আমার তুমি পর্ব ২২

আমার তুমি পর্ব ২২
জান্নাত সুলতানা

-“বারণ করে ছিলাম না রান্না ঘরে না যাওয়ার জন্য?”
সাদনানের এমন ক্ষিপ্ত কণ্ঠে প্রশ্নে প্রিয়তা ভয়ে আরও একদফা ভায়ে গুটিয়ে গেলো নুইয়ে রাখা মাথা টা আরও নুইয়ে নিলো।
অতঃপর মিনমিন করে বলল

-“এখন তো পরীক্ষা শেষ।
তাছাড়া আমি তো এখন বউ এ বাড়ির।”
-“পরীক্ষা শেষ আমি যেতে বলেছি?”
সাদনান শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।
প্রিয়তা এবার মাথা তুলে তাকালো সামনে শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরিহিত সুদর্শন পুরুষ টার দিকে।
মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট চুল অগোছালো দেখেই বোঝা যাচ্ছে সারা দিন বেশ দখল গিয়েছে মানুষ টার উপর দিয়ে।
সাদনান প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাগ তার পড়ে গিয়েছে তবে আজ একটু শক্ত কথা বলতেই হবে।
পরীক্ষা চলাকালীনও প্রিয়তা টুকটাক কাজ করছে। সাদনান দেখেছে সেটা।
কিন্তু তাতে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু সমস্যা হলো দাদি।
সাদনান চোখে তেমন কিছু পরে নি কিন্তু সে শুনেছে সারা নিকট হতে।
দাদি প্রিয়তার পড়া লেখা নিয়ে ঝামেলা করেছে সাথে ওকে দিয়ে কাজ টাও করায়।

বউ তার ভীষণ ছোট তাই সে বউকে না হয় তাই একটু বেশি যত্ন করে এতেও তার দাদির সমস্যা।
এটাও নিয়ে নাকি সে দিন প্রিয়তা কে অনেক কথা শুনিয়েছে এটাও প্রিয়তা বলেনি সারা বলছে।
প্রিয়তা কোনো কথা সাদনান কে জানায় না।
কিন্তু সাদনান সে তো এসব জানা কোনো ব্যাপার না।
সাদনানের ভাবনার মাঝেই প্রিয়তা মিনমিন করে উত্তর দেয়

-“না। ক,,,,
-“এই আমি না করি নাই?
তাহলে কেন গিয়েছো?”
-“বউ আমি এ বাড়ির।”
-“সময় চলে গিয়েছে?
সারা জীবন পড়ে আছে। তাছাড়া মা, ছোট মা রান্নাঘরে করলে সাথে কাজের লোক সাহায্য করে।
তো তোমার সময় উল্টো কেন?
তুমি নাও না কেন?”

-“আমাকে তো দাদ,,,,
প্রিয়তা হঠাৎ থেমে গেলো।
সে চায় না কোনো ঝামেলা হোক।
তাই কথা ঘুরাতে শান্ত হয়ে সাদনানের বাম গালে নিজের ডান হাত টা রেখে ধীরে কন্ঠে বলল
-“আচ্ছা আর কাজ করবো না।
মন দিয়ে পড়বো। আর যদি কাজ করি তো কাজের লোক এর সাহায্য নেবো।”
সাদনান শুনলো। কিন্তু মনে হয় না আমলে নিয়েছে।
সে প্রিয়তার হাত টা গাল থেকে নামিয়ে ওয়াশ রুম যেতে যেতে বলল

-“কফি।”
কথা শেষ সাদনান পাঞ্জাবি এক টানে খুলে সে টা সোফায় ছুঁড়ে ফেলে চলে গেলো।
প্রিয়তাও গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে সোফা হতে পাঞ্জাবি টা তুলে সেটার নাকের সামনে ধরে লম্বা একটা শ্বাস টেনে নিলো।

ঘামের গন্ধ নেই।তবে পারফিউম আর সাদনানের শরীর গন্ধ টা প্রিয়তার নিকট বেশ লাগে।
সে এটা সব সময় করে তবে সেটা সাদনান এর অগোচরে।
কিন্তু আজ হয়তো আর সেটা লুকায়িত রইলো না।
সাদনান খট করে আবারও ওয়াশ রুমের দরজা খুলে তখন বেড়িয়ে এলে সে টাওয়াল নেয় নি।
কিন্তু এখানে এসে এরকম একটা দৃশ্য দেখবে সে ভাবতেও পারে নি।
প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে ছিল হঠাৎ আওয়াজ পেয়ে সে চোখ খোলে সামনে সাদনান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোর ধরে পরে যাওয়ার মতো করে মাথা নুইয়ে কাচুমাচু
ভঙ্গিতে মিনমিন করে সাফাই গাওয়ার মতো করে বলল

-“দেখছিলাম ধুতে হবে নাকি।”
-“জিজ্ঞেস করি নি।”
সাদনান নির্লিপ্ত জবাব।
অতঃপর সে এগিয়ে গিয়ে ব্যালকনি হতে টাওয়াল নিয়ে পুনরায় ওয়াশ রুম চলে গেলো।
প্রিয়তা মুখ ভেংচি কেটে বিরবির করে বলে উঠে
-“আসার আর সময় পায় নি এখুনি আসতে হলো?”

রাহান কে সাদনান আজ সোজা মির্জা বাড়ি আসতে বলেছে।
তার কারণ রাহান ভীষণ ঘুমকাতুরে এই ছেলে যদি আজ নিজের বাড়ি যায়। তাহলে কাল দশ টার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারবে না।
কিন্তু কাল সকাল সকাল নির্বাচন কমিশন অফিস যেতে হবে।
আর সাদনান এর বাম হাত রাহান।
সে সুবাদে রাহান কে সাদনানের সাথে থাকা জরুরি।

কিন্তু এই ছেলে আজ বাসায় গেলে আর কাল সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারবে না।
তাই সাদনান রাহান কে ফোন করে আজ মির্জা বাড়ি আসার জন্য বলেছে।
সারা সোফায় বসে টিভি দেখছিল।
সাথে সুফিয়া বেগম আছে। আয়না শাশুড়ীর রুমে।
আম্বিয়া মির্জাও সেই যে রুমে গিয়েছে আর বেড় হয় নি এর মধ্যে। রাত আটটার মতো বাজে পুরুষ কেউ এখনো বাড়ি আসে নি।

আর সবাই বাড়ি এলে যে আজ একদফা করবে আম্বিয়া মির্জা এতে কোনো সন্দেহ নেই।কিন্তু সাদনান এর সামনে টিকতে পারলে হয়।কারণ দোষ টা সম্পুর্ণ ওনার।
এই বাড়ির বউ শুধু রান্না করে আর সব কাজের লোক হাতে হাতে এগিয়ে দেয়। সেখানে আজ তিনি প্রিয়তা কে দিয়ে সব করিয়েছে। যদিও আগে ততটা কাজ করতে বলে নি এই যা।তবে আজ একটু বেশি করেছে অবশ্য একটু নয় অনেক টা বলা চলে।

সামনে টিভি চলছে ঠিক কিন্তু সারা সে দিকে ধ্যান নেই সে তো আনমনে কিছু ভেবে চলছে।
আর ওর ভাবনার মাঝেই কখন সুফিয়া বেগম চলে গিয়েছে সে টেরও পায় নি।
প্রিয়তা কে সাদনান নিয়ে যাওয়ার পর বাকি টা আয়না সুফিয়া বেগম মিলে করেছে আর সাথে তো কাজের দুই জন লোক আছেই।

সারা আনমনেই টিভির রিমোট হাতে নিয়ে বসে ছিল। এ-র মধ্যে হঠাৎ বাড়ির কলিং বেল টা সশব্দে বেজে উঠে।
সারা ভাবে হয়তো দাদা সহ বাবা, ছোট বাবাই এসছে তাই রিমোট রেখে তড়িঘড়ি করে দরজা খোলে। কিন্তু বাড়ির কেউ আসে নি এসছে রাহান।
সারা রাহান কে দেখেই বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।
কালো সার্ট কালো প্যান্ট এলোমেলো চুল।
দেখতে বেশ লাগছে।
রাহান এক পলক সারা’র দিকে তাকিয়ে বুকের কাছের একটা বোতাম খুলতে খুলতে ক্লান্ত ভরা কণ্ঠে বলল

-“একটু পানি দিবে।”
সারা ভীষণ মায়া হলো।
রাহান কথা শেষ সোফায় ধপ করে বসে গেলো।
সারা ডাইনিং টেবিলে রাখা জগ হতে আধ গ্লাস পানি নিলো তার পর ফ্রিজ খুলে সেখান থেকে বোতল হতে ঠান্ডা পানি মিশিয়ে রাহান কে দিলো।

রাহান এক পলক তাকিয়ে গ্লাস টা হাতে নিয়ে সব টা পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।
অতঃপর সামনে থাকা সেন্টার টেবিলে গ্লাস টা রেখে আবারও গা এলিয়ে দিলো সোফায়।
ইশ এখন যদি সারা ওর বউ হতো তখন কি এভাবে বসে থাকা লাগতো?
মোটেও না নিশ্চয়ই সারা কে জড়িয়ে ধরে রাখতো।

তবে একটা কথা মানতেই হবে ভালোবাসার মানুষ টাকে দেখলে সব ক্লান্তি হতাশা দূর হয়ে যায়।
এই যে সারা কে দেখে রাহানের এখন কেমন একটা ভালো লাগছে।
সারা দিন এতো এতো দৌড়াদৌড়ি কাজ এখানে সেখানে দৌড়াতে হয়। কিন্তু এখন এই ছোট্ট মুখ টা দেখার পর মনে হচ্ছে এসব কিচ্ছু না।
কেমন একটা প্রশান্তি লাগছে।

রাহান চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে কয়েক বার।
সারা রাহান কে এভাবে দেখে ভাবলো হয়তো বেশি কাজ করছে।
অবশ্য কাজ বলা চলে না রাজনীতি মানেই সারা দিন বাহিরে রোদে দৌড়াদৌড়ি করা।
সারা চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে কি বলবে বুঝতে পারছে না।
রাহানও তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
সারা আমতা আমতা করে।
শেষ মেষ কি বলবে বুঝতে না পেড়ে জিজ্ঞেস করে

আমার তুমি পর্ব ২১

-“আপনার কি শরীর বেশি খারাপ লাগছে?”
সারা প্রশ্নে রাহান মনে মনে হাসলো।
কেমন একটা শান্তি অনুভব হলো মনের ভেতর।
তবে মুখে গম্ভীর ভাব এনে জানালো
-“সারা দিন লাগছিল।
এখন সব ঠিক আছে।”

আমার তুমি পর্ব ২৩