আমার গল্পে তুমি পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯

আমার গল্পে তুমি পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯
সুমাইয়া সুলতানা সুমী

আর্দ্র মুখটা পেঁচার মতো করে নিজ মনে ডাইভিং করছে আর ওর পাশে ইয়ানা বসে আছে, বসে আছে বললে ভুল হবে রীতিমতো লাফালাফি করছে তবে ও একা নয় সাথে আরো লোকজন আছে,, অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে সেই দিনটা চলেই আসলো, গ্রামে অবশ্য নম্বরের শুরুতেই শীত পড়া শুরু হয়ে যায়, আর ওরা যাচ্ছে ডিসেম্বর এর মাঝামাঝিতে মানে এখন গ্রামে একদম জাঁকিয়ে শীত পড়েছে ,, এক গাড়িতে পরিবারের গুরুজনেরা আর অপর গাড়িতে হল্লা পাটি মানে হলো আর্দ্র ইয়ানা, আকাশ, রোজা অনিক, অন্তরা পরশ অবশ্য কবির আর আশার কাছে,, গাড়ির মধ্যে ওতটাও শীত পড়ছে না তবুও আকাশ আর অনিক মাথায় মাফলার আর গায়ে মোটা জ্যাকেট পড়ে বসে আছে, আর এতো পরিমাণে লাফালাফি করছে যে শীত তো দূর গরমে মন চাচ্ছে ঘন্টা দুয়েক শাওয়ার নিতে।

আহ ভাইয়া তুইও কি পরশের মতো ছোট হয়ে গেলি নাকি এতো চেঁচাচ্ছিস কেনো আর এতো লাফালাফিরই বা কি আছে, দুই বাচ্চার বাবা হয়েও এখনো বুদ্ধি হলো না,, তোর চেয়ে তো আমার চাম্পই বেশি বুদ্ধিমান।
তো কি তোর মতো হোপ করে বসে থাকবো নাকি, তুই যেনো দেখতে জোয়ান হলেও মনটা বুড়া কিন্তু আমরা তো আর তা নয় কি বলো সালাবাবু।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

একদম ঠিক ভাইয়া, কিন্তু কেমন যেনো গরম গরম লাগছে , শুনেছি গ্রামে নাকি সেই শীত তবে এতো গরম লাগছে কেনো??
গরম তো লাগবেই গাধার মতো এতো সাত সকালেই শীতের জামা কাপড় গায়ে দিলে তো গরম লাগবেই,,
ঠিকি বলেছো রোজা আমার ভাই আর বরটা যেনো একদম পাগল হয়ে গেছে, এমন ভাব করছে যেনো আমরা লন্ডন যাচ্ছি , আর অনিক একটু চুপচাপ বসো তো দেখছো মেয়েটা ঘুমিয়েছে তবুও চেঁচাচ্ছো, কেনো একটু চুপ থাকা যাচ্ছে নাহ??
আরে আপু তু,,,,, ইয়ানা কিছু বলবে তখনি দেখলো আর্দ্র রেগে চোখ বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,, এভাবে তাকানোর কি আছে হুম আমি কি আপনাকে ভয় পাই নাকি?? আর আমি কোনো খারাপ কিছু করছি নাকি আমিতো,, আর হ্যাঁ আমি কিন্তু আমার নানি বাড়ি যাচ্ছি ওখানে একদম বরগিরী করবেন না, আর বকাও দেবেন না বলে দিলাম।

আর্দ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে একটা ডোন্ট কেয়ার লুক দিয়ে ডাইভিং এ মন দিলো,,, গাড়ি এপারে এসে পাকা রাস্তা পাড় করে এখন কাঁচা রাস্তায় ঢুকেছে,, দুপাশে কৃষকের ক্ষেত আর মাঝ খান দিয়ে মাটির রাস্তা,, এটাকে রাস্তা বললে ভুল হবে ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি আর মহিষ এর গাড়ি যেয়ে যেয়ে রাস্তাটা আর রাস্তা নেই পুরাই পাস্তা হয়ে গেছে,,, ওরে আল্লাহ,, এটা কি রাস্তা গো ইয়ানা কমর তো গেলো।
অনিক ভাইয়া আমার না এখন জেমস এর একটা গান মনে পড়ছে কি গান বলতো?? ,

৷ ,,,,,, ঝাকানাকা ঝাকানাকা দেহ দোলা না,,
,,,,,,, মন বলে মন বলে দেহ ঝাকা না,,
,,,,, মীরা বাই হেইলা দুইলা হেইলা দুইলা গরবর নাচাই,,
,,ঝাকানাকা ঝাকানাকা দেহ দোলা না,, মন বলে মন বলে মন বলে দেহ ঝাকা না।
একদম ঠিক কথা বলছো সালাবাবু এই রাস্তার সাথে এই গানই যায়,, এতো ভাঙ্গা রাস্তা আমি বাপের জন্মে দেখি নাই গায়ের সব কিছু নড়ে যাচ্ছে , মনে হচ্ছে বুকের বাল্ব ও নড়ে কিডনীর কাছে চলে গেছে।
না না অনিক ভাই আমার তো অন্য গান মনে পড়ছে,, চিকনা কমর আমার চিকনা কমর চিকনা কমরের কি জ্বালা, ও আর্দ্র ভাই আপনি আস্তে গরুরু গাড়ি চালান,, এই না না এটা তো কার গাড়ি, তাহলে এখানে গরুর গাড়ি নয় কার গাড়ি হবে।
তোমরা যে যাই বলো না কেনো আমার তো হেব্বি লাগছে আহ কতদিন পর গ্রামে আসলাম সেই রকম লাগছে,,, চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে বলল ইয়ানা।

স্টপ,,, তোমরা সবাই একটু চুপ করবে?? সেই কখন থেকে কানের কাছে বকবক করেই যাচ্ছো গাড়িতে ওঠা থেকেই শুরু হয়েছে বকবক এখনো থামার নামে কোনো খোঁজই নাই, , রেগে জোরে বলল আর্দ্র।
আর্দ্রর চিৎকারে সবার হালুয়া টাইট সবাই একদম ফুল স্টপ হয়ে গেলো,, আরে তোমরা ভয় পেয়ো না আমার ভাই ছোট বেলা থেকেই এমন করে,, খুব আদরের তো তাই, আমি দেখছি,, তা আর্দ্র ভাই আমার হঠাৎ করে গাড়ি থামালি কেনো?? কি হয়েছে আর এমন রাগ করছিস কেনো কতদিন পর সবাই বেড়াতে যাচ্ছি তাও আবার গ্রামে সবার মধ্যে অনেক এন্যার্জি বেশি বেশি হয়ে গেছে বুঝলি।
ওহ রিয়েলি?? তাহলে তো ভালো এক কাজ করো সবাই গাড়ি থেকে নামো তোমরা বরং হেঁটেই যাও কেননা তোমাদের তো অনেক এন্যার্জি হয়েছে,, আর তাছাড়া হেঁটেই যেতে হবে কেননা গাড়ি আমি এমনি এমনি বন্ধ করেনি বেচারা একাই বন্ধ হয়ে গেছে,, যে রাস্তা আর যে ধূলা গাড়ির অবস্থা খারাপ।
আ্যাঁ??? আর্দ্রর কথা শুনে সবাই একসাথে জোরে বলে উঠলো।
আ্যাঁ নয় হ্যাঁ,, ঠিক হয়েছে এখন বুঝবে মজা।

হেই তোমার গরুর গাড়িতে আমি যাবো না টিকটক টিকটক আর তো পারিনা অনিক ভাইয়া এরপর কি হবে বলেন তো?? ইয়ানা নিজের হাত উপরে তুলে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল।
আমি তো জানিনা মাই ডিয়ার শালিকা ,, তবে আমি শেষ এখন মনে হচ্ছে জ্যাকেট এর সাথে কম্বল আনার ও ঠিক ছিলো এতো শীত পরবে আমি জীবনেও ভাবিনি ,, ইয়ানা তোমার নানার বাসা আর কত দূর আর এতো শীত কেনো একেবারে হাড় কাঁপানো শীত, মনে হচ্ছে ওখানে পৌছানোর আগেই জমে বরফ হয়ে যাবো।

আসলে ওরা সবাই গরুর গাড়িতে করে যাচ্ছে কেননা তখন ওদের গাড়ি নষ্ট হওয়ার পর সবাই গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো,, ওদের গাড়ি পিছনে ছিলো তাই আগের গাড়িতে ওদের বাবা মা ছিলো ওনারা আগে আগে চলে গেছে,, ওরা দাঁড়িয়ে থাকার মাঝেই ইয়ানার এক চাচাত কাকু গরুর নিয়ে বাড়ি ফিরছিল ওনি জমি থেকে কাটা ধান যার জমি তার বাড়িতে দিয়ে ওনার নিজের বাড়ি ফিরছিলো তখনি মাঝ রাস্তায় ইয়ানাদের সাথে দেখা হয়ে গেলো আর ওরা সবাই এখন গরুর গাড়ি করেই ইয়ানার নানু বাসায় যাচ্ছে ,, এতে সবাই মজা পেলেও আর্দ্রর একটুও মজা লাগছে না উল্টে ও রেগে মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে এক হাতে জুতা ধরে অন্য হাত দিয়ে পায়ের কাছের জিন্স অনেকটা গুছিয়ে রেখে বসে আছে।

কি হলো আপনি মুখটা ওমন করে রেখেছেন কেনো?? দেখুন সবাই কত ইনজয় করছে আপনি এমন চুপ করে বসে আছেন কেনো??
তো কি করবো তোমাদের মতো লাফ ঝাপ করবো বাদরে মতো, সব গুলা ইডিয়ট কোনো কমন সেন্স নেই যত্তসব আর কি রাস্তা আর এটা কি গাড়ি?? এই জন্যই আমি আসতেই চাইনি কিন্তু কে শোনে কার কথা।
আরে কুল কুল এতো রাগ করছেন কেনো?? গ্রামে এতো শীত পরছে তবুও আপনার মাথা এতো গরম হয়ে আছে কেনো?? আচ্ছা আপনার তো গাড়িতে যেতে মন চাচ্ছে না তাইতো ওকে ঠিক আছে তাহলে আপনি বরং হেঁটেই আসেন,,, এই বলে ইয়ানা আর্দ্র কে ধাক্কা দিয়ে গরুর গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলো।
এই ইডিয়ট মেয়ে এটা কি করলে তুমি?? ,, রেগে বলল আর্দ্র

আপনিই তো বললেন আপনার এই গাড়িতে যেতে ভালো লাগছে না তাই আপনি বরং হেঁটেই আসুন,, আর হ্যাঁ চিন্তা করবেন না গাড়ি আস্তে আস্তে চলবে তাই আপনি হারিয়ে যাবেন না,, ইয়ানার এহেন কাজে সবাই হা হয়ে গেছে,, ওদিকে আর্দ্র রেগে জুতা হাতে করে হেঁটে হেঁটে আসছে। ইয়ানা এক ধ্যানে আর্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছে,, চুল গুলা এলোমেলো উপর থেকে শার্টের কয়েকটা বোতাম খোলা শার্টের উপরে জ্যাকেট এর চেনটা খোলা থাকায় দেখা যাচ্ছে, রেগে আছে জন্য মুখটা গোমরা করে রেখেছে, ঠান্ডার জন্য নাকটা লাল হয়ে আছে,, ফর্সা মুখে লাল নাক অনেক কিউট লাগছে,, ইস এই কিউট ছেলেটা আমার বর হায়, মে মাজাওয়া, এই ছেলেটা এত্তো হট কেনো,, মনে মনে বলল ইয়ানা।

ওদের আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাই সবাই এসেই কোনো রকমে কয়টা খায়ে লেপের নিচে চলে গেছে, আজকে আর কোনো আড্ডা দিবে না এমনিতেই শীত তার উপর আবার এতোটা রাস্তা এসে ক্লান্ত হয়ে গেছে,, ইয়ানা শীতে হাতে হাত ঘষতে ঘষতে রুমে এসে দেখলো আর্দ্র খাটের সাথে হেলান দিয়ে আধ শোয়া হয়ে ফোন টিপছে আর লেপ কমর পযন্ত নেওয়া,, এটা গ্রাম বিধায় এখানে বেশির ভাগ মানুষই লেপ ব্যবহার করে,, ইয়ানা ভালোই বুঝতে পেরেছে যে তখনকার ব্যাবহারে আর্দ্র ভীষণ ক্ষেপে আছে,, ইয়ানা আস্তে আস্তে রুমে এসে রুমের দরজা টা ভিতর থেকে আটকে নিঃশব্দে আর্দ্রর দিকে এগিকে গেলো তারপর খাটে উঠে লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল, তাতেও আর্দ্রর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ইয়ানা আর্দ্রর গায়ের সাথে লেগে শুয়ে পড়ল,, তাতেও আর্দ্রর কোনো হেলদুল না পেয়ে ইয়ানা নিজের ঠান্ডা পা আর্দ্রর পায়ের সাথে লাগিয়ে দিলো,, আর্দ্র এবার বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুঁচকে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলল,, এটা কি করছো?? ভালো করে ঘুমাতে পারছো না??

কীভাবে ঘুমাবো আপনার জন্য তো ঘুমাতেই পারছি না, একজন বসে আছে তো একজন শুয়ে আছে এভাবে ঘুমানো যায়?? বাতাস ঢোকে না? আপনি ও বরং শুয়ে পড়ুন।
নাহ আমি শোবো না আমার মোটেও ঘুম আসছে না,, আর তোমার তো আমার সাথে ঘুমাতে ভালো লাগবে না।
কে বলেছে আপনাকে??
কাউকে বলতে হবে না আমি জানি, আর আসার সময় তো দেখলাম আমার সাথে তোমার যেতে ভালো লাগছে না বলেই তো আমায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলে।

ইয়ানা বুঝতে পেরেছে যে আর্দ্র অনেক বেশিই অভিমান করেছে ইয়ানা একপাশ হয়ে শুয়েই মুচকি হাসলো তারপর একটু নড়েচড়ে শুয়ে বলল,, এতো কথা না বলে শুয়ে পড়ুন তো আমার অনেক শীত লাগছে ,।
আর্দ্র একরাশ অভিমান নিয়েই পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল,, আর্দ্র শুয়ে পড়ার পড়েও ইয়ানা নড়াচড়া করতে লাগলো,, আরে এখন তো আমি শুয়ে পড়েছি তার পরেও এমন নড়াচড়া করছো কেনো??
তো কি করবো আমার শীত লাগছে তো আর আপনি ওপাশ ফিরে শুয়েছেন এই জন্য মাঝখান দিয়ে বাতাস ঢুকছে তাই জন্য ঠান্ডা লাগছে এই জন্যই তো আমার ঘুম আসছে না,।

আর্দ্র কিছুক্ষণ ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর আবার ইয়ানার দিকে ফিরে শুয়ে পড়ল, কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর ইয়ানা আবার নড়াচড়া শুরু করে দিলো,, এবার আর্দ্র রেগে বলল,, এসব কি হচ্ছে কি এখন তো আমি তোমার দিকে ফিরে শুয়েছি তারপরেও এভাবে নড়াচড়া করছো কেনো??
রাগ করছেন কেনো,, আমার সত্যি অনেক শীত লাগছে তাই জন্যই তো এমন নড়াচড়া করছি।
আর্দ্র কিছুক্ষণ ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বলল ,, ও আচ্ছা শীত লাগছে তো ঠিক আছে আমি এখনি তোমার শীত কমিয়ে দিচ্ছি , এই বলে আর্দ্র ইয়ানাকে পিছন থেকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো তারপর ইয়ানার গলায় মুখ গুজে শুয়ে পড়ল।

আরে কি করছেন এটা, সরুন আমার উপর থেকে নিজের ওজন সম্পর্কে কোনো ঙ্গান আছে আপনার পাহাড় এর থেকেও বেশি ওজন আমি তো চিরে চেপ্টা হয়ে যাবো উঠুন বলছি।
কেনো তুমি তো এটা চাইছিলো যাতে আমি তোমায় গরম করে দিই তাই জন্যই তো তুমি এমন করছিলে, কি ভেবেছো আমি কিছু বুঝি না হুমম,, এবার দেখো আর তোমার শীত লাগবে না এখন বরং আরো গরম লাগবে,,, এই বলে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
ম,,মোটেও না আমি এমন কিছুই মনে করেনি৷
হুম তাই নাকি, শোনো আমি ওতোটাও অবুঝ নাহ বুঝলে, আমি বুঝি কে কিসের জন্য কীভাবে ইঙ্গিত করে এখন চুপচাপ শুয়ে থাকো আমারও অনেক শীত লাগছে এখন গা গরম করার অনেক প্রয়োজন,,

রাত তখন গভীর চারিদিকে সব নির্জন সবাই নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে চারপাশে ঝিঁঝি পোকার ডাক,, ইয়ানা পাশে হাত দিয়ে নিজের কাপড় খুঁজতে ব্যস্ত কিন্তু সেটা পেলে তো, রুমে এতো অন্ধকার যে ভালো করে কিছু দেখাই যাচ্ছে না,, ইয়ানা হাতরাতে হাতরাতে আর্দ্রর মুখের উপর হাত চলে গেলো, আর্দ্রর ঘুম ভেঙ্গে গেলো,, এই মাঝ রাতে কি করছো কি ঘুমাতে দাও তো।
আরে তখন আমার শাড়ি কোথায় রেখেছেন এখন তো খুঁজেই পাচ্ছি না ।

এতোরাতে শাড়ি নিয়ে কি করবে?? সকাল হতে এখনো অনেক বাকি শাড়ি না খুঁজে চুপচাপ শুয়ে পড়ো নয়ত ঠান্ডা লেগে যাবে।
শাড়ি নিয়ে কি করবো জানেন না, রাতে কি করলেন মনে নাই,, আর এখন আমি শাড়ি নিয়ে গোসল করতে যাবো আর আমার সাথে আপনিও যাবেন,, এটা শহর নয় যে রুমের মধ্যে সবকিছু আছে যখন তখন গিয়ে শাওয়ার নিলেই হয়ে গেলো, এটা হলো গ্রাম এখানে মানুষ আযান এর সময় উঠে নামাজ পড়তে যায় আর এখন তো শীতকাল এখন আরো সকালে উঠে কেউ লাঙ্গল নিয়ে মাঠে যাবে তো কেউ হাড়ি নিয়ে রস পাড়তে যাবে, ভালো করে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখুন সাড়ে তিনটার বেশি বাজে, একটু পড়েই আযান দিবে আর আযান দিলেই নানু উঠে পড়বে তখন গোসল করবো কোথায়??

কিহ এখানে শাওয়ার নেই?? তাহলে আমি শাওয়ার নিবো কীভাবে??
সেটা আপনার এখন মনে পড়েছে?? চুপচাপ আমার সাথে চলুন বাইরে কল আছে ওখানেই গোসল করতে হবে।
কিহ?? এই মাঝরাতে আমি ওই ঠান্ডা পানিতে গোসল করবো?? নো নেভার, এমনিতেই সেই সন্ধ্যা থেকে কেউ কলে পানি তুলিনি, এখন পানি অনেক নিচে আর নিচের পানি অনেক বেশিই ঠান্ডা আমি গোসল করবো না তুমি যাও।
সেটা তো হচ্ছে না, আমার সাথে আপনাকেও যেতে হবে,, ইয়ানা আর্দ্র কে শোয়া থেকে উঠিয়ে দিলো তারপর গায়ের থেকে লেপটা টেনে সরিয়ে দিয়ে দেখলো আর্দ্রর গায়ের সাথে ইয়ানার শাড়ি জরিয়ে আছে, ইয়ানা ওটা টান দিয়ে নিয়ে বলল,, এই যে আমার শাড়ি নিজে কোলের মধ্যে রেখেছে আর আমি সারা বাড়ি খুঁজে মরছি।

তারপর ইয়ানা আর্দ্র কে নিয়ে চুপিচুপি রুমের বাইরে চলে গেলো, তারপর কলের কাছে এসে বলল আপনি কল চাপ দিয়ে বালতিতে পানি ভরুন আমি রুম থেকে টাওয়াল আনছি,, ওটা আনতে ভুলে গেছি।
কিহ? এই মাঝ রাতে আমি কল চেপে পানি তুলবো?? আমি জীবনে কল চেপে পানি তুলিনি আমি কীভাবে এতোরাতে পানি তুলবো ,, রেগে বলল আর্দ্র।

ওহ, এতো রাগ করছেন কেনো প্লিজ রাগ করবেন না মাএ তো কয়টা দিন একটু কষ্ট করুন আর কয়দিন পর তো চলেই যাবো প্লিজ।
হয়েছে হয়েছে আর গ্যাস দিতে হবে না,,, হাজার বিরক্তি নিয়ে আর্দ্র কল চাপতে লাগল,, ইয়ানা রুম থেকে টাওয়াল এনে আর্দ্র কে কলের পাশে বসায়ে দিয়ে নিজে কল চেপে বালতি ভরে তারপর আর্দ্র কে মগ দিয়ে বলল গোসল করে নিতে আর্দ্র বিরক্তি নিয়ে ওমনি মাথায় মগ দিয়ে পানি নিতে লাগল তারপর গোসল শেষে ইয়ানা আর্দ্রর মাথা মুছিয়ে দিয়ে বলল রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিতে আর্দ্র গেলো না,, তোমাকে এখানে এতো রাতে একা রেখে আমি রুমে যাবো তুমি কি পাগল হয়ে গেছো??
তো কি আপনি এই ভিজা কাপড়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন?? এখনি কেমন শীতে কাঁপছেন ,।
তাতে কি তুৃমি যলদি গোসল করো আমি এখানেই আছি,, আর্দ্রকে কোনোমতেও ওখান থেকে সরানো গেলো না অগত্যা ইয়ানা ওভাবেই গোসল করে তারপর দুজনে রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে আবার শুয়ে পড়ল।

সকাল হয়ে গেছে কিন্তু এখনো সূর্য মামার দেখা নেই চারিদিকে ঘন কুয়াশায় ঘেরা পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে ইয়ানার ঘুম ভেঙ্গে গেলো আড়মোড়া ভেঙে তাকিয়ে দেখলো ও আর্দ্র বুকের উপর শুয়ে আছে আর আর্দ্র ওকে জাপটে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে,, ইয়ানা হাত দিয়ে আর্দ্র কে ডাকতে লাগল আর্দ্র গা হালকা গরম,, এই উঠুন সকাল হয়ে গেছে।
ইয়ানার ডাকে আর্দ্র আরো শক্ত করে ইয়ানাকে জরিয়ে ধরে মৃদ সরে বলল,, এতো সকালে উঠতে হবে না,, গেলো রাতে ওই কলের পানিতে গোসল করে কেমন গলা বেথ্যা হয়ে গেছে মনে হয় ঠান্ডা লেগেছে।
হুমম সেটাই তো দেখছি গা টা কেমন গরম হয়ে আছে,, আচ্ছা আপনার গলা বেথ্যা হয়েছে তাই তো?? তাহলে চলুন আমার সাথে আপনাকে একটা জিনিস খাওয়াবো।

না না আমি কিছুতেই এই ঠান্ডার মধ্যে উঠতে পারবো না, আর মনে তো হচ্ছে বাইরে অনেক কুয়াশা এর মধ্যে আমি কোথাও যাবো না তোমার যেতে হলে যাও।
আমি তো যাবোই সাথে আপনাকেও নিয়ে যাবো চলুন তো,,গ্রামে এসে গ্রামের সকালের দৃশ্য না দেখলে না অনুভব করলে তাহলে গ্রামে আাসার কি লাভ হলো,, তারপর ইয়ানা আর্দ্র কে উঠিয়ে দিলো,, নিজের শীতের কাপড় পরে নিলো আর আর্দ্র একটা মোটা জ্যাকেট আর টুপি পড়ে নিলো ইয়ানা সোয়েটার পড়েছে সাথে উপরে একটা মোটা চাদর ও নিয়েছে।

শিশির ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে, কুয়াশা ভেদ করে দুজন কপোত-কপোতী একে অপরের হাত ধরে সামনে হেঁটে যাচ্ছে,, ইয়ানা ওর চাদর দিয়ে আর্দ্র কেও জরিয়ে নিয়েছে,, আজকে এতোই কুয়াশা পড়েছে যে সামনে কি আছে তা ভালো করে দেখাই যাচ্ছে নাহ,, ইয়ানা আর্দ্র কে নিয়ে মাঠের মধ্যে দিয়ে একটা মাটির রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে তার সেই রাস্তার দুপাশে সারি সারি খেঁজুর গাছ , গাছ থেকে মানুষ রস পাড়ছে,, সন্ধ্যায় গাছে হাড়ি পেতে রেখে যায় আর সকালে এসে হাঁড়ি খুলে নিয়ে গিয়ে সেই রস ভালো করে খাওয়ার উপযোগী করে বিক্রি করে আবার পাটালিও বানায়,, ইয়ানা আর আর্দ্র হেঁটে হেঁটে সামনের দিকে যাচ্ছে ,, কি হলো সেই কখন থেকে হেঁটেই যাচ্ছো,, এই সাত সকালে কি আমায় কুয়াশার মধ্যে হাঁটাতে এনেছো যাতে ঠান্ডা আরো বেশি করে লাগে?.

আরে নাহ,, আর আপনি এভাবে রেগে যাচ্ছেন কেনো,, এই তো চলে এসেছি সামনে তাকান।,, আর্দ্র সামনে তাকিয়ে দেখলো ইয়ানা ওকে একটা ছোট্ট চায়ের দোকানের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে, দোকানে একটা বয়স্ক লোক আর একটা ছোট ছেলে,, বয়স্ক লোকটা দোকানের ভেতরে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছে আর ছোট ছেলেটা কেটলিতে পানি গরম করছে।
দাদু চিনতে পারছো আমায়?? আমি ইয়ানা আর ছোটো তুই তো দেখি অনেক বড় হয়ে গেছিস তা কিসে পড়িস??
এই তো ইয়ানা আপু আমি এবার ক্লাস ফাইভ এ পড়ি।, এইটা বুঝি আমাগো দুলাভাই , কতদিন পর তুমি এখানে আসলে বসো এখানে আমি বরং তোমাদের গরম গরম দু কাপ চা দিই।

ইয়ানা আর্দ্র কে ধরে জোর করে ওখানে পাতা চরাটে বসায়ে দিলো,,, এখন কি আর ভালো করে চোখে দেখি ভালো মনেও থাকে না, তা তোর বরটা দেখি সাহেবের মতো, বাবা কি লম্বা।
আরে কি যে বলো দাদু তোমার মতো এতো সুন্দর নাহ,, ওদের কথা বলার মাঝেই ছোটো নামের ছেলেটা ওদের কে মাটির কাপে করে দু কাপ চা দিয়ে গেলো,, নিন এটা খেয়ে নিন দেখবেন গলা বেথ্যা একদম ভ্যানিস হয়ে গেছে।
কিহ,, আর ইউ লস্ট ইউর মাইন্ড? আমি এই ছোট্ট মাটির কাপে চা খাবো, এটাও সম্ভব,, কীভাবে খাবো আমি?? এখানে তো ধরার তো কিছু নাই।
আরে আমি যেভাবে ধরে আছি সেভাবে ধরে ঠোঁট লাগিয়ে আলতো করে চুমুক দেন দেখবেন কি মজা,, আর জলদি করুন একটু পরেই সবাই এখানে চলে আসবে চা খেতে নিন খান খান।

ইয়ানাকে দেখে দেখে আর্দ্র ও ইয়ানার মতো করে ধরে চায়ে চুমুক দিলো আর চুমুক দিয়েই চোখ বন্ধ করে নিলো,, সত্যি শহরের চায়ের থেকে গ্রামের চা অনেক আলাদা আর অনেক মজা এই কনকনে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে এই চা খাওয়ার মজাই আলাদা।
আর্দ্র ইয়ানা চা খায়ে অনেকক্ষণ হাঁটা হাঁটি করে তারপর বাড়ির দিকে রওনা দিলো, ততক্ষণে হালকা রোদ উঠে গেছে,, ওরা বাড়ি গিয়ে দেখলো ওঠানে রোদ পড়েছে সেখানে মাদুর বিছিয়ে ইয়ানার নানু আকাশ আর অনিককে কীভাবে সরিষার তেল মালিশ করতে হয় সেটা দেখাচ্ছে, আকাশ আর অনিক ও মন দিয়ে সেটা দেখছে যেনো এই মুর্হুতে এটা দেখা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই,, ইয়ানার নানু ইয়ানা আর আর্দ্র দেখে ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,, আরে তোমরাও এসে গেছো ইয়ানা আয় আয় এখানে এসে বস তোর বরকেও তেল মালিশ করা শিখিয়ে দেই ,,

কিহ আমি কখনোই এটা নেবো না, ইয়ানা তোমার নানুকে বলে দাও, আর এটা কীভাবে নেবো হাত পা কেমন চটচট করে,, নো।
একথা আমাকে না বলে পারলে নানুকে বলুন এই বলে ইয়ানা ওর নানুর পাশে গিয়ে বসে পড়ল,, আর্দ্র কে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনিক আর আকাশ আর্দ্রর কাছে গেলো,,,এই তোরা সেই কখন থেকে কি গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করছিস শুনি, আর এতো ভোরে দুজনে কোথায় গিছিলি হুমম।
আকাশ ভাইয়া তুমি ঠিকি বলেছো তা আর্দ্র ভাই এতো সকালে কোথায় গিয়েছিলে, আর জানোত অনিক ভাইয়া গেলো রাতে না আমার ভীষণ জোরে হিসি পেয়েছিলো তো আমি যখন হিসি করতে কাঁপতে কাঁপতে বাইরে আসলাম তখন কি দেখেছিলাম জানো??
কি দেখেছো বলো বলো,,

দেখি যে আমাদের দ্যা গ্রেট আর্দ্র ভাই কল চেপে পানি তুলছে,, সেকি এক ভয়াবহ দৃশ্য আমি তো প্রথমে অন্ধকারে দেখে ভয় পেয়ে গিছিলাম তারপর দেখি ইয়ানা রুমের দরজা খুলে আর্দ্র ভাই এর দিকে এগিয়ে গেলো, তো রুমের দরজা খোলায় সেই আলো এসে আর্দ্র ভাই এর গায়ে পড়ায় আমি বুঝতে পারলাম যে ওটা আর্দ্র ভাই।
সেকি কান্ড তারপর তারপর,,
তারপর আর কি, এতোকিছু দেখে সেখানে কি আর দাঁড়িয়ে থাকা যায়, আমার বুঝি লজ্জা করে না তার উপর ভীষণ জোরে হিসি পেয়েছিলো আমি ওখান থেকে দৌড়ে চলে গিয়েছিলাম।

ইয়ানা কান পেতে ওদের কথা শোনার চেষ্টা করছিলো কিন্তু পারলো না কেননা ওরা ফিসফিস করে কথা বলছিলো,,, সেকি আর্দ্র!ভাই আমার তা তুই ওতো রাতে কল চেপে পানি তুলছিলি কেনো?? হুম হুম,, অনিকের কথায় আর্দ্র কেমন অস্থিতে পড়ে যায় তাই কোনো রকমে ওদের কিছু বলে পকেটে হাত রেখে রুমে চলে গেলো,, অনিক আর আকাশ আর্দ্রর কান্ডে হুহা করে হেসে উঠল।
শুনুন না,,,, হঠাৎ পিছন থেকে কারো নরম মোলায়েম কন্ঠ শুনে অনিক আর আকাশ পিছন ফিরে তাকালো দেখল একটা অল্প বয়সী মেয়ে ওদেরকে ডাকছে,, তুমি নিশ্চয়ই শিলা ইয়ানা অবশ্য তোমার কথা আমাদের বলেছে তুমি হলে ইয়ানার মামাত বোন তাই তো??

জি আপনি ঠিকি ধরেছেন, আপনি বুঝি ইয়ানা আপুর বরের বড় ভাই?? আর আপনার পাশে দাঁড়ানো ওটাই বুঝি আপনার ভাই আর ইয়ানা আপুর বর আর্দ্র?? , আকাশকে উদ্দেশ্য করে বলল শিলা।আসলে শিলা আর্দ্র কে আকাশ ভেবেছে আর আকাশকে আর্দ্র।
কাম সারছে এতো দেখি উল্টা পাল্টা করে ফেলছে কাকে কি বলছে,, ভাগ্যিস এখানে আর্দ্র নেই তাহলে তো কেলেংকারী হয়ে যেতো,, আসলে রাতে ইয়ানা সবার সাথে সবাইকে পরিচয় করায়ে দিছিলো কিন্তু শিলা সেখানে ছিলো না ও ঘুমিয়ে পড়েছিলো তাই সকালে উঠে আকাশকে দেখে ও ভেবেছে এটাই বুঝি ইয়ানার বর আর্দ্র।
আরে না তুমি ভু,, অনিক আর কিছু বলার আগেই পরশ এসে অনিক আর আকাশ কে ডেকে নিয়ে গেলো বলল খাওয়ার জন্য ডাকছে, ইয়ানা আর ওর নানু অনেক আগেই ওখান থেকে চলে গিছিলো।

সবাই খেতে বসেছে ইয়ানা আসতে একটু দেরি হওয়াই শিলা গিয়ে আর্দ্রর পাশে বসে পড়েছে, আসলে ও ভেবেছে আর্দ্র হলো অন্তরার ভাই আকাশ তাই জন্য লাইন মারার চেষ্টা করছে,, শিলা আর্দ্রর গা ঘেষে বসায় আর্দ্র ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে শিলার দিকে তাকিয়ে সরে গেলো, আর্দ্রর তাকানো দেখে শিলা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।
আকাশ আমার তো ভয় করছে এই শিলা কি জাবানি এখন আবার আমার ভাই এর কাছে ধমক না খায় আর্দ্রর মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে এখনি শিলাকে বড়সড় একটা রাম ধমক মারবে।

আমারও তো সেটাই মনে হচ্ছে অনিক ভাইয়া আর ইয়ানাটা গেলো কোথায় এদিকে তো ওর বরকে নিয়ে টানা হেঁচড়া শুরু হয়ে গেছে।
সরি সরি আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো, সবাই তো দেখি বসে পড়েছে তা আমি বসবো কোথায়,,
ইয়ানা আপু ওনার পাশে তো জায়গা আছেই তুমি বরং ওনার পাশেই বসো,, আকাশ কে উদ্দেশ্য করে বলল শিলা।
কেনো ইয়ানা ওর কাছে গিয়ে বসবে কেনো, তুমি ওর কাছে গিয়ে বসো আর ইয়ানা তুমি আমার কাছে এখানে এসে বসো,, কুইক।
আর্দ্রর কথা শুনে শিলা আহত হলো কিন্তু ও মনে মনে ভাবতে লাগল ও ভুল কি বলে ছিলো ইয়ানা কে তো তার বরের পাশেই বসতে বলল তাহলে ওনি এতো রেগে গেলো কেনো, আর ইয়ানার বর আর্দ্র ভাইয়া ও তো কিছু বলছে না,,

এমন বিরবির করতে করতে শিলা উঠে গিয়ে আকাশ এর পাশে বসল আর ইয়ানা এসে আর্দ্রর পাশে বসল,,, শিলা আকাশের পাশে বসতেই রোজা চোখ গরম করে আকাশের দিকে তাকালো, রোজার তাকানো দেখে আকাশ ঢোক গিলে অনিকের দিকে আরো ঘেঁষে বসল,, এটা কি করলেন শিলা কি ভাবলো বলেন তো, ও ছোট মানুষ আপনার পাশে নাহয় একটু বসেছিলো তাই বলে ওকে এভাবে ধমক দিবেন ভাগ্যিস এখানে মা বাবা কেউ নেই ওনারা অন্যরুমে ওনারা থাকলে কি ভাবতো,, ফিসফিস করে আর্দ্রর কানে বলল ইয়ানা।

যা খুশি ভাবুক তাতে আমার কি, আর তুমি আমার বউ তুমি আমার পাশে বসবে না তো কি অন্য কেউ বসবে, আর ওই শিলা নামের মেয়েটাকে আমার মোটেও পছন্দ হয়নি কেমন গা ঘেঁসে বসে ছিলো নিলজ্জ মেয়ে একটা, ইচ্ছে তো করছিলো কষে একটা চড় দিতে গায়ে পড়া মেয়ে।
ইস আস্তে বলুন সবাই শুনতে পাবে তো আর আমার জানামতে শিলা তো ওমন মেয়ে নয় হয়ত কোথায় ও ভুল হচ্ছে,, আচ্ছা যা হওয়ার হয়ছে আপনি এখন খেয়ে নেন আর গলা বেথ্যা কমছে??

হালকা হালকা আছে,,।
আর্দ্র আর ইয়ানার ওভাবে ফিসফিস করে কথা বলা দেখে শিলা অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে আবার আকাশ এর দিকে তাকালো দেখলো আকাশ রোজার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছে,, এদের এমন করা দেখে শিলা কিছু বুঝতে পারছে না খাওয়া বাদ দিয়ে শুধু একবার এদের দিকে তাকাচ্ছে তো আবার ওদের দিকে তাকাচ্ছে।

খাওয়া শেষে মেয়েরা সবাই মিলে পিঠা বানাতে বসেছে, বিভিন্ন রকমের পিঠা, অনিক আর আকাশ নারিকেল কাটতে ব্যাস্ত আর পরশ মগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নারিকেলের পানি খাওয়ার জন্য, আর্দ্রর একটু জ্বর জ্বর লাগছে তাই শরীলটা ভালো লাগছে না তাই রুমে শুয়ে আছে,, শিলা সুযোগ বুঝে চুপিচুপি প্লেটে কয়েক টা পিঠা সাজিয়ে আর্দ্রর রুমের দিকে গেলো গিয়ে দেখল আর্দ্র খাটের ওপর চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে,, শিলা দরজায় দাঁড়িয়ে এক ধ্যানে আর্দ্রর দিকে তাকিয়ে আছে,, এর আগে এতো সুন্দর ছেলে ও কখনোই দেখেনি শিলা আস্তে আস্তে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে খাটের কাছে গেলো তারপর নিজের হাতটা বাড়িয়ে আর্দ্রর কপালে রাখতেই আর্দ্র চোখটা খুলে টপ করে বসে রেগে বলল,, এই নেয়ে তুমি এই রুমে কি করছো আর আমার কপালে হাত দিয়েছো কেনো।
আ,,আব আসলে আমিতো আপনাকে পিঠা দিতে এসেছিলাম আর আপনার গায়ে তো জ্বর আসুন আমি আপনার কপালে পানি পট্টি দিয়ে দিই।

আমার গল্পে তুমি পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬

তার কোনো দরকার নেই শিলা ওনাকে আমিই পানি পট্টি দিতে পারবো এই যে আমি নিয়ে আসছি তুই বরং এখান থেকে যা মামি তোকে ডাকছে।
আমি বুঝি না নিজের বর থাকতে ইয়ানা আপু অন্য ছেলের প্রতি এতো আগ্রহ কেনো,, কথাটা আর্দ্র মানে আকাশ ভাই কে বলতেই হবে,, মনে মনে কথাগুলো বলে শিলা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

আপনি ঠিক আছেন?? জ্বর কি বেড়েছে?? আমি পানি পট্টি এনেছি আসুন আমি দিয়ে দিচ্ছি তাহলে ভালো লাগছে।
রাখো তোমার এসব,, শোনো ইয়ানা তোমার এই মামাত বোনকে সাবধান করে দাও নয়ত কিন্তু আমার কাছে মার খাবে, এমন গায়ে পড়া মেয়ে আমার মোটেও পছন্দ নয়, তুমি ওকে ভালো করে বুঝিয়ে দিও নয়ত আমি এর পরের বার কিন্তু ছাড় দেবো নাহ।
আর্দ্রর বলা কথাগুলো ইয়ানাকে বড্ড বেশি ভাবাচ্ছে হঠাৎ করে শিলার কি হলো এমন করছে কেনো ওতো এমন ছিলো না তাহলে,,,

ইয়ানার ভানার মাঝেই বাইরে থেকে সরগল শোনা গেলো ইয়ানা আর আর্দ্র রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলে শিলা ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলল ,, দেখেছো ফুপি তোমার মেয়ের বর থাকতেও কেমন অন্য একটা ছেলের সাথে এক রুমে বসে আছে,, আসোলে ওনার কোনো দোষ নেই সব দোষ তোমার মেয়ের নিজের বর থাকতেও কেমন ওনার সাথে সব সময় লেগে থাকে শহরে গিয়ে তোমার মেয়ে খারাপ হয়ে গেছো,, লজ্জা পর্দা কিচ্ছু নেই খারাপ মেয়ে একটা।

আমার গল্পে তুমি পর্ব ৪০+৪১+৪২