আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৩

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৩
তানিশা সুলতানা 

প্রেমে পড়লে কি মানুষ উদাসীন হয়ে যায়? চঞ্চল মানুষটা গম্ভীর হয়ে যায়। মনটা সব সময় আনচান করে। কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে দেখতে ইচ্ছে করে। তার সাথে কথা বলতে মন চায়। তাকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। তার সাথে কাটানো সময় মনে করতেই মুচকি হাসি চলে আসে।

ঠিক এমনটাই হচ্ছে তুলতুলের সাথে। ভীষণ উদাসীন হয়ে গেছে তুলতুল। একটু পরপরই মনে পড়ে যায় সায়ানকে। মানুষটার সাথে দেখা হয় না আজকের দিন দিয়ে কুড়ি দিন হলো। কথা হয় না উনিশ দিন। যেদিন গেলো তার পরের দিন দুই মিনিটের জন্য কল করেছিলো। কেমন আছিস? কি করছিস? বলেই কল কেটে দিয়েছে। আর এই পর্যন্ত একটা কলও করে নি। তুলতুলও জেদ ধরে কল দেয় না। কেনো কল দেবে? ওই মানুষটা তো মিসই করে না তুলতুলকে। মিস করলে অবশ্যই কল করতো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

একরাশ অভিমান জমা হয়েছে তুলতুলের ছোট্ট মনে। কিন্তু কেউ অভিমান বোঝার মানুষটার কাছে তুলতুলের কোনো মূল্য নেই। মূল্য থাকলে কি আর এতোদিন কথা না বলে থাকতে পারতো? পারতো না।
রাস্তার পাশ ঘেসে হেঁটে যাচ্ছে তুলতুল। তার পাশে তিথি এটা সেটা অনেক কথাই বলছে কিন্তু তুলতুল সেসব শুনছে না। সে আপাতত সায়ানের ভাবনায় বিভোর।

“তুলতুল জানিস কি হইছে? ওই যপ এমপির পোলা আছে না সায়ান মাহমুদ। সে আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করেছে।
তিথি খুশিতে গদগদ হয়ে বলে। সায়ান নামটা শুনতেই তুলতুলের পা থেমে যায়। ভ্রু কুচকে তাকায় তিথির দিকে।
” কার কথা বলছিস?

তুলতুল বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে। আসলে তিথির পুরো কথা শুনে নি। শুধু সায়ান নামটা শুনেছে।
“আরে ওই সালমান এমপির ছেলে সায়ান মাহমুদ আছে না? ওই তো উনি আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করছে। আবার আমি হাই লিখছিলাম হেলো লিখছে। তারপর কেমন আছেন লিখলাম আর রিপ্লাই দিলো না। মনে হয় বিজি। পরে রিপ্লাই দেবে।

তিথি দাঁত কেলিয়ে বলে। তুলতুলের কান্না পায়। মেয়েদের সাথে নিকনিক করা হচ্ছে? আস্ত একটা অসব্ভ্য ওই লোকটা। ওই লোকটাকে হাতের কাছে পেলে একটা আ*ছাড় দেওয়া দরকার। শয়তান লোক।
” এই তুলতুল তোর আবার কি হলো? চোখো পানি কেন?
তিথির কথা শুনে হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে ফেলে তুলতুল।
“আমি কাউকে চিনি না। তুই কখনোই ওই লোকটার কথা আমাকে বলবি না। আমি পরপুরুষের কথা শুনতে পারি না।
বলেই তুলতুল হাঁটতে শুরু করে। তিথি আহাম্মক হয়ে যায়। এর আবার কি হলো?

সুমুর সাথে তন্ময়ের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। সুমু তন্ময়কে এড়িয়ে চলে পুরোদমে। একটা কথা পর্যন্ত বলে না। রাতে মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে ঘুমায়। তন্ময় অফিসে জয়েন করেছে এখন।
আজকে অফিসে যায় নি। সুমুর সাথে কথা বলা দরকার। এভাবে হচ্ছে না। তন্ময় বুঝে গেছে।
সুমু আছিয়ার সাথে রান্না করছে।

” সুমু তুমি আগের মতো কথা বলো না কেন আমার সাথে?
আছিয়া তরকারিতে চুলায় দিয়ে সুমুর কাছে এসে বলে। সুমু পেঁয়াজ কাটছিলো। শাশুড়ীর কথা শুনে হাত থামিয়ে দেয়।
“কই মা বলি তো
জোর করে হাসার চেষ্টা করে বলে সুমু।

” আমাদের ওপর রেগে আছো? মা আমরা ভুল করে ফেলেছি।আমাদের ক্ষমা করে দাও না।
সুমুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন আছিয়া। সুমু কেঁদে ফেলে। দুই হাতে জাপ্টে ধরে আছিয়াকে।
“আমি কোথায় যাবো মা বলুন? আমার যে যাওয়ার জায়গা নেই।বাবার বাড়িতে গেলে সবাই বলবে তন্ময়কে ডিভোর্স দিয়ে দে। আমাকে বোঝার মতো কেউ নেই। আপনারাও বোঝেন না আমায়। কি ভুল করেছি আমি? শুধু আপনার ছেলেকে ভালোবেসেছি। তাতে কেনো এতো শাস্তি পাচ্ছি মা। আমাকে মন থেকে কেনো ভালোবাসেন না?
কেনো তুলতুলের মতো আমায় আগলে রাখেন না?

কতোদিন কেউ খাইয়ে দেয় না আমায়। কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় না। বাবা আমার সাথে কথা বলে না। আগের মতো চকলেট এনে দেয় না। মা বলে ডাকে না। আমার যে ভীষণ কষ্ট হয় মা।
কাঁদতে কাঁদতে বলে সুমু। আছিয়ার চোখ দুটো ভিজে ওঠে। পাপনও সুমুর সব কথা শুনতে পায়। এতো অভিমান মেয়েটার? পাপন লজ্জায় সুমুর সামনে যায় না। সেদিন ছেলে বাজে ব্যবহার করলো অথচ তিনি কোনো প্রতিবাদ করতে পারে নি। সেই লজ্জায় কুড়ে কুড়ে খায় পাপনকে। সে জন্য সুমুর কাছে যায় না।

” কাঁদে না মা।
আছিয়া সুমুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
“সুমু মা
গম্ভীর গলায় বলে পাপন। চমকে ওঠে সুমু। শাশুড়ীকে চট করে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে। পাপন সুমুর পাশে দাঁড়িয়ে বলে।

” কে বলেছে তোমার যাওয়ার জায়গা নেই? আমরা তুলতুলের মতোই তোমাকে ভালোবাসি। সেদিন তন্ময় বাজে বিহেভ করলো তোমার সাথে আর আমি প্রতিবাদ করতে পারি নি। সেই লজ্জায় তোমার সামনে আসি না।
সুমুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে পাপন। সুমু ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে।

“আছিয়া ভাত বারো। আজকে আমি খাইয়ে দেবো আমার মামনিকে।
মুচকি হেসে বলে পাপন৷ যত্ন করে সুমুর চোখের পানি মুছে দেয়।
তারপর সুমুর হাত ধরে গিয়ে খাবার টেবিলে বসে। আছিয়া দ্রুত ভাত এনে দেয়। পাপন ভাত মেখে তুলে দেয় সুমুর গালে।
দুর থেকে তন্ময় দেখে।

তুলতুলের রাগ কিছুতেই কমছে না। কলেজ থেকে বাসায় এসেছে অনেকখন হলো৷ এখনো ড্রেস চেঞ্জ করে নি। তিথির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করা না?
দীর্ঘ তখন পায়চারি করে অবশেষে ফোনটা হাতে নেয়। কল দেয় সায়ানের নাম্বারে। মনে মনে ভেবে ফেলে কল রিসিভ না হলে ডিরেক্ট ডিভোর্স দিয়ে দেবে।
এরই মধ্যে সায়ান কল রিসিভ করে।

“হার কিপ্টা কোথাকার। বউ কল করলে কল কেটে কল ব্যাক করতে হয় এইটুকু মেনার্স শিখেন নি? শিখবেন কি করে আপনি তো একটা জলহস্তি। সাথে হনুমানও। এই যে আপনার জন্য আমার দুই টাকা ফুরিয়ে গেলো শুধ আসলে দশ টাকা ফোনে লোড করে দিয়ে কল ব্যাক করেন পাঁচ মিনিটের মধ্যে। এক সেকেন্ডও লেট হলে ডিরেক্ট তালাক দিয়ে দিবো আপনাকে বলে দিলাম। হুহহহ

ঠাসসস করে কল কেটে দেয় তুলতুল। রাগে গা কাঁপছে রীতিমতো।
সায়ান পার্টির কাজ সেরে সবেই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলো তখনই মহারানীর কল। আর লম্বা বক্তৃতা।
সায়ান চট করে তুলতুলের নাম্বারে তিনশত টাকা পাঠিয়ে কল ব্যাক করে।
তুলতুল সাথে সাথে রিসিভ করে।

” এতো ইগনোর কেনো করেন আমায়? ইগনোরই যখন করবেন তাহলে বিয়ে করতে কে বলেছিলো? ঘরে সুন্দরী বউ রেখে বাইরে সুন্দরী বউয়ের বান্ধবীদের সাথে নিকনিক করতে লজ্জা করে না? নাক কি নেই সাথে? ছি ছি ছি এই ছিলো আমার কপালে? অকালে কপাল পুড়লো আমার।
সায়ান চোখ বন্ধ করে ফোঁস করে শ্বাস টানে।
“সারমর্ম বল।

” কিসের সারমর্ম বলবো? আপনি একটা বদ, লুচ্চা, পাঁজি, অসব্ভ, গোমড়ামুখো, হনুমান,আমাকে ঠকিয়েছেন। নিষ্পাপ মেয়ের মন নিয়ে খেলা করেছেন। আপনাকে ডিভোর্স দেওয়াই উচিত। থাকবো না আমি।
তুলতুল বলতে বলতে কেঁদে ফেলে।

“আসছি আমি।
বলেই কল কেটে দেয় সায়ান। তুলতুল হতদম্ভ হয়ে যায়। আসছি মানে কি? কোথায় আসছে? বাবা কি বলেছিলো ভূলে গেলো?
তুলতুল শুকনো ঢোক গিলে আবার কল দেয় সায়ানকে। কিন্তু রিসিভ হয় না

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩২

” এবার কি হবে? বেশি অভার রিয়েক্ট করে ফেললাম না কি? অবশ্য ভালোই করেছি। কেনো করবে অতিথির রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট? কেনো?

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৪