আমার গল্পে তুমি পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬

আমার গল্পে তুমি পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬
সুমাইয়া সুলতানা সুমী

আর্দ্র দরজা খুলে দিতেই সবাই ভিতরে ঢুকলো, অনিক অন্তরা কে কোলে নিয়ে সাবধানে সোফায় বসায়ে দিলো, আর বেবি অন্তরার মায়ের কোলে পরশ আকাশের হাত ছেড়ে দিয়ে লাফাতে লাফাতে গিয়ে সোফায় বসে পড়লো,, এতেমধ্যে সবাই দরজা দিয়ে ভিতরে চলে গেছে তখনি রোজা আর আকাশ একসাথে ঢুকতে গেলে বেঁধে গেলো কেননা দরজা দিয়ে তো আর একসাথে দুজনে ভিতরে যাওয়া যাবে না তার উপর আবার দুজনেরই হাতে ব্যাগ,, আরে কি করছেন টা কি সরুন আমি আগে ভিতরে যাবো।
আপনি কি খান বলেন তো এতো মোটা যে এতোবড় একটা দরজা দিয়ে ঢুকতেই পারছেন না।

রোজা রেগে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,, কি আমি মোটা?? আমি মোটেও মোটা নই একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন ছোট হাতি একটা,, এটা বলে রোজা আকাশকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে চলে গেলো।
মেয়েটা আমায় কি বলে গেলো আমি ছোট হাতি?? সত্যি নাকি?? নাহ কাল থেকেই জিমে যেতে হবে,, এমন আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে ভিতরে গেলো আকাশ।
আর্দ্র ইয়ানা কোথায় ওকে বাড়িতে এনেছো তো?? আর ও ঠিক আছে তো? মেয়েটা সত্যি অনেক ভালো আজকের ওর জন্যই আমি আর আমার বেবি ভালো আছি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হ্যাঁ আর্দ্র ইয়ানা কই? এতোক্ষণ হয়ে গেলো আমরা এসেছি ওকে তো একবার ও দেখলাম না কোথায় ও??
কোথায় আবার থাকবে মহারানি তো আরাম করে বিছানয়া শুয়ে আছে আর এদিকে আমার জীবন যায় যায়,,, আরে মা, ভাবি তোমরা একটু শান্ত হয়ে বসো তো ও ঠিক আছে শুধু ওই পায়ে একটু কেটে গেছে তাই হাঁটতে সম্যসা হচ্ছে এই জন্যই ওকে রুমে শুইয়ে দিয়ে আসছি, তোমরা বসো আমি ওকে নিয়ে আসছি।

ধূর বসে থাকতে থাকতে কমর ধরে গেলো ওনি গেলো তো গেলো আসার নামে কোনো খোঁজই নেই, বিছানা থেকে নামলে আবার বলবে,, তোমাকে বলেছি না বেড থেকে একদম নামবে না তারপরেও নামলে কেনো ,, ইডিয়ট মেয়ে একটা,, এগুলা ভাবতে ভাবতেই আর্দ্র রুমে আসলো,, কি ব্যাপার এখনো মুখ গোমরা করে বসে আছো কেনো??
তো হাসবো নাকি, আপনি আমার ড্রেস চেঞ্জ করলেন কেনো?? আমার পা কেটেছে হাত নয় ওকে, আমি নিজের টা নিজেই করতে পারি।

এই শোনো আমার ইচ্ছে তোমার ড্রেস চেঞ্জ করবো নয়ত আবার তোমাকে ড্রেস ছাড়া আমার সামনে দাঁড় করবিয়ে রাখবো কেননা আমি তোমার বর আর আমার হক আছে বুঝলে। এখন চলো তো নিচে সবাই আসছে তোমাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে গেছে যেনো নতুন বউ।
ইয়ানা আর্দ্রের কথা শুনে পুরাই হ্যাং হয়ে গেছে ওনি এসব কি বলল ছিঃ লজ্জা শরমের মাথা খেয়েছে নাকি,,, আর্দ্র ইয়ানা কে ধরে বেড থেকে নামিয়ে দাঁড় করালো, শোনো আমি এখন তোমাকে কোলে নিতে পারছি না কেননা নিচে সবাই আছে তুমি বরং আমার হাত ধরো আমি তোমায় নিয়ে যাচ্ছি পারবে তো হাঁটতে??

আমি যেনো আপনার কোলে উঠার জন্য একেবারে নাচানাচি করছি, আপনি আমায় না ধরলেও আমি যেতে পারবো ওকে?
হুম সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। তারপর আর্দ্র ইয়ানাকে ধরে আস্তে আস্তে নিচে নিয়ে গেলো। ইয়ানাকে আসতে দেখে অন্তরা আস্তে করে দাঁড়িয়ে ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরল,, আমি তোমার রিণ কখনোই শোধ করতে পারবো না বোন সত্যি আমি তোমার কাছে আজীবন রিণী থাকবো আচ্ছা তোমার শরীল কেমন এখন, আর্দ্র ডাক্তার দেখিয়েছে তো???, এভাবে সবাই মিলে ইয়ানাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।

আরে তোমরা থামো থামো আমি আল্লাহর রহমতে একদম ভালো আর সুস্থ আছি, আর আপু তুমি এই শরীল নিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো পেটে চাপ পরবে তো, তুমি বসো তো আমি বরং আমাদের পিচ্ছি কে দেখি,, ওমা এতো দেখি ঘুমিয়ে আছে।
হ্যাঁ কিউটিপাই জানো তো বুনু না সব সময়ই শুধু ঘুমায় আমার সাথে একটুও খেলা করে না, ভাবছি বুনুর সাথে আড়ি করে দেবো।
কি বলোতো চাম্প বুনু তো এখন অনেক ছোটো একেবারে ছোট্ট বাবু তাই জন্য বুনু শুধু ঘুমায় আর কয়মাস যেতে দাও তখন দেখবে বুনু আর ঘুমাবে না শুধু তোমার সাথে খেলবে আর তোমার চুল টানবে।

হুম আমিও বুনুকে চকলেট কিনে দেবো,, পরশের কথা শুনে সবাই হেসে উঠল,, এভাবে দেখতে দেখতে আরো কয়েকটা দিন কেটে গেলো, এখন ইয়ানার পা মুটামুটি ভালো ব্যান্ডেটটা খুলে দিয়েছে শেলায় ও কেটে দিয়েছে তবুও এখনো বেথ্যা আছেই,, আর্দ্র এখন অফিসে তবে অনিক আজকে অফিসে যায়নি, গিছিলো একটু সময় থেকে আবার চলে এসেছে,, অনিক আর অন্তরার এক কথায় দুই কথায় ঝগড়া লেগে গেছে।

আরে যাও যাও তোমাদের আর কি কাজ সারাদিন বাড়িতে বসে বেবি দেখবা রান্না করবা আর শুধু সাজুগুজু করবা এই তো, এটা আবার কোনো কাজ হলো নাকি এটা তো আমার বা হাতের কাজ,, আর আমাদের কত কাজ জানো?? অফিসে বসে হাজারটা কাজ করা লাগে অনেক বড় বড় মানুষদের সাথে মিটিং করা কতটা কষ্টের জানো??
বাদ দাও তো শোনো আমিও যদি তোমার মতো কাজ শিখি তাহলে আমিও তোমার সব কাজ করতে পারবো তবে তুমি কখনোই আমার কাজ করতে পারবে না বুঝলে,, শোনো একটা মেয়ে চাইলে একা হাতে দুইটা বেবিকে মানুষ করতে পারে তবে একটা ছেলে তা পারে না,, আরে তুমি তো সামান্য রান্নাটাই করতে পারবে না আবার এতো বড়বড় কথা।

কিহ এতোবড় অপমান অনিক ভাইয়া আপনি এটা কখনোই মেনে নেবেন না আপনিও দেখিয়ে দেন ছেলেরা ও পারে যদি তারা চেষ্টা করে,, রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল আকাশ।
ঠিক বলেছো সালাবাবু, আজকে তোমার আপুকে দেখিয়ে দেবো যে আমরাও রান্না করতে পারি আর সেটা মেয়েদের রান্নার চেয়েও অনেক সুন্দর হবে।
তাহলে হয়ে যাক বাজি। আজকে আমরা মেয়েরা একজনও রান্না করবো না আজকে রাতের খাবারটা তোমরা মানে ছেলেরা করবে রাজি??

র,,রান্না, ওকে করবো এ আবার কি কঠিন কাজ তাইনা আকাশ??
তাতো বুঝলাম, তবে আমি তো রান্নার র ও জানি না কেমনে কি করবো?
আরে ইউটিউব আছে না ওখান থেকে দেখে একদম ফাটাফাটি একটা রান্না করে ফেলবো বুঝেছো, সালা।
কিহ???
না মানে সালাবাবু,,, আকাশ আর অনিক এর কথা শুনে অন্তরা মিটমিট করে হাসছে কেননা অন্তরা ভালোই বুঝতে পারছে আজকে ওদের তো বারোটা বাজবেই আবার রান্নার ও বারোটা বাজবে।

এই আকাশ তুমি যাও না ভিতরে, শোনে তুমি যাবা আর আর্দ্র কে বাজির কথাটা বলে ফেলবা সিম্পল এতে আবার ভয় পাওয়ার কি আছে।
সেটা তো আপনিও করতে পারেন অনিক ভাইয়া আর আর্দ্র ভাই তো আপনার ছোট ভাই আপনিই বরং জান তাহলে ভালো হবে,, আপনি গিয়ে একটা বড় ভাই বড় ভাই লুক দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে রান্নার কথাটা বলবা দেখবা আর্দ্র একেবারে ভয় পেয়ে গলে যাবে।
গলবে না ছাই ও আমার ভাই ছোট বেলা থেকে ওকে হাড়ে হাড়ে চিনি ও যে কেমন সেটা আমি ভালো করেই জানি,, ফিসফিস করে বলল অনিল, আসোলে আর্দ্র একটু আগেই অফিস থেকে ফিরেছে আর ইয়ানা এখন রুমে নেই বেবির কাছে গিয়েছে তাই এই সুযোগে আকাশ আর অনিক আর্দ্র কে মানাতে এসেছে, কিন্তহ দুজনের একজনের ও ভিরতে যেতে সাহস হচ্ছে না ,,

ওরা দুজন দরজায় দাঁড়িয়ে প্ল্যান করছিলো কে আগে ভিতরে যাবে তখনি কেউ পিছন থেকে ওদের দুজনকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে পাঠিয়ে দিলো,
আর্দ্র রেগে অনিক আর আকাশ এর দিকে তাকিয়ে আছে কেননা ও জানে রান্না করা কতটা কষ্টের একদিন রান্না করেই ওর হালুয়া টাইট তাও পরে ইয়ানা না দেখা দিলে তো রান্না শেষই হতো না কিন্তু ওরা যা বলল তাতে রান্নাটা ওদের তিন জনকেই করতে হবে এটা ভাবতেই আর্দ্রর অবস্থা করুন হয়ে যাচ্ছে,,, আসলে তোরা দুজনই একটা এক নাম্বারের গাধা তা না হলে কেউ সেধে বিপদ ডেকে আনে?? দেখে তো মনে হচ্ছে না তোরা দুজনে রান্নার র ও জানিস তা আগ বাড়িয়ে এতো পাট নেওয়ার কি দরকার ছিলো?? দাঁতে দাঁত চেপে বলল আর্দ্র।

আমার কোনো দোষ নেই আর্দ্র ভাই সব এই যে এনার, আঙুল দিয়ে দেখিয়ে,, অনিক ভাইয়া আগ বাড়িয়ে আপুর সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে এই বাজিটা নিয়েছে আমি কিছু জানি না।
এই তুই তো দেখছি ঘরের শ্রুএ বিভীষণ তুইও তো আমার সাথে তাল মিলিয়ে আমাকে উৎসাহ দিয়েছিস এখন এখানে এসে আমাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিস বদ ছেলে,, কে যে আমাদের ধাক্কাটা মারলো তাকে যদি একবার হাতের কাছে পাতাম তাহলে কি যে করতাম আমি নিজেও জানিনা,, মনে মনে বলল অনিক।

ওদিকে দরজার বাইরে অনিক আর আকাশের আর্দ্রর সামনে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা দেখে অন্তরা মিটিমিটি করে হাসছে, আর ওদের দুজনকে ধাক্কাটা অন্তরায় মারছে,, ইয়ানাকে বেবির কাছে রেখে অন্তরা নিচে যাচ্ছিলো পানি আনতে তখনি দেখলো অনিক আর আকাশ আর্দ্রর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছে, ওদের ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই অন্তরা দুজনকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকায় দিছে।

বাজিটা যখন তোরা দুজনে নিছিস তখন রান্নাটা তোরাই কর আমি এর মধ্যে নাই আমি এসব রান্না টান্না করতে পারবো না, আমি তো এখন একটু শোবো আহ,, আর্দ্র বিছানার উপর সটান হয়ে শুয়ে পরল।
প্লিজ ভাই আমার এমন কুলক্ষণা কথা বলিস না তুই যদি আমাদের সাহায্য না করিস তাহলে তো আমরা হেরে যাবো আর তুই কি চাস আমি তোর বড় ভাই হয়ে তোর ভাবির কাছে হেরে যায়??
হুম চাই।
কিহ???

তো কি বলবো ,, তুই বাজিটা নেওয়ার সময় কি আমায় জিগাস করে নিয়েছিলি?? এখন কেনো আমার কাছে এসেছিস, আমি পারবো না মানে পারবো না ওকে।
প্লিজ প্লিজ এমনটা বলিস না, দেখ রান্না করা তো খুব সহজ ফোনটা সামনে রেখে ইউটিউব এ রান্নার ভিডিও অন করে দিয়ে হুবুহু কপি করে দেবো ব্যাস রান্না শেষ চাপ নিস না হেব্বি সহজ কাজ, মে হু না?

তাহলে তো হয়েই গেলো রান্না করা যখন এতোই সহজ তাহলে তুইই করে ফেল আমাকে কেনো টানছিস দেখ আমি অনেক ক্লান্ত আমি এখন একটু রেস্ট নেবো যাহ যাহ বিরক্ত করিস নাহ,,, কথাটা বলে আর্দ্র আবারও বিছানায় শুয়ে পড়ল।
এই না না শুলে হবে না তো আর্দ্র ভাই,, এই অনিক ভাইয়া ধরুন না একটু,,, তারপর আকাশ আর অনিক মিলে আর্দ্রকে ধরে বসিয়ে দিলো তারপর দুজন আর্দ্রর দুহাত ধরে দাঁড় করায়ে টানতে টানতে রান্না ঘর এর দিকে নিয়ে গেলো।

অন্তরা হাসতে হাসতে পানি নিয়ে রুমে গেলো,, এতো পরিমাণ হাসছে যে কথাই বলতে পারছে না, অন্তরার এমন হাসি দেখে অন্তরা বলল,, কি হয়েছে আপু এতো হাসছো কেনো?? কি হয়েছে??
আরে তোমায় কি বলবো যাও দেখে আসো নিজের বরের কি অবস্থা হয়েছে,, তুমি দেখলে তোমারও হাসতে হাসতে দম বেরিয়ে যাবে।
কেনো কি হয়েছে??

শোনো তাহলে ,, তারপর অন্তরা ইয়ানাকে প্রথম থেকে শুরু করে সবটা বলল অন্তরার থেকে সবটা শুনে ইয়ানা ও হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ল, কি বলছো আপু এতো কিছু হয়ে গেলো আর আমি জানতেই পারলাম না, তবে যায় বলো না কেনো যা হয়েছে ভালোই হয়েছে, কথাটা বলে ইয়ানা আবারও হাসতে লাগল,, দুজন হেসে দুজনার গায়ের উপর গড়িয়ে পড়ছে, তখন রোজা রুমে আসলো, ইয়ানাদের হাসা দেখে রোজা জিগাস করল যে কি হয়েছে তখন ওরা রোজাকেও সবটা বলল সবটা শুনে রোজাও হাসতে হাসতে শেষ ।

দেখেছিস কেমন আমাদের কে নিয়ে হাসাহাসি করছে এরপরও তুই বলবি যে তুই রান্না করবি না,?? এভাবে ওরা আমাদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে আর আমরা মুখ বুজে সহ্য করবো?? কোনো প্রতিবাদ করবো না?? এটা তো তাহলে পুরুষ নির্যাতন হয়ে যাবে।
নাহ এটা দেখার পরতো আর চুপ থাকা যায়ই না এর প্রতিশোধ নিতেই হবে তাই না আর্দ্র ভাই??
এতো বেশি কথা না বলে ভাব কীভাবে রান্নাটা করবি ওকে রান্নার র ও জানেনা তাদের আবার ইজ্জত ,, শোন এটা কোনো মিটিং বা ডিল করা নয় এটা রান্না করা আর রান্না করতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হয় নয়ত ওই রান্না আর মুখে নেওয়া যায় না, আমি নিজে তার প্রমাণ,, শেষের কথাটা বিরবির করে বলল আর্দ্র।

রান্না ঘরে ভিষণ ভাবে রান্নার তোরজোর চলছে,, তিন জন মিলে ভিষণ ব্যাস্ত কীভাবে রান্না করবে, মেয়েরা বলে দিয়েছে আজকে মাছ রান্না করতে তাই আকাশ আর অনিক মাছ পরিষ্কার করতে বসে গেছে, তবে ওদের সুবিধা হয়েছে কেননা মাছ আগে থেকেই কেটে ধুয়ে পরিস্কার করে ফ্রিজে রাখা ছিলো ওরা সেটাই পানির মধ্যে দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে ,, আর ওদিকে আর্দ্র ফোন থেকে দেখছে কীভাবে মাছ রান্নার সবজি কাটতে হয়, আর্দ্র অনেক মন দিয়ে ভিডিও দেখছে, এতো মন দিয়ে হয়ত পরিক্ষার আগেও পড়েনি,,

রোজা ইয়ানা আর অন্তরা রান্না ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে দেখছে ওরা তিন জন মিলে কি করছে। আর্দ্র অনেক কষ্টে সবগুলো সবজি কাটা শেষ করলো তাও একটা এক রকম হয়ছে একটা অনেক ছোট তো আরেকটা অনেক বড় ,, আর্দ্র সুন্দর করে সবজি গুলো ধুয়ে একটা প্লেটে রাখল কিন্তু এখন কি করবে সেটা ও জানে না তাই অনিক আর আকাশ কে বললল,, তোদের মাছ ধোয়া কি শেষ হয়েছে নাকি আরো সময় লাগবে বলি বাড়ির সবাই কি রাতের খাবার খাবে নাকি প্রভাতে সেহরী খাবে কোনটা??
এই তো হয়ে গেছে,, এই শোননা আর্দ্র,, মাছ তো পরিষ্কার হলো কিন্তু হাত দিয়ে কেমন যেন গন্ধ লাগছে।
হ্যাঁ অনিক ভাইয়া ঠিকিই বলেছো আমার হাত দিয়েও কেমন যেনো গন্ধ বার হচ্ছে এখন কি করবো??

এই তোরা দুজনেই আমার থেকে দূরে থাক তোদের দুজনের হাত থেকেই কেমন মাছের আঁশটে গন্ধ বার হচ্ছে জলদি বেসনে গিয়ে হাত পরিষ্কার কর।

আর্দ্র বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলো ইয়ানা দাঁড়িয়ে আছে আর্দ্র ইয়ানার দিকে তাকিয়ে করুন মুখ করে চোখের ইশারায় জিগাস করলো প্রথমে কি দিয়ে শুরু করবে, ইয়ানা আর্দ্রর ইশারা বুঝতে পেরে মনে মনে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে আর্দ্র কে হাত দিয়ে ইশারা করলো আগে তেল দিতে আর্দ্র খুশি হয়ে ইয়ানার কথামতো তেল দিলো তারপর আবারও চোখের ইশারায় জিগাস করলো এরপর কি দিবে ইয়ানা আবারও হাত দিয়ে ইশারা করে একটা জিনিস দিতে বলল আর্দ্র ওটা তেলের উপর ছেড়ে দিতেই ওদের তিন জনের অবস্থা দেখার মতো হলো কেননা আর্দ্র ইয়ানার কথামতো তেলের উপর শুকনো মরিচ ছেড়ে দিয়েছে ,, আর্দ্র কাশতে কাশতে ইয়ানার দিকে তাকাতেই দেখল ইয়ানারা সবাই খিলখিল করে হাসছে আর্দ্র বুঝতে পারল যে ইয়ানারা সবাই ওদের সাথে মজা করেছে।
এটা কি দিলে আর্দ্র ভাই কাশতে কাশতে জীবন যায় অবস্থা তেল থেকে উঠাও।

আর্দ্র ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে ইয়ানা ওকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে এখন রাগ করলেও কিছু করার নাই তারপর ও গ্যাস অফ করে দিলো, ওদিকে অনিক আর আকাশ এর তো হাচ্ছি আর কাশি দিতে দিতে যক্ষা রোগীর মতো অবস্থা হয়েছে, আর্দ্রর অবস্থাও দেখার মতো ওদের ওমন নাজেহাল অবস্থা দেখে ওদিকে অন্তরা আর রোজা তো হাসতে হাসতেই শেষ,, এমনটা করা ঠিক হয়নি মনে হয় আমরা একটু বেশিই করে ফেলেছি দেখেছো সবার কেমন অবস্থা হয়েছে।

ঠিক হয়েছে কোনো কিছু না পেরে আগে আগে এমন ভাব দেখালে এমনি হয় তুমি চুপ থাকো তো ইয়ানা, ওখানে শুধু তোমার বর না আমার বর ও আছে বুঝলে,, কি ভালোবাসা আহা বরের এমন করুন অবস্থা বউ এর দেখছি সয্যই হচ্ছে না কি বলো রোজা।
হুম সেটাই তো দেখলি আপু আমাদের ইয়ানা দেখছি বিয়ের পর একদম বর পাগল হয়ে গেছে, আর্দ্র ভাই এর এমন শোচনীয় অবস্থা দেখে ইয়ানার ভারি কষ্ট হচ্ছে, ইস রে, তুই বরং এক কাজ কর তুইও আর্দ্র ভাই এর সাথে যোগ দে তাহলে যদি আর্দ্র ভাইয়ার কষ্ট টা একটু কমে আহারে বেচারা।

চুপ করবে তোমরা আমি মোটেও সেসব কিছু মিন করে কথা বলিনি আমি তো,,,
হুমম আমরা জানি জানি প্লেন কতো উপর দিয়ে যায় বুঝেছো,, তারপর ওরা ইয়ানাকে নিয়ে হাসি মজা করতে করতে আর্দ্রদের রান্না শেষ,, ওরা কোনো মতে ইউটিউব এ দেখে দেখে রান্না শেষ করেছে তারপর একে একে তিন জন টেবিলে খাবার দিলো,, অন্তরার মা আর বাবা চলে গেছে আর আর্দ্রর মা বাবার জন্য আগেই রান্না করে রাখা ছিলো কেননা ইয়ানারা জানত আর্দ্রদের রান্না আর যাই হোক খাওয়ার উপযুক্ত হবে না,, ওনারা দুজনেই খায়ে রুমে চলে গেছে,, কিন্তু আশা আর পরশ বেবির কাছে আছে কেননা অন্তরা নিচে আছে তাই,, রোজা ইয়ানা আর অন্তরা খাবার টেবিলে বসল, ইয়ানার পা এখন একটু ভালো নিজে নিজেই হাঁটতে পারে,,

ওরা টেবিলে বসার পরই তিন জন তিনজনকে খাবার পরিবেশন করল, আর্দ্র ইয়ানার প্লেটে ভাত আর মাছ তুলে দিয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকল,, ইয়ানা একটু মাছের টুকরো ছিঁড়ে সাথে তরকারি নিয়ে ভাত মেখে কেবলি মুখে দিলো তখনি বুঝলো, মাছ আসলে ভালো করে ভাজি করা হয়নি মাঝে হালকা কাঁচা আছে, আর সবজির কথা তো বাদ ওটা আরো বেশি কাচাঁ ইয়ানা কেবলি আর্দ্র কে বলবে যে রান্না ভালো হয়নি ওরা হেরে গেছে,, আর্দ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল আর্দ্রর মুখটা লাল হয়ে গেছে আগুনের তাপে আর ও ভ্রু কুঁচকে অধীর আগ্রহে ইয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ইয়ানা কি বলে, ,ইয়ানা আর্দ্রর এভাবে তাকানো দেখে কিছু বললো না মনে মনে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দিয়ে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বুঝালো যে রান্নাটা অনেক ভালো হয়েছে,,

ইয়ানার ইশারা বুঝতে পেরে আর্দ্রর কুঁচকানো ভ্রু ঠিক করে মুখে একটা হাসি এনে শার্টের কলার ধরে একটু টেনে এমন ভাব দেখালো যেনো এসব রান্না ওর বাঁ হাতে খেলা,, আর্দ্রের এহেন কাজে ইয়ানা মাথা নিচু করে আবার ও হাসলো ,, ওদিকে অন্তরা আর রোজা এক লোকমা ভাত মুখে দিয়েই ওরা বুঝলো যে ওরা কাঁচা কোনো সবজি খাচ্ছে অন্তরা কেবলি অনিককে কিছু বলতে যাবে তখনি ইয়ানা ওদের দুজনকে থামিয়ে দিয়ে বলল,, সত্যি ভাইয়া আমি জানতামই না আপনি আর আপনার ভাই এতো ভালো রান্না করতে পারেন অনেক সুন্দর হয়েছে তাই না আপু??

ইয়ানার কথা শুনে রোজা আর অন্তরার অবস্থা কাহিল তবুও মুখে হাসি রেখে একটা আধ কাঁচা সবজি চিবতে চিবতে বলল,, হ্যাঁ সত্যি অনেক ভালো লাগছে হিহিহি।
দেখেছো আমি আগেই বলেছিলাম যে আমার সাথে পাঙ্গা নিও না তাহলে হেরে যাবে দেখেছো কেমন হেরে গেলে, আরে এসব তো আমার বা হাতের খেল হুমম? ভাব দেখিয়ে বলল অনিক।
হুমম আপনার বা হাতের খেল বলেই তো তখন আর্দ্র ভাই কাছে ঘ্যান ঘ্যান করছিলেন যে আর্দ্র ভাই যেনো আপনাকে সাহায্য করে ,, ফিসফিস করে কথাটা বলল আকাশ।

সালাবাবু তুমি চুপ থাকো নয়ত আমার সাথে সাথে তোমার ইজ্জত যাবে বুঝলে তাই চুপ থাকাই ভালো আর যত পারো ঢপ মারো।
আচ্ছা তাহলে তো আমাদের খাওয়া শেষ এবার তোমরা খাও আমরা গেলাম,, এই বলে ইয়ানারা তিন জনই উঠে চলে গেলো আর ওরা উঠে,, আর্দ্র ভ্রু কুঁচকে ইয়ানাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল কেননা ওর কেমন জানো সন্দেহ হচ্ছে ,,, অনিক আর আকাশ লোভে লোভে খেতে বসল,, আহ কতক্ষণ খাইনি ক্ষিদেই যেনো পেটের মধ্যে ইদুর দৌড়াদৌড়ি করছে আরে আর্দ্র এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো বস সালাবাবু শুরু করো,,।

হ্যাঁ হ্যাঁ আমার ও পেটের মধ্যে যুদ্ধ চলছে আর্দ্র ভাই বসে পড়ুন নইলে ফুরায় গেলে কিন্তু পরে আফসোস করবেন,, আকাশ আর অনিক আর্দ্র কে ডাকাডাকি করে নিজেরা প্লেটে খাবার বেড়ে নিলো তারপর ভাত মেখে এক লোকমা মুখে দিতেই দুজন দুজনের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থু থু মুখের খাবার টুকু ফেলে দিলো।, কিরে ফেলে দিলি কেনো? ভালো হয়নি?? খাওয়ার জন্য এতো তোরজোর করলি এখন না খেয়ে ফেলে দিচ্ছিস কেনো??
আরে এটা তো খাওয়ারি যোগ্য হয়নি সব কিছু কেমন আধ কাঁচাই রয়ে গেছে, আর মুখ পোড়া ঝাল হয়েছে এটা খাওয়া যাবে না।
অনিকের কথা শুনে আর্দ্র অনিককে কিছু বলবে তার আগেই ওর কিছু একটা মনে পড়ে গেলো তারপর ওদের কিছু না বলেই আর্দ্র ওখান থেকে চলে গেলো।

—-এটা কি হলো??
—কি হবে??
— রান্না ভালো হয়নি ওটা খাওয়ার যোগ্যই হয়নি তাহলে তখন বললে কেনো যে ওটা ভালো হয়েছে??
— হুম আমি কেনো বলেছি,, কি বলুন তো আপনারা এতো কষ্ট করে রান্না করলেন পরে আমরা খায়ে যদি বলতাম যে ভালো হয়নি তাহলে আপনাদের মন খারাপ হতো তাই আপনাদের যাতে মন খারাপ না হয় এই জন্যই বলেছি,, তবুও তো আপনারা হেরে গেছেন এখন বাজি মোতাবেগ আমরা যা বলবো আপনাদের তাই করতে হবে।

— কি চাই তোমাদের??
— বেশি কিছু নাহ, আমি অনেকদিন হলো আমার মামা বাসায় যায়নি আপনাকে আমাকে সহ সবাইকে নিয়ে আমার মামা বাসায় বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে।, তবে এখন না সামনে শীত আসছে, যখন পুরো শীত আসবে, মানে যখন জাঁকিয়ে শীত পড়বে তখন আর ততদিনে আমার পাও সেরে যাবে।
কীহ অসম্ভব আর আমি তো শুনেছি তোমার মামা বাসা তো গ্রামে তাও আবার পুরো শীতে গ্রামে আর গ্রামে নাকি অনেক বেশি শীত পড়ে আবার ওখানে ভালো টাওয়ার ও পাই নাহ, না না আমি যেতে পারবো না।
এটা বললে তো হবে না, আমি যখন যেতে বলেছি তখন যেতে তো হবেই কেননা আপনারাই বাজি ধরেছেন এখন তো আমার চাওয়া রাখতেই হবে।

আমার গল্পে তুমি পর্ব ৩১+৩২+৩৩

আর্দ্র কিছু বলতে যাওয়ার আগেই ওখানে আকাশ রোজা অন্তরা অনিক চলে আসলো,, কিরে আর্দ্র কে বলেছিস যে আমাদের কি চাই??
কি চাই তোমাদের? কই আমাকে তো বললে না, এই ইয়ানা রোজা তোমরা কি প্ল্যান করেছো বলোনি কেনো আমায় আমাকে রেখেই প্ল্যান করেছো, বলো বলো কি চেয়েছো আর্দ্রর কাছে??
আরে আপু বলবো বলবো সব বলবো কিন্তু তোমার দেবর তো রাজিই হচ্ছে না।
—- না না এটা বললে তো হবে না, আর্দ্র ভাইয়া ইয়ানা যা চাই আমরাও তাই চাই এখন মাঝ রাস্তায় এসে থেমে গেলে তো চলবে না।
— আরে আর্দ্র ওরা কি এমন চেয়েছে যে তুই না করেছিস, আর যা টাকা পয়সা চাই দিয়ে দে আর যদি কম পড়ে তাহলে বল আমিও কিছু দিচ্ছি।

— না না অনিক ভাইয়া আমাদের টাকা চাই না আমরা শুধু চাই আমাদের সবাই কে নিয়ে ইয়ানা নানু মানে ওর মামা বাসায় বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে।
— ব্যাস এইটুকু?? আরে আর্দ্র তুই কি বলতো ওরা এটুকু একটা জিনিস চেয়েছে এটাই তুই দিতে পারছিস না, ওকে ডান আমিই তোমাদের নিয়ে যাবো খুশি।
— অনিক ভাই এতো তারাতারি ডান বলেন না, আর্দ্র ভাই মুখ দেখেছেন নিশ্চয়ই ওখানে কোনো ঘাপলা আছে নয়ত ওনি নিষেধ করতো না, তুমি তো রান্নার মতো আগে আগেই হ্যাঁ বলে দিলে পরে কোনো সম্যসা হলে কিন্তু আর্দ্র ভাই আর আপনাকে সাহায্য করবে না,,, আকাশ ফিসফিস করে অনিকের কানে কানে বলল।

— ঠিকি তো বলেছো সালাবাবু আমি তো এমন ভাবে ভেবেই দেখেনি এখন তাহলে কি হবে?
— কি আর হবে আমরা সবাই এই শীতের মৌসুমে খাঁটি খেজুরের রস আর শীতের পিঠা খেতে গ্রামে যাবো,, ইয়ে,,,,,
— উফফ হয়ে গেলো,, আর্দ্র বিরক্তি নিয়ে কথাটা বলল।

আমার গল্পে তুমি পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯