আমার গল্পে তুমি পর্ব ১০+১১+১২

আমার গল্পে তুমি পর্ব ১০+১১+১২
সুমাইয়া সুলতানা সুমী

ইয়ানার কথামত আর্দ্র অনিককে ফোন করে অফিসে আসতে বলল,,কিছুক্ষণের মধ্যে অনিক আসলো একরাতের মধ্যেই কেমন পাগল পাগল অবস্থা, চুল গুলো এলোমেলো মুখটা শুকনো চোখ দুটাও ফুলে গেছে অনিকের এমন অবস্থা দেখে আর্দ্র বলল,,,এক রাতের মধ্যে নিজের এ কি হাল করেছিস পুরাই দেবদাস, এতোই যখন ভাবিকে ভালোবাসিস তাহলে এই আকামটা করলি কেনো??
সেটাপ আর্দ্র আমি কোনো ভুল করিনি বরং তোরাই আমায় ভুল বুঝতেছিস।

হুমম আমার মনে হয় আমরাই অনিক স্যারকে ভুল ভাবতেছি, আর আমার তো ওই মেয়েটাকে কি যেনো নাম শেলী না ফেলি ওনাকেই সন্দেহ হয়, কেননা ওনি যখন কালকে অন্তরা আপুকে ধরে কাঁদতেছিলো আমি তখন ওনাকে ভালোভাবে খেয়াল করেছি ওনি তখন কাঁদতে ছিলো না কান্নার অভিনয় করতেছিলো।
তুমি কীভাবে বুঝলে??

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বুদ্ধি থাকলে সবি বোঝা যায়,, আমরা মানে মেয়েরা যখন সত্যি সত্যি কান্না করি তখন দেখবেন চোখের পানি আর নাকের পানি এক হয়ে যায়,, যে কেউ কান্না করলে তার নাকেও পানি আসবে এটা শিওর কিন্তু ওই মেয়েটা তো একবারও নাক টানিনি শুধু কান্না করেছে আর চোখ থেকে পানি পরেছে যেনো মনে হচ্ছিল চোখে কিছু একটা দিয়ে কান্না করছে।
ইয়ানার কথা শুনে অনিক আর আর্দ্র একসাথে বলে উঠল,,হোয়াট?? কালকে মিস শেলীর কান্নার সময় ওনি নাক টানিনি বলে তোমার মনে হচ্ছে ওটা নকল কান্না ছিলো??

হুৃমম তা নয়ত কি।
রাবিশ,, ভাইয়া তুই ওর কথায় কান দিস না ওর কাজই হলো সব সময় তিলকে তাল করা,, তুই আমায় বল সেদিন পার্টিতে ঠিক কি হয়েছিলো।
তুই তো জানিস আমি ড্রিংক করি না তাই সেদিন পার্টিতে আমি শুধু জুস নিয়েছিলাম ওটাই খাচ্ছিলাম কিন্তু কিছুক্ষণ পরই মাথার মধ্যে কেমন যেনো ঝিমঝিম করছিলো তাই আমি আমার সাথে শেলি আর একটা ছেলে গিয়েছিলো আমাদের অফিসের স্টাফ সুজন ওকে ডাক দিয়ে বলি আমাকে আমার রুমে দিয়ে আসতে,, ও আমায় ধরে নিয়ে গেলো তারপর আমি হঠাৎ করে দেখি আমায় ওই ছেলেটা নয় অন্তরা ধরে আছে।

কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব আপু তো বাসায়।
হুমম আমিও তাই ভেবেছি যে অন্তরাতো বাসায় তাহলে এখানে আসবে কীভাবে তারপর আমি চোখটা ভালো করে ডলে আবার তাকালাম সবটা কেমন ঝাপসা লাগছিলো,, তারপর আর কিছু মনে নেই সকালে উঠে দেখি আমি বিছানায় খালি গায়ে শুয়ে আছি আর আমার পায়ের কাছে শেলী একটা চাদর জরিয়ে ধরে কাঁদছে।
ব্যাস এটুকু দেখেই তুই ভেবে নিলি যে রাতে ওই মেয়েটার সাথে তোর কিছু একটা হয়েছে?? পাগল নাকি তুই এটা তো সাজানো নাটক ও হতে পারে।

আমিও তো প্রথমে এটাই ভেবেছে তারপর শিওর হওয়ার জন্য হোটেলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখলাম ওখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমি মাতাল হয়ে মিস শেলীর ঘাড়ে ভর দিয়ে আমার রুমে যাচ্ছি এখন বল তুই কি বলবি।
হুমম বিষয় টা খুবি সাংঘাতিক তুই বলছিস তুই ড্রিংক করিসনি আবার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে তুই মাতাল হয়ে মিস শেলীর ঘাড়ে ভর দিয়ে রুমে যাচ্ছিস ব্যাপারটা মনে হচ্ছে বড়সর একটা ঘাপলা আছে কেউ মনে হয় তোকে ফাঁসাতে চাচ্ছে।
স্যার আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে বলবো??
বলো।

বলছি কি আমরা যদি ওই শেলিকে ধরে নিয়ে আসি তারপর চেয়ারের সাথে বেঁধে উত্তম ম্যাধম দিই তারপর জিগাস করি যে সত্যিটা কি আমি শিওর ওনি সব গড়গড় করে বলে দেবে, প্ল্যানটা কেমন??
তোমার মাথা এসব আজগুবি প্ল্যান আবার যদি আমার সামনে বলো তো তোমার চাকরি আমি খেয়ে নেবো।
বাড়ি থেকে কিছু খেয়ে আসিনি নাকি আমার চাকরি খাবে, ধ্যাত আর কিছু বলবোই না,,, মনে মনে বলল ইয়ানা।
তাহলে এখন আমরা কি করবো আর্দ্র সত্যিটা কীভাবে বার করবো অন্তরা তো আমাকে বিশ্বাসই করছে না।
তোকে ওখানে পাঠানোই ভুল হয়েছে, এরপর থেকে আমি যাবো,, ভাবিকে এখন কিছু বলার দরকার নেই এমনিতেই ওনি অসুস্থ বেশি টেনশন দেওয়া ঠিক হবে না,,, ইয়ানা তোমার একটা কাজ আছে।

কি কাজ?? বিপদে পরলেই ইয়ানা আর এমনি সময় দূর দূর করে,,,
তুমি মিস শেলিকে ফলো করবে ওনি অফিস শেষে কোথায় যাচ্ছে কি করছে কার সাথে কথা বলছে সব কিছু দেখে আমায় বলবে ওকে৷
ওকে স্যার আমি রাজি,, আপুর চোখের পানি আমি মুছেই ছাড়বো,।
ডায়লগ কম মারো আর কাজে লেগে পড়ো।
একে দেখে তো মনে হচ্ছে আমার থেকে এরি বেশি টেনশন আমার বউকে নিয়ে,,, মনে মনে বলল অনিক।
,,,বিকেলে,,,,,

মিস শেলি অফিস থেকে বেরিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে সোজা ওনার বাসায় চলে গেলো,, ইয়ানাও ওনাকে ফলো করে ওনার বাসায় গেলো,, একটা ফ্ল্যাটে ওনি একাই থাকেন রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।
যাহ এখন আমি দেখবো কীভাবে যে ওনি ভিতরে কি করছেন,, অনেকক্ষন ভেবে ইয়ানা জানালার কাছে গেলো তারপর জানালা একটু ফাঁক করে দেখলো শেলি গোসল সেরে শুধু একটা টাওয়াল পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা মুছতেছে,, তখনি একটা ছেলে ওকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।

আরে ব্যাস ওনার স্বামীও আছে তাতো জানতাম না হুমম গভীর রহস্য দেখতে হচ্ছে ব্যাপারটা,, ইয়ানার আবার তাকালে দেখলো দুজন দুজনকে গভীরভাবে কিস করছে,, ছিঃ আরে ভাই আর কিছু করিস না বাকিটা পরে কর এখন তো কাজের কথাটা বল নয়ত আমার বিটকেল বস আমার চাকরি খেয়ে নেবে,,, একা একাই বিরবির করে বলল ইয়ানা।
আহ সুজন ছাড়ো আমায় আর বাসায় যাও কাল সকালে একটা বড় দাও মারতে হবে,,
ওহ হ্যাঁ আমার তো মনেই ছিলো না তা অনিক স্যারের কি খবর কিছু হলো??

কি হবে ওই এক বাচ্চার বাপকে বিয়ে করবো নাকি?? যদিও দেখতে হেব্বি তবুও না,, আর্দ্র স্যারকে ফাঁসাতে পারলে ভালো হতো উফ কি জোশ একটা ছেলে,,, কামুক ভঙ্গিতে ঠোঁট কাঁমড়ে বলল শেলী।
জোশ না ছাই গোমরা মুখো একটা সব সময় শুধু মুড নিয়ে চলে,,, আর কি বলল ও ফাঁসিয়েছে?? হুম দেখতে হচ্ছে ।
কিহ আমি থাকতে তুমি আর্দ্র স্যারকে বিয়ে করবে??,, রাগ দেখিয়ে বলল সুজন।
আরে রাগ করছো কেনো ওর থেকে টাকা নিতাম আর তোমার সাথে রোমান্স করতাম,।
হুমম ভালোই ফাঁসিয়েছ বেচারাকে।

হুমম তাইতো এবার মোটা অংকের টাকা আদায় করতে হবে ওনারা নিজেদের সম্মান বাঁচাতে আমার মুখ বন্ধ করতে চাইবে আর আমিও সেই সুযোগে টাকা হাতিয়ে নেবো,, বেচারা অনিক স্যার কিছু না করেই ফেঁসে গেলো।
আচ্ছা আমি চলে আসার পর রুমে কি হয়েছিলো ওইদিন।

আরে আমাদের প্ল্যানমতো অনিক স্যার এর জুস এ ঘুমের ওষুধ মিশানোর পর ওনি যখন ঘুমে ঢলতেছিলো তুমিতো ওনাকে রুমে দিতে গেলে, মাঝ পথে আমি ওনাকে নিয়ে রুমে গেলাম তারপর ওনাকে খাটে শুইয়ে ওনার জামা খুলে মুখে আর বুকে লিপস্টিক লাগিয়ে দিয়ে চলে আসছিলাম তারপর সকালের দিকে গিয়ে আমার জামা একটু ছিঁড়ে ওনার পায়ের কাছে বসে এমন ভান করলাম যেনো রাতে ওনি আমার সব কিচু কেঁড়ে নিয়েছে,,, আসল কাহিনি তো এটা রাতে আমি তোমার সাথে বাসর করেছি।
ওমমম সত্যি তোমার মাথায় অনেক বুদ্ধি চলো এখন আবার বাসর করবো,, তারপর দুজনে নিজেদের চাহিদা মিটাতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।

ছিঃ এসব আর দেখা যাচ্ছে না ভ্যাগিস এসব ভিডিও হয়নি,, এবার দেখাবো চান্দু এই ইয়ানা কি জিনিস অনিক স্যার এর মতো এতো ভালো একজন মানুষ কে ফাঁসানো তাও আবার টাকার জন্য।
ইয়ানা ওখান থেকে সোজা আর্দ্রদের বাসায় চলে গেলো তারপর আর্দ্রর সাথে দেখা করে ফোনটা আর্দ্র সামনে ধরে বলল। স্যার এখানে আমি সবকিছু ভিডিও করে এনেছি,,, ভাব নিয়ে বলল।
তাই নাকি কই দেখি,,
ইয়ানা ভিডিওটা অন করে আর্দ্র সামনে ধরতেই আর্দ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে ইয়ানাকে একটা রাম ধমক দিয়ে বলল,, এসব কি দেখাচ্ছো আমায়??
কেনো স্যার প্রমাণ।

এটা প্রমাণ?? ফোনটা ইয়ানার দিকে ঘুরায়ে ধরে বলল,, ইয়ানা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল তখন শেলি আর সুজন এর কিসিং এর সিন চলছে ফোনে,, অনেক আগে থেকে ভিডিও অন করে রাখায় ওটাও ভিডিও হয়ে গেছে,, ইয়ানা জিব্বায় কাঁমড় দিয়ে একটা হাসি দিয়ে ভিডিও টা টেনে একটু সামনে আগায় দিয়ে আর্দ্রকে দেখালো।

ঘড়ির কাঁটা আটটা ছেঁড়ে নয়টা ছুঁই ছুঁই আর্দ্রদের বাড়ির ডয়িং রুমে শেলী আর সুজন দাঁড়িয়ে আছে, সোফায় আশা আর কবির বসে আছে, আশা মুখে কাপড় চেপে কান্না করছে কবির সাহেব গম্ভীর মুখ করে বসে আছে,, পাশের সোফায় অন্তরা চুপচাপ কঠিন মুখে বসে আছে ওর পাশেই পরশ বসে চিপস খাচ্ছে,, ইয়ানা বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে কেননা মা বাসায় একা আছে নিশ্চয়ই অনেক বেশি চিন্তা করছে এই জন্যই তো মায়ের জন্য একটা ফোন কিনেছি আজকে গিয়ে এটা মাকে দেবো,, সব নিস্তব্ধতা দূর করে আর্দ্র বলে উঠল,, তা মিস শেলী আপনি বলতে চাইছেন ভাইয়া মানে অনিক স্যার আর আপনার মধ্যে কিছু একটা হয়েছে??

এটাই সত্যি স্যার আমি চেয়েও কিছু করতে পারিনি,, অনিক স্যার একটা ছেলে তারপর মাতাল ছিলো আমি ওনার থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারিনি,, আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনি মিষ্টার সুজন কে জিগাস করুন ওনি তো ওখানেই ছিলো।
হ্যাঁ স্যার, অনিক স্যার অনেক ড্রিংক করেছিলো তারপর আমি বললাম যে স্যার আমি আপনাকে রুমে দিয়ে আসি?? তো স্যার বলল না মিস শেলী আমাকে রুমে দিয়ে আসবে।

ইউ ব্ল্যাডি, মিথ্যা বলছো কেনো আমি মোটেও ড্রিংক করেনি,, রেগে বলল অনিক।
আহ ভাইয়া তুই চুপ কর আমি দেখছি তো ব্যাপার টা। আর্দ্র স্যার একটু বেশি বেশিই করছে এতো ভনিতা না করে পুলিশ ডেকে দুটোকে জেলে পুরে দিলেই তো সব ঝামেলা মিটে যায়।, মনে মনে বলল ইয়ানা।
আমি সব দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যেহেতু ভাইয়া ভুল করেই ফেলেছে সেহেতু মিস শেলী কে সস্মানে শশুড় বাড়ি পাঠানো উচিত।

আর্দ্র কথা শুনে সুজন আর শেলী মনে মনে হাসল কেননা ওদের প্ল্যান মতোই সব কিছু হচ্ছে,, এখন নিশ্চয়ই অনিক স্যার এর সাথে বিয়ে দিবে তারপর বাকিটা জীবন আয়েশ করে কাটানো যাবে পরে সময় সুযোগ বুঝে আর্দ্র কেও ফাঁসানো যাবে।
তো কি বলছিলাম এই জন্য আমি ওনাদের আসতে বলেছি, ইন্সপেক্টর ভিতরে আসুন।
একি স্যার আপনি ওনাদের আসতে বলেছেন কেনো??
তোমাদের দুজনকে শশুর বাড়ি পাঠানোর জন্য। ইন্সপেক্টর আ্যারেস্ট করুন এই দুটোকে, মেয়েদের গায়ে হাত তুলিনা এই জন্য বেঁচে গেলে নয়ত মেরে তোমার দুগাল লাল করে দিতে ইচ্ছে করছে আমার।

এসব কি আর্দ্র??
সব বলছি বাবা দাঁড়াও,, তারপর আর্দ্র ভিডিও টা সবাইকে দেখাল আর সবকিছু বলল,,,তোমাদের দুজন কে যদি আজকে ছেঁড়ে দিতাম তাহলে তোমাদের সাহস বেড়ে যেতো তোমরা এর থেকেও আরো নিকৃষ্ট কাজ করতে একবারও ভাবতে না তাই তোমাদের দুজনের একটা শাস্তি হওয়া উচিত,,

অনিক রেগে গিয়ে সুজনের কলার ধরে নাকে কয়েকটা ঘুষি মারল বেচারার নাকদিয়ে রক্ত বার হচ্ছে নিচে পরে বারবার বলছে স্যার মাফ করে দেন,, পরে আর্দ্র গিয়ে অনিককে থামালো,, ছাড় ভাইয়া ওকে ইন্সপেক্টর ওদেরকে নিয়ে যান।
সবকিছ শুনে অন্তরা মনে মনে অনেক খারাপ লাগল শুধু শুধু অনিককে কষ্ট দিলো,,, অনিক ওর বাবার সামনে গিয়ে বলল,, কে যেনো বলেছিলো যে তার নাতি আর বউমার কাছে যেনো আমি না যায় তো কি চলে যাবো আমি??
কবির সাহেব সোফা থেকে উঠে একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলল,,রাগ করছিস কেনো আসলে আমি একটু বাগী বাবা হতে চেয়েছিলাম হিহি আশা কোথায় তুমি আমার ওষুধ টা দাও কতবার বলেছি টাইম টু টাইম ওষুধ দিবে।

সেকি তুমি তো একটু আগেই ওষুধ খেলে,।
আব আ,,তাতে কি আমি গেলাম ঘুমাতে।
বাবা তুমি এই সাড়ে নয়টায় ঘুমাবে?? যেখানে তোমার এগারোটার আগে ঘুমই আসে না,, খেয়েছো??
দুটো ছেলে হয়েছে দুটোই সেই লেভেলের হাই বড়টার থেকে ছোটটাই বেশি আমি ভেবেই পাই না আমার মতো এতো শান্তশিষ্ট লোকের ছেলে এতো রাগী কেমনে হয়,, নিশ্চয়ই মায়ের মতো হয়েছে হুমম ঠিক ওর মতোনই হয়েছে ,, মনে মনে বলল কবির সাহেব।

অনিকে একবার অন্তরার দিকে তাকিয়ে রেগে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো কিছুক্ষণ পরই অন্তরাও আশেপাশে তাকিয়ে বলল,,ইয়ে মানে আমি একটু আসছি, এই বলে অন্তরাও রুমে চলে গেলো।
আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। আর্দ্র হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে উপরে চলে গেলো।
সবাই তো সবার মতো চলে গেলো এখন আমি কি করবো?? আংকেল আমিও গেলাম অনেক রাত হয়ে গেছে বাড়ি যেতে হবে আম্মু একা আছে।

না না তা কি করে হয় তুমি এতো রাতে একা কি করে যাবে বসো খেয়ে নাও তারপর আর্দ্র তোমায় দিয়ে আসবে।
কিন্তু আন্টি,,
কোনো কিন্তু নয় আসো আমার সাথে,,
এতোক্ষণ পরে পরশ কথা বলে উঠল, হাতের চিপস গুলো খেয়ে খালি প্যাকেটটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাতটা প্যান্টে মুছে বলল,,যাই মাম্মাম এর কাছ থেকে শুনে আসি বেবি কবে আনবে,আমি তো বেবির সাথে খেলবো,,, এই বলে ফুরুত করে দৌড়ে সিঁড়ি কাছে চলে গেলো।

এতোকিছুর পর এখন অনিক ভাইয়া আর আপু এক হয়েছে ওদের এখন একটু সময় দেওয়া উচিত এই বিচ্ছুকে থামাতে হবে নয়ত গিয়ে ভাইয়া আপু রোমান্স এর বারোটা বাজাবে,,, কথাটা মনে মনে বলে ইয়েনা দৌড়ে পরশের কাছে চলে গেলো পরশ ততক্ষণে মাঝ সিঁড়িতে উঠে গেছে এক পা এক পা করে,, ইয়ানা দৌড়ে পরশের কাছে যেতেই উপর থেকে নিচে নামতে আসা আর্দ্রর মাথার সাথে খেলো ধাক্কা।

উফ,, আল্লাহ! এবার আমি নিশ্চিত সৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলবো আমার মাথা শেষ, এটা মাথা নাকি পিলার।
সবসময় এমন ট্রেনের মতো ছোটো কেনো?? এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারো না,,,ইডিয়ট।
এই একদম ইডিয়ট বলবেন না এটা আপনার অফিস নয় যে আপনি যা খুশি বলবেন আর আমি তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হজম করবো আর আপনিই বা সব সময় আমার সাথেই কেনো ধাক্কা খান আশে পাশে এতো ধাক্কা খাওয়ার জিনিস ওতে খেতে পাননা??
তোমাকে,,আচ্ছা কিছু বললাম না শোনো তোমাকে কিছু বলার আছে।

হুম জানি কি বলবেন ধন্যবাদ দিবেন তো ও আমি জানি এসব কাজ আমার বা হাতের খেল এতে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই,, শুধু একটা সরি বললেই হবে , ভাব নিয়ে বলল ইয়ানা।
সবকিছুতেই তুমি একটু বেশি বেশিই ভাবো এতো অ্যাডভান্স ভাবা ঠিক নয় আমি মোটেও তোমায় ধন্যবাদ দেবো না,, এটাই বলতে চাইলাম যে কাল ঠিক টাইমে অফিসে চলে এসো নয়ত বেশি কাজ করতে হবে,,, আর হ্যাঁ এই আর্দ্র চৌধুরি কখনো কাউকে সরি বলে না আর তোমাকে তো একদমই না এই বলে আর্দ্র চলে গেলো।
এই লোকটারে মনে চাই,,আর কিছু বলার আগেই শুনতে পেলো পরশ অনিক আর অন্তরাকে ডাকছে,, মাম্মাম দরজা খোলো পাপ্পা কি হলো দরজা খোলো বলছি।
এই রে এই বিচ্ছুটা আবার কোন ফাঁকে চলে গেলো যায় নিচে আসি।

শুনুন গাড়ির এসিটা বন্ধ করে দিন আমার ঠান্ডা লাগছে।
ইয়ানার কথা শুনে আর্দ্র এসিটা আরো বাড়িয়ে দিলো।
আরে আপনি কি কানে কম শোনেন?? বললাম এসিটা অফ করে দিতে তা না করে আরো বাড়িয়ে দিলেন কেনো?? এখন রাত ১০ টা বেশি বেজে গেছে প্রায় বাইরে কি সুন্দর ঠান্ডা বাতাস সেটা অনুভব না করে আপনি কৃত্রিম ঠান্ডা অনুভব করছেন?? বাইরে বিশুদ্ধ প্রকৃত বাতাস।

হুম তোমার ওই ঠান্ডা বিশুদ্ধ প্রকৃত বাতাস এর সাথে ধূলাও আছে ওটা তোমার ভালো লাগতে পারে কিন্তু আমার নয়,, ওকে চুপচাপ মুখটা অফ করে বসে থাকো নয়ত গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবো।
নামিয়ে দিলেই কি আমি মনে হচ্ছে বাড়ি চিনি না নেহাত রাস্তায় কুকুর আর বাইরে অন্ধকার তাই আপনার গাড়িতে যাচ্ছি নয়ত যেতাম না হুম??
বিরবির করে না বলে যা বলার জোরে জোরে বলো।

কিছু না, আপনি মন দিয়ে গাড়ি চালান তো, বাড়ি গিয়ে আবার এক বস্তা বকা শুনতে হবে, উফ জীবনটা বেদনা।
তোমাকে সেই প্রথম থেকে বলছি এতো বেশি বকবক করো না, এখন হলো তো?? তোমার নাম ইয়ানা না রেখে মিস বকবক রাখা উচিত ছিলো।
হুমম যত দোষ এখন এই নন্দঘোষের, এখন সব দোষ আমার হয়ে গেলো নিজের গাড়ি খারাপ তা বলবে না শুধু শুধু আমার দোষ দিচ্ছেন,
তো তোমারই তো দোষ এখন এতো বকবক না করে হাঁটো আর তোমার এই বিশুদ্ধ বাতাস অনুভব করো সাথে ধূলা আর গাড়ির হর্ন ফ্রি।

করবোই তো আপনার মতো কি মাস্ক পরে থাকবো নাকি,,শুনুন মাঝে মাঝে না একটু আধটু এই প্রকৃতির মাঝে থেকে প্রকৃতিকে অনুভব করতে শিখুন নয়ত রোবট হয়ে যাবেন।
তোমার সাথে আসাই আমার ভুল হয়েছে নিহাত মা বললো তাই নয়ই তোমাকে নিয়ে আসার সময় আমার নেই শুধু বকবক করে ইডিয়ট ।
এই শোনেন আমার ও না আপনার সাথে আসার কোনো ইচ্ছে নেই নেহাত আন্টি বলল আর রাস্তায় কুকুর থাকে তাই জন্য আসলাম নয়ত আসতাম না।
ওকে এখন নিজের মুখটা বন্ধ করে হাঁটো রাত অনেক হয়েছে।
অন্ধকার রাত মনে হয় আমাবস্যা নয়ত এতো অন্ধকার কেনো হবে,, তবে রাস্তায় থাকা ল্যামপোস্টের আলোই ভালোই দেখা যাচ্ছে রাস্তা,, কিছুদূর হেঁটে যাওয়ার পর ইয়ানা আর্দ্র কে বলল,,
এখন তো আমি অফিসে নেই আর আপনিও আমার বস নন তাই একটা কথা বলবো মিস্টার আর্দ্র।
নো,
মনে হচ্ছে ওনার সাথে কথা বলার জন্য আমার ঘুম নেই যত্তসব,,

অবশেষে বাড়ি আসলাম আর্দ্র চলে গিয়েছে আমি দরজায় টুকা দিতেই আম্মু দরজা খুলে বকা শুরু করল, আসলে মায়েরা এমনি হয় সন্তানের জন্য যেনো তাদের চিন্তার শেষ নেই,, আমি আম্মু কে সবটা বুঝিয়ে বললাম তবুও রেগে আছে এতোরাত কেনো হবে আর কোনো খবরও দেয়নি তাই,, শেষমেশ আম্মু কে বুঝিয়ে ফোনটা দিয়ে সব দেখিয়ে দিলাম,,
শোনো এরপর যদি আমার আসতে দেরি হয় তাহলে আমি তোমায় ফোন করে বলে দেবো ওকে আর তুমি চিন্তা করবে না।
চিন্তা করো না বললেই তো হবে না চিন্তা করা লাগে না আপনা আপনি চলে আসে, যখন মা হবি তখন বুঝবি ওহ হ্যাঁ তোকে তো বলতে ভুলেই গেছি কালকে একটু তারাতারি বাড়ি আসতে পারবি।
কেনো??

আরে আমার চাচাত বোন আছে না ওর ছেলে সুহাগ,ও নাকি এখন ভালো একটা চাকরি করে মাসে চল্লিশ হাজার টাকা বেতন একটা কোন কোম্পানির ম্যানেজার পদে আছে।
ভালো তো ছেলে যখন হয়েছে তখন চাকরি তো করতেই হবে এতে আমি কি করবো এসব কথা আমাকে কেনো বলছো।
না মানে বলছিলাম কি কালকে ওরা তোকে দেখতে বসবে তাই তুই একটি যলদি আসবি।
আম্মু আমি তো তোমাকে বলেছি আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না দেরি আছে এখনো।
আরে দেখতে আসলেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না,, আার বয়স তো কম হচ্ছে না বিয়ে তো করতেই হবে।
আমি কি একবারও বলেছি যে বিয়ে করবো না করবো তো কিন্তু এখন না পরে,, কেবল চাকরিটা পেলাম আগে তোমাকে নিয়ে পুরা ঢাকা শহরটা ঘুরি আমার ছোট ছোট স্বপ্ন গুলো পুরোন করি তারপর।
কিন্তু,,

কোনো কিন্তু নয় তুমি ওনাদের আসতে বলো এসে বেড়িয়ে যাক তবে বিয়ে এখন আমি করবো না ওকে,, এখন চলো খেয়ে নেবে।
সকালে,,,,,,
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে না খেয়েই রোজাদের বাসায় চলে গেলাম নোট নিতে হবে আমি তো ভার্সিটিতে যেতে পারি না তাই ওর থেকেই নিয়ে পরতে হবে,,, নোট নিয়ে বাড়ি আসতে প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেলো গোসল সেরে কয়টা খেয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম অফিসে।
,, শোনো মিস ইয়ানা আমরা আজকে একটা নতুন প্রডাক্ট বাজারে লঞ্চ করেছি তাই সেটারই আজকে মার্কেটিং করবো,, আজকে বলো অনেকগুলো ফোন কল আসবে সবগুলা রিসিভ করে সুন্দর করে কথা বলে ওনাদের বুঝিয়ে বলবা ওকে।
ওকে স্যার।

প্রথম কয়দিন অফিসে এসে কাজ করে ভালোই লাগছিলো এতো অল্প কাজ সব কিছু আর্দ্র করে দিতো আমি শুধু আর্ধেক টা করতাম কিন্তু আমার আরামের দিন শেষ আজকে ফোনে কথা বলতে বলতে জীবন শেষ অনেক ক্লান্ত লাগছে মানুষ যে অফিস কেমনে করে কে জানে কাজ করছিলাম আর শুধু বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলাম কখন চারটা বাজবে আর আমি এখান থেকে ছুটি পাবো।
স্যার সবগুলা ফোনকল ধরা শেষ আপনি আমাকে যেগুলা কাজ দিয়েছিলেন সব কাজ শেষ এখন আমি গেলাম।
ওয়েট, এখানে পাঁচ টা ফাইল আছে আমি সব কিছু করে রেখেছি তুমি শুধু আবার প্রথম থেকে দেখবে যে সবকিছু ঠিক আছে কি না।
কিহ?? সারাদিন এতো কাজ করলাম এখন আবার স্কুলের মতো হোমওয়ার্ক দিচ্ছে এনাকে এখানে নয় স্কুলেই ভালো মানাবে।
একা একা বিরবির না করে ফাইল গুলো নিয়ে যাও এখান থেকে আমার সময় নষ্ট হচ্ছে এখনো অনেক কাজ বাকি।
আজকে একবার বাড়ি যান তারপর দেখাবো মজা,, আমার মাথায় আবার দুষ্ট বুদ্ধি তে ভরা।

কি হলো কিউটি পাই তুমি আজকে তোমার মুখটা অমন গোমরা করে রেখেছো কেনো??
কি আর বলব দুঃখের কথা তোমার চাচ্চুর জন্য জীবনটা আমার তেন্যাতেন্যা হয়ে গেলো কাজ করতে করতে।
ত্যানাত্যানা কি কিউটিপাই??
ত্যানাত্যানা হলো নাহ কিছু না তুমি পরো চাম্প।
ওকে,,

আমার গল্পে তুমি পর্ব ৭+৮+৯

মা আমার টাওয়াল টা বিছানার উপর রেখে যেও তো আমি কিছু বের না করেই শাওয়ার নিতে চলে আসছি।
এই ছেলেকে নিয়ে আমি কি করবো এতোবড় হয়ে গেলো তবুও সব কিছু আমাকেই এগিয়ে দিতে হয়।
একটা কাজ করেন মা আমাদের আর্দ্র কে এবার একটা বিয়ে করাই দেন তাহলে আপনাকে আর কিছু এগিয়ে দিতে হবে না,, এখন মায়ের আঁচল ধরে ঘোরে তখন বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরবে।

কি বলো অন্তরা তুমি চেনো না আর্দ্র কে ও কেমন,, আচ্ছা আমি এগুলো আবার দিয়ে আসি তুমি তরকারি টা দেখো কেমন??
আচ্ছা মা আপনি যান।
আচ্ছা চাম্প তোমাদের পুরো বাড়ির কলের মানে টিউবওয়েল শাওয়ার আর বাকি যা আছে এগুলো মেন লাইনটা কোথায়??
কোথায় আবার ছাদে, কেনো তুমি কি করবে??
কিছু না সোনা তুমি পরো আমি একটা কাজ করে আসছি।

,,,,সারা গায়ে ফেনা নিচে টাওজার পরা আর গলার সাথে টাওয়াল ঝুলিয়ে হাতে বালতি নিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে বাইরে আসছিলো আর্দ্র তখনি ইয়ানা পরশের রুমে ঢুকতেছিলো এমন সময় আর্দ্র সাথে ইয়ানার সামনা সামনি দেখা হলো একটুর জন্য ধাক্কা খায়নি।
আরে আপনি দেখি বাড়ির মধ্যে চলে আসছেন যান যান বাইরে যান এবাড়ির কেউই এখন বাথরুম পরিষ্কার করাবে না আপনি বরং অন্য বাড়ি দেখুন।

আমার গল্পে তুমি পর্ব ১৩+১৪+১৫