আমার গল্পে তুমি পর্ব ৪০+৪১+৪২

আমার গল্পে তুমি পর্ব ৪০+৪১+৪২
সুমাইয়া সুলতানা সুমী

সকলের মাঝে শিলা গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, আসলে গ্রামে একটু কিছু না হতেই একটু জোরে কথা হলেই আশে পাশের বাড়ির মানুষ চলে আসে তখন এক কথায় দুই কথায় অনেক জোরে কথা উঠে যায় শিলা ইয়ানাকে যা নয় তাই বলছিলো, ইয়ানা কিছু বুঝতে পারছিলো না আসলে কি হয়েছে, শুধু ইয়ানা কেনো ওখানে থাকা কেউই বুঝতে পারছিলা আসলে শিলা কি বলতে চাইছে, তবে আর্দ্র আর সয্য করে পারিনি ওর প্রথম থেকেই শিলার উপর রাগ ছিলো আর এখন এভাবে ইয়ানাকে উল্টো পাল্টা কথা বলায় আর্দ্র আর নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারিনি সপাং করে শিলার গালে ঠাস করে একটা চড় বসায়ে দিয়েছে,,

আর্দ্রর এহেন কাজে সবাই অবাক হয়ে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে ছিলো ইয়ানাও ভয়ে আর কিছু বলেনি কেননা ও আর্দ্রর রাগ সম্পর্কে জানে,, সরি আমি আর টলারেট করতে পারছিলাম না, একটা হাঁটুর বয়সী মেয়ে এসে বিনা কারণে আমার ওয়াইফ কে যা নয় তাই বলবে আর আমি মুখ বুজে সয্য করবো তেমন স্বামী আমি নয়,, আর আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে তুমি কিছু না জেনে শুনে কাউকে এভাবে অপমান করতে হয় না সেটা জানো না?? এই শিক্ষা পাওনি কারো থেকে??

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আসলে আমরা সত্যি লজ্জিত বাবা, আমি বুঝতে পারিনি আমার মেয়ে এমনটা করবে, ও হয়ত বুঝতে পারিনি আর তুমি না জানলেও ইয়ানা জানে আমার মেয়ে কেমন, আসলে ও ছোট তো তাই ওতোটাও বুঝতে পারিনি।
ভুলটা মনে হয় আমারই,, আমার আগেই শিলার কাছে ব্যাপার টা ক্লিয়ার করে দেওয়া উচিত ছিল,, আসলে শিলা আকাশ কে আর্দ্র ভেবেছিলো আর আর্দ্রকে আকাশ ভেবেছিলো রাতে ইয়ানা সবার সাথে সবার পরিচয় করায়ে দিলেও শিলা তো সেখানে ছিলো না, আর সকালে আমি ওকে সবটা বলতেই চাচ্ছিলাম কিন্তু পরশ আমায় ডেকে নিয়ে গেলো তারপর আর বলা হয়নি।

তুমি এখন বলছো সেটা,, অনিক তোমার সবটা আগেই বলা উচিত ছিলো তাহলে এসব কিছুই হতো না।
ভাবি জানোত যা হয় ভালোর জন্যই হয়,, আর শিলা আমি যে তোমায় চড় টা মেরেছি সেটা কিন্তু বড় ভাই হিসেবেই মেরেছি আর আজকে যা হয়ে গেলো তার থেকে কিন্তু আমরা সবাই একটা শিক্ষা নিতে পারি বলতো সেটা কি?? আর্দ্র শিলাকে সহজ করার জন্য প্রশ্নটা করল।

শিক্ষা টা হলো এটাই যে কখনোই সবটা না জেনে না দেখে হুটহাট সিদ্ধান্ত নেওয়া বা কাউকে দোষারোপ করা ঠিক নয়,, গালে দিয়ে মাথা নিচু রেখেই বলল শিলা।
এইতো গুড গার্ল তোমার তো দেখি অনেক বুদ্ধি তাহলে এই ভুলটা করলে কীভাবে,, আচ্ছা যাই হোক আমরা তো জানিই মানুষ মাএই ভুল, তা তুমি যেনো কোন ক্লাসে পড়ো।
জি ক্লাস টেনে।

আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে এখন যাও ভালো করে পড়াশুনা করবে,, আর তোমাদের গ্রামটা তো আমাকে ভালো করে দেখালেই না বিকেলের দিকে গ্রামটা ঘুরে দেখাবে তো?? নাকি এখনো আমার আমার উপর রাগ করে থাকবে।
আপনি আমাদের গ্রাম দেখবেন?? আচ্ছা আমি আপনাকে সহ সবাইকে গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখাবো, আর সেই বাগানটাও দেখাবো যেখানে ছোট বেলায় ইয়ানা আপু আমায় নিয়ে আম কুঁড়তে গিয়ে গাছ থেকে ধপাস করে পড়ে গিছিলো আর সেকি কান্না আমিতো ছোট ছিলাম তাই আপুকে পড়ে যেতে দেখে হেসে ফেলেছিলাম।
তবেরে দুষ্ট মেয়ে কোথাকার আমার মান ইজ্জত এর বারোটা বাজানোর ধান্দা তাই না দেবো কানটা মলে।
তুমি আমায় কিচ্ছু করতে পারবে না কেননা আমার আর্দ্র ভাইয়া আমাকে বাঁচিয়ে দেবে তাইনা ভাইয়া??
অবশ্যই।

মুহুর্তের চুপচাপ হয়ে যাওয়া বাড়িটা আবার হাসি খুশিতে মেতে উঠলো শিলাও ওর ব্যবহারে লজ্জিত হয়ে ইয়ানার কাছে ক্ষমা চাইলো ইয়ানা খুশি মনে ওকে ক্ষমা করে দিয়েছে কেননা ওতো না জেনে ভুলটা করে ফেলেছে আর যে ভুল করে অনুতপ্ত হয় তাকে ক্ষমা না থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না ,,, তারপর সবাই হাসাহাসি করে পিঠা বানানো শেষ করলো দুপুরের দিকে আর্দ্র রুমে ঘুমিয়ে ছিলো তখনি ইয়ানা রুমে এসে আস্তে করে দরজাটা বন্ধ করে আর্দ্রর কাছে এসে বলল,, উঠে পড়ুন উঠে পড়ুন সেহরির সময় হয়ে গেছে।
হোয়াট??

বাব্বাহ এতো হালকা শব্দেই আপনার ঘুম ভেঙ্গে গেলো?? আমি তো ভেবেছিলাম ডাকতে ডাকতে আমার গলা শুকিয়ে যাবে।
এই শোনো নিজেকে সবার মতো ভাবো কেনো, আর আমি কী তোমার মতো নাকি একবার ঘুমালে বস্তায় ভরে পানিতে ফেলে আসলেও ঠিক পাও না।
শুনুন আমি কেমন আর আমার ঘুম কেমন তা আমি ভালো করেই জানি এখন বেশি কথা না বলে এটা পড়ে নিন গোসল করতে হবে।
এক মিনিট আমি না একবার গোসল করলাম আবার কেনো,,আর্দ্র বুঝতে পারলো ও কি বললো তাই কথা ঘুরানোর জন্য বলল, আমি কখনোই এটা পড়বো না, আর তুমি আমায় কখনো দেখেছো লুঙ্গি পড়া।

শুনুন বাঙালি হয়ে লুঙ্গি পরবেন না এটা কেমন যেনো বেমানান আর এটা আপনার শহর না এটা গ্রাম এখানে সবাই লুঙ্গি পড়ে কাঁধে লাঙ্গল নিয়ে মাঠে যায়, আমি তো আপনাকে মাঠে যেতে বলছি না শুধু বলছি এটা পড়ে পুকুর থেকে গোসল করে আসুন, আর কলে বাড়ির মেয়েরা গোসল করবে।
নো নেভার না আমি এটা পড়বো আর না ওই পুকুর না কি ওখানে গোসল করবো,, আমি যেটা পড়ে আছি সেটা পড়েই গোসল করবো তাও কলে, তুমি পানি তুলে দিবা।

আকাশের দিকে দেখেছেন?? বলি আকাশের দিকে দেখেছেন সূর্যের তাপ কেমন,, কেমন মরা মরা রোদ এই রোদে আপনার ওই বস্তার মতো মোটা প্যান্ট ভিজায়ে শুকাতে দিলো সেটা আদেও শুকাবে?? আর আজকে যাও বা একটু রোদ উঠছে কাল যদি না উঠে যদি কুয়াশায় সব ঢেকে থাকে তখন কি হবে, এই ভিজা প্যান্ট ঘরে রাখলে তো গন্ধ হয়ে যাবে,, তারচেয়ে বরং আপনি এটা পড়ে আমার সাথে চলুন পুকুরে আমি আপনাকে সুন্দর করে গোসল করায়ে দেবো।

নাহ আমি তবুও এটা পড়বো না প্যান্ট না শুকালে না শুকাক।
আমরা এখানে মোট পাঁচ দিন থাকবো তাহলে আপনি পাঁচ দিনে পাঁচ টা প্যান্ট ভিজায়ে রাখবেন তারপর বাসায় যাওয়ার সময় কি পড়ে যাবেন শুনি, প্যান্ট ছাড়াই যাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি??
আরে ইয়ানা তুমি ওকে আমাদের কাছে ছেড়ে দাও আমরা ওকে সুন্দর করে লুঙ্গি পরায়ে দেবো।
সেকি তোরাও লুঙ্গি পরেছিস?? কেমন দেখাচ্ছে তোদের একদম ভালো দেখাচ্ছে না যা চেঞ্জ করে আয় কি সব ভুলভাল পোশাক পরেছিস।

আরে আর্দ্র ভাই শুধু আমরা কেনো এখন তোমাকেও এই ভুলভাল পোশাক পরাবো,, সুইট ভাবি তুমি একটু বাইরে যাবে আমরা তোমার বরকে একটু সাজাবো।
ওহ শিওর হুয়াই নট,,,, ইয়ানা বাইরে চলে যেতেই আকাশ আর অনিক দুজনে মিলে আর্দ্রকে চেপে ধরল ওর প্যান্ট ধরে টানাটানি শুরু করে দিলো ওদের এহেন কান্ডে অগত্যা আর্দ্র কে লুঙ্গি টা পড়তেই হলো,, আর্দ্র কে লুঙ্গি পরায়ে অনিক আর আকাশ ইয়ানার সাথে ওকে পুকুর ঘাটে আসতে বলে চলে গেলো,,ইয়ানা রুমে এসে আর্দ্র কে দেখে তো হা হয়ে গেছে আর্দ্র একটা সাদা চেক চেক লুঙ্গি পরেছে গায়ে টিশার্ট আর হাতে গামছা,, আরে ব্যাস আমার বরটাকে তো হেব্বি লাগছে হায় কারো যেনো নজর না লেগে যায়, আসুন আপনার কেনি আঙুল এ কামড়ে দিই।

মজা করা হচ্ছে আমায় নিয়ে না?? দিন কিন্তু আমারও আসবে তখন বোঝাবো মজা,, আর এসব কি কেউ পড়ে।
আরে সব সময় কোট টাই প্যান্ট পড়ে থাকলেই হয় না মাঝে মাঝে একটু বাঙালি সাজ ও দিতে হয়, তাই না বাঙালি বাবু,, কথাটা বলে আর্দ্রর লুঙ্গি ধরে হালকা টান দিলো ইয়ানা।
এই একদম এটা ধরে টানাটানি করবে না খুলে যাবে, তখন তুমিই লজ্জা পাবে বুঝেছো।
তাই নাকি হুমম হুমম,,,, ইয়ানা এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না বার বার এটা ধরে টান দিবে না তাহলে কিন্তু?? তাহলে কি হমম কি করবেন?? কি করবো তাই না দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা এই বলে আর্দ্র দরজা বন্ধ করে ইয়ানার দিকে এগিয়ে আসলো ইয়ানাও পিছাতে পিছাতে একদম খাটের কাছে চলে গেলো।

হাজার খানিক বিরক্তি নিয়ে পুকুর ঘাটে দাঁড়িয়ে আছে আর্দ্র, বাকি সবাই অলরেডি পুকুরে নেমে গেছে পানি অনেক ঠান্ডা হলেও সবাই অনেক মজা করে একসাথে গোসল করছে কিন্তু অন্তরা এখানে আসিনি কেননা এতো ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে যদি ঠান্ডা বা জ্বর আসে তাহলে তো বেবিরও ক্ষতি হবে তাই ও সহ বাড়ির সবাই বাড়ির কলে গোসল করবে তবে রোজা আর ইয়ানা এসেছে।
অনিক আর আকাশ লুঙ্গি দিয়ে বোম বানায়ে ফুলায়ে পানির উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে,, কি হলো আপনি ওখানে দাঁড়য়ে আছেন কেনো??নেমে পড়ুন শুনুন শীতের সময় ঠান্ডা পানি দেখে গোসল করতে যত বেশি দেরি করবেন তত বেশি শীত লাগবে আসুন আমার হাত ধরে এখানে বসে দ্রুত গোসল করে নেন।

এখানে কেউ গোসল করে?? আর আমি এখানে কীভাবে গোসল করবো দেখেছো পানিতে কত জীবাণু এখানে নামলে আমি নির্ঘাত অসুস্থ হয়ে যাবো।
হ্যাঁ আপনি জানেন শুনুন এই পুকুরে গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই এখানে গোসল করে কই ওনারা তো কেউ অসুস্থ হয়নি, সব গোসল না করার ধান্দা আসুন বলছি,, এই বলে ইয়ানা আর্দ্র কে ধরে টেনে পুকুরের ঘাটে বসায়ে দিলো তারপর ছোট বাচ্চার মতো আর্দ্র কে ধরে সুন্দর করে গোসল করায়ে দিলো আর্দ্র শুধু অপলক দৃষ্টিতে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ছিলো কিছু বলেনি,,ইয়ানা নিজের মতো করে আর্দ্র কে গোসল করায়ে গামছা দিয়ে মাথা মুছায়ে দিলো,, যান আপনার গোসল শেষ এখন রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিন নাকি চেঞ্জ টাও আমিই করায়ে দেবো হুমম।
তার কোনো প্রয়োজন নেই আমি নিজেই করতে পারবো, আর হ্যাঁ তুমি চলো আমার সাথে এখানে গোসল করা লাগবে না ভাবির মতো তুমিও কলে গোসল করবে।

কিন্তু,,,,
কোনো কিন্তু নয় চলো আমার সাথে এই বলে আর্দ্র ইয়ানার হাত ধরে নিয়ে চলে গেলো। রোজা পাড়ে বসে পানিতে পা ভিজিয়ে গায়ে সাবান মাখছিলো ওর আবার খুব ভয় বেশি পানিতে নামলে যদি কুমির বা অন্য কিছু এসে পা ধরে টেনে নিয়ে চলে যায় তাই বেশি পানিতে নামবে না উপর থেকেই কয়েক মগ পানি মাথায় নিয়ে চলে যাবে, আর যে ঠান্ডা পানি এর থেকে বেশি পানিতে থাকলে হয়ত জমে বরফ হয়ে যাবো, এরা দুজনে মহিষ নাকি শীতের দিনেও কেমন মহিষের মতো পানিতে জেঁকে বসে আছে, অনিক আর আকাশ এর দিকে তাকিয়ে মনে মনে কথা গুলো বলছিলো তখনি কি যেনো এসে রোজার পা টেনে ধরল।আআআআআ আমি এই পানিতে গোসল করবো না এখানে কুমির আছে একটুর জন্য আমি বেঁচে গেছি,, পানি থেকে উঠে চেঁচিয়ে বলল রোজা।

কি বলছো রোজা আপু এই ছোট একটা পুকুরে কুমির থাকবে কেনো আর আমরা তো এই পুকুরে সেই কবে থেকে গোসল করি কই আমরা তো কখনোই কুমির দেখেনি তোমার মনের ভুল হয়ত।
আকাশ পানির নিচে থেকে ডুব মেরে উঠে বলল,, এতোই যখন ভয় তাহলে পুকুরে নামতে বলেছিলো কে আপুর মতো কলে গোসল করলেই হতো।

এই শোনেন আমি না মোটেও ভয় পাইনি ওকে নির্ঘাত পায়ে কিছু একটার স্পর্শ পেলাম তাই নয়ত এই রোজা কিছু দেখে ভয় পাই। নাহ বাবা এখানে আর বেশি গোসল করা যাবে না টুপ করে একটা ডুব দিয়ে উঠে চলে যেতে হবে,, শেষের কথাটা আস্তে করে বলল।
তারপর রোজা পুনরায় আবার পানিতে নামলো কমর পানিতে নেমে রোজা যেই ডুব দিলো তখনি কেউ ওকে পানির নিচ থেকে জড়িয়ে ধরে গালে কিস করে দিলো, রোজার চোখ বন্ধ ছিলো বিধায় ও দেখতে পাইনি। তারপর পানির নিচ থেকে উঠে চিৎকার করতে করতে পাড়ে উঠে আসলো,, আবার কি হলো রোজা আপু?

শিলা তোমাদের এই পুকুরে সত্যি কিছু একটা আছে আমি আর এখানে নামবো না, আমার গাল।
কি হয়েছে আপু তোমার গালে আর তুমি এভাবে গালে হাত দিয়ে রাখছো কেনো আর এই পুকুরে তেমন কিছুই নেই তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেনো??
ধূর আমি আর গোসলই করবো না, আর এমনিতেই অনেক ঠান্ডা লাগছে আমি গেলাম, তোমার গোসল করতে ইচ্ছে হলে তুমি ওই ভুতুরে পুকুরে গোসল করো আমি বাবা আর করবো না।

আচ্ছা তাহলে চলো আমিও যাবো তোমার সাথে, আমারও গোসল হয়ে গেছে,,। রোজা গালে হাত রেখেই ভাবতে ভাবতে শিলার সাথে চলে গেলো, ওদিকে অনিক হাসতে হাসতে আকাশকে বলল,, সালাবাবু তুমি কিন্তু ভীষণ দুষ্ট হয়েছো এভাবে আমার শালিটাকে ভয় না দেখালেও পারতে।
আমার তো বেশ মজাই লাগল তবে কিসটা গালে না দিয়ে ঠোঁটে দেওয়া ভালো ছিলো।
এই একদম না তাহলে কিন্তু তুমি সহ আমাকেও গণ পিটুনি খেতে হতো।
তাতে কি সালার জন্য একটু না হয় মার খেলেই।

কি হলো বাইরে যান আমি চেঞ্জ করবো।
কেনো বাইরে যাবো কেনো তুমি আমার সামনেই চেঞ্জ করো আর আমি তো তোমার বর দেখলে কিছু হবে না চাপ নিও না চিল,,ফোন টিপতে টিপতে বলল আর্দ্র।

চাপ দিয়ে বলছেন চাপ নিও না আপনি বার হবেন নাকি আমি আপনাকে টেনে রুম থেকে বার করে দেবো?? দেখুন আমার কিন্তু অনেক শীত লাগছে এভাবে ভিজা কাপড়ে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো।
তাই নাকি তুৃমি আমায় টেনে বার করে দেবে?? ওকে চেষ্টা করতে পারো, আর তখন আমার লুঙ্গি ধরে টান দিছিলে আমার মনে আছে এখন তার শোধ নেবো আমি এখান থেকে এক চুল ও নড়বো না পারলে আমার সামনেই করে নয়ত এভাবেই ভিজা কাপড়ে দাঁড়িয়ে থাকো।

আরে,, ইয়ানা কিছু বলতে গিয়েও বলল না কেননা ও জানে আর্দ্র যা তেড়া এখান থেকে একটুও নড়বে না কেনো যে তখন লুঙ্গি ধরে টানতে গেলাম কে জানে একেই হয়ত বলে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা, এখন কি করবো?? বেশিক্ষণ তো এভাবে থাকাও যাবে না ভীষণ শীত লাগছে,, কিছুক্ষণ ভেবে ইয়ানা ঠিক করল ও এখানেই চেঞ্জ করবে কেননা এখন কোনো রুম খালি নেই সবাই গোসল করে এসে চেঞ্জ করছে আবার এই ভিজা কাপড়ে রোজার রুমেও যাওয়া যাবে না ওখানে হয়ত শিলা আর রোজা নানুর কাছে থেকে গল্প শুনছে অগত্যা এখানেই ওনার সামনে চেঞ্জ করতে হবে। ইয়ানা কিছু একটা ভেবে হুট করে আর্দ্রর সামনে চলে আসলো তারপর নিজের একটা উড়না দিয়ে আর্দ্রর চোখটা বেঁধে দিলো কাজটা এতো তারা তারি করেছে যে আর্দ্র কিছু বুঝে উঠার আগেই চোখ বাধা শেষ। আরে এটা কি করছো ছাড়ো চোখ বাঁধছো কেনো??

একদম চুপ করে বসে থাকেন, আপনি বলেছেন যে আপনি এ রুমে থাকবেন কিন্তু কীভাবে থাকবেন সেটা নিতান্তই আমার ব্যাপার ওকে মিস্টার আর্দ্র চৌধুরী।
এই এই এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না চিটিং করছো তুমি,,

কিসের চিটিং হ্যাঁ চুপচাপ লক্ষী ছেলের মতো বসে থাকুন,, ইয়ানা আর্দ্রর চোখ বেঁধে দিয়ে তারপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে আসলো, আর এদিকে আর্দ্র লক্ষী ছেলের মতো চুপ করে বসে মিটমিট করে হাসতেছে কেননা ওর মাথার মধ্যে কি চলছে সেটা ওই ভালো জানে। ইয়ানা গ্রামে এসে শাড়ি কম পড়ছে অবশ্য বাসায় ও শাড়ী কম জামায় বেশি পড়ত,, ও আর্দ্র দিকে পিট দিয়ে পিছন হয়ে দাঁড়িয়ে কেবলি নিজের জামার চেনটা খুলেছে তারপর আস্তে আস্তে গা থেকে জামাটা খুলতে লাগল কিন্তু ওর কোনো ধারণায় নেই ওদিকে আর্দ্র চুপিচুপি চোখের বাঁধন হালকা একটু সরিয়ে হা করে ইয়ানার চেঞ্জ করা দেখছে,, ইয়ানার চেঞ্জ করা শেষ হলে পিছন ঘুরে দেখলো আর্দ্র আগের মতোই চোখে বাঁধন নিয়ে চুপ করে বসে আছে, ও গিয়ে আর্দ্রর চোখ থেকে উড়নাটা খুলে নিজের গায়ে জরিয়ে বলল,, নিন হয়ে গেছে আপনি এখানে বসুন আমি এগুলো ধুয়ে শুকাতে দিয়ে আসছি, এই বলে ইয়ানা চলে গেলো,, আর্দ্র বাধ্য ছেলের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে বসে থাকল তারপর ইয়ানার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ঠোঁট কাঁমড়ে হাসি দিয়ে বলল,, মিসেস বকবক তুমি বুঝতেও পারলে না তোমার অগচরেই তোমার সব কিছু দেখে নিয়েছি।

গ্রামে সবাই আনন্দ করে চারদিন কাটিয়ে আবার নিজের গন্তব্যে চলে এসেছে সবাই৷ ইয়ানদের গ্রাম থেকে আসার আজ ১ সপ্তাহ হলো আর্দ্র তো গ্রাম থেকে এসেই ভীষণ ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। অফিসে অনেক কাজের চাপ সেই সকালে যাই আর মাঝ রাতে ইয়ানা ঘুমানোর পড় বাড়ি ফিরে,, ইয়ানার সাথে কমই দেখা হয়। গ্রাম থেকে এসে ইয়ানা একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই আর অফিসে যায় নাহ এই জন্য আরো দেখা হয় নাহ আর্দ্রর সাথে তবে আজকে ইয়ানা একটু সুস্থ আর আজকেই ওদের বিয়ের ছয় মাস হলো তাই আর্দ্র ভাবলো আজকে ইয়ানাকে একটা সারপ্রাইজ দেবে কেননা এতোদিন কাজের চাপে মেয়েটার সাথে সময় কাটানো তো দূর ভালো করে কথা বলাও হয়নি তাই আজকে আর্দ্র ভেবেছে যে অফিস থেকে ফিরে ইয়ানাকে নিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে যাবে আর প্রথম বারের মতো ওকে প্রপোজ করবে তাই কল দিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে সব কিছুর ব্যাবস্হা করতে বলল।

ইয়ানা আজকে একটু ভার্সিটিতে গেছে অনেক দিন যাওয়া হয় নাহ তাই আজকে গিয়েছে রোজাকে সাথে নিয়ে গিয়েছে। ওরা ক্লাস করছিলো তখনি আর্দ্র ইয়ানাকে কল দিলো কিন্তু ও ক্লাসে থাকায় ফোনটা ধরতে পারলো না, পরে ক্লাস শেষে বাইরে এসে দেখল আর্দ্রর কল ইয়ানা রোজাকে বলে একটু সাইডে গিয়ে আর্দ্র কে কল দিলো কিন্তু আর্দ্র কল কেটে দিয়ে আবার ব্যাগ করল।
ক্লাসে ছিলে বুঝি এই জন্য ফোন ধরতে পারোনি??

আর্দ্রর কন্ঠ শুনে ইয়ানার জমে থাকা অভিমান ইঞ্চি ইঞ্চি করে বাড়তে লাগল, এতোদিন ইগনোর করে এখন আসছে দরদ দেখাতে, আচ্ছা মানলাম মানুষের কাজ থাকতেই পারে তাই বলে এমন করবে কাজ পেয়ে নিজের আপন বউকেই ভুলে যাবে,, আজকে যে আমাদের বিয়ের ছয়মাস হলো সেটাও বধেও ভুলে গেছে বলবো না কথা দেখি ওনি কি করে।
কি হলো ফোন রিসিভ করে কথা না বলে চুপ করে আছো কেনো, কেউ কি মুখে টেপ লাগিয়ে দিয়েছে নাকি মিসেস বকবক হমম??
কেনো ফোন দিয়েছেন ওহ আচ্ছা ভুল করে দিয়েছেন নাকি? হুম বুঝেছি মনে হয় অন্য কাউকে দিতে গিয়ে আমাকে দিয়ে ফেলেছেন তাই না আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি।

বাবা এতো অভিমান?? তা বরকে বুঝি অনেক ভালোবাসো সেই জন্য বরের একটু ব্যাস্ততা মেনে নিতে পারছো নাহ।
মোটেও না কোনো ফোন দিয়েছেন বলুন।
শোনো আজকে সকাল সকাল বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে থাকবে ওকে তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো।
কোথায় যাবেন??

আমার বিয়ের অনুষ্ঠানে বুঝেছো,, সুন্দর করে সেজে থাকবে আমি অফিস থেকে ফিরেই নিয়ে যাবো।
একদম বাজে কথা বলবেন না ওকে,, আর আপনি তো অনেক ব্যাস্ত তাহলে আমাকে নিয়ে কোথায় কীভাবে যাবেন।
সেটা তোমার না ভাবলেও চলবে ওকে,, এতো বেশি কথা না বলে যেটা করতে বললাম সেটা করবে,, এখন রাখছি কাজ আছে আর হ্যাঁ সাবধানে বাসায় যাবা আর বাসায় পৌঁছে আমার ফোনে একটা মেসেজ দিয়ে দিবে নয়ত আমি টেনশনে থাকবো ওকে রাখছি৷
এই শোনেন যাহ কেটে দিলো এই লোকটা এমন কেনো নিজের বলা শেষ হতেই ফোন কেটে দিলো,, চটাং করে ফোন দিয়ে ফটাং করে কেটে দিলো একটু ও ধর্য নেই লোকটার, মাঝে মাঝে মন চাই ওনাকে,,

—কিরে এভাবে একা একা বকবক করছিস কেনো?? আর কাকে কি বলছিস? কে ফোন দিছিলো?
— আরে মিস্টার আর্দ্র ফোন দিয়েছিলো বললো সন্ধ্যায় যেনো রেডি হয়ে থাকি আমাকে নিয়ে কোথায় যেনো যাবে।
— কোথায় যাবে??
— কোথায় যাবে জানি না, আমি অবশ্য জিগাস করেছিলাম যে কোথায় যাবে তখন কি বললো জানিস বলল যে ওনার বিয়ের অনুষ্ঠানে, কি খারাপ লোক ভাব একবার।
— ঠিকি তো বলেছে আচ্ছা আর্দ্র ভাইয়া যদি সত্যি আরেকটা বিয়ে করত তাহলে অনেক ভালো হতো বল আমরা দুজন বান্ধবী থেকে তিন জন হয়ে যেতাম।

—কি বললি কুত্তা তুই আমার বান্ধবী হয়ে আমার ঘর ভাঙ্গতে চাইছিস তোকে ধরে তো উত্তম মাধ্যম দেওয়া উচিত তোকে তো,,,ইয়ানার কিছু একটা মনে পড়তেই ও একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল, এই জানিস আকাশ ভাইয়া না মনে হয় কারো প্রেমে পড়েছে আমাকে বলছিলো।
— কিহ?? কি কি বলছিলো তোকে বল বল আর ওনি কার প্রেমে পড়েছিলে তোকে কি কিছু বলেছে??ছবি দেখিয়েছে??
— আরে থাম থাম এতোগুলো প্রশ্ন একবারে করলে উত্তর দেবো কেমনে, আর আকাশ ভাইয়া প্রেমে পড়লে তোর এতো কি তুই এতো শুনতে চাইছিস কেনো??
— ন,,,না কিছু নাহ তুই বরং আয় আমি গেলাম আমার একটা কাজ আছে এই বলে রোজা চলে গেলো।
— এই কোথায় যাস দাঁড়া আমিও যাবো যাহ চলে গেলো, তবে দিয়েছি প্যাঁচ লাগিয়ে কত্ত বড় সাহস বলে কিনা আমার বরের আবার বিয়ে দেবে এখন বোঝ ঠেলা আমি ঠিক জানি তুই এখন আকাশ ভাইয়া কে যেয়ে ধুবি এখন দ্যাখ মজা।

—আরে মিস্টার আর্দ্র আমায় আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন এভাবে চোখ বেঁধে আমি পড়ে যাবো তো চোখটা খুলে দিন।
—কেনো আমার উপর বুঝি বিশ্বাস নেই তোমার ??
__ থাকবে না কেনো আপনার উপর আমার অনেক বেশি বিশ্বাস আছে তবে আমি কিন্তু আপনার উপর অনেক বেশি রেগে আছি।
__ তাই বুঝি ওকে,, আর্দ্র ইয়ানাকে ধরে নিয়ে গিয়ে একটা টেবিলের সামনে দাঁড় করালো তারপর ইয়ানার পিছনে দাঁড়িয়ে ওর চোখের বাঁধন খুলে দিতেই ইয়ানা আর্দ্র কে রাগ করা শুরু করলো তারপর যখন সামনে তাকালো তখন তো মুখটা হা হয়ে গেছে, এত্তো কিছু ইয়ানা খুশি হয়ে দুহাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল তারপর কিছু বলার জন্য পিছন তাকিয়ে দেখল আর্দ্র নেই,। ওমা ওনি আবার কোথায় গেলো,,ইয়ানার ভাবনার মাঝেই দেখল আর্দ্র মাটিতে হাঁটু গেরে বসে আছে তারপর নিজের পিছন থেকে একটা বড় সড় টেডি বার করে সামনে সামনে এনে ধরে বলল,, হেই মিসেস বকবক তুমি কি আমার বাচ্চার মা হবে,, প্লিজ হ্যাঁ বলে দাও যদি না বলো না তাহলে কিন্তু বিনা হিসাবে ধরে বাচ্চার মা বানিয়ে দেবো।

আমার গল্পে তুমি পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯

আরে এটা কি আপনি আমায় প্রপোজ করছেন নাকি হুমকি দিচ্ছেন কোনটা?? আর এভাবে কি কেউ কাওকে প্রপোজ করে? মানুষ কেউ কাউকে প্রপোজ করতে গেলে বলে যে উইল ইউ ম্যারি মি?? বা আরো অন্য কিছু বলে আর আপনি কি বললেন সোজা আপনার বাচ্চার মা হওয়ার অফার দিলেন তাও যদি না বলি তাহলে নাকি বিনা হিসাবে ধরে বাচ্চার মা বানিয়ে দেবেন এটা কেমন কথা মগের মুল্লুক নাকি??

শোনো কে কি করল তাতে আমার কিছু যায় আসে না, সবাই যা করছে সেটাই যদি আমিও করি তাহলে আর হয় নাকি, আমি হলাম সবার থেকে আলাদা এই জন্য আমার প্রপোজ করার স্টাইল ও আলাদা, আর আমি তোমাকে বিয়ের অফার দেবো কেনো তুমি আমার অলরেডী বিয়ে করা বউ আর এই ছয় মাসে অনেক বার বাসর ও করছি তাই আর বিয়ের অফার করলাম না সরাসরি বাচ্চার মা হওয়ার অফার করলাম এখন তারাতারি একসেপ্ট করো পাতো বেথ্যা হয়ে গেলো।

যদি প্রপোজ একসেপ্ট না করি তাহলে কি করবেন,, ইয়ানা বুকে দুহাত গুজে ভাব নিয়ে মুখ টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে বলল।
কিহ??
জি আমি আপনার প্রপোজাল একসেপ্ট করলাম না ওকে, ক্যান্সেল,, তা বাপি বাড়ি যাও,, সখ কত আমাকে ওনার বাচ্চার মা হওয়ার অফার দেয়।

আমার গল্পে তুমি শেষ পর্ব