আমার গল্পে তুমি পর্ব ৭+৮+৯

আমার গল্পে তুমি পর্ব ৭+৮+৯
সুমাইয়া সুলতানা সুমী

পড়ানো শেষে ইয়ানার কথামতো পরশ আর্দ্র রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,,কিউটিপাই আমার কিন্তু কোনো দোষ নেই কিছু হলে সব তোমার দোষ,, আমি কিন্ত বলে দেবো যে এই সব তোমার প্ল্যান।
পরশ চাচ্চুর চাম্প তুমি না সাহসী এতো ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই তুমি শুধু দরজায় টুকা দিয়ে বলবা যে চাচ্চু দরজা খোলো দেখ আমার হাতে কি এটা বলে জেদ করবে , এটা না করলে ওনি কিছুতেই দরজা খুলবে না,,জানি এটা ভুল পদ্ধতি তবুও ওনাকে কেস খাওয়ানোর জন্য এমনটা করায় যায়।

সাহসী না কচু চাচ্চু একবার রেগে গেলে আমার সাহস ফুস, পাপ্পার থেকে চাচ্চুকে বেশি ভয় লাগে,, এটা বলে পরশ আস্তে করে আর্দ্রর রুমের দরজায় টুকা দিয়ে বলল,,,চাচ্চু দরজাটা একটু খোলো না দেখো আমার হাতে কি,,,,
দীদুন নয়ত তোমার মাম্মামকে দেখাও চাম্প আমি কাজ করছি ,, ভিতর থেকে বলল আর্দ্র।
দেখেছো চাচ্চু কাজ করছে চলো চলে যায় ডিস্টার্ব করলে রাগ করবে,, ফিসফিস করে বলল পরশ ইয়ানাকে।
আরে ওনি ব্যাস্ত নাহ,, ওনি তো কেবল অফিস থেকে ফিরল তাই না?? তাহলে এখন কীসের ব্যাস্ত বলো,, আবার ডাকো।
তুমি একটুও কথা শোনো না,,, এটা বলে পরশ আবার আর্দ্র কে ডাকতে লাগল এভাবে বার বার ডাকায় আর্দ্র বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে বাইরে এসে বলল,, কি হয়েছে?? ততক্ষণে ইয়ানা লুকিয়ে পরেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পরশ আর্দ্র কে বাইরে আসতে দেখে পাশে তাকিয়ে দেখলো ইয়ানা নেই,, পরশ চোখ বড় করে আর্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,,, এই দাখো আমার হাতে বল।
এটা তো আমি দেখেছি চাম্প তুমি এটা দেখানোর জন্য আমায় ডাকলে?? তোমার পড়া শেষ না?? তাহলে যাও নিচে গিয়ে খেলো ওকে,, এটা বলে কেবলি আর্দ্র রুমে ঢুকতে যাবে তখনি পাশের একটা রুম থেকে আর্দ্রের ফুপি বেরিয়ে এদিকেই আসলো,,,আসলে ইয়ানা জানত যে আর্দ্রের ফুপি এখনি বেরোবে,, কেননা তখন অন্তরা বলেছিলো যে ওনি মাগরিবের নামাজ পড়ে তারপর কিছুক্ষণ জায়নামাজ এর উপর বসে জিকির করেন তারপর নিচে আসবে আর ইয়ানাও সেই সুযোগটাই কাজে লাগালো।
আরে আর্দ্র তুই এসেছিস আমি সেই কখন এসেছি তোকে একবার এর জন্যও দেখলাম না, চল নিচে চল কথা আছে,, এই বলে আর্দ্রের ফুপি শরীফা বেগম নিচে চলে গেলো।

হয়ে গেলো যেটার জন্য রুমে ছিলাম সেটাই হলো,, আর্দ্র বিরক্ত হয়ে ওর ফুপির পিছনে যেতে গেলে দেখলো ইয়ানা পরশের রুমের দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে আর্দ্র কে দেখে হাসতেছে।
তারমানে এটা ওনার কাজ হুমম, একরাব হাতে পাই তারপর দেখাবো মজা।
ডয়িং রুমে শরীফা বেগম সহ কবির,, আশা ও অন্তরা সবাই বসে ছিলো তখনি পরশের হাত ধরে আর্দ্র নিচে নামলো,, আর্দ্র কে নিচে নামতে দেখে বাড়ির সবাই তো হা করে তাকিয়ে আছে।
আয় বস আমার কাছে,,, তা কবির ছেলের বয়স তো আর কম হইলো না আর কতদিন ছেলেকে বিয়ে না দিয়ে এভাবে বসায়ে রাখবি,, অন্তরার মতো একটা লক্ষী মেয়ে দেখে বিয়ে দিয়ে দে।
আমি কি করবো আপা ওই তো বিয়ে করে না।

সেকিরে আর্দ্র এসব কি৷ তুই জানিস না বিয়ে করা ফরজ,, এভাবে আরো নানা কথা বলে আর্দ্র কে জ্ঞান দিতে লাগল, আর এদিকে আর্দ্র পারছেনা এখান থেকে ছুটে চলে যেতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে কথাগুলো হজম করছে,, ইয়ানা এককোনায় দাঁড়িয়ে ছিলো আর্দ্রের করুন মুখ দেখে ওর খুবি হাসি পাচ্ছে তবুও দাঁতে দাঁত চেপে কোনোমতে হাসিটা দামিয়ে রেখেছে, কিন্তু শেষ রক্ষা হলো কই মুখ ফসকে একটু জোরেই হেসে ফেলল,, ইয়ানার হাসি শুনে সবার চোখ ইয়ানার দিকে গেলো অন্তরা ইশারায় ওকে চুপ থাকতে বলছে আর্দ্র রেগে লাল হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে যেনো কাঁচা চিবিয়ে খাবে।
ওই মাইয়া এদিকে আসো,,

শরীফা বেগমের কথা শুনে ইয়ানা হাসি বন্ধ করে হেঁটে ওনার সামনে এসে দাঁড়াল।
তুমি কে? তোমাকে তো চিনলাম না আর এতোক্ষণ কই ছিলে??
আসোলে ফুপি ও হলো ইয়ানা পরশের টিউশন টিচার, কয়দিন হলো ও পরশকে পড়াচ্ছে।
ওহ মাস্টারনী,, তা আর্দ্র বাড়িতেই এতো সুন্দর একটা মেয়ে থাকে তবুও তোর পছন্দ হয় নাহ?? এতো সুন্দর মেয়ে পছন্দ হলে নিঃসংকোচে বলবি, তুই কি বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিস নাকি??

শরীফা বেগমের কথা শুনে ইয়ানা চোখ বড় বড় করে আর্দ্রের দিকে তাকালো দেখলো আর্দ্র বিরক্তি নিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
শরীফা বেগম আরো কিছু বলতে যাবে তখনি পরশ বলে উঠল মাম্মাম আমি মিষ্টি খাবো ,, অন্তরা কেবলি উঠতে যাবে তখনি ইয়ানা বলল,, আরে আপু তোমাকে উঠতে হবে না তুমি থাকো আমিই পরশকে কিচেনে নিয়ে যাচ্ছি,, এই মহুর্তে এখান থেকে সরতে হবে নয়ত এই মহিলা না জানি ধরে বেঁধে আবার ওই গোমরা মুখো লোকটার সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়,, মনে মনে বলল ইয়ানা।
দেখেছো আমি তোমাকে বললাম না চাচ্চু রাগ করবে,,, মিষ্টি খেতে খেতে বলল পরশ।
হুমম তাতো দেখলামই,

,, কি গো পেয়েছো নাকি মিষ্টি?? কিচেনে এসে বলল অন্তরা।
হুম আপু, আচ্ছা আপু আমি এখন আসি বেশি রাত হলে আম্মু আবার রাগ করবে।
আচ্ছা ঠিক আছে যাও,,,
অন্তরার থেকে বিদায় নিয়ে কেবলি কিচেন থেকে বেরোতে যাবে তখনি সামনে আর্দ্র এসে দাঁড়াল।
কি হলো এভাবে সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো??
তা তোমার উত্তর কি কাল থেকে অফিস জয়েন করছো তো??
হুম আমি রাজি।
গুড,, ওকে এখন যাও।

কি হলো ওনি কিছু বললেন না কেনো ওনাকে এতোগুলা ভাষণ শুনালাম তবু ওনি এমন চুপচাপ আছেন,, কি জানি ওনার মনের ভিতর কি চলছে,, মনে মনে এটা বলে বেরিয়ে গেলো ইয়ানা।
কাল থেকে বুঝবে কাজ কি, আর্দ্র এর সাথে লাগতে আসলে পস্তাতে হয় সেটা তুমি খুব ভালো করেই টের পাবে মিস ইয়ানা,, মনে মনে বলল আর্দ্র।
,,,,,রাতে,,,,,
শোনোনা আম্মু আমি ভেবেছি যে টাকা গুছায়ে একটা স্কুটি কিনবো তারপর তোমাকে পিছনে বসায়ে সারা ঢাকা শহর ঘুরাবো,,, খেতে খেতে বলল ইয়ানা।

হুমম এখনো অফিসে গিয়ে কাজই করলো না তার আগেই কতশত ভেবে বসে আছে। ইয়ানাকে খাইয়ে দিতে দিতে বলল ওর মা।
ভাবতে তো হবেই, তুমি দেখো আম্মু আমি তোমার কোনো কষ্ট পেতে দেবো না, একদম রাণীর মতো করে রাখবো।
আচ্ছা রাখিস পাগলি একটা,, এখন চুপচাপ খেয়ে নে তো, অনেক রাত হয়েছে কালকে আবার অফিস আছে।
হুম ঠিক বলেছো আজকে সকাল সকাল শুয়ে পড়তে হবে কাল তো আবার অফিস আছে,, দাও যলদি খাইয়ে দাও,,,
,,,,সকালে,,,

ঢাকা শহরে যে জ্যাম তাই একটু তারাতারিই বেরিয়ে পড়েছি নয়ত দেরি হলে আবার ওই গোমরা মুখো টা কি বলবে কে জানে,,, অবশেষে অফিসে আসতে পারলাম যাক বাবা টাইমের মধ্যেই এসেছি তবে আমি বসবো কোথায়?? হায় হায় এটা তো আমি জানি না এখন কি করবো,, আশেপাশে তাকিয়ে দেখি এরি মধ্যে প্রায় অনেকেই চলে এসেছে আর তারা তাদের ডেস্কে বসে পড়েছে,, সবাই সবার কাজ নিয়ে ব্যাস্ত কেউ আমার দিকে তাকাচ্ছেই না,, উফফ কি যে করি,,, কিছুক্ষণ ভেবে মাথায় একটা বুদ্ধি এলো,, কালকে যে রুমে ইন্টারভিউ হয়েছিলো সেই রুমে গিয়ে বসে থাকি তারপর ওনি আসলে ওনার থেকে জেনে নেবো যে আমার ডেস্ক কোনটা,, সকালে ফোন করে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলাম তাও এতো লেট হুমম?? সে আবার বড় বড় কথা বলে।

আজকে একটু দেরি হয়ে গেলো,, তারাহুরো করে আর্দ্র অফিসে ঢুকে সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিজের কেবিনে চলে গেলো গিয়ে দেখলো সোফায় ইয়ানা বসে আছে।
তুমি?? এখানে কি করছো??
তুমি এখানে কি করছো??
তো কোথায় থাকবো, আপনি তো শুধু চাকরিটা দিলেন কোথায় বসবো সেটা তো বলেন নাই আর এখানকার কিছু চিনিও না তাই এখানেই বসেছি।

ওহ আচ্ছা আমি তো ভুলেই গিছিলাম, আচ্ছা আজকের মতো তুমি এখানে বসেই কাজ করো আজকে ভাইয়া আসলে তেমার একটা বসার জায়গার ব্যবস্হা করা যাবে,, চেয়ারে বসতে বসতে বলল আর্দ্র।
তা আমার কি কাজ বোঝায় দেন।
ওকে লিসেন এই যে ফাইল গুলো দেখছো এই ফাইলে খুবিই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রজেক্ট আছে আমি অর্ধেক দেখেছি বাকিটা তুমি দেখো তারপর আমাকে দেবে ওকে।

ওকে বোঝেছি,, এই বলে ফাইল গুলো নিয়ে ইয়ানা সোফায় বসে দেখতে লাগল,, আর আর্দ্র নিজের কাজ করতে লাগল কিছুক্ষণ পর আর্দ্র বলল,,শোনো স্টোর রুমে একদম উপরের তাকের পাঁচ নাম্বার বস্কে চারটা ফাইল আছে যাও নিয়ে আসো।
ওকে,, এই বলে ইয়ানা দরজা অবধি গিয়ে আবার পিছন ফিরে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে কমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকল।
কি হলো না গিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?? সময় কম জলদি যাও।
আপনি জানেন না আমি এই অফিসে বিগত চার বছর ধরে কাজ করি আমি এখানকার সবকিছু চিনি একেবারে পানির মতো,,, দাঁতে দাঁত চেপে বলল ইয়ানা।

আর্দ্র ইয়ানার কথা বুঝতে না পেরে বলল,, মানে??
মানে হলো আমি চিনি স্টোর রুম কোথায়?? আজকেই প্রথম আসিনি আমি??
এটা সোজাসাপটা বললেই তো হতো এতো ঘুরিয়ে বলার কি আছে,, এই বলে আর্দ্র পিওন কে ডাকলো কিন্তু পিওন আসলো না, হয়ত কোনো কাজে গেছে আচ্ছা চলো আমিই তোমাকে দেখিয়ে দিচ্ছি,, এই বলে আর্দ্র আগে আগে চলে গেলো।
নিজেই যখন যাবে তখন নিজেই আনলে কি হতো শুধু আমাকে বিরক্ত করার ফন্দি, এই বলে ইয়ানাও আর্দ্র পিছনে গেলো,,আর্দ্র স্টোর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,, এই যে এটাই স্টোর রুম ভিতরে যাও আর ফাইলটা নিয়ে এসো।
ইয়ানা রেগে বিরবির করতে করতে ভিতরে গেলো, তারপর উপরে দিকে তাকিয়ে দেখলো একদম উপরের তাকের একটা বস্কের গায়ে পাঁচ লেখা আছে, তবে সেটা ইয়ানার ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

এটা তো অনেক উপরে আমি তো নাগাল পাচ্ছি না আপনি লম্বা আছেন আপনি পেরে নিননা।
একদম কাজে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবে না, পাশের ওই টুলটা নিয়ে ওটার উপর দাঁড়িয়ে পারো,, দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দুহাত বুকে গুজে বলল আর্দ্র।

এই লোকটা বড্ড বেশি অভদ্র,, জেনেশুনে আমাকে খাটাচ্ছে মনে চাই মেরে মাথা ফাঁটিয়ে দিই, এসব বিরবির করতে করতে ইয়ানা পাশ থেকে টুলটা নিয়ে তার উপর দাঁড়িয়ে ফাইলটা পারার চেষ্টা করলো কিন্তু হলো না তবুও নাগাল পাচ্ছে না তাই পা টা একটু উঁচু করে পারতে চেষ্টা করলো ওদিকে টুলটা নড়বর করছে,, ইয়ানা কোনোমতে ফাইলের নাগাল পেয়েছে তখনি পা পিছলে হুরমুর করে নিচে পড়ে গেলো, ইয়ানা ভেবেছিলো যে আর্দ্র হয়ত ওকে ধরবে কিন্তু সে গুড়ে বালি আর্দ্র আগের মতোই বুকে দু হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে।
আহ আমার কমরটা গেলো, কি নিষ্ঠুর লোক একটু ধরলোও না আমাকে,,, ইয়ানা কমরে হাত দিয়ে উঠার চেষ্টা করতে করতে বলল।
৷ আর্দ্র রুমের ভিতর এসে ইয়ানার দিকে একটু ঝুঁকে বলল নিজের দোষে নিজেই পরেছো তোমার উচিত ছিলো আর একটু দেখে কাজ করা এখন থেকে উঠে ফাইলগুলো নিয়ে যলদি আমার কেবিনে আসো কাজ আছে,,, এই বলে আর্দ্র যেই বাইরে বেরতে যাবে তখনি নিচে পড়ে থাকা টুলটাই বেঁধে সোজা গিয়ে ইয়ানার উপর পড়ল।

ইয়ানা কেবলি কষ্ট করে একটু উঠেছিলো তখনি আবার আর্দ্র হুরমুর করে ওর উপর পড়ে গেলো,, আহ এবার আমার একেবারে শেষ কমরটা এবার সত্যি সত্যি গেলো,, এখন তো নিজেই দেখে চলতে পারেন না।
তোমাকে কে বলেছিলো টুলটা এখানে রাখতে যত্তসব,, এই বলে আর্দ্র রেগে ইয়ানার উপর থেকে উঠে চলে গেলো, তার উপর ইয়ানাও উঠে পড়ল এভাবেই দুজনের খুনশুটি আর ঝগড়ার মধ্যে দিয়ে দিনটা কেটে গেলো।
,,,,সন্ধ্যাই,,,

উফ কমরটা গেছে এখনো বেথ্যা আছে রাতে বাড়ি গিয়ে মা কে বলবো তেল গরম করে মালিশ করে দিতে তাহলে যদি কমে , কি কুক্ষণে যে ওই লোকটার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো কে জানে,, আর্দ্র অনেক কিছু বলতে বলতে অবশেষে পরশের বাড়ি আসলো কলিং বেল চাপতেই অন্তরা এসে দরজা খুলে দিলো।
কি ব্যাপার আজকে এতো সাজুগুজু করেছো যে কাহিনি কি হুম??
ধ্যাত তুমিও না, এসো ভিতরে আসো।
হুমম বুঝি বুঝি জানিতো আজকে ভাইয়া আসবে সেই জন্যই এতো আয়োজন,, ভিতরে এসে বলল ইয়ানা।
অন্তরা লজ্জা পেয়ে বলল,,,পরশ ওর রুমেই আছে তুমি উপরে যাও।

ওলে এতো লজ্জা পেতে হবে না,,, এই বলে হাসতে হাসতে উপরে যেতে গেলে দেখলো আর্দ্রর সেই ফুপি নেই তাই অন্তরাকে জিগাস করল,, আপু তোমার সেই জ্ঞানী ফুপি শাশুড়ী টা কই দেখছি না তো।
আরে ওনি তো সকালেই চলে গেছে,, ওনি এমনি এসে আর্দ্র কে জ্ঞান দিয়ে আবার চলে যাই থাকেন না,,
ওহ আচ্ছা আমি তাহলে গেলাম,, এই বলে যখনি উপরে উঠতে যাবে তখনি দেখলো আর্দ্র মা নিচে নামছে,, আসসালামু আলাইকুম আন্টি ভালো আছেন??
আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো মা,,মুচকি হেসে বলল আশা।
আমিও ভালো আন্টি।
আচ্ছা দাদু ভাই উপরে আছে তুমি যাও,,
হুমম,, ইয়ানা উপরে গিয়ে দেখলো পরশ পড়ার টেবিলে বসে আছে।

কি ব্যাপার চাম্প দেখি আজকে নিজে থেকেই পড়তে বসেছে গুড বয় হয়ে গেছে দেখছি,, ইয়ানা চেয়ারে বসতে বসতে বলল।
কি বলোতো আজকে তো পাপ্পা আসবে তাই যলদি পড়তে বসেছি, শোনোনা কিউটিপাই তুমি কিন্তু আজকে তারাতারি ছুটি দিবে ওকে।
আচ্ছা ঠিক আছে বেবিটা,, পরশের গাল টেনে বলল ইয়ানা।
আহ তোমাকে বলছি না চেহারায় হাত দিবা না।
ওলে বাবা আচ্ছা ঠিক আছে,, ইয়ানা পরশকে পড়ানোর কিছুক্ষণ পরই আর্দ্র ল্যাপটপ নিয়ে এসে পরশের বিছানায় বসে পড়ল এদিকে ইয়ানা আর্দ্র কে দেখে কমরে হাত দিয়ে নড়েচড়ে বসল।
কি হয়েছে তোমার কমরে কিউটিপাই??

কি বলতো আমার উপরে না একটা মস্ত বড় পাহাড় পরেছিলো তাই কমরে বেথ্যা পেয়েছি,, আর্দ্রের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল ইয়ানা।
ইয়ানার কথা শুনে আর্দ্র ভ্রু কুঁচকে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে পরশকে বলল,, জানোত চাম্প কেউ যদি দেখে শুনে না চলে তাহলে তো তার কমর ভাঙ্গবেই তাই না কেয়ারলেস একটা।
কিহ আমি কেয়ারলেস?? নিজে কি হ্যাঁ আলুর বস্তা এতো ভারি আমার জীবন শেষ ।
সেকি কিউটিপাই তুমি না বললে তোমার উপর পাহাড় পরেছিলো তাহলে এখন আবার আলুর বস্তা বলছো কেনো??
পাহাড় আলুর বস্তা সব কিছুই,, এভাবেই এক কথায় দুই কথায় আর্দ্র আর ইয়ানার ঝগড়া বেঁধে গেলো,, পরশ কানে হাত দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,, তোমরা ঝগড়ায় করবে নাকি আমাকে পড়তেও দেবে।

পরশের কথায় দুজনেই চুপ হয়ে গেলো, তখনি কলিং বেল এর আওয়াজ শুনলো,, এই পাপ্পা এসে গেছে আমি গেলাম এই বলে পরশ দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, এই আস্তে যাও ইয়ানা আর আর্দ্র ও ওর পিছনে গেলো।
এই কেউ দরজা খুলবে না আমি খুলবো,, দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে পরশ দরজা খুলার চেষ্টা করল কিন্তু পারলো না ওতোটুকু হাত কি আর দরজার সিটকেনি অবধি পৌঁছায়।
কি হলো খোল এখন দাঁড়িয়ে আছিস কেনো??
তুমি একটু খুলে দাও না মাম্মাম,, করুন মুখ করে বলল পরশ।
পাগল ছেলে,, হেসে কথাটি বলে অন্তরা দরজা খুলে দিলো, কিন্তু দরজার উপারে অনিককে দেখে হাসি মুখটা নিমেষেই চুপসে গেলো কেননা অনিকের পাশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

অনিক ভিতরে এসে বলল,,,, সরি অন্তরা একটা ভুল হয়ে গেছে.
হাসি খুশি বাড়িটা মহুর্তেই কেমন নিস্তব্ধতাই ছেয়ে গেলো এক কোণায় অনিক দাঁড়িয়ে আছে পাশের সোফায় অন্তরাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে,, আর্দ্র ডাক্তারকে ফোন করেছে একটু পরেই চলে আসবে,,
কিছুক্ষণ আগে৷
আম সরি অন্তরা একটা ভুল হয়ে গেছে,,
অনিকের কথা শুনে আর অনিকের পাশে অচেনা একটা মেয়েকে দেখে বুকের ভিতরটা কেমন ধক করে উঠেছে তার উপর অনিকের সরি বলা আর ভুল হয়েছে শুনে দেহে যেনো প্রাণ নেই তবুও কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,, মানে??
অনিক কিছু বলার আগেই অচেনা মেয়েটা হুট করে অন্তরার হাত ধরে বলল,,আপনি আমার বোনের মতো আমার বাঁচা মরা সবকিছু এখন আপনার উপর নির্ভর করছে প্লিজ আমায় সাহায্য করুন।

অন্তরা অনিকের দিকে তাকিয়ে দেখলো অনিক মাথা নিচু করে আছে এতে যেনো অন্তরা আরো বেশি ভয় পাচ্ছে তবুও অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বলল,,,কি বলছেন এসব আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
আসলে কালকে হোটেলের পার্টিতে আমরা একটা ভুল করে ফেলেছি,,
কি ভুল করেছেন?? আতংকিত গলায় বলল অন্তরা।
আসলে স্যার আমাকে আপনি ভেবে,,, আর কিছু বলার আগেই অন্তরা মাথা ধরে অঙ্গান হয়ে নিচে পড়তে গেলেই অনিক ওকে ধরে ফেলে তারপর অন্তরাকে কোলে তুলে সোফায় শুইয়ে দেয় আর ওই মেয়েটাকে এখন যেতে বলে যা করার কাল সকালে যাই হোক করা হবে,, মেয়েটা হলো শেলী আর্দ্রদের অফিসেই কাজ করে।

,,,বর্তমান,,,,
কিরে কি হলো ডাক্তার আসছে?? আশা অস্থির হয়ে বলল।
হুমম মা আসছে,, গম্ভীর কন্ঠে বলল আর্দ্র।
এতো কিছুর মধ্যে পরশকে কেউ খেয়ালই করেনি আমি আপুর হাত ধরে হাত ঘষতেছিলাম তখনি হঠাৎ করে পরশ কান্না করা শুরু করল এইটুকু বাচ্চা কিছু বুঝতে না পারলেও এটা তো দেখছে যে ওর মার কিছু একটা হয়েছে,, পরশের কান্না দেখে অনিক পরশের কাছে যেতে গেলে করিব রেগে বলল,

খবরদার তুই যদি তোর ওই অপবিত্র হাত দিয়ে আমার দাদু ভাই কে স্পর্শ করিস তাহলে কিন্তু আমি তোর গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হবো।
বাবা বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি তোমরা একটা বার আমার কথাটা তো শোনো।
কোনো কথা শুনতে চাই না এখন যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অন্তরায় নেবে।
কি হয়েছে আমার চাম্প এর এভাবে কান্না করে কেউ আমাদের চাম্প না সাহসী,, পরশের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল ইয়ানা।
কিউটিপাই মাম্মাম এর কি হয়েছে?? মাম্মাম ওভাবে শুয়ে আছে কেনো??
মাম্মাম এর কিছু হয়নি চাম্প মাম্মাম একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে,, এখন ডাক্তার আংকেল এসে দেখলেই মাম্মাম একদম সুস্থ হয়ে যাবে তুমি এভাবে কান্না করো না তাহলে তো মাম্মাম কষ্ট পাবে তাই না??

হুমমম আমি আর কান্না করবো না,, তাহলে দাদু পাপ্পাকে বকা দিলো কেনো??
ইয়ানার পরশকে কিছু বলার আগেই ডাক্তার চলে আসলো। ডাক্তার ভিতরে এসে অন্তরাকে ভালো করে দেখে অনেকক্ষণ পর বলল,,,এই সময় এতো পেশার নেওয়া ঠিক নয় এতে মা ও বেবি দুজনের জন্যই ক্ষতি।
ডাক্তার এর কথায় সবার খুশি হওয়ার কথা হলেও কারো মুখে তেমন কোনো আভাস দেখা গেলো না অনিক কথাটা শুনে অনেক খুশি হয়েছে,, ডাক্তার কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে আর অন্তরাকে বেড রেস্ট এ থাকতে বলে চলে গেলো আর বলল কিছুক্ষণ পরই জ্ঞান ফিরে আসবে।

আর্দ্র বৌমাকে ওর রুমে দিয়ে আয়।
কেনো বাবা আর্দ্র কেনো আমিই অন্তরাকে নিয়ে যাচ্ছি।
বলেছিনা তুই আমার দাদু ভাই বা আমার বৌমার কাছেও আসবি না,, কি হলো আর্দ্র কি বলেছি শুনতে পাসনি।
হুম বাবা.

ভাবিকে আমি বড় আপুর মতোই দেখি আমাকে যখন ভাইয়া বলে ডাকে তখন নিজেকে অনেক ছোট বাচ্চা মনে হয় প্রাণটা জুড়িয়ে যায় মনেই হয় না যে আমার কোনো বোন নেই,, তবে আজকে ভাবির এই অবস্থায় আমি চেয়েও কিছু করতে পারছি না,, ভাইয়া মোটেও ওমন নয় ভাইয়া ভাবিকে অনেক ভালো বাসে সেটা আমি জানি তাহলে ভাইয়া কিছু বলছে না কেনো হুমম কালকে বিষয় টা দেখতে হবে,,, অন্তরাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে আর্দ্র নিচে নেমে এলো।
জানোত চাম্প মাম্মাম না তোমার জন্য ছোট একটা বেবি আনবে।
সত্যি বলছো কিউটিপাই??

হুমম সত্যিতো তুমি তার সাথে খেলবে কেমন,, এখন তাহলে যাও গুড বয় এর মতো মাম্মাম এর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ো,,
ওকে কিউটিপাই, কিন্তু পাপ্পা যাবে না??
যাবে তো ওই যে বললাম বেবি আনতে যাবো সেইটা নিয়ে তো পাপ্পার সাথে কথা বলতে হবে তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো।
আচ্ছা আমি গিয়ে একদম গুড বয় এর মতো মাম্মাম এর পাশে শুয়ে টুপ করে ঘুমিয়ে পড়বো।

আর্দ্র ইয়ানাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আয় অনেক রাত হয়ে গেছে এতো রাতে মেয়েটাকে একলা ছাড়া যাবে না। কবির গম্ভীর কণ্ঠে বললো
অন্য কোনো সময় হলে আর্দ্র হয়ত না করত আমিও না করতাম কিন্তু এখন এতো সব কিছুর মধ্যে ঝামেলা না করাই ভালো হবে,, আর্দ্র আমাকে গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেলো গাড়িতে আমরা কেউই কারো সাথে কোনো কথা বলিনি।
কিরে এতো দেরি হলো কেনো জানিস আমার কত চিন্তা হচ্ছিল।

চিন্তা করো না মা আমি তোমাকে সবকিছু বলছি,, তারপর মাকে সবকিছু খুলে বললাম।
ছিঃ ছেলেটা কত খারাপ একটার বাবা হয়ে গেছে তবুও এমন আকাম কেমনে করল তুই আর ও বাড়িতে পড়াতে যাস না কি জানি কার মনে কি আছে বলাতো য়ায় না।
না মা এভাবে বলো না অনিক ভাইয়া অনেক ভালো একজন প্রাণোবন্ধ হাসিখুশি মানুষ আর ওনি অন্তরা আপুকে অনেক ভালোবাসে।
তাহলে কি ওই মেয়েটা মিথ্যা বলছে??
সেটাও তো বুঝতে পারছি না একটা মেয়ে তার সব থেকে বড়,, সম্মান নিয়ে কেনো মিথ্যা বলবে??
আচ্ছা ওসব বাদদে এখন আয় খেয়ে নে।

,মাঝরাত চারিদিকে গভীর অন্ধকার জানালার গ্রিল ধরে একমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে অন্তরা বিছানায় পরশ গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে অনিক কোথায় জানিনা,, আচ্ছা আমার ভালোবাসায় কোথায় কমতি ছিল এই আট বছর সংসার জীবনে কখনোত এমন হয়নি তাহলে এখন কেনো এমন হচ্ছে এতো ভালোবাসা বিশ্বাস সব কি মিথ্যা ছিলো। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অন্তরা এসব ভাবছিলো তখনি একজোড়া হাত পিছন থেকে অন্তরার পেটে রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল,, অন্তরা প্রথমে ভয় পেলেও পরে ঠিকি বুঝতে পেরেছে এটা অনিক।

বিশ্বাস করো অন্তরা ওই আল্লাহ সাক্ষী আমি আমার জ্ঞান থাকা অবস্থায় কোনো খারাপ কাজ করিনি,, এই হাত দিয়ে ভালোবেসে একটা নারীকেই ছুঁয়েছি সেটা হলো তুমি প্লিজ আমায় বিশ্বাস করো,, অন্তরাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ গুজে বলল অনিক।
আমাকে ছাড়ো অনিক।
প্লিজ আমায় বিশ্বাস করো আমি আমার অনাগত বাচ্চা কে ছুঁয়ে বলছি আমি কোনো পাপ করেনি।
এখান থেকে যাও অনিক বাবা দেখলে রাগ করবে।

আমার গল্পে তুমি পর্ব ৪+৫+৬

তুমিও আমাকে বিশ্বাস করলে না ওকে আমি চলে যাচ্ছি পরে আবার আফসোস করো না যেনো, এই বলে অনিক চলে গেলো,, অনিক যাওয়ার পর অন্তরা কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়ল তারপর ঘাড়ে হাত দিয়ে দেখল ওখানে ভিজা।
তাহলে কি অনিক কাঁদছিলো?? আমি কি ওকে বিশ্বাস না করে ভুল করলাম?? না না আমাকে ওর থেকে সবটা শুনতে হবে,, এই ভেবে অন্তরা রুম থেকে বেরোতে গেলেই পরশ উঠে বসে চোখ ডলতে ডলতে অন্তরাকে ডাকতে লাগল,, অন্তরাও পরশের কাছে গিয়ে ওকে ঘুম পাড়াতে লাগল।

,,,,সকালে,,,,
আজকে সকাল সকাল অফিসে চলে আসছি আর্দ্র স্যারের সাথে কিছু কথা আছে আমার কেনো জানি ওই মেয়েটার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না,, তাই আমি আর্দ্র কেবিনে গিয়ে দেখি ওনি চেয়ারে বসে কপালের উপর হাত রেখে কিছু একটা ভাবছে।
আসতে পারি??
হুম আসো,,,
শুনুন না আপনার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো অনিক ভাইয়াকে নিয়ে।
হুম বসো,, তবে আমার মনে হয় না ভাইয়া এমনটা করবে।
হুমম আমারো।

আমার কথাশুনে আর্দ্র ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো,,
না মানে আমি আপনাকে কপি করছি না,, আমি বলছিলাম কি আমি যতটা অনিক ভাইয়াকে চিনি ওনি এমন কাজ করতেই পারেন না,, এখন অনিক ভাইয়া কে এখানে আসতে বলেন ওনার থেকে সবটা শুনতে হবে।
অর্ডার করছো আমায়??
প্লিজ এখন ঝগড়া করার মুড নেই ভাইয়াকে ডাকুন আগে এসব ঝামেলা মিটমাট করি তারপর আপনার সাথে কমর বেঁধে ঝগড়া করবো।

আমার গল্পে তুমি পর্ব ১০+১১+১২