শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২৬ শেষ অংশ

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২৬ শেষ অংশ
তাসনিম জাহান রিয়া

এক সপ্তাহ পড়ে মেঘলাকে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসে। হসপিটালের সম্পূর্ণ বিল বহন করে মিহান। এই নিয়ে মুহিবকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেয় না মিহান। মিনিট দশকের ব্যবধানে পর পর দুইটা গাড়ি ঢুকে মুহিবদের গ্রামে। প্রথম গাড়িতে ইভা, মুহিব, মেঘলা, নিতু আর হাজেরা খাতুন। দ্বিতীয় গাড়িতে
অনুপম, শ্রেয়সী, মিহান, প্রিয়ন্তি আর তন্ময়।

মেঘলার বিষয়টা নিয়ে তদন্ত চলছে। মেম্বারসহ সন্দেহজনক ব্যাক্তিদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেইসটা নিয়ে এতো জটিলতা সৃষ্টি হতো না যদি মেঘলা ঠিকঠাক করে সবকিছু বলতে পারতো। এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের মুখ দেখেনি মেঘলা। তদন্ত আটকে দেওয়ার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কিছু করতে পারেনি মিহান আর অনুপমের জন্য। মিহান আর অনুপমের ক্ষমতার জুড়েই কেইসটা এতো দূর এগিয়েছে।
মুহিবরা পৌছানোর দশ মিনিট পর পৌছায় শ্রেয়সীরা। পানির বোতল কিনতে গিয়ে তাদের একটু দেরি হয়ে গেছে। মুহিব হাজেরা খাতুনের হাতটা ধরে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আম্মা আর কান্না-কাটি করো না। দেখো ছোট আপা সুস্থ হয়ে গেছে। এখন সব ঠিক হবে না।
আমার মাইয়ার সব শেষ হয়ে গেছে। আর কিছুই ঠিক অওনের নাই। যা অইব সব বেঠিক। গায়ের লোক আমাদের এক ঘরে করে দিবে। আমি আমার মাইয়াডারে আর বিয়া দিতে পারুম না।

ঘরে ঢুকতে গিয়ে কথাগুলো অনুপমের কর্ণগোচর হয়। চৌকাট ডিঙিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। অতঃপর স্বাভাবিক গলায় বলে,
মেঘলার বিয়ে হবে না কেনো? মেঘলা তো কোনো অন্যায় করেনি। তাহলে মেঘলা কেনো মুখ লুকিয়ে বাঁচবে?
এই সমাজ বেডা মানুষের দোষ দেখে না। মাইয়া মানুষ কিছু না করেও দোষী হয়। একটা কথা আছে না, কেউ যায় পাপে আর কেউ যায় তাপে। পাপ না করেও আজকে আমার মাইয়া পাপী। তুমি যে এতো বড় বড় কথা কইতাছো তুমি বিয়া করবা আমার মাইয়ারে। জানি করতা না।

হুট করেই শ্রেয়সীর বুকের ভিতর ছ্যাৎ করে ওঠে। শ্রেয়সীর কিছু হারিয়ে ফেলার ভয় হচ্ছে। মুহিব মৃদু ধমক দিয়ে বলে ওঠে,
চুপ করবা আম্মা। টেনশন করতে করতে তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কাকে কী বলছো নিজেই বুঝতে পারছো না।
এতো কথোপকথন যাকে নিয়ে সেই নিশ্চুপ। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাথার ওপর ঘূর্ণায়মান ফ্যানের দিকে। বারংবার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। চোখের কোল ঘেষে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু।
মুহিব আন্টির টেনশনের কারণ আছে। উনি মা উনি টেনশন না করলে আর কে করবে?

অনুপম হাজেরা খাতুনের পাশে গিয়ে বসে। আলতো হেসে বলে,
আমি যদি মেঘলাকে ভালোবাসতাম তাহলে অবশ্যই মেঘলাকে বিয়ে করতাম। আমার জীবনে অন্য কারো বিচরণ না থাকলে আপনার মেয়ের দায়িত্ব আমিই নিতাম। কিন্তু আমার মন মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু তারই বসবাস। আমার থেকে যোগ্য কেউ আপনার মেয়েকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। আপনি চাইলে তার হাতে নিজের মেয়েকে তুলে দিতে পারেন।
মেঘলারে আগে পছন্দ করলেও অহন আর করতো না। বিয়া তো অনেক দূরের কথা।

কী মিহান বিয়ে করবে না মেঘলাকে?
অনুপমের প্রশ্নে চমকে ওঠে মিহান। অনুপম কী করে জানলো সে মেঘলাকে পছন্দ করে? শ্রেয়সী বলেনি সেটা মিহান জানে। শ্রেয়সী কখনোই বন্ধুদের মাঝে হওয়া কথা বাইরে বলবে না। সে নিজেও কখনো অনুপমকে বলেনি। এসব বলার সম্পর্ক তার আর অনুপমের মাঝে নেই।

অনুপমের সাথে তার সেরকম ভাবে কখনো কথাও হয়নি। অনুপমের সাথে মুহিবের সখ্যতা থাকলেও তার নেই। অনুপম একটু গম্ভীর স্বভাবের। অনুপমের কাছে জীবনের প্রতিটা মিনিট মূল্যবান। মিহান একদম অনুপমের বিপরীতধর্মী মানুষ। ঠিক এই কারণেই অনুপমের সাথে তার সখ্যতা হয়নি। মেঘলাকে পছন্দ করার বিষয়টা সে কখনো বন্ধুমহলেও আলোচনা করেনি। যতোই হোক মেঘলা মুহিবের বড় বোন। মেঘলাকে পছন্দ করার বিষয়টা সে কাউকে না জানালেও সবাই নিজ দায়িত্বে বুঝে নিয়েছে। হয়তো মুহিবও বুঝতে পেরেছে আর বুঝেও না বুঝার ভান করছে।

অবাক হচ্ছো তাই না? আমি কী করে জানলাম তুমি মেঘলাকে পছন্দ করো? আমাকে কিন্তু শ্রেয়সী বলেনি। আমাকে মানুষের মন চট বুঝে ফেলার ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। তোমাদের সাথে আমার তেমন সখ্যতা না থাকলেও তোমাদের ভাবনা আমি বুঝতে পারি। আমি নিজের ছোট ছোট জিনিস নিয়ে ভীষণ পজেসিভ। এতো পজেসিভ হওয়ার পরও শ্রেয়সীকে তোমাদের সাথে মিশতে বাধা দেই না কেনো জানো? তোমরা শ্রেয়সীকে বন্ধু ছাড়া আর কিছু ভাবো না।

তোমাদের মনে শ্রেয়সীর স্থান বন্ধু হিসেবে। এতোদিন নিজের ভালোবাসার কথা চেপে রেখেছো। আজকে সময় এসেছে প্রকাশ করার। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে নাও।
মিহান আড় চোখে তাকায় মুহিবের দিকে। বুঝার চেষ্টা করে মুহিবের দৃষ্টিতে কী প্রকাশ পাচ্ছে। মুহিব শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মিহান চোখ ঘুরিয়ে মেঘলার দিকে তাকায়। এতকিছুর মাঝে মেঘলা একদম নিরব, নিস্তব্ধ। টু শব্দটাও করছে না।

মুহিব তুই কিছু বল। মিহান কিছু বলতে পারছে না তোর জন্য। তুই এক পা আগালে মিহান দুই পা আগাবে। তুই আবার রাগ করে বসে থাকিস না এটার জন্য যে মিহান তোকে কেনো আগে এসব বলেনি। মিহান বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে কিছু বলেনি। মেঘলা আপু তোর বড় বোন আর তোর বড় বোনকে মিহান পছন্দ করে তুই এটা সহজভাবে নিতে পারতি না। মিহান তো ছেলে হিসেবে খারাপ না। মিহান কেমন ছেলে সেটা তুই আমাদের থেকেও বেশি ভালো জানিস।
শ্রেয়সীর কথার প্রতিত্তরে মুহিব বলে,

আমার আর আম্মার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সবটাই নির্ভর করছে ছোট আপার ওপর। ছোট আপা রাজি হলেই এই বিয়ে হবে। অন্যথায় এই বিয়ে হবে না। ছোট আপার ইচ্ছের বিরুদ্ধে দুনিয়া উল্টে গেলোও এই বিয়ে হবে না। এখন সবটাই নির্ভর করছে ছোট আপার ওপর।

উনি মতামত দেওয়ার আগে আমার কিছু কথা বলার আছে। সেই কথাগুলো আমি শুধু উনাকেই বলতে চাই।
মিহানের কথার বিপরীতে আস্তে আস্তে সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। নিতু বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। মিহান মেঘলার পাশে বসে। মেঘলা এখনো ফ্যানের দিকেই তাকিয়ে আছে।
আজকেও তাকাবেন না আমার দিকে। একটা বার আপনার চোখে চোখ রাখতে দিবেন না?
তুমি এমন কেনো করছো?আমাকে দয়া করছো?

আর কেউ জানুক আপনি অন্ত্যত জানেন আমি আপনাকে দয়া করছি না। আপনি বুঝতে পেরেছিলের আমি আপনাকে অন্য চোখে দেখি তাই তো আমার সামনে আসা বন্ধ করে দিলেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। আমি চেয়েছিলাম আপনি ভালো থাকুন। আমার সাথে আপনি কখনোই ভালো থাকবেন না। তাই তো দূরে সরে এসেছিলাম।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২৬

আমার এই অভিশপ্ত জীবনের সাথে আপনার জীবন জড়াতে চায়নি। শুনেছি বিষে বিষে বিষক্ষয় হয়। আমার আর আপনার অভিশপ্ত জীবন মিলেমিশে নাহয় একটা সুন্দর জীবন গড়ে উঠুক। আমি আপনাকে কিছু কথা বলবো। এই কথাগুলো এর আগে আমি কখনো কাউকে বলিনি। সব শোনার পর ডিসাইড করবেন আপনি আমাকে বিয়ে করবেন নাকি না।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২৭