তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ১৭

তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ১৭
ইরিন নাজ

আরশির আকাশ পাতাল ভাবনার মাঝে ম্যানেজার এসে জানিয়ে গেলো আবরার তাকে কেবিনে ডাকছে। আরশি ম্যানেজার এর পিছু পিছু আবরারের কেবিনে গেলো। গিয়ে দেখলো নতুন সবাই সেখানে উপস্থিত। আবরার সবার সামনে দাঁড়িয়ে হাসি হাসি মুখ করে বললো,

— আপনাদের সবাই কে ওয়েলকাম জানাচ্ছি। আমি আজওয়াদ আবরার। এই অফিস টা আমার বাবাই এর। কিন্তু তিনি অ*সুস্থ হওয়ায় আমাকে এই কোম্পানির পিছনে দৈনিক কিছু টা সময় দিতে হয়। তো আপনাদের সবার সাথে পরিচিত হওয়া যাক। সবাই একে একে নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন।
সবাই নিজেদের নাম, পরিচয় বলতে লাগলো। আরশি এক কোনে দাঁড়িয়ে মেয়েদের রঙ ঢং দেখছে। একেক জন আবরার কে দেখিয়ে ঢং করে করে কথা বলছে। তবে সবাই এক নয়। কিছু কিছু ভদ্র মেয়েও আছে। আরশির পালা আসতেই সে নম্র কণ্ঠে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আমি আরশি রহমান।
বাস্ এতটুকুই। আবরার এমন ভাব করলো যেনো আজ প্রথম আরশি কে দেখেছে সে। আরশি গো*ম*ড়া মুখে তাকিয়ে তাকিয়ে সব টা দেখতে লাগলো। পরিচয় পর্ব শেষ হতেই আবরার সবার উদ্দেশ্যে বললো,
— আপনাদের সবার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। আমি আশা রাখছি আপনারা সবাই মন দিয়ে কাজ করবেন। আর আমাকে যতো টা ভালো দেখছেন আমি কিন্তু ততোটা নই। কাজে কোনোরকম ভু*ল আমার মোটেও পছন্দ নয়। সো এভরিওয়ান বি কেয়ারফুল। কোনো কিছু না বুঝতে পারলে মিস প্রিয়ার কাছ থেকে বুঝে নিবেন। ভু*ল যেনো না হয়। মিস প্রিয়া?

আবরারের ডাকে রেসপন্স করলো একটা মেয়ে। আরশি তাকালো মেয়েটার দিকে। ভীষণ স্টাইলিশ মেয়ে টা। পরনে শার্ট প্যান্ট। চুল সুন্দর করে রঙ করা। দেখতেও বেশ সুন্দরী। আবরার প্রিয়া কে উদ্দেশ্য করে বললো,
— আপনি ওদের সবাই কে কাজে সাহায্য করবেন। না বুঝলে বুঝিয়ে দিবেন।
প্রিয়া মেয়ে টা ঠোঁটে লম্বা একটা হাসি টে*নে বললো,

— জি স্যার। আপনি কোনো চি*ন্তা করবেন না। আমি আছি তো। আমি ওদের সব বুঝিয়ে দিবো।
আরশি প্রিয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। প্রিয়া তাকাতেই চোখাচোখি হলো দু’জনের। প্রিয়া মেয়ে টা আরশি কে কেমন যেনো একটা খাইয়া ফালাবো টাইপ লুক দিলো। এমন লুকের মানে বুঝলো না আরশি। এই মেয়ে কে তো সে এখন এই প্রথম দেখলো। তাহলে এই মেয়ে তার দিকে এভাবে তাকাচ্ছে কেনো ভাবতে লাগলো আরশি। আবরার সবাই কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— এবার আপনারা যেতে পারেন।
সবাই সমস্বরে ইয়েস স্যার বলে একে একে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। আরশি ও বের হচ্ছিলো এমন সময় আবরার ডেকে উঠলো,
— মিস আরশি…..

আরশি আবার ফিরে আসলো আগের জায়গায়। আবরার নিজের ল্যাপটপে কিছু একটা দেখতে দেখতে ক*ড়া কণ্ঠে বললো,
— লেট করা আমি মোটেও পছন্দ করি না। ভবিষ্যতে কখনো লেট করে আসবেন না। এবার নিজের কাজে যেতে পারেন।
ভীষণ অ*প*মা*নবোধ করলো আরশি। সে কখনোই কোনো কাজে লেট করে না। কিন্তু ভার্সিটি থেকে ক্লাস করে অফিসে আসতে লেট হয়ে গিয়েছে তার।

তাও সময়ের আগেই পৌঁছে যেতো আবরারের সাথে ব*ক*ব*ক করেই তো দুই মিনিট লেট করলো সে। আরশি ঠিক করলো সে অফিসের কাজ ছাড়া আবরারের সাথে আর একটাও বা*ড়*তি কথা বলবে না।

ম্যানেজার আরশি কে তার ডেস্ক দেখিয়ে দিলো। আরশি ডেস্কে বসে কাজ করতে শুরু করলো। মনোযোগ দিয়ে কাজ বুঝার চেষ্টা করছে সে। এর মাঝে ডেস্কের সামনে কেউ আছে বুঝতে পেরে মাথা তু*ল*লো আরশি। দেখলো প্রিয়া নামক মেয়ে টা তার ডেস্কের উপর দুই হাত ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে রে*গে আছে। আরশি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো প্রিয়ার দিকে। প্রিয়া রা*গী কণ্ঠে বললো,

— দেখে তো ভো*লা*ভা*লা মনে হয়। অথচ আসতে না আসতেই আবরার স্যারের গায়ের উপর ঝাঁ*পি*য়ে পড়লে?
আরশি প্রিয়ার কথা থেকে ধারণা করে নিলো সে লিফটের সামনের ঘটনা দেখেছে হয়তো। আরশি চোখ ছোট ছোট করেই উত্তর দিলো,

— কে বলেছে আমি ভো*লা*ভা*লা? আমি তো মোটেও ভো*লা*ভা*লা নই। আর আমি আবরার স্যারের গায়ে পড়ি বা তার কোলে উঠে বসে থাকি তাতে আপনার কি?
আরশির উত্তরে প্রিয়া যেনো আরও রে*গে গেলো। ফোঁ*স*ফোঁ*স করতে করতে বললো,
— তোমাদের মতো থার্ড ক্লাস মেয়েরা পারোই তো এটা। ভো*লা*ভা*লা সেজে বড়লোক ছেলেদের ফাঁ*সা*নোই তো তোমাদের কাজ।

আরশি গালে হাত দিয়ে বললো,
— আমি নাহয় থার্ড ক্লাস কিন্তু আপনি তো ফাস্ট ক্লাস মানুষ তাই না আফা? তাহলে এভাবে গায়ে পড়ে আ*জা*ই*রা ঝ*গ*ড়া করছেন কেনো? আর আমাদের মধ্যে গুন আছে বুঝলেন তাই তো বড়লোক ছেলেরা ফেঁ*সে যায়। কিন্তু আপনার মধ্যে মনে হয় কোনো গুন টু*ন টা নাই। পুরাই বেগুন আপনি। তবে শিখতে চাইলে আমাকে বলিয়েন আমি শিখায় দিবো নে।

প্রিয়া আরশির টেবিলে থা*বা মে*রে বললো,
— ইউ বে*য়া*দব মেয়ে! তোমার সাহস কি করে হয় আমার সাথে ত*র্ক করার?
আরশি হাই তু*লে বললো,

— আপনার তো অনেক আদব আফা। তাহলে শুধু শুধু ঝ*গ*ড়ুটে মহিলার মতো ঝ*গ*ড়া করছেন কেনো? আপনার এতো স*ম*স্যা হলে আবরার স্যারের কাছে যান। তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন উনি কেনো একটা থার্ড ক্লাস মেয়ে কে ধরতে গেলেন? আপনি না জিজ্ঞাসা করতে পারলে আমাকে বলুন। আমি আপনার পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসা করে আসছি।

আবরারের কাছে যাওয়ার কথা বলতেই মুখ শু*কি*য়ে গেলো প্রিয়ার। বাইরে যতোই বা*হা*দু*রি দেখাক না কেনো, সেও আবরার কে ভীষণ ভ*য় পায়। অথচ এই মেয়ে কে দেখো? কিভাবে ড্যাং ড্যাং করে আবরারের কাছে যেতে চাচ্ছে। প্রিয়া আরশির দিকে আঙ্গুল তা*ক করে বললো,

— তুমি জানো আমি কে? আমি চাইলে এখনই তোমার চাকরি কে*ড়ে নিতে পারি।
আরশি মাছি তা*ড়া*নো*র ভঙ্গিতে হাত না*ড়ি*য়ে বললো,
— কেন আপনি জানেন না আপনি কে? আমার জানামতে আপনি প্রিয়া। যে এই মুহূর্তে ঝ*গ*ড়ুটে মহিলার মতো আমার সাথে ঝ*গ*ড়া করছে। আর চাকরি কে*ড়ে নেয়ার ভ*য় আমাকে দেখাতে আসবেন না। আমার ভাগ্যে যা আছে তা আপনি হাজার চেষ্টা করেও কে*ড়ে নিতে পারবেন না।

আর যেটা নেই সেটা আমি হাজার চেষ্টা করলেও ধরে রাখতে পারবো না।
আরশির আশেপাশের সবাই হা করে নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে তা*মা*শা দেখছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ প্রিয়া মেয়েটা কে ভ*য় পায়। কারণ প্রিয়া মেয়ে টা কথায় কথায় চাকরি কে*ড়ে নেয়ার থ্রে*ট দেয়।

আর যেহেতু সে সিনিয়র, তার জন্য চাকরি কে*ড়ে নেয়া খুব একটা ক*ঠি*ন না। এই ফ্লোর টা তার কথায় চলে। তাই তো সবাই চাইলেও প্রিয়ার উপর কিছু বলতে পারে না। আরশি কে প্রিয়ার কথার উচিত জবাব দিতে দেখে পুরনো কর্মীরা ভীষণ মজা পাচ্ছে, আ*ত্মা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তাদের। কিন্তু তাদের আবার আ*ফ*সোস ও হচ্ছে আরশির চাকরির জন্য। বে*চা*রির আজকে প্রথম দিন। আর নতুনরা তো হা করে সব গি*ল*ছে।

— কি হচ্ছে এখানে?
আবরারের গম্ভীর কণ্ঠে থ*ত*ম*ত খেলো মিস প্রিয়া। আরও কিছু বলতে চাইছিলো সে। কিন্তু আবরারের কথায় মুখ দিয়ে আর কিছু বের হলো না। আরশি কিছু বলার আগেই সে আবরারের কাছে গিয়ে নে*কা*মি করে বলতে লাগলো,
— দেখুন না স্যার এই বে*য়া*দব মেয়ে টা আসতে না আসতেই আমার সাথে ত*র্ক করছে। কোনো ম্যা*না*র্স নেই।
আরশি অ*গ্নি দৃষ্টি নিঃ*ক্ষে*প করলো প্রিয়ার দিকে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভীষণ রে*গে আছে সে। প্রিয়া আরশির দিকে আঙ্গুল তা*ক করে বললো,

— দেখুন এখনো কিভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বাবা মা মনে হয় কোনো আদব কায়দা শিখায় নি।
এই একটা কথাই যথেষ্ট ছিলো আরশি কে হিং*স্র করে তো*লা*র জন্য। আরশি রা*গে প্রিয়া কে কিছু ক*ড়া কথা শুনাতে যাচ্ছিলো। কিন্তু তার আগেই আবরার শীতল কণ্ঠে বললো,
— মিস প্রিয়া আপনি বাকিদের টা দেখুন। আপনার মতে উনি বে*য়া*দব তাই তো? উনাকে সামলানোর দায়িত্ব আমার। মিস আরশি আপনি একটু কেবিনে আসুন।

আবরার চলে গেলো। আরশি যেতে নিলে সামনে আসলো প্রিয়া। শ*য়*তা*নি হাসি দিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— এবার আমার সাথে বে*য়া*দবি করার ফল পাবে। তোমার চাকরি গেলো বলে। যাও যাও।
আরশি প্রিয়া কে পাশ কা*টি*য়ে আবরারের কেবিনে আসলো। আবরার আরশির কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বললো,
— তুমি এতো ঝ*গ*ড়ু*টে কেনো মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি? সবার সাথে কথা বলে নিজের মুখ খা*রা*প করতে নেই। প্রথম দিনেই এই অবস্থা হলে কিভাবে হবে বলো তো?

আরশি ধা*রা*লো চোখে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। রা*গে চোখ মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে তার। প্রিয়া কে কিছু বলতে না পেরে রা*গে তার মাথায় আ*গু*ন জ্ব*ল*ছে। আবরার আরশির আরেকটু কাছে এসে দাঁড়ালো। ওর চোখের দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— এভাবে তাকিও না মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি। তোমার অদ্ভুত চোখের ধা*রা*লো দৃষ্টিতে আমি যেনো নিজের ধ্বং*স দেখতে পাচ্ছি।

তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ১৬

আবরারের চোখের দিকে তাকিয়ে আর ফিসফিস করে বলা কথাগুলো শুনে আরশির রা*গ*গুলো যেনো কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে। আরশি দ্রুত নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। বুক ধু*ক*পু*ক করছে তার। আবরার ও দূরে সরে গেলো। নিজের ফোনে কিছু একটা করতে লাগলো।

তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ১৮