তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ১৬

তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ১৬
ইরিন নাজ

কোমরে কারোর শ*ক্ত হাতের স্পর্শ পড়ায় কেঁ*পে উঠলো আরশি। বন্ধ চোখের পাতাও মৃদু কেঁ*পে উঠলো তার। নাসারন্ধ্রে ভেসে আসলো পরিচিত এক ঘ্রাণ। তা*ড়া*হু*ড়ো করে লিফটে ঢোকার চ*ক্ক*রে কারোর সাথে যে এভাবে ধা*ক্কা লেগে যাবে বুঝতে পারে নি আরশি।

ঘাড়ে সামনের ব্যক্তির গরম নিঃশ্বাস আ*ছ*ড়ে পড়ায় পিটপিট করে চোখ খুললো আরশি। মাথা টা উঁচু করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো পরিচিত এক মুখ। তার দিকে অদ্ভুত নে*শা*লো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভীষণ অবাক হলো আরশি আবরার কে এই সময় অফিসে দেখে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আবরারের অমন দৃষ্টিতেও যেনো ক*ম্পি*ত হলো তার দেহ, মন। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মো*চ*ড়া*মো*চ*ড়ি করতেই আরও শ*ক্ত করে আরশির কোমর চে*পে ধরলো আবরার। এতে করে আবরারের আরও কাছাকাছি চলে আসলো আরশি। আবরারের গরম নিঃশ্বাস এবার তার সারা মুখে বিচরণ করছে। বুঁকের মাঝে ঢি*প*ঢি*প শব্দ হচ্ছে আরশির। মনে হচ্ছে কেউ তাকে অ*ব*শ করে ফেলেছে। আবরার আরশির চোখে চোখ রেখেই ফিসফিস করে বললো,

— আমার পিছু নিতে নিতে এখান পর্যন্ত চলে আসলে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি?
আবরারের প্রশ্নে কপাল কু*চ*কে আসলো আরশির। সে কবে আবরারের পিছু নিলো? আরশি এক ধা*ক্কা*য় আবরার কে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো,
— আপনি দিন কে দিন আরও লু*চু আর অ*সভ্য হচ্ছেন এমপি সাহেব। এভাবে পাবলিক প্লেসে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে কে স্পর্শ করছেন লজ্জা করে না?

কথা শেষ করে আশেপাশে চোখ বু*লা*লো আরশি। তেমন কেউ নেই লিফটের কাছাকাছি। কেউ খেয়াল করে নি ভেবে স্ব*স্তি*র নিঃশ্বাস ফেললো সে। এবার আরশি নিজের কথার বিপরীতে আবরারের কাছ থেকে কিছু কথা শুনার জন্য প্রস্তুত হলো। কারণ ধা*ক্কা টা তার তা*ড়া*হু*ড়ো করার কারণেই লেগেছে। আর আবরার না ধরলে এতক্ষনে সে ফ্লোরে অবস্থান করতো। অন্যদিকে আরশির কোনো কথা যেনো আবরারের কানে ঢুকে নি। সে তো এক দৃষ্টিতে আরশি কে পরখ করতে ব্যস্ত। আরশি কে সম্পূর্ণ রূপে পর্যবেক্ষণ করতেই আবরারের মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে আসলো,

— মাশাআল্লাহ……
আবরারের কাছ থেকে কিছু টা দূরে অবস্থান করায় শব্দ টা আরশির কর্ণকুহরে পৌছালো না। আরশির কাজল টা*না চোখের দিকে এখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবরার। আরশি আবরারের চোখের সামনে হাত না*ড়তেই পকেটে হাত গুঁ*জে সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে। আরশি এক ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞাসা করলো,
— ঠিক আছেন তো এমপি সাহেব? নাকি মাথা গেছে? একা একা কি বি*ড়*বি*ড় করছেন?
আবরার নিজের বুঁকের বাম পাশে এক হাত রেখে বললো,

— নাহ ঠিক নেই মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। এক শুভ্র পরী কে দেখে মাথা ন*ষ্ট হয়ে গেছে। তাই তো তাকে দেখে মুখ কে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। আপনাআপনি মাশাআল্লাহ শব্দ টা বেরিয়ে আসলো। আর কারোর নজর যেনো তার উপর না পড়ে।

আবরারের কথা শেষ হতেই আরশি একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আবরারের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। আজ সে একটা সাদা সালোয়ার কামিজ পড়ে এসেছে। তাই আবরার শুভ্র রঙ উল্লেখ করায় একবার নিজের দিকে তাকিয়ে নিলো সে। মনে মনে ভাবলো,

— আচ্ছা এমপি সাহেব কি আমার কথা বলছেন? উনি কি আমার প্রশংসা করলো নাকি আমি কালা মানুষ হয়ে সাদা রঙ পড়ায় বে*ঙ্গ করলো?
আরশির ভাবনার মাঝে তু*ড়ি মা*র*লো আবরার। বাঁ*কা হেসে বললো,

— তোমাকে উদ্দেশ্য করে কিন্তু কিছু বলি নি মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। ভু*লেও এই ভু*ল ভেবো না। আমি তো আমার শুভ্র পরীর কথা বললাম। তাকে দেখে আজ আমার মাথা ঠিক নেই। হ্যাং খেয়ে আছি এখনো।
আরশি মুখ বা*কিয়ে বললো,
— বুঝতে পেরেছি। আর আমি মোটেও ঐসব ভু*ল*ভা*ল ভাবি না হুহ।

আরশি আর কথা না বাড়িয়ে লিফটে প্রবেশ করলো। আরশি প্রবেশ করতেই আবরার ও লিফটে ঢুকে গেলো। আবরার লিফটের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সোজা চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে আছে। আবরার এভাবে তাকিয়ে থাকায় বি*র*ক্ত হলো আরশি। নাক মুখ কু*চ*কে বললো,

— স*ম*স্যা কি এমপি সাহেব? এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? জীবনে মেয়ে দেখেন নি। আর আপনার না কোন শুভ্র না টু*ভ্র পরী আছে? তাহলে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? গিয়ে নিজের শুভ্র পরী কে দেখুন।
হুট করে বাঁ*কা হাসি দিয়ে আরশির দিকে এক ঝ*ট*কা*য় এগিয়ে আসলো আবরার। আরশির দুই পাশে হাত রেখে কিছু টা ঝুঁ*ক*তেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো আরশি। আবরার আরশির কানের কাছে মুখ টা এগিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— মেয়ে তো অনেক দেখেছি। কিন্তু আমার শুভ্র পরীর মতো কাউকে তো দেখি নি। সে তো সবার চেয়ে আলাদা। একদম ভিন্ন। আর আমি নিজের শুভ্র পরীকেই তো দেখছি। আই মিন সে তো সামনে নেই। তাই তোমাকে শুভ্র পোশাকে দেখে তোমার মাঝে তাকে কল্পনা করছি।

আবরার কথা শেষ করে যেভাবে এক ঝ*ট*কায় কাছে এসেছিলো ঠিক সেভাবেই দূরে সরে গেলো। এতক্ষন যেনো দম আ*ট*কে রেখেছিলো আরশি। আবরার দূরে যেতেই আ*ট*কে রাখা দম ছাড়লো সে। আবরারের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,
— ফা*ই*জ*লামি করছেন আমার সাথে?
আবরার ঠোঁট উ*ল্টে বললো,

— অবশ্যই। তুমি আবার নিজেকে আমার শুভ্র পরী ভাবা শুরু করো না যেনো। কোথায় তুমি আর কোথায় আমার শুভ্র পরী? জানো সে কতো টা সুন্দর। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর নারী সে। তার আঁখি জোড়ার কথা আর কি বলবো? তার ওই আঁখি জোড়াতে ম*ত্ত হয়েই তো আমি ভালোবাসা কি বুঝতে শিখেছি।

তার সেই মা*রা*ত্মক আঁখি জোড়ায় যখন সে কাজল টা*নে তখন সেই আঁখি জোড়ার দিকে একবার তাকালে দৃষ্টি সরানো মুশকিল হয়ে যায়। তার ডাগর ডাগর আঁখি জোড়ার ধা*রা*লো চাহনি আমার হৃদয়টা কে ছি*ন্ন*ভি*ন্ন করে দেয়। শুভ্র পোশাকে তাকে কতো টা পবিত্র, স্নিগ্ধ লাগছিলো জানো? ইচ্ছা করছিলো সারা জীবন তার দিকে তাকিয়েই থাকি। কিন্তু সে তাকাতে দিলে তো?

শেষ কথা টা আ*ফ*সো*সের সাথে বললো আবরার। আবরারের মুখে অন্য একটা মেয়ের এতো প্রশংসা শুনে কেনো যেনো ভালো লাগলো না আরশির। সে মনে মনে ভাবতে লাগলো,
— সত্যিই কি এমপি সাহেবের কোনো শুভ্র পরী আছে? উনি কি সেই মেয়ে কে ভালোবাসেন? কে হতে পারে সেই মেয়ে যার এতো এতো প্রশংসা করছেন উনি?
আবরার আরশির ভাবনার মাঝে বলে উঠলো,

— বাই দা ওয়ে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি, তুমি আবার আমার শুভ্র পরি কে হিং*সা করছো না তো?
আরশি রে*গে তাকালো আবরারের দিকে। এক আঙ্গুল তা*ক করে বললো,
— আমি মোটেও আপনার শুভ্র না টু*ভ্র পরী কে হিং*সা করছি না। তবে আপনি আমার মাঝে নিজের শুভ্র পরী কে কল্পনা করা বন্ধ করুন। নয়তো তার সাথে দেখা হলে বলে দেবো আপনি অন্য মেয়ের মাঝে তাকে খুঁজেন।
আবরার হাই তু*লে বললো,

— আমার শুভ্র পরী তোমার মতো হিং*সু*টে না বুঝলে মেয়ে। তাকে এসব বললেও সে রা*গ করবে না। তাই তুমি তাকে অবশ্যই বলতে পারো। আমি অনুমতি দিলাম।
লিফট কাঙ্ক্ষিত ফ্লোরে থামতেই আর কথা না বাড়িয়ে আবরারের আগে লিফট থেকে বেরিয়ে আসলো আরশি।
— মিস আরশি?

দুই কদম আ*গা*তেই আবরারের ডাকে থেমে গেলো আরশি। আবরারের মুখে আরশি নাম টা শুনে অবাক হলো সে। আবরার তো কখনো তাকে আরশি বলে ডাকে না। আরশি অবাক ভাব নিয়েই আবরারের দিকে ফিরলো। আবরার আরশির সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলো,
— মিস আরশি তুমি এই অফিসে কি করছো তা তো বললে না।
আরশি ছোট করে বললো,

— আমি এখানে জব পেয়েছি।
আরশি জবাব দিয়েই আবার উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
— কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন এমপি সাহেব?
আবরার গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— আমার অফিসে আমিই তো আসবো তাই নয় কি? আর এখানে আমি তোমার এমপি সাহেব নই। বস হই তোমার তাই স্যার বলে ডাকবে।

আবরার আর না দাঁড়িয়ে নিজের কেবিনে চলে গেলো। আবরারের রু*ড ব্যবহারে ক*ষ্ট পেলো আরশি। যেই আনন্দের সাথে প্রথম দিন অফিসে এসেছিলো, সব আনন্দ যেনো এক নিমিষে গা*য়ে*ব হয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলো,

তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ১৫

— এমপি সাহেব এতো রু*ড বিহেভ করলেন কেনো? অ*সভ্য, ব*দ, খা*রা*প লোক একটা। যখন যেমন খুশি তেমন আচরণ করে। ওয়েট আমার না টেবিলের চি*পা*য় লুকানোর কথা ছিলো? যেকোনো মূল্যে তার সামনে না পড়ার কথা ছিলো? কিন্তু দেখো বা*জে লোক একটা প্রথম দিনই সামনে চলে আসলো। আমাকে লুকানোর সুযোগটাও দিলো না। আর এখন তো তার কোন শুভ্র না কা*ই*ল্লা পরীর আমদানি হয়েছে আবার হুহ।

তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ১৭