শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২৬ 

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২৬ 
তাসনিম জাহান রিয়া

বাসার আসার পর থেকেই শ্রেয়সী পায়চারি করছে। সে খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে প্রিয়ন্তির বাবা তাকে সবটা বলেনি। বরং আবছা আবছা বলেছে। অনেক কিছুই হাইড করেছে। প্রিয়ন্তির মার ব্যাপারটা একদম এড়িয়ে গেছে।
শ্রেয়সী ডাইনিংয়ে খাবার দিয়েছি। তাড়াতাড়ি আসো তোমার আব্বু অপেক্ষা করছে।
আমি খাব না।
শ্রেয়া বেগম বিরক্ত হয়ে বলে,

খাবি না মানে কী? শ্রেয়সী আমার মেজাজ খারাপ করবি না। তোর খাবার নিয়ে হেলাপেলা আমার আর সহ্য হচ্ছে না। দুই মিনিটের মাঝে খেতে আসবি। আমাকে যদি আসতে হয় তাহলে ঠাস করে একটা চড় দিব।
আমি ডিনার কয়বার করবো? আমি বাইরে থেকে ডিনার করে আসছি। আংকেল ডিনার করিয়ে তারপর বাসায় পৌছে দিয়ে গেছেন। আমাকে এখন আর বিরক্ত করো না। আমি একটু ঘুমাবো। চোখ ভীষণ জ্বালা পোড়া করছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শ্রেয়সী দরজা বন্ধ করে দেয়। বাসার পৌছে দেওয়ার আগে প্রিয়ন্তির বাবা একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে ডিনার করিয়েছেন। কিন্তু উনি জানেন না এসব করে শ্রেয়সীর মন গলানো যাবে না। প্রিয়ন্তির বাবাকে দেখে শ্রেয়সী এতটুকু বুঝতে পেরেছে প্রিয়ন্তির বাবা একটু স্বার্থপর টাইপের। নিজের কথা ছাড়া আর কারো কথা ভাবেন না। এতো বছর সংসার করার পর একটা মানুষের প্রতি আপনা আপনি মায়া চলে আসে। কিন্তু উনার একটু খারাপ লাগাও কাজ করে না প্রিয়ন্তি মায়ের জন্য।

প্রিয়ন্তির সাথে তার সম্পর্কটা হয়তো আর কোনোদিন স্বাভাবিক হবে না। প্রিয়ন্তির বাবার কথাগুলো সেও নোটিশ করেছে। প্রিয়ন্তি কারো অবহেলা সহ্য করতে পারে না। তাই বলে তার ভাইয়ার কাছে তার কথা এভাবে বলে দিবে। যতই হোক নাহিন তার বড় ভাই। বড় ভাইয়ের মুখের নিজের প্রেমের কথা শোনা ভীষণ লজ্জাজনক বিষয়। কই সে তো অনুপমকে বলেনি নাহিন আর প্রিয়ন্তির সম্পর্কের কথা। নাহিন যেভাবে শ্রেয়সীর সাথে ঐদিন কথা বলেছিল এর আগে কখনো বলেনি।
শ্রেয়সী চোখে যখন ঘুম ঘুম ভাব চলে এলো তখনি ফোনটা বেজে ওঠলো। আধো আধো চোখ খুলে ফোনের স্কিনে তাকায়। অনুপম কল করছে। শ্রেয়সী ফোন রিসিভ করে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,

হ্যালো।
শুয়ে পড়েছো?
হ্যাঁ। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।
তুমি রাগ করছো?
কেনো?
ঐ যে বিকেলে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু যায়নি।
আমি জানি আপনি সময় পেলে অবশ্যই যেতেন। কারণ আপনি এক কথার মানুষ। যে কথা দেন তা সহজে খেলাপ করেন না। আপনি যে আসার অনেক চেষ্টা করেছেন আমি জানি।
তুমি আমাকে যতোটা বুঝো আমি নিজেও হয়তো নিজেকে এতোটা বুঝি না। আচ্ছা রাখি তাহলে। তুমি একটু ঘুমাও। বাই।
বাই।

সকাল হতেই সবাই হসপিটালে এসে হাজীর হয়। শ্রেয়সীর সাথে শ্রেয়া বেগম আর মিরাজ সরকারও এসেছেন। শ্রেয়সী আর তন্ময় হসপিটালে এসেই মিহান আর মুহিবকে এক প্রকার জোর করেই বাসায় পাঠিয়ে দেয়। মেঘলার অবস্থা এখন আগের থেকেই অনেকটাই ভালো। মেঘলাকে আবার কেবিনে সিফট করা হয়েছে। শ্রেয়া বেগম আর মিরাজ সরকার মেঘলার সাথে দেখা করেই হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যান।

মুহিবের বড় বোনকে জোর করে ফ্রেশ করিয়ে খাবার পরিবেশন করে দেয়। খাবারটা শ্রেয়সী বাসা থেকেই নিয়ে আসছে। মেঘলার খাবার হসপিটাল থেকে দেওয়া হয়ছে। মেঘলাকে কেবিনে শিফট করা হলেও মেঘলার কেবিনে বেশি মানুষ এলাই করা হচ্ছে না।

বিকাল পাঁচটা বাজে। মেঘলা অনেকটাই সুস্থ। টুকটাক কথা বলে। হাজেরা খাতুন মেঘলার হাত ধরে বসে আছেন। মুহিব আর তার বন্ধুরা সবাই আছে। মুহিবের বড় বোনকে নিতে আসছে আলী সাহেব। মুহিবের মেজো বোনের জামাই হুট করে বলে ওঠে,

বড় দুলাভাই মেঘলার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতেই তোমাদের দাম বেড়ে গিয়েছিল। বড় দুলাভাইয়ের মুখের ওপর না করে দিলে। এখন মেঘলাকে কে বিয়ে করবে? কারো হাতে-পায়ে ধরলেও তো বিয়ে করবে না।
তন্ময় রেগে বলে,

মেঘলা আপুর বিয়ে নিয়ে আপনাকে এতো ভাবতে হবে না।
তন্ময়ের রাগটাকে পাত্তা না দিয়ে আবার বলে,

মুহিব তোমাদের মেঘলাকে নিয়ে প্রাইভেট হসপিটালে আসা উচিত হয়নি। কোনো সরকারি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। এতো এতো টাকা হসপিটালে খরচ যে হলো সব খরচ তো আমাকে আর দুলাভাইকেই বহন করতে হবে।
মেজো আপা তোমার জামাইকে নিয়ে এখান থেকে যাও। আমি উনাকে সহ্য করোএ পারছি না। কূটনীতি করার জন্য উনার এখানে আসার প্রয়োজন নেই। উনাকে এখানে আসতে আমরা বলিনি।
মুহিবের কথা শেষ হতেই মিহান রাগে হিসহিসিয়ে বলে ওঠে,

যে নিজের বউয়ের ডেলিভারি খরচ দেয় না সে দিবে নাকি বউয়ের বোনের চিকিৎসার খরচ। ব্যাপারটা ভীষণ হাস্যকর। আপনার কাছ থেকে এক টাকাও নেওয়ার প্রয়োজন নেই মুহিবের। মুহিবের বন্ধুরা আছে মুহিবের জন্য। আর কারো প্রয়োজন নেই।
টাকা তুমি দিবে? কয় টাকা ইনকাম করো? নিজেই তো বাপের টাকায় চলো। আমাকে টাকার গরম দেখাও। এক তুড়িতে তোমাদের মতো ছেলে কিনে নেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২৫

আপনার মতো হাজারটা লোক আমার বাপের কম্পানিতে চাকরি করে। আপনি যেই কম্পানিতে চাকরি করেন সেই কম্পানির মালিকের ছেলে আমি। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমার টাকার গরম কতোখানি?
মিহানের কথা শেষ হতেই চুপচাপ কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় মুহিবের মেজো বোনের জামাই।
কেবিনে থাকা প্রতিটা মানুষ মিহানের দিকে ‘হা’ করে তাকিয়ে আছে।

শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ২৬ শেষ অংশ