আমার গল্পে তুমি পর্ব ১৩+১৪+১৫

আমার গল্পে তুমি পর্ব ১৩+১৪+১৫
সুমাইয়া সুলতানা সুমী

আরে আপনি দেখি বাড়ির মধ্যে চলে আসছেন যান যান বাইরে যান এবাড়ির কেউই এখন বাথরুম পরিষ্কার করাবে না আপনি বরং অন্য বাড়ি দেখুন।
হোয়াট?? হাও ডেয়ার ইউ তোমার সাহস কী করে হলো আমার সাথে এভাবে কথা বলার ড্যামেইট।
আরে ব্যাস আমাদের দেশটা দেখি অনেক উন্নত হয়ে গেছে আজকাল ডোম রাও ইংরেজি তে কথা বলে, কিন্তু আপনার গলাটা না কেমন যেনো চেনা চেনা লাগছে ঠিক আমার ওই রাগী বসটার মতো।
তুমি কখনোই শুধরাবে না,,, এই বলে আর্দ্র নিজের মুখ থেকে ফেনা নিয়ে ইয়ানার সারা মুখে ফেনা দিয়ে মাখিয়ে দিলো।
আরে এটা কি করলেন আপনি??

এইতো এখনতো ঠিকি চিনতে পেরেছো, এতোক্ষণ নাটক টা না করলেই পারতে,,
মা মা,, ভাবি কোথায় থাকো সব আমার রুমের শাওয়ার অফ হলো কীভাবে??
কিরে এতো চেঁচাচ্ছিস কেনো,,,সেকিরে তুই এমন অর্ধেক গোসল করে ঘুরে বেড়াচ্ছিস কেনো??
আর ইয়ানা তুমিতো দেখি গোসল না করেই হাতে মুখে ফেনা নিয়ে রেখেছো।
স্টপ , তোমরা একটু চুপ করবে,, আমার রুমের শাওয়ার চলছেনা কেনো কে অফ করেছে??

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আহ আর্দ্র এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো দেখছি আমরা এতো চেঁচানোর কি আছে, তুই রুমে যা আমরা দেখছি।
আর শোনো ভাবি তোমার এই টিউশন টিচার কে বলে দাও যেনো পরবর্তী তে আমার সাথে যেনো লাগতে না আসে, এখন তো শুধু ফেনায় মুড়ায়ছি এরপর,,, থাক বললাম না,, আমি রুমে যাচ্ছি যলদি কল ঠিক করো আমি শাওয়ার নেবো।
হমমমম আমার বয়েই গেছে ওনার সাথে লাগতে আর আমাকে কিছু বললে আমি ছেড়ে দেবো নাকি।
এই তোমরা একটু বলবা কি হয়েছে আমার রুমে শাওয়ারটা হঠাৎ করে অফ হয়ে গেলো কেনো?? অনিক ও দরজা দিয়ে মুখ বার করে বলল ওর গায়েও ফেনা।

নিন এটারই বাকি ছিলো,,, কিচ্ছু হয়নি তুমি রুমে যাও মনে হয় কেউ ভুল করে লাইন অফ করে দিয়েছে।
অন্তরা তুমি রুমে গিয়ে অনিককে পানি দাও আমি রহিমকে(কাজের লোক) বলছি ছাঁদে গিয়ে দেখে আসতে,, আর ইয়ানা তুমিও গিয়ে মুখটা ধুয়ে নাও।
ঠিক আছে আন্টি।

এর মাঝে কেটে গেছে আরো কয়েকটা দিন এখনতো ওবাড়ির সবার সাথে ইয়ানার বেশ মিল হয়ে গেছে সবাই ইয়ানাকে বেশ ভালোবাসে শুধু মাএ আর্দ্র বাদে,, অনিক তো ইয়ানাকে ছোট বোন বলে আর ইয়ানা অনিককে এতো ঝুঁকি নিয়ে বাঁচিয়েছে সেটা জানার পরতো এখন সবাই আরো বেশি করে ইয়ানাকে চোখে হারায়, পরশতো তার কিউটিপাই বলতে অঙ্গান ইয়ানা বেশির ভাগ সময় এবাড়িতেই কাটায়।
আরে ইয়ানা থাক তুমি রান্না করছো কেনো তুমি আমাদের গেস্ট যাও ডয়িং রুমে গিয়ে পরশের সাথে বসে কার্টুন দেখো।
আপু আমি কি ছোট নাকি যে কার্টুন দেখবো,, আর সারা সপ্তাহে এই একটা মাএ দিনেই ছুটি পাই তাই দিনটা শুয়ে বসে থেকে নষ্ট করতে চাইনা,, ওহ হ্যাঁ আম্মু তোমাদের জন্য তিলের নারু দিয়েছে ব্যাগে রেখেছি দাঁড়াও আমি এক্ষুনি আনছি।
আরে আস্তে যাও ইয়ানা পরে যাবে তো,, এই মেয়েটাও না বড্ড বেশিই ভালো।

এ বাড়ির কারো দেখছি সময়ের কোনো জ্ঞানই নেই সেই কখন কফি চেয়েছি এখনো আসার নামে খোঁজ নেই আমাকেই কিচেনে গিয়ে দেখে আসতে হবে কফি কতদূর।
এই কিউটিপাই আস্তে আসো নইলে চাচ্চুর সাথে বিশাল সংঘর্ষণ হবে,, এই এই যাহ বলতে বলতে ধাক্কা লেগেই গেলো,,, কান হাত দিয়ে বসে থাকি এখনি শুধু হবে দু পক্ষের বিশাল লড়াই।
তোমার নাম মিস বকবক এর সাথে চলন্ত ট্রেন রাখাও উচিত ছিলো,, এটা বাড়ি এখানে একটু আস্তে হাঁটতে পারো না?? না সেই ঘুরেফিরে আমার উপরেই পরবে।

এই শুনুন আমার মাথাটা কি আপনার কাছে নারকেল মনে হয় যে আমি ইচ্ছে করে লোহার সাথে ধাক্কা মারবো যেনো ফেঁটে যায়,,, আপনার গায়ে গোশত বদলে শুধু হাড় মনে হয়,, উফ আমার কপালটা আলু হয়ে গেলো।
তোমার সাথে ফাও পেচাল পারার সময় আমার নেই সরো সামনে থেকে,, ভাবি আমার কফিটা কোথায়।
আমার ও যেনো ওনার সাথে কথা বলার জন্য ঘুম নেই হুম??
একি চাম্প তুমি এভাবে কানে হাত দিয়ে বসে আছো কেনো?? এদিকে যে ফোন বাজছে শুনতে পাচ্ছো না??
ওহ তোমাদের ঝগড়া শেষ?? আচ্ছা আমি ফোনটা ধরছি,, হ্যালো পরশ স্পিকিং।
,,,,,,,,,,,, ওপাশে।
কিহ কবে??

আচ্ছা আমি সবাইকে বলে আসছি,,, না কাউকে ফোন দেবো না আমি এখন রাখছি।
কে ফোন দিয়েছিলো চাম্প??
সরো সরো মাম্মাম কে বলতে হবে যে লিজা পিজ্জা আসছে,,
এই লিজা পিজ্জা টা আবার কে?? কি জানি হবে হয়ত কেউ,, যায় নারু গুলো নিয়ে আপুকে দিয়ে বাড়ি যায় অনেক্ক্ষণ হলো আসছি।

এই নাও আপু নারু আমি তাহলে যায় বলো অনেকক্ষণ হলো আসছি এবার বাড়ি না গেলে আম্মু রাগ করবে।
সেকি এখনি চলে যাবা?? না না এখন যাওয়া হবে না আমার কথায় যেমন এসেছো তেমনি আমার কথায় যাবা ওকে।
কিন্ত,,,,
কোনো কিন্তু নয় চুপ করে বসে থাকো।
সে নাহয় থাকলাম,, আচ্ছা আপু এই লিজা পিজ্জা টা কে??
তোমাকে নিশ্চয়ই পরশ বলেছে?? এটাকে নিয়ে যে কি করি আসলে লিজা হলো আমার শশুর মশায়ের একমাএ বন্ধুর একমাএ মেয়ে আর তোমার বস মানে আর্দ্রর বন্ধু।
বাবাহ ওনার আবার বন্ধুও আছে?? ভাবা যায়।
তোমার এতো ভাবা লাগবে না তুমি বরং এই কফিটা আর্দ্র কে দিয়ে আসো অনেকক্ষণ আগে কফি চেয়েছে এবার না দিলে তুলকালাম বাঁধাবে।

তুমি কি আমাকে মারার প্ল্যান করেছো আমার এতো তারাতারি মরার সখ নেই তোমার দেবর কে তুমিই কফি দিয়ে আসো আমি পারবো না বাবা।
প্লিজ বাবু একটু দিয়ে আসো আমি রান্নাটা নামিয়ে আবার রুমে যেতে হবে তোমার ভাইয়া ডাকছে।
আমি যাবো???
হুুমম তুমিই যাবে আর আমার দেবর বাঘ না ভাল্লুক যে তোমাকে খেয়ে ফেলবে,, এই নাও কফি আর যাও দিয়ে আসো, আমার অনেক কাজ আছে,, মা ও নেই যে ওনাকে বলবো।
কি আর করার ইয়ানা শেষ মেষ এই ছিলো তোর কপালে যাহ আবার একটা ঝড় সামলানোর জন্য তৈরি হয়।

এই যে মিস্টার এই নিন আপনার কফি এখানে রেখে গেলাম।
আস্তে আমি কাজ করছি দেখতে পারছো না,, চুপচাপ কফি রেখে চলে যাও।
আমার এখানে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই হুমম??
ইয়নার কথায় আর্দ্র রেগে বিছানা থেকে নেমে ইয়ানার একদম কাছে এসে ইয়ানাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল।
মিস বকবক তোমার এই বকবকানি আমার সামনে একদম দেখাবে না নয়ত।
ত,,,তো নয়ত ক,,কি কি করবেন।
কি করবো সেটা সময় হলেই বুঝবে,,।
ক,,কিচ্ছু করতে পারবেন না, আর আপনি আমার এতো কাছে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো দূরে যান আমার কেমন যেনো লাগছে।
কেমন লাগছে?? মুখটা আরো এগিয়ে এনে ভ্রু কুঁচকে বলল আর্দ্র।
সেটা আপনাকে বলবো কেনো আপনি সরুন তো সামনে থেকে দূর যান একদম অনেক দূরে এভাবে হুটহাট আমার কাছে আসবেন না।

এই শোনো তোমার মতো মেয়ের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই ওকে সো অন্যকিছু ভাবা বাদ দাও।
আমি মোটেও অন্য কিছু ভাবছি না আপনি বরং অন্য কিছু মিন করছেন।
বাদ দাও তোমার সাথে কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই,, গেট আউট,, আর হ্যাঁ যাওয়ার আগে দরজাটা দিয়ে যাবে।
পারবো না পারলে নিজে দরজা দিয়ে আসেন ওফ আজকে একটুর জন্য হাঁটুফেল থুরি হার্টফেল করছিলাম,,।
মিস ইয়ানা এই সোমবার তোমাকে আমার সাথে বান্দরবান যাওয়া লাগবে, কেননা ওখানের আমাদের কোম্পানির নতুন কাজ শুরু হয়েছে সেটা দেখতে প্লাস তাদের কে ইন্সট্রাকশন দেওয়ার জন্য সো তুমি সেই অনুযায়ী পেপারেশন নিয়ে রাখো, এখন যাও এখান থেকে।

এটা কেমন কথা যাও বললেই তো আর যাওয়া যায় না আর হুট করে এভাবে কিভাবে আমি একা একটা মেয়ে আপনার সাথে যাবো, বলা তো যায় না যদি আপনি আমার সুযোগ নেন তাহলে।
হোয়াট,, আমি সুযোগ নেবো?? তাও আবার তোমার?? কি আছে আছে তোমার মাঝে?? আর তাছাড়া তোমাকে চাকরির আগেই বলা হয়েছে যে কাজের প্রয়োজনে তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে,, আর মোটেও আমরা দুজন যাচ্ছি না আমাদের সাথে ম্যানেজার সাহেব ও যাচ্ছে,,।

আমার প্রবলেম আছে আমি যেতে পারবো না।
সেটা বললে তো হবে না মিস ইয়ানা,, তোমাকে তো যেতেই হবে, চাকরি নেওয়ার সময় কিন্তু তুমি এইসব শর্ত মেনেই চাকরিতে জয়েন করেছিলে সো এখন পিছুপা হলে চলবে না,, তোমার অফিস আওয়ার শেষ এখন যাও বাড়ি গিয়ে বান্দরবান যাওয়ার প্রেপারেশন নাও,, আউট।
আমি,,,ধ্যাত কিছু বলবোই না সব সময় ওনি যা বলবে সেটাই হবে নাকি, মাকে এভাবে একা রেখে আমি যাবো কি করে কিন্তু সেটা তো এই গাম্বাট রাগী মার্কা লোক বুঝবে না কি আর করার। এখন মাকে কীভাবে বোঝাবো সেটাই দেখার বিষয় মনে হয় না মা রাজি হবে।

আরে ওই তো ইয়ানা চলে আসছে, ইয়ানা দেখ কারা এসেছে তোর খালামানি,, সেই কখন এসেছে তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলো।
বাব্বাহ আমার দেখা সেই ছোট্ট ইয়ানাটা কত্তবড় হয়ে গেছে আয় আমার কাছে আয় বস,, তা কি করছিন এখন।
এই ছোটখাটো একটা জব করি আর একটা টিউশনি করি,,, আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি ওকে??
আচ্ছা ঠিক আছে যা।
ওফফ বাপরে অনেক কাজ করেছি আজকে মনে হচ্ছে এখনি শুয়ে একটা লম্বা ঘুম দিই বড্ড ক্লান্ত লাগছে,, বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে বলল ইয়ানা।

আরে সরি সরি তুই এসে গেছিস আমি ঠিকই পাইনি নক না করেই রুমে আসার জন্য সরি।
আপনি তো অলরেডি রুমেই ছিলেন কিন্তু বারান্দায়,, কে আপনি আর এখানে কি করছেন,, শুয়া থেকে উঠে বসে বলল।
সিরিয়াসলি তুই আমাকে চিনতে পারিসনি?? আর পারবিও কীভাবে সেই কবে আমাকে দেখেছিস আসোলে আমিও প্রথমে তোকে চিনতে পারিনি পরে ছবি দেখে চিনেছি,, হায় আমি সুহাগ তোর মায়ের চাচাতো বোনের একমাএ ছেলে।
ওহ আপনি সুহাগ ভাইয়া?? আমিতো চিনতেই পারিনি,, বসুন ।

তোকে না বলেই তোর রুমে এসে গেছিলাম ভাবলাম তোকে সারপ্রাইজ দেবো তারপর দেখি টেবিল ভর্তি উপন্যাস তাই এখান থেকে একটা নিয়ে বারান্দায় বসে পড়ছিলাম,, তা এতো উপন্যাস কেনো প্রেমে টেমে পড়েছিস নাকি।
কি যে বলেন আমি আর প্রেম এটাও সম্ভব নাকি,, আচ্ছা আপনি বসুন আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি একটু পড়ে আবার পড়াতে যেতে হবে।
বাবা এতো পরিশ্রমী ভালো ভালো।
জীবনে ভালো থাকতে হলে একটু পরিশ্রম তো করতেই হবে,, কেউ তো আর এসে বলবে না যে এই নাও টাকা তোমরা কিছু কিনে খেয়ো।
তোর সাথে যু্ক্তিতে আমি পারবো না তুই বরং ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নে আমিও তো বাড়ি যাবো যাওয়ার পথে তোকে নামিয়ে দিয়ে যাবো।
ওকে।

আরে আমাদের ইয়ানা চলে এসেছে যে এসো ভিতরে আসো।
আপু তুমি এই শরীল নিয়ে আবার দরজা খুলতে গেলে কেনো বাড়িতে কি আর কেউ নেই??
আরে কেবল তো পাঁচ মাস আমি এখনো অনেক স্টং,, আর এই সময় বেশি হাঁটাহাটি করতে হয়, যখন তুমি পেগনেন্ট হবে তখন বুঝবে।
নানা আমি বিয়েই করবো না পেগনেন্ট তো দূরের কথা, তা আমার স্টুডেন্ট কোথায় রুমে নিশ্চয়ই।
ও রুমে থাকা মানুষ,, বান্দা দেখো গিয়ে আর্দ্র রুমে বসে গেম খেলছে, একটু পর আর্দ্র চলে আসবে তার আগেই ওকে ওই রুম থেকে বার করে নিয়ে আসো নইলে আর্দ্র এসে ভীষণ রাগ করবে।
হুম সে আর আমি জানি না,, আচ্ছা আমি যাচ্ছি।

নানা কিউটিপাই এটা করো না চাচ্চু দেখলে ভীষণ রাগ করবে,,।
,,আরে এতো ভয় পাচ্ছো কেনো আমি আছি তো কিচ্ছু হবে না আর ওনি তো জানতেই পারবে না যে ওনার ছবিতে গোঁফ টা আমিই এঁকেছি।
,,,ওহ রিয়েলি আমি জানতেই পারবো না??
,,এইরে হয়ে গেলো,, আমি গেলাম তুমি আসো,, এই বলে পরশ ফুরুত করে দৌড়ে চলে গেলো।
,,,আরে এই চাম্প দাঁড়াও যাহ চলে গেলো,, এখন তোর কি হবে ইয়ানা সময় থাকতে পালা।
ইয়ানা আর্দ্রর বিছানা থেকে নেমে যেই দৌড়ে বাইরে যেতে যাবে তখনি আর্দ্র ইয়ানার হাত মুচড়ে পিছনে ধরলো ইয়ানার পিঠ আর্দ্রর বুকের সাথে লেগে আছে।

আহ,, আরে কি করছেন ছাড়ুন আমার লাগছে তো ছাড়ুন বলছি।
,,লাগার জন্যই তো ধরেছি,, তোমাকে বলেছি না যে আমার জিনিসে হাত দেবে না তবুও তুমি এটা করার সাহস পেলে কীভাবে।
আসোলে আমি পরশকে ডয়িং শিখাচ্ছিলাম তাই আর কি।
তোমাকে রাখা হয়েছে চাম্পকে পড়ানোর জন্য ডয়িং শিখানোর জন্য অন্য কেউ আছে আর তাছাড়া ডয়িং করার জন্য বোর্ড কাগজ সব কিছুই আছে তাহলে আমার ছবিটা নষ্ট করলে কেনো??
সরি, আমার হাত ছাড়ুন।
গুড,, ফারদার যদি কখনো তোমাকে আমার জিনিসে হাত দেওয়া দেখি তাহলে তোমার খবর আছে আর এটা তোমার লাস্ট ওয়ার্নিং বুঝেছো, এবার যাও আউট।
ওনি সব সময় আমাকে বেথ্যা দেন কষ্ট দিয়ে কথা বলে আরে আমি কি মানুষ নয়,, এরপর থেকে আর ওনার সাথে কথায় বলবো না ওফ আমার হাত।

কিউটিপাই চাচ্চু কি তোমাকে মেরেছে??
কেনো?? মারবে কেনো আর আমি তোমার চাচ্চুকে ভয় পাই নাকি।
তাহলে তুমি তোমার মুখটা অমন করে রেখেছো কেনো, আচ্ছা যাও আমি চাচ্চুকে বকে দেবো।
নিজেরি ওনাকে দেখলে প্যান্ট খারাপ হয়ে যায় সে নাকি আবার বকে দেবে,, আচ্ছা ঠিক আছে এখন পড়ো।

পরশকে পড়ানোর শেষ করে ইয়ানা পরশের রুম থেকে বার হয়ে কেবলি নিচে নামবে তখনি আর্দ্রর বুকের সাথে ধাক্কা খেলো,,ধাক্কা লাগার পরেও ইয়ানা কিছু না বলে চলে যাচ্ছিলো তখনি আর্দ্র বলল,,,সূর্য আজকে কোন দিকে অস্ত গেলো মিস বকবক আজকে এতো চুপ কই গেলো তার এতো বকবকানি,, আর্দ্র কথার কোনো প্রতিবাদ না করে ইয়ানা চলে যেতে গেলে আর্দ্র আবারও বলল,,যাক এতো দিনে আমার কানটা বাঁচলো,,এবার নিশ্চয়ই বুঝে গেছো যে আর্দ্র চৌধুরী সাথে লাগতে এসে কতটা ভুল করেছো,, এখন থেকে এভাবেই চুপ থেকে আমায় সম্মান দিবে ওকে আর এরপর থেকে আমার পিছে লাগতে আসবে না এখন যাও ভিতু একটা।

এবার আর ইয়ানা নিজেকে চুপ রাখতে পারলো না আর্দ্রর দিকে তেড়ে গিয়ে মুখোমুখি দাঁড়ালো যদিও ইয়ানা আর্দ্র বুক অবধি তবুও মুখের উপর আঙুল তুলে বলল,,এই এই আপনার সম্যসাটা কি হ্যাঁ আমি চুপ আছি এটা সহ্য হচ্ছে না?? আর হবেই বা কীভাবে আপনি তো আস্ত একটা অসহ্য আর হ্যাঁ আমি মোটেও ভিতু নয় আমার কোনো ইচ্ছেই নেই আপনার সাথে কথা বলার বুঝেছেন মিস্টার আর্দ্র চৌধুরী,,, রেগে একসাথে এতো গুলো কথা বলায় ইয়ানা হাঁপিয়ে গেছে।
আরে রিলাক্স আস্তে এতো বেশি রাগ ভালো নয় চুপচাপ বাড়ি চলে যাও রোজ রোজ আমি তোমার ড্রইভার গিরি করতে পারবো না ওকে।

মেঘে ঢাকা আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে গাড়ি, এইসব পাহাড়ি রাস্তায় যে সে ড্রাইভ করতে পারে না অভিজ্ঞ ড্রাইভার ছাড়া,, আর্দ্র সামনে বসেছে আর ইয়ানা এবং ম্যানেজার পিছনে,, ইয়ানা সারা রাস্তা গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দেখতে দেখতে এসেছে, যতই কাজের জন্য আসা হোক ফাস্ট টাইম আসলে ফিলিং টাই অন্যরকম খুব ইচ্ছে করছে , শৈল প্রপাত, প্রান্তিক লেক, বগালেক, কেওক্রাডং, তজিংডং, মিরিঞ্জা, রিজুক জল প্রপাত, নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র, নীলগিরি, স্বর্ণমন্দির, ক্যওজাদি পাহাড়, আলীর সুড়ঙ্গ, তিন্দু পাথর ছড়া, রাইংখং পুকুর আরো যতসব দর্শনীয় স্থান আছে সব গুলি একেবারে দেখে তারপর যায়, না না মন চাচ্ছে এখানে পাহাড়ের উপর ছোট্ট একটা কুঠির বানিয়ে ওখানে সারাজীবন থেকে যায়,, উফফ এতো সুন্দর কেনো পৃথিবী,, কিন্তু আমর এতোসব কিছুই দেখা হবে না কেননা তিন দিনের জন্য আসা আর আমি জানি এই তিনদিন আমার গাম্বাট রাগী বস কাজ ছাড়া কোথাও যাবে না,, ইস আজকে যদি একটা কাজের বর থাকবো তাহলে তাকে নিয়ে সবকিছু দেখতাম।,

আমাদের হোটেলে পৌঁছাতে প্রায় বিকেল হয়ে গেলো আর্দ্র স্যার তিন জনের জন্য তিনটা রুম নিয়েছে,, তিনটা রুমের কি দরকার ছিলো দুটো নিলেই তো হতো, একটায় আমি আর একটা ওনারা দুজন কিন্তু না ওনি আবার কারো সাথে নিজের বেড শেয়ার করে না ঢং,, আমি আমার রুমে এসেই ব্যাগটা বিছানায় ফেলে ব্যালকণিতে চলে গেলাম,, সেকি এক অপরূপ দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে গেলো,,, পাশে তাকিয়ে দেখি আর্দ্র স্যার, তারমানে আমার পাশের রুমটা ওনার,, এখন একটু বিশ্রাম নিয়ে ঘুমিয়ে নাও রাতে আমি সব কাজ বুঝিয়ে দেবো আর সকালে আমাদের মিটিং আছে।

এতোক্ষণ একটা মুডে ছিলাম কিন্তু ওনার কথায় সব ফুস হয়ে গেলো,, আমি মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ রুমে এসেছেই বেডে সটান হয়ে শুয়ে পড়লাম সাথে সাথে আমার চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে আসলো।,ঘুম ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ভাঙ্গলো সন্ধ্যার ও পর,, আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে সোফায় বসে হালকা কিছু খেয়ে আর্দ্র স্যার এর অপেক্ষা করতে লাগলাম বেশ কিছুক্ষণ পরই ওনি আসলেন।
যাক রাইট টাইমে এসেছো আচ্ছা তাহলে শুরু করা যাক শোনো,
, আরে দাঁড়ান আগে ম্যানেরজার স্যার তো আসুক তারপর নাহয় শুরু করবেন।
ম্যানেজার আসবে না,, ওনি চলে গেছে।

আর্দ্র কথা শুনে আমার চোখ কোটোর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম ম্যানেজার স্যার চলে গেছে মানে??
মানে হলো এখানে আসার পর ওনার ফোনে ফোন আসে ওনার ওয়াইফ সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে অনেক আঘাত পেয়েছেন মাথায় তাই ওনি চলে গেছেন।
কিহ ওনি চলে গেলো আর আপনি আমায় জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না,,।

কীভাবে জানাবো তুমি তো এসেই ঘুমায় গিছিলে,, এতো কথা না বলে কাজের কথা শোনো,,, কাল সকালে আমার একটা পেজেন্টেশন আছে আর সেটা তুমি তৈরি করবে আর,, এভাবে অদ্ভুদ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো?? পরে যদি বলো যে বোঝোনি তখন আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম।
তারমানে এই তিনটা দিন ওনার সাথে একা থাকতে হবে, ওনি যতই ভালো হন তবুও ভয় করছে এভাবে কীভাবে ওনার সাথে থাকবো,,।
কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না.

জ,,জি শোনেছি আপনি বলুন,, তারপর ওনি আমায় পুরো কাজ বুঝিয়ে দিলেন, পুরোটা সময় ওনি ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কথা বলেছিলেন আর আমি একবার ওনার দিকে তো একবার ল্যাপটপের দিকে তো আবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম আমার সব কিছু ঠিক আছে কি না,, প্রায় অনেক সময় ধরে ওনি আমায় বোঝালেন।
ডিনার করে একেবারে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো আর হ্যাঁ কেউ দরজা খুলতে বললে খুলবে না ওকে।
কেনো আপনি কোথায় যাচ্ছেন??

কেনো তুমি তো আমায় বিশ্বাস করতে পারছো না তাহলে আমি থাকলেই কি আর না থাকলেই কি,, থাকলে যদি আবার উল্টা পাল্টা কিছু করি, তুৃমি তো এটাই ভাবো,, বাইরে যাচ্ছি।
ওনি নিজে একা একা এই রাতের শহরের সুন্দরর্য উপোভোগ করবে আর আমি আবাল এর মতো একা একা রুমে বসে থাকবো ধ্যাত,, ।

এসেই ঘুমাইছিলাম বিধায় এখন আর ঘুম পাচ্ছে না তাই ব্যালকণিতে বসে আছি, ওনার রুম অন্ধকার মনে হয় এখনো আসিনি কোথায় গেছে কে জানে, আচ্ছা আমি ওনাকে নিয়ে এতো ভাবছি কেনো ওনি যেখানে খুশি যাক তাতে আমার কি হুমম,, একটু আগেই মায়ের সাথে কথা বলেছি তাই ফোনে গান দিয়ে ফোনটা পাশে রেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে সময়টা অনুভব করছিলাম, তখনি পাশের ব্যালকণির দরজা কোলার আওয়াজ আসলে তাকিয়ে দেখি আর্দ্র পরনে থ্রী কোয়াটার প্যান্ট আর গায়ে লাল রঙের একটা টিশার্ট চুল গুলো এলোমেলো , ফর্সা গায়ে লাল রংটা ভালোই মানিয়েছে তাই জন্যই আমিও কেমন হাবলার মতো ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।
কাল নয়টার মধ্যে রেডি হয়ে থাকবে দশটা থেকে মিটিং অনেকটা পথ যেতে হবে বোঝেছো??

ওনার কথায় আমার হুশ ফিরলো আমি মাথা নারিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে থেকেই হ্যাঁ বললাম, ওনি ব্যালকণির রেলিং ধরে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,,, অনেক রাত হয়েছে এভাবে বসে না থেকে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো যাও কাল সকাল সকাল উঠতে হবে।
ধ্যাত ভালো লাগে না ভালো করে সময়টা অনুভব করতেই দিলো না ওনাকে বকতে বকতে রুমে চলে আসলাম কি করবো ঘুমতো আসে না তবুও চোখ বন্ধ করে বেডের উপর ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকলাম এভাবেই কখন ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পারি নাই,,, সকালে সাংঘাতিক একটা স্বপ্ন দেখে লাফিয়ে উঠে বিছানার উপর বসে পড়লাম।

আমার গল্পে তুমি পর্ব ১০+১১+১২

এ আমি কি স্বপ্ন দেখলাম এটাও সম্ভব?? আমি এতো দিন স্বপ্নে যাকে দেখতাম সে আসলে আর্দ্র স্যার?? আজকে তার মুখটা দেখলাম হায় হায় এটা কেমন করে হলো,, ওনিই কেনো দেশে কি আর কোনো ছেলে ছিলো না শেষ মেষ ওনাকেই আমার স্বপ্নে আসতে হলো,, আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমার ভিলেন এ পরিনত হলো
সারাদিন ওনার সাথে কাজ করার পর বিকেলের দিকে কাজ শেষ হয়ে গেলো আর এই পুরোটা সময় আমি থেকে থেকে শুধু ওনার দিকে তাকাচ্ছিলাম, চারটার মধ্যে আমরা হোটেলে ফিরে আসলাম রাত হতে এখনো অনেক সময় বাকি এতোটা সময় কি করবো আর সাহস করে ওনাকে বলতেও পারছিনা যে স্যার চলুন একটু ঘুরে আসি, এটা বললেই গম্ভীর কণ্ঠে বলবে আমরা এখানে কাজ করতে এসেছি কোনো ট্যুরে আসিনি সো এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো হম???

আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে বাইরে আসলাম আশেপাশে একটু ঘুরে দেখার জন্য আর্দ্র স্যার হয়ত রুমে,,, থাক ওনি ওনার মতো আমি আমার মতো ঘুরি ওনাকে লাগবে না,,, হোটেলের সামনের দিকে হাঁটছিলাম তখনি দেখি একটা ক্যাপল মনে হয় নতুন বিয়ে হয়েছে হানিমুনে এসেছে, কেমন একজন আরেকজন এর হাত ধরে রেখেছে ওনাদের জিগাস করলাম যে কোথায় গিয়েছিলো বলল নীলগিরি,, এটা শুনার সাথে সাথে এক বালতি আফসোস হতে লাগল কেনো আমি বিয়ে করলাম না বিয়ে করলে আমিও এমন বর নিয়ে ঘুরতে পারতাম আফসোস নিয়ে হাঁটতে ছিলাম তখনি মেঘ ভেঙ্গে ভারি বর্ষণ শুরু হয়ে গেলো,, বৃষ্টি আসার কোনো নিদিষ্ট সময় নেই তবুও আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আমার মন ভালো করতেই মেঘেরা সব এক জোট হয়ে বৃষ্টি স্বরুপ আমার উপর পরছে,,আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে দুহাত সামনে বাড়িয়ে দিয়ে ভিজতে লাগলাম।

মিটিং থেকে ফিরেই আর্দ্র ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলো সারা দিন এতো বকবক করেছে যে ওর মাথা ধরে গেছে প্রায় অনেক সময় ঘুমিয়েছে হঠাৎই রুমের দরজায় নক করার শব্দে ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো শুয়ে থেকে উঠে বসে বলল,,দরজা খুলায় আছে ভিতরে আসুন , তখনি হোটেলের একজন লোক এসে বলল।
স্যার আপনার ওয়াইফ হোটেলের বাইরে অঙ্গান হয়ে পরে আছে। ,
হোয়াট?? আমার ওয়াইফ মানে??
আসোলে কালকে আপনার সাথে যে মেয়েটা আসলো মানে ওনিতো আপনার ওয়াইফ ওনিই অঙ্গান হয়ে পড়ে আছে জলদি যান।
ইয়ানা?? ওর আবার কি হলো হঠাৎ করে।

আমার গল্পে তুমি পর্ব ১৬+১৭+১৮