরি তো দেবেনই না উল্টে আরো না না ধরনের কথা বলবে,,,আমি কিছু বলতে যাবো তখনি ওনি বলল।
তবে চাকরিটা আমি আপনাকে দেবো।
ওনার কথা শুনে আমি অনেক হয়ে গেলাম তারপরও নিজেকে সামলে বললাম,, মানে আমার এই যোগ্যতা দিয়েই আপনি আমায় এতো বড় একটা পোস্টে জব দেবেন??
পাগল নাকি তুমি?? তোমার এই যোগ্যতা দিয়ে এই অফিসের পিওনের চাকরি টাও তুমি পাবে না। তবে পিওনের চাকরিটা তোমাকে দেওয়াও যাবে না কেননা বর্তমানে ওই পোস্টে একজন আছে,,
তাহলে??? আমি রেগে বললাম।

এই পোস্টের জন্য তো ইন্টারভিউ নেওয়া হবেই আর একজন যোগ্য মানুষকেই জবটা দেওয়া হবে,, তবে তোমার জন্য অন্য একটা জব অফার করবো আমি তা তুমি কি রাজি??
আমি আমতা আমতা করে বললাম৷ ক,কিসের জব??

দেখো আমার কোনো পিএ প্রয়োজন নেই আমি একাই একশো তবে তোমার জবটা হলো,, পিএ এর মতোই,,এই যেমন সকালে আমি উঠি আবার কোনো কোনো দিন ঠিক পাই না তাই উঠতে দেরি হয়ে যায় আর আমাকে কেউ ডাকেও না,, তো তোমার প্রথম কাজ হলো আমাকে প্রতিদিন সকাল সকাল ফোন করে জাগিয়ে দেওয়া,, তারপর অফিসে এসে আমি যে কাজগুলি তোমাকে দেবো সেগুলি করা,,, সব সময় আমার পিছে পিছে থাকতে হবে আমার কখন কোথায় কয়টায় মিটিং সেটা মনে করিয়ে দিতে হবে,, ক্লাইন্ট এর ফোন রিসিভ করে তার সাথে কথা বলতে হবে,, আবার আমার কাজের জন্য বাহিরে যাওয়া লাগলে তোমাকেও আমার সাথে যেতে হবে,, তোমাকে নয়টার মধ্যে অফিসে আসতে হবে আর ওদিকে পাঁচটার মধ্যে তুমি বাড়ি চলে যাবে কেননা ছয়টা থেকে আবার চাম্পকে পড়াতে হবে,, আর এর জন্য প্রতিমাসে আমি তোমাকে বেতন ও দেবো এই ধরো ত্রিশ হাজারের মতো,, আর যদি তোমার কাজ ভালো হয় তাহলে এক দু হাজার বাড়তেই পারে,, আবার চাম্পকে পড়ালে ওখান থেকে হাজর খানিক পাবে, এবার বলো তুমি রাজি??

আমি ওনার কথাগুলো মন দিয়ে শুনলাম তারপর বললাম,,, আপনি ভাবলেন কি করে আমি আপনার এই প্রস্তাবে রাজি হবো,, আর তাছাড়া আমি একটা প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে এভাবে আপনার সাথে হুটহাট বাইরে যেতে পারবো না,, আর তাছাড়া আমার ভার্সিটি আছে,, আমার এতো টাকার লোভ নেই যে আপনি লোভ দেখালেই আমি রাজি হয়ে যাবো,, আমার নিজের উপর বিশ্বাস আছে আমি চেষ্টা করলে একটা না একটা জব ঠিকি পেয়ে যাবো,,, আসছি, এই বলে আমি বেরিয়ে আসতে যাবো তখনি ওনি বললেন।

দাঁড়াও মিস ইয়ানা,, তুৃমি কি বললে?? তুমি চেষ্টা করলে জব পেয়ে যাবে?? আরে তুমি জানো তোমার এই যোগ্যতা দিয়ে এই বাজারে একটা ভালো চাকরি পাওয়া কতটা দুঃসাধ্য,,, আর তুমি যদি অন্য কোথাও জব করো তাহলেও তুমি ভার্সিটিতে যেতে পারবে না,,, আর কি এমন বলেছি যে তুমি জবটা করতে পারবে না,,, আমার পরিবার আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে একটা মেয়েকে সম্মান দিতে হয়, আর আমি তো একবারো বলিনি যে তোমায় একা আমার সাথে যেতে হবে,, আরে ভাইয়া কি একা গেছে ওর সাথে আরো দু একজন গেছে, তেমনি আমার সাথে তুমি সহ আরো কয়েক জন যাবে,,, আর আমি তোমাকে যে জবটা অফার করলাম সেটা তোমার আকসেপ্ট করা উঠিত কেননা তোমার উচিত তোমার মা কে সুখে রাখা।

ওনার কথা শুনে আমি ওনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই ওনি বললেন।
আরে এভাবে দেখছো কেনো?? এটা ভেবো না যে আমি তোমার উপর নজর রাখছি তুমি মা আর ভাবিকে বলেছিলে যে তোমার বাসায় তুমি আর তোমার মা থাকে, সেখান থেকেই জেনেছি,,, আর শুধু তোমার কেনো আমাদের সবারি উচিত বাবা মা কে সুখে রাখা খুশি রাখা কেননা মা বাবা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেন,, আমাদের পিছনেই তাদের অর্ধেক জীবন ব্যায় করে ফেলেন আর আমাদের উচিত বাকি অর্ধেক জীবনে তাদের সুখে রাখা মাথায় তুলে রাখা,, এবার দাখো তুমি কি করবে।
দয়া করছেন??

না আমি তোমাকে দয়া করছি না শুধু সাহায্য করছি,, যাতে আমাদের দেশ থেকে একজন বেকার কমে,,, তোমার কাজটা অনেকটা ফ্রিল্যান্সি এর মতো আমি তোমাকে সবকিছু বুঝিয়ে দেবো আর তুমি কাজ করবে,, বলো রাজি??
আমার একটু সময় লাগবে,, ভেবে দেখতে হবে।
ভাবো তবে বেশি সময় নয়,, সন্ধ্যাই উত্তরটা দিতে হবে,, ওকে এখন তুমি যেতে পারো।
তারপর আমি ওখান থেকে চলে আসলাম৷,,, বাইরে এসে রিক্সা নিয়ে সোজা বাড়ি চলে গেলাম, ফ্রেশ হয়ে খেয়ে আম্মুর কাছে বসে আম্মুকে সব বললাম।

দেখ আমি তোর উপর কিছু চাপিয়ে দেবো না তোর যা ভালো মনে হয় তুই কর,,, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল আম্মু ,, আমি ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি।
,,,,,সন্ধ্যায়,,,,,
আস্তে আস্তে দিন আগের তুলনায় অনেকটায় ছোট হয়ে গেছে,, ছয়টা নাই বাজতে সূর্যের আলো কমে যায়, আমি পরশদের বাসায় গিয়ে কলিং বেল চাপতেই আপু দরজা খুলে দিলো,,
ভিতরে আসো,, ফিসফিস করে বলল আপু।

এতো ফিসফিস করে বলার কি আছে জোরে বললেই তো হয়,,, আমি কিছু না বলে ভিতরে চলে গেলাম দেখলাম পুরো বাড়ি কেমন চুপচাপ,, পরশ ঠোঁটের উপর হাত রেখে বসে আছে,, আমি গিয়ে পরশের সাথে বসে জোরেই বললাম,,, কি হয়েছে এভাবে বসে আছো কেনো।
হিসসসস কিউটিপাই আস্তে কথা বলো নয়ত বিপদে পরবে। ফিসফিস করে বলল পরশ।
কেনো?? পরশ কিছু বলবে তার আগেই কলিং বেল বেজে উঠল,, আপু রান্না ঘরে আর পরশও ছোট ডয়িং রুমে কেউ না থাকায় আমিই গিয়ে দরজাটা খুললাম, দেখলাম আর্দ্র এসেছে।

কি ব্যাপার তুমি দরজা খুললে কেনো বাড়িতে কেউ নাই নাকি।
পরশের মতো আমিও ফিসফিস করে বললাম,,, আছে কিন্তু ডয়িং রুমে নেই তাই আমি খুললাম।
আর্দ্র ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,, মাথাটা কি গেছে?? এতো আস্তে কথা বলছো কেনো??
কেনো বলুন তো??

সেটা আমি কীভাবে জানবো?? রেগে বলল আর্দ্র।
আমিও তো জানিনা বাড়ির সবাই এভাবে কথা বলছে তাই আমিও বললাম,,,। আমার কথাশুনে আর্দ্র কিছু একটা ভেবে বলল,, ওহ শিট সরো সামনে থেকে এই বলে আমার পাশদিয়ে হেঁটে ভিতরে চলে গেলো।
কি হলো ব্যাপারটা?? সবাই এমন করছে কেনো আর আর্দ্র এভাবে চলে গেলো কেনো?? ওনার সাথে তো আমার কথা আছে সেটা না শুনেই চলে গেলো,, আমিও ভিতরে গিয়ে পরশকে নিয়ে ওর রুমে গিয়ে ওকে পড়াতে বসালাম,, পরশের রুমে আসার পথে দেখলাম আর্দ্রের রুমের দরজা বন্ধ,, কি হলো ওনি তো প্রতিদিন আমার সাথে ঝগড়া করার জন্য একদম উৎ পেতে থাকে তাহলে আজকে রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে কেনো??

আচ্ছা পরশ কি হয়েছে বলোতো?? তোমরা সবাই এতো আস্তে কথা বলছো কেনো?? আর তোমার চাচ্চু ওভাবে রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে কেনো??
পরশ আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল,, চাচ্চু বাইরে বেরোবে না তো?? কেননা বাইরে বেরোলে তো চাচ্চুকে ধরে বিয়ে দিয়ে দেবে।
কে??
রাগি দীদুন।।
এই রাগী দীদুন টা আবার কে??
আরে তুমি জানো না?? রাগি দীদুন ভীষণ রাগি তাই ওনি রাগী দীদুন,,, কেউ জোরে কথা বললে ওনি ভীষণ রেগে যান।
ওনি তোমার কেমন দীদুন হন??

আমার গল্পে তুমি পর্ব ১+২+৩

তখনি অন্তরা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,,আরে তোমাকে তো বলায় হয়নি আসোলে আমার ফুপি শাশুড়ী এসেছেন ওনি একটু রাগি কিন্তু মনটা অনেক ভালো,, ওনি এখন ওনার রুমে আছেন ওনার কথায় বলছে পরশ,,,, এই নাও মিষ্টি খাও।
সেটা তো বুঝলাম, কিন্তু ওনার আসা দেখে আর্দ্র কেনো দরজা বন্ধ করে রেখেছে??
আর বলো না ,, আসোলে কি বলোতো ওনি এসেই শুধু বলেন আর্দ্র বিয়ে করছিস না কেনো বয়স তো আর কম হলো না আর কয়েকদিন পর তো চুলে পাক ধরবে তখন মেয়ে পাবো কই,, এই সব বলে আর বিভিন্ন মেয়েদের ছবি দেখায়,,, যেহেতু ওনি বাবা মানে আমার শশুরেরও বড় তাই আর্দ্র কিছু বলতেও পারে না আবার সয্য করতেও পারে না, শুধু রাগে কড়মড় করে,, এই জন্যই রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছে,, বিছানায় বসে বলল অন্তরা।

আপনার ফুপি শাশুড়ী তো ঠিকি বলেছেন আসোলেই ওনার বয়স হচ্ছে বিয়ে করা উচিত ওনার।
হুমম তুমিও বলো তারপর দেখো ও কি করে আচ্ছা তুমি পড়াও আমি গেলাম,, এই বলে অন্তরা চলে গেলো।
এই তো পাইছি একটা বুদ্ধি আমার পিছে লাগা এবার দেখাবো মজা,,, মনে মনে এটা বলে ইয়ানা পরশকে বলল,,এই পরশ একটা মজার গেম খেলবা পড়ার পরে??

গেম?? কি গেম আমি খেলবো।
আচ্ছা আগে পড়া শেষ হোক তারপর আমরা দুজনে মিলে গেমটা খেলবো ওকে??
ওকে ডান।
এবার বুঝবে আর্দ্র চান্দু এই ইয়ানা কি জিনিস,, একটা মিষ্টি মুখে দিয়ে মনে মনে কথাগুলি বলে হাসলো ইয়ানা।

আমার গল্পে তুমি পর্ব ৭+৮+৯